Search

Sunday, December 9, 2018

নির্বাচন ও মামলা - আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের কাজে আইনের অপপ্রয়োগ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনের সময় এই কথাটা আমরা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বলতে চাই। কারণ, দেশবাসী যখন চাইছেন আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে ও ন্যায্যতার সঙ্গে সম্পন্ন হোক, তখন সরকারের প্রতিপক্ষ দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনের অপপ্রয়োগ আগের চেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এর ফলে বিরোধী দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভোট গ্রহণের দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের ওপর মামলাজনিত আইনি দুর্ভোগ বাড়তে থাকলে খোদ নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

নরসিংদী-১ সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী খায়রুল কবিরের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের কাজে আইনের অপপ্রয়োগের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর পুলিশ নাশকতার অভিযোগে বিএনপির ২৭ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬(২) ধারায় একটি মামলা করে। মামলাটির এজাহারে খায়রুল কবিরের নাম ছিল না। গত ২৫ নভেম্বর পুলিশ ওই মামলায় ২৭৩ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র পেশ করে, সেই অভিযোগপত্রে খায়রুল কবিরের নাম যুক্ত করে। ২৯ নভেম্বর তিনিসহ তিন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে অন্য দুজনের জামিন মঞ্জুর হয়, কিন্তু খায়রুল কবিরকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, মামলাটি করা হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা আইনের যে ধারায়, তা আজ থেকে ২৭ বছর আগেই বাতিল করা হয়েছে। খায়রুল কবিরের বিরুদ্ধে আইনের এই অপপ্রয়োগের কারণ খুব সম্ভব এই যে তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী।

বিএনপি থেকে মনোনীত তিনজন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলা আছে। ঢাকা-১২ আসনের বিএনপির প্রার্থী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা আছে ২৬৭টি। এই দল থেকে মনোনীত অন্তত পাঁচজন প্রার্থীর প্রত্যেকেই শতাধিক মামলার আসামি। খোদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধেই রয়েছে ৪৬টি মামলা।

কেউ অপরাধ করলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি কোনো রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে শত শত মামলা দায়ের করা হয়, এমনকি ৫০টি মামলাও দায়ের করা হয়, তাহলে অবশ্যই তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। সংবাদমাধ্যমগুলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে কীভাবে অনেক গায়েবি মামলা করা হয়েছে। থানার পুলিশ যদি সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা করে, মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কিংবা দিনের পর দিন হয়রানি করে, তাহলে আইন প্রয়োগব্যবস্থা তার নৈতিক শক্তিই হারিয়ে ফেলে। আমাদের দেশে সেই চর্চা জোরেশোরে চলছে বলেই প্রতীয়মান হয়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রধানত বিএনপি অংশ নেয়নি বলে সেটি দেশে-বিদেশে কোনো মহলেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে মিলে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে, তারা ইতিমধ্যে ২০৬ আসনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলেছে। এই প্রার্থীদের অধিকাংশই একাধিক মামলার আসামি, নির্বাচনের ঠিক আগে এসে যদি এসব মামলার অজুহাতে তাঁদের হয়রানি করা হয়, তাহলে জনগণের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাবে। ক্ষমতাসীন মহলে যদি আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পরাস্ত করার দুরভিসন্ধি জেগে থাকে, তবে তা এখনই পরিত্যাগ করা ভালো। 
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮

দশ কেলেঙ্কারিতে লোপাট ২২,৫০২ কোটি টাকা!


গত ১০ বছরে ব্যাংক খাতের ১০টি বড় কেলেঙ্কারিতে লোপাট হয়েছে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। এসব কেলেঙ্কারি ঘটেছে মূলত সরকারি ব্যাংকে। সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক গ্রুপ দিয়ে শুরু হলেও সবচেয়ে বেশি কেলেঙ্কারি ঘটেছে জনতা ব্যাংকে। আরও রয়েছে বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ তথ্য প্রকাশ করেছে। আর এসব তথ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যেন ব্যাংকিং খাতকে অনিয়ম ও লুটপাটের হাত থেকে নিষ্কৃতি দেন। ব্যাংকিং খাতকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য ব্যবহার না করা হয়। আর ভবিষ্যতে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা যেন অর্থ লুটপাটের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যাংক খাতকে বেছে না নেন।

সিপিডির আয়োজনে গতকাল শনিবার ‘বাংলাদেশের ব্যাংক খাত নিয়ে আমরা কী করব’ শীর্ষক এই সংলাপ স্থানীয় একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সংলাপে আরও অংশ নেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান ব্যাংকার এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তারা। তাঁরা দেশের ব্যাংক খাতের দুরবস্থা, ঝুঁকি, সমাধানসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করেন। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। 

১০ বছরে ১০ কেলেঙ্কারি

মূল নিবন্ধে ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত ১০ বছরে জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট ও থারমেক্স গ্রুপ মিলে ১১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা হাতিয়েছে। বেসিক ব্যাংক থেকে বের হয়ে গেছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক থেকে হল-মার্ক নিয়ে গেছে ৩ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। বিসমিল্লাহ গ্রুপ নিয়েছে ১ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া রিজার্ভ চুরির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হারিয়েছে ৬৭৯ কোটি টাকা। নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ও ফারমার্স ব্যাংক থেকে লোপাট হয়েছে ১ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এবি ব্যাংক থেকে পাচার হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাতের এই ১০টি বড় কেলেঙ্কারিতে লোপাট হওয়া ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা দিয়ে কী করা সম্ভব, তারও একটি চিত্র তুলে ধরেছে সিপিডি। সেখানে বলা হয়েছে, এই টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের ৭৮ শতাংশ বা পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের ৬৪ শতাংশ ব্যয় নির্বাহ করা যেত। আবার সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রায় ৪১ শতাংশ টাকার জোগান দেওয়া সম্ভব ছিল।

সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় ব্যাংক খাত

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংক খাতে জবাবদিহি নেই। সংক্রামক ব্যাধির মতো সরকারি ব্যাংকের সমস্যা বেসরকারি ব্যাংকে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা বড় উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশের ব্যাংক, পরিচালনা পর্ষদ ও তদারকি ব্যবস্থা টালমাটাল হয়ে গেছে। ব্যাংক ধ্বংস হলে কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। সুশাসনের প্রচণ্ড অভাব দেখা যাচ্ছে। যারা টাকা মেরে দিচ্ছে, তাদের কিছুই হচ্ছে না।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে শুধু ক্ষমতা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না, প্রয়োগ করতে জানতে হবে। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ করা কঠিন। ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানে স্বাধীন কমিশন প্রয়োজন।

সংলাপের সম্মানিত অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে ব্যাংক খাত, প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে। ব্যাংকের ৯০ শতাংশ অর্থের জোগান দেয় আমানতকারীরা। তাদের দেখার জন্য ব্যাংকে কেউ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব আমানতকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করার। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এ দায়িত্ব পালনে অক্ষম। ধনী মালিকদের প্রাধান্য দিতে গিয়ে সাধারণ আমানতকারীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ আরও বলেন, সুদ নির্ভর করে বাজারের ওপর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে ব্যাংক মালিক সমিতির চেয়ারম্যান সুদহার নির্ধারণ করে দিলেন। বলা হলো, না মানলে এমডিদের চাকরি চলে যাবে। এসব কিসের আলামত? ব্যাংক খাত থেকে ভদ্রলোকদের সরিয়ে কি লুটপাটকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে? তাঁর পরামর্শ হচ্ছে, ব্যাংক খাত নিয়ে সমীক্ষা সংসদে তুলে ধরা প্রয়োজন। জাতীয় সংসদ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগ দেওয়া উচিত। তাহলেই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ জমিদারের ভূমিকায় থাকবে না। 

তিনজনের কারণে ঝুঁকিতে ২৩ ব্যাংক

আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জাতীয় নির্বাচনে ঋণখেলাপি প্রার্থীদের মনোনয়ন বৈধতা সম্পর্কে বলেন, প্রভাবশালী প্রার্থীদের ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ সৃষ্টি করে পুরোনো ঋণের কিছু অংশ পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে খেলাপি ঋণের পুনঃ তফসিল করা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি অত্যন্ত হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাজার থেকে শেয়ার কিনে যেকোনো ব্যাংকের মালিকানা নেওয়া যায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ কাঠামো না থাকায় এক ব্যবসায়ী গ্রুপ একচেটিয়াভাবে অনেকগুলো ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। পুরো অর্থনীতিকে কিছু ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি করে ফেলার একই ভুল যেন আবার না করি।

এই অর্থনীতিবিদের মতে, কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং খাতে উন্নয়নের বদলে অনুন্নয়ন হচ্ছে। অথচ এই খাতের মধ্য দিয়ে অর্থনীতি অগ্রসর হয়। এই প্রথম দেখা যাচ্ছে, আমানতকারীদের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে—কোন ব্যাংকে টাকা রাখলে তা নিরাপদ থাকবে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা অনিয়ম করে ঋণ নিয়েও পার পেয়ে যান।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ১০ জন বড় ঋণগ্রহীতার মধ্যে ৩ জন বিপদে পড়লে ২৩টি ব্যাংক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। এই খাতের সংস্কার আজ থেকে নয়, গতকাল থেকেই শুরু করা উচিত ছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ব্যাংকার ও বড় ঋণগ্রহীতার—এই চক্রে হাত দিতে হবে। বিপদগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে শর্তহীন পুনঃ অর্থায়ন করা হচ্ছে। মালিকদের পর্ষদে ছয় বছরের পরিবর্তে নয় বছর থাকার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এতে আমানতকারীরা ঝুঁকিতে পড়ছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি ইঙ্গিত করে জাহিদ হোসেন আরও বলেন, সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রকদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, এটি ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। আমরা এখন ভুল পথে আছি। যাঁরা ব্যাংক খাতকে নিয়ন্ত্রণ করবেন, তাঁদের স্বাধীনতা না দিলে কিংবা তাঁদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা না হলে, বইপত্রে এত কিছু লিখেও কোনো লাভ হবে না। সর্বোপরি, ব্যাংক খাত ঠিক করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন হবে।

ব্যাংক লুট করা একশ্রেণির ব্যবসায়ীদের ব্যবসা হয়ে গেছে—এই মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ। 

ফারমার্স ব্যাংকে ছিলেন ক্ষমতাশালী ব্যক্তি

ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এহসান খসরু সংলাপে বলেন, ‘ফারমার্স ব্যাংক পুনর্গঠন করা না হলে দেড় লাখ আমানতকারীর মধ্যে বিপর্যয় নেমে আসত। এতে নতুন আটটি ব্যাংকেও বিপর্যয় ঘটত। ব্যাংকের পচন শুরু হয় পর্ষদ থেকে। ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে কেউ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। সামাজিকভাবে ছোট করার আশঙ্কা, চাকরি চলে যাওয়ার ভয়—এসব কারণে আমরা তাদের (পরিচালনা পর্ষদ) সঙ্গে হাত মেলাতে বাধ্য হই।’

ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়ম রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিলম্বিত ভূমিকা প্রসঙ্গে এহসান খসরু বলেন, ফারমার্স ব্যাংকে তো বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি বসে ছিলেন। তিনি আবার সরকারের আর্থিক হিসাব কমিটিতেও ছিলেন। প্রসঙ্গত, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীর ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।

ইস্টার্ণ ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখারের সুপারিশ হলো, স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠনের কোনো প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন স্বাধীনভাবে কাজ করা। ব্যাংক খাতের কিছু জায়গায় ব্যর্থতা আছে, তবে সাফল্যের সংখ্যাই বেশি।

‘কিছু হলে ব্যাংকারদের দোষ হয়। ব্যাংকারদের এখন কেউ ভালো চোখে দেখে না। প্রশ্নের মধ্যে পড়তে হয়। অথচ ঋণখেলাপি হলে নেপালে পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। বাংলাদেশের আর্থিক খাতে কে কী নিয়ন্ত্রণ করছে—সব তালগোল পাকিয়ে গেছে। এটাই বড় সংকট’—এভাবেই ব্যাংকিং খাতের কথা বলেছেন এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক এমডি নুরুল আমিন।

তবে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমরা শুধু সমালোচনা করি। গত ১০ বছরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো অর্থ পাচার হয়নি। ব্যাংক খাত এগিয়ে চলছে। 

নিজেদের মালিক মনে করেন পরিচালকেরা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ মনে করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা সঠিক থাকলে ব্যাংক খাতে এত কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটত না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের পরিচালক শাহ মো. আহসান হাবিব বলেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ যে হারে বাড়ছে, তা উদ্বেগের বিষয়। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে তো সরকারি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের পুরো ক্ষমতা নেই।

সাবেক অর্থসচিব সিদ্দিকুর রহমান বলেন, খেলাপি ঋণ আদায় করা যাবে কি না, এ সিদ্ধান্ত সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে আসতে হবে।

এমসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, নিজেদের মালিক মনে করেন ব্যাংকের পরিচালকেরা। তাঁদের বিশ্বাস করে মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রাখে, এটা তাঁরা মনেই করেন না।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও তরুণ ব্যবসায়ী তাবিথ আউয়াল বলেন, সামনে নির্বাচন, ঋণখেলাপিদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে বিশেষ ঘোষণা থাকতে হবে। ব্যাংকঋণ নিয়ে শোধ করছেন না, এমন কারও মনোনয়ন দেওয়া উচিত হবে না। বিএনপি এমন কাউকে মনোনয়ন দিলে সুশীল সমাজ তা তুলে ধরতে পারে। 

নাগরিক কমিশন গঠনের সুপারিশ

সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া না হলেও আগামী নির্বাচনের পর ব্যাংক খাত নিয়ে একটি নাগরিক কমিশন করবে সিপিডি। ওই কমিশন ব্যাংক খাতের একটি স্বচ্ছ চিত্র তুলে ধরবে। কেন ব্যাংক খাতের এই অবস্থা, সেই কারণগুলো উদ্ধার করবে। পরে সমাধানের পথ খোঁজা হবে। ব্যাংক খাত হলো অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। এই হৃৎপিণ্ডকে সচল রাখতে হবে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে ইশতেহারে বলতে হবে, ব্যাংক খাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করবে না। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন, বিধিবিধান করা হবে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে ব্যাংক খাতকে নিষ্কৃতি দিতে হবে।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮

Thursday, December 6, 2018

সরকারের সঙ্গে সখ্য, হেফাজতে অসন্তোষ

  • ভেতরে-ভেতরে দুই পক্ষ আলাদাভাবে কাজ করলেও কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না।
  • সংগঠনের একটি অংশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে পছন্দ করছে না।
  • এ নিয়ে সাধারণ কর্মীদের ভেতরেও নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ রয়েছে।
  • দুই বছর ধরে সংগঠনের কোনো কর্মসূচি নেই।



হেফাজতে ইসলামের আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের একাংশের সঙ্গে সরকার ও আওয়ামী লীগের সখ্যকে কেন্দ্র করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সংগঠনের একটি অংশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে পছন্দ করছে না। এ নিয়ে সাধারণ কর্মীদের ভেতরেও নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ রয়েছে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘুরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনের ভেতরে অসন্তোষ তৈরি হলেও বিক্ষুব্ধ অংশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং প্রচারপত্র ছেড়ে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতকে রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছে। এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি ১৫১ সদস্যের। সংগঠনের আমির শাহ আহমদ শফী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁর সঙ্গে থাকা নেতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সংগঠনের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানী (আমিরের ছেলে), যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ এবং ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি আবুল হাসনাত আমিনী। তাঁদের সঙ্গে সংগঠনের বড় একটি অংশের নেতা–কর্মীদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

ভেতরে-ভেতরে দুই পক্ষ আলাদাভাবে কাজ করলেও প্রবীণ আলেম আহমদ শফী সবার মুরব্বি হওয়ায় এখনো কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। এই অংশের অন্যতম নেতা নূর হোসাইন কাসেমী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব। তাঁর দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক।

ফয়জুল্লাহ, আবুল হাসনাত আমিনী ও মঈনুদ্দীন রুহী প্রয়াত ফজলুল হক আমিনীর দল ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা। তাঁরা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার চেষ্টা করেছিলেন। তিনজনই চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসন নিয়ে বনিবনা হয়নি।

হেফাজতে ইসলামের পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব নেতা বলেন, হেফাজতে ইসলামের সাধারণ নেতা-কর্মীরা চান, হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে থাকবে। তাঁদের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলেও দুই বছর ধরে সংগঠনের কোনো কর্মসূচি নেই। উল্টো আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য গড়েছে নেতাদের একটা অংশ। এর বিনিময়ে হেফাজতের আমিরের ছেলে আনাস মাদানীসহ কয়েকজন নেতা সরকারের কাছ থেকে নানা ধরনের সহযোগিতা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, বার্ধক্যজনিত কারণে হেফাজতের আমির ছেলে আনাসের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ঢাকায় শুকরানা মাহফিল না করার জন্য আমিরকে অনুরোধ করা হলেও আনাস মাদানীসহ অন্যরা সেটি আয়োজন করেন সরকারের সহযোগিতা নিয়ে। এ কারণে সংগঠনে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন আনাস মাদানী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হেফাজতে কোনো বিভক্তি নেই। সব অপপ্রচার। শুকরানা মাহফিলের পরে অনেক মাহফিলে আলেম-উলামারা ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা জানিয়েছেন। বিরোধ থাকলে এটি হতো না।

সম্প্রতি হাটহাজারীতে সরেজমিনে গেলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সংলগ্ন দোকানের সামনে শুন শহীদের ডাক শিরোনামে একটি প্রচারপত্র পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘১৩ দফার কথা কেন বলা হয় না? হেফাজতের বিদ্রোহীদের না খুঁজে বিদ্রোহের কারণ খোঁজেন। কেন শুরার মাধ্যমে আমির নির্বাচন করা হচ্ছে না। কেন ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আমিরের সখ্য। পাঁচ বছর আগে নেওয়া মহাসচিবের পাসপোর্ট কেন ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।’ প্রচারপত্রের নিচে লেখা ‘৫ মে শহীদ পরিবার’। সেখানে আমিরের ছেলে আনাস মাদানীসহ কয়েকজন নেতাকে দোষারোপ করে হেফাজতকে রক্ষার আহ্বান জানানো হয়।

হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী গত ২৪ নভেম্বর প্রথম আলোকে বলেন, আদর্শ থেকে সরে দাঁড়ানোয় হেফাজতে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। তিনি আনাস মাদানী ও যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহীসহ অনেকের বিরুদ্ধে সরকারের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ করেন।

এই বিষয়ে মঈনুদ্দীন রুহী প্রথম আলোকে বলেন, আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতের আঁতাত হয়েছে, এমন অভিযোগ তাঁদের কানেও আসে। কিন্তু এসবের কোনো ভিত্তি নেই। তিনি দাবি করেন, হেফাজতের মধে৵ কোনো বিভক্তি নেই।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর সমান স্বীকৃতি দিয়ে আইন পাস হয়। এরপর ১ অক্টোবর হাটহাজারী মাদ্রাসায় আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশের ২০১৮ সালে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হেফাজতের আমির আহমদ শফী বলেছিলেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) এটা আমাকে এমনি মহব্বত করে দিয়েছেন। আমি আওয়ামী লীগ হই নাই। আপনাদের এ রকম কথাবার্তা ভুল। কথাবার্তা বলার সময় সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই করে বলবেন। কী করে বলেন, আমি আওয়ামী লীগ হয়ে গেছি। আমি আওয়ামী হলেও কোনো আপত্তি নেই। এ দলে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা দীনকে ভালোবাসেন, আমাদের মাদ্রাসায় সাহায্য করেন।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহমদ শফীর এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে বিভ্রান্তিতে পড়েন হেফাজতের অনেক নেতা। নেতা-কর্মীদের অনেকে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ৪ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা (কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়ায়) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় হেফাজত। কিন্তু এই আয়োজন না করতে হেফাজতে ইসলামের ৬৮ জন নেতার সই করা একটি চিঠি গত অক্টোবরের শেষ দিকে আমিরকে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, সংবর্ধনা দিলে কওমি আলেমরা রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি হয়ে যাবেন। ক্ষুব্ধ হবে সাধারণ মানুষ। পরে সংবর্ধনার নাম পাল্টে ‘শুকরানা মাহফিল’ নামে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করা হয়।

শুকরানা মাহফিলে যাননি হেফাজতের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী, নায়েবে আমির নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী ও তাজুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব ছলিম উল্লাহ ও মো. ইদ্রিস এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা। ২ অক্টোবর সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন নায়েবে আমির মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে মহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘যে উদ্দেশ্য নিয়ে হেফাজত গঠন করা হয়েছিল, তা থেকে দূরে সরে থাকার কারণে পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে হেফাজতে ইসলাম। ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ কর্মসূচি শেষে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক। ওই দিন রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ ঘটনায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের ২২ কর্মীসহ ৩৯ জন নিহত হন বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়। এ ঘটনায় পাঁচ জেলায় মোট ৮৩টি মামলা হয়। হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীকে কোনো মামলাতেই আসামি করা হয়নি। মামলার আসামি হয়ে কারাগারে ছিলেন মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী।

পাঁচ বছরের মাথায় হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠা এবং সংগঠনে বিভক্তির বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছি না।’

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/  ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮

বিচারকদের মাহবুব তালুকদার - কালো নির্বাচন নয়, স্বচ্ছ, সাদা নির্বাচন করতে চাই

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচন আইনানুগ না হলে সে নির্বাচন কালো নির্বাচন। আমরা কালো নির্বাচন নয়, স্বচ্ছ, সাদা নির্বাচন করতে চাই। গতকাল ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন তিনি। মাহবুব তালুকদার বলেন, সবার প্রতি সমআচরণ করতে হবে। আইনের চোখে যেন সবাই সমান থাকে। সবাই সমান অধিকার ভোগ করছে কিনা সেটাই বিবেচনার বিষয়। 

সকল আইন প্রয়োগ হচ্ছে কিনা আপনারা সেটা খেয়াল রাখবেন।

নির্বাচনের অনিয়ম রোধে ও আইনসিদ্ধ করার ব্যাপারে বিচারকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে গেলে সতর্কতা থাকতে হবে। সর্বোচ্চ সাজার বিষয়ে লিগ্যাল মাইন্ডকে প্রাধান্য দিয়ে বিবেচনায় রাখতে হবে, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পায়। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবার সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান মাহবুব তালুকদার। বলেন, আমরা ভাগ্যবান যে, আমরা একটি অংশমূলক নির্বাচন করতে যাচ্ছি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সাধারণত নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। 

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে এক পক্ষের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা সফল হয় না। আমি মনে করি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে পক্ষে-বিপক্ষে ভারসাম্য থাকে। কমিশন ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সোনালী ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে। নিরপেক্ষ, পক্ষপাতমুক্ত নির্বাচন গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গণতন্ত্র নিত্যদিনের অনুপ্রেরণা। মাঠ পর্যায়ের অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধে এবং নির্বাচনী কর্তব্য পালনে সদা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি। মাহবুব তালুকদার বলেন, আপনারা বিচারকরা আমাদের নির্বাচন কমিশনের শপথের অংশীদার। কমিশনারদের শপথ আপনাদের মাঝে সঞ্চারিত হয়েছে। পুরো জাতির প্রত্যাশা পূরণে দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ৩০ লাখ শহীদের কথা স্মরণ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সুখী ও সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হবে। তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সবার প্রতি সমান প্রয়োগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শহীদদের রক্তের ঋণ পরিশোধে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানান মাহবুব তালুকদার। 

প্রশিক্ষণে আরেক কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা একটি আইনানুগ নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচনী তদন্ত কমিটির সদস্যদের সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে কাজটি সহজ করে দেবে। কমিশনার কবিতা খানম বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু ও আস্থার পরিবেশ তৈরিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন শুধু নয়, নির্বাচনী তদন্ত কমিটির সদস্যদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। দৃশ্যমানভাবে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবেন। সব ধরনের রাগ অনুরাগের ঊর্ধ্বে উঠে, বিচারিক দায়িত্ব পালনের মতো করেই সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান আপনাদের দায়িত্ব।

কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, এবারের নির্বাচন বৈচিত্র্যপূর্ণ নির্বাচন। সংসদ বহাল রেখে, সরকার অপরিবর্তনীয় আছে এমন অবস্থায়ই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যেহেতু এ নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহণে হতে যাচ্ছে, আগের যেকোনো সময়ের নির্বাচনের চেয়ে আইনের বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, ১০ই ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হবে। ওই দিন থেকে নির্বাচনী তদন্ত কমিটির সদস্যদের আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেন তিনি। ইভিএমের বিষয়ে বিশদ ধারণা নিতে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা বিচারকদের পরামর্শ দেন নির্বাচন কমিশন সচিব। নির্বাচনী তদন্ত কমিটির প্রশিক্ষণ শেষে ১০-১১ই ডিসেম্বর ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮

ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির ওপর সিইসির অসন্তোষ


একাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের গঠিত ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সিইসি কেএম নূরুল হুদা। গতকাল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির বিচারকদের ব্রিফিংকালে এ অসন্তোষের কথা জানান সিইসি। এ সময় মিথ্যা তথ্য দিয়ে অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচার হবে বলেও বিচারকদের জানান তিনি। 

নূরুল হুদা বলেন, ২৫শে নভেম্বর এই কমিটি গঠন করার পর প্রত্যেকটি কমিটি ১টি করে অন্তত: ১২২টি অভিযোগ তদন্ত করার কথা ছিল। তা না হলে অন্তত: ১০০ টা, ১০০টাও বাদ দিলাম, অন্তত: ২২টি তদন্ত করার প্রত্যাশা ছিল। তা হয়নি। কারণ, এখন পর্যন্ত আপনারা প্রস্তুতি নিয়ে গুছিয়ে উঠতে পারেননি। আজ থেকে, এখান থেকে, আপনাদের কি করণীয়, দায়িত্ব এবং কিভাবে এই কমিটি পরিচালিত হবে জেনে শুনে, ফিরে গিয়ে তদন্ত করবেন।

মানুষের অভিযোগগুলো শুনবেন, আমলে নেবেন এবং তাদের রিলিফ দেবেন। যাতে তারা এলাকা থেকে ঢাকা পর্যন্ত না এসে আপনাদের কাছে যায়। ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্য ২৪৪ জন যুগ্ম জেলা জজ ও দায়রা জজ এবং সহকারী জজ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য দিয়ে অভিযোগ দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিচার হবে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যিনি আপনাদের কথা শুনবেন না পেনাল কোডের ১৯৩ ধারা মতে তাদের ৭ বছরের জেল হবে, যদি মিথ্যা তথ্য দেয় এবং আপনাদের আদেশ না মানে পেনাল কোডের ২২৮ ধারা অনুসারে তাদের বিচার হবে। 

তার মানে হলো কোড অব সিভিল প্রসিডিউর এর ১৯০৮ এর সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে আপনারা মাঠে অবস্থান করবেন। কেএম নূরুল বলেন, আপনাদেরকে ভিজিবল (দৃশ্যমান) হতে হবে। তার মানে আপনারা এখন পর্যন্ত কিন্তু ভিজিবল হননি। বাস্তবতা হলো সেটা। ভিজিবল যখন হবেন, আপনাদের কাজের মাধ্যমে যখন আস্থা রাখবে, আপনাদেরকে যখন চিনবে, তখন থেকে আপনাদের উপরে দায়িত্ব আসবে। তখন আর নির্বাচন কমিশনে শ’ শ’ অভিযোগ আসবে না। আমরা প্রতিদিন শ’ শ’ অভিযোগ পাই। কিন্তু অভিযোগগুলো আমাদের কাছে আসার কথা না। কারণ আপনারা সেখানে (মাঠপর্যায়ে) রয়েছেন। আমরা কি করবো? অভিযোগগুলো আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দেবো। প্রজাতন্ত্রের যারা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের প্রত্যেকের উপরে কোনো না কোনোভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। এটা ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়েছে।

কমিটির সদস্যদের প্রো-অ্যাকটিভ ও ভাইব্রেন্ট হওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটিকে প্রো-অ্যাকটিভ হতে হবে, ভাইব্রেন্ট হতে হবে এবং আপনাদেরকে জানাতে হবে যে, তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য আপনারা আছেন। 

৩০০টি আসনের মধ্যে ১২২টি জায়গায় আপনারা তাদের কাছাকাছি আছেন। তারা যেন সমস্যার সমাধান পায় এটা আপনাদেরকে দেখতে হবে। ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির বিচারকদের সম্পূর্ণ শক্তি নিয়োগের নির্দেশ দিয়ে সিইসি বলেন, বিচারকদের সমন্বয়ে প্রতি জেলায় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যাদের নির্বাচন আচরণবিধি প্রতিপালনসহ অপরাধ আমলে নিয়ে বিচার কাজ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেই দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করতে হবে। প্রার্থীর অভিযোগ আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য বিচারকদের আরও সক্রিয় হতে হবে।

তিনি বলেন, আপনারা আপনাদের করণীয় যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে মানুষের অভিযোগ শুনবেন, আমলে নেবেন। যেন অভিযোগ ঢাকা পর্যন্ত না আসে, এলাকায় বসে সমাধান পেতে হবে। অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদসহ ইসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ 

মন্ত্রী হয়ে আয় বেড়েছে, বাড়বাড়ন্ত সম্পদেও!

  • ১০ বছরে আমুর আয় বেড়েছে ১৩ গুণের বেশি
  • ৫ বছরে মায়ার মোট আয় বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি
  • মৎস্য খাতে আইনমন্ত্রীর বার্ষিক আয় ৩ কোটির বেশি
  • খাদ্যমন্ত্রীর ভাতার বাইরে বিশেষ কোনো আয় নেই!
  • মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর এখন গাড়ির সংখ্যা তিনটি
  • ভূমিমন্ত্রী ডিলুর কাছে নগদ টাকা ১ কোটি ৩১ লাখ 
  • জুনাইদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১০ গুণের বেশি



মন্ত্রিসভার আট সদস্যের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁদের আয় বেড়েছে, বেড়েছে সম্পদও। অনেকেরই আয়ের বড় উৎস মন্ত্রী হিসেবে পাওয়া ভাতা। অবশ্য কেউ কেউ ব্যবসা থেকে বাড়তি আয় দেখিয়েছেন।

হলফনামায় মন্ত্রীরা স্ত্রীসহ নির্ভরশীলদের সম্পদের বিবরণও দিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, তাঁদের স্ত্রীদের সম্পদও বেড়েছে। আবার উভয়েরই নগদ অর্থ ছাড়াও আছে নানা ধরনের বিনিয়োগ।

আমুর আয় বেড়েছে 

১০ বছরে শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুর আয় বেড়েছে ১৩ গুণের বেশি। অথচ একই সময়ে তাঁর স্থাবর সম্পত্তি আড়াই লাখ টাকা কমেছে। নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তাঁর বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এবারের হলফনামায় বছরে প্রায় ৮২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা আয়ের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।

এবারের হলফনামায় অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৬৪ হাজার টাকার তথ্য দিয়েছেন মন্ত্রী। এর মধ্যে বন্ড, ঋণপত্র অথবা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫২ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে তাঁর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৮৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। একই সময়ে তাঁর স্ত্রীর নামে ৫০ লাখ টাকার (বন্ড, ঋণপত্র, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ) অস্থাবর সম্পত্তি ছিল, যা বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। ২০০৮ সালে আমির হোসেন আমু ও তাঁর স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এবার তিনি দেখিয়েছেন ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার সম্পত্তি।

মায়া পরিবারের আয় বেড়েছে

পাঁচ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার আয়ের উৎস ও মোট আয় বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি। আয় বেড়েছে তাঁর স্ত্রীরও। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দাখিল করা তাঁর হলফনামায় আয়ের একমাত্র উৎস দেখানো হয়েছিল বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া। এ থেকে তাঁর মোট বার্ষিক আয় উল্লেখ করা হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা । ওই একই উৎস থেকে তখন তাঁর স্ত্রীর আয় দেখানো হয়েছিল ১২ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

এবারের হলফনামায় মায়া ভাড়া বাবদ ৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা, চৌধুরী গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও স্টার থাইয়ের পরিচালক হিসেবে বার্ষিক ২৪ লাখ টাকা, মন্ত্রী হিসেবে সম্মানী ২৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা এবং ব্যাংক মুনাফা বাবদ আয় ৫ লাখ ২১ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। তাঁর স্ত্রীর আয় দেখানো হয় ৩১ লাখ টাকার মতো। এ ছাড়া মায়ার হলফনামায় কিছু স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ দেখানো হয়েছে।

মাছ চাষে আইনমন্ত্রী

পাঁচ বছর আগে কৃষি খাত (মৎস্য) থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বার্ষিক কোনো আয় ছিল না। বর্তমানে এই খাতে তাঁর বার্ষিক আয় ৩ কোটি টাকার বেশি। পাঁচ বছর আগে আনিসুল হকের নামে কোনো সঞ্চয়পত্র, মৎস্য খামার, অকৃষিজমি ও স্বর্ণ ছিল না। বর্তমানে তাঁর নামে ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, তিনটি মৎস্য খামার, ২৯ লাখ টাকার অকৃষিজমি ও ২০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ব্যাংকে আমানত ও আইন পেশা থেকে আনিসুল হকের বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৬ কোটি টাকা। তা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি টাকার বেশি। তবে তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের কোনো আয় নেই বলে উভয় হলফনামায় উল্লেখ রয়েছে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আছে আইনমন্ত্রীর। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং ১৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেখিয়েছেন মন্ত্রী। এর বাইরে আনিসুল হক গাড়ি, জমি, ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন সম্পদ হলফনামায় দেখিয়েছেন।

ভাতার বাইরে নগণ্য আয় কামরুলের

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ভাতার বাইরে বিশেষ কোনো আয় নেই। তিনি নিজের ও নির্ভরশীলদের বার্ষিক মোট আয় দেখিয়েছেন ২৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২৫ লাখ টাকাই আসে মুক্তিযোদ্ধা ও মন্ত্রী হিসেবে পাওয়া ভাতা থেকে। এর বাইরে ভাড়া, ব্যাংকের সুদ আর টক শোর সম্মানী থেকে আয় করেন তিনি।

কামরুল ইসলাম এবার স্থাবর সম্পত্তি দেখান ৫৪ লাখ টাকা। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে কামরুলের মাত্র ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকার স্থাবর সম্পত্তি ছিল। নবম ও একাদশ দুই সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তির কোনো তথ্য দেননি কামরুল ইসলাম। নবম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কামরুলের স্ত্রীর ১৫ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পত্তি ছিল। এবারের নির্বাচনে স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের কোনো তথ্য দেননি তিনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নিজের কাছে প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পত্তির তথ্য দিয়েছেন কামরুল। এর মধ্যে একটি গাড়ির দাম উল্লেখ করেছেন প্রায় ৭৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

রেলমন্ত্রীর কাছে নগদ ২০৩২ টাকা

মন্ত্রী হওয়ার পর রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সম্পদ বেড়েছে। তবে তাঁর কাছে নগদ ও ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ কম। তাঁর স্ত্রী হনুফা আক্তারের কাছে নগদ টাকা, ব্যাংক, বিমা ও আমানত হিসেবে জমা টাকার পরিমাণ বেশি।

হলফনামা অনুযায়ী মুজিবুল হকের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে নগদ ২ হাজার ৩২ টাকা আছে। স্ত্রী হনুফা আক্তারের কাছে আছে ২ হাজার ২৫৮ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৮ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে জমা ৬০ হাজার টাকা।

২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর মুজিবুল হক বিয়ে করেন। তাই এবার হলফনামার অস্থাবর সম্পদে স্ত্রীর নামের কলাম পূরণ করেন, যেখানে আগে লিখতেন প্রযোজ্য নয়। এতে স্ত্রীর নামে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স ও জীবন বিমার টাকাসহ ৭০ লাখ টাকা আছে। স্ত্রীর নামে ২১ লাখ টাকার আমানত ও ৮৭ ভরি সোনা দেখিয়েছেন তিনি। মন্ত্রীর নিজের নামে দুটি মোটরগাড়ি আছে। এর বাইরেও কিছু সম্পদ দেখিয়েছেন তিনি।

মোজাম্মেল হকের এখন তিন গাড়ি

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের আয় ও সম্পদ সবই বেড়েছে। ১০ বছর আগে তাঁর কোনো গাড়ি ছিল না। এখন তাঁর গাড়ির সংখ্যা তিনটি। ২০০৮ সালে তিনি আইনজীবী ছিলেন। এবার তিনি পেশা পাল্টে কৃষি, মৎস্য ও পোলট্রি ব্যবসা উল্লেখ করেন।

নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। আ ক ম মোজাম্মেল হকের হলফনামা অনুযায়ী, বর্তমানে কৃষি খাত থেকে তাঁর আয় ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা, বাড়িভাড়া থেকে আয় ৩৬ হাজার, পোলট্রি ব্যবসা থেকে আয় ১৯ লাখ ৯০ হাজার, সঞ্চয়পত্র থেকে আয় ২৬ হাজার এবং ভাতা বাবদ আয় আরও ২৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৮০ টাকা।

মন্ত্রী হয়ে কোটিপতি ডিলু

দশম সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর কোনো নগদ টাকা ছিল না। তবে মন্ত্রী হয়ে ১ কোটি ৩১ লাখ নগদ টাকা এবং ৯৩ লাখ টাকা দামের একটি গাড়ি ও একটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। আয় বেড়েছে সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী হিসেবে প্রাপ্য ভাতা থেকে। তবে কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রীর কোনো টাকা নেই। কোনো বন্ড ও শেয়ারও নেই তাঁর। সঞ্চয়পত্রেও কোনো বিনিয়োগ করেননি।

জুনাইদের সম্পদ বেড়েছে 

পাঁচ বছরে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদের বার্ষিক আয় তেমন না বাড়লেও স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১০ গুণের বেশি। আগের থেকে তাঁর স্ত্রী আরিফা জেসমিন কণিকার সম্পদও বেড়েছে তিন থেকে চার গুণ। মন্ত্রী দম্পতির দাবি, চাকরির বেতন-ভাতা বৃদ্ধি হওয়া ও বিনা খরচে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ায় সংগত কারণে সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০১৪ সালে জুনাইদের আয় ছিল ১৮ লাখ টাকার মতো, যা এখন ৪০ হাজার টাকার মতো বেশি। একই সময়ে তাঁর স্ত্রীর আয় ৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকার মতো বেড়ে প্রায় ১২ লাখ ৮১ হাজার টাকা দাঁড়িয়েছে। জুনাইদ আহ্মেদ হলফনামায় নিজ নামে ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন, যা আগের চেয়ে ১১ গুণ বেশি। এ ছাড়া ৭০ লাখ টাকা মূল্যের জিপগাড়ি, ৪১ তোলা স্বর্ণ ও ২ লাখ ৯০ হাজার টাকার আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথাও উল্লেখ রয়েছে। স্ত্রীর নামেও রয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ। যা আগের হলফনামায় উল্লেখ করা অস্থায়ী সম্পদের প্রায় তিন গুণ বেশি। স্ত্রীর নামেও রয়েছে ৪৫ লাখ টাকার ১টি নিশান এক্সট্রেইল কার ও ৬৯ তোলা স্বর্ণ।

জুনাইদ আহ্মেদের ৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকার সম্পত্তিতে। জুনাইদ আহ্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ও আমার স্ত্রীর বেতন-ভাতা বেড়েছে। জীবনযাপনের বেশির ভাগ খরচ সরকারিভাবে মেটানো হয়। তাই সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।’

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/  ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮

NPLs soar 34pc to reach record high at Tk 993.7b

Classified loans 11.45pc of total due credit

Siddique Islam

The amount of classified loans in the country's banking sector reached an all-time high of nearly Tk 1.0 trillion in September ahead of the upcoming national election. The volume of non-performing loans (NPLs) jumped by nearly 34 per cent or Tk 250.67 billion to Tk 993.70 billion as on September 30, from Tk 743.03 billion as on December 31, 2017 despite close monitoring of the central bank.

The amount of classified loans was Tk 803.07 billion a year before.

Former Governor of Bangladesh Bank (BB) Salehuddin Ahmed opined that the next government should address the issue with top priority to continue the country's ongoing economic activities.

"Entire economy may face a negative impact, if the country's banking sector is in trouble," Dr. Ahmed told the FE while explaining the possible impacts of such a huge volume of NPLs.

However, the amount of NPLs increased by more than 11 per cent or Tk 100.30 billion to Tk 993.70 billion during the third quarter (Q3) of this calendar year, from Tk 893.40 billion in the preceding quarter (Q2), according to BB's latest statistics.

The share of classified loans also rose to 11.45 per cent of the total outstanding loans during the period under review from 9.31 per cent nine months ago.

The default loans include substandard, doubtful and bad/loss of total outstanding credits, which stood at Tk 8,680.07 billion as on September 30, 2018, from Tk 7,981.96 billion as on December 31, 2017. It was Tk 7,527.30 billion as on September 2017.

Senior bankers as well as the central bankers said the amount of classified loans in the banking system has increased during the period under review, as some borrowers did not make repayment of installments against their rescheduled loans.

They also said a portion of restructured large loans has already turned into classified ones that also pushed up the overall volume of NPLs in the banking system.

The central bank cleared proposals of 11 business groups for restructuring their large loans amounting to around Tk 153.26 billion.

A total of 22 commercial banks had earlier forwarded the proposals to BB for approving the loan restructuring on behalf of their clients.

"We expect that the volume of NPLs will decrease in the final quarter of this calendar year," BB executive director and spokesperson Md. Serajul Islam told the FE.

He also said the commercial banks will have to strengthen recovery drives across the country to reduce their volume of NPLs.

During the period, the total amount of NPLs with six state-owned commercial banks (SoCBs) rose to Tk 480.80 billion, from Tk 373.26 billion as on December 31, 2017. It was Tk 428.52 billion in Q2 of this calendar year.

On the other hand, the total amount of classified loans with 40 private commercial banks (PCBs) reached Tk 436.66 billion in Q3, from Tk 293.96 billion in the final quarter of last year. It was Tk 389.75 billion as on June 30.

The NPLs of nine foreign commercial banks (FCBs) rose to Tk 23.82 billion during the period under review, from Tk 21.54 billion in Q4 of 2017. It was Tk 22.71 billion in Q2 of this calendar year.

The classified loans with two specilised banks (SBs), however, came down to Tk 52.41 billion in Q3 of 2018, from Tk 54.26 billion nine months before. It was Tk 52.41 billion in Q2 of this calendar year.

Echoing the BB official, Syed Mahbubur Rahman, Chairman of Association of Bankers, Bangladesh (ABB), said the volume of NPLs will decline in Q4 of this calendar year following strengthening of overall recovery drives.

"Historically, the amount of NPLs drops in the final quarter of any calendar year," added Mr. Rahman, also Managing Director and Chief Executive Officer of Dhaka Bank Limited.

  • Courtesy: The Financial Express/ Dec 06, 2018

অর্থপ্রাপ্তির পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংক

হাছান আদনান

অনিয়ম-দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত বেসিক ব্যাংকে গত চার বছরে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে সরকার। এর পরও গত পাঁচ বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি নিট লোকসান দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ব্যাংকটি প্রায় ১২০ কোটি টাকা পরিচালন লোকসানে আছে। দুই দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, যোগ্যতা শিথিল করেও ব্যাংকটির জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পাওয়া যাচ্ছে না। এমডিশূন্য ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে একজন মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) নেতৃত্বে।

বিপর্যস্ত নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংককে উদ্ধারে এরই মধ্যে ৭১৫ কোটি টাকা মূলধন দিয়েছে সরকারি চার ব্যাংক ও এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বন্ড কেনার নামে আরো ৫০০ কোটি টাকা মূলধন দেয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তার পরও বিপর্যয় কাটাতে পারছে না বেসরকারি ব্যাংকটি। এখনো আমানত ফেরত পাওয়ার আশায় ব্যাংকটির শাখায় শাখায় ঘুরছেন গ্রাহকরা। আমানত ফেরত পায়নি পরিবেশ মন্ত্রণালয়, জীবন বীমা করপোরেশন, চট্টগ্রাম বন্দরসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর ৫১ কোটি টাকা নিট লোকসান দেয়া ফারমার্স ব্যাংকের লোকসানের পাল্লা চলতি বছরে আরো ভারী হচ্ছে। এরই মধ্যে ব্যাংকটির প্রায় ৩০ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক দুটি থেকে ঋণের নামে বের করে নেয়া হাজার হাজার কোটি টাকা উদ্ধার করা যাচ্ছে না। এ কারণে বড় অংকের অর্থ জোগান দিয়েও ব্যাংক দুটিকে টেনে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।

অনিয়ম-দুর্নীতির পর বেসিক ব্যাংককে টেনে তুলতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় আলাউদ্দিন এ মাজিদকে। ব্যাংকটির একসময়কার ব্যবস্থাপনা পরিচালকও (এমডি) তিনি। বেসিক ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ব্যাংকটিকে টেনে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত ফলাফল সুখকর নয়। বেসিক ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ অর্থ বেরিয়ে গেছে, সরকারের দেয়া মূলধন তার তুলনায় অনেক কম। এখন পর্যন্ত সরকার ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়েছে। বেসিক ব্যাংকে যে পরিমাণ অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, তা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আরো সময় লাগবে।

আবদুল হাই বাচ্চুর নেতৃত্বে লুটপাটের শিকার বেসিক ব্যাংক গত পাঁচ বছরে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা নিট লোকসান দিয়েছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১২০ কোটি টাকা পরিচালন লোকসান হয়েছে। পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে গত আগস্টে বেসিক ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ আউয়াল খান পদত্যাগ করেন। তারপর নতুন এমডি নিয়োগ দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ব্যাংকটি। কিন্তু শর্ত শিথিল করেও ওই দফায় যোগ্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপর আবারো এমডি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বেসিক ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করছেন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আহমেদ হোসেন।

বেসিক ব্যাংকের বিতরণকৃত প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৯ হাজার কোটি টাকাই নাম লিখিয়েছে খেলাপির খাতায়। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের ৬০ শতাংশই বর্তমানে খেলাপি। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার সঞ্চিতি ঘাটতিতে রয়েছে বেসিক ব্যাংক।

ঋণ কেলেঙ্কারিতে বিপর্যস্ত ফারমার্স ব্যাংককে উদ্ধারে ৭১৫ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এ অর্থের বড় অংশই খরচ হয়ে গেছে ভবনের ভাড়াসহ বিভিন্ন খাতে বকেয়া পরিশোধে। এছাড়া আগে থেকেই মেয়াদি আমানত ও কলমানি হিসেবে ফারমার্সকে ধার দেয়া প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা আটকে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের। যদিও এখন পর্যন্ত লুণ্ঠনের শিকার ফারমার্স ব্যাংকে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি। পরে ফারমার্স ব্যাংকে ৫০০ কোটি টাকা ঢালার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ও আইসিবি। ফারমার্স ব্যাংকের বন্ড কেনার মাধ্যমে এ অর্থ দেয়া হবে।

ফারমার্স ব্যাংকের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ ব্যাংকটির সঙ্গে সম্পৃক্তরাও। জুন পর্যন্ত ফারমার্স ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ৩০ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। খেলাপি হওয়া ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। ফারমার্স ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা বের করা হয়েছে মূলত মতিঝিল ও গুলশান শাখার মাধ্যমে। এর মধ্যে মতিঝিল শাখার ঋণ প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি ও গুলশান শাখার ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

ফারমার্স ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে যাত্রার পর ব্যাংকটি নিট মুনাফা করেছিল প্রায় ৪ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে মুনাফা হয় ৩ কোটি, ২০১৫ সালে ২১ কোটি ও ২০১৬ সালে ২৩ কোটি টাকা। এরপর ২০১৭ সালে এসে লোকসান হয় ৫৩ কোটি টাকা।

চরম আর্থিক সংকটে পড়ে গেলে গত বছরের ২৭ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক মাহাবুবুল হক চিশতীকেও পদ ছাড়তে হয়। এরপর ১৯ ডিসেম্বর দায়িত্বে অবহেলা ও ব্যাংক পরিচালনায় ব্যর্থতার দায়ে ব্যাংকের এমডি একেএম শামীমকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে ব্যাংকটির এমডির দায়িত্ব পালন করছেন এহসান খসরু। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের অবস্থা কিছুটা খারাপ হওয়ায় আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে। তবে শিগগিরই গ্রাহকদের ভালো কিছু সংবাদ দিতে পারব। সরকারি ব্যাংক থেকে এখন পর্যন্ত মূলধনের ৭১৫ কোটি টাকা পেয়েছি। বন্ড বিক্রির যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তা চলমান রয়েছে। তবে আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে বেশ সাড়া পাচ্ছি। আমাদের নতুন পণ্য সুপার বেনিফিট স্কিম ও কোটিপতি স্কিমে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। গত মাস পর্যন্ত আমাদের ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকার আমানত হয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত এটি ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে।

এখনো ঋণ বিতরণ হচ্ছে না জানিয়ে এহসান খসরু বলেন, আমরা এখন শুধু ঋণ পুনরুদ্ধারে মনোযোগী। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ৫৬১ কোটি টাকার ঋণ পুনরুদ্ধার হয়েছে। এর বিপরীতে এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করেছি। তবে এফডিআরের বিপরীতে কিছু ঋণ দেয়া হচ্ছে। আমানত সংকট কাটিয়ে ২০১৯ সালের জুন থেকে ঋণ বিতরণ শুরু করতে পারব বলে আমরা আশা করছি। তবে ব্যাংকের মুনাফা পেতে কিছুটা সময় লাগবে।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮

Enforced disappearance, extrajudicial killing must stop

Editorial

THE call that victims and families of the victims of enforced disappearance, extrajudicial killing and custodial torture put at a programme in front of the National Press Club in Dhaka on Tuesday seeking an end to such crimes is a point to ponder. The programme, attended by about 30 victims and their families banded under a platform called Mayer Dak, or mother’s call, is a reminder that such crimes against humanity continue apace, without the authorities concerned making any significant move to stop the incidents. Mid-November media reports show that 273 people, suspected of being involved in trading in narcotics, were killed in the drive against drug substances that began in the middle of May. The victims are reported to have died either in gangland infighting or in ‘gunfight’ with the law enforcement agencies. While the law enforcers prefer to cloak the incidents in narratives that people these days hardly buy into as the way the victims are killed raises question about the veracity of the narratives. Early October reports also show that the number of victims of enforced disappearances doubled in September, with 30 going missing, compared with 28 who went missing in January–August.

The Asian Legal Resource Centre in its report, submitted to the UN Human Rights Council in view of its September session, says that 432 people fell victim to enforced disappearances between January 2009 and July 2018. The report also says that a fourth of the victims, reported to have been picked up by personnel of various security and law enforcement agencies, land in police custody long after they went missing while others remain traceless. The luckiest of the victims landing in jail could walk out of confinement but they all maintained an eerie silence about the incidents. The police at the same time are reported to be reluctant at recording any case about the involuntary disappearances. And even if the police do record cases, they almost never roll down to investigation as the police, till then, are reported to have investigated only one such case in the preceding 10 years. The victims, rights defenders and legal experts all put the spate of enforced disappearance down to impunity, coupled with political blessings, that the perpetrators enjoy. The narratives of incidents of both extrajudicial killing and enforced disappearances in almost all the cases being similar and the reported presence of law enforcers, in uniforms and in plain clothes, in many of them have lent credence to the popular perception of the involvement of law enforcement agencies in the incidents.

The government showing unwillingness to resolve the issues only tends to consolidate the public opinion about the perpetrators. The government must resolve the mystery of enforced disappearances, set right the incidents of extrajudicial killing and end torture in custody. All these incidents harm the rule of law and hamper justice dispensation. The government must set about independent investigation of each of the cases of enforced disappearances and extrajudicial killing, preferably by setting up a judicial commission, to deterrently stop the practice. Political parties contesting the next general elections should also have the agenda to criminalise enforced disappearances and extrajudicial killing. 

  • Courtesy: New Age/ Dec 06, 2018

Strange scrutiny of nomination papers

Editorial

Election officials should act prudently

The record number of nomination papers being rejected may be attributed to the fact that a huge number of candidates are vying to contest this election. However, this does not change the fact that opposition candidates—often the top ones—were declared ineligible by the Election Commission rather disproportionately. So far, the nominations of nearly a quarter of opposition alliance candidates have been revoked, while only three candidates from the ruling party suffered the same fate.

Some nomination papers were rejected because they lacked information that could easily be fixed or verified. Some candidates were declared ineligible because they hold public office, although relevant laws and provisions do not explicitly put any restriction on them. Some nomination papers were cancelled simply because the signature of the candidate was missing.

The candidacy of Reza Kibria, an opposition candidate, for example, was invalidated by election officials for an outstanding credit card payment of Tk 5,500, while a number of serious loan defaulters aligned with the governing party had their nomination papers approved.

Some candidates who defaulted on massive amounts of loans are evading the electoral rules and regulations either with a court stay order or with the connivance of the bank and regulatory authorities, who illegitimately rescheduled the loans.

The people of this country deserve better than unscrupulous individuals to be their representatives. They want honest candidates with impeccable credentials to represent them in the parliament.

We call on the election officials to adhere to the Representation of the People Order (RPO) judiciously but not mechanically. They shouldn't act in a way that will question their neutrality.

  • Courtesy: The Daily Star/ Dec 06, 2018