Search

Sunday, December 9, 2018

সাত বছর শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা পেল বিদ্যুৎ কোম্পানি - ব্যক্তিখাত নয়, পিডিবিকে সুবিধা দেয়া হোক

সম্পাদকীয়

দ্রুত উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যুৎ নিশ্চিতে দেশে বিদ্যুৎ খাতে ব্যক্তিখাতকে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল। সাময়িক সংকট কাটাতে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল বেসরকারি কোম্পানির ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের। বর্তমানে বেসরকারি কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ৮৯। সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর নিট মুনাফার মার্জিন প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। ব্যবসায় লগ্নিকৃত মূলধন ও ব্যবহূত সম্পদের বিপরীতে রিটার্নেও এগিয়ে রয়েছে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র। যদিও বেসরকারি এসব কোম্পানিকে আরো সুবিধা দেয়ার নীতি অব্যাহত রাখা হয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ খাতের এসব কোম্পানির জন্য কর অবকাশ সুবিধার মেয়াদ বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বিদ্যমান তিন বছরের পরিবর্তে সাত বছর শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সংস্থাটি। প্রাথমিক অবস্থায় এ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণে এ ধরনের সুবিধার প্রয়োজনীয়তা ছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবসায় যুক্ত প্রতিটি বেসরকারি কোম্পানিই এখন মুনাফার ধারায় রয়েছে। সেই বিবেচনায় এসব কোম্পানির জন্য এ মুহূর্তে কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার কোনো উপযোগিতা ও যৌক্তিকতা নেই। কাজেই আমরা চাইব, অযৌক্তিক সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনাপূর্বক লাভজনক প্রতিষ্ঠানের কর অবকাশ সুবিধা প্রত্যাহারে কার্যকর উদ্যোগ নেবে সরকার। এক্ষেত্রে পিডিবিকে সুবিধা জোগানো যেতে পারে। তাহলে এর সুবিধা গ্রাহক সরাসরি পাবে। আর কোম্পানিকে এ সুবিধা দিলে তাদের মুনাফাই স্ফীত হবে।

আমরা দেখছি বিদ্যুৎ খাতে সরকার অব্যাহতভাবে ভ্রান্ত পথে হাঁটছে। সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে উপেক্ষা করে দ্রুত ও সহজে স্থাপন করা যায় বলে ব্যয়বহুল হলেও তরল জ্বালানিভিত্তিক বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্যুৎ সংকটের সাময়িক সমাধান ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে স্থায়ী রূপ নিয়েছে। প্রতি বছরই দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর বাড়তি উৎপাদন ব্যয়ের অজুহাতে বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে পিডিবিকে কিনতে হচ্ছে বেশি দামে বিদ্যুৎ। ফলে লোকসান বাড়ছে সংস্থাটির, যার পরোক্ষ প্রভাব ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি। মূলত সরকারের অদক্ষতার দায়ই এখন জনগণকে বহন করতে হচ্ছে।

এদিকে জনগণ প্রত্যাশিত সুফল না পেলেও বিদ্যুৎ খাত বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য হয়ে উঠেছে লাভজনক ক্ষেত্র। বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবসায় তাদের মুনাফা বাড়ছে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠান লাভজনক হলে কর অবকাশসহ সরকারি ভর্তুকি প্রত্যাহার করা সমীচীন। কিন্তু বাংলাদেশে বিরাজ করছে উল্টো চিত্র। চলতি বছর থেকেই ২০ শতাংশ হারে আয়কর প্রদানের কথা থাকলেও সরকারের সিদ্ধান্তে বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কর অবকাশ সুবিধা আবার বাড়ানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি তাহলে একচোখাভাবে বেসরকারি খাতের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীকে আরো বাড়তি মুনাফা উপার্জনের সুযোগ করে দিতে আগ্রহী? এমনটি হলে তা স্পষ্টত রাষ্ট্রীয় সমতা নীতির পরিপন্থী।

  • কার্টসিঃ বনিক বার্তা/ ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ 

Leave banks alone

Top economists urge politicians not to interfere in banks any further; CPD shows Tk 22,000cr plundered thru' scams, Tk 1 lakh cr stuck as nonperforming loans


The most debated topic right now outside politics is probably the banks laden with around Tk 100,000 crore in nonperforming loans and at least Tk 22,000 crore taken out through scams in recent years. This is a roll back on the improvement achieved in the 1990s through reform programmes.

And yesterday, the country's top economists and bankers called on the politicians to pledge not to further interfere in banks, the heart of the economy, if Bangladesh must move on as a middle-income country.

They observed that the banking sector was now passing through “the worst time ever” that needs to be corrected with stern decisions.

Major scams cost banks Tk 22,502cr: CPD

“Breaching of rules and regulations has been pulling down the banks continuously,” Wahiduddin Mahmud, former adviser to a caretaker government and an eminent economist, said yesterday.

“Please leave the banks alone…. When the country's economy grew faster in the last decade, the banking sector, the heart of the economy, is the only sector which sees decline in terms of breaching rules instead of improvement,” he said.

According to former deputy governor of the Bangladesh Bank Khondokar Ibrahim Khaled, banks are in their “worst state” now.

“The central bank is unable to look after the interest of the depositors. We need to raise voice against the political interference in banks,” he told a dialogue organised by the Centre for Policy Dialogue at a city hotel.

Zahid Hussain, lead economist of the World Bank's Dhaka office, said there had been a nexus of regulators, bankers and big borrowers.

“The risk of our inaction is very high because of the bleeding happening in the banking sector,” he warned.

Debapriya Bhattacharya, a distinguished fellow at the Centre for Policy Dialogue, called on political parties to pledge in their manifestos not to interfere in the banking sector and carry out reforms to bring the banks from their brink.

He also announced that the CPD would form a citizen's commission on the banking sector after the election to find out the reasons behind the current state of the banks and suggest remedies.

The experts came together at a dialogue on “What Do We Do with the Banking Sector of Bangladesh”.

At the beginning, Fahmida Khatun, executive director of the CPD, gave a presentation on how the banks slid backwards in the last few years in terms of capital adequacy, nonperforming loans and asset quality.

She showed that the Tk 22,502 crore lost through scams could foot 78 percent of the cost of the Padma Multipurpose Bridge or 20 percent of the work of the Rooppur Nuclear Power Plant's main project.

Depositors lost their confidence in the banking sector, with many heard asking these days from which bank they will get back their deposits safely, said Wahiduddin Mahmud.

Such a situation has been created as politically influential people take loans violating banking norms and become defaulters, and then they get away with it, he added.

After the 1990s, some private banks saw improvements in line with international standards. Banking rules were strict then, but now the sector is moving backward because of lax rules, he said.

Under the law, loan defaulters cannot contest elections, but some influential candidates are getting exemptions, he said.

The deterioration is continuous and the performance indicators of the banks are degrading every year, said Ibrahim Khaled.

Bank owners arrange only 7 to 9 percent working capital and more than 90 percent of it come from depositors, who have no representatives in the bank board to protect their interest. The central bank is responsible for protecting depositors' interest, but it has apparently failed to do that, said the former deputy governor of the BB. 

According to international practice, governors never sit with bank owners to discuss central bank's regulations. But the BB governor attended a meeting with the bank owners at a hotel recently and made a decision about slashing the Cash Reserve Ratio, which is a regulatory tool to control the money market, he added. 

On the other hand, the BB had taken an initiative to implement the Bank Company Act to make sure that not more than two members of a family are on bank boards. But the government changed the law to favour bank owners, allowing four members from a single family in the board, Ibrahim Khaled said.  

He recommended doing a survey to get the real picture of the sector after formation of a new parliament after the election.

And the governor must be appointed by the president and the BB has to be completely free from finance ministry's influence, he said.

Former BB governor Salehuddin Ahmed said although the banking sector did not collapse, it has developed cracks for a lack of good governance.

The main problem of the sector is the perverse incentives given to the big borrowers, he said, adding that regulatory failures must be addressed to come out of such practice.

Professional economic decisions require political resolves, the noted banker observed.

Zahid Hussain warned that continued support by the BB to “un-willful” defaulters could create some willful defaulters. 

“We are on the wrong path and dependency on the wrong path is increasing,” he said, asking the authorities to correct those. 

He recommended establishing a uniform regulatory framework and ensuring autonomy of the central bank. “Political will is needed to change the situation.”

The Farmers Bank collapsed because of the interference of a politically influential director in the board, said Md Ehsan Khasru, managing director of the troubled bank.

One director of the bank was more powerful than the central bank, he said, in an indirect reference to Awami League lawmaker Muhiuddin Khan Alamgir.

In November last year, Alamgir, who was chairman of the bank, was forced to resign.

“I don't know whether the director was personally behind the anomalies or if he was encouraged by others around him,” Ehsan said.

Leadership did not grow in the banking sector due to the meddling of the board members, he added.  

  • Courtesy: The Daily Star /Dec 09, 2018

Preserve our open spaces

Editorial

Car-free street initiative was a much-needed reminder


It was refreshing to see that the children of this city were given a chance to play in a car-free street on Manik Mia Avenue last Friday. The whole place was abuzz with their joyful chatter, although only for three hours. The initiative was very nice and well-thought-out. However, the event has also brought to light the fact that this city has been losing its open fields and playgrounds by the day, depriving our children of the joys of sports and physical activities.

Dhaka city has witnessed rampant grabbing of open spaces and playgrounds over the years. Some of the fields and open spaces have been turned into community centres, residential plots and kitchen markets. With more and more open spaces being grabbed, the children of this city are living in the confines of their homes spending more time with electronic gadgets and in front of TVs, which is seriously impeding their physical and mental development. What is more, many of the schools in the city do not even have proper playgrounds for the students. According to a BBS survey, only two percent of Dhaka children have access to playgrounds.

Therefore, we must ensure that our children enjoy all the charms of childhood, and have more open spaces to play and breathe in. For that, we must preserve the remaining open spaces, parks and playgrounds and recover those that have already been taken over by influential quarters. While we hope to see more initiatives such as the car-free street mentioned earlier, we also want the city authorities to make sure that there is at least one playground in every neighbourhood.

  • Courtesy: The Daily Star/ Dec 09, 2018

যেভাবে ঘোষিত হলো খালেদা জিয়ার আপিলের রায়


বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ফেনী-১, বগুড়া-৬ এবং বগুড়া-৭ আসনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের আপিল শুনানির তৃতীয় দিনে আজ (৮ ডিসেম্বর) এই রায় দেওয়া হয়। আপিল শুনানিতে চার-এক ভোটে খালেদার মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

রায় ঘোষণার সময় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, আমার রায়, আইনগত বিবেচনায় বেগম খালেদা জিয়ার আপিল মঞ্জুর করার পক্ষে প্রদান করলাম। খালেদার পক্ষে উপস্থিত আইনজীবীরা তখন উল্লাস করে হাততালি দেন।

এসময় ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ লাউড স্পিকারে বলতে থাকেন- এটি ফুল কোর্টের রায় নয়।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, যে কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত লোকের মনোনয়ন বিবেচনা করতে পারি না। আমার রায় হলো-এই আপিল মঞ্জুর করা যায় না। নামঞ্জুর করা হলো। এবার আরেক দল হাততালি দেন।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী বলেন, সংবিধানের ৬৬ ধারা অনুযায়ী এ আপিল নামঞ্জুর করা হলো।

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, এখন পর্যন্ত দণ্ড বহাল আছে, রিটার্নিং কর্মকর্তার অর্ডারের যে বক্তব্য এবং স্পিরিট দেখছি, দণ্ডপ্রাপ্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত হিসেবে আপিল নামঞ্জুর।

শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, কবিতা খানম এবং রফিকুল ইসলামের নাম উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, দণ্ড বহাল আছে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আমি সে প্রেক্ষিতে আপিল নামঞ্জুর করলাম।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ পরে ঘোষণা করেন, পাঁচজন মাননীয় নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে চারজন আপিল আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। একজন মঞ্জুর করেছেন বিধায় চার-এক ভোটে আপিল আবেদন না মঞ্জুর ঘোষণা করা হলো।

খালেদার আপিলের পক্ষের আইনজীবী মাহবুব উদ্দীন খোকন বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার অভিযোগ ছিল-খালেদা জিয়া নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধ করেন নাই। শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তিনটা আপিল মঞ্জুর করেছেন। খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আর কোনো আইনগত বাধা নাই। গত তিনদিন আমরা দেখেছি, আপিল শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কখনো সিইসি, কখনো অন্যান্য কমিশনাররা রায় ঘোষণা করেছেন। তারা কমিশনের সকলের পক্ষ থেকেই রায় ঘোষণা করেছেন। সবাই ধারণা করেছিল মাহবুব তালুকদারে রায় সবার রায়। এবং সেই রায়ে বেগম খালেদা জিয়ার তিনটি মনোনয়নপত্রই বৈধ করেছেন।

একবার রায় ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর, দ্বিতীয়বার রায় ঘোষণার কোনো সুযোগ নাই। গত তিনদিনের আপনারা দেখেছেন, দ্বিতীয় রায় হয়েছে? নির্বাচন কমিশনের এখানে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। মাহবুব তালুকদার যে জাজমেন্ট দিয়েছেন সেটা লিগ্যাল জাজমেন্ট, ফেয়ার জাজমেন্ট। আমরা আইনগত দিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে উচ্চ আদালতে যাওয়া যায় কি না, এ বিষয়ে কনভিন্স হলে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা বিশ্বাস করি উচ্চ আদালত তার মনোনয়নপত্র বৈধ করবে।

  • Courtesy: The Daily Star /Bangla / Dec 09, 2018

গুম, মানবাধিকার ও নির্বাচন

কামাল আহমেদ

১৩ অক্টোবর, শনিবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। পত্রিকার অন্তত একটি খবর অনেকের মন ভালো করে দিয়েছিল। খবরটি ছিল, আগের রাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্যে তো মন ভালো হওয়ারই কথা।

টিভির ব্রেকিং নিউজ স্ক্রলে এই অংশটুকুর পর আমাদের অধিকাংশেরই আর কিছু জানার প্রয়োজন পড়েনি। সংবাদপত্রের শিরোনামেও মোটামুটি খবরের মূল কথাটা চলে এসেছে। পুরো খবরটা সবার আর পড়ার প্রয়োজন হয়নি। যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা জেনেছেন বিভিন্ন অঞ্চলের মোট ১৮টি শূন্য আসনের নির্বাচন হয় একসঙ্গে। এর মধ্যে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আসন ছিল ৫ টি। সর্বোচ্চ ১৮৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে ভারত, আর বাংলাদেশ পেয়েছে ১৭৮। বাকিরা হলো বাহরাইন, ফিজি ও ফিলিপাইন। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে তিন বছর এসব দেশ ৪৭ সদস্যের মানবাধিকার পরিষদের নির্বাহী সদস্য হিসেবে কাজ করবে।

জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে বাংলাদেশ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর যাঁরা ধারণা করছেন বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির নাটকীয় উন্নতি হবে, বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠবে, তাঁদের আশা পূরণের উপায় কী? নির্বাচনী ডামাডোলে সে রকম কোনো আলোচনা কেউ কি শুনেছেন? ৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে গুমের শিকার পরিবারগুলোর সদস্যদের কান্নাভেজা আর্তির খবর ভোটের হাওয়ায় অনেক কাগজেই খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। বিচারবঞ্চিত এসব পরিবারের মর্মব্যথা যে কতটা তীব্র তার অভিব্যক্তি পাওয়া যায় ছোট্ট মেয়ে আফসানা ইসলাম রাইদার কথায়। রাইদা বলেছে, ‘আমাকেও নিয়ে যেতে দিন, গুম করে দিন। তাহলে আমি আমার বাবাকে দেখতে পাব।’

গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’–এর যোগাযোগের তালিকায় যে ১৭০টি পরিবারের কথা নিশ্চিতভাবে জানা যায় (ডেইলি স্টার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮), সেসব পরিবারের মানবাধিকারের স্বীকৃতি দিতে না পারলে বৈশ্বিক পরিসরে নৈতিক অবস্থান গ্রহণ আদৌ কি সম্ভব?

অবশ্য বলে রাখা ভালো, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্যপদে নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সদস্যরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতির গুণগত মানের সম্পর্ক সামান্যই। সদস্যদেশগুলোর তালিকা দেখলেই তা স্পষ্ট হবে। বৈশ্বিক পরিসরে কাজ করে যেসব মানবাধিকার সংগঠন, সেগুলোর পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরেই এই নির্বাচনপদ্ধতির দুর্বলতার বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে। চলতি বছরে এশিয়া থেকে যেসব দেশ সদস্য রয়েছে, তার মধ্যে আছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীন। অক্টোবরের এই নির্বাচনের পরও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বৈশ্বিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জাতিসংঘবিষয়ক পরিচালক লুইস সারবোনো টুইটারে এই নির্বাচনকে তামাশা বলে অভিহিত করেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অনেক দিন ধরেই ফিলিপাইনের মাদকবিরোধী অভিযানে শত শত মৃত্যুর নিন্দা করে আসছে।

মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনকারী কিছু দেশের জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনে অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও অস্বস্তির পটভূমিতে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মানবাধিকার পরিষদ। এই পরিষদ গঠনের উদ্দেশ্য ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোতে বিশেষ তদন্ত অনুষ্ঠান, জাতিসংঘের সব সদস্যরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনা এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে স্বাধীন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে তাদের সুপারিশ ও সহায়তা গ্রহণ করা। কিন্তু এখন এই মানবাধিকার পরিষদের সদস্যদের নির্বাচন–প্রক্রিয়াও বিতর্কের মুখে পড়ছে।

রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা অথবা অন্য কোনো কারণে সংবাদমাধ্যম এসব ক্ষেত্রে সংবাদের বিস্তারিত পটভূমি ব্যাখ্যা না করায় একধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়। যেমনটি এ ক্ষেত্রেও ঘটেছে। সেদিনের খবরে যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি বাদ গেছে তা হলো, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পাঁচটি আসনে প্রার্থীই ছিল পাঁচটি দেশ। অঞ্চলভিত্তিক কূটনৈতিক তৎপরতার পরিণতিতে ভারত, বাংলাদেশ, বাহরাইন, ফিলিপাইন এবং ফিজি ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্রই এই সদস্যপদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেনি। বলাই বাহুল্য, এই পাঁচটি দেশের মধ্যে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ফিজি বাদে বাকি চারটিই মানবাধিকার বিষয়ে সাম্প্রতিক কালে জোর সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে। ভিন্নমত দমন, গুম, বন্দুকযুদ্ধ, নিবর্তনমূলক আটকাদেশ, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং নাগরিক সংগঠন বা এনজিও কার্যক্রমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের মতো বিষয়গুলোতে এসব দেশের পরিস্থিতিতে অনেক মিল পাওয়া যাবে।

তবে কূটনৈতিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এসব সদস্যপদে বিজয়ী হওয়ার বাইরেও গণমাধ্যমের নজরে আসেনি যে বিষয়টি তা হলো, বাংলাদেশ এই পদে নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সুনির্দিষ্ট যেসব অঙ্গীকার করেছে সেগুলোর কথা। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন গত ১৪ জুন সাধারণ পরিষদের সভাপতির কাছে লিখিতভাবে বাংলাদেশের পক্ষে এসব স্বেচ্ছামূলক অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি পেশ করেন। জাতীয় ক্ষেত্রে প্রায় দুই ডজন এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ডজনখানেক অঙ্গীকার প্রতিপালনের কথা বলার পরপরই সেসবের অনেকগুলোয় শুরু হয়েছে উল্টোযাত্রা।

মানবাধিকার পরিষদের সদস্যপদে যেদিন বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়, ঠিক সেই সপ্তাহেই সংসদে অনুমোদিত হয় এযাবৎকালের সবচেয়ে নিয়ন্ত্রণমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। অথচ সরকার তার জাতীয় অঙ্গীকারে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, মুদ্রণ, ইলেকট্রনিক ও সামাজিক মিডিয়ায় সব পর্যায়ে মানবাধিকারের সর্বোচ্চ প্রসার ঘটানোর কথা বলেছে। একই সঙ্গে নাগরিক সমাজের ভূমিকা, যা এনজিও নামেই অধিক পরিচিত, তার গঠনমূলক ভূমিকা জোরদার করার কথাও বলেছে। অথচ বাস্তবে এনজিওগুলোর প্রতি সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের বৈরিতা বেড়েই চলেছে। সরকারের সমালোচনা ও জবাবদিহির প্রশ্ন তুললেই সেই এনজিওর কার্যক্রমে বাধা দেওয়া হয়। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রেও একাধিক এনজিওকে কাজ করতে দেওয়ার প্রশ্নে আপত্তি জানানো হয়েছে।

সরকারের অঙ্গীকারের মধ্যে আছে সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং মানবাধিকারবিষয়ক যেসব সনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে, সেগুলো পুরোপুরিভাবে প্রতিপালন করা। এসব সনদের মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত হচ্ছে রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারবিষয়ক সনদ, আইসিসিপিআর। কিন্তু বিরোধী দলের বৈধ রাজনৈতিক কার্যক্রম, সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানে বিঘ্ন সৃষ্টি এবং নানা অজুহাতে অনুমতি না দেওয়ার চর্চা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। বন্ধ হয়নি কথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর মিছিল কিংবা গুম। জাতিসংঘে দেওয়া অঙ্গীকারে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার গুমবিষয়ক গ্রুপের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে জানালেও দেশের বাস্তবতায় তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর সময়কালে দেশে গুমের শিকার হয়েছেন ২৬ জন, আর ক্রসফায়ারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন ৪৩৭ জন। আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাবে শুধু অক্টোবর মাসেই গুম হয়েছেন ১৩ জন এবং ক্রসফায়ারের শিকার হয়েছেন ১৯ জন। ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়, অতীতের মামলার অজ্ঞাতনামা আসামির তালিকায় নাম যুক্ত করা, গায়েবি মামলার রেকর্ডে যে চিত্র মেলে তাতে ওই সব অঙ্গীকার অর্থহীন হয়ে পড়ে।

সরকারের এই অঙ্গীকারনামার একটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিক সহায়তার বিষয়টির উল্লেখ। বিবৃতির শুরুতে একটা বড় অংশজুড়ে তুলে ধরা হয়েছে প্রায় ১০ লাখ নির্যাতিত রোহিঙ্গার আশ্রয় এবং ভরণপোষণের ভার গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ কীভাবে তার আন্তর্জাতিক মানবিক দায়িত্ব পালন করছে। অঙ্গীকারনামার শুরুতেও এই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের এসব নাগরিক নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে নিজেদের দেশে না ফিরে যাওয়া পর্যন্ত তাদের আশ্রয় দেওয়া হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব কর্মসূচি হাজির করবে, সেসব কথিত ভিশন বা দৃশ্যকল্পে মানবাধিকার প্রসঙ্গ কতটা গুরুত্ব পাবে? এত দিন যেসব অন্যায়-অবিচার ঘটেছে, সেগুলোর বিচার বা প্রতিকার মিলবে কি? মানবাধিকার সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গের যে নজির তৈরি হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি বন্ধ না হলে বিশ্বসভায় মানবাধিকারের পক্ষে লড়াইয়ের অঙ্গীকার হবে প্রহসনেরই নামান্তর।

কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮

Scams cost banking sector Tk 225b in 10 yrs - CPD

Think-tank to set up citizens’ commission after next polls


Former caretaker government adviser Prof Wahiduddin Mahmud speaking at a dialogue on banking sector organised by CPD in the city on Saturday — FE photo

Experts at a seminar in the capital on Saturday called for finding ways to keep the banking sector away from "patronage politics".

The central bank needs to come out of the grip of the government and bank owners and should exercise much more autonomy in its functions, they said.

The views came at a dialogue on "What Do We Do with the Banking Sector of Bangladesh?" held in the city.

Leading think-tank Center for Policy Dialogue (CPD) organised the event.

"If there is one sector in the country which has seen deterioration over the years, especially in terms of transgression of laws-that sector is banking," said economist Wahiduddin Mahmud.

"But this sector is the heart of all the economic activities of the country," he said.

Dr Mahmud's comments came after the CPD researchers revealed the country has lost Tk. 225.02 billion (22,502 crore) during the last 10 years through major scams, irregularities and heists.

This amount is equivalent to 39 per cent of the tax revenue of the government during fiscal year 2017-18 as of May 2018, the CPD experts estimated.

This is also equivalent to 78.2 per cent of Padma Multipurpose Bridge or 64.3 per cent of Padma Bridge rail link, said executive director of CPD Fahmida Khatun in her keynote presentation.

This Tk. 225.02 billion would also be enough for funding the Dhaka mass rapid transit development project, she pointed out.

"We need to find ways of keeping the banking sector away from patronage politics or any illegal transaction," Professor Mahmud said.

"We also need to find ways of incentivising the politicians so that whoever comes to power in future, they will not use banks for any illegal or unethical financial gains", he added.

Professor Mahmud noted that back in the 1980s, the country started massive privatisation of the banking sector without properly putting in place the necessary control framework.

"Now we are doing the same mistake as we are moving towards massive merger and acquisition of the banks without any appropriate control framework," he pointed out.

"If not properly controlled, this may result in monopoly as too many banks will get into the hands of too few," the eminent economist warned.

"Ultimately, the whole economy will become captive to a few rich individuals as a result," he said.

Experts at the event also called for greater autonomy of the central bank.

"The legal and moral duty of restraining and regulating the bank owners and bank boards should ideally be bestowed upon the central bank", said banking sector specialist Ibrahim Khaled.

"But up until now, Bangladesh Bank has failed to perform that duty," the former deputy governor of the central bank said.

"In countries like India, the government never interferes in the operations of the central bank. But in case of Bangladesh, the picture is totally opposite," Mr Khaled said.

He argued that nowhere else in the world, the central bank governor would hold meetings with the private bank owners regarding the policy decisions to be taken by the central bank.

"But here in our country, Bangladesh Bank governor has reduced CRR after holding a meeting with private bank owners at a hotel," he said.

"In India, the central bank governor is accountable to parliament while in our country, the Bangladesh Bank governor is accountable to the Finance Ministry," Mr Khaled said.

The former deputy governor also expressed his anger at the recent amendment under which up to four members of the same family would be allowed to be on the bank board.

"Once the new parliament is formed next year, there should be a detailed discussion in parliament on the status of the banking sector based on a survey report," Mr Khaled said.

"At the same time, the central bank governor should be appointed by the President based on the recommendations from the parliament," he said.

"Finance Ministry should not give any instruction to the central bank-either orally or in writing," he added.

Former governor of Bangladesh Bank Dr. Salehuddin Ahmed, in his speech, called for the formation of an independent banking commission to resolve the ongoing problems in the banking sector.

"There should also be mergers within the banks as there are a huge number of banks with a few branches," he said.

"The central bank has lots of autonomy but that autonomy should be applied," the former BB governor said.

Distinguished fellow of CPD Dr Debapriya Bhattacharya said his organisation would form a citizen's commission after the election to identify and analyse the problems in the banking sector and to present them to the government.

Lead economist of the World Bank in Dhaka Dr. Zahid Hussain, in his speech, said there is a nexus between regulators, bankers and big borrowers, which has resulted in the current dilemmas in the banking sector.

"Instead of becoming a tool for financial inclusion, banks are becoming extractive institutions in the country", he said.

"Providing regulators with enough autonomy is not adequate. We also need to see whether the regulator is capable enough to exercise that autonomy," Dr. Hussain added.

"We need to distinguish between people who are willful defaulters and people who are defaulters for some valid reasons," said Dr. Shah Md. Ahsan Habib, director of Bangladesh Institute of Bank Management.

"People who are not willful defaulters need special support and special measures," he added.

  • Courtesy: The Financial Express/ Dec 09, 2018

নির্বাচন ও মামলা - আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের কাজে আইনের অপপ্রয়োগ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনের সময় এই কথাটা আমরা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বলতে চাই। কারণ, দেশবাসী যখন চাইছেন আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে ও ন্যায্যতার সঙ্গে সম্পন্ন হোক, তখন সরকারের প্রতিপক্ষ দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনের অপপ্রয়োগ আগের চেয়ে বেশি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এর ফলে বিরোধী দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভোট গ্রহণের দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের ওপর মামলাজনিত আইনি দুর্ভোগ বাড়তে থাকলে খোদ নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

নরসিংদী-১ সংসদীয় আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী খায়রুল কবিরের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের কাজে আইনের অপপ্রয়োগের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর পুলিশ নাশকতার অভিযোগে বিএনপির ২৭ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬(২) ধারায় একটি মামলা করে। মামলাটির এজাহারে খায়রুল কবিরের নাম ছিল না। গত ২৫ নভেম্বর পুলিশ ওই মামলায় ২৭৩ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র পেশ করে, সেই অভিযোগপত্রে খায়রুল কবিরের নাম যুক্ত করে। ২৯ নভেম্বর তিনিসহ তিন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে অন্য দুজনের জামিন মঞ্জুর হয়, কিন্তু খায়রুল কবিরকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, মামলাটি করা হয়েছে বিশেষ ক্ষমতা আইনের যে ধারায়, তা আজ থেকে ২৭ বছর আগেই বাতিল করা হয়েছে। খায়রুল কবিরের বিরুদ্ধে আইনের এই অপপ্রয়োগের কারণ খুব সম্ভব এই যে তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী।

বিএনপি থেকে মনোনীত তিনজন প্রার্থী এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলা আছে। ঢাকা-১২ আসনের বিএনপির প্রার্থী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা আছে ২৬৭টি। এই দল থেকে মনোনীত অন্তত পাঁচজন প্রার্থীর প্রত্যেকেই শতাধিক মামলার আসামি। খোদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধেই রয়েছে ৪৬টি মামলা।

কেউ অপরাধ করলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি কোনো রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে শত শত মামলা দায়ের করা হয়, এমনকি ৫০টি মামলাও দায়ের করা হয়, তাহলে অবশ্যই তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। সংবাদমাধ্যমগুলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে কীভাবে অনেক গায়েবি মামলা করা হয়েছে। থানার পুলিশ যদি সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা করে, মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কিংবা দিনের পর দিন হয়রানি করে, তাহলে আইন প্রয়োগব্যবস্থা তার নৈতিক শক্তিই হারিয়ে ফেলে। আমাদের দেশে সেই চর্চা জোরেশোরে চলছে বলেই প্রতীয়মান হয়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রধানত বিএনপি অংশ নেয়নি বলে সেটি দেশে-বিদেশে কোনো মহলেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে মিলে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে, তারা ইতিমধ্যে ২০৬ আসনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলেছে। এই প্রার্থীদের অধিকাংশই একাধিক মামলার আসামি, নির্বাচনের ঠিক আগে এসে যদি এসব মামলার অজুহাতে তাঁদের হয়রানি করা হয়, তাহলে জনগণের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাবে। ক্ষমতাসীন মহলে যদি আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পরাস্ত করার দুরভিসন্ধি জেগে থাকে, তবে তা এখনই পরিত্যাগ করা ভালো। 
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮

দশ কেলেঙ্কারিতে লোপাট ২২,৫০২ কোটি টাকা!


গত ১০ বছরে ব্যাংক খাতের ১০টি বড় কেলেঙ্কারিতে লোপাট হয়েছে ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। এসব কেলেঙ্কারি ঘটেছে মূলত সরকারি ব্যাংকে। সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক গ্রুপ দিয়ে শুরু হলেও সবচেয়ে বেশি কেলেঙ্কারি ঘটেছে জনতা ব্যাংকে। আরও রয়েছে বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ তথ্য প্রকাশ করেছে। আর এসব তথ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যেন ব্যাংকিং খাতকে অনিয়ম ও লুটপাটের হাত থেকে নিষ্কৃতি দেন। ব্যাংকিং খাতকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য ব্যবহার না করা হয়। আর ভবিষ্যতে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা যেন অর্থ লুটপাটের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যাংক খাতকে বেছে না নেন।

সিপিডির আয়োজনে গতকাল শনিবার ‘বাংলাদেশের ব্যাংক খাত নিয়ে আমরা কী করব’ শীর্ষক এই সংলাপ স্থানীয় একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সংলাপে আরও অংশ নেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান ব্যাংকার এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তারা। তাঁরা দেশের ব্যাংক খাতের দুরবস্থা, ঝুঁকি, সমাধানসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করেন। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। 

১০ বছরে ১০ কেলেঙ্কারি

মূল নিবন্ধে ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত ১০ বছরে জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট ও থারমেক্স গ্রুপ মিলে ১১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা হাতিয়েছে। বেসিক ব্যাংক থেকে বের হয়ে গেছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক থেকে হল-মার্ক নিয়ে গেছে ৩ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। বিসমিল্লাহ গ্রুপ নিয়েছে ১ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া রিজার্ভ চুরির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হারিয়েছে ৬৭৯ কোটি টাকা। নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ও ফারমার্স ব্যাংক থেকে লোপাট হয়েছে ১ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এবি ব্যাংক থেকে পাচার হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাতের এই ১০টি বড় কেলেঙ্কারিতে লোপাট হওয়া ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা দিয়ে কী করা সম্ভব, তারও একটি চিত্র তুলে ধরেছে সিপিডি। সেখানে বলা হয়েছে, এই টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের ৭৮ শতাংশ বা পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের ৬৪ শতাংশ ব্যয় নির্বাহ করা যেত। আবার সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে প্রায় ৪১ শতাংশ টাকার জোগান দেওয়া সম্ভব ছিল।

সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় ব্যাংক খাত

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংক খাতে জবাবদিহি নেই। সংক্রামক ব্যাধির মতো সরকারি ব্যাংকের সমস্যা বেসরকারি ব্যাংকে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা বড় উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশের ব্যাংক, পরিচালনা পর্ষদ ও তদারকি ব্যবস্থা টালমাটাল হয়ে গেছে। ব্যাংক ধ্বংস হলে কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। সুশাসনের প্রচণ্ড অভাব দেখা যাচ্ছে। যারা টাকা মেরে দিচ্ছে, তাদের কিছুই হচ্ছে না।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে শুধু ক্ষমতা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না, প্রয়োগ করতে জানতে হবে। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ করা কঠিন। ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানে স্বাধীন কমিশন প্রয়োজন।

সংলাপের সম্মানিত অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এযাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে ব্যাংক খাত, প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে। ব্যাংকের ৯০ শতাংশ অর্থের জোগান দেয় আমানতকারীরা। তাদের দেখার জন্য ব্যাংকে কেউ নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব আমানতকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করার। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এ দায়িত্ব পালনে অক্ষম। ধনী মালিকদের প্রাধান্য দিতে গিয়ে সাধারণ আমানতকারীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ আরও বলেন, সুদ নির্ভর করে বাজারের ওপর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে ব্যাংক মালিক সমিতির চেয়ারম্যান সুদহার নির্ধারণ করে দিলেন। বলা হলো, না মানলে এমডিদের চাকরি চলে যাবে। এসব কিসের আলামত? ব্যাংক খাত থেকে ভদ্রলোকদের সরিয়ে কি লুটপাটকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে? তাঁর পরামর্শ হচ্ছে, ব্যাংক খাত নিয়ে সমীক্ষা সংসদে তুলে ধরা প্রয়োজন। জাতীয় সংসদ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিয়োগ দেওয়া উচিত। তাহলেই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ জমিদারের ভূমিকায় থাকবে না। 

তিনজনের কারণে ঝুঁকিতে ২৩ ব্যাংক

আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জাতীয় নির্বাচনে ঋণখেলাপি প্রার্থীদের মনোনয়ন বৈধতা সম্পর্কে বলেন, প্রভাবশালী প্রার্থীদের ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ সৃষ্টি করে পুরোনো ঋণের কিছু অংশ পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে খেলাপি ঋণের পুনঃ তফসিল করা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি অত্যন্ত হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাজার থেকে শেয়ার কিনে যেকোনো ব্যাংকের মালিকানা নেওয়া যায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ কাঠামো না থাকায় এক ব্যবসায়ী গ্রুপ একচেটিয়াভাবে অনেকগুলো ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। পুরো অর্থনীতিকে কিছু ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি করে ফেলার একই ভুল যেন আবার না করি।

এই অর্থনীতিবিদের মতে, কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং খাতে উন্নয়নের বদলে অনুন্নয়ন হচ্ছে। অথচ এই খাতের মধ্য দিয়ে অর্থনীতি অগ্রসর হয়। এই প্রথম দেখা যাচ্ছে, আমানতকারীদের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে—কোন ব্যাংকে টাকা রাখলে তা নিরাপদ থাকবে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা অনিয়ম করে ঋণ নিয়েও পার পেয়ে যান।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ১০ জন বড় ঋণগ্রহীতার মধ্যে ৩ জন বিপদে পড়লে ২৩টি ব্যাংক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। এই খাতের সংস্কার আজ থেকে নয়, গতকাল থেকেই শুরু করা উচিত ছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ব্যাংকার ও বড় ঋণগ্রহীতার—এই চক্রে হাত দিতে হবে। বিপদগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে শর্তহীন পুনঃ অর্থায়ন করা হচ্ছে। মালিকদের পর্ষদে ছয় বছরের পরিবর্তে নয় বছর থাকার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এতে আমানতকারীরা ঝুঁকিতে পড়ছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি ইঙ্গিত করে জাহিদ হোসেন আরও বলেন, সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রকদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, এটি ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। আমরা এখন ভুল পথে আছি। যাঁরা ব্যাংক খাতকে নিয়ন্ত্রণ করবেন, তাঁদের স্বাধীনতা না দিলে কিংবা তাঁদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা না হলে, বইপত্রে এত কিছু লিখেও কোনো লাভ হবে না। সর্বোপরি, ব্যাংক খাত ঠিক করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন হবে।

ব্যাংক লুট করা একশ্রেণির ব্যবসায়ীদের ব্যবসা হয়ে গেছে—এই মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ। 

ফারমার্স ব্যাংকে ছিলেন ক্ষমতাশালী ব্যক্তি

ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এহসান খসরু সংলাপে বলেন, ‘ফারমার্স ব্যাংক পুনর্গঠন করা না হলে দেড় লাখ আমানতকারীর মধ্যে বিপর্যয় নেমে আসত। এতে নতুন আটটি ব্যাংকেও বিপর্যয় ঘটত। ব্যাংকের পচন শুরু হয় পর্ষদ থেকে। ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে কেউ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। সামাজিকভাবে ছোট করার আশঙ্কা, চাকরি চলে যাওয়ার ভয়—এসব কারণে আমরা তাদের (পরিচালনা পর্ষদ) সঙ্গে হাত মেলাতে বাধ্য হই।’

ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়ম রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিলম্বিত ভূমিকা প্রসঙ্গে এহসান খসরু বলেন, ফারমার্স ব্যাংকে তো বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি বসে ছিলেন। তিনি আবার সরকারের আর্থিক হিসাব কমিটিতেও ছিলেন। প্রসঙ্গত, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীর ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন।

ইস্টার্ণ ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখারের সুপারিশ হলো, স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠনের কোনো প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন স্বাধীনভাবে কাজ করা। ব্যাংক খাতের কিছু জায়গায় ব্যর্থতা আছে, তবে সাফল্যের সংখ্যাই বেশি।

‘কিছু হলে ব্যাংকারদের দোষ হয়। ব্যাংকারদের এখন কেউ ভালো চোখে দেখে না। প্রশ্নের মধ্যে পড়তে হয়। অথচ ঋণখেলাপি হলে নেপালে পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। বাংলাদেশের আর্থিক খাতে কে কী নিয়ন্ত্রণ করছে—সব তালগোল পাকিয়ে গেছে। এটাই বড় সংকট’—এভাবেই ব্যাংকিং খাতের কথা বলেছেন এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক এমডি নুরুল আমিন।

তবে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমরা শুধু সমালোচনা করি। গত ১০ বছরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো অর্থ পাচার হয়নি। ব্যাংক খাত এগিয়ে চলছে। 

নিজেদের মালিক মনে করেন পরিচালকেরা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ মনে করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা সঠিক থাকলে ব্যাংক খাতে এত কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটত না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের পরিচালক শাহ মো. আহসান হাবিব বলেন, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ যে হারে বাড়ছে, তা উদ্বেগের বিষয়। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে তো সরকারি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের পুরো ক্ষমতা নেই।

সাবেক অর্থসচিব সিদ্দিকুর রহমান বলেন, খেলাপি ঋণ আদায় করা যাবে কি না, এ সিদ্ধান্ত সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে আসতে হবে।

এমসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, নিজেদের মালিক মনে করেন ব্যাংকের পরিচালকেরা। তাঁদের বিশ্বাস করে মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রাখে, এটা তাঁরা মনেই করেন না।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও তরুণ ব্যবসায়ী তাবিথ আউয়াল বলেন, সামনে নির্বাচন, ঋণখেলাপিদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে বিশেষ ঘোষণা থাকতে হবে। ব্যাংকঋণ নিয়ে শোধ করছেন না, এমন কারও মনোনয়ন দেওয়া উচিত হবে না। বিএনপি এমন কাউকে মনোনয়ন দিলে সুশীল সমাজ তা তুলে ধরতে পারে। 

নাগরিক কমিশন গঠনের সুপারিশ

সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া না হলেও আগামী নির্বাচনের পর ব্যাংক খাত নিয়ে একটি নাগরিক কমিশন করবে সিপিডি। ওই কমিশন ব্যাংক খাতের একটি স্বচ্ছ চিত্র তুলে ধরবে। কেন ব্যাংক খাতের এই অবস্থা, সেই কারণগুলো উদ্ধার করবে। পরে সমাধানের পথ খোঁজা হবে। ব্যাংক খাত হলো অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। এই হৃৎপিণ্ডকে সচল রাখতে হবে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে ইশতেহারে বলতে হবে, ব্যাংক খাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করবে না। এ জন্য প্রয়োজনীয় আইন, বিধিবিধান করা হবে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে ব্যাংক খাতকে নিষ্কৃতি দিতে হবে।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮

Thursday, December 6, 2018

সরকারের সঙ্গে সখ্য, হেফাজতে অসন্তোষ

  • ভেতরে-ভেতরে দুই পক্ষ আলাদাভাবে কাজ করলেও কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না।
  • সংগঠনের একটি অংশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে পছন্দ করছে না।
  • এ নিয়ে সাধারণ কর্মীদের ভেতরেও নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ রয়েছে।
  • দুই বছর ধরে সংগঠনের কোনো কর্মসূচি নেই।



হেফাজতে ইসলামের আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের একাংশের সঙ্গে সরকার ও আওয়ামী লীগের সখ্যকে কেন্দ্র করে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সংগঠনের একটি অংশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে পছন্দ করছে না। এ নিয়ে সাধারণ কর্মীদের ভেতরেও নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ রয়েছে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘুরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনের ভেতরে অসন্তোষ তৈরি হলেও বিক্ষুব্ধ অংশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং প্রচারপত্র ছেড়ে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতকে রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছে। এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি ১৫১ সদস্যের। সংগঠনের আমির শাহ আহমদ শফী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁর সঙ্গে থাকা নেতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সংগঠনের প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানী (আমিরের ছেলে), যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ এবং ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি আবুল হাসনাত আমিনী। তাঁদের সঙ্গে সংগঠনের বড় একটি অংশের নেতা–কর্মীদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

ভেতরে-ভেতরে দুই পক্ষ আলাদাভাবে কাজ করলেও প্রবীণ আলেম আহমদ শফী সবার মুরব্বি হওয়ায় এখনো কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। এই অংশের অন্যতম নেতা নূর হোসাইন কাসেমী জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব। তাঁর দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক।

ফয়জুল্লাহ, আবুল হাসনাত আমিনী ও মঈনুদ্দীন রুহী প্রয়াত ফজলুল হক আমিনীর দল ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা। তাঁরা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার চেষ্টা করেছিলেন। তিনজনই চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আসন নিয়ে বনিবনা হয়নি।

হেফাজতে ইসলামের পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব নেতা বলেন, হেফাজতে ইসলামের সাধারণ নেতা-কর্মীরা চান, হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে থাকবে। তাঁদের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলেও দুই বছর ধরে সংগঠনের কোনো কর্মসূচি নেই। উল্টো আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য গড়েছে নেতাদের একটা অংশ। এর বিনিময়ে হেফাজতের আমিরের ছেলে আনাস মাদানীসহ কয়েকজন নেতা সরকারের কাছ থেকে নানা ধরনের সহযোগিতা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, বার্ধক্যজনিত কারণে হেফাজতের আমির ছেলে আনাসের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। ঢাকায় শুকরানা মাহফিল না করার জন্য আমিরকে অনুরোধ করা হলেও আনাস মাদানীসহ অন্যরা সেটি আয়োজন করেন সরকারের সহযোগিতা নিয়ে। এ কারণে সংগঠনে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন আনাস মাদানী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হেফাজতে কোনো বিভক্তি নেই। সব অপপ্রচার। শুকরানা মাহফিলের পরে অনেক মাহফিলে আলেম-উলামারা ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা জানিয়েছেন। বিরোধ থাকলে এটি হতো না।

সম্প্রতি হাটহাজারীতে সরেজমিনে গেলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সংলগ্ন দোকানের সামনে শুন শহীদের ডাক শিরোনামে একটি প্রচারপত্র পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, ‘১৩ দফার কথা কেন বলা হয় না? হেফাজতের বিদ্রোহীদের না খুঁজে বিদ্রোহের কারণ খোঁজেন। কেন শুরার মাধ্যমে আমির নির্বাচন করা হচ্ছে না। কেন ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আমিরের সখ্য। পাঁচ বছর আগে নেওয়া মহাসচিবের পাসপোর্ট কেন ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।’ প্রচারপত্রের নিচে লেখা ‘৫ মে শহীদ পরিবার’। সেখানে আমিরের ছেলে আনাস মাদানীসহ কয়েকজন নেতাকে দোষারোপ করে হেফাজতকে রক্ষার আহ্বান জানানো হয়।

হেফাজতের নায়েবে আমির মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী গত ২৪ নভেম্বর প্রথম আলোকে বলেন, আদর্শ থেকে সরে দাঁড়ানোয় হেফাজতে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। তিনি আনাস মাদানী ও যুগ্ম মহাসচিব মঈনুদ্দীন রুহীসহ অনেকের বিরুদ্ধে সরকারের কাছ থেকে সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ করেন।

এই বিষয়ে মঈনুদ্দীন রুহী প্রথম আলোকে বলেন, আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতের আঁতাত হয়েছে, এমন অভিযোগ তাঁদের কানেও আসে। কিন্তু এসবের কোনো ভিত্তি নেই। তিনি দাবি করেন, হেফাজতের মধে৵ কোনো বিভক্তি নেই।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর সমান স্বীকৃতি দিয়ে আইন পাস হয়। এরপর ১ অক্টোবর হাটহাজারী মাদ্রাসায় আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশের ২০১৮ সালে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হেফাজতের আমির আহমদ শফী বলেছিলেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) এটা আমাকে এমনি মহব্বত করে দিয়েছেন। আমি আওয়ামী লীগ হই নাই। আপনাদের এ রকম কথাবার্তা ভুল। কথাবার্তা বলার সময় সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই করে বলবেন। কী করে বলেন, আমি আওয়ামী লীগ হয়ে গেছি। আমি আওয়ামী হলেও কোনো আপত্তি নেই। এ দলে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা দীনকে ভালোবাসেন, আমাদের মাদ্রাসায় সাহায্য করেন।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আহমদ শফীর এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে বিভ্রান্তিতে পড়েন হেফাজতের অনেক নেতা। নেতা-কর্মীদের অনেকে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ৪ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা (কওমি সনদের স্বীকৃতি দেওয়ায়) দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় হেফাজত। কিন্তু এই আয়োজন না করতে হেফাজতে ইসলামের ৬৮ জন নেতার সই করা একটি চিঠি গত অক্টোবরের শেষ দিকে আমিরকে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, সংবর্ধনা দিলে কওমি আলেমরা রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি হয়ে যাবেন। ক্ষুব্ধ হবে সাধারণ মানুষ। পরে সংবর্ধনার নাম পাল্টে ‘শুকরানা মাহফিল’ নামে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করা হয়।

শুকরানা মাহফিলে যাননি হেফাজতের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী, নায়েবে আমির নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী ও তাজুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব ছলিম উল্লাহ ও মো. ইদ্রিস এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা। ২ অক্টোবর সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন নায়েবে আমির মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে মহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘যে উদ্দেশ্য নিয়ে হেফাজত গঠন করা হয়েছিল, তা থেকে দূরে সরে থাকার কারণে পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে হেফাজতে ইসলাম। ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ কর্মসূচি শেষে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেন হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক। ওই দিন রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ ঘটনায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের ২২ কর্মীসহ ৩৯ জন নিহত হন বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়। এ ঘটনায় পাঁচ জেলায় মোট ৮৩টি মামলা হয়। হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীকে কোনো মামলাতেই আসামি করা হয়নি। মামলার আসামি হয়ে কারাগারে ছিলেন মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী।

পাঁচ বছরের মাথায় হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠা এবং সংগঠনে বিভক্তির বিষয়ে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছি না।’

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/  ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮

বিচারকদের মাহবুব তালুকদার - কালো নির্বাচন নয়, স্বচ্ছ, সাদা নির্বাচন করতে চাই

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচন আইনানুগ না হলে সে নির্বাচন কালো নির্বাচন। আমরা কালো নির্বাচন নয়, স্বচ্ছ, সাদা নির্বাচন করতে চাই। গতকাল ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন তিনি। মাহবুব তালুকদার বলেন, সবার প্রতি সমআচরণ করতে হবে। আইনের চোখে যেন সবাই সমান থাকে। সবাই সমান অধিকার ভোগ করছে কিনা সেটাই বিবেচনার বিষয়। 

সকল আইন প্রয়োগ হচ্ছে কিনা আপনারা সেটা খেয়াল রাখবেন।

নির্বাচনের অনিয়ম রোধে ও আইনসিদ্ধ করার ব্যাপারে বিচারকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিতে গেলে সতর্কতা থাকতে হবে। সর্বোচ্চ সাজার বিষয়ে লিগ্যাল মাইন্ডকে প্রাধান্য দিয়ে বিবেচনায় রাখতে হবে, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন সাজা না পায়। স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবার সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানান মাহবুব তালুকদার। বলেন, আমরা ভাগ্যবান যে, আমরা একটি অংশমূলক নির্বাচন করতে যাচ্ছি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সাধারণত নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়। 

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে এক পক্ষের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা সফল হয় না। আমি মনে করি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে পক্ষে-বিপক্ষে ভারসাম্য থাকে। কমিশন ও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সোনালী ইতিহাস রচিত হতে যাচ্ছে। নিরপেক্ষ, পক্ষপাতমুক্ত নির্বাচন গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গণতন্ত্র নিত্যদিনের অনুপ্রেরণা। মাঠ পর্যায়ের অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধে এবং নির্বাচনী কর্তব্য পালনে সদা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি। মাহবুব তালুকদার বলেন, আপনারা বিচারকরা আমাদের নির্বাচন কমিশনের শপথের অংশীদার। কমিশনারদের শপথ আপনাদের মাঝে সঞ্চারিত হয়েছে। পুরো জাতির প্রত্যাশা পূরণে দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ৩০ লাখ শহীদের কথা স্মরণ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সুখী ও সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হবে। তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সবার প্রতি সমান প্রয়োগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শহীদদের রক্তের ঋণ পরিশোধে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানান মাহবুব তালুকদার। 

প্রশিক্ষণে আরেক কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা একটি আইনানুগ নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচনী তদন্ত কমিটির সদস্যদের সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে কাজটি সহজ করে দেবে। কমিশনার কবিতা খানম বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু ও আস্থার পরিবেশ তৈরিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন শুধু নয়, নির্বাচনী তদন্ত কমিটির সদস্যদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। দৃশ্যমানভাবে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবেন। সব ধরনের রাগ অনুরাগের ঊর্ধ্বে উঠে, বিচারিক দায়িত্ব পালনের মতো করেই সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান আপনাদের দায়িত্ব।

কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, এবারের নির্বাচন বৈচিত্র্যপূর্ণ নির্বাচন। সংসদ বহাল রেখে, সরকার অপরিবর্তনীয় আছে এমন অবস্থায়ই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যেহেতু এ নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহণে হতে যাচ্ছে, আগের যেকোনো সময়ের নির্বাচনের চেয়ে আইনের বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, ১০ই ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হবে। ওই দিন থেকে নির্বাচনী তদন্ত কমিটির সদস্যদের আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেন তিনি। ইভিএমের বিষয়ে বিশদ ধারণা নিতে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা বিচারকদের পরামর্শ দেন নির্বাচন কমিশন সচিব। নির্বাচনী তদন্ত কমিটির প্রশিক্ষণ শেষে ১০-১১ই ডিসেম্বর ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮