Search

Tuesday, October 2, 2018

Over 400 activists held on Sunday - BNP


Bangladesh Nationalist Party on Monday claimed that the law enforcing agencies arrested more than 400 leaders and activists of the party as part of the government’s bid to foil a public meeting of BNP in Dhaka on Sunday. 

The leaders and activists were arrested on their way to and from the rally at Suhrawardy Udyan in Dhaka, said BNP’s senior joint secretary general Ruhul Kabir Rizvi at a news briefing.

He alleged that the ruling party activists with the help of police stopped public transports and restrained people from joining BNP meeting at different places in and around the Dhaka city. 

He said leaders and activists from Dhaka, Tangail, Mymensing, Narayanganj, Kishoreganj, Munshiganj, Gazipur and Brahmanbaria, including the party’s national executive committee member Mobasher Alam Bhuiyan, central leader Mojibur Rahman, Dhaka north city unit organising secretary Sohel Rahman were arrested.

In response to a comment of Awami League general secretary Obaidul Quader that the gathering at BNP’s rally indicated a decline in its popularity, Rizvi said the government had started shivering seeing the huge gathering at the public meeting. 

He expressed concern over sending BNP’s finance affairs secretary Khaled Mahbub Shyamal to jail on Sunday after he appeared before a Brahmanbaria court.

  • Courtesy: New Age /Oct 02, 2018

Quader announces polls schedule without consulting EC

Election commissioner Kabita Khanam on Monday said that ruling Awami League general secretary Obaidul Quder did not talk to the Election Commission before stating that the commission would announce the schedule for the next national election in the first week of November.

At a press conference at her office, she said that the schedule for the next general election would be announced in a meeting of the commission led by chief election commissioner KM Nurul Huda.

Obaidul Qurder, also the road transport and bridges minister, made the comment on Sunday at his ministry.

Earlier on September 19, finance minister AMA Muhith said that the next general election was likely to be held on December 27.

A day after he made the comment, the chief election commissioner said that finance minister AMA Muhith had no authority to declare the schedule of general election and it was not his duty either.

He also said that declaring the polls date was not finance minister’s duty and it was not proper for him either.

  • Courtesy: New Age /Oct 02, 2018

সন্দেহের ভিত্তিতে ধরে ধরে মামলা দেওয়া হচ্ছে










বিএনপির রোববারের সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ঢাকার ৩৩টি থানায় ৪২টি মামলায় ১৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে ১৩৪ জনের বিরুদ্ধে


আসামির কাঠগড়ায় ডালিমকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন রোকেয়া বেগম। ডালিম সম্পর্কে রোকেয়ার নাতি। রোকেয়ার দাবি, ডালিম (২৩) কেরানীগঞ্জের একটি গ্রিলের কারখানায় কাজ করেন। বন্ধুদের সঙ্গে রোববার গুলিস্তানে এলে সেখান থেকে তাঁকেসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ওয়ারী থানা-পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির রোববারের সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের কাজে বাধা ও নাশকতার অভিযোগে ঢাকার ৩৩ থানায় ৪২ মামলায় ১৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৩৪ জনের বিরুদ্ধে সোমবার রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।

সোমবার বিকেলে ঢাকার আদালত ডালিমকে দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। ডালিমের রিমান্ডে নেওয়ার খবর শুনে দাদি রোকেয়া প্রথম আলোকে বলেন, ডালিমের নামে আগে কোথাও মামলা নেই। রাজনীতিও করেন না। তাঁর বাবা সেলিম মিয়া নৌকা চালিয়ে সংসার চালান। রোকেয়া ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, এখন ডালিমের মামলার খরচ চালাবে কে?

ডালিমের বন্ধু অনিক। তাঁর বাড়িও কেরানীগঞ্জ। অনিকের আইনজীবী হাবিবুর রহমান আদালতে দাবি করেন, রোববার সোহরাওয়ার্দীতে বিএনপির সমাবেশ ছিল। ঢাকার কোথাও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড হয়েছে—এমন কোনো খবর টেলিভিশন কিংবা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। তাঁর মক্কেল অনিককে গুলিস্তান থেকে ধরে নিয়ে বলছে, ওয়ারীর জয়কালী মন্দির এলাকায় অনিক নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।

ডালিম, অনিকসহ ১৩ জনকে সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে হাজির করে ওয়ারী থানা-পুলিশ ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। আদালত প্রত্যেককে দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশকে অনুমতি দেন।

আসাদুজ্জামান রোববার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে দলটির নেতা-কর্মীরা এই সমাবেশে অংশ নেয়। ঢাকার আদালত এবং পুলিশ সূত্র বলছে, বিএনপির রোববারের সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ঢাকার ৩৩টি থানা-পুলিশ ৪২টি মামলায় ১৯০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে পুলিশ বলেছে, গ্রেপ্তার সব আসামি বিএনপি ও এর অঙ্গ–সংগঠনের নেতা-কর্মী। এঁরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার রাস্তায় অবস্থান নিয়ে যানচলাচলে বাধা দেন, সরকার বিরোধী স্লোগান দেন। এ ছাড়া পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটান এবং নাশকতা মূলক কর্মকাণ্ড ঘটান। এসব ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের জন্য আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ১৩৪ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন।

তবে গ্রেপ্তার আসামিদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, হয়রানি করার জন্য পুলিশ এসব আসামিকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আদালতের কাছে দাখিল করতে পারেনি পুলিশ। শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঢাকার আদালতে দেখা যায়, বেলা দুইটার পর থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনেরা আদালতে ভিড় করতে শুরু করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বজনদের অনেকে আদালতের সামনে অপেক্ষা করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতের সামনে দেখে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। গ্রেপ্তার বিএনপি ও এর অঙ্গ–সংগঠনের নেতা কর্মীদের প্রিজন ভ্যানে করে আদালত থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

রোববার গ্রেপ্তার হওয়া সজীব ও হৃদয় শেখের আইনজীবী মুক্তাদির ফরিদী আদালত বলেন, হৃদয় শেখ কেরানীগঞ্জের একটি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র। সজীব কাঠমিস্ত্রি। নয়াবাজার এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। হৃদয়ের মানিব্যাগে ছিল ২ হাজার টাকা, আর সজীবের ছিল ১ হাজার টাকা। পুলিশ সেই টাকা নিয়ে নিয়েছে। পরে তাঁদের ওয়ারী থানার রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।

পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার নাজমুল হক, মতিঝিল থানার মামলায় গ্রেপ্তার শাহিনূর, রামপুরার মামলায় গ্রেপ্তার জুয়েল ওরফে আজি আহম্মেদ, সবুজবাগ থানার মামলায় আকরাম খান টিংকন ও সুজন মিয়ার আইনজীবীরা আদালতকে জানান, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরও পুলিশ রাস্তা থেকে তাঁদের সন্দেহের ভিত্তিতে ধরে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়েছে।

অন্যদিকে, সাভার থানা-পুলিশ গত বছরের নভেম্বর মাসের পুরোনো মামলায় নয়জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠায়। পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে দেন। আদালত আদেশে বলেন, এসব আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই।

কোন থানায় কতজন গ্রেপ্তার

মতিঝিল থানায় ১৭ জন, ওয়ারী থানায় ১৩ জন, পল্টন ১৪ জন, শাহজাহানপুর ১১ জন, সবুজবাগ থানায় ৯ জন, রামপুরা থানায় ৮ জন, কদমতলী থানায় ৮ জন, খিলগাঁও থানায় ৮ জন, মুগদা থানায় ৮ জন, যাত্রাবাড়ী থানায় ৪ জন, শ্যামপুর থানায় ২ জন, গুলশান, খিলক্ষেত থানায় ১ জন, উত্তরা পশ্চিম থানায় ১ জন, নিউমার্কেট থানায় ৫ জন, কলাবাগান থানায় ৪ জন, দারুস সালাম থানায় ২ জন, হাজারীবাগ থানায় ৭ জন, ধানমন্ডি থানায় ১ জন, রমনা থানায় ১০ জন, শাহবাগ থানায় ৬ জন, বাড্ডা থানায় ৬ জন, বনানী থানায় ২ জন, ভাটারা থানায় ২ জন, তেজগাঁও থানায় ৪ জন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ৫ জন, হাতিরঝিল থানায় ৭ জন, কোতোয়ালি থানায় ৩ জন, পল্লবী থানায় ৩ জন, মোহাম্মদপুর থানায় ৩ জন, চকবাজার থানায় ৬ জন, কামরাঙ্গীরচর থানায় ৪ জন এবং সাভার থানায় ৯ জন।

  • কার্টসি: প্রথম আলো /০২ অক্টোবর ২০১৮

ফখরুল, মওদুদ, মঈন, নজরুল, আব্বাস, গয়েশ্বর, খসরুসহ ৫৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা


মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ৫৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে পুলিশ। আজ সোমবার হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এই মামলার সাত আসামিকে এক দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

মামলায় দলটির কেন্দ্রীয় নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমানকেও আসামি করা হয়েছে।

মামলায় পুলিশ বলছে, বিএনপি কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করে। সেখানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য দেন।

মামলায় বলা হয়, বিএনপির এসব নেতার এমন বক্তব্যের পর গতকাল রাত ৮টার দিকে হাতিরঝিল থানার মগবাজার রেলগেট এলাকায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং জামায়াতের ছাত্রশিবিরের ৭০ থেকে ৮০ জন নেতা–কর্মী জড়ো হন। তাঁরা রাস্তায় যান চলাচলে বাধা দেন। পুলিশ জড়ো হওয়া নেতা–কর্মীদের সড়ক অবরোধ না করতে অনুরোধ করে। কিন্তু পুলিশের অনুরোধ উপেক্ষা করে তাঁরা পুলিশকেই হত্যার উদ্দ্যেশ্যে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। সেখানে দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং একটি বাস ভাঙচুর করেন। প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তাঁরা লাঠি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মারধর শুরু করেন, ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। মামলায় বলা হয়, ভাঙচুর করা গাড়িগুলো আত্মরক্ষার্থে দ্রুত চলে যাওয়ায় গাড়ির নম্বর সংগ্রহ করতে পারেনি পুলিশ।

বলছে, ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের সাত নেতাকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন কুমিল্লা জেলা বিএনপির সহসভাপতি মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া (৪৮), বাড্ডা যুবদলের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন (৪০), গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার শফিউদ্দিন (৪৩), গুলশান ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রাশেদ বিন সোলায়মান (৪৪), ভালুকা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন (৫৩), বাড্ডার ৪১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি সামছুল হক (৪০), লাঙ্গলকোট থানা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব খন্দকার (৩৫)।

আদালত সূত্র বলছে, গ্রেপ্তার এই সাতজনকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে (সিএমএম) হাজির করে হাতিরঝিল থানা-পুলিশ তাঁদের সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের ১ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, নাশকতাকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে হাতিরঝিল থানার সহকারী উপপরিদর্শকসহ (এএসআই) তিন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

আলামত হিসেবে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫টি বাঁশের লাঠি, দেড় লিটার পেট্রল, বিস্ফোরিত ককটেলের বোমার অংশবিশেষ ও ভাঙা কাচের টুকরা জব্দ করেছে।

  • কার্টসি: প্রথম আলো /০২ অক্টোবর ২০১৮

Monday, October 1, 2018

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ : প্রকল্প বাতিল, তবে সুদ টানছে পেট্রোবাংলা

ইয়ামিন সাজিদ

শুরু থেকেই প্রকল্পের কাজে ধীরগতি ও অসঙ্গতি। শেষ পর্যন্ত কাজ অসমাপ্ত রেখে প্রকল্পই বাতিল। ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয় করেও খুলনা অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ করতে পারেনি পেট্রোবাংলা। যদিও আর্থিক ক্ষত ঠিকই বইতে হচ্ছে। বাতিল হওয়ার পরও প্রকল্পের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে নেয়া ২৫০ কোটি টাকা ঋণ ৫ শতাংশ হারে সুদসহ পরিশোধ করতে হচ্ছে পেট্রোবাংলাকে।

কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা ও বাগেরহাটসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মোট ৮৪৫ কিলোমিটার গ্যাস বিতরণ লাইন নির্মাণের জন্য কেনা ১৪৮ কোটি টাকার পাইপও পড়ে আছে। অন্যান্য গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কাছে এসব পাইপ বিক্রির কথা থাকলেও তা অবিক্রীতই রয়ে গেছে। খুলনার শিরোমনি এলাকায় স্তূপাকারে ফেলে রাখা হয়েছে চীন থেকে আমদানি করা এসব পাইপ।

২০০৯ সালে পাস হওয়া ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক’ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় মোট ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এডিবির কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেয়া হয় ২৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার আগে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ও করেছে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।

পেট্রোবাংলা সূত্রগুলো বলছে, যেহেতু প্রকল্পটি সরকারের নির্দেশে নেয়া হয়েছে, গ্যাস না থাকায় সরকারই আবার এটি বন্ধ করেছে। ফলে প্রকল্পটি নেয়ার পর বরিশাল ও খুলনায় গ্যাস বিতরণের জন্য সৃষ্ট সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির এ ঋণ পরিশোধের যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। যদিও চুক্তির সময় কোম্পানি গঠন ও ওই কোম্পানি ঋণ পরিশোধ করবে বলা হয়েছিল। তবে কোম্পানির আয় না থাকায় তারা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারবে না বলে পেট্রোবাংলাকে জানিয়েছে।

সুদসহ ঋণের অর্থ কে পরিশোধ করবে পেট্রোবাংলার পর্ষদ সভায় তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনাও হয়েছে। অর্থ বিভাগ থেকে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করার জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় সভায়। সে অনুযায়ী জ্বালানি বিভাগে একটি চিঠিও দেয়া হয়। এরপর এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে চুক্তিটি যেহেতু পেট্রোবাংলা করেছে, সুদসহ ঋণও তাদেরই পরিশোধ করতে হচ্ছে।

জানা যায়, বিদেশী ঋণের ক্ষেত্রে চুক্তি স্বাক্ষর করে ইআরডি। পরে ইআরডি ওই টাকা পরিশোধ করে। কোথা থেকে আসবে সেটা ইআরডির বিবেচ্য নয়। ইআরডির বরাদ্দ থাকে, তা থেকে ঋণ পরিশোধ করা হয়। তবে এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে একটি সাবসিডিয়ারি লোন এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) হয়। সে অনুযায়ী  ইমপ্লিমেন্টিং এজেন্সি প্রকল্পের মালিক ঋণের টাকা সরকারকে পরিশোধ করে। সরকার ইআরডির মাধ্যমে তা ঋণদাতাকে পরিশোধ করে।

পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, এসএলএ অনুযায়ী তো সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির এ ঋণ পরিশোধ করার কথা। তবে কোম্পানিটির যে অবস্থা, তাতে এ ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা তাদের নেই। সম্ভবত পেট্রোবাংলাই এ ঋণ পরিশোধ করবে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করতে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে ২০০৬ সালে এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করে সরকার। এডিবি ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস নেটওয়ার্ক’ শীর্ষক একটি প্রকল্পও ২০০৯ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পাস হয়। খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া— এ পাঁচ জেলার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহে ২০১১ সালে গঠন করা হয় সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। বিতরণ লাইন ও মিটারিং স্টেশন স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পাইপ-যন্ত্রপাতি কেনা হয়, সম্পন্ন হয় ভূমি অধিগ্রহণও। এসব কাজে ব্যয় হয় ৩৫০ কোটি টাকার বেশি। প্রকল্প শুরুর সাত বছরে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৮৪৫ কিলোমিটার বিতরণ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু করতেই ব্যর্থ হয় বাস্তবায়নকারী সংস্থা। অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় অসমাপ্ত রেখেই প্রকল্প সমাপ্তের নির্দেশ দেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। সেই সঙ্গে নির্দেশ দেয়া হয় প্রকল্পের জন্য কেনা পাইপ ও যন্ত্রাংশ বিক্রির।

চীন থেকে আমদানি করা প্রায় ১১ হাজার টন এপিআই পাইপ প্রকল্প বাতিলের পর থেকেই খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা হয়। এগুলো কিনতে পেট্রোবাংলা রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য গ্যাস বিতরণ কোম্পানিকে নির্দেশ দিলেও মরিচা পড়া এসব পাইপের মান নিয়ে শঙ্কা থাকায় তা ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান।

চীন থেকে আমদানি করা এসব পাইপ স্তূপ করে রাখা হয়েছে খুলনার শিরোমনি এলাকায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আবাসিক সংযোগের জন্য আনা প্রায় ১৫০ কোটি টাকার পাইপ পড়ে আছে একটি পরিত্যক্ত জমিতে। শিরোমনি এলাকার আফিল গেটে প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে সেগুলো। সেখানে ২ থেকে ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাসের পাইপ রয়েছে। রোদ-বৃষ্টিতে দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় মরিচা ধরে এগুলো রঙ হারিয়েছে অনেক আগেই। পাইপের গায়ে মরিচার পুরু স্তর জমেছে। হালকা নড়াচড়াতেই মোটা স্তর ধরে মরিচা উঠে আসে।

জানতে চাইলে বাতিল হওয়া এ প্রকল্পের পরিচালক ও বর্তমানে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দপ্তরে নিযুক্ত রেজাউল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, আবাসিক খাতে গ্যাস বিতরণের জন্য প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু গ্যাস না থাকায় পেট্রোবাংলা, অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান এডিবি ও বাংলাদেশ সরকার দেড় বছর আগে প্রকল্পটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। পাইপসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ পেট্রোবাংলার অন্যান্য কোম্পানির কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। কোনো পাইপ নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই।

গ্যাসের লাইনে ব্যবহূত পাইপ আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের (এপিআই) নির্দেশনা মেনে তৈরি করতে হয় বলে এগুলো এপিআই পাইপ নামে পরিচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এপিআই পাইপের কাঁচামাল মাইল্ড স্টিলে সর্বোচ্চ দশমিক ২৬ শতাংশ কার্বন, দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ সালফার, দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ ফসফরাস ও ১ দশমিক ২০ শতাংশ ম্যাঙ্গানিজের মিশ্রণ থাকে। গ্যাস সংযোগে ব্যবহূত এ পাইপে কার্বনের পরিমাণ কম থাকায় ও মাটির নিচে স্থাপনের কারণে তা বিশেষ ধরনের কোটিং ও টেপ দিয়ে মোড়াতে হয়। তবে পাইপ তৈরির সময় এর উপরের স্তরে কোনো কোটিং ব্যবহার করা হয় না বলে তা বাইরের পরিবেশে খোলা অবস্থায় দীর্ঘদিন রাখা হলে অক্সিডেশনের কারণে আয়রন অক্সাইড তৈরি হয়ে মরিচা পড়ে। পাইপের মুখ খোলা থাকায় এর ভেতরেও বাইরের মতো মরিচা পড়লে পাইপের পুরুত্ব কমে যায়। এতে পাইপের আয়ুষ্কাল কমে যাওয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।

কার্টসি: বণিক বার্তা  /০১ অক্টোবর ২০১৮

28pc banks not ready to thwart large-scale cyber attacks

More than two-thirds of banks faced at least one attack last year. Some 28 per cent of the banks operating in the country are not prepared to thwart possible large-scale cyber attacks. On the other hand, 34 per cent of the banks are partially prepared and remaining 38 per cent are fully prepared to handle such possible digital security threats, a research paper revealed.

The research was conducted by the Bangladesh Institute of Bank Management (BIBM).

The researchers presented the findings at a seminar on 'IT security of banks in Bangladesh: Threats and preparedness', organised by the BIBM at its office in the city on Sunday.

Former Deputy Governor of Bangladesh Bank Abu Hena Mohd Razee Hassan attended the seminar as the chief guest with BIBM Director General (DG) Dr Toufic Ahmad Choudhury in the chair.

Managing Director (MD) and Chief Executive Officer (CEO) of Islami Bank Bangladesh Limited Md Mahbub-ul-Alam, country manager of Commercial Bank of Ceylon PLC Varuna Priyashanta Kolamunna, and systems manager of Bangladesh Bank's information systems development department Debdulal Roy spoke in the seminar, among others.

An associate professor of the BIBM Md Mahbubur Rahman Alam presented the research findings at the seminar.

The research paper said the IT security threat in Bangladesh is gradually increasing in tandem with the global trend.

"Delays in adopting a sound cyber security hygiene could result in a US$ 3.0 trillion loss in economic value by 2020. Reputational impact can reach to $180 million," the paper said quoting the World Economic Forum (WEF).

Referring to findings of a global consultancy company the paper said financial service sector is the second highest sector (24 per cent) to have witnessed cyber attack following technology, media and telecommunication sector across the globe.

Around 93 per cent of cyber attacks aim to financial gain across the globe, the research report said quoting Ernst & Young.

The banks in Bangladesh are now facing increased number of security threats and cyber attacks than earlier.

"In the last year, 68% of the banks have experienced at least one attack, most commonly in the form of malware, subsequently followed by Spam and Phising attacks," the report said, adding that: "Of these, 24 % have had their network intruded in some way of at a significant cost to the business".

Besides financial losses, the hacking instances leave a negative impact on the morale of workforce and organisations' reputation in every case.

The research identified human error as the key reason (69 per cent) behind security breach and data losses in the country's banking sector.

"Human error occurs when an employee does not know how to do the work due to inappropriate training or lack of experience," the report said. Globally human error invites 95 per cent of cyber threat.

Besides, banks' internal and external sabotage is liable for 13 per cent and 3.0 per cent security breaches in the systems respectively.

Analyzing 50 fraud cases as a sample, the report said rate of frauds related to mobile financial services (MFS), automated teller machine (ATM) and plastic card transactions are higher than all others categories.

The research report has been prepared on the basis of data collected from 45 banks covering all categories operating in the country, survey of 750 customers and 450 employees.

The report also presented a set of recommendations to strengthen banks' capacity to handle cyber risks and attacks.

The banks should address the security issues with adequate hardware, software and manpower.

"Every bank should strengthen IT security department in ICT division," the paper said, adding that recruitment of ethical hacker and deployment of a skilled IT security control and monitoring are the crying need for the banks.

The report also underscored the need for creating awareness among the clients through counselling, advertising and distributing leaflets about cyber risks.

The central bank may take initiatives to develop Information Sharing and Analysis Centres (ISACs), where stakeholders can exchange their experiences about digital security threats.

"An institution like IDRBT (Institute for Development and Research in Banking Technology), which is set up by the Reserve Bank of India can be formed immediately in Bangladesh. Moreover, a computer Emergency Readiness Team may be formed for disaster recovery of the banking sector.

Speaking on the occasion, Mohd Razee Hassan lauded the collective efforts of the country's central bank and commercial banks, scheduled banks for conducting inter-bank online transactions.

But some banks are yet to upgrade their IT infrastructure, he said.

"Although huge investment and ICT development have been observed, cyber security has not been properly addressed by the banking sector of Bangladesh making banking information and infrastructures vulnerable to sophisticated cyber-attacks," he added.

  • Courtesy: The Financial Express/ Oct 01, 2018

Improving railway service

Editorial

After successive governments' morbid unease with the country's railway, the incumbent government directed its focus on this cheapest and safest mode of transportation. The government investment totalling Tk 456 billion over the past 10 years was more than that of the three and a half decades before that period. Naturally, the hope was that the Bangladesh Railway (BR) would see commensurate improvement in its service. 

A report quoting insiders and communication experts now disappoints both the government and the public by claiming that if the railway has any improvement, it has not been more than cosmetic. In the past 10 years (2009-19), the investment has increased from Tk19.12 billion to 111.54 billion -an increase by 483 per cent. But railway service here leaves much to be desired on account of many of its endemic weaknesses and deficiencies. Are there quarters which are in an unholy alliance to derail the service delivery deliberately or is this a case of misplaced investment?

Reading between the lines, one can see that the large chunks of money have been allocated for quite a few mega projects. In the process, the existing infrastructure of the BR did not receive the fund it needed to bring about a perceptible improvement in its service. 

The authorities could do well if they concentrated on the existing railway tracks, passenger coaches, wagons and locomotives with an eye for expansion and improvement of the overall service. When replacement of metre gauge tracks as well as the old and rickety broad gauge ones was the order of the day, the demand remained largely unmet. Even railway engineers once claimed that use of bamboo to hold railway tracks together was sound from engineering point of view. How ludicrous! When so much money was invested in the railway, effective repair works suffered like this. Railway tracks are unable to support trains moving at speeds faster than only 70-80 km an hour.

There is no guarantee that larger investment means improvement in the system. Where the investment is made makes the difference in the situation. When trains have to wait at a station for a long time in order allow another to pass by, the paucity of double tracks exposes the weakness of the infrastructure. A train journey from Dhaka to Kolkata can reveal how backward the country's railway is when compared with the electric trains that run on a vastly wide network in West Bengal. So the need was to take on the existing weak railway tracks and expanding those with a view to operating more passenger and goods trains.

Lobbies favouring road transports have never wanted the railway to flourish. Now it is time that the government provided a shot in the arm of the BR. Money invested in the sector must be made worth doing so. The infrastructure has to be developed under a long-term comprehensive plan. The prime minister of the country once declared that people will be travelling in high-speed trains. To materialise her vision, the investment has to be meticulous in addition to its size.

  • Courtesy: The Financial Express/ Oct 01, 2018

‘নির্লজ্জের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

সম্পাদকীয়

খেলাপি ঋণের দায় এড়াতে পারেন না অর্থমন্ত্রী


অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঋণখেলাপিদের নির্লজ্জ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর এই মন্তব্যে নির্লজ্জ ঋণখেলাপিরা আদৌ লজ্জিত হবেন বলে মনে হয় না। এর আগে জাতীয় সংসদেও ১০০ শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সেই তালিকায় ক্ষমতাসীন দলের দুজন সাংসদের নামও ছিল। যাঁদের দায়িত্ব আইন করে ঋণখেলাপিদের ধরা, তাঁরা নিজেরাই যদি শীর্ষ ঋণখেলাপি হন, তাহলে ঋণখেলাপির অপসংস্কৃতির প্রসার ঘটাই স্বাভাবিক।

অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তালিকা থেকে জানা যায়, দেশে বর্তমানে ঋণখেলাপি ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এসব ঋণখেলাপির কাছে ৮৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনাদায়ি অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৬৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ঋণ অনাদায়ি ব্যাংকের তালিকার শীর্ষেও রয়েছে সরকারি চারটি ব্যাংক। ঋণের পরিমাণ যথাক্রমে সোনালী ব্যাংকের ১৮ হাজার ৬৬২ কোটি ৯৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা, জনতা ব্যাংকের ১৪ হাজার ৮৪০ কোটি ২৭ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৯ হাজার ২৮৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং বেসিক ব্যাংকের ৮ হাজার ৫৭৬ কোটি ৮৫ লাখ ৭ হাজার টাকা।

আবুল মাল আবদুল মুহিত একজন অভিজ্ঞ আমলা। তিন মেয়াদে (আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদে প্রায় ১০ বছর এবং সামরিক শাসক এরশাদের আমলে ২ বছর) অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে সচিব ছাড়াও বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। তিনি যে ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের হিসাব দিয়েছেন, এর বেশির ভাগই তাঁর আমলের। তাঁর সময়েই হল–মার্ক, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা ঘটেছে।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ১০ শতাংশ খেলাপি বা মন্দ ঋণ থাকতে পারে। কিন্তু বর্তমানে মন্দ ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি এবং ব্যাংকগুলো থেকে নানা কারসাজি করে কথিত ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে আর শোধ করছেন না। এর পেছনে যে রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির বিষয় আছে, সেটি এখন দিবালোকের মতো সত্য।

গত ১০ বছরে ব্যাংকিং খাতে যে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে তাতে শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংকও ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী মাঝেমধ্যে উষ্মা প্রকাশ ছাড়া ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন, সে রকম উদাহরণ কমই আছে। মধ্যরাতে কোনো কোনো ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের ঘটনাও ঘটেছে। অনেক সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখেছি।

অর্থমন্ত্রীকে যেই কথিত ঋণগ্রহীতা ঋণ নিতে কয়েক জোড়া জুতা খোয়ানোর কাহিনি শুনিয়েছেন, তাঁকে খুঁজে বের করা দরকার। ঋণ নিতে তাঁর জুতা খোয়ানোর পেছনের রহস্যটি বের করতে পারলে ব্যাংকিং খাতের অনেক অনিয়ম-দুর্নীতিরই অবসান ঘটবে। কেউ যদি ‘জুতা খুইয়ে’ ঋণ নিয়েও থাকেন, তার অর্থ এই নয় যে তিনি সেটি শোধ করবেন না।

জনগণের অর্থ নিয়ে যাঁরা এ ধরনের মামাবাড়ির আবদার তোলেন, অর্থমন্ত্রী তাঁদের ছেড়ে দিতে পারেন না। খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের পাশাপাশি যেসব ব্যাংক কর্মকর্তা নিয়মবহির্ভূতভাবে ঋণ দিয়েছেন, তাঁদেরও আইনের আওতায় আনা আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

অর্থমন্ত্রী তাঁর উত্তরসূরির জন্য প্রতিবেদন লিখে যাওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু প্রতিবেদন লেখা বা সদুপদেশ দেওয়ার চেয়ে জরুরি হলো তাঁর ভাষায় নির্লজ্জ ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। অন্যথায় নির্লজ্জ ঋণখেলাপিদের ছাড় দেওয়ার দায় তিনি এড়াতে পারবেন না।

  • কার্টসি: প্রথম আলো /০১ অক্টোবর ২০১৮

কালো আইনটির সংশোধন চাই

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন


সম্প্রতি মিয়ানমারে রয়টার্সের দুজন সাংবাদিককে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সরকারের তরফে অভিযোগ ছিল, তাঁরা ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ করে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য প্রকাশ করেছেন; আর দণ্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিকেরা বলছেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে তাঁরা আসলে ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন’। কিন্তু পুরো পৃথিবীর প্রতিবাদ উপেক্ষা করে মিয়ানমার রাষ্ট্রের কালো আইন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁদের শাস্তি দিয়েছে।

সাংবাদিকতার শিক্ষক হিসেবে আমরা মনে করি, সদ্য পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে বাংলাদেশেও মিয়ানমারের মতো অসংখ্য ঘটনা ঘটবে। কেন এই আশঙ্কা? আমরা কি ভুলে গেছি, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় কত সাংবাদিক এবং সাধারণ নাগরিক হয়রানির শিকার হয়েছেন! এ বছরের প্রথম ছয় মাসে মোট মামলা হয়েছে ৩৯১টি। ওই সব মামলার বেশির ভাগই হয় ৫৭ ধারায়। এসব মামলায় আসামি ৭৮৫ জন, যাঁদের ৩১৩ জন গ্রেপ্তার হন। এই সময়ে ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা হয়। আমরা দেখেছি, এ আইনের অপব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে; সর্বশেষ ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম ছাত্রলীগের এক নেতার মামলায় কারাগারে আছেন।

আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এই অভিযোগে শুরু থেকেই তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের মুখে সরকার থেকে এর আগে বলা হয়েছে, এটি বাতিল করা হচ্ছে। কিন্তু কার্যত দেখা যাচ্ছে, ওই ধারাটির বক্তব্য বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যায় ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলের ভিন্ন ভিন্ন ধারায় রাখা হয়েছে। জনগণের সঙ্গে এই প্রতারণা কেন?

বারবার বলা হয়েছিল, সবার সঙ্গে আলোচনা করেই নতুন আইন করা হবে এবং চূড়ান্তকরণের আগে সংশোধনের সুযোগ থাকবে। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি; সাংবাদিকসহ অংশীজনদের আপত্তি উপেক্ষা করেই পাস হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল। জাতীয় সংসদে আইনটি উত্থাপনের পর দেখা যায়, এতে লক্ষণীয় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এমনকি ‘ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি’-বিষয়ক ৩২ ধারার মতো আরও কঠিন এবং বহুল আলোচিত, বিতর্কিত ও নিন্দিত একটি ধারা এতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিক, অধিকারকর্মীসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণ কেন এই আইনের বিরোধিতা ও আইনটি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তা আইনটির বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ও গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো বিবেচনায় নিলেই বোঝা যাবে।

৩২ ধারামতে, যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অতিগোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ ও সংরক্ষণ করেন বা সহায়তা করেন তাহলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সাজা; ২৫ লাখ টাকা জরিমানা।

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ৪৩ ধারার মূল বিষয়বস্তু পরোয়ানা ছাড়াই তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তার। এ আইনের উপধারা-১-এ বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে কোনো স্থানে এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বা সাক্ষ্য-প্রমাণাদি হারানো, নষ্ট হওয়া, মুছে পরিবর্তন বা অন্য কোনো উপায়ে দুষ্প্রাপ্য হওয়ার বা করার আশঙ্কা রয়েছে, তাহলে অনুরূপ বিশ্বাসের কারণ লিপিবদ্ধ করে নিম্নবর্ণিত কার্য সম্পাদন করতে পারবেন:

ক) ওই স্থানে প্রবেশ করে তল্লাশি এবং প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হলে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ;

খ) ওই স্থানে তল্লাশিকালে প্রাপ্ত অপরাধ সংঘটনে ব্যবহার্য কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, তথ্য-উপাত্ত বা অন্য সরঞ্জামাদি এবং অপরাধ প্রমাণে সহায়ক কোনো দলিল জব্দকরণ;

গ) ওই স্থানে উপস্থিত যেকোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি;

ঘ) ওই স্থানে উপস্থিত কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ করেছেন বা করছেন বলে সন্দেহ হলে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার।

এ ছাড়া হ্যাকিং, কম্পিউটারের সোর্স কোড ধ্বংস ও সরকারি তথ্য বেআইনিভাবে ধারণ, প্রেরণ ও সংরক্ষণ করে থাকছে নানা শাস্তি ও জরিমানার বিধান।

নতুন আইনের বেশির ভাগ ধারাই জামিন অযোগ্য। তবে এর মধ্যে মানহানির ২৯ ধারাসহ ২০, ২৫ ও ৪৮ ধারার অপরাধে জামিনের বিধান আছে। আইন বাস্তবায়নে থাকছে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি। আর তদারকিতে থাকবে উচ্চপর্যায়ের ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল। এর প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী।

এই আইনের ধারাগুলোতে চোখ বোলালে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, এখানে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হচ্ছে। সে উপলব্ধি থেকে সম্পাদক পরিষদ এ আইনের ২১, ২৫, ২৮,৩ ১, ৩২ ও ৪৩—এই ছয়টি ধারা সম্পর্কে আপত্তি জানিয়েছে। তাঁরা দাবি করেছেন, নতুন আইনটির, বিশেষ করে এ ছয়টি ধারা সংবিধান ও তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল আইন হিসেবে পাস না করতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশও (টিআইবি) আহ্বান জানিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বিলটির বিভিন্ন ধারার ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্বেগ ও মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে, যা তাঁদের স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া ধারাটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং যেকোনো ধরনের গবেষণামূলক কর্মকাল পরিচালনার প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে।

আমরা মনে করি, সরকারঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিতের যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, প্রস্তাবিত আইনটি সে ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করবে। মত, দ্বিমত এবং ভিন্নমতের সম্মিলন ছাড়া সুষ্ঠু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায় না। আর গণতন্ত্রকে শ্বাসরোধ করলে সেটি স্বৈরতন্ত্রে রূপ নেয়, যা কখনোই একটি দেশের জন্য কল্যাণকর নয়।

আমরা আশা করতে চাই জনগণের বাক্‌স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়—এমন কোনো সিদ্ধান্ত সরকার কার্যকর করবে না। তাই কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসহ (সিপিজে) অন্যরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যে আবেদন জানিয়েছেন, সেই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আমরাও আশা করছি, তিনি (মহামান্য রাষ্ট্রপতি) এতে সই করবেন না, তিনি এমন ‘কালো আইনের’ অনুমোদন দেবেন না।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জয় হোক, গণতন্ত্রের জয় হোক।

রোবায়েত ফেরদৌস, মাহ্বুবুল হক ভূঁইয়া, কাজী আনিছ, এম মাহবুব আলম, নাসরিন আক্তার, সাহস মোস্তাফিজ, মাহমুদা আক্তার, রিফাত সুলতানা ও সজীব সরকার: লেখকেরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক

  • কার্টসি: প্রথম আলো / ০১ অক্টোবর ২০১৮

একটা বই নিয়ে তাদের এত ভয় কেন?

বিবিসিকে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা



বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিবিসিকে বলেছেন, এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসি' বইটি তিনি নিজে লিখে নিজের উদ্যোগে প্রকাশ করেছেন, অন্য কারো এতে কোনো ইন্ধন নেই।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বইটি প্রকাশের পেছনে অনেকের ইন্ধন, উদ্যোগ এবং সাহায্যের যে কথা খোলাখুলি বলেছেন, বিচারপতি সিনহা তা প্রত্যাখ্যান করেন।

"প্রধানমন্ত্রী যদি জানেন, তাহলে তা প্রকাশ কেন করছেন না? সাংবাদিকদের তা বের করতে বলছেন কেন?"

বিচারপতি সিনহা বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় লেখা নিয়েও তাকে একই ধরনের কথা শুনতে হয়েছে। "তারা কখনো বলেছে আইএসআই এই রায় লিখে দিয়েছে, কখনো বলেছে ড. কামাল হোসেন লিখে দিয়েছেন। আবারো এখন এই বই নিয়ে একই প্রশ্ন।"

তিনি বলেন, বইটিতে তার ব্যক্তিগত সব অভিজ্ঞতা তিনি লিখেছেন যেটা অন্য কারো পক্ষে লিখে দেওয়া সম্ভব নয়।

"বইটিতে কিছু ভুল রয়ে গেছে, মুখবন্ধে আমি তার জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছি। অন্য কেউ যদি এডিট করে দিত, তাহলে এই ভুলগুলো থাকতো না।"

"আসলে স্বৈরশাসনে যারা মনোনিবেশ করেন, হিটলারের ইতিহাস যদি দেখেন, তার গোয়েন্দারা মিথ্যাকে সত্য বানানোর চেষ্টা করতো। সরকারের যে সব বাহিনী এখন আছে, তাদের কথাই এখন প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) মুখে ফুটে ওঠে।"

"উনি কেন এত ভয় পাচ্ছেন, এটা তো আত্মজীবণীমুলক একটি বই।"

বিচারপতি সিনহার বইটি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার ঢাকায় বলেন, ''ক্ষমতা হারানোর জ্বালা থেকে বিচারপতি এস কে সিনহা বই লিখে মনগড়া কথা বলছেন। ক্ষমতায় যখন কেউ থাকে না, তখন অনেক অন্তরজ্বালা বেদনা থাকে। এই অন্তরজ্বালা থেকে অনেকে অনেক কথা বলেন।''

''উনি প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায়, এখন যা বলছেন বইতে, সেটা বলার সাহস কেন একজন বিচারপতির থাকে না - এটা নৈতিকতার প্রশ্ন,'' বলছেন মি. কাদের।

রাজনৈতিক আশ্রয়

শনিবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিচারপতি সিনহা জানান, দেশে তার জীবনের ঝুঁকির কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।

রোববার টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিবিসির কাছেও তার রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে তিনি এই আশ্রয় চেয়েছেন।

"আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি হিসাবে এখানে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়াটা আমাদের দেশে, সরকার এবং মূল্যবোধের জন্য একটা প্রশ্ন...কিন্তু আমার জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে"

কেন তিনি মনে করছেন দেশে তার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে? বিবিসির এই প্রশ্নে বিচারপতি সিনহা বলেন, জঙ্গি বিষয়ক বিভিন্ন মামলার রায় দেওয়া নিয়ে একদিকে ধর্মীয় জঙ্গিদের কাছ থেকে হুমকি এবং অন্যদিকে সেনা গোয়েন্দাদের কাছ থেকে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে বলে তাকে বিদেশে আশ্রয় চাইতে হয়েছে।

"আমাকে মারার জন্য জঙ্গিরা একাধিকবার চেষ্টা করেছে। আমার স্ত্রীর ওপর হামলা হয়েছে। আমার গ্রামের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে...আমার দুটো কুকুর পর্যন্ত তারা মেরে ফেলেছিল...।"

"অন্যদিকে সরকার আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছে, ডিজিএফআই আমাকে জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে, তারা আমাকে হুমকি দিয়েছে।"

বিচারপতি সিনহা তার সাক্ষাৎকারে বার বার ঘুরে ফিরে বলার চেষ্টা করেছেন তাকে নিয়ে কিছু মানুষ শেখ হাসিনাকে বিভ্রান্ত করেছে, ভুল বুঝিয়েছে। আবার একইসাথে গণতন্ত্র এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে শেখ হাসিনার নানা ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।

"আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র আনতে কেয়ারটেকার সরকারের জন্য লড়াই করেছিল, কেয়ারটেকারের মধ্য দিয়েই তারা ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু ক্ষমতায় এসেই তিনি সুর পাল্টে ফেলেন।"

এখন কেন তিনি এত সরব হলেন?

দেশে যখন একটি নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, সে সময় এতদিন পর তিনি কেন এই বই প্রকাশ করলেন? তিনি কি কাউকে রাজনৈতিক সুবিধা দিতে চেয়েছেন?

এই প্রশ্নে বিচারপতি সিনহা বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতিতে কে জিতলো, কে হারলো তা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। "সরকার আমার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার করেছে, আমি শুধু তা প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। যখন শেষ করতে পেরেছি তখন প্রকাশ করেছি। এতে বিরোধী দল যদি কোনো সুবিধা পেয়ে থাকে, তাতে আমার কী লাভ?"

"তারা (সরকার) এত ভয় পাচ্ছে কেন? তারা তো উন্নয়ন করেছে। দেশের অর্থনীতি ভালো, আমি নিজেও তা স্বীকার করি। তাহলে আমার একটা বই নিয়ে এত ভয় পাচ্ছে কেন? তাহলে তারা যে দুর্নীতি করেছে সেটা কি উন্নয়নকে ছাপিয়ে যাবে? এই কারণেই কি তারা ভয় পাচ্ছে?"

  • বিবিসি বাংলা/৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮