Search

Wednesday, November 14, 2018

ROs confused about dealing with MPs, ministers

Ahammad Foyez 
Returning officers are confused about how to deal with the ministers and lawmakers during the 11th parliamentary elections as the 10th parliament will exist and ministers will continue to hold the office. They made several queries about their confusion in presence of the chief election commissioner KM Nurul Huda and other election commissioners in the opening session of a two-day training programme for them the Election Commission headquarters in Dhaka on Tuesday, commission officials told New Age.

They said that the election commissioners assured the returning officers that all the legal and technical issues would be explained in the training programme.

On November 9, the commission appointed deputy commissioners of all the 64 districts and two divisional commissioners as returning officers to conduct the 11th national election rescheduled for December 30. The officials said that a returning officer asked what they would do when an incumbent lawmaker would participate in any official programme in the respective constituency and seek vote.

Another returning officer asked how they would deal the ministers participating in electioneering in their constituencies or in favour of other candidates nominated by the ruling party, the officials said. They said that another returning officer asked what they would do if people serving the government or ministers on contract, including state attorneys, prosecutors, government pleaders and personal staff of the prime minister and ministers, submitted nomination papers as many of such people already collected forms for nominations of the ruling party.

The returning officers also sought clear instructions from the commission on indoor meetings of the political parties and their relations with other offices to enforce the Electoral Code of Conduct and electoral laws, the officials said.

The commission officials and campaigners for good governance said that the returning officers were confused as the national election was going to be held with the parliament in place for the first time in the country.

They said that the returning officers had hardly any experience of conducting elections contested by ministers holding the office, as the national elections in 1991, 1996, 2001 and 2008 were held under non-party governments.

Although the 10th parliamentary elections were held under the government of the ruling Awami League on January 5, 2014 with ministers contesting the polls, the issues were not raised as all the opposition parties boycotted the polls, they said. The returning officers expressed hope that the 11th parliamentary elections would be inclusive as the Bangladesh Nationalist Party and the Jatiya Oikya Front announced that they would join the polls.

Shushashoner Jonno Nagorik secretary Badiul Alam Majumder told New Age that there was a lot of scope for confusions as the election was going to be held with a parliament in existence.
He said that the commission’s field-level officials as well as the returning officers never experienced such a situation that was been created by the Awami League government. 

He said that in most cases the lawmakers controlled the local administration, political leaderships and socio-cultural organisations although the constitution empowered them to make orders, rules, regulations, bye laws or other instruments having legislative effect.

Local government expert Tofail Ahmed said that it quite natural that the returning officers would be confused about their role as they were used to follow a set protocol in dealing with lawmakers and ministers. Even no authority has so far shown courage to remove posters and other campaigning materials of the existing lawmakers, he added.

  • Courtesy: New Age /Nov 14, 2018

A good example of bad planning

EDITORIAL

A costly project with little oversight


After a delay of six years from original project completion date, the Dhaka-Chattogram expanded highway was inaugurated in June, 2017 at a final cost of Tk 3,439 crore which was a markup of 58 percent (due to repeated revisions in design). It seems that we plan for yesterday instead of tomorrow as the vision should have taken into account what would be the likely volume of traffic five, ten or twenty years down the line because the Dhaka-Chattogram highway is the lifeblood for trade and commerce. Otherwise, we end up with a situation like the one we are facing today with this highway.

Barely more than a year old, why does this much-needed highway need repairs? The Implementation Monitoring and Evaluation Division's (IMED) investigation has found evidence of shoddy workmanship. Increased traffic notwithstanding, why was there no government oversight on such a costly project? Had there been oversight, we would have known about the quality of workmanship being done and corrective steps could have been taken. While the Roads & Highways Division has asked for an additional Tk 900 crore for maintenance of the highway and this is on top of the regular maintenance fund, why has this project had 12 project directors in 11 years? Precisely how a road project of this magnitude was supposed to remain on track when the principal person in authority for the said project had tenure of less than a year? These are valid questions, especially since the expansion of this highway produced insufferable tailback of traffic year after year for all vehicles travelling to and fro Dhaka and Chittagong.

It is little wonder why practically all the mega infrastructure projects in the country are years overdue for completion. Not only is there suffering on people's part, business suffers due to inordinate delays and the end product's longevity is plagued by questions on quality of the work done. 

  • Courtesy: The Daily Star /Nov 14, 2018

রাজনৈতিক সহিংসতা - ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে

সম্পাদকীয়
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও রাষ্ট্র কখনো তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ভাবেনি। যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধনকৃত অলাভজনক স্বাধীন সংগঠন আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্টের (এসিএলইডি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদন আমাদের এই দায়বোধের ঘাটতিই স্মরণ করিয়ে দিল।

ওই প্রতিবেদনের মতে, বর্তমান সরকার সমাজের দুস্থ ও দুর্গতদের বিশেষ ভাতা ও সহায়তাদানে প্রশংসনীয় বহু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। ২০১০ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত দেশে সহিংসতাসহ প্রায় ১৪ হাজার ঘটনা ঘটেছে এবং প্রতিবছর সহিংসতার শিকার হওয়া সাধারণ মানুষের হার ১৫ থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই মানুষগুলো সরকারি সহায়তার বাইরে রয়ে গেছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে রাজনীতি হয়, কিন্তু তাদের দুর্দশা ঘোচাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক আন্দোলনে তাঁদের আত্মত্যাগকেও যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। ১৯৮৭ সালে শহীদ নূর হোসেনের বীরোচিত আত্মদান তাঁকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত করেছে। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে সেই স্বৈরাচারী সাবেক শাসকের সহযোগীরা সেই নূর হোসেনকে নিয়ে কটাক্ষ করতেও দ্বিধা করছে না। 

ওই প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর রাজনৈতিক সহিংসতার তুলনামূলক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, যাতে দেখা যায় বাংলাদেশেই রাজনৈতিক বৈরিতা ও বিরোধে সবচেয়ে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর রয়েছে পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কার অবস্থান। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বৈরিতার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে। সেসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ ও তাদের পরিবার সহায়তা পেলেও তা কোনো আইনি কাঠামোর আওতায় হয়নি।

বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা ছাড়াও একই দলের মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপের সংঘাত-সংঘর্ষে বাংলাদেশে অনেক নিরীহ ও সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জীবন দিতে হয়। এ ধরনের একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ মোহাম্মদপুরের আদাবরের ঘটনা। সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুই শ্রমজীবী তরুণ মারা যান। এই হত্যার দায় কে নেবে? কেউ এর জন্য শাস্তি ভোগ করবে এমন আশা করাও কঠিন। ক্ষমতার রাজনীতি শ্রমজীবী মানুষকে ব্যবহার করে কিন্তু তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোনো দায় নেয় না।   

আমরা মনে করি, রাজনৈতিক সহিংসতায় যারা হতাহত এবং যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রের তরফে তাদের সাহায্য প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। যাদের কারণে সংশ্লিষ্টরা সহিংসতার শিকার হলো, তাদের কাছ থেকেও ক্ষতিপূরণ আদায় করা যেতে পারে। এ বিষয়ে তাজরীন ফ্যাশনসের দুর্ঘটনার জন্য কারখানারা মালিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদালতের নির্দেশও উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধে রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে। রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ হারানো বা কারও না কারও পঙ্গু হওয়ার মতো পরিবারগুলোর সঠিক তালিকাও তৈরি হওয়া উচিত। বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে সত্য, কিন্তু আমরা মনে করি একে একটি বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনা প্রয়োজন। রাজনীতির কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে; কিন্তু রাষ্ট্র তাদের প্রতি কোনো দায়বোধ করবে না, এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার প্রয়োজন যে আমরা এই রুগ্‌ণ রাজনৈতিক বৃত্ত ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাই কি না।

  • কার্টসিঃ প্রথম আল/নভেম্বর ১৪,২০১৮ 

রাজনৈতিক বিবেচনায় আসছে ৩ ব্যাংক!

  • বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত উপেক্ষিত
  • বেসরকারি নতুন ৯ ব্যাংকের অবস্থা এখনও বেশ দুর্বল


নতুন ব্যাংকের আর প্রয়োজন নেই- বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন মতামত উপেক্ষা করে নতুন তিনটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

রাজনৈতিক বিবেচনায় নেয়া হয়েছে এ পদক্ষেপ। এসব ব্যাংকের উদ্যোক্তা বা নেপথ্যে যারা আছেন, তারা সবাই সরকারের খুব ঘনিষ্ঠজন। এর আগে একই প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাতে নতুন ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সূত্র জানায়, ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সমীক্ষায় বলা হয়, ‘দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে আর কোনো নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন নেই।’ এর আলোকে ২০১১ সালে সরকার নতুন ব্যাংক দেয়ার উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতেও এই মতামত দেয়া হয়।

এ বিষয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া ব্যাংকগুলো ভালো ব্যবসা করতে পারে না।

গত দুই সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া ব্যাংকগুলোর প্রায় সবকটির অবস্থাই এখন খারাপ। এ কারণে তারা মনে করেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় আর নতুন ব্যাংক দেয়া উচিত হবে না।

যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন ২০১৩ সালে নতুন ব্যাংক দেয়ার সময় একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, দেশে অর্থনীতিতে নতুন ব্যাংক এলে ব্যাংকিং খাতে একধরনের প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে। এতে গ্রাহকরা উপকৃত হবে। কর্মসংস্থান হবে। শিল্প খাতে অর্থায়নের দুয়ারের বহুমুখী পথ খুলে যাবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সেনাবাহিনী ও বিজিবির মতো পুলিশ বাহিনীকেও একটি ব্যাংক দেয়া হয়েছে।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এভাবে ব্যাংক দিলে ক্ষতি নেই। আর প্রক্রিয়াধীন নতুন তিন ব্যাংক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ব্যাংকগুলোর অনুমোদন এখনও দেয়া হয়নি। তাদের কাগজপত্রে ঘাটতি আছে। এটি রাজনৈতিক বলা যাবে না। কারণ রাজনৈতিক হলে এক বোর্ডে চার ব্যাংক দিয়ে দিতে পারত। তা কিন্তু করা হয়নি।

এত ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না- জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, প্রয়োজন নেই বলার সুযোগ নেই। কারণ এখনও সব মানুষ ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসেনি।

মূলত সংখ্যা নয়, ব্যাংকের মান এবং ঋণমান নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, নতুন ব্যাংকগুলো যাতে মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণের ভারে আক্রান্ত এবং ফারমার্স ব্যাংকের মতো যেন না হয়।

সূত্র জানায়, ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সমীক্ষা চালিয়ে বলেছিল, দেশের অর্থনীতিতে আর নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন নেই। যেসব ব্যাংক আছে, সেগুলোকেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিকমানের নীতিমালায় এনে পরিচালিত করা কঠিন চ্যালেঞ্জ। কেননা ওই সময়েও ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার বেশি ছিল। মূলধন ঘাটতিও ছিল ব্যাপক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী (প্রয়াত) এম সাইফুর রহমান বেসরকারি খাতে আর কোনো নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছিলেন।

ফলে বিএনপি সরকারের শেষ সময় পর্যন্ত কোনো নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়নি। যদিও ওই সময়ে নতুন ব্যাংকের অনুমোদন চেয়ে ১০৬টি আবেদন পড়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপত্তি করে।

এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ সভায়ও এ বিষয়ে আপত্তি তোলা হয়। দেশের অর্থনীতি, ব্যাংকিং খাতের অবস্থা নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও নতুন ব্যাংক না দেয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। ফলে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যায়।

কিন্তু ২০১০ সালের শেষদিকে সরকার বেসরকারি খাতে নতুন ব্যাংক দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০১১ সালে ব্যাংক দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও তীব্র আপত্তি তোলে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ থেকেও নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এই পর্যায়ে সরকারের ওপরমহলের নির্দেশে অর্থমন্ত্রী নতুন ব্যাংক দেয়ার বিপক্ষের অবস্থান থেকে সরে এসে ব্যাংক দেয়ার পক্ষে অবস্থান নেন।

একপর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের একটি সংস্থা। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন ব্যাংক দেবে। এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাস্তবায়ন করবে। এটিই তাদের কাজ। অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তার অবস্থান থেকে সরে এসে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। যেসব ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হবে, তার একটি তালিকা সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হয়। এই তালিকা অনুযায়ী ২০১৩ সালে ৯টি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়।

এর সবই ছিল রাজনৈতিকভাবে সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত তাদের নামে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে- মধুমতি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক এবং সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক।

রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া এসব ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৩ সালে। অথচ কার্যক্রমে আসার মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণের কবলে পড়ে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে না পেরে ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের আস্থার সংকট তৈরি করেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন, এ সরকারের শুরুতে নতুন ৯টি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া ঠিক হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক সে সময় আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু চাপের মুখে তারা লাইসেন্স দিতে বাধ্য হয়। কয়েকটি ব্যাংকে ঋণ অনিয়ম এবং সব ব্যাংকের মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণই প্রমাণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই সময়ের বিরোধিতা সঠিক ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত নতুন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৭১৩ কোটি টাকা। এতে এক বছরের ব্যবধানে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা।

খেলাপি প্রবৃদ্ধি প্রায় সাড়ে তিনগুণ। খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নতুন ব্যাংকের মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে ফারমার্স ব্যাংকের। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

সরকারের শেষ সময়ে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার ব্যাপারে আবার আলোচনা উঠলে অর্থমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, সরকারের এই মেয়াদে আর কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হবে না।

গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ডিজিটাল ব্যাংক নামে একটি নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন। ওই চিঠিতে অর্থমন্ত্রী লেখেন, সরকারের এই মেয়াদে আর কোনো নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হবে না। এ কারণে জিডিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে। এখন আর ব্যাংক দেয়া ঠিক হবে না।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন ব্যাংক বেশি হয়ে গেছে। তাহলে তিনি কীভাবে নতুন ব্যাংকের প্রস্তাব পাঠান বাংলাদেশ ব্যাংকে। এভাবে দ্বিমুখী নীতি ব্যাংকিং খাতকে অনেক ক্ষতি করেছে। তিনি থাকলে আরও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া মন্ত্রীর অমতেও কোন প্রেসার গ্রুপের চাপে আরও নতুন ব্যাংক দেয়া হচ্ছে, তা খতিয়ে বের করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

এদিকে বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে এসে আরও চারটি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানায় কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এছাড়া আরও ৩টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মধ্যে বাংলা ব্যাংকের মালিকানায় রয়েছে বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। গ্রুপের চেয়ারম্যান হচ্ছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মোরশেদ আলম। একই গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান হচ্ছেন জসিম উদ্দিন। তিনি বাংলা ব্যাংকেরে পর্ষদের চেয়ারম্যান।

পিপলস ব্যাংকের পর্ষদের চেয়ারম্যান হচ্ছেন আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার নেতা এমএ কাসেম এবং সিটিজেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান হচ্ছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক।

এছাড়াও এই সরকারের আমলে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড কল্যাণ ট্রাস্টের মালিকানায় সীমান্ত ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিশেষায়িত প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়েছে।

  • কার্টসিঃ যুগান্তর/ নভেম্বর ১৪,২০১৮ 

Tuesday, November 13, 2018

আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়ম : দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক

দেশের গৃহহীন মানুষের জন্য সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প গ্রহণ করায় দরিদ্র মানুষ আশা করেছিল, এবার বোধ হয় মাথাগোঁজার ঠাঁই মিলবে। কিন্তু অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে আশানুরূপ সাফল্য দেখেনি প্রকল্পটি। প্রায় প্রতিটি প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কোথাও কোথাও অর্থ শেষ হয়ে গেলেও ঘর বুঝে পায়নি আশ্রয়হীনরা। অধিকাংশ প্রকল্পের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের নিরপেক্ষ অডিট প্রত্যাশা করেছিলাম। সেটিও করা হয়নি। ঘর বরাদ্দ নিয়েও রয়েছে হাজারো অভিযোগ। রাজনৈতিক বিবেচনায় বরাদ্দ প্রদানের খবরও মিলেছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম এ আশ্রয়ণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর নিঃসন্দেহে বেদনার। তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতা ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার ফলেই এটি হয়েছে। পরিস্থিতি উন্নয়নে অর্থাৎ সরকারি বরাদ্দের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার এবং প্রকৃত গৃহহীনরা যেন আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে উপকৃত হতে পারে, তা নিশ্চিত সরকারকেই করতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে দেশে হতদরিদ্র নারী-পুরুষের আর্থসামাজিক সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এমনকি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দরিদ্র এর আওতার বাইরে থেকে যাবে। তবুও সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে এ কর্মসূচি আরো কার্যকর করতে তিনটি বিষয় বিবেচনায় রাখা চাই। এক. উৎপাদনমুখী খাতে সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা বাড়ানো। দুই. বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় সাধন। তিন. দুর্নীতি-অনিয়মের ঘটনা কমিয়ে আনা। এটাও দেখতে হবে, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির সঙ্গে সরকারি পদক্ষেপ যেন পরিপূরক হয়। এসব কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে তাদের সবার জবাবদিহিতা সঠিক মাত্রায় থাকে না বলে যে অভিযোগ, তা অমূলক নয়। হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের বরাদ্দে ভাগ বসানো গুরুতর অন্যায় বলেই বিবেচিত হওয়া উচিত। এ ধরনের অনিয়ম ঘটলে তার সঙ্গে যুক্তদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা চাই। দুর্ভাগ্য, দুর্নীতি-অনিয়মের মাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা যাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত, সেই জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের অনেকের সম্পর্কেও এমন অভিযোগ উঠে থাকে। সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানসম্পন্ন বাস্তবায়ন এবং সঠিকভাবে বরাদ্দ প্রদানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের আরো সম্পৃক্ত করা জরুরি। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি কমিয়ে আনতে কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মতো একটি দরিদ্রবান্ধব প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাক, তা কারো কাম্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর এ প্রকল্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে সম্পৃক্ত করা গেলেও অনিয়ম কমে আসতে পারে। তবে সবকিছুর আগে প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা।
  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ নভেম্বর ১৩,২০১৮

গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান

হাছান আদনান
দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৩৪টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই)। এর মধ্যে ১৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেই ‘রেড জোন’ বা বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রেড জোনে থাকা এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই গ্রাহকদের আমানত পরিশোধ করতে পারছে না। আমানত তুলে নিতে প্রতিনিয়ত সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ধরনা দিচ্ছেন ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীরা। এসব প্রতিষ্ঠানকে কলমানি ও মেয়াদি আমানত দিয়ে বিপাকে আছে দেশের ব্যাংকগুলোও। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানই ব্যাংকের আমানত ফেরত দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতের সুদও পরিশোধ করছে না ব্যাংকগুলোকে। এ নিয়ে প্রতিনিয়ত অভিযোগ জমা হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে।

গ্রাহকদের আমানত পরিশোধ করতে না পারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স করপোরেশন লিমিটেড (বিআইএফসি)। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৭০৯ কোটি টাকা বের করে নেন বিআইএফসির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নান। অনিয়মের দায়ে তাকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক পদ থেকে অপসারণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ৮৪৪ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৭৯৪ কোটি টাকার ঋণ ও লিজ খেলাপি হয়ে পড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে গতকাল প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ শেয়ারদর ছিল ৫ টাকা ১০ পয়সা। তবে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠনের পর বিআইএফসি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বলে জানান আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির নীতিনির্ধারকরা।

বিআইএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএম মোস্তফা বিলাল বণিক বার্তাকে বলেন, পূর্ববর্তী পর্ষদের অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের কারণে বিআইএফসির বিপুল অংকের ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর সেগুলো পুনরুদ্ধারে সব আইনি পদক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছি। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ অল্প অল্প করে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টাও করছি। তবে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর অর্থ পরিশোধে অপারগতায় তারা আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। এ অবস্থায় বিআইএফসির ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাহায্য প্রয়োজন। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। এর মধ্যে নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন নিয়ে পর্ষদে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা বা বড় আমানতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাওনাকে ইকুইটিতে রূপান্তর করে তাদের পর্ষদে নিয়ে আসা অন্যতম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও দীর্ঘমেয়াদে বেইল আউট ফান্ড দিয়ে আমাদের পরিচালন কার্যক্রম সক্রিয় রাখতে সহযোগিতা করতে পারে।

খারাপ পরিস্থিতি পার করা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ফার্স্ট ফিন্যান্স লিমিটেড। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে ৩৬ কোটি টাকা নিট লোকসান করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফার্স্ট ফিন্যান্সের ঋণ অগ্রিম ও লিজের পরিমাণ ছিল ৯১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা, যা প্রতিষ্ঠানটির বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৩১ শতাংশ। ফার্স্ট ফিন্যান্সের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের কলমানি ও মেয়াদি আমানত আছে ১২০ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহকদের ৬৯০ কোটি টাকার আমানত জমা ছিল। ফার্স্ট ফিন্যান্স থেকেও ৩৫০ কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে বের করে নেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা। গতকাল দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ছিল মাত্র ৬ টাকা ৩০ পয়সা।

ফার্স্ট ফিন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, রিকভারির জন্য এখন আমাদের দুটি টিম কাজ করছে। পাশাপাশি আমানতকারীদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা ও নতুন আমানত সংগ্রহের জন্য একটি নতুন টিম গঠন করা হয়েছে। সমঝোতার ভিত্তিতে আমরা ধাপে ধাপে আমানতকারীদের পাওনা ফিরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টাও অব্যাহত রেখেছি।

চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা নিট লোকসান গুনেছে প্রাইম ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণকৃত ঋণ ও লিজের মধ্যে ৩৫ শতাংশের বেশি খেলাপি হয়ে গেছে। খেলাপি ঋণ ও লোকসানের কারণে গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।

লোকসান ও অনিয়মের কারণে বিপর্যস্ত আরেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার ২১৭ কোটির মধ্যে ২২৩ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ফারইস্ট ফিন্যান্সের নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ২১ কোটি টাকা। গতকাল দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ারদর অভিহিত মূল্যের অর্ধেক ৫ টাকায় নেমে এসেছে।

ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শান্তনু সাহা বলেন, ব্যাংক কিংবা গ্রাহকদের আমানত পরিশোধে ব্যর্থতার অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে নেই। তবে আর্থিকভাবে আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ফারইস্ট ফিন্যান্স মুনাফা করেছে।

পরিচালকদের অনিয়মে বিপর্যস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডও। প্রতিষ্ঠানটির বিতরণকৃত ৯৩৫ কোটি টাকা ঋণ ও লিজের মধ্যে ৩৫৫ কোটি টাকাই খেলাপি হয়ে গেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে পিপলস লিজিংয়ের পরিচালন লোকসান দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি টাকা। এ প্রতিষ্ঠান থেকেও অনিয়মের মাধ্যমে কয়েকজন পরিচালক ৫৭০ কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন। গতকাল দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর ছিল মাত্র ৫ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধার দেয়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ভাষ্যমতে, খারাপ পরিস্থিতিতে থাকা এনবিএফআইগুলোর মধ্যে আরো আছে ইন্টান্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স লিমিটেড, এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

ব্যাংকাররা বলছেন, বেশির ভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের কাছ থেকে কলমানি ও মেয়াদি আমানত হিসেবে নেয়া ধারের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুদের টাকা পরিশোধেও ব্যর্থ হচ্ছে। এজন্য দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধার দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। প্রায় একই কথা বলছেন রেড জোনে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় আমানত রাখা সঞ্চয়কারীরাও।

দু-চারটা ছাড়া প্রায় সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিস্থিতিই খারাপ বলে মনে করেন ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক আমানতের পাশাপাশি ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের অর্থও অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফেরত দিতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ধার দেয়া টাকা ফেরত না পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক। ব্যাংকগুলো এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে টাকা ধার দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক।

তবে পরিস্থিতি খারাপ হলেও এখনো উত্তরণের যথেষ্ট সুযোগ আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) চেয়ারম্যান ও ন্যাশনাল হাউজিং ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের এমডি মো. খলিলুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান খারাপ সময় পার করছে। তবে এ প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। খারাপ সময় পার করা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে আমার প্রতিনিয়তই কথা হয়। তারা আমাকে জানিয়েছেন, কিছু গ্রাহক প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য ওই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠানই নয়, নির্বাচনের বছর হওয়ায় অনেক ব্যাংকেরও চলতি বছর মুনাফা কমেছে। আশা করছি, দ্রুতই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টের চলতি বছরের জুন সংখ্যার তথ্যমতে, ‘গ্রিন’ বা নিরাপদ অবস্থানে আছে মাত্র তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ‘ইয়েলো’ বা কিছুটা নিরাপদ অবস্থানে ১৮টি। বাকি ১৩টিই আছে বিপজ্জনক বা রেড জোনে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, অর্থবাজারে এ মুহূর্তে কিছুটা নগদ তারল্যের সংকট আছে। ব্যাংকও এ সমস্যা মোকাবেলা করছে। কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনেক আগে থেকেই সমস্যায় ভুগছে। ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় সুশাসন ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে। তবে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমানতের টাকা ফেরত না পেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির দায়িত্ব হবে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ দেয়া। অভিযোগ পেলে বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।
  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ নভেম্বর ১৩,২০১৮

মাধ্যমিক শিক্ষা - সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরিতে অসমর্থ ৪৩% বিদ্যালয়

মাধ্যমিক স্তরে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয় ২০০৮ সালে। এজন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে প্রায় সব শিক্ষককে। তার পরও সৃজনশীল পদ্ধতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না শিক্ষকদের বড় অংশ। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্য বলছে, চালুর ১০ বছরেও সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারছেন না ৪৩ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

চলতি বছরের মে মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৪ হাজার ৮০১টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করে মাউশির একাডেমিক সুপারভিশন দল। পরিদর্শনের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তারা। তাতে দেখা যায়, ২ হাজার ৭৫০টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে পারছেন। এ হিসাবে সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র তৈরিতে সক্ষম ৫৭ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। বাকি ৪৩ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এ পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারছেন না। এর মধ্যে ১ হাজার ২৬১টির শিক্ষকরা প্রশ্ন প্রণয়নে অন্য বিদ্যালয়ের সহায়তা নিচ্ছেন। আর বাইরে থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিচ্ছেন ৭৯০টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র তৈরিতে অসমর্থ বিদ্যালয়গুলোর একটি লক্ষ্মীপুর সদর উপাজেলার পালেরহাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক রয়েছেন নয়জন, আর শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৩৫। সৃজনশীল পদ্ধতি অনুযায়ী বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাময়িক ও নির্বাচনী পরীক্ষায় শিক্ষকদের নিজেদেরই প্রশ্ন প্রণয়ন করার কথা। যদিও শিক্ষকদের অদক্ষতায় বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিতে হয় বিদ্যালয়টিকে।

মাধ্যমিকের সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে গবেষণা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, সৃজনশীল প্রশ্নের ক্ষেত্রে দুটি দিক রয়েছে। একটি ডেভেলপিং বা প্রশ্ন প্রণয়ন। অন্যটি মার্কিং বা নম্বর দেয়া। এর কোনোটিই শিক্ষকরা সঠিকভাবে করতে পারছেন না। বিশেষ করে প্রশ্ন প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের বেশ অনাগ্রহ রয়েছে। সমিতির মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের সহজলভ্যতা এজন্য দায়ী। আবার যারা প্রশ্ন তৈরি করছেন, তারাও ঠিকমতো তা করতে পারছেন না। বইয়ে দেয়া উদাহরণ হুবহু প্রশ্নে তুলে দেয়া হচ্ছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা যাচাইয়ের সুযোগ নেই। এছাড়া নম্বর দেয়ার কাজটিও শিক্ষকরা সঠিকভাবে করতে পারছেন না। সৃজনশীলের সুনির্দিষ্ট নিয়ম না মেনে বেশির ভাগ শিক্ষকই ইচ্ছামতো নম্বর দিচ্ছেন।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষকরাই যেখানে সৃজনশীল পদ্ধতি ভালোভাবে বুঝতে পারছেন না, সেখানে শিক্ষার্থীদের বোঝার তো প্রশ্নই আসে না। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে এসব বিষয় ভালোভাবে রপ্ত করতে না পারায় আগের তুলনায় শিক্ষার্থীদের কোচিং ও প্রাইভেট টিউশন এবং সহায়ক বইয়ের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে।

কুষ্টিয়ার একটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জহিরুল ইসলাম বলেন, সৃজনশীল পদ্ধতি শুরুর আগে ধারণা করেছিলাম, কোচিং-প্রাইভেট বা সহায়ক বইয়ের ওপর নির্ভরতা কমবে। কিন্তু আমার সন্তানের ক্ষেত্রে ঘটছে এর উল্টোটা। কোচিং ও গৃহশিক্ষকের ওপর তার নির্ভরতা আগের চেয়ে বেড়েছে। আমি নিজেও তার পড়া দেখিয়ে দেয়ার কাজটি করতে পারছি না। কারণ যে কাঠামোয় এ শিক্ষাদান পদ্ধতি পরিচালনা করা হচ্ছে, সেটি আমার অজানা। বাধ্য হয়েই এ বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। অনেক সময় তারা নিজেরাও বিষয়টিতে সে রকম দক্ষ নন। ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ছিল ২০ হাজার ৪৬৭টি। এসব বিদ্যালয়ে পাঠদানে নিয়োজিত শিক্ষকের সংখ্যা ২ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি। আর শিক্ষার্থী ১ কোটি ৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫ জন। এসব বিদ্যালয়ের বড় অংশকেই সৃজনশীল প্রশ্নের জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে অন্যের ওপর।

মাউশির গত কয়েক বছরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণেও দেখা যায়, ২০১৭ সালে ৬ হাজার ৪৪২টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছিল তারা। এর মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়নে সক্ষম ছিলেন। বাকি ৫২ শতাংশ বিদ্যালয়কে অন্য বিদ্যালয়ের সহায়তায় বা বাইরে থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করতে হয়। তার আগে ২০১৬ সালে শিক্ষকরা সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন প্রণয়ন করতে পারতেন না, এমন বিদ্যালয় ছিল প্রায় ৫২ শতাংশ।

এজন্য শিক্ষকদের অদক্ষতা নয়, বরং পাঠদানে অতিরিক্ত চাপকেই দায়ী করছেন শিক্ষকরা। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পালেরহাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন খান বলেন, সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরি করতে শিক্ষকদের বাড়তি পরিশ্রম রয়েছে। এজন্য অধিকাংশ শিক্ষকই প্রশ্ন তৈরি করতে চান না। আবার প্রশ্ন প্রণয়নে সময় দিতে গেলে পাঠদানে মনোযোগ দেয়া সম্ভব হয় না। বিশেষ করে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন তৈরি করতে শিক্ষকদের অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে ফি আদায় করা হয়, তা দিয়ে প্রশ্ন প্রণয়নের কাজ সম্পন্নও সম্ভব হয় না। এসব কারণে আমাদের বাইরের প্রশ্নের ওপর নির্ভর করতে হয়।

তবে সৃজনশীল বিষয়ে শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। গত ২৮ অক্টোবর জাতীয় সংসদে লিখিত প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন বিষয়ের শ্রেণী শিক্ষককে সৃজনশীল পদ্ধতিতে দক্ষ করার লক্ষ্যে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইএসডিপি) ও সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) অধীনে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সৃজনশীল পদ্ধতি বিষয়ে শিক্ষকদের বর্ধিত পরিসরে প্রশিক্ষণের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় সেসিপের প্রোগ্রাম দলিলের বরাদ্দের আওতায় তিনদিনের প্রশিক্ষণের পরিবর্তে ছয়দিনের প্রশিক্ষণ আয়োজনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার তিন হাজার শিক্ষকের মধ্যে ১ হাজার ৬৯২ জনকে ১২ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে মাস্টার ট্রেইনার পুল প্রস্তুত করা হয়েছে। আরো ১ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বিএড প্রশিক্ষণে সৃজনশীল বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে বিষয়টি কোর্স প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ নভেম্বর ১৩,২০১৮ 

রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশ

পুলিশের ক্ষুদে বার্তা

রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেপ্তার না করতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন দপ্তর থেকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যাচাই-বাছাই না করে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। এখন থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে কোনো রাজনৈতিক মামলা রেকর্ড করা যাবে না। এরই মধ্যে সরকারের ঊর্ধ্বতন দপ্তরের নির্দেশনা পেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া তার অধীনের পুলিশ কর্মকর্তাদের এ বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই বিরোধী দলগুলো গণগ্রেপ্তার ও গায়েবি মামলায়   নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ করে আসছিল।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়রানি ও নতুন করে মামলা না দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। যদিও সংলাপ শুরুর পরেও সারা দেশে অন্তত একশ’ মামলা হয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই গত ৮ই নভেম্বর জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনের সমতল ভুমি নেই এমন দাবি করে তফসিল পেছানোর দাবির মধ্যে গতকাল নির্বাচন আরও সাতদিন পিছিয়ে পুনরায় তফসিল দেয়া হয়েছে। আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়। গতকাল থেকে বিএনপি দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করেছে। দেশজুড়ে নির্বাচনী আমেজের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নতুন নির্দেশনা নির্বাচনের মাঠে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। 

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে গ্রেপ্তার ও মামলা রেকর্ড- এর করণীয় নির্ধারণ নিয়ে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যাচাই-বাছাই না করে কাউকে গ্রেপ্তার ও মামলা রেকর্ড করা যাবে না। তবে নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা মামলার কার্যক্রম চলমান থাকবে। ওই বৈঠক থেকেই সারা দেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে বার্তাটি পৌঁছে দেয়ার জন্য বলা হয়। এর ভিত্তিতেই ডিএমপি কমিশনার পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক কারণে কাউকে গ্রেপ্তার না করতে ঢাকা মহানগরীর পুলিশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। 

১০ নভেম্বর শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১১ মিনিটে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ক্ষুদে বার্তায় এই নির্দেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। ক্ষুদে বার্তার শিরোনামে লেখা ছিল- ‘রাজনৈতিক গ্রেপ্তারের স্থগিতাদেশ’। পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) ও তার ঊর্ধ্বতনদের কাছে পাঠানো এই ক্ষুদে বার্তায় কমিশনার বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আমাদের অবগত না করে কোনো রাজনৈতিক গ্রেপ্তার ও মামলা করা যাবে না। এই বার্তার কিছুক্ষণ পর আরেকটি বার্তায় কমিশনারের পক্ষ থেকে মহানগরীর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলা হয়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার ও কোনো দুর্ঘটনার মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়নে এটি একটি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, এ ধরনের কোনো ক্ষুদেবার্তা যদি দেয়া হয়ে থাকে তা পুলিশ কর্মকর্তাদের দেয়া হয়েছে। বিষয়টি অন্য কারো জানার কথা না।

বিষয়টি সম্পর্কে পুুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা মানবজমিনকে বলেন, পুলিশ কখনও সুস্পষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা গোত্র বিশেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না। বাংলাদেশ পুলিশ একটি জাতীয় সংস্থা হিসেবে কখনই এমন করে না। এটি পুলিশের পেশাগত আচরণ ও নীতির পরিপন্থি। পুলিশ আগে থেকেই রাজনৈতিকভাবে কাউকে গ্রেপ্তার বা মামলা দিচ্ছে না। ডিএমপি’র একাধিক উপ-কমিশনার (ডিসি), অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ডিএমপি কমিশনারের মোবাইল থেকে এই ক্ষুদে বার্তা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

আওয়ামী লীগের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘মিথ্যা-গায়েবি মামলা ও গ্রেপ্তারকৃতদের একটি তালিকা জমা দেন। 



এদিকে বিএনপি’র তথ্য অনুযায়ী নেতাকর্মীদের নামে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯০ হাজার ৩৪০ টি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৭ জনকে। চলতি বছরের ১লা অক্টোবর থেকে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়েরের অভিযোগ করে বিএনপি। ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ই অক্টোবর পর্যন্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪১৮২ টি গায়েবি মামলা দায়ের এবং এসব মামলায় চারহাজার নয়শ’ ৭৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিএনপি’র তরফে জানানো হয়েছে। এছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপে গ্রেপ্তার ও মামলার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরও গত ১০ দিনে ২০ জেলায় ১০০ টি মামলা দায়ের হয়েছে। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ নভেম্বর ১৩, ২০১৮

What is the rationale for the 7-day deferral?

EDITORIAL

EC should consider the political consensus


We are quite puzzled by the Election Commission's decision to defer the general election by a week. The election is now set to take place on December 30 instead of December 23 as initially announced. The new decision comes on the heels of opposition parties' demand that the election be deferred by a month. The ruling party expressed its "no objection" to the opposition demand. We cannot help but wonder what difference a week would make in conducting all the necessary pre-poll activities and preparatory work. When there is consensus among all parties, we believe the schedule could have been shifted back to a reasonable date.

We are all happy that the nation is gearing toward a participatory national election. The EC should do everything possible to further this process. Giving political parties sufficient time is a crucial part of ensuring universal participation, especially when the EC has enough time at its disposal. The EC hurriedly announced the polls schedule earlier which is a record in itself. It only took seven days to announce the schedule after the 90-day countdown began on October 31 whereas in the past, the ECs had taken, on average, a month after the 90-day countdown began to announce the schedule. The EC has until January 28, 2019 to hold the polls which leaves ample time for the election to be deferred by more than a week—as the EC has done—at least to mid-January.

The EC has a responsibility to fulfil its constitutional obligations by ensuring that the 11th Parliamentary Election is free, fair and participatory. That should be the EC's fundamental objective, and not conducting the election with haste. We urge the EC to reconsider its decision keeping in mind its own promises, the facts on the ground, the demands of the opposition, and most importantly, its constitutional obligations. 

  • Courtesy: The Daily Star / Nov 13, 2018

Unabated transport workers’ crimes

EDITORIAL

FATAL traffic safety condition in Bangladesh is known to all. However, passengers’ lives in the high ways are not only at risk of road accidents, criminal misconduct of the transport workers have been taking lives. The murder, rape and physical assault of passengers in long-route buses has become a common affair. A middle aged woman on Friday, as reported in New Age on Sunday, was killed on a moving bus after pushing her septuagenarian father off the bus on Dhaka-Tangail highway near Ashulia. Law enforcement agencies so far failed to identify the bus operator or the assailants and they suspect that the woman may have been sexually assaulted before murder. In a similar incident, on August 25 2017, Rupa Khatun, a law student was brutally killed after being raped by the bus driver and helpers in a moving bus from Bogra to Mymensingh. Earlier this year, a student of North South University embraced similar fate when he was thrown in a canal from a Chittagong to Dhaka bound bus. The murder of Rupa and Payel shocked the nation and compelled the law enforcement agencies to bring the perpetrators to court, but they failed to prevent such deaths.

Transport workers including drivers and their helpers are recruited arbitrarily. There are no rules of conduct that legally binds the workers to maintain their moral and ethical standards. The transport workers are mostly recruited on a contractual basis. In this system, the drivers and other workers get paid on the basis of the number of trips they have completed. Therefore, they do not enter into any kind of work agreement with their employer that will compel them to adhere to higher ethical standards while in duty. This system also absolves the employers, bus operators of any liability of the action of their employees. Passengers rights activists laments, in a context, where unskilled workers are allowed to ply the road without proper driver’s training, improvement of ethical standards of transport workers are a far cry. For the unruly behaviour of the transport workers, they also blame the politicisation of the sector meaning that the workers are deployed by ruling quarters to create anarchy on the road for political gain and such purposeful use of labour force has only misguided and encouraged them in deviant activities. Therefore, the murder, rape and physical assault of passengers in the hands of transport workers is symptom of a larger problem that has completely rigged the transport sector in the country.

The government, under the circumstances, must immediately improve the training facilities for transport workers with particular emphasis on gender inequality and violence. It is time that the government involving civil society bodies draft a code of conduct for all engaged in the sector. To put an end to the contractual, arbitrary recruitment process, the authorities concerned need to install a recruitment mechanism that will ensure accountability on both worker and transport owners part. 

  • Courtesy: New Age /Nov 13, 2018