Search

Saturday, October 6, 2018

বিনাভোটের সরকার হিটলারের মতো প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে — এসকে সিনহা



বিনাভোটের সরকার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে হিটলারের মতো প্রপাগান্ডা মেশিন ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।

নিজের বিরুদ্ধে করা শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের চলমান দুর্নীতির অভিযোগ এবং মামলা প্রসঙ্গে এমন প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি।

ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাতকারের সময় এ মন্তব্য করেন তিনি। সম্প্রতি তার বই এ ‘ব্রোকেন ড্রিম, রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড ডেমোক্রেসী’ নিয়ে গণমাধ্যমটির সঙ্গে কথা বলেন। ওয়াশিংটন ডিসির জাতীয় প্রেস ক্লাবে সেলিম হোসেন এ সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন।

বিচারকদের অনাস্থা এবং দুর্নীতির অভিযোগ আনতে বাধ্য করে প্রেসিডেন্ট শপথ ভঙ্গ করেছেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুদকের তদন্তের কোনো সুযোগ নেই, শুধু ষোড়ষ সংশোধনী নয় নিম্ন আদালতে সরকারের হস্তক্ষেপ ইস্যুতেও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় বলেও সাক্ষাতকারে মন্তব্য করেন সিনহা।

রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী এবং ডিজিএফআইয়ের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন মন্তব্য করে সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা বলেন, রাষ্ট্রপতি নিজে শপথ ভঙ্গ করে, এটা দুর্ভাগ্যজনক। সে (রাষ্ট্রপতি)একটা এক্সিকিউটিভের-প্রধানমন্ত্রী অথবা ডিজিএফআইয়ের একটা হাতের পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন। উনি সংবিধানকে রক্ষা করবেন, সংবিধানকে পদদলিত করে উনি বিচারকদের বাধ্য করেছেন, রাত্রে দাওয়াত দিয়ে, ডিনার খাইয়ে বলছেন-উনার সঙ্গে বসবেন না। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে? এটা যদি হয়, একটা প্রধান বিচারপতিকে এরকম যেতে হয়, তাহলে দেশে আর কি থাকবে?

সিনহা আরো বলেন, বর্তমান প্রধান বিচারপতি তাদের (সরকার) কথা শুনলো না, সরকার কালকে অন্য বিচারপতিদের ডেকে বললো তার সঙ্গে বসবেনা। এবং তারা রাজি হলো, এ প্রধানবিচারপতিও চলে যাবে। অথবা হাইকোর্টের এক বিচারক একটা রায় দিলেন, যেটা সরকারের বিরুদ্ধে গেলাে। প্রেসিডেন্ট প্রধান বিচারপতিকে বলে দিলেন যে- তাকে তুমি কোনো কনস্টিটিউশন দিওনা, কিছু দিওনা, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তো সে চলে যাবে-এটাতো হতে পারেনা। এক্সিকিউটিভের হাতেই যদি সম্পূর্ণকিছু-একজন প্রধান বিচারপতির, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত, সবগুলা সিদ্ধান্ত যদি আগেই দিয়ে দেই, তাহলে আর থাকলো কি? রাষ্ট্রের আর থাকলো কি?

প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অন্য বিচারপতিদের অনাস্থার বিষয়টি প্রসঙ্গে সিনহা বলেন, বিচারপতিরা অসহযোগিতা করেছে, এটা দুর্ভাগ্য। কিছুদিন আগে তারা রায় দিয়ে বলছে, এরকম কোনো অভিযোগ থাকলে ইনকোয়ারি (তদন্ত) করে দেখবে। তাদের দস্তখত করা তাতে, ১৫-২০ দিন যায়নি তারা নিজেরা এটা বেমালুম ভুলে গেলেন!

বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে উঠা দুর্নীতির অভিযোগ এবং বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের সংবাদ প্রকাশ হওয়া প্রসঙ্গে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি পুরো বিষয়টিকে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রপাগান্ডা বলে মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, আমার বইতে আমি পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেছি যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রপাগান্ডা যেটা করে, তাদের টাকা আছে, মিডিয়া আছে, পুলিশ আছে, সবদিকই আছে, এটা ওয়াইডস্প্রেড (সুবিস্তৃত)হয়। যেমন- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার যেরকম প্রপাগান্ডা মেশিন ব্যবহার করেছিলো, ঠিকই একিরকম রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। এটা ব্যাপক আকারে হয়ে যায়। যে সরকার জনগণের সমর্থন, ভোটাধিকার বা ভোট নিয়া আসে নাই, তারা তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য এই প্রপাগান্ডাগুলা করে।

ষোড়শ সংশোধনীর রায় দেয়ার জন্য সরকার প্রধান বিচারপিতর উপর চাপ প্রয়োগ করেছিলো উল্লেখ করে সিনহা বলেন, প্রশ্নতো হলো-সরকার কেন একটা জিনিসকে এড়িয়ে যাচ্ছে? ইস্যুটা ছিলো- প্রধান বিচারপতিকে বাধ্য করা হয়েছিলো, বাধ্য করতে চেষ্টা করেছিলো ষোড়শ সংশোধনীর রায় দেয়ার জন্য। এটা আমি রাষ্ট্রপতি সঙ্গে, প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে রায়ের আগের দিন এটা আলোচনা হয়েছিলো। এবং আমি না বলে আসছি। এটা কিন্তু সরকার অস্বীকার করছেনা।

তিনি বলেন, রায় প্রচারিত হবার পর আমার আরেকটা দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো- সরকার ফাদার অব দ্য নেশন এবং ফাউন্ডিং ফাদারস এইটার ব্যবধানটা তারা বুঝেনা। ফাউন্ডিং ফাদারস হলো কনস্টিটিউশন (সংবিধান) যারা ফ্রেম (গঠন) করেছে এবং ফাদার অব দ্য নেশন হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এখন বঙ্গবন্ধুকে যদি ফাউন্ডিং ফাদারসে নিয়ে আসে, তারাই, আওয়ামী লীগই কিন্তু না জেনে বঙ্গবন্ধুকে নীচে নামিয়ে আনছে।

সাবেক প্রধান বিচাপতির বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য বিচারপতিরা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন মন্তব্য করে সিনহা বলেন, এই বিচারকরা (প্রধান বিচারপিতর উপর অনাস্থাজ্ঞাপনকারি)সাংঘাতিকভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, তাদের শপথ ভঙ্গ করেছে, তারা সরকার লোভ-হয়তো প্রধান বিচারপতি করবে, কি লোভ দেবে-এটার উপর ইনফ্লুয়েন্স (প্রভাবিত) হয়ে এটা করেছে। এটা সাংঘাতিক রকমের ন্যাক্কারজনক।

নিজের বিরুদ্ধে সরকারের করা অভিযোগ প্রসঙ্গে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকার এখন বলছে, উনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো, তাই উনি চলে গিয়েছেন। বিচারকরা আমার সঙ্গে বসতে চাচ্ছেনা। আমার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে তাহলে--সংবিধানের তিনটা অঙ্গের মধ্যে একটা অঙ্গের প্রধান, তার বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ থাকে ইনকোয়ারি (তদন্ত) হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন এটা হলো সাব অর্ডিনেট আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। আর প্রধান বিচারপতি, বিচারপতিরা, সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা-এরা হলেন কনস্টিটিউশনাল পোস্ট (সাংবিধানিক পদ)। এবং তাদের ব্যাপারে, তারা যদি মিস কন্ডাক্ট (অন্যায়) করে থাকে, তাহলে সংবিধানেই বলা আছে কিরকম ইনকোয়ারি হবে, কন্ডাক্ট হবে এটা। এটা কোনো আমলা, সরকারের মন্ত্রী বা কোনো সেক্রেটারি অথবা দুর্নীতি দমন কমিশনের অধিকারের বাহিরে। এটা আরো স্পষ্ট হলো- ষোড়শ সংবিধানের কোড অফ কন্ডাক্টে। সাত জনের সর্বসম্মত মতের ভিত্তিতে এটা ফ্রেম (গঠন) করা হলো। যদি বিচারকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে সেটা ইন হাউজ ইনকোয়ারি (তদন্ত) হবে।এরপর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল এটা কিভাবে করবে এটা বলা আছে। তারা ইন হাউজ ইনকোয়ারি করে অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রেসিডেন্টের কাছে জানাবে।

দুদক প্রধানবিচারপতির বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত করতে পারেনা জানিয়ে সিনহা আরো বলেন, দুদক কিভাবে তদন্ত করবে? এটা আমরা পরিষ্কার রায়ে উল্লেখ করেছি। এমনটা ঘটলে সংবিধান মানা হবেনা। উচ্চ আদালতের রায় মানা হবেনা। পরিষ্কার উল্লেখ আছে কোড অফ সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে, ইনকোয়ারি করা। ইমিডিয়েটলি রাষ্ট্রপতির কর্তব্য ছিলো এটা। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সঙ্গে ইনকোয়ারি করা। আমাদের একটা ট্রেডিশন আছে-যে বিচারকের বিরুদ্ধে ইনকোয়ারি হতো সে বিচারক স্ব-ইচ্ছায় পদত্যাগ করতেন, যদি না হতো তাহলে প্রধান বিচারপতি তাকে কনস্টিটিউশন দিতেন না। আমার বিরুদ্ধে যদি এরকম অভিযােগ থাকতো তাহলে আমি কোর্টে বসতাম না। ইনকোয়ারি হতো।

বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রকৃতপক্ষে ষোড়ষ সংশোধনীর পূর্বেই সরকারের সঙ্গে আমার টানাপোড়েন চলছিলো। বিষয়টা নিম্ন আদালতের বিচারকদের ডিসিপ্লিনারি রুলস দিয়ে। আমার বিচার বিভাগ আলাদা করেছি কিন্তু মাজদার হোসেন মামলার রায়ে যেসব নির্দেশনাবলী ছিলো, এর মধ্যে একটা ছিলো বিচার বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেসিকে আলাদা করা, সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আনা। এবং এটা ডিসিপ্লিনারি রুলস করা। গভর্ণমেন্ট বিভিন্ন অজুহাতে কোনোদিনই এটা করে নাই। আমি যখন দেখলাম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিম্ন আদালতের বিচারকদের কোনোমতেই কন্ট্রোল করা যাচ্ছেনা, তখন আমি সরকারকে প্রেসারইজ করলাম-রুলসগুলা তোমরা বদল করো।তারা টালবাহানা করতে করতে শেষপর্যন্ত একটা দিলো সেটা হলো গর্ভমেন্ট সার্ভিস আপিল রুলস-৮৫ ইংরেজির একটা কার্বন কপি। তখন আমি বললাম-না এটাতো হতে পারেনা। আমি বললাম-মাজদার হোসেনে এটা পরিষ্কার করে উল্লেখ করা আছে, যে সিদ্ধান্ত হবে তাতে সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত প্রাধান্য পাবে। এক্সিকিউটিভের যদি প্রাধান্য তাকে তাহলে কোনো ব্যাপারেই অধ:স্তন বিচারকদের কন্ট্রোল করা যাবে না। যদিও আর্টিকেল ১০৯ আছে-হাইকোর্ট বিভাগ সুপারভিশন এবং কন্ট্রোল করবে কিন্তু অন্যদিকে আর্টিকেল ১১৬ লাগিয়ে দিয়ে একটা হ-য-র-ব-ল অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এতে করে নিম্ন আদালতের বিচারকদের কন্ট্রোলটা এক্সিকিউটিভদের (নির্বাহী) হাতে চলে যায়। এটা নিয়ে অনেক রশি টানাটানি হয়। প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলেছি, রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, আইনমন্ত্রীকে বলেছি এবং একটা অনুষ্ঠানে আমি বলেছি। শেষপর্যন্ত অনন্যপ্রায় হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলছি-আপনাকে ভুল বুঝানো হচ্ছে। একটা পাবলিক মিটিংয়ে বলছি, জাজেজ কমপ্লেক্স উদ্বোধনের সময়। প্রধানমন্ত্রী খুব নাখোশ হন। আমি বললাম নাখোশ হওয়ার কিচ্ছু নাই, যেটা হাইয়েষ্ট কোর্টের নির্দেশনা অমান্য করবে সরকার, তাহলে আপনার সংবিধানকেই অমান্য করা মতো। সংবিধানকে অমান্য করা মানে আইনের শাসন থাকবেনা। যে সংবিধান আমরা রক্তের বিনিময়ে এনেছি তাকে যদি আমরা পদদলিত করি, আমরা যদি এটাকে অবমাননা করি, তাহলে এই দেশে থাকলো কি? তাই আমি বললাম এটা হতে পারে না।

যেটা সুপ্রিম কোর্টের রায়, সেটা সবার কাছে বাধ্যকর। এটা মানতে হবে। সরকার এটা কোনোরকমেই মানলেন না। নিম্ন আদালতের বিচারকদের সরকার চাচ্ছিলো তাদের কন্ট্রোলে রাখার জন্য। এবং কিছু বিচারক যারা দুর্নীতিপরায়ণ, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদেরকে কী (মূল) পোস্টে বসালো সরকার, তাদের (সরকার) যে ইচ্ছাগুলা, তাদের চাহিদা অনুযায়ী এগুলা বাস্তবায়ন করা, তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা। যাতে পলিটিক্যাল অপোজিশন পার্টি (বিরোধী দল) এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতা মামলা করা, একটা মামলা করে দিবে, জামিন দেবে না। এমনকি এটাও আমি দেখেছি জামিনযোগ্য অপরাধে ম্যাজিস্ট্রেটরা জামিন দিচ্ছেনা। যদিও আইন নাগরিকের অধিকার দিয়েছে, তার অবশ্যই জামিন দিতে হবে। জজের সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ নেই, কেন জামিন দেবেনা? এটা শুধু উপর থেকে চাপে, আইন মন্ত্রণালয়ের চাপে।

সরকার দ্বারা প্রচারিত নিজের অসুস্থতার প্রসঙ্গটি হেসে উড়িয়ে দিয়ে সিনহা বলেন, অসুস্থতা-এটা একটা সরকারের বাহানা। আমিতো অসুস্থ না, যেটা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে-আমাকে এখনো ডাক্তারের সঙ্গে কোনো পরামর্শ করতে হয়নি। সরকার আমাকে অসুস্থ বানিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করতে চেয়েছিলো।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার রায় নিয়ে শেখ হাসিনা অবস্থান বদল প্রসঙ্গে সিনহা বলেন, শেখ হাসিনা নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইলেন। আমরা এটা অনেক কিছু করে বাতিল করলাম। দেখা গেলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারে প্রধান বিচারপতিকে রাজনীতিতে টানা হলো, আমরা বললাম যে না প্রধান বিচারপতি হবেননা। তবে দুইটা টার্ম তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে যাতে নিরপেক্ষ ফল হয়। শেখ হাসিনা যেটা দাবি করেছিলেন উনি একেবারে বেমালুম ভুলে গেলেন আমাদের রায়টা। আবার পুরাতন জায়গায় চলে গেলেন। এরপরে ২০১৪ সালে যে নির্বাচনটা হলো তাতে ১৫৩ জন কোনো কন্টেস্টই করেন নাই। এটা কোনো নির্বাচনই হয়নি, প্রহসন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কড়া সমালোচনা করে সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে তাদের কন্ঠ রোধ করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এটা সাংঘাতিকভাবে ক্ষতি করবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের যদি সুযোগ না থাকে তাহলেতো স্বৈরতন্ত্রই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে এই দেশে। এটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য না।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা একটা রাজনৈতিক ইস্যু। রোহিঙ্গা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী, সংগঠগুলোকে চাপ প্রয়োগ করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেবার ব্যবস্থা করা।

নিজের প্রকাশিত বই প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি আমার ওকালতি জীবন, বিচারক জীবন এবং স্ট্রাগল যেটা করেছি, এটা নিয়ে (বই) আমার অনেকদিনের স্বপ্ন ছিলো। প্রকৃত আইনের শাসনটা এদেশে হচ্ছেনা। জীবনের শেষ দিকে, প্রধান বিচারপতির শেষ সময়ে ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে একটা ইস্যু তৈরি করলো সরকার।

তিনি বলেন, আইনের শাসন বলতে কি বুঝায়, বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কী অসুবিধা হচ্ছে, আমাদের স্বাধীনতা উত্তর সংবিধান যা বলছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ যার জন্য জীবন দিয়েছে, এটা কী প্রতিফলিত হয়েছে কী না? এগুলা লেখার জন্য অনেকদিন চিন্তা করেছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত এই নোটগুলো আনতে পারিনি।
  • সুত্র — https://bit.ly/2QA42hr

Thursday, October 4, 2018

Bangladesh: the latest assault on free speech

Shafquat Rabbee


Bangladesh already suffers poor standards when respecting freedom of expression, but a new set of laws will enable the government to suppress political dissent and free speech using brutal means.

A recently passed law known as the Digital Security Act 2018 has extraordinary scope. The new law will allow Bangladeshi authorities to search and detain any person, seize computers and handheld devices on mere suspicion, without any court-issued warrants, on charges that may land someone up to 14 years in jail for simple expressions of views in a digital platform that the authorities may deem defamatory or subversive.



Prior to this new set of rules, which now awaits ceremonial confirmation by the country’s president, Bangladesh raised global outcries for jailing distinguished photojournalist Shahidul Alam for merely speaking to the international media during an August 2018 student protest demanding road safety in Dhaka. Within 24 hours of his interview to Al Jazeera, where he linked the road safety protests to overall lack of democracy and effective governance in Bangladesh, the country’s security forces arrested Alam and he has been in jail ever since, despite calls for his release coming from global luminaries including Nobel laureates and major media and rights organisations.

In another assault on freedom of expression, Wasim Iftekhar, a barely known young publisher, was picked up by plain-clothed men, after publishing a book which simply documents courtroom proceedings and arguments presented by Bangladesh’s opposition leader Begum Khaleda Zia, while she was going through the country’s court system on corruption charges.

The new law, which appears notoriously vague in its definitions of offenses, yet extremely precise and sweeping in its stipulations for punishments, will enable Bangladesh to suppress free speech using increasingly draconian means.

The Digital Security Act allows the arrest of anyone if the police believe that an offense has been or is being committed, or there is a possibility of any crime or destruction of evidence.

Another provision of the law allows for up to 10 years imprisonment for “spreading propaganda” against Bangladesh’s Liberation War of 1971. Similar punishment awaits anyone defaming the country’s national anthem or the national flag using a digital device. Repeat offenders will face the maximum penalty of life imprisonment. 

The law offers scant definitions for what constitutes “defamation” or “propaganda” making it difficult to distinguish genuine historical scrutiny from content produced with the intent to malign historical events.

The new law states that anyone deliberately publishing or broadcasting anything that is “attacking, intimidating or insulting” will face three years of jail time. Similar punishment awaits anyone publishing or broadcasting false information to defame someone or spread of false information to mar the “image” (i.e. reputation) of the country.

The law stipulates seven years in jail for anyone publishing or broadcasting on a digital platform any content with the intent to hurt religious sentiments and values. This will further shrink the scope for theological debates in Bangladesh – a country from where several atheist bloggers, had to flee over the last five years.

Making the job of investigative journalism particularly difficult, if not impossible, the new law allows maximum jail term of 14 years and fines up to US $25,000 for illegally entering any government building and secretly recording anything with electronic devices. Espionage charges can be filed under this law against anyone gaining unauthorised access to any government information, which is a prerequisite for whistle-blowing exercises against government abuse
.
For a country with $1,700 income per capita, the new law stipulates fines that are onerous, especially given that the likely offenders will be young opposition activists. There was a provision for the establishment of a Digital Security Agency in Bangladesh, with the task of reviewing allegations against offenders before legal proceedings can start by the police. That provision was later withdrawn, allowing the police to arrest anyone, without any warrants or oversight prior to such arrests.

The international community must do more to dissuade the Bangladesh government from destroying whatever little freedom of speech the country has left. Amnesty International has protested the Digital Security Act by warning hundreds of people had already been arbitrarily arrested in the past six years under the existing laws, and the new act would further impose “dangerous restrictions on freedom of expression”.

The president of Bangladesh must send this act back to the parliament for further review to address concerns expressed by journalists and rights organisations. As the third largest Muslim majority country with a population of 170 million, Bangladesh poses a serious geopolitical risk if the international community allows the country to plunge from being a less-than-perfect democracy and become a North Korea styled tyranny.


  • Source — https://bit.ly/2O5BUpC 


Bangladeshi Digital Security Act Draws Fire From EU


Emma Woollacott

European diplomats in Bangladesh have issued a statement condemning the country's new Digital Security Act, saying it severely suppresses freedom of speech and of the media.

Passed earlier this month, the act incorporates measures from the colonial-era Official Secrets Act as well as a number of measures restricting the activities of the media.

These include a jail sentence of up to 14 years for spreading 'propaganda' about Bangladesh's 1971 war for independence from Pakistan, as well as a three-year sentence for publishing information that is 'aggressive or frightening'.

One section of the act imposes sentences of up to 10 years for posting information that 'ruins communal harmony or creates instability or disorder or disturbs or is about to disturb the law and order situation'.



The new law also grants law enforcement powers to remove or block online information that 'harms the unity of the country or any part of it, economic activities, security, defense, religious value or public order or spreads communal hostility and hatred' - and to conduct warrantless searches and seizures if a police officer has reason to believe it is 'possible' that 'any offense under the Act' has been committed.

In their statement, the heads of mission of the EU member states, the European Union delegation and the heads of mission of Norway and Switzerland say the act unduly restricts the freedom of expression and the freedom of the media, and undermines judicial procedural guarantees.

"In its current form the Act could be used to suppress and criminalise the legitimate exercise of these freedoms," they say.

"We call upon the government of Bangladesh to continue consultations on this law and pursue the commitments taken during the Universal Periodic Review last May, so as to ensure that the Digital Security Act will be in accordance with the Universal Declaration of Human Rights, the International Covenant on Civil and Political Rights, as well as the Constitution of Bangladesh."

The European leaders join their voices to those of human rights groups and of course journalists themselves.

"The new Digital Security Act is a tool ripe for abuse and a clear violation of the country’s obligations under international law to protect free speech," says Brad Adams, Asia director of Human Rights Watch.

"With at least five provisions criminalizing vaguely defined types of speech, the law is a license for wide-ranging suppression of critical voices."

The initial response of prime minister Sheikh Hasina was to assert that the press would not be gagged. "I don’t know why our journalists are becoming so sensitive," she said.

The government has now agreed to meet journalists on Sunday to discuss their concerns, leading them to call off a protest that had been planned for tomorrow. However, Hasina appears highly unlikely to withdraw the act, or even to amend it significantly.

Source — https://bit.ly/2QuE2nv

ভোট রাজনীতি — বৃহৎ অংশে কোটা থাকছেই!


মোঃ নিজাম উদ্দিন



শুধু কোটা বাতিল করে বিশেষ বিসিএস বন্ধ না করলে লাভ কী? ‘কোটা-সংস্কার-আন্দোলন’ এর    প্রধান দাবী ছিল সকল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে তা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে অাসা,বাতিল করা নয়। অথচ এখন বলা হলো শুধু মাত্র প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরির কোটা বাতিল! তার মানে কী দাঁড়ালো? তৃতীয় ও চতুর্থ কিংবা এর পরের ক্যাটাগরির চাকরিতে কোটা সম্পূর্ন অাগের মতই থেকে যাচ্ছে! এই ব্যবস্থায় চাকরি প্রত্যাশীদের একটা ছোট অংশ লাভবান হলেও বৃহৎ অংশকে সেই অাগের মতই কোটার গ্লানি বইতে হবে।

এছাড়া বলা হচ্ছে, প্রজ্ঞাপন হতে হতে জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে! এটা কেন? এরও একটা অপরাজনীতি অাছে, সেটা হলো ডিসেম্বরের মধ্যে যেহেতু দেশে নির্বাচন হওয়ার কথা, সেহেতু দেশজুড়ে লাখো শিক্ষিত বেকার যুবকদের ক্ষোভকে ছলে বলে কৌশলে কিছুটা দমাতে পারলে, ম্যান্ডেটবিহীন সরকার যে ফরম্যাটেই নির্বাচন করুন, কিছুটা সুবিধা পাবার স্বপ্ন দেখে।  আর যদি অবাধ নির্বাচন হয়, তাহলে নতুন সরকারের ঘাড়েই যাতে বিষয়টা চাপে। অার অাওয়ামী লীগ তখন কোটা সংস্কার অান্দোলনকারীদের দিয়ে একটা অান্দোলন জমাতে পারে। অার ভোট ডাকাতি করে আবারও ক্ষমতায় গেলে ছলে-বাই-কৌশলে যাতে এই প্রক্রিয়াটা অারো দীর্ঘ করা যায় এবং আন্দোলনকারীদের একেবারে শেষ করা যায়। 

এই মুহূর্তে প্রজ্ঞাপন জারি না করেই সরকারের কোটা বাতিলের ক্রেডিট নেওয়ার বড় কারণ হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের ভোট। সরকার ভাল করেই জানে কোটার বিষয়টির নূন্যতম একটা ফয়সালা না হলে তারুণ্যের ভোট তাদের নির্বাচনের রাজনীতিকে সোজাসাপ্টা না বলে দিবে। এই ঝুঁকি সরকার নিতে চাচ্ছে না।

এদিকে চল্লিশ তম বিসিএসের সার্কুলার জারি করা হয়েছে যেখানে কোটা বাতিলের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি! যদি বাতিলও হয়েই থাকে অার চল্লিশ তম বিসিএস থেকে কার্যকর না হয় তার মানে দাঁড়ালো একচল্লিশ তম বিসিএস থেকে কার্যকর হবে। সোজা ভাষায় বললে কোটা  বাস্তবায়ন হতে কম করে হলেও অার এক থেকে দুই বছর সময়ের প্রয়োজন। এখন সরকার যা করছে তা মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে ভোট বাড়ানোর অপচেষ্টা,  অার কিছুই নয়। 

  • লেখক — মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সহসম্পাদক ,ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। এমফিল গবেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাবি।

বিনিয়োগে গতি বেড়েছে, রেলের গতি বাড়েনি


কয়েক বছর ধরে সবচেয়ে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতগুলোর অন্যতম রেল। প্রায় অর্ধশত প্রকল্পের মাধ্যমে রেলের উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হচ্ছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। ৫০ হাজার কোটি টাকা এরই মধ্যে ব্যয়ও হয়েছে। তার পরও গতি বাড়ছে না রেলের। এখনো ঘণ্টায় গড়ে ৫০ কিলোমিটারের নিচে আছে রেলের গতি। বাংলাদেশে রেলের এ গতি পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের চেয়ে বেশ কম।

বিভিন্ন দেশের রেলওয়ের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, পার্শ্ববর্তী ভারতে যাত্রীবাহী ট্রেনের গড় গতি ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। চীনেও হাইস্পিড বাদে যাত্রীবাহী সাধারণ ট্রেনের গড় গতি এখন ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটারের উপরে। অন্যান্য দেশের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় ট্রেন চলছে ঘণ্টায় গড়ে ৮০ কিলোমিটারের উপরে। পাকিস্তানে এ গতি ৭৫ ও থাইল্যান্ডে ৭০ কিলোমিটারের বেশি।

বাংলাদেশে বিপুল বিনিয়োগের পরও রেলের গতি না বাড়ার কারণ হিসেবে সুষম উন্নয়নের অভাবকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সারা বিশ্বে ব্রড গেজ এমনকি স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলপথ প্রধান হলেও বাংলাদেশে এখনো তা মিটার গেজনির্ভর। এর ওপর দীর্ঘদিনের পুরনো লাইন, পুরনো ইঞ্জিনের কারণেও কাঙ্ক্ষিত গতি পাচ্ছে না রেল। কোচের কারণেও অনেক সময় সর্বোচ্চ গতিতে চলতে পারছে না ট্রেন।

যদিও রেলওয়ে সূত্র বলছে, গত ৯ বছরে রেলপথে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর অর্ধেকের বেশি ব্যয় হয়েছে মূলধনি খাতে। চলমান প্রকল্পগুলো শেষ করতে আরো প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। তবে ট্র্যাক নির্মাণের মাধ্যমে নতুন নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হলেও পর্যাপ্ত নতুন ইঞ্জিন না থাকায় চাইলেও সর্বোচ্চ গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

রেলের গতির বিষয়টি উঠে আসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণায়ও। ২০১৬ সালে রেলওয়ে মাস্টারপ্ল্যানের নথির ভিত্তিতে এইচএম আহসান, এফ রহমান ও টি হায়দার ‘রেল কানেক্টিভিটি ইন বাংলাদেশ: প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার’ শীর্ষক ওই গবেষণায় দেখান, রেলের গড় গতি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটারের নিচে রয়েছে। এর দুই বছর পর বাংলাদেশ রেলওয়ের নথি পর্যালোচনায়ও প্রায় একই তথ্য পাওয়া যায়।

পূর্বাঞ্চল রেলের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেন সোনার বাংলা ও সুবর্ণ এক্সপ্রেস। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দূরত্ব ৩৩০ কিলোমিটার (ট্র্যাক ৩২১ কিলোমিটার হলেও রেলের হিসাবে ৩৩০ কিলোমিটার)। বিরতিহীনভাবে এ পথ পাড়ি দিতে ট্রেন দুটির সময় লাগে সোয়া ৫ ঘণ্টার মতো। অর্থাৎ সবচেয়ে ভালো মানের ট্রেন দুটির গতিও ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটারের কম। এ পথে চলাচলকারী অন্যান্য ট্রেন বিবেচনায় নিলে রেলপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগে গড়ে প্রায় ৭ ঘণ্টা। এ হিসাবে দেশের প্রধান এ রেলপথেও ট্রেনের গড় গতি এখনো ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটারের নিচে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ঢাকা থেকে রাজশাহীতে ২৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে গড়ে ৬ ঘণ্টার মতো। অর্থাৎ এ রেলপথেও ট্রেনের গড় গতি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটারের নিচেই।

রেলের সর্বশেষ প্রকাশিত ওয়ার্কিং টাইমটেবিল অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চলে সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার রাখা হয়েছে টঙ্গী-ঢাকা, আখাউড়া-টঙ্গী, ভৈরববাজার-টঙ্গী, চট্টগ্রাম-আখাউড়া, চট্টগ্রাম-চিনকি আস্তানা, চিনকি আস্তানা-লাকসাম, লাকসাম-কুমিল্লা ও কুমিল্লা-আখাউড়া সেকশনে। এসব সেকশনে কোথাও কোথাও সর্বোচ্চ ৭২ কিলোমিটার গতিতে মিটার গেজ রেলপথে ট্রেন চালানোর আদেশ থাকলেও পুরনো ইঞ্জিনের কারণে চলছে অনেক কম গতিতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে ট্রেনের গতি। এছাড়া ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ৫০-৬৫ কিলোমিটার, টঙ্গী-দেওয়ানগঞ্জ বাজার ৫০-৬৫, আখাউড়া-কুলাউড়া ৬৪, কুলাউড়া-সিলেট ৬৪-৭২, সিলেট-ছাতক বাজার ৪৮, জামালপুর টাউন-সরিষাবাড়ী ৬৫, দেওয়ানগঞ্জ বাজার-বাহাদুরাবাদ ঘাট ৩২, সরিষাবাড়ী-জগন্নাথগঞ্জ ঘাট ৩২, ভৈরববাজার-ময়মনসিংহ ৫৬-৬৫, শাখা লাইন গৌরীপুর ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ ৩২-৪৮ ও শ্যামগঞ্জ-জারিয়া ঝাঞ্জাইলে রেলের গড় গতি ঘণ্টায় ৩২-৪৮ কিলোমিটার। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য সংগ্রহে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যান্ড রোড-নিউমুরিং-গুপ্তখাল পর্যন্ত গতি ১৬ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম জংশন-সিএসডি সাইডিং পর্যন্ত ১৬, মার্শালিং ইয়ার্ড-স্টেশন ১৬, চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ড-ফৌজদারহাট ৩০-৩২, শাখা লাইন চট্টগ্রাম-ষোলশহর, ষোলশহর-ফতেয়াবাদ ও ফতেয়াবাদ-নাজিরহাট সেকশনে ২৪-৪০, ফতেয়াবাদ-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ ও ষোলশহর-দোহাজারী সেকশনে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার।

পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় কম হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন রেলওয়ের বর্তমান মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল আলম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, পুরনো ট্র্যাক, ইঞ্জিন ও কোচের কারণে রেলওয়ের গতি কম, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে রেলের যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে, সেগুলোয় ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির ট্র্যাক বসানো হচ্ছে। মিটার গেজ রেলপথের পরিবর্তে ব্রড গেজ রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। দেশের সব রেলপথ ব্রড গেজ হয়ে গেলে রেলের গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যাবে। আশা করছি, কয়েক বছরের মধ্যে রেলের গতি ও সেবায় বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাবে।

রেলওয়ে-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা বিশ্বে এখন স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেলপথ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। ভারতের ৯০ শতাংশ রেলপথই ব্রড গেজ। অথচ বাংলাদেশের ২ হাজার ৯২৯ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ১ হাজার ৮৪৫ কিলোমিটারই মিটার গেজ। বাকি ১ হাজার ৮৪ কিলোমিটার ব্রড গেজ রেলপথ (৪৩২ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ)। অর্থাৎ মোট রেলপথের ৩৭ শতাংশ ব্রড গেজ হলেও ট্রেনের গতিসীমা পার্শ্ববর্তী দেশের অর্ধেক হওয়ায় ট্রেনের পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি। যার ফলে লোকসানের মধ্যেই আছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

যদিও ২০০৯ সালের পর রেলকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয় সরকার। গঠন করা হয় আলাদা মন্ত্রণালয়। ৪৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত ৫৪ হাজার ২০১ কোটি টাকা ব্যয়ও হয়েছে। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতের ব্যয় ৩৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরও উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা হয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছর উন্নয়ন খাতে প্রায় সমপরিমাণ ব্যয়ের পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ের। অবকাঠামো খাতে অত্যধিক ব্যয় সত্ত্বেও শুধু প্রকল্প পরিকল্পনা সুষম না হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

জানতে চাইলে পরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. শামছুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, রেলের জন্য যেসব প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, তার সবই অবকাঠামোগত উন্নয়ন। তবে গতি বাড়াতে প্রয়োজন পরিচালনগত উন্নয়ন। বিষয়টির দিকে নজর দেয়া হচ্ছে না। অথচ রেলকে জনপ্রিয় করে তুলতে এটিকে আগে গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল। তাছাড়া পরিচালনগত উন্নয়নের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয়ও তুলনামূলক কম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, রেলের উন্নয়নে ব্যয় বাড়লেও তা সঠিক পরিকল্পনায় হচ্ছে না। রেলের ইঞ্জিন সংকট এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্র্যাক সংস্কার ও রেলপথ বাড়ানো হলেও দীর্ঘদিনের পুরনো ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেনের গতি বাড়ানো সম্ভব নয়। এর ওপর পুরনো কোচে অত্যধিক যাত্রী পরিবহন করায় নিরাপত্তার স্বার্থেই গতি কমিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। পর্যাপ্ত ইঞ্জিন, কোচ আমদানির মাধ্যমে পুরো রেল নেটওয়ার্ক ব্রড গেজ বা স্ট্যান্ডার্ড গেজে রূপান্তর করা হলে বাংলাদেশেও ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব।

  • Courtesy: BanikBarta /Oct 04, 2018

Enforced disappearance redress caught in govt inaction

Editorial

WHAT rights group Odhikar comes up with in its findings is gravely worrying in that the number of victims of enforced disappearances doubled in September, with 30 going missing, compared with 28 who went missing in January–August. In the event of the government not instituting any investigation of the incidents, with an aim to stop the menace, involuntary disappearances keep taking place apace. The Asian Legal Resource Centre, in the report that it submitted to the UN Human Rights Council in view of its 39th session in September, said that at least 432 people fell victim to enforced disappearances between January 2009 and July 2018. 

The report that time said that a fourth of the victims, reported to have been picked up by personnel of various security and law enforcement forces, land in police custody long after they had gone missing. The luckiest of them could walk out of confinement or jail but they all maintained an eerie silence about the incidents. The police at the same time are reported to be reluctant at recording any case about the involuntary disappearances. And even if the police do record cases, they almost never roll down to investigation as the police, till then, are reported to have investigated only one such case in the preceding 10 years.

Such a behaviour of the police is worrying as the way the incidents of enforced disappearances evolve suggest, largely and in most of the cases, the hand of the state actors behind them although there could be cases, particularly in the absence of the government’s political will to look into the incidents seriously, where non-state actors could be involved. The incidents, whoever are there playing behind, constitute an affront to the rule of law and a breach of laws and the constitution.

The incidents also expose citizens to a fearful situation, as anybody, personnel of law enforcement and security agencies or private individuals impersonating as law enforcement and security personnel, could pick up any citizen. The government as the manager of the state appears hardly serious about legal redress in such cases, which further lends credence to the public perception that state actors are behind most of such incidents. 

The government should immediately look deeply into the cases of disappearances and resolve the mystery and tell people about it as any kind of ambiguity in these cases would ultimately consolidate the impunity for the people who are behind enforced disappearances. Such a failure of the state not to know what happens to people who go missing could pave the way for an increase in the number of enforced disappearances. Any government inaction in this connection would plunge the nation into lawlessness.

The government, under the circumstances, must institute independent investigations of the cases to deterrently stop the practice. The government should also think of enacting a law to criminalise enforced or involuntary disappearances and of setting up an independent tribunal to deal with cases of enforced disappearances with powers to investigate any individual or organisation suspected to be behind such crimes and take action against anyone engaged in such dangerous practice.

  • Courtesy: New Age / Oct 04, 2018

S Alam now sets sights on insurers

It buys 45pc stake in Padma Islami Life Insurance

After taking over a number of banks and financial institutions in the past few years, Chattogram-based S Alam Group has now set its sights on the insurance sector. As part of the plan to increase its influence on the insurance sector, the group has recently bought nearly 45 percent stakes in Padma Islami Life Insurance Company at an estimated cost of Tk 45 crore.

S Alam Group Chairman Mohammed Saiful Alam will hold 2.52 percent shares in his own name in Padma Islami Life Insurance, his wife Farzana Parveen 2.71 percent and his son Ahsanul Alam 4.75 percent, according to the Insurance Development and Regulatory Authority, which signed off on the transaction.

The remaining 35 percent of the shares will be bought under the name of five companies -- Unitex Petroleum, Unitex LP Gas, Pavilion International, Affinity Assets and Crest Holdings -- with affiliation with S Alam Group.

The business group, which stirred huge controversy recently for grabbing ownership of two Islamic banks, plans to purchase stakes in two more Islamic insurance companies, said market insiders.

Currently, Alam is a director of Northern General Insurance. He is also the chairman of First Security Islami Bank. His group has stakes in seven more banks.

Padma Islami Life Insurance was going through a cash crisis, said ABM Zafar Ullah, its former chairman. “That's why we sold off the ownership,” he said, while blaming the IDRA's ceiling on commission for the insurer's precarious financial state.

Life insurance companies cannot give more than 40 percent commission to agents, as per the new IDRA rules.

“This made the market heavily competitive. Agents are not willing to bring business to us,” said Zafar Ullah, who has 4.75 percent stakes in the company.

Moreover, Padma Islami Life Insurance's business was also affected by the delay in its licence renewal by two years by the authorities, he said.

“We took the licence willingly but later realised that it is not so easy to make insurance business.” The company got the licence for insurance business in 2000 and became listed on the Dhaka Stock Exchange in 2012.

“The financial health of Padma Life is very poor,” said Gokul Chand Das, a member of the IDRA.

If a business group willingly buys such a company and can meet the policyholders' liabilities, then it is good for the company, he added. The insurer's liabilities now stand at about Tk 80 crore, according to Zafar Ullah.

In the last one month, each share of Padma Islami Life traded between Tk 24 and Tk 26. The company was downgraded last year to the 'Z' category after it declared no dividend.

  • Courtesy: The Daily Star /Oct 04, 2018 

Growing worries on external debt

EDITORIAL

Economic reforms needed



The World Bank (WB) invited two economists, Ahsan H Mansur and Hossain Zillur Rahman who head the Policy Research Institute of Bangladesh, and Power and Participation Research Centre respectively, at the unveiling of the quarterly report titled “Bangladesh Development Update”. The views shared by these economists call for the country's international development partners and the WB to engage with the government on a reform agenda in the aftermath of the general elections due at the end of the year to contain problems brewing on various economic fronts.

The areas of concern are the declining foreign exchange (forex) reserves and low revenue collection. The government has embarked on ambitious infrastructure growth, much of which is going to be financed with foreign credit which is causing problems with the balance of payments. Rising debt is of major concern as it is depleting forex reserves and in the absence of stable foreign remittances, there is cause for worry.

While our forex reserves stand at USD 32.93 billion (as of August), our remittances appear to be stuck in the region of USD 14-15 billion per annum. There is concern whether the government has done the right analysis on cost of projects undertaken by it. The project highlighted was Padma Bridge road link that is estimated to cost the national exchequer Tk 40,000 crore, but given our rate of implementation there is the possibility of this cost going up by as much as 25 to 50 percent.

What all this boils down to is whether the nation is headed towards a debt-trap, as has happened in the case of a few countries in the region. Hence, the call for re-examining the viability for these multi-billion-dollar projects is a just one and should be considered seriously.

  • Courtesy: The Daily Star / Oct 04, 2018

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে শাহবাগে অবরোধ

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ ও রাজশাহীতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী।

শাহবাগ থেকে দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা জানান, সকাল ৭টার দিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’ ব্যানারে প্রায় ৫০ জন ছাত্র শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে সবগুলো রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেন। তারা মন্ত্রিপরিষদে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তাদের ৩০ শতাংশ কোটা বহাল রাখার দাবির পক্ষে স্লোগান দেন।

অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে একই দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী মিছিল করেছেন। তাদের অবরোধে সকাল ১০টা থেকে মহাসড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তার ওপর টায়ার জ্বালিয়ে তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি থেকে কোটা তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিল একদল শিক্ষার্থী। এতে রাজধানীর ব্যস্ততম কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ ও সায়েন্স ল্যাব থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়।

কোটা বাতিল প্রসঙ্গে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোটা থাকলেই শুধু আন্দোলন। তাই কোটার দরকার নেই। কোটা না থাকলে আন্দোলন নেই, সংস্কারও নেই। তিনি বলেন, যদি কেউ কোটা চায়, তাহলে এখন কোটা চাই বলে আন্দোলন করতে হবে। সেই আন্দোলন যদি ভালোভাবে করতে পারে, তখন ভেবেচিন্তে দেখা হবে কী করা যায়? এরপর যদি কেউ কোনো কোটা চায়, তাহলে তাকে আন্দোলন করতে হবে। আন্দোলন ছাড়া কোটা দেওয়া হবে না।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের অভিজ্ঞতা জানাতে বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

কোটা বাতিলের যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার নাতিই যখন কোটা চায় না, তখন কোটা রেখে লাভ আছে? সে জন্য আমি বলছি, কোটা থাকলে শুধু আন্দোলন। তাহলে আর কোটার দরকারই নাই, আন্দোলনও নাই, সংস্কারও নাই।…মেয়েরাও কোটা চায় না। মুক্তিযোদ্ধারাও এখন চাকরি পাওয়ার মতো কেউ নেই।’


  • Courtesy: The Daily Star (Bangla) /Oct 4, 2018 

সব ভালোই ভালো নয়

বদিউল আলম মজুমদার

গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংবাদমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজের ব্যাপক আপত্তির মুখে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ পাস করেছে। আইনটি ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে পর্বতপ্রমাণ বাধা সৃষ্টি করবে বলে অনেকেরই আশঙ্কা। আরও আশঙ্কা, আইনটি ডিজিটাল অপরাধ দমন করার লক্ষ্যে প্রণীত হলেও এটি একটি কালাকানুন এবং এটির অপব্যবহার অনিবার্য, যেমন অপপ্রয়োগ হয়েছে ও হচ্ছে ২০০৬ সালে প্রণীত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার। এটি সরকারের অন্যায় কাজের সমালোচনাকারীদের হয়রানির কাজে ব্যবহৃত হবে এবং আমাদের গণতান্ত্রিক পরিসরকে ভয়ানকভাবে সংকুচিত করবে।

এসব আশঙ্কা সত্ত্বেও আমাদের সম্মানিত তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী এটিকে ঐতিহাসিক আইন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, সব ভালোই ভালো নয়। আর প্রজ্ঞাবানদের মতে, ‘অল দ্যাট গ্লিটার্স ইজ নট গোল্ড’—চকচক করলেই সোনা হয় না।

উদাহরণ হিসেবে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের কথা ধরা যাক। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ এই আইনের জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। আবার পঁচাত্তর–পরবর্তীকালে এই আইনের অপব্যবহারের শিকার হয়েছিলেন আওয়ামী লীগেরই নেতা-কর্মীরা। জননিরাপত্তা আইনের ক্ষেত্রেও একই অভিজ্ঞতা। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০০ সালে প্রবল আপত্তির মুখ পাস করে। কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতার বাইরে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এর জন্য ব্যাপক মাশুল দিতে হয়েছিল।

আপাতদৃষ্টিতে ভালো মনে হলেও কিছু সিদ্ধান্ত যে পরবর্তী সময়ে কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে, তার আরেকটি উদাহরণ হতে পারে ২০১১ সালে গৃহীত সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী। স্মরণ করা যেতে পারে যে ২০১০ সালে সরকার মহাজোটের অংশীদার সব দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি ২৭টি বৈঠক করে, তিনজন সাবেক প্রধান বিচারপতি, ১১ জন শীর্ষ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ, ১৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক, ১৮ জন সম্পাদক, রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতামত নেয়। বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের প্রায় সবাই বিরোধী দলকে সম্পৃক্ত করার এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে বহাল রাখার পক্ষে মতামত দেন। কমিটিও সে অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার রেখেই সংবিধান সংশোধনের সর্বসম্মত সুপারিশ করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পরবর্তীকালে এ সুপারিশ বদলে যায় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দিয়েই একতরফাভাবে সংবিধান সংশোধন করা হয়, যদিও আমাদের সংবিধানের ৭ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধান ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি’ বা ‘উইল অব দ্য পিপলে’এর প্রতিফলন হওয়া উচিত। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল একটি মীমাংসিত বিষয় এবং এ-সম্পর্কে একটি জাতীয় ঐকমত্যও বিরাজ করছিল।

একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের প্রক্রিয়াকে বিজ্ঞজনেরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত চাপিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া (মেজোরেটারিয়ানিজম) বলে আখ্যায়িত করেন। জেমস মেডিসনের ভাষায়, এটি হলো ‘টিরানি অব দ্য মেজরিটি’ বা সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বেচ্ছাতন্ত্র, সত্যিকারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, বিশেষত সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলও সরকারের অংশ। কিন্তু আমাদের দেশের ‘উইনার টেক অল’ বা বিজয়ীদেরই সবকিছু করায়ত্ত থাকার প্রক্রিয়ায় বিরোধী দল সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত। এ থেকে যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা দখল করা এবং আঁকড়ে ধরে থাকার প্রচেষ্টার সংস্কৃতি আমাদের ওপর জেঁকে বসেছে।

তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে আইনকে ‘অস্ত্রে’ পরিণত করা হয়েছে। এর লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ রুদ্ধ করার মাধ্যমে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা। আমাদের ইতিহাসের শিক্ষা হলো, দলীয় সরকারের অধীনে অতীতে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। কারণ, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বাচনী ফলাফল প্রভাবিত করা সম্ভব হয়েছে। আর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সাম্প্রতিক কালের লাগামহীন দলীয়করণ এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের পক্ষে জাতীয় নির্বাচনে জেতা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবির পেছনে উদ্দেশ্য ছিল ‘ভোট চুরি, সন্ত্রাস, কালোটাকা ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন’ করার প্রচেষ্টা বন্ধ করা (শেখ হাসিনা, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে’, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ: কিছু চিন্তাভাবনা’, আগামী প্রকাশনী, ১৯৯৬। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মতে, ‘নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যে অনিয়ম চলছে, সে অনিয়ম দূর করে একটা সুস্থ ধারা নিয়ে আসা একান্ত অপরিহার্য। এ দেশে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না, যদি না ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট হয়। আর সে কারণেই অন্তত আগামী কয়েকটি নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করবার একটা ব্যবস্থা নিলে এই অনিয়মগুলি দূর করা যেতে পারে’ (পৃ.৭৮-৭৯)।

২০১১ সালে একতরফাভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পরে এসব নির্বাচনী অনিয়ম আমাদের দেশে আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের ভিত্তিতে সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা বহুলাংশে লোপ পায়, ফলে সরকারের স্বচ্ছ ও জবাবদিহি হওয়ার প্রয়োজনীয়তা প্রায় তিরোহিত হয়ে যায়। সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের ব্যাপক বিস্তার ঘটে এবং সুশাসন সুদূরপরাহত হয়ে পড়ে। এমনই পরিস্থিতিতে সরকার ও দলের মধ্যে বিভাজন বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং ক্ষমতাসীনেরা প্রায় সর্বক্ষেত্রে বেপরোয়া ও বেসামাল হয়ে পড়ে। সরকারি দলের ছত্রচ্ছায়ায় অনেকে অনেক অন্যায় ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। কারণ, ক্ষমতাসীনদের আর ভোটারদের সমীহ করার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়।

আর এসব বাড়াবাড়ির কারণে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকার/সরকারি দলের জনসমর্থনে ব্যাপকভাবে ভাটা পড়ে। তাই একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ব্যাপক জনসমর্থন ও ভূমিধস বিজয় নিয়ে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলেও, ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন দলকে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হতে হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য তাদেরকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কতগুলো অভিনব স্লোগান এবং নির্বাচন কমিশন ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের ওপর ভর করতে হয়েছে।

তবে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসা সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে পড়ে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হলো একটি নজরদারির কাঠামো, যেখানে সংসদে এবং সংসদের বাইরে সরকারের কার্যক্রমের ওপর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নজরদারি থাকবে। সংসদে বিরোধী দল সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। সংসদের বাইরে বিরোধী দলের নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম ক্ষমতাসীনদের অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখবে। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর এমন ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালান্সেস’ পদ্ধতি ভেঙে পড়ে। বস্তুত আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজমান ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং একদলীয় শাসন কায়েমের পথ সুগম হয়, যা সরকার ও সরকারি দলকে আরও বেসামাল হতে সহায়তা করে। বর্তমানে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে জনমনে যে সংশয়, তা সরকার ও সরকারি দলের এই নগ্ন ক্ষমতার দাপটেরই ফসল।

পরিশেষে, এটি সুস্পষ্ট যে সম্প্রতি সংসদে পাস করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আইনের মোড়কে একটি ভয়াবহ অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চরম দলীয়করণের শিকার, যা এক দিনে হয়নি এবং এক সরকারের আমলেও ঘটেনি। একটি পক্ষপাতদুষ্ট সশস্ত্র বাহিনীর হাতে এমন একটি অস্ত্র তুলে দিয়ে ক্ষমতাসীনেরা হয়তো সাময়িকভাবে কিছু ফায়দা লুটতে পারবে, কিন্তু এর অপপ্রয়োগের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে যে অসন্তুষ্টির সৃষ্টি হবে, তার মাশুল একদিন শুধু ক্ষমতাসীনদেরই নয়, পুরো জাতিকেই দিতে হবে। আর দীর্ঘ মেয়াদে এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য মঙ্গলকর হবে না। কারণ, আইনটি অপপ্রয়োগের ফলে তাদের প্রতি জনরোষ ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। তাই আশা করি, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দীর্ঘমেয়াদি পরিণতির কথা গভীরভাবে ভাববে।

  • ড. বদিউল আলম মজুমদার: সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)–এর সম্পাদক
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৪ অক্টোবর ২০১৮