Search

Thursday, August 9, 2018

প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে মালিকদের স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে


মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইনে পথচারীর নয়, বাস মালিক ও শ্রমিকদের স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আশা করা যায় না বলে মনে করছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। গতকাল রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে পরিকল্পনাবিদদের সংগঠনটি।

বিআইপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন ও সড়ক নিরাপত্তা’ শীর্ষক ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান।

এতে বলা হয়, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে একমাত্রিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আইনটিতে সড়ক দুর্ঘটনার অধিকাংশ দায়ভার যানবাহনের চালকের ওপর বর্তানোর চেষ্টা লক্ষ করা গেছে। এতে সড়কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারিগরি ব্যক্তি, বাস মালিক ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনাজনিত দায়মুক্তির সুযোগ রয়ে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত আইনটির বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে বলা হয়, সড়কের পরিকল্পনা, ডিজাইন ও গুণগত মান তদারকি এবং যানবাহনের ফিটনেস, চালক ও শ্রমিকের তদারকির মতো বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়নি। এছাড়া ব্যবস্থাপনা ও যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টিও এতে স্থান পায়নি।

প্রস্তাবিত আইনে অবহেলা বা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনায় কেউ গুরুতর আহত হলে চালকের সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ডের কথা বলা হয়েছে, যা যথেষ্ট নয় বলে মনে করে বিআইপি। সংগঠনটির মতে, দায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর কারাদণ্ড হওয়া উচিত। পাশাপাশি অর্থদণ্ডের পরিমাণ আরো বাড়ানো এবং কারাদণ্ডের পরিবর্তে অর্থদণ্ডের সুযোগ বাতিল করা উচিত।

প্রস্তাবিত আইনে হত্যার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট গাড়ি দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটিতে কারা থাকবেন তার বিশেষ বর্ণনা অনুপস্থিত। এই তদন্ত কমিটিতে উপযুক্ত কারিগরি লোক নিশ্চিত না করা গেলে হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়বে। আইনে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করা এবং দুর্ঘটনা তদন্তের জন্য স্বতন্ত্র সেল গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিআইপি।

বিধিমালা প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিআইপি বলেছে, আইনের বিভিন্ন বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রণয়নের জন্য অচিরেই বিধিমালা প্রণয়ন করা দরকার। সড়কে নারী নিরাপত্তাসহ বিশেষ ইস্যুতে আলাদা বিধিমালা প্রণয়ন দরকার।

প্রস্তাবিত আইনে কোনো দুর্ঘটনায় ‘গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত হলে’ শব্দটি আইনের প্রয়োগে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার সুযোগ তৈরি করে দেবে। বিধিতে ‘গুরুতরভাবে’ শব্দটি বাতিল করা অত্যন্ত প্রয়োজন বলে বিআইপি মনে করে। সেই সঙ্গে সারা দেশে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত ট্রাফিক মনিটরিং সেল এবং বিশেষ ট্রাফিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন।

গাড়ির গতিসীমা সম্পর্কিত কোনো আইন নেই জানিয়ে বিআইপির পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন সড়কের জন্য গাড়ির সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করতে আইনি কাঠামো ও পদক্ষেপ নেয়া দরকার। চালক ও সহযোগীদের শ্রমঘণ্টা নির্ধারণ এবং তার বাস্তবায়ন ছাড়া নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। নিয়মিতভাবে চালক ও সহযোগীদের বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা আবশ্যক।

সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত আইনটির নামকরণ নিয়েও সমালোচনা করে বিআইপি। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, সড়ক নিরাপত্তার গুরুত্ব বিবেচনায় প্রস্তাবিত আইনের নামকরণ ‘সড়ক পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা আইন’ করার প্রস্তাব পেশাজীবী ও সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে এমন সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে করা হলেও বিষয়টি উপেক্ষিত থেকেছে। বিআইপি মনে করে, চূড়ান্ত আইনের নামকরণে সড়ক নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তার সব অনুষঙ্গ বিবেচনায় নেয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে নাগরিক হিসেবে মৌলিক অধিকার হিসেবে অভিহিত করে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিআইপি। এ সময় বিআইপির সভাপতি অধ্যাপক একেএম আবুল কালাম, সহসভাপতি আকতার মাহমুদ, যুগ্ম সম্পাদক ও পরিকল্পনাবিদ মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ আগস্ট ৯, ২০১৮ 

No comments:

Post a Comment