Search

Thursday, December 13, 2018

বরাদ্দের এক টাকাও খরচ করতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পিএসসি

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দের মাত্র ১০ শতাংশ অর্থও খরচ করতে পারেনি। অবশ্য গতবার একই সময়ে ১৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের বরাদ্দের ১০ শতাংশ টাকাও খরচ করতে পারেনি। সেই তুলনায় এবার অবস্থা একটু ভালো। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এবার আসি এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের। এই তালিকায় শীর্ষে আছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্মকমিশন। কোনো টাকাই খরচ করতে পারেনি তারা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি প্রকল্পে ১২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। তবে এখন পর্যন্ত এক টাকাও খরচ করতে পারেননি এই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে সরকারি কর্মকমিশনের একটি প্রকল্পে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও কোনো টাকা খরচ হয়নি।

আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, বরাদ্দের ১০ শতাংশের কম টাকা খরচ করেছে, এমন অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো রেলপথ মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবারের এডিপিতে ১ হাজার ৫০৭টি প্রকল্প আছে। এর মধ্যে ১৯৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ওই ১১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

অথচ চলতি অর্থবছরের শুরুতেই পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের সঙ্গে একাধিক সভা করে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন। নির্বাচনের বছরে যেন কাজ আটকে না থাকে, সেই নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। এমনকি কোনো প্রকল্পে টাকা খরচ করতে না পারলে বরাদ্দের টাকা যেন অন্য প্রকল্পে খরচ করা হয়, এমনও নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। গত রোববার সংবাদ সম্মেলনেও পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বছরের শুরু থেকে এডিপি বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও মাঠের অবস্থায় তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। ফলে এডিপির বাস্তবায়ন গতানুগতিকভাবেই চলছে। আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সার্বিকভাবে এডিপির ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

কমিশনের স্বচ্ছতা ও দৃঢ়তা বজায় থাকুক

এম সাখাওয়াত হোসেন

আমার আগের নির্বাচন-সংক্রান্ত অনেক লেখায় বলেছি, ২০১৮ সালের নির্বাচন নানাবিধ কারণে বেশ জটিল হবে। নির্বাচনকালীন সরকার এবং সর্বোপরি যারা সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে, সেই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। জটিলতার অনেক উদাহরণ ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান বিষয় বহুল আলোচিত নির্বাচনকালীন সরকার। কী হবে সেই সরকারের কাঠামো এবং তাদের কার্যপরিধিই–বা কেমন হবে? এসব প্রশ্নের কারণ উপমহাদেশের কোথাও সংসদ বহাল রেখে এবং অপরিবর্তিত মন্ত্রিসভা নিয়ে নির্বাচন হয় না। অন্যান্য দেশে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার এবং বিলুপ্তির পর চলতি সরকারের ছোট আকারে গঠিত সরকারের তত্ত্বাবধানেই সরকার পরিচালিত হয় এবং নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে।

ব্রিটেনে সংসদের মেয়াদ স্থির ছিল না, তবে ২০১১ সালে পাঁচ বছর অন্তর সংসদ শেষ দিনের মধ্যরাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং বিলুপ্তির ১৭ দিনের মাথায় পরবর্তী নির্বাচন হয়। কেবিনেট রানির কাছে পদত্যাগপত্র দিলে ওই সরকারকেই ছোট সরকার গঠন করে নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্রিটেনে উল্লিখিত অ্যাক্টের সঙ্গেই নির্ধারিত তফসিল ঘোষিত রয়েছে, আলাদা করে তফসিল ঘোষণা করা হয় না; শুধু মধ্যবর্তী নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়। ব্রিটেনে নির্বাচন কমিশন শুধু নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে এবং ফলাফলও ঘোষিত হয় সেখান থেকেই।

উপমহাদেশে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনগুলোই সম্পূর্ণ নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে। এই সব নিয়োগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রিটার্নিং কর্মকর্তা (আরও)। উপমহাদেশের দেশগুলোতে ক্ষেত্রবিশেষে নিজস্ব অথবা বেসামরিক প্রশাসন এবং কয়েকটি দেশে বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এই উপমহাদেশে শুধু বাংলাদেশেই নির্বাচন কমিশন, যার বিশাল কর্মী বাহিনী রয়েছে এবং এখন উপজেলা পর্যন্ত রয়েছে বিশেষায়িত নিজস্ব অফিস। তা ছাড়া, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় অ্যাক্ট ২০০৯-এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন কাঠামোগত, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এবং বাজেটের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন, যা অনেক নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারবহির্ভূত। কাজেই বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন আক্ষরিক অর্থে স্বাধীন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্থা। সংবিধানের ধারা ১১৯-এর মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

উল্লিখিত সাংবিধানিক ধারা এবং অন্যান্য ধারাবলেও জনপ্রতিনিধিত্ব অাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকালে মাঠপর্যায় থেকে সরকার পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা; বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে ভোটকেন্দ্রের সাধারণ আনসার পর্যন্ত।ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। মূলত ডেপুটি কমিশনারদের (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে; যে ব্যবস্থা স্বাধীনতার আগে থেকে বহাল রয়েছে। বর্তমানের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা আগের তুলনায় বেশ জটিল। যার কারণে একজন রিটার্নিং কর্মকর্তার পক্ষে অনেকগুলো নির্বাচনী আসন এবং বহু প্রার্থীকে সমানভাবে নিরীক্ষণ ও তদারকি করতে হিমশিম খেতে হয়। উপমহাদেশের অন্যান্য দেশে প্রতিটি সংসদীয় আসনের জন্য একজন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নিয়োগ করা হয়। ভারত ছাড়া পাকিস্তান ও নেপালে জেলার বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদেরই রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তানে কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদেরও নিয়োগ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব অাদেশ ১৯৭২ ধারা ৭ (১)-এ প্রতি সংসদীয় আসনের জন্য একজন অথবা দুটির অধিক আসনের জন্য একজনের নিয়োগের উল্লেখ রয়েছে। কাজেই একটি জেলায় একাধিক অথবা প্রতিটি আসনে একজন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান থাকলেও স্বাধীনতার পর থেকে এ ব্যবস্থার পরিবর্তন হয়নি; এমনকি নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব প্রশিক্ষিত লোকবল থাকা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে নিয়োজিত হয়নি। অবশ্য ২০০৮ সালের পর উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগ শুরু হয়।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তা অতীতের যেকোনো নির্বাচন থেকে (১৯৯১-২০১৪) ভিন্ন। সংসদ বহাল অবস্থায় অত্যন্ত শক্তিশালী সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিশেষ করে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব সম্পাদন করতে হচ্ছে। এর কিছু প্রতিফলন দেখা গেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা কর্তৃক রেকর্ড পরিমাণ প্রার্থী বাতিলের মধ্য দিয়ে। এতসংখ্যক প্রার্থী বাতিলের যে মেরুকরণ দৃশ্যমান হয়েছিল, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং বিএনপির প্রার্থী। প্রাথমিক বাছাইয়ে এ চিত্র ফুটে ওঠায় নির্বাচনী পরিবেশ বাদানুবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল এবং এর চাপ পড়েছিল খোদ নির্বাচন কমিশনের ওপর। কারণ, একমাত্র বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনই (উপমহাদেশে) আপিল আদালত হিসেবে আপিল গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করার আইনগত ক্ষমতা রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশনে ৫৪৩ জন প্রার্থী বাতিলের এবং গ্রহণের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন। তিন দিন বিরামহীন শুনানির পর গৃহীত সিদ্ধান্তে ২৪৩ জনকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনকে তিন দিনের শুনানিতে ৫৪৩টি আপিলের নিষ্পত্তি করতে হয়েছে, তার মানে প্রতিদিন গড়পড়তা ১৮১টি আপিল শুনতে হয়েছে, যার জন্য শুধু ধৈর্যেরই নয়, একাগ্রতার প্রয়োজন রয়েছে। তা ছাড়া, বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে কাজটি সহজ ছিল না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন এ ক্ষেত্রে সফল হয়েছে এবং ধন্যবাদ পাওয়ার অধিকারী। তবে এই পরিস্থিতির জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদাসীনতা এবং আইনের সঠিক ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্তহীনতা দায়ী। যেসব কারণে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে বলে প্রকাশ, তার অনেকটাই আরপিও-১৯৭২-এর ধারা ১৪ (১) (ডি) (ii)এর পরিপন্থী বলে মনে করা যায়। ধারাটি হয় রিটার্নিং কর্মকর্তারা সঠিক প্রয়োগ করেননি, অথবা একটি গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

উল্লিখিত ধারাটিতে উল্লেখ রয়েছে যে, যেসব ত্রুটি মনোনয়নপত্রে মূলগত (Substantial) পরিবর্তন আনবে না এবং যা তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধনযোগ্য, ওই সব কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল না করা। কিন্তু পত্রিকা পর্যালোচনায় দেখা যায় যে এ ধরনের ভুলের জন্য প্রচুর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছিল; যার কারণে বাড়তি চাপ পড়েছে নির্বাচন কমিশনের ওপর। তবে দু-একটি ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্ত সঠিক মনে হলেও নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। তবে এমন ধরনের গ্রহণের কারণ কী, তার ব্যাখ্যা নির্বাচন কমিশনই দিতে পারবে।

যা হোক এতসংখ্যক মনোনয়নপত্র বাতিল এবং বৈধতা পাওয়ার বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড একদিকে মাঠপর্যায়ের সামঞ্জস্যহীনতার পরিচয়, তেমনি আইনের স্পষ্টীকরণের অভাব মনে হয়। কমিশন এসব বাতিল এবং পরে এতসংখ্যক বৈধতার রিটার্নিং কর্মকর্তা পর্যায়ের কারণগুলো খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে এ কারণে যে, এসব বাতিল করা মনোনয়ন, যা নির্বাচন কমিশনে বৈধতা পেয়েছে। যেগুলোর পেছনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের অনভিজ্ঞতা, খামখেয়ালি অথবা অন্য কোনো অজ্ঞাত কারণ রয়েছে কি না। খামখেয়ালি অথবা অন্য কোনো অজ্ঞাত কারণ থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

নির্বাচন কমিশন অবশ্য শুনানি এবং কার্যকরভাবে সিদ্ধান্তসহ নিষ্পত্তি যেভাবে করেছে, তার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আশা করা যায়, নির্বাচন কমিশন তাদের ক্ষমতার সঠিক প্রয়োগ করে সুষ্ঠুভাবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে। এতটুকুই জাতি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে প্রত্যাশা করে।

  • ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও কলাম লেখক
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

পুলিশের ব্যর্থতা ইসির কাঁধেই বর্তাবে

সম্পাদকীয়

নির্বাচনী প্রচারণা ও সহিংসতা


নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতেই অন্তত ১৮ জেলায় সহিংসতা দেখা দেওয়ার বিষয়টি আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলা, মওদুদ আহমদ ও মঈন খানের এলাকায় প্রচারকর্মে বাধা, বগুড়ায় যুবদল কর্মীর বাড়িতে আগুন, হামলাসহ কিছু স্থানে সংঘর্ষ-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিয়োগান্ত ঘটনা ঘটল নোয়াখালী ও ফরিদপুরে। ঝরল যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্মীর দুটো তাজা প্রাণ।

প্রায় প্রতিটি ঘটনায় পাল্টাপাল্টি দোষারোপের ঘটনা লক্ষ করা গেছে। এমনকি বিএনপির মহাসচিবের শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রায় হামলার পরে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ কর্মীরা ‘সস্তা ভাবাবেগ’ নিতে বিএনপিই হামলা করেছে বলেও দাবি করেছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ওসি আশ্বস্ত করেছেন যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, ঘটনার তদন্ত হবে। কিন্তু সার্বিক বিচারে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ এবং ত্বরিত হস্তক্ষেপের অনুপস্থিতি আমাদের পীড়িত ও বিচলিত করছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্যথিত ও বিব্রত হয়েছেন মর্মে যে মন্তব্য করেছেন, তা যথেষ্ট নয়। পুলিশের ব্যর্থতা এখন ইসির কাঁধেই বেশি বর্তাবে। ইসিকে দেখাতে হবে, তারা পুলিশকে সঠিক নির্দেশনা দিয়েছে।   

আর সহিংসতা বিস্তারের দায়দায়িত্ব অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিতে হবে। এ রকম হামলার জন্য কারা দায়ী, তা নিয়ে যেহেতু পরস্পরবিরোধী অভিযোগ রয়েছে, তাই পুলিশ পক্ষপাতমুক্তভাবে কী বলে এবং কী করে, সেটাই হবে সবার দেখার বিষয়। ৩০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে ছোটখাটো সহিংসতাকেও অত্যন্ত গুরুত্ব ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া উচিত হবে। বড় ধরনের নির্বাচনী সহিংসতার আশঙ্কা নিয়ে গতকাল বুধবার কারওয়ান বাজারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী দক্ষ, তাদের কাছে কোনো চ্যালেঞ্জই চ্যালেঞ্জ নয়। তারা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি।’ কিন্তু এটুকু আমাদের আশ্বস্ত করে না। ঐতিহ্য অনুযায়ী কিছু বিক্ষিপ্ত সহিংসতা ঘটেই থাকে। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতেই খোদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলা চালানোর বিষয়টি কিন্তু সাধারণ ঘটনা নয়।

আমরা আশা করব, এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, তা অবিলম্বে চিহ্নিত করা, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করা হলে পুলিশের পক্ষে তার যথা ভূমিকা পালন করার শর্ত পূরণ করা হবে। নির্বাচনকালে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আধা সামরিক এবং এলিট ফোর্স নিয়োগ করা হবে, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি একান্তভাবেই পুলিশকেই দায়িত্ব নিতে হবে।   

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব পক্ষ মাঠ সমতল করার ধারণা সমর্থন করে। এ বিষয়ে পুলিশের যে হাতটি রয়েছে, সেটি যে পরিচ্ছন্ন, তাদেরই তা নিশ্চিত করতে হবে। অবশ্য ক্ষমতাসীন দলকেও তা চাইতে হবে। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে, মন্ত্রিসভার সদস্যরা শুধু নিরাপত্তা পাবেন, প্রটোকল পাবেন না। এত দিন পুলিশের একটি বড় অংশ প্রটোকল রক্ষায় নিয়োজিত ছিল। এই প্রটোকলের কারণে পুলিশ অনেক জরুরি বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারে না বলে আমরা নানা সময় শুনেছি। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন, এ সময় প্রচারণার স্থানগুলোর নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রচলিত আইন এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি দাবি করে যে, দেশের প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের, তাঁদের সভা–সমাবেশ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রেও যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরের ওপর হামলার ঘটনাটিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির একটি গুরুতর ঘাটতি হিসেবেই বিবেচিত হবে।অনেক সময় বলা হয়, মর্নিং শোজ দ্য ডে। নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতেই সহিংসতা তাই আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের আশঙ্কা অমূলক প্রতিপন্ন করাই হোক পুলিশের মূল দায়িত্ব।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

বিধি লঙ্ঘন রুখতে হবে

শাহদীন মালিক

১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় টেলিভিশনের খবরে ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও অন্য আরেক জায়গায় গাড়িবহরে হামলার অভিযোগের কথা জানলাম। এক সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার বক্তব্য ছিল অনেকটা এই গোছের, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। মনে হলো, ভাবখানা যেন তথ্যপ্রমাণ দিয়ে কেউ অভিযোগ করলে প্রাথমিক তদন্ত করা হবে, যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে, রিপোর্ট দেওয়া হবে, তারপর পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। ভাবলাম, এসব করতে করতে ৩০ ডিসেম্বর না পার হয়ে যায়।

মাস দুয়েক আগে বহু নাগরিকের মনে অংশীদারিমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে প্রচণ্ড সন্দেহ ছিল।

ঐক্যফ্রন্ট গঠন, প্রধানমন্ত্রীর সংলাপ এবং তাতে দলে দলে অংশগ্রহণ, ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা হিসেবে ড. কামাল হোসেনের ভূমিকা এবং ব্যক্তিগতভাবে তাঁর নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত এবং একই সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপিসহ অন্য অনেক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রত্যয়ে অংশীদারিমূলক নির্বাচন এখন নিশ্চিত হয়েছে। নির্বাচন হবে, জনগণ ভোট দিতেও যাবে। তবে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অবাধ করতে হবে।

সফল নির্বাচনের তিন বড় পক্ষ—সরকার, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশন। এই তিন পক্ষের মধ্যে প্রথম দুই পক্ষ তাদের দায়িত্বের বেশির ভাগই ইতিমধ্যে পালন করা শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়, এই মুহূর্ত থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার বিরাট গুরুদায়িত্ব এখন নির্বাচন কমিশনের কাঁধে। এ সময়ে সবচেয়ে বড় বাধা আচরণবিধি লঙ্ঘন। এই বড় বাধাটা দূর করতে হবে এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। প্রথম রাতেই বিড়াল না মারলে সবকিছু ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে।

সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮-এ সভা-সমিতি-অনুষ্ঠানসংক্রান্ত; পোস্টার ও লিফলেট; যানবাহন ব্যবহার; দেয়াল লিখন; উসকানিমূলক বক্তব্য; মাইকের ব্যবহার; প্রচারণার সময়; নির্বাচনী ব্যয়সীমা ইত্যাদি সংক্রান্ত নিয়মকানুন এবং বিভিন্ন বাধানিষেধ স্পষ্টভাবে বলা আছে। সবাই এগুলো মেনে চললেই নির্বাচনটা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। এই বিধিমালার ১৭ ধারায় বলা আছে, এসব বাধানিষেধ লঙ্ঘন বা অমান্য করলে তা হবে নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম। এই বিধিতেই বলা আছে যে নির্বাচন কমিশন ‘কোন তথ্যের ভিত্তিতে বা অন্য কোনভাবে কমিশনের নিকট কোন নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম দৃষ্টিগোচর হইলে, কমিশন...’ এসব বিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারেন। স্পষ্টতই লিখিত অভিযোগের জন্য নির্বাচন কমিশনের বসে থাকলে চলবে না। দেশের বেশ কয়েকটি নিউজ চ্যানেল ও পত্রপত্রিকাসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে একই লঙ্ঘনের খবর পাওয়া গেলে নির্বাচন কমিশন তার ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নিতে পারে।

দিন দশেক আগে, ‘আচরণবিধি বেড়াতে গেছে’ শিরোনামে প্রথম আলোয় যা লিখেছিলাম, তার কিছুটা হলেও পুনরাবৃত্তি হয়তো হবে, তবু বলব, আচরণ-বিধিমালা প্রচার করতে হবে। বিধিমালা লঙ্ঘনের জন্য নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে দুজন করে বিচারকের সমন্বয়ে যে ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তার তালিকা জনগণকে জানাতে হবে। সবাই জানবে, কোন এলাকার বিধিমালা লঙ্ঘনের জন্য কার কাছে যেতে হবে।

বিধিমালার লঙ্ঘন রুখতে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে, লঙ্ঘনের শাস্তি ৬ মাস কারাদণ্ড অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড। শাস্তিটা কত বড়, সেটা কথা নয়। এক মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানাই হোক, শাস্তি যা-ই হোক না কেন, সেটা গৌণ। মুখ্য হলো, শাস্তির একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে এবং সেটা তড়িৎ গতিতে।

খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই ১২২টি নির্বাচনী তদন্ত কমিটির নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে কয়েক দিন আগে খেদ প্রকাশ করেছিলেন। সেটাই যথেষ্ট নয়। তদন্ত কমিটিগুলোকে সক্রিয় হতে হবে। তদন্ত কমিটিগুলো অধস্তন আদালতের তুলনামূলকভাবে কম বয়োজ্যেষ্ঠ বিচারকদের নিয়ে গঠিত। প্রথাগত বিচারব্যবস্থা অনুসরণ করে, অর্থাৎ অভিযোগপত্র পাওয়া, অভিযোগকারী সাক্ষীসাবুত নিয়ে হাজির হলে তারপর লম্বা শুনানি, সবকিছু যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা করা, তারপর বিস্তারিত রায় লেখা—এই ঐতিহাসিক পথে চললে নির্বাচন বিপথে চলে যাবে। দেশের এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এই কমিটিগুলোকে উদ্যমী ও উদ্যোগী হতে হবে। গাড়ির কাচ ভেঙেছে কি না, ইটপাটকেল পড়েছে কি না, সেটা দেখতে ও বুঝতে গভীর তদন্তের প্রয়োজন পড়ে না। এই বিচারকেরা বেশ কয়েক বছর বিচার করেছেন, এবারের বিচার গতিশীল ও ফলপ্রসূ হতে হবে। সময় বেঁধে দেওয়া আছে তিন দিন। এখানে মামলার জট হলে সুষ্ঠু নির্বাচন অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়বে।

ড. শাহদীন মালিক: বাংলাদেশ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের আইনের শিক্ষক

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ার আল্টিমেটাম

বিএফইউজে ও ডিইউজে’র বিক্ষোভ সমাবেশ

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ গণমাধ্যমগুলো খুলে দেয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছে বিএফইউজে ও ডিইউজে। ৫৪টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এ আল্টিমেটাম দেন। তারা বলেন, সম্প্রতি ৫৪টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে। এর আগে আমার দেশ পত্রিকা, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি ও চ্যানেল ওয়ানসহ অনেক মিডিয়া বন্ধ করা হয়েছে। আমরা এসব বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি। এই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের দাবি না মানলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএফইউজে মহাসচিব এম. আবদুল্লাহ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম, বিএফইউজে সহ-সভাপতি নূরুল আমিন রোকন ও মোদাব্বের হোসেন, ডিইউজের সহসভাপতি শাহীন হাসনাত, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য সাদ বিন রাবী, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন-ক্র্যাবের সভাপতি সালেহ আকন বক্তব্য দেন। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে একটি মিছিল তোপখানা রোড প্রদক্ষিণ করে।

রুহুল আমিন গাজী বলেন, ভোটারবিহীন সরকার তার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতেই ৫৪টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করেছে। এছাড়া এর আগেও আমার দেশ পত্রিকা, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি ও চ্যানেল ওয়ানসহ অসংখ্য মিডিয়া সরকার বন্ধ করেছে। এর ফলে হাজার হাজার সাংবাদিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছে। পাশাপাশি সাংবাদিক সমাজসহ দেশের মানুষের বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। এ সরকার গণমাধ্যমবিরোধী। এই সরকারের বিদায় ছাড়া স্বাধীন গণমাধ্যম সম্ভব নয়। এম আবদুল্লাহ বলেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় আসলেই আমাদের রাজপথে দাঁড়াতে হয়। সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন ও বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়ার জন্য আমরা দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ আন্দোলন সংগ্রাম করছি। কিন্তু সরকার কোনো কর্ণপাত করছে না। একের পর এক মিডিয়া বন্ধ করে বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে। বর্তমানে মনে হয় আমরা পুলিশি রাষ্ট্রে বসবাস করছি। পুলিশ একটি তালিকা পাঠাবে আর মিডিয়া বন্ধ হয়ে যাবে- তা মেনে নেয়া যায় না। কাদের গনি চৌধুরী বলেন, একের পর এক মিডিয়া বন্ধ করে সরকার ফ্যাসিবাদের পরিচয় দিচ্ছে। সরকারের অপকর্ম যেনো প্রকাশ না করতে পারে এজন্যই ৫৪টি নিউজ পোর্টাল বন্ধ করেছে। আমরা অবিলম্বে সকল বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়া জোর দাবি জানাচ্ছি। ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে। শহীদুল ইসলাম বলেন, কেউ যেন সরকারের সমালোচনা করতে না পারে এজন্য বেছে বেছে মিডিয়া বন্ধ করছে। এরই অংশ হিসেবে ৫৪টি মিডিয়া বন্ধ করেছে। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতেই সরকার বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে। অবিলম্বে বন্ধ সব মিডিয়া খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ইসির বৈঠক আজ

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আজ বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সকাল সাড়ে ১০টায় নির্বাচন ভবনের মিলনায়তনে এ বৈঠক শুরু হবে। বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তা, রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপার এবং  জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনে ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় সাধারণ এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকা এবং উপকূলীয়, দুর্গম ও পার্বত্য এলাকার ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য পৃথক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। দশম জাতীয় নির্বাচনের আদলে এবারো আইনশৃঙ্খলায় থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা ছক। জানা গেছে, ভোটকেন্দ্র পাহারার ক্ষেত্রে সাধারণ কেন্দ্রে একজন পুলিশসহ ১৪ জন, মেট্রোপলিটন এলাকার কেন্দ্রে তিনজন পুলিশসহ ১৫ জন এবং দুর্গম ও উপকূলীয় এলাকার কেন্দ্রে দুইজন পুলিশসহ ১৪ জন রাখার বিষয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনা রেখেছে ইসি। 

তবে, ভোটকেন্দ্র সুরক্ষিত রাখতে বাইরে থাকবে সামরিক-আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা।

আর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দেবে। কিন্তু কেন্দ্রে প্রবেশে অনুমতি লাগবে রিটার্নিং অথবা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার। এ ছাড়া নির্বাচনের বিধি-ভঙ্গ, প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য, চরিত্রহননের অপচেষ্টা প্রতিরোধে মাঠে থাকবে নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা। এবার সব মিলিয়ে প্রায় ৭ লাখের কাছাকাছি মোতায়েন হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এসব বাহিনী ৩০০ সংসদীয় আসনের ৪০ হাজার ১৮০টি কেন্দ্র পাহারা ও ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৩ জন ভোটারের নির্বিঘ্নে ভোটদানে সহায়তা দিতে কাজ করবে। কমিশনের যুগ্ম সচিব খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ বেশি হলেও ভিআইপি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, থানা-প্রশাসন শূন্য করে সব নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে এ কাজে যুক্ত করা যাবে না। বৈঠকে, কীভাবে ফোর্স মোতায়েন হলে সব কূল বজায় থাকবে সেটিও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। 

সূত্রমতে, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোট গ্রহণের আগে ও পরে ভিন্ন মেয়াদের জন্য সেনা, র‌্যাব ও পুলিশসহ অন্য বাহিনী মোতায়েন করতে যাচ্ছে ইসি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা ২৪শে ডিসেম্বর মাঠে নামবেন। ২রা জানুয়ারি পর্যন্ত তারা নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন। বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যরা স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিম হিসেবে ২৬শে ডিসেম্বর থেকে ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। ২৯শে ডিসেম্বর ৩০০ আসনে সব মিলে ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামবেন। তারা ভোটের পর দুই দিনসহ সবমিলে চারদিন মাঠে থাকবেন।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনেও একইভাবে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করেছিল ইসি। তবে ২০০৮ সালে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে সেনা মোতায়েন করা হয়। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮

Wednesday, December 12, 2018

১৮ জেলায় হামলা, সংঘর্ষ


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার দ্বিতীয় দিনে দেশের ১৮ জেলায় বিরোধী জোটের প্রার্থীদের প্রচারণায় হামলা, ভাঙচুর ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহর। হামলা হয়েছে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও ড. আবদুল মইন খানের প্রচার মিছিলেও। কোথাও কোথাও বিরোধী জোটের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নোয়াখালী সদর আসনে দুই পক্ষের সংঘর্ষে যুবলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। ফরিদপুরে নির্বাচন নিয়ে বাকবিত-ার জের ধরে হামলায় নিহত হয়েছে এক আওয়ামী লীগ নেতা। হামলা সংঘর্ষের সময় নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বগুড়ায় বিএনপি প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলা করেছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। 

খুলনায় বিএনপির প্রার্থী বকুলের সমর্থকদের ওপর হামলা ও যশোরে ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাজবাড়ীতে ধানের শীষ প্রার্থীর নির্বাচনী সভা প- হয়ে যায় ক্ষমতাসীনদের হামলায়। ঝিনাইদহে বিএনপি প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মানিকগঞ্জে বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। ময়মনসিংহের ৩টি আসনে বিএনপির গণসংযোগ-মিছিলে হামলা, অফিস ভাঙচুর হয়। সোমবার রাত ও গতকাল মঙ্গলবার এসব ঘটনা ঘটে।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ হামলার খবর নিশ্চিত করলেও কারা গাড়িতে হামলা করেছে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি। গতকাল বেলা ১টার দিকে সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের দানারহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান জানান, মির্জা ফখরুল নির্বাচনী গণসংযোগকালে দানারহাট এলাকায় পথসভা করছিলেন। এ সময় একদল লোক হঠাৎ এসে হামলা চালায়। তার গাড়ির কাচ ভেঙে দেয়। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের লোকজন বলে তিনি দাবি করেন। হামলায় ৬টি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর হয়। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন। ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা দুই-তিনটা গাড়ি ভাঙচুর হওয়ার খবর পেয়েছি। তবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্তের পর জানা যাবে।

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে জানান, নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বিএনপি নেতার বাড়ি, ধানের শীষের নির্বাচনী অফিস, ও কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে কবিরহাট বাজারের বিভিন্ন স্থানে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে সকালে কবিরহাট বাজার জিরো পয়েন্টে নোয়াখালী-৫ আসনের বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ পথসভা করার কথা ছিল। সকাল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সেখানে জড়ো হতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে ঘোষবাগ থেকে বিএনপির মিছিল আসার সময় কবিরহাট দক্ষিণ বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সংঘর্ষ পুরো বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। কবিরহাট পৌরসভা বিএনপির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির শান্তিপূর্ণ মিছিলে অতর্কিত হামলা চালায়। পরবর্তীতে হামলাকারীরা তার বাড়ি, বিএনপির নির্বাচনী অফিস ও বিভিন্ন দোকানে ভাঙচুর করে। হামলায় কবিরহাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হুদা চৌধুরী লিটন, জাসাসের সভাপতি আবদুস সাত্তার, নরোত্তমপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ, কবিরহাট পৌর যুবদলের সহ-সভাপতি আলাউদ্দিন ও প্রবাসী বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোমিত ফয়সলসহ অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হন।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, সকালে পথসভায় আসার পথে উপজেলার ভূঁইয়ারহাট, শাহজীরহাট, কাচারিরহাট, কালামুন্সী বাজার, ব্যাপারীহাটসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির মিছিলেও হামলা করা হয়। এদিকে বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে কবিরহাট উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, সকালে কবিরহাট দক্ষিণ বাজারের নবারুণ একাডেমির সামনে বিএনপির মিছিল থেকে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল, ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ইসমাইলসহ আমাদের দলের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। বিএনপির হামলায় জলিল, ইসমাইলসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ইসমাইলকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা মোহাম্মদ হাছান জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সহিংসতা এড়াতে বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বগুড়া প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার ধুনটে বিএনপি প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। এ সময় ব্যাপক ভাঙচুর এবং চারটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর জের ধরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। গতকাল ধুনট পৌর শহরের কলাপট্টি এলাকায় বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। এ ঘটনার শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামে ধানের শীষের ভোট চাওয়ায় নাদিম ও মাসুম নামের দুই বিএনপি কর্মীকে মারপিট করে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এ সময় যুবদল নেতা মুরাদ এর প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনার জের ধরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রাত ১২টার দিকে মুরাদের বাড়িতে পেট্রোল দিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। মুরাদ জানান, অগ্নিসংযোগে তার পরিবারের লোকজন প্রাণে বাঁচলেও বাড়ির আসবাবপত্র ভস্মীভূত হয়। স্থানীয়রা জানান, বগুড়া-৬ (শেরপুর-ধুনট) আসনে বিএনপি প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ গতকাল সকালে ধুনটে নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। বেলা ১১টার দিকে চারটি জিপ এবং শতাধিক মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে রাঙ্গামাটি গ্রামের যুবদল নেতা মুরাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন।

তার গাড়িবহর ধুনট পৌর শহরের কলাপট্টি এলাকায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সিরাজের গাড়িবহরে হামলা করে। গাড়িবহরে থাকা চারটি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় এবং জিপসহ আরো ৮-১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। খবর পেয়ে ধুনট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ তার নেতাকর্মীদের নিয়ে হুকুম আলী বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেন। ফলে উভয়পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জিএম সিরাজ অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে তার গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। শেরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা কুলখানি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। বর্তমানে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা থাকলেও পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে: ময়মনসিংহের ৩টি আসনের বিএনপির নির্বাচনী গণসংযোগ, মিছিল ও কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন মহাজোটের প্রার্থী-সমর্থকরা। এ সময় নির্বাচনী কার্যালয়, প্রার্থীর গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। গতকাল এসব পৃথক হামলায় আহত হয়েছেন প্রার্থী জাকির হোসেন বাবলুসহ কমপক্ষে ৩৫ জন নেতা-কর্মী। মুক্তাগাছা আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আলহাজ জাকির হোসেন বাবলু জানান, বিকেলে গণসংযোগকালে উপজেলার ৪নং কুমারগাতা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমার গাড়িসহ বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এতে আমি ও ড্রাইভার আবদুল্লাহসহ প্রায় ১০ নেতাকর্মী আহত হন। তবে বিষয়টি অবগত নন বলে জানান মুক্তাগাছা থানার ওসি আলী আহম্মেদ মোল্লা। অপরদিকে ভালুকা উপজেলার বাটাজোড় বাজার এলাকায় বিএনপির প্রার্থী ফখর উদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চুর নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা করে ভাঙচুর করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ৯নং কাচিনা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুরের নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে দাবি করেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। 

এ সময় নির্বাচনী কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিল, টিভি ও আলমারি ভাঙচুর করা হয়। এতে ৫ নেতাকর্মী আহত হন বলে জানান ময়মনসিংহ-১১ ভালুকা আসনে বিএনপির প্রার্থী ফখর উদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চুর সমর্থকরা। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ভালুকা থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং পাল্টাপাল্টি মিছিলকে কেন্দ্র করে একটু গ-গোল হয়েছে। তবে এটা বড় কিছু না। এছাড়াও জেলার ফুলপুর উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকা গতকাল বিকালে ধানের শীষ ও নৌকা সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের প্রায় ২০ জন আহত হন। জানা যায়, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবেক এমপি শাহ শহীদ সারোয়ারের পক্ষে বিকেলে ধানের শীষের একটি মিছিল বের হলে হামলা চালায় নৌকা সমর্থকরা। এ সময় দু’পক্ষের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে বাসস্ট্যান্ড এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। কয়েকটি গাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বিএনপি নেতা ইসলাম উদ্দিন (৩৫), মোশারফ হোসেন (৫২), আবদুস ছাত্তার (৩৫), মিলন (৩৫), মোস্তফা কামাল খান (৩৫), পাপু (১৬)সহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জ-২ নির্বাচনী এলাকা কামারখন্দ উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘর এবং নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নেতাকর্মীদের মারপিট করা হয়েছে। সোমবার এসব ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরস্পরকে দায়ী করে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা। গতকাল জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু লিখিত বক্তব্যে বলেন, সোমবার বেলা ১২টার দিকে কামারখন্দ উপজেলা বিএনপি অফিস ভাঙচুর করে। সন্ধ্যায় শিয়ালকোলে বিএনপি নেতাকর্মীদের মারপিট ও জিব্রাইলের বসতবাড়ি ভাঙচুর করে। রাতে ধুকুরিয়া গ্রামে ইউনিয়ন যুবদল সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও তার গরুর খামারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। অপরদিকে, সিরাজগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, নিশ্চিত পরাজয় জেনে তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে, নিজেরা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অন্যের ওপরে দোষ চাপাতে চাচ্ছে। তারা হামলা ও মারপিটের অভিযোগ করলেও তাদের কোনো নেতাকর্মী হাসপাতালে ভর্তি হয়নি, অথচ আওয়ামী লীগের অন্তত ৪-৫ জন নেতাকর্মী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মীকে মোবাইলে ও সশরীরে হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরের গাংনীতে বিএনপির নির্বাচনী অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ও তাঁবু ছিঁড়ে ফেলে। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা এ হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপির প্রার্থী জাভেদ মাসুদ মিল্টন। সংবাদ সম্মেলনে জাভেদ মাসুদ মিল্টন বলেন, সোমবার সাহারবাটি এলাকায় বিএনপির প্রচারণা মাইক ভাঙচুর করে ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। গতকাল সকালেও নেতাকর্মীরা যখন বিএনপি অফিসে আসতে থাকেন, তখন ৮-১০ জন লোক হঠাৎ অফিসে হামলা চালায় ও নির্বাচনী তাঁবু ছিঁড়ে ফেলে।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী শরীফুজ্জামান শরীফের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সীগঞ্জ পশুহাট এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় শরীফুজ্জামানের দু’টি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়। হামলায় দু’জন আহত হয়েছেন বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সোমবার রাতে চুয়াডাঙ্গায় ফিরছিলেন ধানের শীষের প্রার্থী শরীফুজ্জামান শরীফ। রাত সাড়ে ৯টার দিকে শরীফুজ্জামানের গাড়িবহর আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সীগঞ্জ পশুহাট এলাকায় পৌঁছালে একদল দুর্বৃত্ত তাদের গাড়িবহরে অতর্কিত হামলা চালায়। রাতে চুয়াডাঙ্গা প্রেস ক্লাবে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করে বলেন, পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। এ সময় সঙ্গে থাকা যুবদল নেতা হাবলু ও মিশু আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি। এদিকে, চুয়াডাঙ্গা-২ নির্বাচনী এলাকাতেও বিএনপির প্রার্থী মাহমুদ হাসান খান বাবুর নির্বাচনী মিছিলে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সন্ধ্যায় জীবননগর উপজেলা শহরের চার রাস্তার মোড়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ধানের শীষের মিছিলটিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ হামলা চালিয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী) আসনের বিএনপির প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুলের সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছে খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগ নেতারা। সোমবার রাতে খালিশপুর থানার ১৫নং ওয়ার্ডের জংশন মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, ধানের শীষের পোস্টার লাগানোর সময় আওয়ামী লীগ নেতা নাজু, সুমন, আরিফ, জনি, রাজু ও মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তক্বির নেতৃত্বে ৫০-৫৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত যুবদল নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা করে। এ সময় ১৫নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা লিটন হোসেন লিটু ও রুহুল আমিন হাওলাদারসহ ৫-৭ জন গুরুতর আহত হন। এ ব্যাপারে খালিশপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে জানান, গভীর রাতে যশোর শহরের বিভিন্ন এলাকায় টানানো ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার রাত দু’টার দিকে শহরের চৌরাস্তা মোড়, এমএম আলী রোড, মাইকপট্টিসহ আশপাশের এলাকায় টাঙানো ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে সন্ত্রাসীরা। যশোর-৩ আসনের বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানান, সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর সন্ধ্যায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ধানের শীষের পোস্টার টানানো হয়। নির্বাচনী বিধি মেনেই প্রচারণার অংশ হিসেবে এসব পোস্টার সাঁটানো হয়। সোমবার রাত আনুমানিক দুইটার দিকে এসব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। তিনি বলেন, পোস্টার ছিঁড়ে তারা ক্ষান্ত হয়নি তারা তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষ প্রার্থীর নির্বাচনী সভা প- করে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল বিকালে রাজবাড়ী বাজারের খলিফাপট্টিতে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, রাজবাড়ী পৌর বিএনপির উদ্যোগে শহরের খলিফাপট্টিতে ধানের শীষ প্রার্থী আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের নির্বাচনী সভা করার কথা থাকলেও সভা শুরুর পূর্বে দুপুরে ও বিকালে পরপর ২ বার কতিপয় দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় ঘটনাস্থলেই ১০ জন আহত হন। বিএনপি সূত্র জানায়, নির্বাচনী সভাকে বানচাল করতে দুপুর ৩টায় দুর্বৃত্তরা একবার সভাস্থলের চেয়ার ভাঙচুর করে ও পরে বিকালে সভা শুরুর পূর্ব মুহূর্তে আরেক দফা দুর্বৃত্তরা পুনরায় উপস্থিত জনতার ওপর হামলা চালালে ১০ জন আহত হন। এর আগে সোমবার গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে বিকালে এক নির্বাচনী সভা করার কথা থাকলেও সেখানেও দুর্বৃত্তদের হামলায় তা প- হয়ে যায়। এ সময় সভাস্থল ভাঙচুর করা হয়।

পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, নরসিংদী-২ পলাশ আসনে বিএনপির প্রার্থী ড. আবদুল মঈন খানের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালিয়েছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গতকাল বিকালে নির্বাচনী এলাকার আমদীয়া ইউনিয়নের বেলাব নামক স্থানে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলাকারীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও ৪টি মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ছাড়া এ ঘটনায় ছাত্রদল ও যুবদলের ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পলাশ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, সকালে মঈন খান নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ দেন। দুপুরে চরনগর্দী পার্টি অফিসে মতবিনিময় শেষে আমদীয়া ইউনিয়নে গণসংযোগ করতে গেলে বেলাব নামক বাজারে পৌঁছলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছাও মিয়ার নেতৃত্বে যুবলীগ, ছাত্রলীগের ৩০-৪০ জন নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে গাড়ি বহরে হামলা চালায়।

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, গতকাল দুপুরে পৌর সদরের শক্তিপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হামলা সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ৩টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, বিএনপি প্রার্থী ড. এমএ মুহিতের বাড়ির গেট, চেয়ার টেবিল, জানালার গ্লাস, ১টি মোটরসাইকেল ও ১টি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। 

শাহজাদপুর উপজেলা যুবদলের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানায়, সকাল সোয়া ১১টার দিকে তিনি ও তার বড় ভাই শাহজাদপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এমদাদুল হক নওশাদ জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে (সাবেক বিএনপি অফিস) বসে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলাপ করছিলেন। এ সময় একদল যুবক মোটরসাইকেল বহর নিয়ে তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। তাদের দু’ভাইকে বেধড়ক মারপিট করে। এর কিছু সময় পরই তারা বিএনপি প্রার্থী ড. এমএ মুহিতের শক্তিপুরের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও এ সংর্ষের ঘটনা ঘটে। তারা সরকারি দলের সমর্থকদের এ হামলার জন্য দায়ী করেন। এ ব্যাপারে শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, খবর পেয়ে আমাদের ফোর্স দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে বড় কোনো অঘটন ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, নাটোরে সিংড়ায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দাউদার মাহমুদের নির্বাচনী পোস্টারে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার রাতে উপজেলার ৮ নম্বর শেরকোল ইউনিয়নের ভাগনাগরকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও একইদিন সন্ধ্যায় শুকাশ ইউনিয়নের জয়কুড়ি বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ধানের শীষের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর ও আমিনুল ইসলাম নামের এক যুবদল নেতাকে মারপিটের অভিযোগ করেন বিএনপির নেতারা। শেরকোল ইউনিয়নের ভাগনাগরকান্দি গ্রামের উজানপাড়া ও ভাটোপাড়ায় প্রায় শতাধিক ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া বাজারে গতকাল সন্ধ্যার দিকে বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান আসাদের গাড়ি বহরে হামলা হয়েছে। নৌকার স্লোগান দিয়ে ধানের শীষের বহরে থাকা বেশ কয়েকটি মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। হামলার সময় আসাদের সঙ্গে থাকা নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করতে থাকেন।

নড়াইল প্রতিনিধি জানান, নড়াইল-২ আসনের ধানের শীষের নির্বাচনী প্রধান কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ অভিযোগ করেছেন, ২০ দলীয় জোটপ্রার্থী এনপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান এজেডএম ফরিদুজ্জামান। এ আসনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী মাশরাফি বিন মর্তুজা। ফরিদুজ্জামান অভিযোগ করেন, গতকাল বিকালে নড়াইলের লোহাগড়া বাজার এলাকায় তার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে এ ভাঙচুর চালানো হয়। এ হামলায় অন্তত ৪ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, লোহাগড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসানের নেতৃত্বে তার নির্বাচনী অফিসে হামলা চালানো হয়। এদিন বিকালেই এখানে কর্মিসভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ঘটনার পর ফরিদুজ্জামান বিকালে তার লোহাগড়ার বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

স্টাফ রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ থেকে জানান, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতার নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতৃবৃন্দ। বিকাল ৪টা পর বিএনপির প্রার্থী আফরোজা খান রিতা সাটুরিয়া উপজেলার কালুশাহ মাজার জিয়াতর করতে গেলে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করিম ও যুগ্ম আহ্বায়ক আ. খালেকের নেতৃত্বে স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগ এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ বিএনপির নেতৃবৃন্দের। এ ঘটনায় ছাত্রদলের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সাবেক মন্ত্রী মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুর কন্যা আফরোজা খান রিতা গতকাল বিকালে তার নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় নামার আগে সাটুরিয়া কালুশাহ মাজার জিয়াতর করতে যান। ৪টার দিকে দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে আফরোজা খান রিতার বহনকারী গাড়িটি মাজারের রাস্তায় থামানোর পরপরই সেখানে জড়ো হয়ে থাকা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে গাড়িটি ঘেরাও করে। এ সময় আফরোজা খান রিতাকে লক্ষ্য করে নানা ধরনের সেøাগান দেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ। পরে বিএনপি প্রার্থী আফরোজা খান রিতাকে ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা হাতে হাত রেখে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে কালুশাহ মাজারে নিয়ে যায়। পেছন পেছন ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীরাও সেখানে যায়। আফরোজা খান রিতা মাজার জিয়ারত শেষে নিজের বহনকারী গাড়িতে উঠতে গেলে আবারও হট্টগোল বাধিয়ে দেয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ। এ সময় তিনি নিজের দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। 

একপর্যায়ে আফরোজা খান রিতার কর্মী ও সমর্থকদের লাঠিসোটা দিয়ে বেধড়ক মারধর করে যুবলীগ-ছাত্রলীগ। পরে সেখান থেকে আফরোজা খান রিতার গাড়িটিকে বিএনপি দলীয় নেতাকর্মী নিরাপদে নিয়ে যায়। সাটুরিয়া থানার সামনে রিতার গাড়িবহর থামিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের সাহায্য চান। পরে সেখান থেকে সাটুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে প্রচারণায় গেলে, সেখানেও ছাত্রলীগ-যুবলীগ একই কায়দায় বাধা দেয় এবং নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। প্রায় আধা ঘণ্টা পর সাটুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেও পারেনি। তখন গাড়িবহরটি দরগ্রাম অভিমুখে যাত্র করলে পেছনে পেছনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ সেøাগান দিয়ে বেশ কিছু দূর যায়। বাধা ও হামলার কারণে আফরোজা খান রিতা তার নির্ধারিত গণসংযোগ স্থগিত করে মানিকগঞ্জের গিলন্ডা এলাকায় তার নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। প্রচারণায় হামলার ঘটনায় জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানা গেছে।

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, রাঙ্গাবালী উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় দলের অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বিকালে উপজেলার খালগোড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৩টায় খালগোড়া বাজারের রাঙ্গাবালী জাহাগিরিয়া শাহ সুফি মমতাজিয়া সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসা মাঠে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেনের উপস্থিতিতে এক সভার আয়োজন করা হয়। পরে একইসময় ওই বাজারের বালুর মাঠে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মহিব্বুর রহমান মহিবের সমর্থকরাও সভার আয়োজন করেন। এতে দুই পক্ষের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। 

একপর্যায়ে বিকাল সাড়ে ৩টায় তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়। দফায় দফায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী দুই পক্ষের সংঘর্ষে এনামুল ইসলাম লিটু, মজিবর রহমান, মশিউর রহমান শিমুল, সোহেল মাতুব্বর, জসিম হাওলাদার, বাবু তালুকদার, খালিদ বিন ওয়ালিদ, মহসিন মৃধা, রাজিব রহমান, জাকির, মিজানুর রহমান, শওকত প্যাদা, মহসিন হাওলাদার, মাসুম হাওলাদার, নাজমুল হোসেন, রাব্বি হাওলাদার, স্বপন ও নিয়াজ আকনসহ অন্তত অর্ধশত নেতাকর্মী ও সমর্থক আহত হয়েছেন। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৮ জনকে আটক করেন।

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহী সদর আসনে বিএনপির নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ সংক্রান্ত অভিযোগ করেছেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনুর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ওয়ালিউল হক। ওয়ালিউল হক অভিযোগ করেন, সোমবার রাত ১২টার দিকে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর এবং মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। এরপর এসব পোস্টার, ফেস্টুন পদদলিত করেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম। অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানানো হয়েছে।
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ 

দেশজুড়ে ধরপাকড়


নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে ধরপাকড়। প্রতিদিনই রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলায় বিরোধী নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তফসিল ঘোষণার পর বিএনপিসহ বিরোধীদলীয়  নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার না করার দাবি ছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। কিন্তু মোটেই মানা হয়নি সে দাবি। সর্বশেষ নির্বাচন কমিশন থেকে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের দিনও সারা দেশে অন্তত দুই শতাধিক বিরোধী নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকালও অব্যাহত ছিল গ্রেপ্তারের সে ধারাবাহিকতা। 

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, বিএনপি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনায় নেতৃত্ব দেয়ার কথা তাদেরই বেছে বেছে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গত এক মাসে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিএনপিসহ অঙ্গদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অন্তত এক হাজার গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কোনো কোনো জায়গায় গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের থানায় নিয়ে নির্মমভাবে মারধর করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপি প্রার্থীদের উঠান বৈঠক, নির্বাচনী কর্মকাণ্ড ও গণসংযোগকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়ে আতঙ্ক তৈরি করছে। হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে। তবে গ্রেপ্তার নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়। যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তারা সবাই ফৌজদারি মামলার আসামি। গোয়েন্দা তথ্যে নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্য যারা নাশকতা চালাতে পারে এবং অতীতেও যাদের বিপক্ষে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল তাদের নজরদারি ও পুরাতন মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। 

বিএনপির তথ্য মতে, চট্টগ্রাম-৪ আসনের বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ইসহাক কাদের চৌধুরীর বাড়িতে নির্বাচনী সভা চলাকালে বাড়ির ১০০ গজ দূরে র‌্যাব-পুলিশের ১০-১২টি গাড়ি অবস্থান নিয়ে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এ সময় আসলাম চৌধুরীর ভাই নিজাম উদ্দিন চৌধুরীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। সভা শেষে ফেরার পথে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহিরুল আলম জহির, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সামশুল আলম, পাহাড়তলী বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, আব্বাস রশিদ, সীতাকুণ্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাজী সেলিমসহ ২৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে জামালপুরের মেলান্দহে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে একটি মাজার জিয়ারত শেষে ফেরার পথে দুর্মূট ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ রাশেদুুজ্জামান অপুর বাসা ঘেরাও বিএনপি নেতা সাহেব আলী মেম্বার, আলমগীর মেম্বার, জিয়াউল, যুবনেতা মোতালেব, হযরত আলী ও হেলালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্যদিকে শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী উপজেলা বিএনপি নেতা ও ইউপি মেম্বার ফারুক, ঝিনাইগাতি উপজেলার মালিঝিকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি লুৎফর ও ছাত্রদল নেতা নূর মোহাম্মদকে একটি উঠান বৈঠকে হানা দিয়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শেরপুরের এসপি’র নির্দেশে জেলা বিএনপির অফিসের সামনে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য টাঙ্গানো সামিয়ানা গুঁড়িয়ে দেয় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। এ ছাড়া নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইমাম হাসান আবু চাঁন ও দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মজিবুর রহমান এবং কুষ্টিয়া সদর থানা ছাত্রদল নেতা শফিকুর রহমান সাবু ও জিয়ারখি ইউনিয়ন যুবদল সাধারণ সম্পাদক বাবুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে চাঁদপুর-৪ আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী আবদু হান্নানের নির্বাচনী সভা চলাকালে পুলিশ বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। কোনো মামলা ছাড়া গ্রেপ্তারের পর চাঁদপুর জেলা ২০ দলীয় জোট নেতা বিল্লাল হোসেন নিয়াজীর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে ভৌতিক মামলা। অন্যদিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ছাত্রদল নেতা কামরুজ্জামানসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।      
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক কমিশনার আবদুল আলিম নকীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুর রহমান, মিরপুর থানা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আবদুল, সাধারণ সম্পাদক ওয়াইজ উদ্দিন ও যুগ্ম সম্পাদক একেএম লুৎফল বারী মুকুলকে সোমবার ঢাকা জজকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফে তাদের গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেনি। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তরে ক্যান্টনমেন্ট থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশীদ, শেরেবাংলানগর থানার বিএনপির জামাল, সেলিম, অলি, শামীম, নুর জামাল, অলিউল ইসলাম, শামীম হোসেন, শেখ রাসেল, রনি, জাহাঙ্গীর হোসেন, হিমু ও শানুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে গতকাল দুপুরে দয়াগঞ্জ থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি ও কদমতলী বিএনপির সভাপতি মীর হোসেন মিরু, কমিশনার মোজাম্মেল ও বাদশাসহ তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আগের দিন গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বংশাল থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাজী আবুল হাশেম শাহজাহান, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা খোকন ও কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদল নেতা সাহিদকে গ্রেপ্তার করে। রোববার রাত আটটায় রাজধানীর বিজয়নগর থেকে নেছারাবাদ উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাজীব রায়হান ও নাজিরপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান শরীফকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের আর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ২০০টি মিথ্যা মামলার মধ্যে গত ১৪ই নভেম্বর হাইকোর্ট ১৪টি মামলায় জামিন মঞ্জুর করেন। ৯ই ডিসেম্বর সরকারের হস্তক্ষেপের ফলে হাইকোর্ট বিভাগের এ্যাপিলেট বিভাগ কোনো কারণ ছাড়াই সে ১৪ মামলার জামিন বাতিল করে দেন। তিনি টাঙ্গাইল-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। 

এদিকে দৈনিক মানবজমিনের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সিলেটের গোলাপগঞ্জে নাশকতার মামলার অভিযোগে দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও একজন ইউপি বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সোমবার দুপুরে সিলেট-জকিগঞ্জ মহাসড়কের হেতিমগঞ্জ নামক স্থান থেকে ২নং গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ চৌধুরী এবং ৩নং ফুলবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ফয়ছলকে তার অফিসের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া বুধবারীবাজার ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক (গত ইউপি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে যিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন) মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিনকে ফোন করে থানায় নিয়ে আটক করা হয়। তবে মামলায় উল্লেখিত অভিযোগের বিষয়টি সাজানো বলে দাবি করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এদিকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলা জামায়াতের আমীর ডা. ইদ্রিস আলী, নায়েবে আমীর মোস্তাফিজুর রহমান ফিরোজ, আবদুল কুদ্দুস ও পাবনা সদর উপজেলা জামায়াতের অফিস সহকারী ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলা জামায়াতের তিন নেতা সামাদ শেখ, কফিলউদ্দিন, হোসাইন শেখকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফেনীতে বিএনপি প্রার্থীর মিছিল শেষে ফেরার পথে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আলম মিলন, সদর থানা সম্পাদক মিলন ও সদস্য নয়নকে গ্রেপ্তার করেছে ফেনী সদর থানা পুলিশ। ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আগের রাতে রাজাপুর থানা পুলিশ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস সিকদার ও ছাত্রদল নেতা গোলাম আজমকে গ্রেপ্তার করে। যশোর জেলার চৌগাছা থানা পুলিশ উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও পাশাপোল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল কাদের ও চৌগাছা পৌর জামায়াতের আমীর মাওলানা আবদুল খালেককে গ্রেপ্তার করে। যশোরের মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র শহীদ ইকবাল হোসেন ও তার দুই ছোট ভাই যুবদল সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান নিস্তার ফারুক ও তুহিন হাসানসহ বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের ৩৪ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ ৮৪ জনের নামে একটি নাশকতার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে পুলিশ ফারুক হোসেনসহ ১২ বিএনপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। 

এর আগে রোববার রাতে দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম, পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি সিরাজ, হাকিমপুর উপজেলা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মির্জা, চিরিরবন্দর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী, হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় ইউপি চেয়ারম্যান মেফতাউল জান্নাত, পার্বতীপুরের রামপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সাদো, নবাবগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম ডাবলুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া বগুড়ার শেরপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাসানুল মারুফ শিমুল, ময়মনসিংহের পাগলা বিএনপি নেতা আবদুল হামিদ চেয়ারম্যান, বাগেরহাটের কচুয়া বিএনপি নেতা আল মামুন, ভোলা লালমোহন থানা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াসউদ্দিনসহ ৫ জন, টাঙ্গাইলের গোপালপুর বিএনপি নেতা আবুল কালাম, কিবরিয়া, ঢাকা মহানগর উত্তরের দারুস সালাম থানা বিএনপির সভাপতি রহমান হাজীকে বাসায় না পেয়ে তার ছেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কুমিল্লার লাকসাম পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা-৯ আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট তাজুল ইসলাম খোকনকে গতকাল ডিবি পুলিশ রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে তুলে নিয়ে ভাষানটেক থানায় হস্তান্তর করেছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সবুজবাগ বিএনপি নেতা মিন্নত আলীকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন চালায়। তিনি এখন স্থানীয় একটি হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন। 

এদিকে সারা দেশের বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়। যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তারা সবাই ফৌজদারি মামলার আসামি। ফৌজদারি অপরাধে কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নাই। সে যে দলেরই হোক না কেন। 

গোয়েন্দা তথ্যে নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে যারা নাশকতা চালাতে পারে এবং অতীতেও যাদের বিপক্ষে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল তাদেরকে নজরদারি ও পুরাতন মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যদিও বিরোধী জোটের অভিযোগ রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে ধরপাকড় করা হচ্ছে। সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (অপারেশন) জয়দেব কুমার ভদ্র মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। ২০১৩ সালের আন্দোলন থেকেই বিভিন্ন মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক বা নির্বাচন কেন্দ্রিক কোনো গ্রেপ্তার হচ্ছে না। এখনো যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদেরকে পুরাতন ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে আমাদের সিলেট অঞ্চলে মামলা ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা খুবই কম। নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো মহলকে নজরদারিতে রাখা নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের গোয়েন্দা তথ্যে নির্বাচন বানচাল বা নাশকতার পরিকল্পনা করছে এমন ব্যক্তি, নেতাকর্মী ও গোষ্ঠীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ঢাকা রেঞ্জের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন মানবজমিনকে বলেন, রাজনৈতিক কারণে নয় ফৌজদারি মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ফৌজদারি অপরাধ করলে যে দলের হোক না কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। 

এ ছাড়া নির্বাচনে নাশকতা, ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই বা যেকোনো ধরনের সহিংস আচরণ করতে পারে এমন কিছু নেতাকর্মীদের আমরা চিহ্নিত করে রেখেছি। অতীতে যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল মূলত তাদেরকে আমরা নজরদারিতে রেখেছি ও গ্রেপ্তার করছি। আবার অনেকের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলা রয়েছে তাদেরকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পুলিশ সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। যে সকল এলাকার ভোট কেন্দ্রে আগের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না সেগুলো নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তা করা হচ্ছে। কোনো তালিকা নিয়ে পুলিশ কাজ করছে কিনা এমন প্রশ্নে এই ডিআইজি বলেন, তালিকা একটি চলমান কাজ। পুলিশ সব সময়ই একটি তালিকা নিয়ে কাজ করে। কিন্তু সেই তালিকা সব সময় ঠিক তাকে না। কখনো তালিকাভুক্তদের সক্রিয়তা কমে যায়। আবার তালিকার বাইরে থাকা অনেকের সক্রিয়তা বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে তাদেরকে তালিকাভুক্ত করা হয়। 

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ 

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে ইসিতে হাফিজ ও খোকন

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। গতকাল তারা পৃথকভাবে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার পরিস্থিতির কথা জানান। ভোলাসহ সারা দেশের নির্বাচনী পরিস্থিতির বিষয়ে অভিযোগ জানাতে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হাফিজ উদ্দিন আহমদ। জাতীয় নির্বাচনের আগে, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলার ঘোরতর অবনতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। নির্বাচনের আগে, অবৈধ অস্ত্র জমা নেয়া ও এসবের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর কথা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে নিশ্চুপ বলেও অভিযোগ করেন তিনি। অবৈধ অস্ত্রধারীরা ঢাকা ও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলেও জানান মেজর (অব.) হাফিজ। তিনি বলেন, তারা ইতিমধ্যে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপরে ক্রমাগত অত্যাচার-নির্যাতন বেড়েই চলেছে।

জেলা যুবদলের সভাপতি জামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক সেলিমসহ অনেক সিনিয়র নেতাকে মেরে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ সময় হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ভোলা-৩ এলাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে সন্ত্রাসকবলিত এলাকা। সেখানে জান-মালের কোনো নিরাপত্তা নেই। রাস্তাঘাটে অস্ত্রধারীরা টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দেখেও দেখছে না। ৩৫ জন যুবদল কর্মী আহত হওয়ার পর উল্টো এসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, রাজধানী থেকে সন্ত্রাসীরা গিয়ে ভোলার সংসদীয় আসনে অবস্থান নিয়েছে। সারা দেশে ভোটাররা যদি কেন্দ্রে যেতে না পারেন সেজন্য ক্ষমতাসীন সরকার দায়ী থাকবে বলেও তিনি জানান। নির্বাচন কমিশনও এই দায়-দায়িত্ব এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। ভোলা-৩ আসনের অন্তত ৫০০ নেতাকর্মী উচ্চ আদালতে হন্যে হয়ে ঘুরছে বলেও জানান তিনি। হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছি না। অন্য প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন এবং প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে, এক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর আমি আদালতের বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। পুলিশি হয়রানি ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আদালত-প্রশাসনকে অবহিত করতেও নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেন মেজর (অব.) হাফিজ। 

পুলিশের বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তারের অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নোয়াখালী-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। মঙ্গলবার দুপুরে চার নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে খোকন সাংবাদিকদের বলেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে মহড়া দিচ্ছে। পুলিশ এসব অপরাধের কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দুই বিএনপি নেতাকর্মীকে অপহরণ করা হয়েছে, গুলি করা হয়েছে। আহত হয়ে এসব নেতাকর্মী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হলেও পুলিশ কোনো মামলা নিচ্ছে না। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর প্রথম দিন থেকেই চাটখিল- সোনাইমুড়ি এলাকায় পুলিশ আগ্রাসী হয়ে উঠেছে দাবি করে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিনা কারণে বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি করছে পুলিশ। পাশাপাশি, সারা দেশেও পুলিশ গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে। নোয়াখালীর রিটার্নিং কর্মকর্তাকে  এসব অভিযোগের বিষয়ে জানানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ কমিশনের কোনো কথা শুনছে না। ইসি গণগ্রেপ্তার বন্ধ করতে বললেও পুলিশ এসব আমলে নিচ্ছে না। নতুন নতুন মামলায়, মাদক দিয়ে কর্মীদের ফাঁসানো হচ্ছে। চাটখিলের ওসি এক বিএনপি নেতাকে আটক করে তার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছে। প্রচারণার শুরুর দিন থেকেই পুলিশের ওপর কমিশনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশ, সরকারি অফিসার, আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন। রিটার্নিং অফিসাররা চেষ্টা করেও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখতে পারছেন না। এসব অনিয়ম বন্ধে কমিশনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান মাহবুব উদ্দিন খোকন। সেই সঙ্গে পুলিশ অফিসারদের বদলি ও অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুত শাস্তি প্রদানের দাবি জানান তিনি।

কার্টসিঃ মানবজমিন/ ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ 

নির্বাচনী ইশতেহার - রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে কী দেবে

সম্পাদকীয়

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হয়ে গেছে। আর মাত্র তিন সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। তাঁরা নিজ নিজ দল বা জোটের পক্ষে ভোটারদের সমর্থন আকর্ষণের চেষ্টা করছেন, কিন্তু নির্বাচিত হলে তাঁরা দলগতভাবে দেশ ও জাতির জন্য কী করবেন, সে সম্পর্কে তেমন কিছু এখনো জানা যায়নি। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে অনেক প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে, লিখিত ও মুদ্রিত আকারে সেগুলোর উপস্থাপন ঘটে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এটা একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনের পথে দলগুলোর প্রস্তুতি অনেক দূর এগিয়ে গেছে, সময়ও আর বেশি নেই; কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেনি।

ভোটাররা কোন দলকে কী প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে ভোট দেবেন—গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটা একটা স্বাভাবিক ও প্রচলিত কৌতূহলের বিষয়। নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করার আহ্বান জানানো হয়। রাজনৈতিক দলগুলো সেসব আহ্বানে সাড়া দেয়, কখনো কখনো আহ্বান ছাড়াই তারা ভোটারদের মনোযোগ ও সমর্থন আকর্ষণের উদ্দেশ্যে নানা প্রতিশ্রুতিসংবলিত নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ ও প্রচার করে। আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার সম্পর্কে জনসাধারণের আগ্রহ কম। এর কারণ সম্ভবত এই যে দলগুলো নির্বাচনের আগে ইশতেহারের মাধ্যমে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চায়, নির্বাচিত হওয়ার পর সেগুলো পূরণ করে না। তাদের এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ নিয়মিত চর্চায় পরিণত হয়েছে এবং জনসাধারণ সম্ভবত এই তিক্ত উপলব্ধিতে পৌঁছে গেছে যে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের আগে যত প্রতিশ্রুতিই শোনাক না কেন, ক্ষমতায় গিয়ে তারা সব প্রতিশ্রুতি ভুলে যাবে।

এটা একটা হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি, এভাবে কোনো গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার অগ্রগতি সাধিত হতে পারে না। জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো নিয়মিতভাবে ভঙ্গ করা যদি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়, তাহলে সেই গণতন্ত্রে জনসাধারণ ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে শ্রদ্ধা ও আস্থার সম্পর্ক থাকতে পারে না।

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ না করার এই নেতিবাচক চর্চা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের গুরুত্ব আছে। কারণ, প্রতিটি দলের নির্বাচনী ইশতেহার জনগণের সঙ্গে তাদের লিখিত ও মুদ্রিত চুক্তির মতো একটা বিষয়। এই চুক্তির ভিত্তিতে জনসাধারণ তাদের নির্বাচিত সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করার দাবি তুলতে পারে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জবাবদিহি চাইতে পারে এবং মেয়াদ শেষে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে পারে।

নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো নির্বাচনের পরে পূরণ করা হবে কি না, সেই প্রশ্ন ছাড়াই বলা যেতে পারে, ইশতেহার প্রকাশিত হলে সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের বিভিন্ন ফোরামে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে; ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুবিধা হতে পারে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলো সমাজের বিভিন্ন অংশের দাবিদাওয়ার প্রতি সাড়া দিয়ে সেগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। যেমন, সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের প্রতিশ্রুতি নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আহ্বান জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো যেন তাদের ইশতেহারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি যুক্ত করে।

আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে জনগণের আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকবে। একই সঙ্গে এটা প্রত্যাশিত যে, এসব প্রতিশ্রুতি যেন নিছক কথার কথা না হয়। সরকারে গেলে কী করবে আর বিরোধী দলে থাকলে কী করবে, সেই প্রতিশ্রুতিও থাকা প্রয়োজন।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/১২ ডিসেম্বর ২০১৮