Search

Wednesday, September 19, 2018

চেক জালিয়াতি ও বেনামি কোম্পানির নামে অর্থ আত্মসাৎ

বাপেক্স কর্মকর্তাদের দুর্নীতি

ইয়ামিন সাজিদ
গ্যাসকূপ খননকাজে মালপত্র সরবরাহকারী হিসেবে যে প্রতিষ্ঠানকে দেখানো হয়েছে তা ভুয়া। টাকাও উত্তোলন করা হয়েছে ভুয়া ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে। এছাড়া বিলের বিপরীতে ইস্যুকৃত চেকের অর্থ জালিয়াতির মাধ্যমে ডিডি, পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা করা হয়েছে মালপত্র সরবরাহকারী ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে। অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনা ঘটেছে বাপেক্সেরই কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতায়। বাপেক্সের নিজস্ব তদন্তেই প্রতিষ্ঠানটির ছয় কর্মকর্তার দুর্নীতির এ তথ্য উঠে এসেছে। 

অভিযুক্ত ছয় কর্মকর্তা হলেন— মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক মো. শাহাবউদ্দিন, উপব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) মো. হাদিউজ্জামান, ব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) নুসরাত সিদ্দিক, উপমহাব্যবস্থাপক (খনন) জামাল ও রেজাউল করিম এবং উপব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনির হোসেন। কোম্পানির ফেঞ্চুগঞ্জ-৪ ও ৫ এবং সালদা-৩ ও ৪ নম্বর গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়ন প্রকল্পে এ দুর্নীতি করেছেন তারা।

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে এ ছয় কর্মকর্তাকে কেন বরখাস্ত করা হবে না, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার কারণ দর্শাতে বলা হয়। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানো না হলে বরখাস্তের কথাও বলা হয়। যদিও নোটিস পাওয়ার দেড় বছর পরও এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অভিযুক্তদের রক্ষায় বাপেক্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ আছে।

জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম রুহুল ইসলাম চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, তাদের বিরুদ্ধে বাপেক্সের সর্বোচ্চ অথরিটির মাধ্যমে সর্বশেষ বোর্ডসভায় শাস্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাকিদের বাপেক্সের নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে ২০১০ সালের জুলাইয়ে বাপেক্সের নিজস্ব দুটি গ্যাসক্ষেত্রে চারটি উন্নয়ন কূপ খনন প্রকল্প নেয়া হয়। ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রের ৪ ও ৫ এবং সালদা গ্যাসক্ষেত্রের ৩ ও ৪ নম্বর কূপ খননে ব্যয় ধরা হয় ৩০৫ কোটি টাকা। এ ব্যয়ের মধ্যে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল থেকে অর্থায়ন ২৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি শেষ হয় ২০১৬ সালের জুনে।

প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ও আর্থিক ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়ায় তা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে বাপেক্স কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক তদন্তে ব্যাংক ভাউচার, চেক ও ব্যাংক বিবরণী জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পায় কমিটি। এছাড়া গ্যাসকূপ খননকাজে ব্যবহূত মালপত্র ক্রয়ে ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে স্থানীয় আরএফকিউ পদ্ধতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়। এ অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রকল্পের পরিচালকসহ ছয় কর্মকর্তা। নানা কৌশলে সংঘবদ্ধভাবে প্রকল্পের টাকা তসরুপ করেন তারা।

জানা যায়, একজন কর্মকর্তা চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর পেনশন হিসেবে সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা পেয়ে থাকেন। কেউ কেউ এর কমও পান। তবে এ প্রকল্পের পরিচালক মো. শাহাবউদ্দিন প্রকল্প থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে নিজের বেতন-ভাতার বাইরে বেনামি কোম্পানি ও চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। এর বাইরেও বড় অংকের অর্থ আত্মসাতে শাহাবউদ্দিনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে বাপেক্সের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

শাহাবউদ্দিনের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট করে যে অর্থ আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংক ভাউচার ও ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ১ কোটি ৮৫ লাখ ২২ হাজার টাকা। এছাড়া ২০১৫ সালের ২৩ জুন পরিশোধিত নগদ ভাউচারের মাধ্যমে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাম উল্লেখ না করে ৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা তুলে ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ। এর বাইরে সালদা গ্যাসক্ষেত্রের ৩ ও ৪ নম্বর কূপ খননে দ্বিতীয় দফায় ফিজিক্যাল ইনভেন্টরি কাজ চলাকালে ৩৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, অস্থায়ী শ্রমিক মজুরি খাতে ৪৩ লাখ ৩৮ হাজার, কনটেইনার ক্রয়ের ক্ষেত্রে খোলা দরপত্র আহ্বান না করে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে নগদ ৩৯ লাখ ও সালদা গ্যাসক্ষেত্রে জেনারেটর ক্রয়ের নামে ৫ লাখ ৯৮ হাজারসহ ৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা তসরুপেরও প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।

অর্থ আত্মসাত্কারী চক্রের আরেক সদস্য বাপেক্সের উপব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) মো. হাদিউজ্জামান। প্রকল্প পরিচালকের সহায়তায় ক্রয়, নির্মাণ ও মেরামতকাজের বিপরীতে উপরোক্ত অর্থের ভাগসহ ৬১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।

এছাড়া চেকের অর্থ ডিডি ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) নুসরাত সিদ্দিক, উপমহাব্যবস্থাপক (খনন) জামাল ও রেজাউল করিম এবং উপব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনির হোসেন আরো অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় জ্বালানি বিভাগ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রতিবেদনে আরো বড় অংকের অর্থের অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ সেপ্টেম্বর ১৯,২০১৮ 

বাক্সবন্দি হবে বাকস্বাধীনতা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

মতিউর রহমান চৌধুরী 

কোনো ওজর আপত্তিতেই কাজ হলো না। শেষ পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সহসাই পাস হতে চলেছে সংসদে। সম্পাদক পরিষদ প্রত্যাখ্যান করেছে। সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোও আপত্তি তুলেছে। সিভিল সোসাইটি বিচ্ছিন্নভাবে কথা বলেছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি মৃতপ্রায়। দলীয় ব্যানারে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয় মাঝেমধ্যে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিরামহীনভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে।

বলছে, এই আইন পাস হলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হরণ করবে। দেশীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো কমবেশি সোচ্চার। ডিজিটাল যুগে এই আইন? সরকার বলছেন ডিজিটাল যুগ মানে এটা নয়- অবাধ লাইসেন্স? যা কিছু বলা বা লেখা যাবে। যা ইচ্ছে লেখার মানে হচ্ছে স্বেচ্ছাচারিতা। এটা কখনো কাম্য নয়। এ জন্য কি আইনের দরকার? যে আইন আমার মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়। যে আইন সংবিধানের প্রতি মানুষকে শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায় না। যে আইন বাকস্বাধীনতাকে বাক্সবন্দি করে। 

মনে রাখা দরকার, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগণের অপরিহার্য অধিকার হচ্ছে বাকস্বাধীনতা। মানুষ কথা বলবে, ভাববে, অন্যের কথা শুনবে। ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা জানাবে। এটাই তো সংবিধান নামক দলিলের কথা। ক্ষমতার বাইরে থেকে আওয়ামী লীগ এ কথাগুলো কতবার বলেছে। লড়াই করেছে রাজপথে। নিকট অতীতে ১২ বছর আগে রাজপথ কাঁপিয়েছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য। জরুরি জমানার বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে কথা বলেছে। 

সংবাদপত্রের ফাইল ঘাঁটলে অসংখ্য শিরোনাম দেখা যায়- যা কিনা আজকের আওয়ামী লীগের চরিত্রের মধ্যে বিস্তর ফারাক। ভারতে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৬৬/এ ধারাটি বাতিল করে দিয়েছে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। বিচারক রায়ে বলেছেন, ধারাটি অসাংবিধানিক। বাকস্বাধীনতার পরিপন্থি, অস্বচ্ছ ও পরিণামে ভয়ঙ্কর। 

যাই হোক, ইতিহাস মোটেই শাসকদের পক্ষে থাকে না। বাংলাদেশেও দেখেছি। বিদেশেও ভূরি ভূরি নজির রয়েছে। যে সব দেশ মৌলিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় না- ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করে না- সে সব দেশ মুখ থুবড়ে পড়েছে। নিকট অতীতে ইরাক-লিবিয়ার ইতিহাস সবার জানা। আগে উন্নয়ন- পরে গণতন্ত্র চর্চা করতে গিয়ে অনেক দেশের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে। ভিন্নমতকে দমন করা সহজ। বন্দুক পারে না এমন কিছু নেই এই দুনিয়ায়। কিন্তু বন্দুকের তো কোনো দিক নেই। জনগণের প্রতি আস্থা হারিয়ে পৃথিবীতে অনেক শাসকই বন্দুকের প্রতি আস্থাশীল হয়ে পড়েন। আখেরে তাদের দু’কূলই যায়। ক্ষমতা দীর্ঘ করার জন্য বিএনপি অনেক কূটচালের আশ্রয় নিয়েছিল। এর অন্যতম রূপকার ছিলেন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জোটের দুই নেতা। খালেদা জিয়া নিজের ইচ্ছায় অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। এখনো একই প্রবণতা। অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ায় ভুলের মিছিল লম্বা হচ্ছে। 

বিশেষ ক্ষমতা আইন চালু করে আওয়ামী লীগ বরাবরই নিন্দিত হয়েছে। কখনো প্রশংসা পায়নি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারাই। আজ যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় তাদের অনেকেই বারবার এই আইনে বন্দি হয়েছেন। নির্যাতিত হয়েছেন। ২০০৬ সালের ৮ই অক্টোবর তথ্যপ্রযুক্তি আইন চালু করেছিল বিএনপি। এখন মূল্য দিচ্ছে কড়াভাবে। তাদের জন্য সামনে কি অপেক্ষা করছে কে জানে। স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতার পক্ষে কেউই কথা বলবেন না। অনেকেই অবশ্য ভুলে যান সবকিছুর একটা সীমারেখা আছে। বা থাকতে হবে। শাসকেরা এর সুযোগ নিয়ে ভিন্নমতকে কব্জা করতে চান। বিপত্তিটা সেখানেই। 

একটা সমাজ কি ভিন্নমত ছাড়া চলতে পারে? ক্ষমতা চিরস্থায়ী ভাবলে অবশ্য কথা নেই। এই পথটা সর্বনাশা। আজ আমাকে আপনি দমন করতে পারেন। ভাবতে পারেন সামনে সব আমার। আমি সবকিছু দমন করবো। কার কি এসে যায়! ইতিহাস বড় নিষ্ঠুর। কাউকেই ক্ষমা করে না। এক সময় বাংলাদেশের উদারনৈতিক গণতন্ত্রের প্রশংসা করতো সবাই। বিশেষ করে পশ্চিমা দুনিয়া। বলা হতো বাংলাদেশ হচ্ছে একমাত্র মুসলিম দেশ যেখানে পশ্চিমা ধাঁচের গণতন্ত্র চর্চা হয়। এখন তারা কি বলছে কারো না জানার কথা নয়। প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিদেশি সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্র আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য সরকারের কড়া সমালোচনা করছে।

কথা বললেই রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এক ধরনের রোগে পরিণত হয়েছে। মামলার প্রতিও মানুষের আস্থা কমছে। ভয়ের সংস্কৃতি অন্য এক ভয়ের জন্ম দেয়। জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি গণভোটে দেন। জনগণ গ্রহণ করলে কেউ আপত্তি জানাবে না। আর যদি কোনো সমালোচনাতেই সরকার কান না দেয় তাহলে ফিল্মী দুনিয়ার সুপারস্টার শাহরুখ খানের বিখ্যাত একটি উক্তির কথা স্মরণ করবো। তার কথায়, সময় বদলে গিয়েছে। মনে যা আছে সেটা বলা বা প্রকাশ না করাই ভালো। কারণ সবাই জানেন। এই মনের কথা বলতে হলে বাথরুমে গিয়ে বরং বলাই ভালো। শাহরুখ খান জিন্দাবাদ। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ সেপ্টেম্বর ১৯,২০১৮ 

সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে

সম্পাদকীয়

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যে ব্যাপক তোড়জোড় চলছে, তা দোষের নয়।  নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দল ও প্রার্থীই চাইবেন জয়ী হতে এবং সে জন্য আইনের বিধান মেনে তাঁরা কাজ করবেন—এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণার আগেই দল বিশেষ ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যেসব খবর আসছে এবং হাটে-মাঠে-ঘাটে তাকালে যে দৃশ্য চোখে পড়ছে তাতে দেখা যায়, বিভিন্ন আসনে স্থানীয় নেতারা বাহারি পোস্টার ছাপিয়ে নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। কেউ কেউ সংবাদ সম্মেলন করে, জনসমাবেশের এন্তেজাম করেও প্রার্থিতার কথা জানাচ্ছেন, ভোট চাইছেন। কিন্তু সেই সুযোগটি নিতে পারছে শুধু ক্ষমতাসীন দল ও তার সহযোগীরা। অন্যদিকে সরকারের যাঁরা প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত, অর্থাৎ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের রাখা হয়েছে দৌড়ের ওপর। নির্বাচনের মাস তিনেক আগেই রাস্তাঘাটে যেভাবে পোস্টার লাগানো হয়েছে, তাতে মনে হবে এটি দলীয় নির্বাচন। প্রায় প্রতিটি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা যেভাবে রংবেরঙের পোস্টার টানিয়ে নিজেদের মাহাত্ম্য প্রচার করছেন, তা কোনোভাবেই সুরুচির পরিচায়ক নয়।

যখন আওয়ামী লীগের নেতারা ট্রেন ও লঞ্চযোগে ‘নির্বাচনী যাত্রা’ চালাচ্ছেন, তখন বিরোধী দল, বিশেষ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে অযথা হয়রানির খবর আসছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। যখন কোনো মৃত ব্যক্তির নামে সন্ত্রাসের মামলা দেওয়া হয়, কিংবা যিনি ঘটনার সময় বিদেশে অবস্থান করছেন, তাঁকে মামলার আসামি করা হয়, তখন কারও বুঝতে বাকি থাকে না যে এসব মামলা রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আগের মামলাগুলোর পক্ষে যুক্তি দেখানো হয় যে তাঁরা ২০১৪-১৫ সালের সন্ত্রাসী ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু নতুন করে মামলা দেওয়ার কী কারণ থাকতে পারে? এখন তো সে রকম কোনো ঘটনা ঘটছে না। এসব মামলার ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে এসে ঠেকেছে।

যেকোনো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত সবার জন্য সমান সুযোগ। যেখানে ক্ষমতাসীন দল ও জোটের প্রার্থীরা অবাধে নির্বাচনের আগাম প্রচার চালাচ্ছেন, সেখানে হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার-হয়রানি কেবল অনৈতিক নয়, বেআইনিও। সভা-সমাবেশের ক্ষেত্রেও সরকার স্ববিরোধী অবস্থান নিয়েছে। ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগীরা চাইলেই কোনো স্থানে জনসমাবেশ করতে পারে। কিন্তু বিরোধী দলের কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে নানা বাধাবিপত্তি আরোপ করা হয়। যদিও সরকারের শীর্ষ মহল থেকে বলা হয়েছে, ‘এখন থেকে যেকোনো দল চাইলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করতে পারবে।’ আশা করি, এই দৃষ্টান্ত অন্যান্য শহর ও এলাকায়ও অনুসৃত হবে। নির্বাচন সামনে রেখে যদি বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিই পালন করতে না পারেন, তাহলে তঁাদের নির্বাচনে অংশ নিতে বলা প্রহসন বলেই মনে হয়। 

তফসিল ঘোষণা করা হয়নি—এই অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন কমিশন চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে হলেও নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে, সেহেতু তাদের ওপর কড়া নজর রাখতে হবে। কমিশনকে মনে রাখতে হবে, তারা পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত। তফসিল ঘোষণার আগে হোক আর পরে হোক—নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থী ও দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা তাদের কর্তব্য। তফসিল ঘোষণার আগে কোনো দল নির্বাচনী যাত্রা চালাতে পারলে অন্যরা কেন পারবে না? নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি ব্যাহত হয়, এমন কিছু কেউ যাতে করতে না পারে, সেই নিশ্চয়তাও কমিশনকে দিতে হবে।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ১৯,২০১৮ 

Classes dislocated for MPs programme

EDITORIAL

Schools are not for private use

When a sitting member of parliament (MP) decides to turn a secondary school in his constituency into a party centre for his personal use, and that too for three days during which time no classes were held, we pause to think how power goes to one's head. The school was handed back to its management with food leftovers which just goes to show how low an esteem the lawmaker holds of the educational institution, its students and teachers.

We would like to know precisely why the school's management committee did not protest this treatment, and instead condoned the action of the MP saying that there was nothing wrong in using the school premises since it was adjacent to his house. The incident occurred recently at Dhoakhola Coronation High School and College in Bera upazila and we are told that students are finding it very hard to bear the smell of stale food left behind.

It would seem that government property nowadays is treated as personal estate by some people's representatives. Apparently the feast was an attempt by the lawmaker to clinch the party's nomination in the upcoming elections. If this is the sort of behaviour we are going to witness from our lawmakers, then what hope is there to instil any worthwhile values in our children? They are learning from their “guardian”, as the MP claims he is, that displaying utter disregard for people is perfectly legitimate.

  • Courtesy: The Daily/ Sep 19, 2018  

4,300 acres of hills, forests razed for Rohingya shelters

UN report finds

A total of 4,300 acres of hills and forests were razed down to make temporary shelters, facilities and cooking fuel in Ukhia and Teknaf of Cox's Bazar, threatening the biodiversity of the three ecologically-critical areas of the country, according to a latest report.

A joint study, titled “Environmental Impact of Rohingya influx” conducted by the United Nations Development Programme (UNDP) and UN Women, with support from Ministry of Environment, Forests and Climate Change, was unveiled yesterday at a hotel in the capital.

The report highlighted the critical impact of one of the world's biggest influxes -- of above 700,000 Rohingyas -- on the environment of Cox's Bazar, and recommended measures for mitigation, restoration and conservation.

The report said since the influx began in August 2017, coupled with the host community and Rohingyas from past influxes, the crisis-affected population is now almost 1.5 million in Cox's Bazar. It has created massive pressure on the already-dilapidated environment of Cox's Bazar, which still remains significantly underfunded.

The report identified the key cause for the encroachment as the fact that nearly 6,800 tonnes of fuel wood is collected each month, and each Rohingya family uses on an average 60 bamboo culms to construct their temporary shelters.

It said due to the indiscriminate hill-cutting to provide shelters to the Rohingyas, the terrain of the hills has lost their natural setting, causing a potential risk of landslides.

The report also found thousands of shallow tube wells as threats to aquifers. Air pollution has risen due to increased vehicular traffic and smoke from firewood burned by refuges, and due to a lack of recycling, polythene bags and plastic bottles are piling up in various parts of the area, it said.

Sudipto Mukerjee, country director of UNDP Bangladesh, said the Rohingya influx has been putting immense pressure on scarce natural resources in the area, resulting in degraded natural forests, barren hills and an emerging water crisis.

“This situation demands immediate investment in restoring the environment and ecosystem, as part of the Bangladesh government's response in Cox's Bazar.”

Farah Kabir, country director of ActionAid Bangladesh, said the government should focus on alternative fuel use to address the fuel crisis. She also suggested rainwater harvesting to address the water crisis in the area.

“I urge the government to stop distributing kerosene at individual levels, as it may cause fire to break out at any time in the highly-dense camp,” she said, adding that the government can apply for the Green Climate Fund to address the issue.

Mohammad Mohsin, additional secretary of Ministry of Disaster Management and Relief, said only addressing the ecological and environmental problems will not bring any sustainable result. Rather, it requires a holistic approach by all stakeholders to address the Rohingya issue.

Mohammaed Shafiul Alam Chowdhury, chief conservator of forests, said immediate action should be taken to reduce pressure on forests by providing alternative fuel.

Anisul Islam Mahmud, minister for environment, forests and climate change, said the problem is not a simple one that can easily be managed.

“We tried rice husk and LPG as alternative fuel, but those did not get much success. Open kitchens or block kitchens can be a solution to the fuel problem,” he added.

The minister said the Rohingya issue is not going to be over in the next few years, so a well-thought and well-managed approach is needed to address the fuel crisis.

Anisul, however, said the water scarcity problem is the biggest issue there, as there will be no water there after a certain time.

He questioned whether donor agencies will come to restore the environment in Bangladesh after the Rohingyas leave for their homeland.

  • Courtesy: The Daily Star /Sep 19, 2018

A blow to the fundamentals of the Constitution

EDITORIAL

Incorporate suggested changes into the Digital Security Bill

We are extremely disappointed and shocked that a parliamentary standing committee report on the said Bill has been placed before the House without a single substantial change. The role of the JS body in this regard is disappointing. We are constrained to suggest that the parliamentary body has not only abdicated its duty as the representative of the people to protect their interest, it has, by its inaction, also relinquished its oath-bound obligation to defend the constitution by upholding its fundamental values, one of which is the freedom of speech and the media. It has failed the people woefully.

The government may put up bills in a manner that would suit them. But it is for the MPs, the people's representatives, to ensure that in fulfilling the government's agenda, the rights of the people are not trampled and constitutional guarantees are not abridged. Forwarding the report on the bill as it is to the parliament only suggests that the JS body did not take the public concerns, especially those of the media, seriously since not a single point suggested by the editors, journalists and media bodies has been incorporated. What is equally shocking is that the body has deemed it fit to revalidate an archaic, colonial and anti-people act like the Official Secrets Act.

We need hardly remind that in the day and age of technology, the digital platform has become an integrated and inseparable part of all media, and any effort to stifle it will in effect choke the mainstream media and thus the freedom of expression. In trying to prevent digital crime, the government will end up throttling the digital space.

We urge the parliament not to rush through its passage, reconsider the whole process and listen to the concerns raised. There is still time till the bill is passed to prevent an anti-people law from being enacted.

  • Courtesy: The Daily Star /Sep 19, 2018

Tuesday, September 18, 2018

ডিবি পরিচয়ে অপকর্মকারী কারা?

গোলাম মোর্তোজা

পূর্বাচল থেকে গুলিবিদ্ধ তিন যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরিচয়ও মিলেছে তিন যুবকের। কারা, কেন, কী কারণে তাদের গুলি করে হত্যা করল, কিছুই জানা যায়নি। পুলিশ কোনো ক্লু পাচ্ছে না।
ক্লু নিয়ে সামনে এলেন নিহতদের পরিবার। পরিবার সূত্রে জানা গেল, ১২ সেপ্টেম্বর রাতে পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকে যুবকদের তুলে নেওয়া হয়েছিল। ডিবির জ্যাকেট পরা পাঁচ-ছয় জন তাদের তুলে নিয়েছিল। তুলে নেওয়ার সময় তারা মানিকগঞ্জের ডিবি বলে পরিচয় দিয়েছিল। সন্ধান করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যরা ফেরিঘাটের প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে এসব তথ্য জেনেছেন। পূর্বাচলে তাদেরই লাশ পাওয়া গেছে ১৪ সেপ্টেম্বর।

পুরনো কিছু প্রশ্ন আবার নতুন করে সামনে এসেছে। রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি কেন মানুষকে তুলে নিবে, কেনই বা হত্যা করবে? এটা তো বিশ্বাসযোগ্য কোনো কথা হতে পারে না। তাহলে ডিবি পরিচয়ে কারা মানুষকে তুলে নিচ্ছে, হত্যা করছে?

এই প্রশ্নটি ডিবি পুলিশের ভেতরে আসছে কি না, নিশ্চিত নই। তবে সংবাদকর্মী থেকে সাধারণ জনমানুষের ভেতরে ‘প্রশ্ন- আতঙ্ক’ বড়ভাবে কাজ করছে।

নানা কারণে আমরা তো পুরনো ঘটনাগুলো মনে রাখতে পারি না। মনে করার জন্যে ‘ডিবি’ লিখে যদি একটু গুগলের আশ্রয় নেন, তবে অসংখ্য সংবাদের সন্ধান পাবেন। তার কয়েকটি শিরোনাম-

‘ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার পর ৫ জন নিখোঁজ’

‘ডিবি পরিচয়ে এক নারীকে তুলে নিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি’

‘চাঁদা দাবি, চট্টগ্রামে ৮ ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা’

‘ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার’

‘ডিবি পরিচয়ে টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টা, এসআইসহ ৬ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার’

এমন আরও বহু শিরোনাম তুলে ধরা যায়, দেওয়া যায় বিস্তারিত বিবরণ। তা দিয়ে লেখার পরিধি বাড়ানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এসব সংবাদ সত্য, না অসত্য? ডিবির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্যে বিশেষ কোনো মহল, এসব অপকর্ম করছে কি না?

প্রশ্নগুলোর উত্তরের সন্ধান করা ডিবিরই দায়িত্ব। সংবাদগুলো অসত্য হলে তা দেশের মানুষকে জানানো দরকার। বিশেষ কোনো মহল এসব করে থাকলে, তাদের সন্ধান- ধরাও ডিবিরই দায়িত্ব। এই কাজ ডিবি করছে কি না? যত জোর দিয়ে করা প্রত্যাশিত তা করছে কি না?


কক্সবাজারে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা ১৭ লাখ টাকাসহ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এই সদস্যরা সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিল। ছবি: সংগৃহীত

একেবারে করছে না, তা বলা যাবে না। বেশ কিছু ‘ভুয়া ডিবি’ বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি। ‘ভুয়া ডিবি’ গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাবও। যারা ডিবি পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি ছিনতাই করেছে বা করার চেষ্টা করেছে।

তবে ডিবির বিরুদ্ধে যত বড় অভিযোগ, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা পুলিশের ভাবমূর্তি জনমনে যে গতিতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, সেই গতিতে ও আন্তরিকতায় ডিবি পুলিশকে তৎপর হতে দেখা গেছে, তা বলা যাবে বলে মনে হয় না। ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া বা অপহরণের একটি অভিযোগ আসার পরে, কখনো বলা হয়েছে ‘আমরা করিনি’।

কখনো কোনো কিছু না বলে চুপ থাকা হয়েছে।

তিনটি ঘটনা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করছি।

ক. কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের ঢাকা মেডিকেলের সামনে থেকে টেনে হেঁচড়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ এসেছিল ডিবির বিরুদ্ধে। কয়েক ঘণ্টা নানা শঙ্কা চলল। তারপর ডিবির পক্ষ থেকে বলা হলো, তুলে আনা হয়নি- তথ্য জানার জন্যে তাদের ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছিল।

খ. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামসুন্নাহার হলের সামনে থেকে একজন ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গেল ডিবি। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল।

গ. নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদল সভাপতিকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ এলো ১৫ সেপ্টেম্বর। দুই দিন পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলো ১৭ সেপ্টেম্বর রনিকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।

দুইটি ক্ষেত্রে যাদের তুলে নেওয়া হয়েছিল, কয়েক ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রশ্ন হলো ‘তুলে নেওয়া’র দায় ডিবি নিলো কেন? কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী নেতারা আত্মগোপনে ছিলেন না। তথ্য জানার জন্যে তাদের ডাকা যেতে পারত। সাড়া না দিলে, অন্য ব্যবস্থার কথা নিশ্চয় ভাবা যেত।

শামসুননাহার হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্রী থাকেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের তো বহুবিধ পথ ছিল। হল প্রভোস্টের কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেত। অভিযোগ খুব গুরুতর হলে তাকে নিশ্চয়ই ডিবি কার্যালয়েও নিয়ে যাওয়া যেত। তা না করে সন্ধ্যার পর ক্যাম্পাস থেকে একজন ছাত্রীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার আতঙ্ক ছড়ানোর দায় ডিবি কেন নিলো?

রনিকে যদি ১৭ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়ে থাকে, তবে ১৫ সেপ্টেম্বর ডিবির বিরুদ্ধে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ এলো কেন? ডিবি কি তা তদন্ত করেছে, করবে?

মানুষের কাছে যখন এসব প্রশ্নের উত্তর থাকে না, তখন সামনে যে সংবাদ আসে - সবই বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়ে যায়। সত্য-অসত্য-গুজব যাই হোক না কেন।

সেই বিশ্বাসযোগ্যতা পোক্ত হয়ে যায়, যখন সুনির্দিষ্ট কিছু সত্যতা মানুষের সামনে আসে। তেমন দুইটি ঘটনা-

ঘটনা এক: ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরা পড়লেন ১১ জন ডিবি সদস্য। যারা কাফরুলের একটি ক্লাবে র‍্যাব পরিচয়ে চাঁদাবাজি করে ফিরছিলেন। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের এই ঘটনা ফলাও করে গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছিল।

ঘটনা দুই: কক্সবাজারের এক ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে ১৭ লাখ টাকা আদায় করেছিল ডিবি সদস্যরা। মাইক্রোবাসযোগে ফেরার পথে টাকাসহ ৬ ডিবি সদস্যকে আটক করে সেনা সদস্যরা। এটাও ২০১৭ সালের ঘটনা।

ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে এমন সব অভিযোগ আসছে, যা অকল্পনীয়। নারায়ণগঞ্জে ৭ অপহরণ হত্যা র‍্যাব কর্তৃক সংঘটিত, এই সত্য জানার পর মানুষের কাছে কোনো কিছুই যেন আর অবিশ্বাস্য মনে হয় না। তার বিচার চলছে। বলা হয় ‘কাউকে ছাড় দেওয়া’ হচ্ছে না। ডিবি বলবে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেই ব্যবস্থা মানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘প্রত্যাহার’ এবং কিছুদিন পর আবার পদায়ন। পুরো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবশ্যই অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। আবার একথাও স্বীকার করতে হবে যে, ডিবি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিছু সংখ্যকের দায় পুরো বাহিনী নেবে কি না, নিতে হবে কি না?

শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে শৈথিল্য দৃশ্যমান হলে, কিছু সংখ্যকের দায় পুরো বাহিনীকে বহন করতে হয়।

চাঁদাবাজি- খুন- ইয়াবাসহ মাদক চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে ডিবি- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গাইবান্ধার সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ যখন পুলিশের বিরুদ্ধে উঠছে, পুলিশি তদন্তে তার প্রমাণ মিলছে না। একজন বা দুইজন পুলিশ সাঁওতালদের ঘরে আগুন দিচ্ছে, অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে তা দেখছে, আগুন দেওয়ায় সহায়তা করছে-এই ভিডিও চিত্র সামনে আসার পরে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে ‘প্রত্যাহার’ করা হচ্ছে।

অপহৃত হওয়ার পর যারা ফিরে এসেছেন, কারা তাদের অপহরণ করেছিল, তা অনুসন্ধান করতে দেখা যায়নি।

পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলো ১২ জন শিক্ষার্থীকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল ৫ সেপ্টেম্বর। ডিবি তাদের আদালতে হাজির করেছে ৫ দিন পর ১০ সেপ্টেম্বর। ৫ সেপ্টেম্বর যে তাদের তুলে নেওয়া হয়েছিল, তা ডিবি স্বীকার না করে বলেছে ৯ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করেছে। পরিবারের না ডিবির, কার বক্তব্য সত্য? মানুষ ভেবে নিচ্ছেন তার মতো করে।

এমন বাস্তবতায় ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়া মানুষের লাশ পাওয়া যাওয়ার সংবাদ, মানুষের মনে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া জন্ম দেয়, ডিবি বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সম্পর্কে মানুষের মনোভাব কেমন হয়, নীতি- নির্ধারকদের জন্যে তা জানাটা কি অতি জরুরি নয়?

  • কার্টসিঃ The Daily Star/ Sep 18,2018 

রাঘববোয়াল পুঁজি লুটেরাদের কথা

মইনুল ইসলাম

১২ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘বিশ্বে অতি ধনীর উত্থানে শীর্ষে বাংলাদেশ’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি একটি বড় দুঃসংবাদ। মার্কিন গবেষণা সংস্থা ‘ওয়েলথ এক্স’-এর ২০১৮ সালের ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্টের গবেষণা মোতাবেক ২০১২ সাল থেকে ২০১৭—এই পাঁচ বছরে অতি ধনী লোকের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের সব ধনী দেশকে পেছনে ফেলে শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে। ওই সময় বাংলাদেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে ১৭.৩ শতাংশ হারে। ওই প্রতিবেদনে ৩ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি নিট সম্পদের অধিকারী ব্যক্তিদের অতি ধনী ‘আলট্রা-হাই নেট-ওয়ার্থ ইন্ডিভিজ্যুয়াল’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, বিশ্বে অতি ধনী ব্যক্তির সংখ্যা মোট ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫৫ জন। তাঁদের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আছেন যুক্তরাষ্ট্রে—৭৯ হাজার ৫৯৫ জন। দ্বিতীয় স্থানে জাপান, সে দেশে আছেন ১৭ হাজার ৯১৫ জন। তৃতীয় থেকে দশম স্থানে আছে গণচীন (১৬ হাজার ৮৭৫ জন), জার্মানি (১৫ হাজার ৮০ জন), কানাডা (১০ হাজার ৮৪০ জন), ফ্রান্স (১০ হাজার ১২০ জন), হংকং (১০ হাজার ১০ জন), যুক্তরাজ্য (৯ হাজার ৩৭০ জন), সুইজারল্যান্ড (৬ হাজার ৪০০ জন) ও ইতালি (৫ হাজার ৯৬০ জন)। অন্য দেশগুলোর ধনকুবেরের সংখ্যা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এই ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫৫ জন ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১২.৯ শতাংশ, কিন্তু তাঁদের সম্পদ বৃদ্ধির হার ছিল ১৬.৩ শতাংশ। তাঁদের মোট সম্পদের পরিমাণ বেড়ে ২০১৭ সালে দাঁড়িয়েছে ৩১.৫ ট্রিলিয়ন (মানে সাড়ে ৩১ লাখ কোটি) ডলারে। গত পাঁচ বছরে ধনকুবেরের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গণচীন ও হংকংয়ে, কিন্তু ধনকুবেরের সংখ্যার প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ১৭.৩ শতাংশ, বাংলাদেশে। গণচীনে ধনকুবেরের প্রবৃদ্ধির হার ১৩.৪ শতাংশ।

অতি ধনীর এই দ্রুততম প্রবৃদ্ধির হার বাংলাদেশের জন্য মহা বিপৎসংকেত হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। কারণ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের জিডিপি এবং জিএনআই প্রবৃদ্ধির হার যেভাবে বেড়ে চলেছে, সে প্রবৃদ্ধি এই ধনকুবেরদের দেশে-বিদেশের সম্পদের প্রবল স্ফীতি ঘটানোর অর্থই হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফলের সিংহভাগ দেশের ধনাঢ্য গোষ্ঠীগুলোর কাছে জমা হচ্ছে। সোজা কথায়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ন্যায্য হিস্যা থেকে দেশের শ্রমজীবী জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে ক্ষমতাসীন মহলের মারাত্মক ভ্রান্ত নীতির কারণে। দেশের আয় ও সম্পদের এহেন মারাত্মক পুঞ্জীভবন বর্তমান সরকারের ‘জনগণের সরকার’ দাবিকে মুখ ভ্যাঙচাচ্ছে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যার রাজনীতিকে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’-এর খারাপ নজির হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে উপহাসের পাত্রে পরিণত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক বলে দাবিদার দল আওয়ামী লীগের জন্য এই শিরোপা অত্যন্ত লজ্জাজনক। 

বাংলাদেশের চারটি মূলনীতির মধ্যে ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র আবার পুনঃস্থাপিত হয়েছে। ২০১১ সালে সংসদে পাস হওয়া সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার সে রায়কে সংবিধানে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু আমি বারবার জানিয়ে যাচ্ছি যে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করা সত্ত্বেও সরকার এখনো ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’র অহিফেনের মৌতাতে মেতে রয়েছে। ‘স্বজনতোষী পুঁজিবাদ’ (ক্রোনি ক্যাপিটালিজম) আজও নীতিপ্রণেতাদের ধ্যানজ্ঞান হিসেবে ‘হলি রিটের’ মর্যাদায় বহাল রয়ে গেছে। এসব পণ্ডিতম্মন্য ব্যক্তি সারা বিশ্বে আয় ও সম্পদ বণ্টনের ক্রমবর্ধমান বৈষম্যকে চোখে দেখতে পাচ্ছেন না। বাংলাদেশেও এই ক্রমবর্ধমান বৈষম্য যে মহাসংকটে পরিণত হয়ে যাচ্ছে, তার আলামত বারবার পেয়েও তাঁরা নির্বিকার! 

গত বছরের ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) তাদের পরিচালিত হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে ২০১৬-এর তথ্য-উপাত্তগুলো একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিল, যেগুলো ১৮ অক্টোবর ২০১৭ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিচালিত এবারের জরিপে ৪৬ হাজার হাউসহোল্ড বা খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জরিপের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো নিম্নরূপ:

১. বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী জনসংখ্যার অনুপাত ২০১৬ সালে ২৪.৩ শতাংশ ছিল, যে হার ২০১০ সালে ছিল ৩১.৫ শতাংশ। অতএব, ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল-এই ছয় বছরে দারিদ্র্য কমেছে ৭.২ শতাংশ। মানে, ওই ছয় বছরে প্রতিবছর গড়ে ১.২ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমেছে। এর আগের পাঁচ বছর মানে ২০০৫-১০ মেয়াদে দারিদ্র্য হ্রাসের হার ছিল প্রতিবছর ১.৭ শতাংশ। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে দারিদ্র্য হ্রাসের হার ক্রমেই শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণটাও জরিপের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে ধরা পড়েছে, সেটা হলো বাংলাদেশে আয়ের বৈষম্য বেড়ে মারাত্মক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।

২. অর্থনীতিশাস্ত্রে আয়ের বৈষম্য পরিমাপের বহুল ব্যবহৃত পরিমাপক হলো জিনি (বা গিনি) সহগ, যেটার মান এবারের জরিপে ২০১০ সালের ০.৪৬৫-এর চেয়ে বেড়ে ২০১৬ সালে ০.৪৮৩-এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। জিনি সহগের মান বাড়লে বোঝা যায় যে দেশে আয়ের বৈষম্য বেড়েই যাচ্ছে। যেসব দেশের জিনি সহগ ০.৫ পেরিয়ে যায়, সেসব দেশকে উন্নয়ন তত্ত্বে উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশ হিসেবে অভিহিত করা হয়, বাংলাদেশ এর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। মহাজোট সরকার নিজেদের দরিদ্রবান্ধব সরকার হিসেবে প্রোপাগান্ডা চালাতে সিদ্ধহস্ত। তাদের আমলে আয়বৈষম্য বেড়ে গেছে, এটা তাদের এহেন মিথ্যাচারের প্রতি চরম চপেটাঘাত বৈকি!

৩. আরও একটা উপাত্ত একই সাক্ষ্য বহন করছে: ছয় বছর আগে দেশের ১০ শতাংশ উচ্চবিত্ত ধনাঢ্য ব্যক্তির দখলে দেশের মোট জিডিপির ৩৫.৮৪ শতাংশ ছিল, ২০১৬ সালে ওই ১০ শতাংশ মানুষের হাতে দেশের ৩৮.১৬ শতাংশ আয় জমা হয়ে যাচ্ছে। এর বিপরীতে ১০ শতাংশ দরিদ্রতম মানুষ ২০১৬ সালে মোট আয়ের মাত্র ১.১ শতাংশের মালিক হতে পেরেছে, যেখানে ২০১০ সালে তারা মোট আয়ের ২ শতাংশের মালিক ছিল। একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর হাতে যে জিডিপি পুঞ্জীভূত হয়ে যাচ্ছে, এটা তার অকাট্য প্রমাণ। মুক্তবাজার অর্থনীতিকে আঁকড়ে ধরলে এটাই তো হবে, নয় কি?

৪. দেশের দরিদ্রতম ৫ শতাংশ মানুষের কাছে ২০১০ সালে ছিল ০.৭৮ শতাংশ আয়, কিন্তু ২০১৬ সালে তাদের কাছে মাত্র ০.২৩ শতাংশ আয় গিয়ে পৌঁছাতে পেরেছে। তার মানে, দেশের হতদরিদ্র ব্যক্তিরা ওই ছয় বছরে আরও দরিদ্র হয়ে গেছে।

১৯৭৫ সাল থেকে এ দেশের সরকারগুলো ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’র ডামাডোলে শরিক হয়ে ব্যক্তি খাত ও বাজারীকরণকে আঁকড়ে ধরার ফলে এ দেশে আয় ও সম্পদ বণ্টনের বৈষম্য বেড়ে বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছে গেছে। ১৯৭২ সালে বিআইডিএসের গবেষণায় নির্ণীত হয়েছিল যে বাংলাদেশের আয়বৈষম্য পরিমাপক জিনি সহগ ০.৩২। ২০১৬ সালে এসে জিনি সহগ ০.৪৮৩-এ পৌঁছে গেছে। ১৯৭০ সালে পাকিস্তানে ২২টি কোটিপতি পরিবারের কথা বলা হতো, যারা রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় পাকিস্তানের শিল্প-বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। ওই ২২ পরিবারের মধ্যে দুটো পরিবার ছিল পূর্ব পাকিস্তানের, তা-ও একটি ছিল অবাঙালি। ওই বাংলাদেশেই ২০১২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মোতাবেক ২৩ হাজার ২১২ জন কোটিপতি ছিলেন। 

২০১৪ সালে তাঁদের ওই সংখ্যা ৫০ হাজার অতিক্রম করেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে ১ কোটি টাকার বেশি অর্থ অ্যাকাউন্টে থাকা ব্যাংকের আমানতকারীদের সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার অতিক্রম করেছে বলে খোদ অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। 

এসব তথ্যের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল যে একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে গিয়ে পুঞ্জীভূত হয়ে যাওয়ার কিংবা তাদের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ার বিপৎসংকেত পাওয়া যাচ্ছে, সে ব্যাপারে ক্ষমতাসীন সরকারের কি কোনো করণীয় নেই? সাধারণ জনগণের কাছে বোধগম্য যেসব বিষয় এই বিপদটার জানান দিচ্ছে সেগুলো হলো: 

১. দেশে প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে ১১ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, যেখানে মা-বাবার বিত্তের নিক্তিতে সন্তানের স্কুলের এবং শিক্ষার মানে বৈষম্য সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে; ২. দেশে চার ধরনের মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে; ৩. ব্যাংকের ঋণ সমাজের একটা ক্ষুদ্র অংশের কাছে কুক্ষিগত হয়ে যাচ্ছে এবং ঋণখেলাপি বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে; ৪. দেশের জায়গাজমি, অ্যাপার্টমেন্ট, প্লট, ফ্ল্যাট, মানে রিয়েল এস্টেটের দাম প্রচণ্ডভাবে বেড়েছে; ৫. বিদেশে পুঁজি পাচার মারাত্মকভাবে বাড়ছে; ৬. ঢাকা নগরীতে জনসংখ্যা ১ কোটি ৭৫ লাখে পৌঁছে গেছে, যেখানে আবার ৪০ শতাংশ বা ৭০ লাখ মানুষ বস্তিবাসী; ৭. দেশে গাড়ি, বিশেষত বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে; ৯. বিদেশে বাড়িঘর, ব্যবসাপাতি কেনার হিড়িক পড়েছে; ১০. ধনাঢ্য পরিবারগুলোর বিদেশ ভ্রমণ বাড়ছে; ১১. উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের বিদেশে পড়তে যাওয়ার খায়েশ বাড়ছে; ১২. উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার জন্য ঘন ঘন বিদেশে যাওয়ার খাসলত বাড়ছে; ১৩. প্রাইভেট হাসপাতাল ও বিলাসবহুল ক্লিনিক দ্রুত বাড়ছে; ১৪. প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার হিড়িক পড়েছে; ১৫. দেশে ইংলিশ মিডিয়াম কিন্ডারগার্টেন, ক্যাডেট স্কুল, পাবলিক স্কুল এবং ও লেভেল/এ লেভেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার মচ্ছব চলছে এবং ১৬. প্রধানত প্রাইভেট কারের কারণে সৃষ্ট ঢাকা ও চট্টগ্রামের ট্রাফিক জ্যাম নাগরিক জীবনকে বিপর্যস্ত করছে।

ইন্টারনেটে উইকিপিডিয়ায় খোঁজ নিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—১৮৭০ থেকে ১৯১৪ সালের পুঁজিবাদী বিকাশে ‘রবার ব্যারন’দের ভূমিকার বর্ণনা পাওয়া যাবে, যার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর ৪৭ বছরের রাঘববোয়াল পুঁজি লুটেরাদের অবিশ্বাস্য ধনসম্পদ আহরণের পদ্ধতির আশ্চর্যজনক মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। এসব রবার ব্যারন সৃষ্টির জন্য কি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলাম আমরা?

  • মইনুল ইসলাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ সেপ্টেম্বর ১৮,২০১৮ 

বিমানবন্দর-কেরানীগঞ্জ বিআরটি হচ্ছে না

প্রতিবন্ধক ফ্লাইওভার

শামীম রাহমান

পরিকল্পনা ছিল, গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত যাত্রীদের দেড় ঘণ্টায় পৌঁছে দেয়ার। এ লক্ষ্যে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিশেষায়িত বাস লেনের (বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি) একাংশের কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু বিপত্তি বেধেছে বিমানবন্দর-কেরানীগঞ্জ অংশটি বাস্তবায়নে। মগবাজার-মৌচাক ও প্রস্তাবিত শান্তিনগর-ঝিলমিল ফ্লাইওভারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় অংশটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার।

সরকারের কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বিআরটি নির্মাণের সুপারিশ ছিল। এটিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল বিআরটি-৩ নামে। প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না হওয়ায় ২০১২ সালে প্রকল্পটির একাংশ (গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত) অনুমোদন দেয় সরকার, যার কাজ চলছে। বিআরটির অন্য অংশটি হলো বিমানবন্দর-কেরানীগঞ্জ, তবে এটি আর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গাজীপুর-কেরানীগঞ্জ বদলে এখন বিআরটি লাইনটি বিমানবন্দর থেকে মহাখালী পর্যন্ত সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখান থেকে ফিডার সার্ভিসের মাধ্যমে ফার্মগেট ও গুলিস্তানে বিআরটির যাত্রীদের পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানান ডিটিসিএর কর্মকর্তারা। এটিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে পার্ট অব দ্য বিআরটি নামে। 

বিআরটি বাস্তবায়ন-সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ দলের অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামছুল হক। বিমানবন্দর-কেরানীগঞ্জ অংশে বিআরটি নির্মাণে সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, বিমানবন্দর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বিআরটি লাইনটি যাওয়ার কথা ছিল মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-বিজয়নগর-শান্তিনগর হয়ে। এ পথে লাইনটি এগিয়ে নিতে প্রথম বাধার মুখে পড়বে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারে। ফ্লাইওভারের নিচে বড় বড় খুঁটির কারণে বিআরটির জন্য লেন বের করা যাবে না। আবার উপরেও মাত্র দুটি লেন। যদি ফ্লাইওভারটি ছয় লেন থাকত, তাহলে দুপাশে একটি করে লেন বিআরটির জন্য রাখা যেত।

শুধু তাই নয়, প্রস্তাবিত শান্তিনগর-ঝিলমিল ফ্লাইওভারের অ্যালাইনমেন্ট আর বিআরটি-৩-এর অ্যালাইনমেন্ট একই। এ ফ্লাইওভারও থাকবে রাস্তার মাঝখানে। এসব কারণে বিমানবন্দর-কেরানীগঞ্জ বিআরটির পরিকল্পনাই আর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।

বিকল্প পরিকল্পনার বিষয়ে অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, গাজীপুর-বিমানবন্দর বিআরটি হচ্ছে। চিন্তার বিষয় হচ্ছে, এটি ব্যবহার করে যেসব যাত্রী বিমানবন্দরে এসে নামবে, তাদের কীভাবে শহরের ভেতরে আনা হবে। এ কারণে বিআরটি-৩-এর মূল নকশা বাস্তবায়ন না করে গাজীপুর-বিমানবন্দর অংশটি সম্প্রসারণ করে মহাখালী পর্যন্ত এগিয়ে নেয়া হবে। মহাখালী থেকে চালু করা হবে ফিডার সার্ভিস। একটি ফিডার সার্ভিস যাত্রীদের নিয়ে যাবে ফার্মগেটে। আরেকটি ফিডার সার্ভিস দিয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত যাত্রীদের পৌঁছে দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে।

বর্তমান বিআরটি-৩-এর গাজীপুর-বিমানবন্দর অংশের কাজ চলছে। গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের আওতায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সেতু বিভাগ (বিবিএ) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লাইনটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে। নির্মাণ করা হচ্ছে ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার বিআরটি লেন। এর মধ্যে পড়েছে টঙ্গী সেতু। এটি বিআরটি প্রকল্পের আওতায় ১০ লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। পাশাপাশি নির্মাণ করা হচ্ছে ছয়টি ফ্লাইওভার, একটি বাস ডিপো, ১১৩টি সংযোগ সড়ক ও ২৪ কিলোমিটার উচ্চক্ষমতার ড্রেন। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে অংশটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ২ হাজার ৩৯ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানবন্দর-কেরানীগঞ্জ বিআরটি বাস্তবায়ন না হলে ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন গাজীপুর-বিমানবন্দর অংশটি তেমন কাজে আসবে না।

পরিবহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মিজানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ঢাকার যানজট নিরসনের সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম হতে পারে মেট্রোরেল ও বিআরটি। সরকারের কৌশলগত পরিকল্পনাতেও গাজীপুর-কেরানীগঞ্জ বাস ট্রানজিটের সুপারিশ ছিল। এ পরিকল্পনার কথা না ভেবে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার বানানো হয়েছে। শান্তিনগর-ঝিলমিলে ফ্লাইওভার বানানোরও উদ্যোগ নিয়েছে। এসব ভুল পরিকল্পনার কারণে যদি বিআরটি লাইনটি অর্ধেক বাস্তবায়ন করেই থেমে যেতে হয়, তাহলে যেটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে তার সুফলও মিলবে না।

তিনি আরো বলেন, উদ্দেশ্য ছিল বিআরটি দিয়ে কেরানীগঞ্জ থেকে গাজীপুরে নির্বিঘ্নে যাত্রীদের পৌঁছে দেয়া। অর্ধেক বিআরটি দিয়ে সেটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিআরটি লাইনটি ঢাকা-ময়মসসিংহ সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করার কথা ছিল। কেরানীগঞ্জ-বিমানবন্দর বিআরটি না হলে সে লক্ষ্যও পূরণ হবে না।

বিআরটির পরিকল্পনা, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়নের কাজ হয়েছে ডিটিসিএর তত্ত্বাবধানে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ কাজগুলো করা হয়েছে। তবে বিআরটির এ অংশটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও নকশা প্রণয়ন করলেও অর্থায়নে রাজি হয়নি বিশ্বব্যাংক। কারণ হিসেবে তারা শান্তিনগর-ঝিলমিল ফ্লাইওভারের অনুমোদনকে দায়ী করেছে।

বিআরটি প্রকল্পে সৃষ্ট এসব জটিলতার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিটিসিএর ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার আনিসুর রহমান বলেন, গাজীপুর-বিমানবন্দর অংশের কাজ চলছে। আর বিমানবন্দর-কেরানীগঞ্জ অংশের বদলে বিমানবন্দর থেকে মহাখালী পর্যন্ত বিআরটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমরা শুধু পরিকল্পনা করে দিই, বাস্তবায়ন করি না। এ অংশটি সওজ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন ও এলজিইডি বাস্তবায়ন করবে। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ সেপ্টেম্বর ১৮,২০১৮

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে আস্থার সংকট রয়েছে - টিআইবি


বর্তমানে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া নিয়ে আস্থার সংকট রয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন হতে পারে যদি রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগিতা করে। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আস্থার সংকট রয়েছে। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি’র নিজ কার্যালয়ে ‘রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে সুশাসন ও শুদ্ধাচার’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতাকে একচ্ছত্রভাবে কেন্দ্রীকরণের প্রবণতা বিদ্যমান। টিআইবি মনে করে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং হেরে যাওয়া দলের ফল প্রত্যাখ্যান করার কারণে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা থাকলে দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করে টিআইবি। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতা রয়েছে।
জনগণের মধ্যেও এই আস্থাহীনতা দেখা যাচ্ছে।

রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে ইশতেহার প্রকাশে আগ্রহী হলেও পরবর্তীতে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে তৎপরতা চোখে পড়ে না উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত কোনো কোনো অঙ্গীকার পূরণ হলেও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গীকার কখনো পূরণ করা হয় না। এসব অঙ্গীকারের মধ্যে ছিল কার্যকর সংসদ, ন্যায়পাল নিয়োগ, কালো আইন বাতিল, জনপ্রতিনিধিদের সম্পদের তথ্য প্রকাশ, রাষ্ট্রায়ত্ত রেডিও-টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন এবং বিতর্কিত বা নিয়ন্ত্রণমূলক আইন প্রণয়ন ইত্যাদি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর যেমন ইশতেহার বাস্তবায়নের ঘাটতি রয়েছে, তেমনি দুর্নীতি দমন, অবাধ তথ্য প্রবাহের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন সংক্রান্ত অনেক ভালো ভালো আইন প্রণয়ন করা হলেও সেসব আইনের বাস্তবায়ন হয় না।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাস্তবতা হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যেহেতু সাংবিধানিকভাবে বাতিল হয়েছে, তাই সাংবিধানিক পন্থায় যেভাবে বৈধ, সেভাবে নির্বাচন করতে হবে। আমরা যদি পৃথিবীর দিকে তাকাই, যেখানে সংসদীয় গণতন্ত্র বিরাজ করছে সেখানে কিন্তু নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিরল। তবে বেশ কয়েকটি দেশ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচন শুধু নির্বাচন কমিশন করে না। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অন্য যারা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে তাদের মধ্যে আমরা সাধারণত ধরে থাকি প্রশাসন, আইনপ্রক্রিয়া সংস্থা ইত্যাদি। কিন্তু সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রাজনৈতিক দলগুলো। সেখানে যদি তাদের (রাজনৈতিক দল) দায়িত্বশীল ভূমিকা থাকে তাহলে এটা (নিরপেক্ষ নির্বাচন) সম্ভব।

এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য হয়নি এই কথা বলা যাবে না। তবে রাজনৈতিক দল এবং জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একটা আস্থাহীনতা রয়েছে। তবে তার মানে এই নয় যে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক এবং সব দলের মধ্যে আস্থা অর্জন করতে পারলে দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।

সংবাদ সম্মেলনে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তির জন্য টিআইবি ৬টি ক্যাটাগরিতে ৩৫টি সুপারিশ করে। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংসদে সরকারি দলের একচ্ছত্র ভূমিকা নিরুৎসায়িত করতে বৈধ ও আগ্রহী সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও নির্বাচিত সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। দলীয় প্রধান, সরকার প্রধান ও সংসদ নেতা একজন হওয়া উচিত নয়। তিনজন একব্যক্তি হলে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকে না। বিরোধীদলকে সংসদীয় কার্যক্রমে আরো বেশি সুযোগ দেয়া, ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদল থেকে নিয়োগ দেয়া, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ দেয়া, রাজনৈতিক দলগুলোতে অভ্যন্তরীণভাবে গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ দেয়া। এ ছাড়া এমন কোনো আইনি সংস্কার না করা যাতে দুদকের স্বাধীনতা খর্ব হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা প্রত্যাহার না করা, বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত রাখা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্বিচারে আটকসহ সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা এবং নারী, সংখ্যালঘু ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করা, সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি নিশ্চিত করারও সুপারিশ করে টিআইবি।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন- টিআইবি’র রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের প্রধান শাহজাদা এম আকরাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- টিআইবির উপদেষ্টা ড. সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসানসহ কর্মকর্তারা। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ সেপ্টেম্বর ১৭,২০১৮