মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ঘিরে ফুটপাতে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই হাজার হকার বসেন। এতে পথচারীদের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসা করার জন্য প্রতিদিন তাঁদের ৫০-১০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়।
মিরপুর ১০ নম্বরের গোলচত্বর পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩, ৭ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে। এর মধ্যে পদচারী-সেতুর দক্ষিণ পাশের পুরোটাই ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে।
গত রোববার গোলচত্বর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাতজুড়ে নানা ধরনের স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ দোকান। এসব দোকানে ফল, মুঠোফোনের সরঞ্জাম, কাপড়চোপড়, মানিব্যাগ, বেল্ট, প্রসাধনসামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিস বিক্রি হচ্ছে। এর পাশাপাশি ফুটপাতে পুরোনো বই, পত্রিকা, কাপড়, চা ও খাবারের স্থায়ী দোকানও আছে। কোনো কোনো জায়গায় প্রায় পুরো ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুটপাতের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিটি দোকান থেকে লাইনম্যানরা ব্যবসার ধরনের ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা তোলেন। দিন শেষে সে টাকার পরিমাণ লাখ ছাড়িয়ে যায়। সে টাকা স্থানীয় পুলিশ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়। ছয়জন লাইনম্যান টাকা তোলেন। তবে ব্যবসায়ীরা লাইনম্যানদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
শাহ আলী প্লাজার সামনে মুঠোফোনের সরঞ্জামাদির একজন বিক্রেতা বলেন, ‘রাস্তায় ব্যবসা করতে হলে সবাইকে খুশি রাখতে হয়। এরপরও মাঝেমধ্যে পুলিশ ঝামেলা করে।’
ফুটপাতে ব্যবসায়ীদের ছবি তোলার সময় এই প্রতিবেদককে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন একজন ফল বিক্রেতা। তিনি মুঠোফোন থেকে ছবি মুছে দিতে বলেন। নাম জানতে চাইলে তিনি সেখান থেকে সরে যান।
এদিকে ফুটপাতজুড়ে দোকান বসানোর কারণে পথচারীদের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লামিয়া রহমান মিরপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, ফুটপাতজুড়ে সারি সারি দোকান। হাঁটাচলা করা যায় না। অনেক সময় বাসের জন্য মূল সড়কেই অপেক্ষা করতে হয়।
সেনপাড়া পর্বতার বাসিন্দা হারিচ মোল্লা বলেন, সকালে মেয়েকে কলেজে নিয়ে যাওয়ার সময় হাঁটার জন্য রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি করতে হয়। এই বিড়ম্বনা এড়াতে অনেক শিক্ষার্থী মূল সড়ক দিয়ে হাঁটে।
গত রমজানে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. হুমায়ুন রশীদ ঈদের পরে তাঁর ওয়ার্ডের অংশের হকার উচ্ছেদ করা হবে বলে প্রথম আলোকে বলেছিলেন। কিন্তু এখনো উচ্ছেদ না হওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হকার উচ্ছেদের বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে করা যাবে না। এটা যৌথভাবে করতে হবে। যাতে উচ্ছেদের পরেই আবার না বসতে পারে।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোবাশ্বের চৌধুরী বলেন, মেয়র আনিসুল হকের সময় একবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেশের বাইরে থাকায় এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদুল কবীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী চাঁদা তোলা ও টাকা ভাগাভাগির সঙ্গে জড়িত নন। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কেউ দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু করলে এর দায়ভার আমাদের নয়।’
ফুটপাতে অবৈধ ব্যবসায়ী উচ্ছেদের দায়িত্ব ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগের। প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, সাধারণত ফুটপাত সংস্কার বা অন্য কোনো বিষয় মাথায় রেখে উচ্ছেদ করা হয়। আপাতত মিরপুরের গোলচত্বরে উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেই। কারণ, উচ্ছেদের পরের দিনই আবার দোকান বসে যায়।
কাফরুল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘থানার কে কী করে জানি না। তবে আমি ফুটপাতের হকার কেন, কারও কাছ থেকে টাকা নিই না। খুব স্বাভাবিক জীবন যাপন করি।’
অন্যদিকে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে বদলি হয়ে এই থানায় এসেছি। আসার পরেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি ছাত্র আন্দোলন নিয়ে। তবে অভিযোগের বিষয়টি আমি দেখব।’
- কার্টসিঃ প্রথম আলো/ আগস্ট ৮,২০১৮
No comments:
Post a Comment