Search

Wednesday, December 5, 2018

ভোটারের ভাবনা - গাজীপুরে ‘নির্ঘাত কনটেস্ট’ হবে!

ধুর ভাই কিসের ইলেকশনের কথা কন? আমি তো কুনো ভুটের আলাপ পাই না। লোকজন সব দাবড়ানির ভয়ে মরতাছে। আইজ অর বাড়ি পুলিশ যায়, কাইল তার বাড়ি ডিবি যায়। ভুটের মইধ্যে যায়া মরব? আমি গরিব মানুষ। দুকানদারি কইরে খাই, আমার বাড়িও পুলিশ আসে! আমার ভায়রা আবার বিএনপি করে তো! সেই কারণে তারা ভাবে আমিও বিএনপি।’ পান চিবুতে চিবুতে কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরের পঞ্চাশোর্ধ্ব চা–দোকানি হাতেম আলী। লুঙ্গির খুট দিয়ে পানের পিক মুছতে মুছতে এদিক-ওদিক চেয়ে দেখে নিচ্ছিলেন কেউ তাঁর কথাগুলো শুনে ফেলল কি না। আমি তাঁকে জিগ্যেস করেছিলাম, ‘ভোটের ভাব কেমন বোঝেন?’ তখন তিনি ওই কথাগুলো বলছিলেন। কিন্তু যখন তাঁকে নিজের পরিচয় জানালাম, তখন তিনি থমকে গেলেন। তারপর মুহূর্তে ইউটার্ন নিলেন। তখন বললেন উল্টো কথা। তখন তাঁর কথার অর্থ যা দাঁড়ায় তা হলো: খুব সুন্দর ভোটের পরিবেশ আছে। নির্বাচনের আমেজ এখনো নেই বটে, তবে ভোট হচ্ছে বলে সবাই আনন্দে আছে।

সেখানে মানিক নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন। তিনি বললেন, ইলেকশন নিয়ে মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্য নেই। সবাই একধরনের চাপা আশঙ্কার মধ্যে আছে। গায়েবি মামলা ও ধরপাকড়ে বিরোধী শিবিরের লোকজন চাপে আছে।  

এলাকাটি গাজীপুর–২ আসনের মধ্যে পড়েছে। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে টিকিট পেয়েছেন জাহিদ আহসান রাসেল। বিএনপির শিবির থেকে তাঁকে মোকাবিলা করবেন এম মঞ্জুরুল করিম রনি ও সালাহ উদ্দিন সরকার। ‘ভোটে কে পাস করবে বলে মনে হয়?’—এই প্রশ্নের জবাবে হাতেম আলী বললেন, ‘ভুট যুদি শ্যাষ পর্যুন্ত হয় আর দাঙ্গা–ফ্যাসাদ ছাড়া হয়, তাইলে নির্ঘাত কনটেস্ট হবে। এই পুরা গাজীপুরে একচাইটা বইলা কিছু নাই। কড়া ফাইট কইরা পাস করতে হইব।’

গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির অফিসে স্থানীয় আইনজীবী ও সাংবাদিক আসাদুল্লাহ বাদল বললেন, গাজীপুর শহর ও তার আশপাশের এলাকায় প্রচুর পোশাক কারখানা ও অন্যান্য শিল্পকারখানা আছে। এসব শিল্পকারখানায় লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এদের একটা বিরাট অংশ স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভোটার। তাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী। এখানকার ভোটারদের মধ্যে মতাদর্শগত দিক থেকে একটি মিশ্র ব্যাপার আছে। ফলে একচেটিয়া জনসমর্থন কোনো নেতারই নেই। স্বচ্ছ ভোট হলে এই ভোটারদের রায় একটি নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠবে।

বাদল বললেন, প্রতিদিনই এখানে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। সরকারদলীয় প্রার্থীরাই মূলত আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। এখন এখানে সরব আছেন সরকারপন্থীরা। বিরোধীরা নানা ধরনের আশঙ্কা ও আতঙ্কে নীরব। তাঁদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ আছে। ১৫ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী মাঠে নামলে হয়তো বিরোধীদের সরকারপন্থীরা ধাওয়া করতে পারবে না। তখন কিছুটা সমতা আসবে। সে পরিস্থিতি হলে এই নীরব ভোটাররা প্রকাশ্যে আসবেন। তখন নির্বাচনী আমেজ টের পাওয়া যাবে। তবে তিনি মনে করেন, এখন জনমনে থমথমে ভাব আছে। সরকারপন্থী ও বিরোধীরা একটা শীতলযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

গাজীপুর-১ আসনে (কালিয়াকৈর উপজেলা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডগুলো নিয়ে গঠিত) আওয়ামী লীগের টিকিট নিয়ে লড়বেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিএনপির তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীর সঙ্গে তাঁর মূল লড়াই হবে। কালিয়াকৈরে সেখানকার ভোটার নজরুল পাশার সঙ্গে কথা হলো। নজরুল বললেন, এখানে এই দুই প্রার্থীই হেভিওয়েট। ভোট স্বচ্ছ হলে তঁাদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। তবে নজরুল মনে করেন, মোজাম্মেল হক এখানকার ভোটার নন বলে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে একধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আছে।

গাজীপুর-৩ আসনে (শ্রীপুর উপজেলা এবং গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়ালগর ও পিরুজালী ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত) আওয়ামী লীগের প্রার্থিতায় পরিবর্তন এসেছে। টানা ৩০ বছর এখান থেকে প্রার্থী হয়ে এসেছেন আইনজীবী মো. রহমত আলী। তাঁর অসুস্থতার কারণে এবার তাঁর ছেলে আইনজীবী জামিল হাসান দুর্জয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে দল মনোনয়ন দিয়েছে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজকে। স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, সাধারণ মানুষের কাছে সবুজের জনপ্রিয়তা অনেক। তিনি অনেক আগে থেকেই তৃণমূল পর্যায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। আমতলী এলাকার বাচ্চু মিয়া বললেন, ‘সবুজ ভাই সবার সাথে কোলাকুলি করে বহুত আগে থাইকা। বিএনপির মধ্যেও সে জনপ্রিয়। তার কুনো ক্ষতি বিএনপির লোকজনও চায় না।’ সবুজের সঙ্গে বিএনপির হয়ে লড়াইয়ে থাকবেন অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু।

গাজীপুর-৪ আসনে (কাপাসিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত) তাজউদ্দীনকন্যা সিমিন হোসেন রিমির সঙ্গে লড়বেন প্রয়াত বিএনপি নেতা হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান।

কাপাসিয়া সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আজগর হোসেন খান বলছিলেন, এই দুই প্রার্থীরই পারিবারিক ঐতিহ্য আছে। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর রক্ত রিমির গায়ে বইছে। অন্যদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে যে ফকির আন্দোলন হয়েছিল, সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ফকির মজনু শাহর বংশধর হলেন শাহ রিয়াজুল হান্নান। দুজনের বিষয়েই জনমনে অগাধ শ্রদ্ধা আছে। তবে ভোটাররা যদি ব্যক্তি ইমেজকে সরিয়ে দিয়ে নৌকা এবং ধানের শীষ প্রতীককে মাথায় নিয়ে ভোট দেন, তাহলে কী ফল হবে তা নীরব ভোটাররা সরব না হওয়া পর্যন্ত আন্দাজ করা যাচ্ছে না।

গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ উপজেলা, গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত) আসনে আওয়ামী লীগের মেহের আফরোজ চুমকি এবং বিএনপির এ কে এম ফজলুল হক মিলন লড়বেন।

আমতলী বাজারের জাকির হোসেন মনে করেন, ভোট সুষ্ঠু হলে তাঁদের মধ্যেও তীব্র লড়াই হবে। কিন্তু লোকজনের সঙ্গে কথা বলে যা বোঝা গেল, তার চুম্বক কথা হলো আপাতত সরকারপন্থী ও সরকারবিরোধীদের মধ্যে একটা শীতল যুদ্ধ চলছে। ভোটে তার চূড়ান্ত প্রতিফলন দেখা যাবে।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

জামালপুর-৩ আসন - আচরণবিধি ভেঙে সমাবেশ প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের

যুব সমাবেশ আয়োজনের নামে জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো হয়েছে। নেতা–কর্মীরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মিছিল ও মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। যা নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রধান অতিথি হিসেবে যুব সমাবেশে যোগ দেন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। মেলান্দহ উপজেলা যুবলীগের আয়োজনে শহীদ মিনার চত্বরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে এই আয়োজন করা হয়। সরেজমিনে বেলা তিনটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত সমাবেশে উপস্থিত থেকে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গা থেকে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা–কর্মীরা যুব সমাবেশে অংশ নিতে থাকেন। মোটরসাইকেল মহড়া দিয়েও একটি পক্ষ সমাবেশে অংশ নেয়। বেলা সাড়ে তিনটার মধ্যেই খোলা মাঠটি মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপর স্থানীয় নেতা–কর্মীরা বক্তব্য শুরু করেন।

অনুষ্ঠানে বেশির ভাগ বক্তা পাঁচবারের সাংসদ মির্জা আজমকে আমৃত্যু সাংসদ নির্বাচিত করার ঘোষণা দেন। বিশাল ভোটের ব্যবধানে মির্জা আজমকে নির্বাচিত করে শেখ হাসিনাকে আসনটি উপহার দেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয় সমাবেশ থেকে। প্রায় বক্তাই নির্বাচনী সংশ্লিষ্ট বক্তব্য রাখেন।

নির্বাচনী আচরণবিধির ১২ ধারা অনুযায়ী, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বা দলের মনোনীত প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না। আচরণবিধির ৮ ধারা মতে, মোটরসাইকেল সহকারে মিছিল বা কোনোরূপ শোডাউন দেওয়া যাবে না।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল বিকেলে মির্জা আজমের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি ধরেননি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেলান্দহ উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতার জন্মদিন উপলক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সেখানে কোনো প্রচারণা চালানো হয়নি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর বলেন, রাজনৈতিক সভা ও সমাবেশ নিষেধ নয়। তবে ১০ তারিখের আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানো যাবে না। খোলা মাঠে সমাবেশ এবং নির্বাচনী বক্তৃতা রাখা আচরণবিধি লঙ্ঘন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

ঋণখেলাপি হলেও বৈধ প্রার্থী তাঁরা

  • কয়েকজন প্রার্থী খেলাপি ঋণ নিয়মিত করেননি
  • ব্যাংক কোনো টাকা ফেরত পায়নি 
  • আদালত থেকে ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ নিয়েছেন
  • ফলে ঋণখেলাপি হিসেবে তাঁরা বিবেচিত হচ্ছেন না


৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নানের খেলাপি ঋণ ৮২ কোটি টাকা। সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হতে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় নিজেই উল্লেখ করেছেন খেলাপি ঋণের এসব তথ্য। এরপরও তাঁকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন লক্ষ্মীপুর জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা।

একইভাবে অগ্রণী ব্যাংকে ৫০২ কোটি টাকার ঋণখেলাপি ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ পরিবারের পাঁচ প্রতিষ্ঠান। তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। এরপরও তাঁকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা।

শুধু এই দুজনই নন, তাঁদের মতো নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক আরও কয়েকজন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই খেলাপি ঋণ নিয়মিত করেননি, ব্যাংকের ধারেকাছেও যাননি। ফলে ব্যাংক কোনো টাকাও ফেরত পায়নি। উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়ে তাঁরা নিজের নামে এবং নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা সব ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ নিয়েছেন। ফলে ঋণখেলাপি হিসেবে তাঁরা বিবেচিত হচ্ছেন না। এর মধ্যে কেউ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন কয়েক আগে, অনেকে অনেক আগেই। আবার কেউ কেউ ব্যাংকের মাধ্যমে নির্দিষ্ট টাকা জমা দিয়ে ঋণ নিয়মিতও করেছেন। ব্যাংকাররা বলছেন, নির্বাচনের সময় আগে যেভাবে ঋণ আদায় হতো, এবার তেমনটা দেখা যায়নি। কারণ, ঋণখেলাপিরা এখন ব্যাংকে আসার চেয়ে আদালতেই বেশি যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এই প্রবণতা নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো টিকিয়ে রাখতে সব পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। মাননীয় আদালতকে অনুরোধ করব, যাতে নির্বাচনের সময় স্থগিতাদেশগুলো দীর্ঘমেয়াদি না হয়। এতে ব্যাংকগুলো বঞ্চিত হয়। কারণ, এ সময় গ্রাহকেরা কিছু টাকা ফেরত দেয়। ব্যাংকের জন্য হাইকোর্টে পৃথক তিনটি বেঞ্চ করার জন্য আমরা অনেক দিন ধরেই দাবি করছি। তাহলে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হতো।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একইভাবে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, বিএনপির সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামালও নির্বাচনে বৈধ প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে খেলাপি ঋণের কারণে প্রার্থী হতে পারেননি জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া, চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ আরও অনেকে।

হলফনামায় সানম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান উল্লেখ করেছেন, তাঁর নামে বর্তমানে ৭টি চেক জালিয়াতি ও ২টি অর্থঋণ আদালতের মামলা চলমান আছে। তাঁর হাতে নগদ রয়েছে ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং শেয়ারবাজারে আছে ৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ৩০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর ঋণ রয়েছে ১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৮২ কোটি টাকা।

হলফনামার ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স করপোরেশন (বিআইএফসি) তাঁর কাছে ১৪৩ কোটি টাকা পায়। এর মধ্যে খেলাপি ৬০ কোটি টাকা। ২ ডিসেম্বর তাঁর ঋণের বিষয় জানাতে লক্ষ্মীপুর জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বিআইএফসির একজন কর্মকর্তা। এ ছাড়া আরও ২০ টির বেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁদের দাবি না শুনেই আবদুল মান্নানকে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।

এর কারণ ছিল, গত ১৬ অক্টোবর বিচারপতি মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে বেঞ্চ তাঁর ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। এর ফলে তাঁর ঋণ খেলাপি হিসেবে গণ্য হবে না। আবদুল মান্নান তা নিজেই হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

বিআইএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তফা বিলাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবদুল মান্নানের তথ্য নিয়ে আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলাম। রিটের কারণে আমাদের আপত্তি কাজে আসেনি।’

আবদুল মান্নানের কাছে রূপালী ব্যাংকের পাওনা ১৫ কোটি টাকা, যার পুরোটাই খেলাপি। রূপালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধানও বলেন, ‘আমরা আপত্তি করেছিলাম। রিটের কারণে আপত্তি টেকেনি।’

একইভাবে বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, ব্যাংকে নগদ জমা রয়েছে ১১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। নিজের পেশার পরিচয় দিয়েছেন এন্টারটেইনমেন্ট রিপাবলিকের কর্ণধার, ইনফো লিংকের চেয়ারম্যান, অ্যাভালন এস্টেটের এমডি ও কেসি মেমোরিয়ালের পরিচালক।

এন্টারটেইনমেন্ট রিপাবলিকের কাছে বিআইএফসির পাওনা ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। গত রোববার হলফনামা যাচাইকালে বিআইএফসির প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে আপত্তি জানালেও রিটার্নিং কর্মকর্তা তা গ্রহণ করেননি। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি তালিকায় তাঁর নাম ছিল না।

সূত্র জানায়, স্থগিতাদেশের কারণে খেলাপির তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। এ কারণে প্রার্থী হতে তাঁর কোনো সমস্যা হয়নি।

বিআইএফসির এমডি মোস্তফা বিলাল এ নিয়ে বলেন, ‘আমরা আপত্তি তুলেছিলাম। তা গ্রহণ করা হয়নি।’

এদিকে ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, শেয়ারবাজারে তাঁর বিনিয়োগ আছে ৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং তাঁর স্ত্রীর বিনিয়োগ ৫ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামান। ব্যাংকটির পরিচালকদের সিংহভাগ তাঁর পরিবারের সদস্য।

সূত্র জানায়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান জাভেদ স্টিল, ভ্যানগার্ড স্টিলস, আসিফ স্টিল, আফরোজা ওয়েল ও আসিফ সিনথেটিকের ঋণ ৫০২ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অংশ ১০ শতাংশ। এসব ঋণের পুরোটাই খেলাপি হয়ে আছে, তবে ব্যাংকের তালিকায় তা নিয়মিত। কেননা, উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে খেলাপি ঋণকে নিয়মিত দেখানো হচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকও কোনো আপত্তি তুলতে পারছে না।

অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহক শহীদুল হক জামালও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বিএনপির সাবেক হুইপ। ঋণকে খেলাপি হিসেবে না দেখাতে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়েছেন তিনি।

অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঋণখেলাপি অনেকেই আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়েছেন। এ কারণে খেলাপি হওয়ার পরও তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন। আমরা চেষ্টা করে অনেকের রিট শূন্য (ভ্যাকেট) করতে পারি। সব ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না, সময়সাপেক্ষও।’

এদিকে নির্বাচনে অংশ নিতে গত মাসে ঋণ পুনঃ তফসিল করেছেন সরকারদলীয় বেশ কয়েকজন সাংসদ। এর মধ্যে অন্যতম রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হক, চাঁদপুর-৪ আসনের শামসুল হক ভূঁইয়া, ঢাকা-১৪ আসনের আসলামুল হক, শরীয়তপুর-৩ আসনের নাহিম রাজ্জাক, পটুয়াখালী-২ আসনের আ স ম ফিরোজ অন্যতম। আবার ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সব ঋণ এখন নিয়মিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ পুনর্গঠন সুবিধা ছাড়াও গ্রুপটিকে নতুন করে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে একাধিক ব্যাংক।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সামগ্রিক বিষয় নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেশির ভাগই ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে চায় না। সবাই স্থগিতাদেশ নিয়ে বসে আছে। অনেকে এভাবে নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে। ফলে ব্যাংকগুলো কোনো টাকাই পাচ্ছে না। খেলাপি ঋণও আদায় হচ্ছে না।’

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচন-পূর্ব সহিংসতা - ঝুঁকি দূর করতে ইসিকে সতর্ক থাকতে হবে

সম্পাদকীয়

নির্বাচনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই সহিংস ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। গত শনিবার রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সরকারদলীয় সাংসদ এনামুল হক ও তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদের সমর্থকদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষে যুবলীগের এক নেতা নিহত হয়েছেন। এর আগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন, নেত্রকোনায় জেলা কৃষক লীগের এক নেতা খুন হয়েছেন এবং যশোরের বেনাপোলে খুন হয়েছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা।

রাজশাহীর বাগমারায় সংঘর্ষটি পুরোপুরি নির্বাচনকেন্দ্রিক এবং একই দলের দুটি পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে। এনামুল হক ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, আবুল কালাম আজাদও একই আসনে আওয়ামী লীগেরই মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে এর আগেও একাধিকবার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের দ্বন্দ্ব-বিরোধ যে সহিংসতার রূপ নিতে পারে, এমন আশঙ্কা ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কোনো শান্তি-সমঝোতার পদক্ষেপ নেয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যাতে সংঘর্ষ এড়ানো যায়।

নির্বাচনের আগে এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটা প্রবণতা: বলপ্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা কিংবা নিজেদের পেশিশক্তির প্রদর্শনী করে ভোটযুদ্ধে জয়লাভের চেষ্টা বৃদ্ধি পেলে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা দুরূহ হয়ে পড়বে। এখন পর্যন্ত অধিকাংশ সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা লক্ষ করা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নেতার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। আওয়ামী লীগের যেসব নেতার কর্মী-সমর্থকেরা কাউকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করবেন; ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি সহিংস কর্মকাণ্ডে অংশ নেবেন, সেসব নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এমন ঘোষণা দেওয়া আওয়ামী লীগের নিজের স্বার্থে এবং নির্বাচনী পরিবেশের জন্য প্রয়োজন।

আওয়ামী লীগের লোকজন নিজেদের মধ্যে যেমন সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছেন, তেমনি তঁাদের বিরুদ্ধে বিরোধীদের ওপর হামলার অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে। যেমন, গত শনিবারই সন্ধ্যায় নাটোর-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বাড়িতে আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করেছে বলে দুলু অভিযোগ করেছেন, যদিও আওয়ামী লীগ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ফেনী-২ (সদর) আসনে বিএনপির প্রার্থী জয়নাল আবেদীন ওরফে ভিপি জয়নাল অভিযোগ করেছেন, সরকারি দলের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাঁকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দিচ্ছে, তারা তাঁকে তাঁর বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তিনি বলেন, গত শনিবার সকালে ৮-১০টি মোটরসাইকেলে সন্ত্রাসীরা তাঁর বাড়ির সামনে এসে ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

আওয়ামী লীগের লোকজন কোনো নেতার পক্ষে মিছিল–সমাবেশ ইত্যাদি করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছেন, এমন খবরও আসছে। যেমন চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে গত শনিবার এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বিক্ষোভ-মিছিল, সড়ক অবরোধ করে যানজট সৃষ্টি করা এবং জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর ক্ষেত্রেও তাঁরা বিবেচনাবোধের পরিচয় দিচ্ছেন না।

এসব ক্ষেত্রে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি যত গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের সক্রিয় তৎপরতা। নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে দলনির্বিশেষে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে হবে এবং আইন প্রয়োগকারীদের অবশ্যই নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে হবে।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

সিইসির ভাগনে শাহজাদার আয় ও সম্পদ দুটোই বেশি

পটুয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস এম শাহজাদার পেশা ব্যবসা। ব্যবসা থেকে বছরে আয় করেন ২৩ লাখ টাকা। তাঁর নামে কোনো মামলা নেই। অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী হাসান মামুনের বিরুদ্ধে আছে ১২টি মামলা। তাঁর পেশা ব্যবসা হলেও সে খাতে কোনো আয় দেখাননি। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া তাঁদের হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলা নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-৩ আসন। এ আসনে সাতজন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ে বিএনপির দুই প্রার্থী গোলাম মাওলা রনি ও মুহাম্মদ শাহজাহানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। হলফনামা থেকে আরও জানা গেছে, অপর পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই ব্যবসায়ী ।

পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় ও সম্পদ আছে আওয়ামী লীগের এস এম শাহজাদার। তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার ভাগনে। তাঁর বাড়ি দশমিনায়। তিনি টাইলস ও স্যানিটারি সামগ্রী ব্যবসায়ী। তিনি এই ব্যবসা থেকে বছরে আয় করেন ২৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।

সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত থেকে আয় করেন ৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা। হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ৯ লাখ ৬৩ হাজার এবং স্ত্রীর হাতে নগদ রয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৮ লাখ ৬১ হাজার টাকা ।

অস্থায়ী সম্পদের মধ্যে আরও আছে শাহজাদার নিজের একটি গাড়ি, যার মূল্যে ৩১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে আছে আরেকটি গাড়ি, যার মূল্য ১৪ লাখ টাকা। দুজনের নামে আছে ৩৫ ভরি স্বর্ণালংকার। স্থায়ী সম্পদের মধ্যে শাহজাদার নামে ৩২ শতাংশ অকৃষিজমি এবং স্ত্রীর নামে ১৪৭ শতাংশ কৃষিজমি রয়েছে। ঢাকায় তাঁর ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মূল্য ২৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এলাকায় তাঁর পাকা বাড়ির মূল্য ২৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা। তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি কোনো মামলা নেই বলে হলফনামা থেকে জানা গেছে।

এদিকে বিএনপির প্রার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসান মামুন তাঁর হলফনামায় ১২টি মামলা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ১১টি মামলা রয়েছে। যার ৯টি মামলা ঢাকার পল্টন থানায় করা। তাঁর বিরুদ্ধে একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। এই মামলাগুলোর একটি বিচারাধীন এবং সব মামলায় তিনি জামিনে আছেন।

হাসান মামুনের বাড়ি দশমিনায়। সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর। তিনি গার্মেন্টস সামগ্রী সরবরাহকারী ব্যবসায়ী। তবে তিনি ব্যবসা থেকে কোনো আয় দেখাননি। তাঁর স্ত্রীর চাকরি থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। হাসান মামুনের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো অর্থ জমা নেই। তবে স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা আছে ২২ লাখ টাকা এবং সঞ্চয়পত্র রয়েছে ৩ লাখ টাকার। দুজনের নামে ৬৫ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে। এ ছাড়া অস্থাবর সম্পদ হিসেবে তিনি তাঁর ব্যবসায়ের পুঁজি দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী কামাল খান। গলাচিপার বাসিন্দা কামাল খান এসএসসি পাস। তিনি ওষুধ ব্যবসায়ী এবং বছরে আয় করেন ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তাঁর কৃষিজমি রয়েছে ১২০ শতাংশ এবং এ থেকে বছরে আয় ১৪ হাজার ৪০০ টাকা। হাতে নগদ ১ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। তাঁর স্ত্রীর পাঁচ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে। এ ছাড়া ১ লাখ টাকার আসবাব ও ইলেকট্রিক সামগ্রী রয়েছে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলামের বাড়ি দশমিনায়। তিনি কামিল পাস। পেশায় তিনি চাকরিজীবী। তাঁর আয়ের উৎস কৃষি খাত ও বাসাভাড়া। এ বাবদ তিনি বছরে আয় করেন ২ লাখ টাকা। তাঁর হাতে নগদ আছে ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৩ লাখ টাকা। সাইফুল ইসলামের একটি গাড়ি রয়েছে, যার দাম ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

গণফোরামের প্রার্থী দশমিনা উপজেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ উল্লাহ। এসএসসি পাস মোহাম্মদ উল্লাহ তাঁর ব্যবসা ও পেশার বিবরণীতে নিজেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পরামর্শদাতা ও উৎসাহ প্রদানমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি পরামর্শদাতা হিসেবে বছরে আয় করেন ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তাঁর হাতে নগদ ২০ হাজার ও ব্যাংকে রয়েছে ১ হাজার টাকা।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

নির্বাচনের পরিবেশ কেমন, জানতে চেয়েছে এনডিআই-ইইউ

ড. কামালের সঙ্গে বৈঠক


জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি   ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পর্যবেক্ষক সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট (এনডিআই) প্রতিনিধিদল। গুলশানের হোটেল আমারিতে গতকাল তারা প্রাতঃরাশ বৈঠকে মিলিত হন। রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি দেড় ঘণ্টার বেশি সময় স্থায়ী হয়। বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিস্থিতি, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের ভূমিকা, রাজনৈতিক অস্থিরতা বিষয়ে এনডিআই প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

বৈঠক শেষে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন  ও নির্বাচনের পরিবেশ প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের কেমন পরিবেশ আছে তা তারা জানতে চেয়েছেন। আমরা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আমাদের কথা বলেছি। আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশন কারও আজ্ঞাবহ থাকতে পারে না। উল্লেখ্য, এনডিআইয়ের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলে সিনিয়র এসোসিয়েট ও এশিয়া বিভাগের পরিচালক পিটার এম মানিকাস, প্রতিষ্ঠানের বোর্ড মেম্বার ও সাউথ এশিয়ার সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিক ইন্ডার ফার্দ, ম্যানেজার ফর গ্লোবাল ইলেকশন মাইকেল ম্যাগনালটি, এনডিআইয়ের এশিয়া রিজিওনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার এডাম নেলসন ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ফারানাজ ইস্পাহানী অংশ নেন।



এর আগে সোমবার একই জায়গায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলও ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানেও তিনি নির্বাচনের পরিবেশ এবং ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান তথ্য-উপাত্ত তাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করেন।



ইসিতে এনডিআই: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)। গতকাল নির্বাচন ভবনে ওই বৈঠক হয়। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে কমিশনের অবস্থান জানতে চেয়েছে এনডিআই প্রতিনিধিদল। সেই সঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ সম্পর্কেও ইসি থেকে অবগত হয়েছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক এ সংস্থাটি।  ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, গতকাল বিকালে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করে এনডিআই দল। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে, কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম এবং ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। 

এ ছাড়া এনডিআইয়ের ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলে এশিয়া বিষয়ক প্রোগ্রাম অফিসার মেইভি হিলান-হুউস্ট, সিনিয়র ইলেকশন অ্যাডভাইজার নিল নেভিটি, ডিরেক্টর অব পলিটিক্যাল পার্টি প্রোগ্রাম আইভান ডোহেরথি, ডেন্ডার ওমেন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি বিষয়ক ডিরেক্টর স্যানড্রা পিপিরাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে সব দল অংশগ্রহণ না করায় বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেনি এনডিআই। এবার যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এনডিআই ১২টি দলে ভাগ হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ করবে। গতকালের বৈঠকে সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে এনডিআইয়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইসির প্রথম আলোচনা হলো। বৈঠকে মূলত এনডিআইয়ের প্রতিনিধিরা দেশীয় পর্যবেক্ষক কিভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন, বিদেশিরা কি করবে, ইভিএম পদ্ধতির বিষয়ে কমিশনের অবস্থান কী এসব বিষয়ে জানতে চান। 

নির্বাচন কমিশন এ সময়ে প্রতিনিধি দলটিকে বিষয়গুলোর বিস্তারিত অবহিত করে। কমিশন জানিয়েছে, শুরুতে ৪৮টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা থাকলেও বিভিন্ন কারণে এটি ৬টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলের আসনগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ভোট পূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখতে গত ৫-১১ই অক্টোবর এনডিআইয়ের পৃথক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। সেই সফরের তারা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নির্বাচন কমিশন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই সফরে তার মূল্যায়ন ছিল উচ্চমাত্রার উত্তেজনা ও সংকোচিত রাজনৈতিক পরিবেশে বাংলাদেশের একাদশ সংসদ নির্বাচন হচ্ছে। তবে ওই নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করতে বাংলাদেশে দীর্ঘ ঐতিহ্যগত রাজনৈতিক মতবাদ, সক্রিয় গণমাধ্যম এবং ক্রমবর্ধমান তরুণ সক্রিয়তাবাদসহ এবং নাগরিক সমাজের মতো বেশ কিছু মৌলিক উপাদানও রয়েছে। 

এনডিআই মনে করে- উচ্চমাত্রার রাজনৈতিক মেরুকরণের মধ্য দিয়ে হবে আগামী নির্বাচন। সেখানে ইভিএম নিয়ে উদ্বেগ থাকার বিষয়টিও স্থান পেয়েছিল। ফলে বেশ কিছু সুপারিশ ছিল এনডিআই’র। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- সরকারকে জনসম্মুখে অঙ্গীকার করতে হবে যে নির্বাচন কমিশনের কাজ কর্মে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবে না। রাজনৈতিক কর্মী, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের কোনো ধরনের ভয় দেখানো চলবে না। এ নিয়ে সরকারের তরফে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে। নারীর অংশগ্রহণ বাধাগুলো দূর করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। সার্বিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তারণ্যের আরো বেশি সম্পৃক্ততার সুপারিশ ছিল পূর্বের দেয়া এনডিআই’র মূল্যায়নে। 

Courtesy” Manabziban Dec 05, 20

মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নির্বাচনী সহায়তায় সরকারি কর্মচারীরা


মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নির্বাচনী কাজে সহায়তা দিচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ব্যক্তিগত স্টাফসহ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাও তাদের পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন। গতকাল সরজমিন কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাদের দপ্তরে গিয়ে এমন তথ্যের সত্যতা মিলেছে। 

ফেসবুকের মেসেঞ্জার ঘেঁটে দেখা যায়, গত ২৮শে নভেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তারা তাদের মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীর মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান। নিজের নামে না পাঠিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এপিএসের নামে প্রেস রিলিজ সংবাদপত্রে পাঠান। এ ছাড়া কয়েক জন জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়মিত মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের নির্বাচনী এলাকায় সফর করছেন। নির্বাচনী এলাকায় সফরের সময় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে জনসংযোগ কর্মকর্তাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখা গেছে।

জনসংযোগ কর্মকর্তারা স্থানীয় পর্যায়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দেখভাল করতে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। এ ছাড়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের একান্ত সচিব (পিএস)’রা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পরিদর্শনের চিঠি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর এলাকায় চলে যাচ্ছেন। অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন নির্বাচনী মতবিনিময় সভায়। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বাসায় এখন নিজের নির্বাচনী এলাকার লোকজনের ঠাসাঠাসি। অনেক ব্যক্তিগত স্টাফ মধ্যরাত পর্যন্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বাসায় রীতিমতো অফিস করেন। এজন্য ওই সময় মন্ত্রীদের বিভিন্ন নির্দেশনা পালন করেন তারা। গতকাল এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার রুমে বসে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে টেলিফোনে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালানোর বিষয়টি দেখা যায়। 

ওই কর্মকর্তা ব্যাংকিং বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করে বলেন, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে এমন একজনের (বিএনপি প্রার্থী) ব্যক্তিগত ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এক পরিচালকের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। কিন্তু এখনো সহায়তা পাইনি। প্রতিমন্ত্রী মহোদয় আমাকে বার বার বিষয়টি নিয়ে বলছেন। তোমরা উপকার করতে পারো কিনা দেখো। ব্যাংকিং নিয়মে ওই ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন। এক মন্ত্রীর পিএসের রুমে গিয়ে জানা গেছে, তার মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পিএস একই ব্যাচের কর্মকর্তা। তাই যেকোনো বিষয়ে যোগাযোগ করতে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে না। ডিসিও তাকে বেশ সহায়তা করছেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, মন্ত্রীর পিএস ছিলেন এখন ডিসি পদে কর্মরত আছেন এমন কর্মকর্তাদের এলাকায় মনোনয়ন বাতিল নিয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে। ওই কর্মকর্তারা আগ বাড়িয়ে মনোনয়ন বাতিল সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।

এদিকে নির্বাচনের ২৫ দিন বাকি থাকলেও এখনো মন্ত্রীরা তাদের একান্ত সচিব নিয়োগ করছেন। গত ২৫শে নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর একান্ত সচিব পদে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকারকে নিয়োগ করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পিএস নিয়োগ সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী যতদিন এ পদ অলঙ্কৃত করবেন বা এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকারকে ওই পদে বহাল রাখার অভিপ্রায় পোষণ করবেন ততদিন এ নিয়োগ আদেশ কার্যকর থাকবে। এ ছাড়া এক মন্ত্রী গত দুইদিন আগে নিজের একান্ত সচিব নিয়োগ করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে।    
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮   

আপিল শুনানি নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে ইসি


রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় নির্বাচন কমিশনে আপিলের স্তূপ জমেছে। দুইদিনে ৩১৯ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। আজও আপিল আবেদন গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। কাল থেকে তিনদিন চলবে আপিল শুনানি। কমিশন সূত্র বলছে, রেকর্ড আবেদন পড়তে পারে শেষদিন পর্যন্ত। তিনদিনে এসব আবেদন নিষ্পত্তি করতে হিমশিম খেতে হবে ইসিকে। আপিল নিষ্পত্তির জন্য এজলাস স্থাপন করা হয়েছে। একক এজলাসে চলবে শুনানি।

ইসি সূত্র বলছে, আপিল নিষ্পত্তি করতে প্রার্থী প্রতি খুব বেশি সময় মিলবে না। এ নিয়ে প্রার্থীরাও রয়েছেন শঙ্কায়। তারা বলছেন, কিছু বিষয়ে আইনি যুক্তিতর্কের প্রয়োজন রয়েছে। আপিলে নির্বাচন কমিশনকে সে সুযোগ দিতে হবে।

প্রার্থিতা ফিরে পেতে গতকালও ২৩৪ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। এ ছাড়া মনোনয়ন গ্রহণের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন একজন সংক্ষুব্ধ প্রার্থী। আপিল আবেদনের প্রথম দিন সোমবার ৮৪টি আবেদন জমা পড়ে। আবেদন করাদের মধ্যে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। গতকাল আটটি বিভাগে মোট আপিল আবেদন জমা পড়ে ২৩৫টি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৬৮টি আপিল আবেদন হয়েছে। বিভাগওয়ারি হিসেবে আপিল আবেদনের সংখ্যায় এর পরেই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। সেখানে মোট ৫৬ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। এ ছাড়া সিলেট বিভাগে ১৫, রাজশাহী বিভাগে ২২, রংপুর বিভাগে ২৮, বরিশাল বিভাগে ১২, খুলনা বিভাগে ১৮ ও ময়মনসিংহ বিভাগে মোট ১৬টি আপিল আবেদন জমা পড়ে। সকাল থেকেই আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে অস্থায়ী বুথে আপিল আবেদন জমা দিতে আসেন প্রার্থীরা। সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত আপিল আবেদন জমা নেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।

ঋণ খেলাপি, ত্রুটিপূর্ণ মনোনয়ন, ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়া, হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকা, লাভজনক পদে থাকা, আয়কর রিটার্ন দাখিল না করা, সমর্থকদের স্বাক্ষর ও তালিকায় গরমিল এবং সরকারি সেবা সংস্থার বিল পরিশোধ না করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আপিল আবেদন করেন প্রার্থীরা। তবে ঋণখেলাপি, আয়কর রিটার্ন না দেয়া, স্বাক্ষরে গরমিল ও ফৌজদারি মামলায় সাজার কারণে সবচেয়ে বেশি আপিল জমা পড়ে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর ও তালিকায় গরমিল থাকায় আপিল আবেদন করেন অধিকাংশ প্রার্থী। তবে আপিল আবেদন জমা নেয়ার দ্বিতীয় দিন প্রথম দিনের তুলনায় অনেকটা সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়। মূলত কমিশন ভবনের সামনে প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা বুথ তৈরি করে দেয়ায় প্রথম দিনের তুলনায় অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে আপিল আবেদন জমা দেন প্রার্থীরা। মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা হওয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনে আপিল আবেদন করা প্রার্থীদের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীও ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে আপিল আবেদন করেন, নাটোর-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। ফৌজদারি অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার অভিযোগে মনোনয়ন বাতিল করা হয় এই বিএনপি প্রার্থীর। পটুয়াখালী-১ আসনে ঋণখেলাপির অভিযোগে মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় আপিল করেন জাতীয় পার্টির সদ্য পদচ্যুত মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। তার পক্ষে আইনজীবী নজরুল ইসলাম দুপুরে আপিল আবেদন জমা দেন।

তিনি জানান, মিথ্যা অভিযোগে রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছিল। এ ছাড়া হবিগঞ্জ-১ আসনে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক নবায়ন ফি জমা না দেয়ার কারণে মনোনয়ন বাদ পড়া গণফোরামের প্রার্থী ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়ার পক্ষে তার প্রতিনিধি শাহরিয়ার শুভ আপিল করেন। এ ছাড়া, বিকালে আপিল আবেদন জমা দেন যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) আসন থেকে মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা হওয়া বিএনপির প্রার্থী ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাবরিনা সুলতানা। দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তা। উচ্চ আদালতের স্টে অর্ডারের কপি সংযুক্ত করে শুনানির জন্য আপিল আবেদন করেন বিএনপির এই প্রার্থী। এ ছাড়া ঢাকা-২ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আমান উল্লাহ আমানের পক্ষে আপিল করেন তার ছেলে ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমি।

ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হওয়ায় তার মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। সাজার কারণে বাতিল হওয়া ময়মনসিংহ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান চিকিৎসক নেতা এজেডএম জাহিদ হোসেন তার প্রার্থিতা ফিরে পেতে সকালে আপিল জমা দেন। এ ছাড়া, ৪১৪৭ টাকার পল্লী বিদ্যুতের বিল অপরিশোধিত থাকায় বরিশাল-২ আসনে মনোনয়ন বাতিল হওয়া মহাজোটের প্রার্থী, চিত্রনায়ক ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী পারভেজ সোহেল রানা, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের দুই প্রার্থী মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে আপিল করেন। এরা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. জাকির হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমরান এইচ সরকার। চট্টগ্রাম-৫ আসনে আপিল আবেদন করেন বিএনপি নেতা মীর নাসিরউদ্দিনের ছেলে ও বিএনপি প্রার্থী মীর হেলাল। 

এদিকে মঙ্গলবার প্রার্থীদের আপিল গ্রহণ করা আট বিভাগের  ডেস্কগুলো পরিদর্শন করেন ইসি কমিশনার মাহবুব তালুকদার। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপিলকারীদের প্রতি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করা হবে না। গত ২রা ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন। যাদের মনোনয়নপত্র  বৈধ-অবৈধ হয়েছে, তাদের আপিলের শুনানি আগামী ৬ই ডিসেম্বর থেকে ৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে আদালতের মতোই শুনানি করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশন একটি আধাবিচারিক সংস্থা। নির্বাচন কমিশনারদের মর্যাদাও হাইকোর্টের বিচারপতিদের সমান। শুনানিতে আপিলকারীরা তাদের আইনজীবী নিয়ে আসতে পারবেন।

সেখানে আদালতের  বেঞ্চ’র মতো করেই তারা মুভ করবেন। সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনই আপিল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা পালন করে। সংক্ষুব্ধরা ইসির সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হলে আদালতেও যেতে পারবেন। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের ১১ তলায় শুনানি হবে। ২৮শে নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে ৩০৬৫টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা পড়ে মোট ২ হাজার ৫৬৭টি ও স্বতন্ত্র ৪৯৮টি। ২রা ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র বাছাই। ওইদিন ২ হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র  বৈধ ও ৭৮৬টি অবৈধ বলে  ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এগুলোর মধ্যে বিএনপির ১৪১টি, আওয়ামী লীগের ৩টি এবং জাতীয় পার্টির ৩৮টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৩৮৪টি। আগামী ৯ই ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১০ই ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ এবং ৩০শে ডিসেম্বর ভোট হবে। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮

মামলা শত নয়, শত শত


৩ ডিসেম্বর ২০১৮, আশপাশের দোকান থেকে খাবার কিনে এসে হাইকোর্টের প্রাঙ্গণে বসে খাচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রায় ২০০ ব্যক্তি আদালতে হাজির হয়ে স্থানীয় থানায় দায়ের করা একটি মামলার অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের আবেদন করেন। তাদের অনেকে জামিন পান। ছবি: আরমান হোসেন


পুলিশি হেনস্তার ভয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্ভয়ে প্রচারণা চালাতে পারবেন কী না সে নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।

যেমন, পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে বিএনপি প্রার্থী সাইফুল আলম নীরব নিজের মনোনয়নপত্র নিজে জমা দিতে পারেননি। ঢাকা-১২ আসনের এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ২৬৭টির মতো মামলা। দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তার কাঁধেই এতো বেশি মামলার বোঝা।

এমনকি, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে ৩,০৬৫ সম্ভাব্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি মামলার শিকার।

দলের সহযোগীদের মাধ্যমে পাঠানো নীরবের মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তা গ্রহণ করেছেন। ভোটের মাঠে এখন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

নীরব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “বুঝতে পারছি না, প্রচারণা যখন শুরু হবে তখন আমি কীভাবে কাজ করবো। কেননা, পুলিশ নিয়মিত বাসায় হানা দেয়। শুধু আমিই না, আমার দলের কোনো নেতা-কর্মীই বাসায় থাকতে পারছেন না।”

২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপির শাসনামলে নীরব নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছিলেন। যুবদলের এই সভাপতি এখন জামিনে থাকলেও গত ২০১০ সাল থেকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তার হলফনামায় দেখা যায়, মামলাগুলোর অধিকাংশ হয়েছে সন্ত্রাসী কাজে অংশ নেওয়া, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া, বোমাবাজি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর অভিযোগে।

নীরবের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২৬৭টি মামলার মধ্যে ৯৯টি তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়াও, ৯৫টি মামলা রয়েছে বিচারাধীন। মামলাগুলোর অধিকাংশ দায়ের করা হয়েছিলো ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে।

কিন্তু, মজার বিষয় হচ্ছে, চলতি বছরে বিএনপি কোনো বড় ধরনের আন্দোলনে না নামলেও নীরবের বিরুদ্ধে নতুন করে ৫৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

একই আসনে বিএনপি বিকল্প প্রার্থী হিসেবে রেখেছেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কমিশনার আনোয়ারুজ্জামানকে। তবে নগর বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধেও রয়েছে ৭২টি মামলা। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো নীরবের মামলাগুলোর মতোই।

আনোয়ারুজ্জামানের ৭২টি মামলার মধ্যে ৩০টি মামলার চার্জ গঠনের শুনানি চলছে এবং ২৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তিনি এখন জামিনে রয়েছেন।

কিন্তু, নীরব বা আনোয়ারুজ্জামান ব্যতিক্রম নন।

আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির অধিকাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলা। কারো কারো বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১০০টিরও বেশি।

যেমন, হলফনামা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৩৭টি মামলা। সেগুলোর মধ্যে ৪৮টি বিচারাধীন এবং ৫৭টি রয়েছে তদন্তাধীন। এছাড়াও, ২৬টি মামলায় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। আর একটিতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।

ঢাকা-১৮ আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া জাহাঙ্গীরকে লড়াই করতে হবে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেত্রী সাহারা খাতুনের বিরুদ্ধে।

সব মামলায় জামিনে থাকা জাহাঙ্গীর ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমাকে গোপনে প্রচারণা চালিয়ে যেতে হবে। এছাড়া, আর কোনো পথ খোলা নেই।”

বিএনপির অপর নেতা নবীউল্লাহ নবীর বিরুদ্ধে রয়েছে ১০০টির বেশি মামলা। দলের ঢাকা দক্ষিণ শাখার সহ-সভাপতি নবী ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

নবীর ১২১টি মামলার মধ্যে ৫৬টি তদন্তাধীন এবং ৩৭টিতে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে।

তবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের ঘটনাটি আরও অদ্ভুত। কারাগারে থাকা এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ১০৮টি মামলা। তিনি পাবনা-৫ আসন থেকে নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

শিমুলের হলফনামায় রয়েছে, ২০০৫ সাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার ৬৪টি মামলায় হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে।

বিএনপির পাবনা শাখার সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মান্নান বলেন, “শিমুল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তিনি ভুয়া মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন। দল যদি তাকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয় তাহলে আমরা তার প্রচারণার কাজে অংশ নিবো।”

পাবনায় শিমুলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার।

ঢাকা-৪ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে রয়েছে ৮০টি মামলা। বিকল্প হিসেবে তার ছেলে তানভীর আহমেদকেও প্রার্থী করা হয়েছে। কিন্তু, তানভীরের বিরুদ্ধে রয়েছে ৭৫টি ফৌজদারি মামলা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ৮ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দলের অন্তত ৫৩৭ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বিএনপি আরও জানায়, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে দলটির ৮৫ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ৪,১২৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আরও ৩ লাখ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪৬টি মামলা এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪২টি।

দলটির দেওয়া তথ্যে আরও জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপির ২৫ লাখ ৭০ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ৯০ হাজারের মতো মামলা দেওয়া হয়েছে।

এসব মামলার অধিকাংশ দায়ের করা হয়েছে ২০১২ সাল থেকে ২০১৩ সালে মধ্যে এবং ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে। সেসময় বিএনপি-নেতৃত্বাধীন জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েছিলো। বিভিন্নস্থানে সেই আন্দোলন সহিংসতার রূপও নিয়েছিলো।

এছাড়াও, ২০১৫ সালে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা দায়ের করা হয়। তখন দলটি সারাদেশে লাগাতার অবরোধ পালন করেছিলো। সেই অবরোধ প্রায় তিনমাস চলেছিলো।

২০১২ সাল থেকে দায়ের করা এসব মামলায় বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের অনেকে কারাগারে রয়েছেন। অনেকে আবার পলাতকও।
  • The Daily Star /Bangla/Dec 05,2018 

Tuesday, December 4, 2018

‘রাক্ষসী সরকার মানুষ খেয়ে ফেলছে’


রাক্ষস যেমন মানুষ খায়, তেমনি সরকার ও সরকারের লোকজন মানুষ খেয়ে ফেলছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহব্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেছেন, ‘কেঁদে কি হবে, এই কান্নাই কারো কোল ভিজবে না। যারা ক্ষমতায় আছেন, যারা কিছু করতে পারে আপনাদের জন্য, যারা দায়িত্বে আছে, তারা সবাই দায়িত্বজ্ঞানহীন। কোনো মানুষের জন্য কোনো দয়া নেই, দরদ নেই। ওরা রাক্ষসের ভূমিকায়। রাক্ষস যেমন মানুষ খায়, এই সরকার, এই সরকারের লোকজন তেমনি মানুষ খেয়ে ফেলছে। কোনরকম বিচার পাচ্ছে না।’

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ০৪, জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে গুম হওয়া পরিবারদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’র আয়োজনে এক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত এরা ক্ষমতায় আছে, ততদিন পর্যন্ত আপনারা কোনো বিচার পাবেন না। অতএব লড়াই একটাই, এদের কবল থেকে মুক্তি চাই। তাহলে পরে আমরা স্বজনদের ফিরে পাব, এদের কাছ থেকে পাবেন না। সরকার কোনো কথা শুনবে না। আপনারা দেখছেন নির্বাচনের নামে সরকার কি কি করছে। যারা এই নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছে তাদের গ্রেফতার করছে, গুম হয়ে যাচ্ছে, মামলা দিচ্ছে একটা পর একটা। এমনকি এরকম পর্যন্ত হয়েছে, যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে তার কোন অস্তিত্ব নেই, তবুও মামলা হচ্ছে।’ 

‘গুম হওয়া সুমন ও হোম মিনিস্টার একই এলাকার মানুষ। পাঁচ বছর আগে সুমনের মা-বোনরা যখন তার কাছে গিয়েছিল তার কাছে, তিনি বলেছিলেন তিনি এ ব্যাপারে জবাব দিবেন। পাঁচ বছর পর্যন্ত কোনো জবাব দেননি। মনে করেছেন নির্বাচনের মধ্যে তিনি জবাব দিবেন, দেবেন না। তাই কাজ একটাই, এদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে হবে, ভোটের মাধ্যমে পরাজিত করতে হবে। তাছাড়া পারবেন না। আর সেটার জন্য আপনারা নিজ-নিজ এলাকায় যান। বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়স্বজন যাকে পান, তাকেই বলেন- সামনের নির্বাচনে এদেরকে জবাব দিতে চাই। আপনি যদি গুমের বিচার চান, তাহলে ভোটের লড়াই করতে হবে, আপনার যদি ন্যায্য অধিকার চান, তার জন্য ভোটের লড়াই করতে হবে। সামনে ভোট ভোটের লড়াই একমাত্র লড়াই। অন্য কোনো লড়াই নাই।’

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘কান্না হাহাকার ও ভেতরের রক্তক্ষরণের মধ্যে আছি। রাষ্ট্র বাহিনী গঠন করে জনগণের নিরাপত্তার জন্য। এই যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ বা যেকোনো বাহিনী কাউকে বল প্রয়োগ করতে পারে, গ্রেপ্তার করতে পারে ও বিচারের মুখোমুখি করতে পারে একটি আইনের ওপর দাঁড়িয়ে। সংবিধান সে আইন দিয়েছে। সে আইনেরওপরে তারা বল প্রয়োগ করতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাহিনী যখন সে আইন অমান্য করে জনগণের ওপর বল প্রয়োগ করে, কাউকে হত্যা করে কিংবা কাউকে গুম করে ফেলে, তখন তাদের আইন প্রয়োগ করার বৈধতা আর থাকে না।’

সরকারকে উদ্দেশে করে সাকি বলেন, ‘এই যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী এবং বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তারা বেছে-বেছে অনেক এর ওপরে আইন প্রয়োগ করেন এবং বিচার করেন। আপনারা নিজে আইন মানেন না, অন্যদের আইন মানার জন্য বাধ্য করতে চান। এটা টিকবে না, আপনাদের স্বৈরাচারী ক্ষমতা রক্ষা করার জন্য যেভাবে মানুষকে গুম করছেন, মানুষের সাংবিধানিক অধিকার লংঘন করছেন, তাতে আপনাদের ক্ষমতা তো থাকবেই না আপনাদের উদ্যোগে রাষ্ট্র হুমকির মুখে পড়ে যাবে। এবং সে অধিকার এই সরকার কিংবা শাসকদের আমরা দিতে পারিনা।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বলেছি, প্রতিপক্ষ দমনের নামে যেভাবে একটা রাষ্ট্রকে দৈত্যকার রাষ্ট্রে পরিণত করছেন, সেটা আপনাকে রক্ষা করবে না। যদি নিজের নিরাপত্তা চান, তাহলে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। আর সেই নিরাপত্তা জায়গা হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘গুম হচ্ছে সবচেয়ে জঘন্য ধরনের অপরাধ। এটা খুনের চেয়েও জঘন্য অপরাধ। এবং পৃথিবীর বিভিন্ন আইনে যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে সেখানেও এটা জঘন্য অপরাধ হিসেবেই সংজ্ঞায়িত করা আছে। আমাদের আন্তর্জাতিক আইনে বলা হয়েছে, গুম বা কোন যখন পরিকল্পিত এবং ব্যাপক সংখ্যায় হয় তখন সেটাকে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধে সংজ্ঞায়িত করতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই দেশের যত খুনের গুমের ঘটনা ঘটেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিকার হয়েছে সরকার বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মী। কাজেই আমাদের ভাবার কারণ রয়েছে এই গুম হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। সংখ্যার দিক থেকেও এটি ব্যাপক সংখ্যায় হয়েছে। কাজে আমি মনে করি, গুমের শিকার যে সকল পরিবার রয়েছে, আপনারা যদি বিচার না পান তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে এই বিচার পাওয়ার জন্য দরকার হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে চেষ্টা করবেন। আমাদের প্রশ্ন তোলার সময় হয়েছে। কারণ, দীর্ঘ বছর যাবত আপনারা রাষ্ট্রের কাছে বিচার চেয়েছেন কিন্তু বিচার পাচ্ছেন না।

‘আমাদের বাংলাদেশি সংবিধানে রয়েছে, যে কোনো নাগরিককে আইন অনুযায়ী বিচার করতে হবে। এবং রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের ব্যবহার হবে আইন মোতাবেক। আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, বাংলাদেশের কোন আইনে আছে একজনের বিচার না করে তাকে গুম করে ফেলবেন? কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে প্রশ্ন তোলার মতো মানুষ সমাজে কমে যাচ্ছে।’

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বাস‌দের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, তাবিদ আওয়াল। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন গত ৫ বছরে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা।
  • কার্টসিঃ ব্রাকিংনিউজ বিডি / ৪ ডিসেম্বর ২০১৮