Search

Thursday, October 4, 2018

S Alam now sets sights on insurers

It buys 45pc stake in Padma Islami Life Insurance

After taking over a number of banks and financial institutions in the past few years, Chattogram-based S Alam Group has now set its sights on the insurance sector. As part of the plan to increase its influence on the insurance sector, the group has recently bought nearly 45 percent stakes in Padma Islami Life Insurance Company at an estimated cost of Tk 45 crore.

S Alam Group Chairman Mohammed Saiful Alam will hold 2.52 percent shares in his own name in Padma Islami Life Insurance, his wife Farzana Parveen 2.71 percent and his son Ahsanul Alam 4.75 percent, according to the Insurance Development and Regulatory Authority, which signed off on the transaction.

The remaining 35 percent of the shares will be bought under the name of five companies -- Unitex Petroleum, Unitex LP Gas, Pavilion International, Affinity Assets and Crest Holdings -- with affiliation with S Alam Group.

The business group, which stirred huge controversy recently for grabbing ownership of two Islamic banks, plans to purchase stakes in two more Islamic insurance companies, said market insiders.

Currently, Alam is a director of Northern General Insurance. He is also the chairman of First Security Islami Bank. His group has stakes in seven more banks.

Padma Islami Life Insurance was going through a cash crisis, said ABM Zafar Ullah, its former chairman. “That's why we sold off the ownership,” he said, while blaming the IDRA's ceiling on commission for the insurer's precarious financial state.

Life insurance companies cannot give more than 40 percent commission to agents, as per the new IDRA rules.

“This made the market heavily competitive. Agents are not willing to bring business to us,” said Zafar Ullah, who has 4.75 percent stakes in the company.

Moreover, Padma Islami Life Insurance's business was also affected by the delay in its licence renewal by two years by the authorities, he said.

“We took the licence willingly but later realised that it is not so easy to make insurance business.” The company got the licence for insurance business in 2000 and became listed on the Dhaka Stock Exchange in 2012.

“The financial health of Padma Life is very poor,” said Gokul Chand Das, a member of the IDRA.

If a business group willingly buys such a company and can meet the policyholders' liabilities, then it is good for the company, he added. The insurer's liabilities now stand at about Tk 80 crore, according to Zafar Ullah.

In the last one month, each share of Padma Islami Life traded between Tk 24 and Tk 26. The company was downgraded last year to the 'Z' category after it declared no dividend.

  • Courtesy: The Daily Star /Oct 04, 2018 

Growing worries on external debt

EDITORIAL

Economic reforms needed



The World Bank (WB) invited two economists, Ahsan H Mansur and Hossain Zillur Rahman who head the Policy Research Institute of Bangladesh, and Power and Participation Research Centre respectively, at the unveiling of the quarterly report titled “Bangladesh Development Update”. The views shared by these economists call for the country's international development partners and the WB to engage with the government on a reform agenda in the aftermath of the general elections due at the end of the year to contain problems brewing on various economic fronts.

The areas of concern are the declining foreign exchange (forex) reserves and low revenue collection. The government has embarked on ambitious infrastructure growth, much of which is going to be financed with foreign credit which is causing problems with the balance of payments. Rising debt is of major concern as it is depleting forex reserves and in the absence of stable foreign remittances, there is cause for worry.

While our forex reserves stand at USD 32.93 billion (as of August), our remittances appear to be stuck in the region of USD 14-15 billion per annum. There is concern whether the government has done the right analysis on cost of projects undertaken by it. The project highlighted was Padma Bridge road link that is estimated to cost the national exchequer Tk 40,000 crore, but given our rate of implementation there is the possibility of this cost going up by as much as 25 to 50 percent.

What all this boils down to is whether the nation is headed towards a debt-trap, as has happened in the case of a few countries in the region. Hence, the call for re-examining the viability for these multi-billion-dollar projects is a just one and should be considered seriously.

  • Courtesy: The Daily Star / Oct 04, 2018

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে শাহবাগে অবরোধ

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ ও রাজশাহীতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী।

শাহবাগ থেকে দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা জানান, সকাল ৭টার দিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’ ব্যানারে প্রায় ৫০ জন ছাত্র শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে সবগুলো রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেন। তারা মন্ত্রিপরিষদে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তাদের ৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখার দাবির পক্ষে স্লোগান দেন।

অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে একই দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী মিছিল করেছেন। তাদের অবরোধে সকাল ১০টা থেকে মহাসড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তার ওপর টায়ার জ্বালিয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি থেকে কোটা তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিল একদল শিক্ষার্থী। এতে রাজধানীর ব্যস্ততম কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ ও সায়েন্স ল্যাব থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়।

কোটা বাতিল প্রসঙ্গে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোটা থাকলেই শুধু আন্দোলন। তাই কোটার দরকার নেই। কোটা না থাকলে আন্দোলন নেই, সংস্কারও নেই। তিনি বলেন, যদি কেউ কোটা চায়, তাহলে এখন কোটা চাই বলে আন্দোলন করতে হবে। সেই আন্দোলন যদি ভালোভাবে করতে পারে, তখন ভেবেচিন্তে দেখা হবে কী করা যায়? এরপর যদি কেউ কোনো কোটা চায়, তাহলে তাকে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন ছাড়া কোটা দেওয়া হবে না।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের অভিজ্ঞতা জানাতে বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

কোটা বাতিলের যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার নাতিই যখন কোটা চায় না, তখন কোটা রেখে লাভ আছে? সে জন্য আমি বলছি, কোটা থাকলে শুধু আন্দোলন। তাহলে আর কোটার দরকারই নাই, আন্দোলনও নাই, সংস্কারও নাই।…মেয়েরাও কোটা চায় না। মুক্তিযোদ্ধারাও এখন চাকরি পাওয়ার মতো কেউ নেই।’


  • Courtesy: The Daily Star (Bangla) /Oct 4, 2018 

সব ভালোই ভালো নয়

বদিউল আলম মজুমদার

গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংবাদমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজের ব্যাপক আপত্তির মুখে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ পাস করেছে। আইনটি ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে পর্বতপ্রমাণ বাধা সৃষ্টি করবে বলে অনেকেরই আশঙ্কা। আরও আশঙ্কা, আইনটি ডিজিটাল অপরাধ দমন করার লক্ষ্যে প্রণীত হলেও এটি একটি কালাকানুন এবং এটির অপব্যবহার অনিবার্য, যেমন অপপ্রয়োগ হয়েছে ও হচ্ছে ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার। এটি সরকারের অন্যায় কাজের সমালোচনাকারীদের হয়রানির কাজে ব্যবহৃত হবে এবং আমাদের গণতান্ত্রিক পরিসরকে ভয়ানকভাবে সংকুচিত করবে।

এসব আশঙ্কা সত্ত্বেও আমাদের সম্মানিত তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী এটিকে ঐতিহাসিক আইন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, সব ভালোই ভালো নয়। আর প্রজ্ঞাবানদের মতে, ‘অল দ্যাট গ্লিটার্স ইজ নট গোল্ড’—চকচক করলেই সোনা হয় না।

উদাহরণ হিসেবে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের কথা ধরা যাক। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ এই আইনের জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। আবার পঁচাত্তর–পরবর্তীকালে এই আইনের অপব্যবহারের শিকার হয়েছিলেন আওয়ামী লীগেরই নেতা-কর্মীরা। জননিরাপত্তা আইনের ক্ষেত্রেও একই অভিজ্ঞতা। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০০ সালে প্রবল আপত্তির মুখ পাস করে। কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতার বাইরে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এর জন্য ব্যাপক মাশুল দিতে হয়েছিল।

আপাতদৃষ্টিতে ভালো মনে হলেও কিছু সিদ্ধান্ত যে পরবর্তী সময়ে কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে, তার আরেকটি উদাহরণ হতে পারে ২০১১ সালে গৃহীত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী। স্মরণ করা যেতে পারে যে ২০১০ সালে সরকার মহাজোটের অংশীদার সব দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি ২৭টি বৈঠক করে, তিনজন সাবেক প্রধান বিচারপতি, ১১ জন শীর্ষ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ১৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক, ১৮ জন সম্পাদক, রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতামত নেয়। বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রায় সবাই বিরোধী দলকে সম্পৃক্ত করার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে বহাল রাখার পক্ষে মতামত দেন। কমিটিও সে অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার রেখেই সংবিধান সংশোধনের সর্বসম্মত সুপারিশ করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পরবর্তীকালে এ সুপারিশ বদলে যায় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দিয়েই একতরফাভাবে সংবিধান সংশোধন করা হয়, যদিও আমাদের সংবিধানের ৭ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধান ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি’ বা ‘উইল অব দ্য পিপলে’এর প্রতিফলন হওয়া উচিত। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল একটি মীমাংসিত বিষয় এবং এ-সম্পর্কে একটি জাতীয় ঐকমত্যও বিরাজ করছিল।

একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের প্রক্রিয়াকে বিজ্ঞজনেরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত চাপিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া (মেজোরেটারিয়ানিজম) বলে আখ্যায়িত করেন। জেমস মেডিসনের ভাষায়, এটি হলো ‘টিরানি অব দ্য মেজরিটি’ বা সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বেচ্ছাতন্ত্র, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, বিশেষত সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলও সরকারের অংশ। কিন্তু আমাদের দেশের ‘উইনার টেক অল’ বা বিজয়ীদেরই সবকিছু করায়ত্ত থাকার প্রক্রিয়ায় বিরোধী দল সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত। এ থেকে যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা দখল করা এবং আঁকড়ে ধরে থাকার প্রচেষ্টার সংস্কৃতি আমাদের ওপর জেঁকে বসেছে।

তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে আইনকে ‘অস্ত্রে’ পরিণত করা হয়েছে। এর লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ রুদ্ধ করার মাধ্যমে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা। আমাদের ইতিহাসের শিক্ষা হলো, দলীয় সরকারের অধীনে অতীতে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। কারণ, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বাচনী ফলাফল প্রভাবিত করা সম্ভব হয়েছে। আর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সাম্প্রতিক কালের লাগামহীন দলীয়করণ এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের পক্ষে জাতীয় নির্বাচনে জেতা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবির পেছনে উদ্দেশ্য ছিল ‘ভোট চুরি, সন্ত্রাস, কালোটাকা ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন’ করার প্রচেষ্টা বন্ধ করা (শেখ হাসিনা, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে’, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ: কিছু চিন্তাভাবনা’, আগামী প্রকাশনী, ১৯৯৬। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মতে, ‘নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যে অনিয়ম চলছে, সে অনিয়ম দূর করে একটা সুস্থ ধারা নিয়ে আসা একান্ত অপরিহার্য। এ দেশে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না, যদি না ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট হয়। আর সে কারণেই অন্তত আগামী কয়েকটি নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করবার একটা ব্যবস্থা নিলে এই অনিয়মগুলি দূর করা যেতে পারে’ (পৃ.৭৮-৭৯)।

২০১১ সালে একতরফাভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পরে এসব নির্বাচনী অনিয়ম আমাদের দেশে আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের ভিত্তিতে সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা বহুলাংশে লোপ পায়, ফলে সরকারের স্বচ্ছ ও জবাবদিহি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা প্রায় তিরোহিত হয়ে যায়। সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের ব্যাপক বিস্তার ঘটে এবং সুশাসন সুদূরপরাহত হয়ে পড়ে। এমনই পরিস্থিতিতে সরকার ও দলের মধ্যে বিভাজন বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং ক্ষমতাসীনেরা প্রায় সর্বক্ষেত্রে বেপরোয়া ও বেসামাল হয়ে পড়ে। সরকারি দলের ছত্রচ্ছায়ায় অনেকে অনেক অন্যায় ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। কারণ, ক্ষমতাসীনদের আর ভোটারদের সমীহ করার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়।

আর এসব বাড়াবাড়ির কারণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকার/সরকারি দলের জনসমর্থনে ব্যাপকভাবে ভাটা পড়ে। তাই একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যাপক জনসমর্থন ও ভূমিধস বিজয় নিয়ে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও, ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন দলকে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হতে হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য তাদেরকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কতগুলো অভিনব স্লোগান এবং নির্বাচন কমিশন ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের ওপর ভর করতে হয়েছে।

তবে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসা সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে পড়ে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হলো একটি নজরদারির কাঠামো, যেখানে সংসদে এবং সংসদের বাইরে সরকারের কার্যক্রমের ওপর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নজরদারি থাকবে। সংসদে বিরোধী দল সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। সংসদের বাইরে বিরোধী দলের নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম ক্ষমতাসীনদের অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর এমন ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালান্সেস’ পদ্ধতি ভেঙে পড়ে। বস্তুত আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজমান ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং একদলীয় শাসন কায়েমের পথ সুগম হয়, যা সরকার ও সরকারি দলকে আরও বেসামাল হতে সহায়তা করে। বর্তমানে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে জনমনে যে সংশয়, তা সরকার ও সরকারি দলের এই নগ্ন ক্ষমতার দাপটেরই ফসল।

পরিশেষে, এটি সুস্পষ্ট যে সম্প্রতি সংসদে পাস করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আইনের মোড়কে একটি ভয়াবহ অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চরম দলীয়করণের শিকার, যা এক দিনে হয়নি এবং এক সরকারের আমলেও ঘটেনি। একটি পক্ষপাতদুষ্ট সশস্ত্র বাহিনীর হাতে এমন একটি অস্ত্র তুলে দিয়ে ক্ষমতাসীনেরা হয়তো সাময়িকভাবে কিছু ফায়দা লুটতে পারবে, কিন্তু এর অপপ্রয়োগের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে যে অসন্তুষ্টির সৃষ্টি হবে, তার মাশুল একদিন শুধু ক্ষমতাসীনদেরই নয়, পুরো জাতিকেই দিতে হবে। আর দীর্ঘ মেয়াদে এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য মঙ্গলকর হবে না। কারণ, আইনটি অপপ্রয়োগের ফলে তাদের প্রতি জনরোষ ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। তাই আশা করি, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দীর্ঘমেয়াদি পরিণতির কথা গভীরভাবে ভাববে।

  • ড. বদিউল আলম মজুমদার: সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)–এর সম্পাদক
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৪ অক্টোবর ২০১৮

এই অপসংস্কৃতি বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়

গায়েবি মামলা

বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ বলে পরিচিত। তাই বলে যা ঘটেনি, ঘটনার সামান্য আভাসও দেখা যায়নি, সেই কল্পিত কাহিনি সম্বল করে মামলা করার বিরল কৃতিত্ব দেখিয়েছেন আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আর এর একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপির মহাসচিবসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের। এটি নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অপকৌশল ছাড়া কিছু নয়।

সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, গত রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভার পর ঘরে ফেরার পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দলটির বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। হাতিরঝিল থানায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়, ‘রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য দেন এবং তাঁদের এমন বক্তব্যের পর রাত আটটার দিকে হাতিরঝিল থানার মগবাজার রেলগেট এলাকায় বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও জামায়াত-শিবিরের ৭০ থেকে ৮০ জন নেতা-কর্মী জড়ো হন। তাঁরা রাস্তায় যানবাহন চলাচলে বাধা দেন। তাঁরা পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল ছোড়েন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মারধর করেন, ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান।’

প্রথম আলোর প্রতিনিধি পরদিন সেখানকার ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে পুলিশের দাবির কোনো সত্যতা পাননি। ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেছেন, ‘এ রকম তো কোনো খবর পাইনি।’ মগবাজার এলাকায় বিএনপি ভাঙচুর করেছে, আর সেখানকার মানুষ খবর জানবেন না, এটি কী করে সম্ভব? এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যা বলেছেন, তা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মাত্র। তিনি বলেছেন, বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ফেরিতে প্লেট চুরির মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে প্লেট চুরির কাল্পনিক মামলা দেওয়া হলেও বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে এখন গায়েবি মামলা ন্যায্যতা পায় না। দুটিই নিন্দনীয় ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।

বিএনপির দাবি, ১৯টি জেলা ও মহানগরে ৫৮টি গায়েবি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে শেরপুর জেলায় আটটি, টাঙ্গাইলে চারটি, দিনাজপুরে ছয়টি, নারায়ণগঞ্জে দুটি, খুলনায় চারটি, খুলনা মহানগরে তিনটি, শরীয়তপুর জেলায় একটি, মাদারীপুরে দুটি, মাগুরায় দুটি, পটুয়াখালীতে দুটি, সিরাজগঞ্জে দুটি, ভোলায় একটি, নেত্রকোনায় দুটি, কুমিল্লায় আটটি, ময়মনসিংহে তিনটি, নরসিংদীতে দুটি, হবিগঞ্জে দুটি এবং রাজশাহী মহানগরে চারটি। আসামি করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৪০ জন নেতা-কর্মীকে এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ জন নেতা-কর্মীকে।

রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নামে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেখানে ঘটনাই ঘটেনি, সেখানে প্রধান বিরোধী দলের মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা করা শুধু বেআইনি নয়, উসকানিমূলকও। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজনেরা যে আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেটাই সত্যে পরিণত করলেন পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তারা। তাঁরা যদি ঘটনা না ঘটলেও উসকানির গন্ধ পান, সংবাদমাধ্যমে কিছু প্রকাশ না পেলেও  ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করবেন, তাতে সন্দেহ কী। নির্বাচন সামনে রেখে অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের এসব গায়েবি মামলা নির্বাচনের পরিবেশই শুধু ব্যাহত করবে না, সরকারকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেবে।

এসব মামলার তদন্ত করতে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় কমিশন চেয়ে তিনজন আইনজীবী যে রিট করেছেন, তার সুবিচার প্রত্যাশিত।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৪ অক্টোবর ২০১৮

লাখো মামলায় বিএনপি আসামি ২৫ লাখেরও বেশি

সেপ্টেম্বরেই চার হাজার মামলায় সাড়ে তিন লাখ আসামি


দশ বছরে বিএনপির প্রায় ২৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ৯৫ হাজারেরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশি কাজে বাধা, নাশকতা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলাকে ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বিএনপি। গত সেপ্টেম্বর মাসেই চার হাজার ৯৪টি মামলায় তিন লাখ ৫৭ হাজার ২১০ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এরমধ্যে এজাহারে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৮ হাজার ৪৮০ জনের। বাকিরা অজ্ঞাতনামা। 

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপি বলছে, নির্বাচন ও আন্দোলনকে সামনে রেখেই এসব ‘গায়েবি’ মামলায় নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে তাকে ‘মিথ্যা মামলা’য় কারাগারে রাখা হয়েছে। সিনিয়র নেতারা যেন নির্বাচনের প্রস্তুতি বাদ দিয়ে আদালতে ব্যস্ত সময় কাটান, সে জন্য তাদের নামে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করুক তা আওয়ামী লীগ চায় না। কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। আদালতের মাধ্যমেই মামলার সত্যমিথ্যা প্রমাণ হবে। এখানে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই। জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দফতর শাখা নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা নিয়ে কাজ করছে। পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা ও পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন খান এসব মামলার তথ্য সংগ্রহ করছেন। 

গত ২০০৭ সাল থেকে গতকাল পর্যন্ত বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার কী অবস্থা তা নিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তথ্যমতে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৩৪টি মামলা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে আছে ৩৬টি মামলা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ১০৬টি, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ছয়টি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে ১১টি, তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২৩টি, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে ২০টি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে ৫৪টি, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৮৪টি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ৬৭টি, ড. মঈন খানের বিরুদ্ধে দুটি, নজরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে ১২টি, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা আছে। এ ছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে ১৩টি, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে ১৮টি, মেজর (অব.) হাফিজের বিরুদ্ধে ১৪টি, বরকত উল্লাহ বুলুর বিরুদ্ধে ১২৯টি, মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে ৩১টি, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে ৮৬টি, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের বিরুদ্ধে ৪৮টি, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ১৪৭টি, খায়রুল কবির খোকনের বিরুদ্ধে ৫১টি, হাবিব-উন-নবী খান সোহেলে বিরুদ্ধে ৪৫৩টি, আসলাম চৌধুরী ও হারুন-অর রশীদের বিরুদ্ধে ৬৭টি, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বিরুদ্ধে ১৮৭টি, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহছানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে ৫৬টি, ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তর শাখার সভাপতি এম এ কাইয়ুমের বিরুদ্ধে ১৩৬টি, সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানের বিরুদ্ধে ২৭টি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের বিরুদ্ধে ৪৭টি, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের বিরুদ্ধে ১৫৮টি, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ২২৭টি, ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানের বিরুদ্ধে ১০৬টি এবং সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের বিরুদ্ধে ১২৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের নির্বাচনের বাইরে রাখতেই নিত্যনতুন মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলায় বেগম জিয়াকে আজ কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতা-কর্মীরা এখন আর ভীত নন। তিনি বলেন, মামলা মোকাবিলা করে আমরা অভ্যস্ত। বেগম জিয়ার নেতৃত্বে আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এসব মামলা দিয়েও বিএনপির বিজয় ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।

বিএনপির এত বিপুল সংখ্যাক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে এখন খুন, গুম হচ্ছে। বিভিন্ন ঘটনায় ভৌতিক মামলা হচ্ছে। দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে ঢালাওভাবে এ ধরনের গায়েবি মামলা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিরোধী নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করা। আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো যাতে মাঠে থাকতে না পারে সেজন্য এসব মামলা করা হয়েছে।

মামলার রিট শুনানির অপেক্ষায় 

গত সেপ্টেম্বর মাসে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ সারা দেশে ৩ লাখেরও বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা ৪ হাজার মামলা সংক্রান্ত একটি রিট আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ওই রিট আবেদনে এসব মামলাকে ‘গায়েবি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

গত ২৩ সেপ্টেম্বর রিট আবেদনটি দাখিলের পর ২৪ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি আহমদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। তবে অ্যাটর্নি জেনারেলের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন শুনানি হয়নি। আগামী সপ্তাহে এ রিট আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মাসুদ রানা। 

তিনি বলেন, আমরা আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেছিলাম। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল সুপ্রিম কোর্টের অবকাশের পর শুনানি করতে চেয়েছেন। এখন অবকাশ শেষ হয়েছে। আমরা শুনানির প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করছি আগামী সপ্তাহে শুনানি হবে।

আগাম জামিনের চেষ্টায় নেতা-কর্মীরা

সারা দেশের বিভিন্ন ঘটনায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আসামি হয়েছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরাও। গ্রেফতার এড়াতে আগাম জামিন নিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের এসব আইনজীবী। পাশাপাশি বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাও আগাম জামিনের জন্য সুপ্রিম কোর্টে ভিড় জমাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারি কাজ ও পুলিশকে বাধা দেওয়া সংক্রান্ত নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন থানায় করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া গতকাল হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন।

এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পল্টন ও আদাবর থানায় দায়ের করা আট মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ সাতজনের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন হাই কোর্ট। জামিনপ্রাপ্ত বিএনপির অন্যান্য নেতারা হলেন, অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান, অ্যাডভোকেট ফেরদৌস ওয়াহিদা ও অ্যাডভোকেট তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ। তার আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ ছয় আইনজীবী পল্টন, খিলগাঁও, মতিঝিলসহ বিভিন্ন থানায় দায়ের করা নাশকতার মামলায় আগাম জামিন নিয়েছেন।

বন্ধ হচ্ছে না গ্রেফতার

চট্টগ্রাম থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক ফারুক তাহের জানান, চট্টগ্রামে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার ও তাদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবি’ মামলা অব্যাহত রয়েছে। আতঙ্কে রয়েছেন বিএনপির কর্মী থেকে শীর্ষ নেতারা। গত দুই সপ্তাহে নগরীর ১৫টি থানায় তিন শতাধিক নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়েছে বলে নগর বিএনপি জানিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে শতাধিক নেতা-কর্মীকে। গ্রেফতারের ভয়ে অনেকে নিজেদের বাসা-বাড়িতে থাকতে পারছেন না বলেও জানা গেছে।

নগরীর চান্দগাঁও থানায় সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার ও নগর বিএনপির সহসভাপতি মাহবুবুল আলমকে ১ নম্বর আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাহাড়তলী থানায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর ছয়জনকে আসামি করে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে নগর বিএনপির সহ যুববিষয়ক সম্পাদক আজাদ বাঙ্গালীকে। একই দিনে খুলশী থানায় মামলা করা হয়েছে বিএনপির ৪৫ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। হালিশহর থানায় চারজনকে আসামি করে গত ১১ সেপ্টেম্বর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে নগর বিএনপির সদস্য আজিজুর রহমান বাবুলকে। একই দিনে নগরীর বন্দর থানায় সাতজনকে আসামি করে পুলিশ একটি মামলা দায়ের করেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে যুবদল নেতা মো. এরশাদকে। 

১৫ সেপ্টেম্বর পতেঙ্গা থানায় বিএনপি নেতা মোহাম্মদ রফিক ও মোহাম্মদ লোকমানকে আসামি করে অজ্ঞাত ৭৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে।  আকবর শাহ থানায় ৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে আকবর শাহ থানা বিএনপির সভাপতি আবদুস ছাত্তার সেলিম, সহসভাপতি শহিদ উল্লাহ ভূইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া গোলাপ। আসামির তালিকায় রয়েছেন— থানা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আইয়ুব খান, সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দীন চৌধুরী মাইনু, থানা বিএনপি নেতা মহসিন তালুকদার, রফিক উদ্দীন, ফরিদুল আলম ও মো. সেলিম উদ্দীন প্রমুখ। নগরীর ডবলমুরিং থানার পুরনো একটি মামলায় গত সপ্তাহে গ্রেফতার হয়েছেন থানা বিএনপি নেতা নুরুল আলম, জাহাঙ্গীর আলম, মাহবুব আলম ও মো. ইদ্রিছ।

  • কার্টসিঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন/২ অক্টোবর, ২০১৮ 

পেট্রোবাংলার কাজ কি অভিযুক্তদের রক্ষা করা?

সম্পাদকীয়

তিতাসে ঘুষ কেলেঙ্কারি

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মীর মশিউর রহমান ও অপর একজন কর্মকর্তাকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তলব করলেও তাঁরা হাজির হননি অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে। কেউ অসুস্থ হলে তিনি সময় নিতে পারেন। কিন্তু অসুস্থ না হয়েও যদি কেউ অসুস্থ হওয়ার ভান করেন, তাহলে মনে করতে হবে ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’।

মীর মশিউর রহমান যেদিন দুদকে চিঠি লিখে তিন সপ্তাহ সময় প্রার্থনা করেছেন, সেদিনই তিনি তিতাসের কার্যালয়ে গিয়েছেন দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করতে। তাহলে দুদকে পাঠানো চিঠির ভাষ্য সঠিক নয়? অসুস্থতার প্রমাণ হিসেবে তিনি নিশ্চয়ই চিকিৎসকের সনদও পেশ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিতাসের এই শীর্ষ কর্মকর্তা একটি মিথ্যা ঢাকতে গিয়ে অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। তিতাসের এমডির পদাঙ্ক অনুসরণ করে উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এস এম আবদুল ওয়াদুদও অসুস্থতার কথা জানিয়ে দুদকের কাছে সময় চেয়েছেন। এই অসুস্থতা রহস্যজনক।

দুদক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সময় প্রার্থনার আবেদন নাকচ করে পুনরায় হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশ তামিল না হলে আশা করি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি প্রতিষ্ঠানটি আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। দুদকের তলবে হাজির না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ১৯(৩) ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। তিতাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ, সীমার অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন তাঁরা। এ ছাড়া তিতাসের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা এই অনুসন্ধানের আওতায় রয়েছেন।

সম্প্রতি প্রথম আলোর অনুসন্ধান ও সরকারি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অনেক কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অসাধু মালিক পরস্পরের যোগসাজশে রাষ্ট্র তথা জনগণের বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। পেট্রোবাংলার এক অনুসন্ধানে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে ৭৫ কোটি টাকার বেশি গ্যাস নিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। পেট্রোবাংলা ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের তাগিদ দিলেও এখন পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। একটি প্রতিষ্ঠান ৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সুযোগ নিলে সব প্রতিষ্ঠান মিলে রাষ্ট্রের তথা জনগণের ক্ষতির পরিমাণটি সহজেই অনুমান করা যায়। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান তিতাস কোম্পানির ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শিল্পগ্রাহকের সংখ্যা ৪ হাজার ৬১০। তিতাসের গ্যাস-সংযোগ পাওয়া বেশির ভাগ কারখানা গাজীপুর অঞ্চলে।

সপ্তাহ দুই আগে প্রথম আলোয় খবর প্রকাশিত হলেও তিতাস কর্তৃপক্ষ কুম্ভকর্ণের ঘুমে আচ্ছন্ন আছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা কীভাবে অসুস্থতার অজুহাত তুলে দুদকের নির্দেশনাও অগ্রাহ্য করলেন, সেই জবাবদিহি না চাওয়া দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল। তিতাসে উৎকোচের বিনিময়ে মিটার টেম্পারিং নতুন নয়। কিন্তু কেজি মেপে ঘুষ নেওয়ার নজির সম্ভবত এই প্রথম। আর এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে শীর্ষ পদাধিকারেরা যে দায়ী, তা-ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে প্রথম আলো। এত কিছুর পরও যদি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তিতাসের দুর্নীতি কেবল তিতাসেই সীমিত নয়। নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলাই বা কী করছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বলেছেন, তিতাসে গ্যাস চুরি হয়, এটি সবার জানা। কিন্তু ধরা না পড়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু এবার তো হাতেনাতে ধরা পড়লেন। এরপরও যদি তাঁরা শাস্তির বাইরে থাকেন, বুঝতে হবে সরষের ভেতরেই ভূত আছে।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৪ অক্টোবর ২০১৮

পরীক্ষার হলে তালা দিলো ছাত্রলীগ, জাবিতে ফের অস্ত্রের মহড়া


ছাত্রী উত্ত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল ও আলবেরুনী হল ছাত্রলীগের মধ্যে মঙ্গলবার রাতে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে দুই হলের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গুরুতর আহতদের সাভারের এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে বলে জানান মেডিকেল সেন্টারের টেকনিক্যাল অফিসার মো. জাকারিয়া। সাভার এনাম মেডিকেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে ১২/১৩ জন মুখে, পায়ে ও হাতে আহত হয়ে হাসপাতালে এলেও গুরুতর ৬ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তিকৃতরা হলেন- অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (৪৬ ব্যাচ) বিভাগের সোহেল রানা, পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিং (৪৭ ব্যাচ) বিভাগের মিজানুর রহমান, বায়োকেমেস্ট্রি (৪৫) বিভাগের ফারাবি। তারা তিনজনই আলবেরুনী হলের আবাসিক ছাত্র। মীর মশাররফ হোসেন হলের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (৪৫ ব্যাচ) বিভাগের শিক্ষার্থী আবু হানিফ, একই বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের সাকিবসহ তিনজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। 

সূত্রমতে, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আলবেরুনী হল সংলগ্ন চৌরঙ্গী এলাকায় মীর মশাররফ হোসেন হলের আবু সাইদ (ভূতাত্ত্বিক বিভাগ ৪৫) এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের তৌহিদ সাকিব (পদার্থবিজ্ঞান ৪৫) তাদের বন্ধুসহ গান গাইছিলেন। এ সময় এক ছাত্রী আলবেরুনী হলের ৪৬তম আবর্তনের তার কিছু সহপাঠীকে ডেকে এনে তাদের কাছে ওই চারজনের কিরুদ্ধে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ করে।

অভিযুক্ত চারজনই শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আলবেরুনী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই চারজনকে মারধর করে। মারধরের খবর শুনে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আলবেরুনী হল ছাত্রলীগকে ধাওয়া করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। এরপর দুই হলের ছাত্রলীগের মধ্যে সারারাত দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চৌরঙ্গী, মেডিকেল সেন্টার, আলবেরুনী হল প্রাঙ্গণ, জীববিজ্ঞান অনুষদ এই পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা পিস্তল নিয়ে মহড়া দেয়। তারা কয়েক রাউন্ড গুলিও ছুড়ে। পরে আলবেরুনী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মী খালিদের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে ৮টি গুলির খোসা পাওয়া যায়।

পরীক্ষা আটকে দিলো ছাত্রলীগ: জাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবু সাদাত সায়েমের নেতৃত্বে হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে আলবেরুনী হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গতকাল সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত জীববিজ্ঞান অনুষদে তালা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা আটকে দেয়। ফলে গতকাল অনুষ্ঠিত ‘ডি’ ইউনিটের সব পরীক্ষার সবক’টি শিফট নির্ধারিত সময় থেকে পিছিয়ে যায়। 

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, প্রোভিসি নূরুল আলম ও প্রক্টরিয়াল বডি গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, “পরীক্ষা চলাকালে এ ধরনের ঘটনা হতাশাজনক। আমরা এর তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা নেব। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৪ অক্টোবর ২০১৮

মানবেতর জীবন কোটা আন্দোলনের নেতাদের

টিউশনি নেই, থাকার জায়গার সমস্যা


কারো বাবা মৎস্যজীবী, কারো বাবা রিকশা চালক। বাবার উপার্জনের টাকায় কোনোরকম সংসার চলে। নিজের পড়ার খরচ মেটাতে তাই টিউশনিই তাদের একমাত্র ভরসা। সেই টিউশনিও চলে গেছে। থাকার জায়গা নেই। শেষ আশ্রয়স্থল হলের বরাদ্দকৃত রুমটাও বাতিল করা হয়েছে। আজ আত্মীয়ের বাসায় তো কাল বড় ভাইয়ের বাসায়। অর্থ ও আবাসন সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কোটা আন্দোলনের নেতারা।

আগের মতো বাইরে চলাফেরা করতে পারেন না। মামলার কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। এ অবস্থায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে নিজেদের মানবেতর জীবনযাপনের বর্ণনা দিয়েছেন কোটা আন্দোলনের সাত নেতা। 

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান মানবজমিনকে বলেন, আমাদের পড়ালেখার খরচ থেকে শুরু করে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা সবই চলে টিউশনির টাকায়। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে নানা ধরনের হুমকি ধমকি দিয়ে হল ছাড়া করা হয়। আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত রুম থেকে বই খাতাসহ মূল্যবান জিনিসপত্রগুলো হল থেকে বের করে বারান্দায় ফেলে রাখা হয়। এখন আমরা একধরনের গৃহহীন অবস্থায় আছি। এখন অনেকটা যাযাবরের মতো জীবনযাপন করছি। হল ছাড়া হওয়ার কারণে আজকে এক জায়গায় তো কাল অন্য জায়গায়। গৃহহীন থাকা অবস্থায় আমাদের ওপর সরকারের পক্ষ থেকে এক ধরনের হুমকি আসে। ফলে অনেকেই আমাদের টিউশনি দিতে চায় না। 

সাধারণ মানুষ আমাদের টিউশনি দিতে ভয় পায়। অভিভাবকরা আমাদের টিউশনি দিলে সরকার আবার তাদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেয় কিনা সেই ভয়ে আমাদের টিউশনি দিতে চায় না। যে কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে শুরু করে সামনের সারিতে থেকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের কারোই এখন টিউশনি নেই। তার ওপর প্রাইভেট গাড়িতে চড়ে প্রতি মাসে এক থেকে দুই বার করে মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে যেতে হয়। পাবলিক বাসে আমাদের আক্রমণ হওয়ার ভয় থাকে। সব মিলিয়ে আমরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি। নুর, মশিউর, আতাউল্লা, মামুন, বিন ইয়ামিন, রাতুল, সোহেলসহ কোটা আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের একই অবস্থা।   

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক নেতা রাতুল সরকার বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে আন্দোলনে যোগদানের পর থেকেই আমার হাতে থাকা টিউশনিগুলো এক এক করে চলে যেতে থাকে। আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত আমরা সকলেই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। প্রত্যেককে নিজের খরচ নিজেই চালাতে হয়। আমার বাবা মো. শামীম আলী পেশায় একজন জেলে। নদীতে মাছ ধরে তা বিক্রি করে সংসার চলে। দুই ভাই বোনের মধ্যে আমি বড়। বাবার পক্ষে আমার পড়ালেখার খরচ চালানো সম্ভব নয়। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জেলে যাওয়ায় আগের সব টিউশনি হাত ছাড়া হয়ে গেছে। বড় ভাইদের দিয়ে নতুন করে টিউশনির খোঁজ নেয়া হলে রাতুল নামটি শোনার পরে অভিভাবকরা বলে পরে জানাবো। আগে যেহেতু পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে তাই অভিভাবকদের মনে সংশয় কাজ করে। আবার নতুন করে যদি ঝামেলা হয়। তারা যদি কোনো বিপদে পড়ে। এসব বিষয় মিলিয়ে অভিভাবকরা এখন আর আমাকে ডাকে না।

পড়ালেখা যেহেতু শেষ হয় নি তাই নতুন করে কোনো চাকরির জন্য আবেদন করতে পারছি না। গাজীপুরের ভাওয়াল সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র রাতুল বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা থানায়। আগে যে মেসে থাকতাম সেখানেও থাকতে নিষেধ করে দিয়েছে। স্থায়ীভাবে কোনো ভাড়া বাসায় উঠবো সেই সুযোগও নেই। এখানে ওখানে আত্মীয়ের বাসায় থাকতে হয়। নিরাপত্তার কারণে তারাও এখন আর থাকতে দিতে চায় না।  

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আলোচিত নেতা নুরুল হক নুর বলেন, ১৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনের নেতাকর্মীদের হাতেগোনা যে দুই একটা টিউশনি আছে তাতে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। যদি ছাত্রলীগ আবার তাদের ওপর হামলা করে। ইতিমধ্যে মশিউর, রাতুলসহ একাধিক নেতাকর্মীর ওপর একাধিকবার হামলা হয়েছে। মশিউরের হাতে ককটেল ধরিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। কাজেই আমাদের সকলের মনে ভয় ও শঙ্কা কাজ করে। টিউশনি শেষে রাতে নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারবো তো। এই শঙ্কা থেকে আমাদের স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবন বিপন্ন হয়ে পরেছে। প্রত্যেকটি হল যেহেতু ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে তাই হলেও আমরা নিরাপদ নই। আমাদের আবাসিক রুমগুলো ইতিমধ্যে তারা দখল করে নিয়েছে। একা বাসে ওঠার সাহস পাই না। এই বুঝি ছাত্রলীগ হামলা করে। ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই ক্লাসে যায়। এমনকি আমরা পাবলিক বাসে ওঠা বা একা চলাফেরা করাটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করি। কারণ, যে কোনো সময় তারা পেছন থেকে আমাদের ওপর আক্রমণ করতে পারে। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা পিএম সুহেল বলেন, আন্দোলনের সময় আমাকে জেলে নিয়ে যাওয়ার পর সব টিউশনি চলে গেছে। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে তাদের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে অভিভাবকরা জানায় নতুন টিউটর নিয়েছি। এখন আপনাকে নেয়ার সুযোগ নেই। ফলে নতুন করে টিউশনির খোঁজ করলে তারা বলে এদের পুলিশ ধরে নিয়েছিল। ঝামেলা আছে। টিউশনি দেয়া যাবে না। অথচ তারা একবারও বোঝার চেষ্টা করে না কেন  আমাদের পুলিশ ধরে নিয়েছিল। 

এদিকে বাড়িওয়ালা বলে দিয়েছে বাসা ছাড়তে হবে। রাতের বেলা পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়। ঝামেলা করে। ডিবি এসে বাড়িওয়ালাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমার বাবা নেই। ৪ ভাই ও এক বোনের মধ্যে আমি চতুর্থ। নিজের খরচ নিজে চালাই। ছোট ভাইয়ের পড়া ও মায়ের খরচও আমাকে চালাতে হয়। আমরা ছাত্র মানুষ। টিউশনি করতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হয়। এই মুহূর্তে হাতে একটাও টিউশনি নেই। কিভাবে চলছি আল্লাহই ভালো জানে। বড় দুই ভাই অন্যের জমি বরগা চাষ করে কোনোমতে খেয়েপরে আছে। 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা মশিউর রহমান বলেন, ছাত্রলীগ হলের সিট বণ্টন করে। আমরা যেহেতু তাদের বিপক্ষে চলে গেছি তাই আমাদের সিটগুলো বাতিল করে দেয়া হয়েছে। আমরা এখন বাস্তুহারা। আজ ভাইয়ের বাসায় কাল বন্ধুর বাসায়, এভাবে থাকতে হচ্ছে। তাও স্থায়ী ভাবে নয়। তার ওপর যে দুই একটা টিউশনি ছিল সেগুলোও চলে গেছে। বাবা গ্রামের বাড়িতে রিকশা চালালেও বর্তমানে বেকার। নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক দূরে থাকতে হয়। দুই থেকে তিন ঘণ্টা জার্নি করে ক্লাসে আসতে হয়। তার ওপর অনিরাপত্তার বিষয়টাতো থেকেই যায়। এই বুঝি সরকারের ছাত্র সংগঠন হামলা করে। 

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, আগে আমি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এই আন্দোলনে আমরা যারা লিডিং পজিশন বা নেতৃত্বে ছিলাম তারা কেউ এখন হলে থাকতে পারছি না। হলে আমাদের কারোর কোনো সিট নেই। সবার সিট বাতিল করে দখল করা হয়েছে। দুইদিন বাদেই আমাদের সমাবর্তন। সরকারি দলের ছাত্রনেতারা আমাদের সঙ্গে এই পরিমাণ দুর্ব্যবহার করছে যে হলে এসে বন্ধুদের সঙ্গে দুটি ছবি তুলবো, হলে যাবো এই সুযোগটুকুও আমরা পাচ্ছি না। গত ৫ বছরের শিক্ষা জীবনে এটা কত যে কষ্টকর তা বলে বোঝানো যাবে না।

গতকাল হলে যাওয়ার পর আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছে। যেন হলে না আসি। অথচ ৫ বছরের শিক্ষা জীবনে হলের জন্য এত কিছু করলাম আজ হলে আমার স্থান হচ্ছে না। একটি যৌক্তিক আন্দোলন করেছি। যার সফলতা অনেকটা দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু আদৌ কি আমরা সরকারি চাকরি পাবো। বাবা মো. ছিদ্দিকুর রহমান একজন প্রাইমারি শিক্ষক। বাবার কষ্ট লাঘব করতে আমাকে কম বেশি টিউশনি করতে হয়। কিন্তু আজ আমরা না পারছি টিউশনি করতে। না পাচ্ছি একটি ভালো চাকরির নিশ্চয়তা। তার ওপর মিথ্যা মামলার খড়গ তো মাথার ওপর ঝুলছে। আমরা সরকারের বিপক্ষে না। আমরা চাই সরকারের পক্ষ থেকে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে আমাদের আগের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হোক। 

যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, দীর্ঘ ৭ মাস আন্দোলন করাতে আমাদের অনেক আগেই হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। যারা হলে ছিলাম তারা সবাই টিউশনি নির্ভর ছিলাম। এখন আমাদের টিউশনি নেই। আমরা না পারছি নতুন করে টিউশনির ব্যবস্থা করতে না পাচ্ছি কোনো চাকরি। আমরা এখন একটা অনিরাপদ অবস্থায় আছি। আমাদের অনেকেই ক্লাসে যেতে পারছে না। পরীক্ষার হলে বসতে পারছে না। এদিকে আবাসন সংকট দেখা দিয়েছে। 

আত্মীয়স্বজনদের বাসায় ২ থেকে ৩ দিনের বেশি থাকতে পারি না। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক সময় তারা আমাদের থাকতে দিতে চান না। টিউশনি ও চাকরিতো অনেক পরের কথা। এ অবস্থায় আমাদের ভবিষ্যৎ অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৪ অক্টোবর ২০১৮

Wednesday, October 3, 2018

শাসক দলের শোচনীয় অবস্থা

বদরুদ্দীন উমর

৩০ সেপ্টেম্বর বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসমাবেশ করেছে। এই সমাবেশের রিপোর্টে দৈনিক যুগান্তর বলছে, ‘জনসভা রূপ নেয় জনসমুদ্রে’। অন্যদিকে প্রথম পৃষ্ঠাতেই প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এই সমাবেশ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘বিএনপির সমাবেশই প্রমাণ করেছে দলটি ক্রমেই সংকুচিত ও জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে। তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণেই দলটি জনসমর্থন হারিয়ে ফেলেছে’ (যুগান্তর, ০১.১০.২০১৮)।

জনসমাবেশের রিপোর্টে যুগান্তরে যা বলা হয়েছে তা হল, ‘সকাল ১০টার পর থেকেই ঢাকা মহানগর ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থকরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসতে শুরু করে। বেলা ৩টার মধ্যেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় ভরে ওঠে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আয়োজিত জনসভা রূপ নেয় জনসমুদ্রে। উদ্যান পেরিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের মূল ফটকের সামনের অংশ ও মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত সড়কটিতেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না’ (যুগান্তর, ০১.১০.২০১৮)।




সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রোববার বিএনপির সমাবেশের একাংশ। ছবি: যুগান্তর

শুধু এই রিপোর্ট নয়, সমাবেশের যে ছবি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তার থেকেও এই রিপোর্টে বর্ণিত সমাবেশের অবস্থার সমর্থন পাওয়া যায়। কাজেই কেউ একজন বিএনপির সমর্থক না হলেও এই বাস্তব অবস্থাকে তার স্বীকার করতেই হবে যে, ৩০ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভায় অগণিত লোকের সমাবেশ হয়েছিল। তাদের সমাবেশ দেখে এটা মোটেই প্রমাণিত হয় না যে, বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন বা বিএনপির অবস্থা ২০১৪ সালের থেকে সংকুচিত হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদের সাধারণ সম্পাদক এ কথাই বলছেন!

এ থেকে বোঝার কি অসুবিধা আছে, আওয়ামী লীগ নিজেই বাস্তবতা থেকে কতখানি বিচ্ছিন্ন? বোঝার কি অসুবিধা আছে যে, দেশের পরিস্থিতি অনুধাবনের সামান্যতম ক্ষমতাও তাদের এখন নেই?

বোঝার কোনো অসুবিধা নেই যে, তাদের এখন দিশেহারা অবস্থা। তাদের পায়ের তলা থেকে যে মাটি সরে যাচ্ছে বা ইতিমধ্যেই সরে গেছে এই উপলব্ধি তাদের একেবারেই নেই। এ অবস্থায় তাদের ভরসা শুধু নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ। 

জনগণ বা ভোটাররা নয়, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি আনুগত্যের হিসাব করেই তারা আগামী নির্বাচনে জয়ের স্বপ্ন দেখছে! এই স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে এবং আওয়ামী লীগের দুরবস্থা যতই প্রকট হচ্ছে, ততই বেশি করে সরকারি মহলের আবোলতাবোল কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। এসব কথা তাদের প্রতি জনসমর্থন বৃদ্ধি না করে জনগণের কাছে হাসির ও রঙ্গরসের খোরাক জোগাচ্ছে। এর পরিণতি যে তাদের জন্য ভালো হতে পারে না, এটা বলাই বাহুল্য।

২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনে সব স্তরের জনগণের প্রাণ ওষ্ঠাগত। ২০১৪ সালের অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরবর্তী এই পাঁচ বছরে অবস্থা অনেক খারাপ হয়েছে। এখন তাদের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু নির্বাচনের কাছাকাছি মুহূর্তে এসেও তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সড়ক পরিবহন আইনের মতো গণতন্ত্র ও শ্রমিক বিরোধী আইন পাস করতে কোনো দ্বিধাবোধ করেনি। উপরন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ছে এই আওয়াজ তুলে মহা-আনন্দে আছে। কিন্তু তাদের এসব গণবিরোধী কাজ এবং অসার কথাবার্তা জনগণের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে এটা বোঝার মতো ক্ষমতা তাদের আর নেই। শুধু তাই নয়, তাদের অবস্থা এখন এমনই যে, তারা এসব বোঝাবুঝির পরোয়া পর্যন্ত করে না। যে কোনো ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দলের পক্ষে এর থেকে করুণ অবস্থা আর কী হতে পারে?

বিএনপির এই জনসমাবেশ ঠেকানোর জন্য সরকার এবং সরকারি দল ও তাদের জোটের শরিকরা সব রকম চেষ্টাই করেছে, তবে এবার জনগণের চাপে সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে তারা পারেনি। তাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই সমাবেশ সম্পর্কে এক হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, তাদের ঢাকার প্রতিটি অলিগলিতে পর্যন্ত ঠেকানো হবে। কেন ঠেকানো হবে? যে কোনো দলই জনসভা, জনসমাবেশ ডাকতে পারে এবং ডাকার অধিকার তাদের আছে। কাজেই অন্য বিরোধী দল সমাবেশ ডাকলে তাদের লোকজনকে সমাবেশে আসতে বাধা দেয়া হবে কেন? এভাবে বাধা দেয়ার এখতিয়ার তারা কোথায় পেলেন?

তারা নিজেদের সুবিধামতো সব সময় যে সংবিধানের কথা বলেন, সেই সংবিধানের কোথায় এ কথা আছে যে সরকার ছাড়া বিরোধী দলগুলোর মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি করা বেআইনি? কোথায় আছে সরকার ও সরকারি দলের এখতিয়ার এক্ষেত্রে বাধা দেয়ার?

তারা যে ধরনের নির্বাচনই হোক, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসেছেন; কিন্তু তার দ্বারা জনগণ কোনো ব্যক্তিকে বা কোনো দলকে রাজা বা রাজার দল বানাননি। নির্বাচনে জয়ের অর্থ সরকারি ক্ষমতা নিলামে ওঠা নয়। নির্বাচনে জয়ের অর্থ সম্পত্তি নিলামের মাধ্যমে হস্তগত করা নয়। এক কথায় সরকার কারও, কোনো দল বা ব্যক্তির সম্পত্তি নয়। সরকার গঠনের অর্থ দেশের শাসন কাজ একটা নির্দিষ্ট মেয়াদে পরিচালনার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত হওয়া। এর থেকে বেশি কিছু নয়। নির্বাচনের মাধ্যমে কেউ চিরস্থায়ী জমিদারি কেনে না। কিন্তু বর্তমানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকারি দলের হাবভাব, কথাবার্তা ও কাজকর্ম এমন যে মনে হয় নির্বাচনের মাধ্যমে নিলামে ওঠা জমিদারি তারা কিনে দেশের মালিক হয়েছেন।

এ কথা সবাই জানে যে, ২০১৪ সালের নির্বাচন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে, কোনো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠান তাদের দ্বারা সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনকে মুঠোর মধ্যে রেখে এবং পুলিশ প্রশাসনকে দলীয়ভাবে ব্যবহার করে তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করেছিল।

এ কারণেই আগামী সাধারণ নির্বাচনে যাতে ২০১৪ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হতে পারে এজন্য বিরোধী দলগুলো এখন পুরোদমে মাঠে নেমেছে। এমনকি ২০১৪ সালে যারা করণীয় হিসেবে নিজেদের সামনে কিছুই দেখেনি, তারাও এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোট গঠন করছে এবং মহাজোট গঠন করার উদ্যোগ নিচ্ছে। এই প্রচেষ্টার প্রতি যে জনগণের ব্যাপক সমর্থন আছে সেটা নানাভাবেই দেখা যাচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে তারা সংবাদপত্র, টেলিভিশন ইত্যাদি প্রচারমাধ্যম থেকে নিয়ে বিরোধী দল ও ব্যক্তির কণ্ঠরোধের যে প্রচেষ্টা নিয়েছে এটা হল ডুবন্ত অবস্থায় খড়কুটো ধরার মতো ব্যাপার। কিন্তু খড়কুটো ধরে যে কারও পক্ষে রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয় এটা জানা কথা। এর দ্বারা আওয়ামী লীগেরও শেষ রক্ষার সম্ভাবনা নেই।

জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পুলিশি সন্ত্রাস, নির্বাচন কমিশন ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে কারচুপির চেষ্টা সর্বতোভাবে করলেও যে পরাজয় ঠেকানো যায় না এর একেবারে সাম্প্রতিক উদাহরণ হল মালদ্বীপের নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ইয়েমেনি সব রকম দুর্নীতি ও দমননীতির আশ্রয় গ্রহণ করলেও শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। পরিপূর্ণ জনবিচ্ছিন্নতাই এর কারণ। এবং এই জনবিচ্ছিন্নতা হয়েছে দেশের সম্পদ অবাধে ও বেপরোয়াভাবে লুটপাট এবং তার প্রয়োজনে জনগণের ওপর চরম ফ্যাসিস্ট নির্যাতনের কারণে। এভাবে দুর্নীতি ও নির্যাতন চালিয়ে কিছুদিন ক্ষমতায় থাকা যায়; কিন্তু ক্ষমতা বেশিদিন ধরে রাখা যায় না।

ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় বেপরোয়া দুর্নীতি ও নির্যাতন করলে তার ফলে শেষ পর্যন্ত শাসক দলের মাথা থেকে বুদ্ধি বিদায় নেয়। বাংলাদেশের শাসক দল এবং তাদের পদলেহী শরিকরা যেভাবে কথাবার্তা বলে আসছেন তার মধ্যে বুদ্ধি ও কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় আর পাওয়া যায় না। ৩০ সেপ্টেম্বর বিএনপির জনসমাবেশ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তার থেকে বোঝা যায় এটা বুদ্ধির কাজ নয়। দৃষ্টিশক্তির পরিচায়কও নয়। বুদ্ধি তাদের মাথা থেকে বিদায় নিয়েছে এবং দৃষ্টিশক্তি রহিত হয়েছে। এর পরিণামে যা হওয়ার তাই হবে।

  • বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
  • কার্টসিঃ যুগান্তর / ০২ অক্টোবর ২০১৮