আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করতে একাধিক বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকগুলোতে কমিশনারদের তরফে তফসিলসহ ভোটগ্রহণের দিন-তারিখ নিয়ে আলাদা আলাদা প্রস্তাব আসে। প্রস্তাবিত দিন-তারিখ নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা-পর্যালোচনাও হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের প্রস্তাব দেন অন্তত দুইজন কমিশনার। এর মধ্যে একজনের প্রস্তাব ছিল ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ হোক ৩রা জানুয়ারি বৃহস্পতিবার। এদিকে সরকারের সঙ্গে সংলাপ চলমান থাকায় এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর তফসিল ও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি ছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর। অনেক জল্পনা-কল্পনার পর ৮ই নভেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩শে ডিসেম্বর।
ফলে জানুয়ারিতে ভোটগ্রহণের ব্যাপারে দুই কমিশনারের প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে নির্বাচন পিছিয়ে জানুয়ারি মাসে ভোটগ্রহণ সম্ভব কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন সিইসি। জবাবে তিনি বলেছিলেন, জানুয়ারি মাসটা অনেক ডিস্টার্বিং। এ সময় বিশ্ব ইজতেমাসহ অনেক বিষয় রয়েছে। যে কারণে জানুয়ারিতে ভোটগ্রহণ সম্ভব না। জানা গেছে, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণের ব্যাপারে সরকারের তরফেও আপত্তি ছিল না। কিন্তু একটি বিয়ের কারণে এগিয়ে আনা হয় তফসিলসহ ভোটগ্রহণের দিনক্ষণ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ৩রা জানুয়ারি নির্ধারিত রয়েছে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর মেয়ের বিয়ের দিনক্ষণ। এজন্য শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর অনুরোধের প্রেক্ষিতে ডিসেম্বরে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা করে কমিশন। সে অনুযায়ী ২৩শে ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ চূড়ান্ত হয়।
এদিকে নির্বাচন একমাস পেছানোর দাবি জানিয়ে কমিশনে চিঠি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। নির্বাচন এক সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে প্রফেসর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টও। রোববার কমিশনে জমাকৃত এসব চিঠির ভিত্তিতে নির্বাচন পেছানো হবে কিনা এ ব্যাপারে আজ সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। নির্বাচন পেছানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যখন কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে তখন ব্যক্তিগত সফরে ভারতে অবস্থান করছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। তার এই বিদেশ সফর নিয়ে প্রধান হিসাবরক্ষক বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে ইসি সচিবালয়। ৩০শে অক্টোবর সিনিয়র সহকারী সচিব মো. শাহ আলম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, আমি নির্দেশক্রমে জানাচ্ছি যে- নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী আগামী ১১ই নভেম্বর থেকে ১৪ই নভেম্বর পর্যন্ত ব্যক্তিগত সফরে ভারতে থাকবেন। চিঠিতে বলা হয়, এ সফরে শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তার স্ত্রী সারওয়াত চৌধুরী, মেয়ে চৌধুরী সায়মা তাবাসসুম ও ছেলে সাফায়াত হোসেন চৌধুরী সফরসঙ্গী হবেন।
সফরের সকল খরচ নির্বাচন কমিশনার নিজেই বহন করবেন। এই সফর একটি ব্যক্তিগত সফর বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব, অতিরিক্ত আইজিপি, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে এই চিঠির ২৫টি অনুলিপি পাঠানো হয়। এদিকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর একান্ত সচিব তকদির আহমেদ জানান, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী সপরিবারে রোববার ভারত সফরে গেছেন। সেখানে তিনদিন অবস্থান করবেন তিনি। তকদির আহমেদ আরো জানান, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী এখন ব্যস্ত রয়েছেন। কারণ আগামী ৩রা জানুয়ারি তার মেয়ে চৌধুরী সায়মা তাবাসসুমের বিয়ের অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ চূড়ান্ত রয়েছে।
- কার্টসিঃ মানবজমিন/ নভেম্বর ১২,২০১৮