Search

Sunday, November 11, 2018

নির্বাচন অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে সুজন


গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা। গতকাল সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা সব দাবি এবং প্রত্যাশা পূরণ না হলেও বিরোধীদের নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, বিএনপি ইভিএমের বিরোধিতাসহ বেশকিছু দাবি জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশন এসব দাবি পূরণ না করলেও দলটির নির্বাচন বয়কট করা ঠিক হবে না

তিনি বলেন, সংসদ বয়কট, নির্বাচন বয়কটের মতো ঘটনা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চাঙ্গা করার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দাবি আদায় না হলেও মাঠে থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাই সঠিক কাজ হবে বলে মনে করেন তিনি। তবে, গ্রহণযোগ্য দাবি আদায় না হলে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করে কমিশন ও সরকারের বিরোধিতা করা যায়। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের জ্বালাও-পোড়াও বা জনগণের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না বলেও মত দেন সাবেক এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বিতর্ক ও বিরোধিতা সত্ত্বেও নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ইভিএমের ব্যবহারে কমিশনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন তিনি।

ইভিএমের ব্যবহার নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে বাধা হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন সুজন সভাপতি ও ত্বত্তাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী ২৮শে জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ২৩শে ডিসেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা বেশ তড়িঘড়ি হয়েছে। ২৮শে জানুয়ারি পর্যন্ত একটি সংসদ বলবৎ থাকবে, সেখানে নির্বাচনের দু’একদিনের মধ্যেই আরেকটি সংসদ তৈরি হয়ে যাবে। প্রায় এক মাস সময়ে দুটি সংসদ বলবৎ থাকার এমন জটিল সমীকরণ এড়াতে নির্বাচন কমিশন আরো দেরিতে তফসিল ঘোষণা করতে পারতো বলেও তিনি জানান। 

হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার, আটক বন্ধ করতে হবে। সার্বিকভাবে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচনে পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ছবি তোলা ও কেন্দ্রে প্রবেশসহ নানা ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ করলে গণমাধ্যম তার সঠিক কাজটি করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা’র নির্বাহী সভাপতি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আগের নির্বাচনগুলো  থেকে দেখা যায়, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির কেউই জনগণের ম্যান্ডেটকে গুরুত্ব দেননি। ইতিবাচকভাবে ক্ষমতায় আসার প্রক্রিয়াকেও তারা সেভাবে গ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগ-বিএনপি যেকোনোভাবে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছে। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আদালত জনগণের চাওয়াকে গুরুত্ব দেবে- এটাই নিয়ম। কিন্তু সাংবিধানিক দোহাই দিয়ে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হওয়ার আগেই নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা ঠিক হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক পরিসর ও মূল্যবোধ সংকুচিত হয়, এমন কোনো বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয়। আদালতের কাজ হলো দিকনির্দেশনা দেয়া।’ 

সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসিকে তার কাজে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হবে। নির্বাচনের আগে ইভিএমের মতো বিতর্কিত বিষয়ে তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প কাদের স্বার্থে করা হয়েছে- এমন প্রশ্নও তোলেন তিনি। অলিম্পিয়াডে সরকার, নির্বাচন ও রাজনীতি বিষয়ে লিখিত প্রশ্নের উত্তর দেন সারা দেশ থেকে আসা তরুণরা। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ১১ নভেম্বর ২০১৮

No comments:

Post a Comment