Search

Tuesday, January 8, 2019

জাতীয় নির্বাচন - জেতার জন্য এত কিছুর দরকার ছিল কি?

আনু মুহাম্মদ

দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও গবেষকেরা জিজ্ঞাসা করেন, ‘নতুন’ সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা কী? কী জবাব দেব? কী প্রত্যাশার কথা জানাব? এটা ঠিক যে আমরা চাই না দেশের আগামী সরকারও নদী, পাহাড়, বন দখলকারী, সাম্প্রদায়িক শক্তি দ্বারা পরিচালিত হোক। আমরা চাই, আগামী সরকার ত্বকী, তনু, দীপন, নিলয়, সাগর-রুনিসহ আরও অনেক শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষের খুনিদের বিচার করবে। ক্রসফায়ারের নামে খুন, গুম, আর পথে-ঘাটে, ঘরে-বাইরে যৌন নিপীড়ন-ধর্ষণের অবাধ ধারা বন্ধ করবে। প্রতিবাদী কিশোর-তরুণদের দমন করতে হেলমেট আর হাতুড়ি বাহিনী জন্ম নেবে না। উন্নয়নের নামে প্রাণ–প্রকৃতিবিনাশী প্রকল্প হবে না, সুন্দরবনবিনাশী রামপাল প্রকল্প আর দেশবিনাশী রূপপুর প্রকল্প বন্ধ হবে। সরকার সাম্প্রদায়িকতা আর জাতিবিদ্বেষ দূর করায় সক্রিয় থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংকসহ সব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিবাজ, অদক্ষ, তোষামোদিদের আড্ডাখানায় পরিণত হবে না। সাম্য, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল, তার নামে বৈষম্য, অবিচার ও গণতন্ত্র হরণের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে না। এসব প্রত্যাশা কি এই ‘নতুন’ সরকারের কাছে রাখার কোনো উপায় আছে, যেখানে এই সব কটিতে এ সরকারেরই আগের পর্বে প্রধান ভূমিকা ছিল?

এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশে নির্বাচন নিয়ে একটা উচ্ছ্বাস তৈরি করা হয়েছিল। তবে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকে সরকারের ভাবগতিক দেখে সবার মধ্যে এই ধারণা জোরদার হয়েছিল যে নির্বাচনের ফলাফল সরকারই নির্ধারণ করবে। তবে কী ফলাফল সরকার নির্ধারণ করতে চায়, তা নিয়ে বিভিন্ন মত ছিল। একটা সাধারণ ধারণা ছিল যে সরকার অন্তত ২০০ আসন দলের দখলে রাখতে চেষ্টা করবে। বাকি ১০০ আসন নিজেদের শরিক ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে গেলে তাদের আপত্তি থাকবে না। সরল মনে প্রশ্ন আসবে, এভাবে নির্বাচন হয় নাকি? এটা কী করে সম্ভব? প্রকৃতপক্ষে, এ রকম ফলাফল সম্ভব করার জন্য যে বহুদিন ধরেই খুবই গোছানো পরিকল্পনায় কাজ হয়েছে, তা ঠিকই বোঝা গেছে। 

বিজ্ঞাপনী সংস্থা বা পিআর এজেন্সিসহ দেশি-বিদেশি বহু প্রতিষ্ঠান এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ করেছে। এসব কাজের কয়েকটি দিক ছিল প্রধান: প্রথমত, সরকারের সাফল্য এবং বাংলাদেশের জন্য আওয়ামী লীগের অপরিহার্যতা প্রচারে যত পথ ও পদ্ধতি আছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার। দ্বিতীয়ত, সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে একদিকে পচানো, অন্যদিকে তার নড়াচড়ার ক্ষমতা বন্ধ করা। একদিকে হামলা, মামলা ও আটক করা, অন্যদিকে নিজেদের প্রচার বেগবান করা। তৃতীয়ত, প্রচারের মাধ্যমগুলোকে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির মধ্যে রাখা। টিভি টক শো, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন, ফেসবুক যাতে সরকারের পক্ষে থাকে তার জন্য আইনি–বেআইনি সব পথ গ্রহণ। ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ তার একটি। চতুর্থত, সব প্রতিষ্ঠানে সরকারি দলের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা। পঞ্চমত, সমর্থক গোষ্ঠী সম্প্রসারণের জন্য আর্থিক প্রণোদনাসহ নানা ব্যবস্থা গ্রহণ।

নির্বাচনী প্রচারকালে গ্রাম থেকে রাজধানী পর্যন্ত আমরা একই দৃশ্য দেখেছি। সবার জন্য সমান সুযোগের কথা নির্বাচন কমিশন বলেছে, কিন্তু নেতা-কর্মী-ধর্ম-জাতি-লিঙ্গ-দল-মত-বয়সনির্বিশেষে নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে, উৎসবমুখর পরিবেশে একমাত্র সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষেই প্রচারণা চালানো সম্ভব ছিল। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে আমি আমার এলাকাতেও শুধু সরকারি দলের মিছিল ও পোস্টার দেখেছি। শুনেছি তাদের সুন্দর সুন্দর গান, ভুভুজেলার আওয়াজ আর বেতার-টিভিতে বিজ্ঞাপনী প্রচার। দেখেছি, শুনেছি সারা দেশে সরকারি দলের বাইরে বহু প্রার্থী এবং তাঁদের নির্বাচনী প্রচার আক্রান্ত হয়েছে, পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার করেছে, অসংখ্য মিথ্যা মামলা হয়েছে। সরকারি দলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রশাসন ও পুলিশ সদা সক্রিয় ছিল, সর্বাত্মক সহযোগিতায় ছিল নির্বাচন কমিশন। এ রকম ভিডিও অনেক পাওয়া যাচ্ছে, আমিও একাধিক দেখেছি, যেখানে স্থানীয় পর্যায়ে সরকারদলীয় সমাবেশে বক্তারা সরাসরি কর্মসূচি ঘোষণা করছেন নৌকা ছাড়া অন্য সব প্রার্থী ঠেকানোর, হুমকি দিচ্ছেন নৌকা ছাড়া অন্য কোথাও ভোট দিলে ভয়াবহ পরিণতির। অবিরাম হামলা, মামলা, হুমকি আর নিয়ন্ত্রণ দিয়ে সরকারি দলে নিশ্চিন্ত অবস্থা, উৎসবমুখর পরিবেশ, আর তা ছাড়া বাকি সবার জন্য উৎসবের বদলে ভয়ের পরিস্থিতি এটাই ছিল নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতি।

বাংলাদেশের মানুষ সাধারণভাবে আড্ডা ও তর্কপ্রিয়, রাজনীতিমনস্ক এবং নিজের মতপ্রকাশে আগ্রহী। নির্বাচনের সময় তাই দেশজুড়ে বিশাল আড্ডা, তর্ক-বিতর্কের আবহাওয়া, চায়ের দোকান, ফার্মেসিসহ সর্বত্র জমজমাট আলোচনা আমাদের খুব পরিচিত দৃশ্য। এবারের নির্বাচনে এই দৃশ্য ছিল না। শুধু নৌকার পক্ষেই আসর বসেছে, তা–ও প্রতিপক্ষ না থাকায় সেগুলোও জমেনি। সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটল নির্বাচনের আগের রাত থেকে। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যাচ্ছে: কোনো কোনো কেন্দ্রে আগের রাতে বা ভোট গ্রহণের আগেই ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছে। অভিযোগ হলো, এর মধ্য দিয়ে ৩০ শতাংশ ভোট আগেই নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট, সমর্থক, ভোটারদের কেন্দ্রের আশপাশে আসার পথে বাধা দেওয়া হয়েছে। আক্রমণ, হুমকি, ধরপাকড়—সবকিছুই কাজে লাগানো হয়েছে। তৃতীয়ত, দিনের বেলা বিভিন্ন সময় সরকারি দলের কর্মীরা ব্যালট পেপারে সিল মেরে মেরে বাক্স ভরেছে। আমি দেখেছি, আমার ভোটকেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা সকাল থেকেই খুব কম ছিল, সারা দিনে ২০ শতাংশের বেশি হয়েছে বলে মনে হয় না। চারদিকে শুধু সরকারি দলের পোস্টার আর কর্মীরা। এলাকায় আশপাশের কেন্দ্রগুলোতে অবস্থা একই রকম দেখেছি। প্রার্থী ৮ থেকে ১০ জন হলেও কোথাও কোথাও পোলিং এজেন্ট একজন।

ফলাফল দেখে বোঝা গেল, সরকারের যে প্রস্তুতি ছিল, সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের সংগঠন, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্মিলিত আয়োজন যা ছিল, তাতে আগে পরিকল্পনা থাকলেও বিজয় ২০০ বা ২২০ আসনে গিয়ে থামতে পারেনি। সরকারি দলের পক্ষে ভোটসংখ্যাও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। উল্লিখিত সবার সম্মিলিত চেষ্টায়, উৎসাহে, পরিশ্রমে মোট ভোটের সংখ্যা এবং সরকারি দলে প্রাপ্ত ভোটের হার—দুটোই অস্বাভাবিক বেশি হয়েছে। এগুলো করতে গিয়ে কোনো কোনো কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো কোনো প্রার্থী অস্বাভাবিক কম এমনকি শূন্য ভোট পেয়েছেন।

নির্বাচনে বিজয়ের জন্য কি আওয়ামী লীগের এত কিছু দরকার ছিল? আগে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, প্রচারে যে একাধিপত্য তৈরি হয়েছিল, তাতে ভোটের দিন এসব কাণ্ড না করলেও আওয়ামী লীগ জিততে পারত। কিন্তু জনগণের মুখোমুখি হতে তারপরও ক্ষমতাসীন দল ভয় পেয়েছে। সে জন্যই এই ঘটনা ঘটল। রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের দমন করে এ রকম একতরফা নির্বাচন সরকারি দলের শক্তি প্রমাণ করে না; বরং এটাই প্রতিষ্ঠিত হয় যে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাওয়া এই দল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করে। এ রকম একটি শক্তিশালী দল, যার উল্লেখযোগ্য জনসমর্থনও আছে, তার এই করুণ দশা হলো কেন, সেটাই এক বড় প্রশ্ন।

সন্দেহ নেই, ২০১৪ সালের পর এবারের নির্বাচন ক্ষমতাসীন দলের জন্য আরও খারাপ নজির হয়ে থাকল। তাতে অবশ্য সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের কিছু আসে–যাবে বলে মনে হয় না। কেননা, সরকারের কাছে, তার দেশি–বিদেশি সহযোগীদের কাছে ক্ষমতাই আসল। পথ ও পদ্ধতি বৈধ কি অবৈধ, নৈতিক কি অনৈতিক, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও প্রতিষ্ঠান বিনাশে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের জন্য ফলাফল কী, সেসব বিবেচনার গুরুত্ব খুব কম।

  • আনু মুহাম্মদ অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অথনীতি বিভাগের অধ্যাপক
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জানু ৮, ২০১৯ 

কৃষকের জমি দখল করে ‘বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেট’


জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া কালিবাড়ি বাজার সংলগ্ন এক ভূমিহীন কৃষকের লিজ নেয়া ফসলি জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে। রাতারাতি দখল করা ওই জমিতে ‘বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেট’ নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে।

কেন্দুয়া কালিবাড়ি বাজারের কুলি ভূমিহীন কৃষক বৃদ্ধ আব্দুর রহমানের অভিযোগ, বাংলাদেশ রেলওয়ের ৪৫ শতাংশ কৃষি জমি ৯৯ বছরের লিজ নিয়ে ধান চাষ করে সংসার চালাতেন তিনি। ৩ দিন আগে রাতের অন্ধকারে স্থানীয় প্রভাবশালী দুর্বৃত্তরা তার লিজ নেয়া জমি জোরপূর্বক দখল করেছে। দখল করা রেলের ওই জমিতে ‘বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেট’ নাম দিয়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে।

একজন কৃষকের জমি জবর দখল করার ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জমি ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বৃদ্ধ আব্দুর রহমান।

  • কার্টসিঃ জাগোনিউজ/ জানু ৮, ২০১৯ 

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও সুশাসনই চ্যালেঞ্জ

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাই নতুন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি এবং উদার গণতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে বিরোধীদের আস্থায় নেয়ার বিষয়টিকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে নতুন সরকারকে। সাবেক মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী বলেন, সরকারের এই বিপুল জয় এটাই তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ এ ধরনের জয় সাধারণত প্রচলিত এবং আমাদের পরিচিত গণতন্ত্রে অত্যন্ত বিরল ব্যাপার। সংসদে কোনো সক্রিয় বিরোধী দল থাকবে না। ফলে সেখানে এক ধরনের প্রবল একাত্মবাদ চলতে পারে। এবং সেভাবে যদি তাদের কাজকর্ম অগ্রসর হয় তাহলে সরকারের সত্যিকার গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়া বিরল ও দুরূহ হতে পারে। 

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নতুন সরকারের সামনে নির্বাচনী ইশতেহারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এই ইশতেহারের সঙ্গে জনগণের প্রত্যাশা জড়িত। এ ছাড়া দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশে উদার রাজনীতির ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, নতুনদের কাছে প্রত্যাশা তারা পুরনো মনোবৃত্তি থেকে বের হয়ে আসবে। আর পুরনো কিছু অভিজ্ঞ মন্ত্রীরা রয়েছেন, নতুন পুরাতনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কাজ করতে হবে। তবে ভালোই হবে বলে মনে করছি।

শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, প্রথমত তাদের ইশতেহারে যা যা লেখা আছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ মানুষের মনে যে আশা তারা দিয়েছে সেটা ইশতেহারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। যদিও আমি মনে করি ইশতেহারের সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক থাকে না। তারপরও তারা যেহেতু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ উঠেছে সে অভিযোগ যাতে আর না উঠে সে ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়গুলো নিশ্চিত করা। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুস্থ করা। বিরোধী পক্ষের ওপর অকারণে হামলা, গ্রেপ্তার ও তাদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা যাতে দেয়া না হয়। এটা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ মানুষ উন্নয়ন চায়, পাশাপাশি গণতন্ত্র চায়। সেই গণতন্ত্র নিশ্চিত না হলে উন্নয়ন অর্থবহ হবে না। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, সরকার ও দল যেন এক না হয়ে যায়।

এটি সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে আমাদেরকে। প্রশাসন দলের হয়ে কাজ করে এটি বড় ক্ষতি করে গণতন্ত্রের। আমি মনে করি দলের কোনো সভা গণভবনে হওয়াটা অনুচিত। দলের সভা হবে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। সরকার-দল সব এক হয়ে গেছে মন্তব্য করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, গণতন্ত্র এখানেই হোঁচট খেয়েছে। যার কারণে প্রশাসন পুলিশ অনেক সময় সরকারের কাজ করতে গিয়ে দলেরই কাজ করে। এটা থেকে বের হতে হবে। নতুনদের ওপর প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই ভেবে নিয়েছে পুরাতনরা যা করতে পারেনি নতুনরা তা করে দেখিয়েছে। পুরাতনরা ভালো কাজ করেছেন, কিন্তু সেটা একটা মাত্রায় এসে আটকে গেছে। যেমন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একটি মাত্রায় গিয়ে ঘুরে ফিরে আবার পেছনের দিকে চলে এসেছে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখন আনন্দ বঞ্চিত শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে পড়ে গেল। কোচিং বাণিজ্যসহ নানা বাণিজ্যের মধ্যে পড়ে সত্যিকারের পড়ার উৎসাহ হারিয়ে যাচ্ছে। তাই তরুণরা যারা আসবেন তাদেরকে এই জিনিসগুলো মাথায় রেখে দুর্বলতা, অপূর্ণতাগুলোকে ভরাট করতে হবে। এটিকেও আমি চ্যালেঞ্জ মনে করি। 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা আমি মনে করি রাজনৈতিক। এবং সেটা হচ্ছে অভূতপূর্ব নির্বাচন এবং অভূতপূর্ব ফলাফল। বিশেষ করে অভূতপূর্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতা। সেটাকে ম্যানেজ করা হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এবং বিশেষ করে এই জন্য যে এই প্রেক্ষিতে জবাবদিহিতার সম্ভাব্য যে ক্ষেত্র সেটা একেবারেই সংকুচিত ও নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তারা যদি ক্ষমতাটাকে মনে করেন নিজেদের সম্পদ বিকাশের সোপান। এবং এই মানসিকতা নিয়ে যদি মন্ত্রিত্বের ভূমিকা পালন করেন সেটাও একটি চ্যালেঞ্জ। যেটা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গে  সাংঘর্ষিক হবে। দ্বিতীয়ত যে বিষয়টি তা হলো প্রধানমন্ত্রী বলেছেন অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। যেটা তাদের ইশতেহারে পরিষ্কারভাবে বলা আছে। এবং যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার। কিন্তু অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে নাগরিকের বাকস্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। কাজেই যে আইনগুলো মতপ্রকাশ এবং বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ সেই আইনগুলোকে সংসদে সংস্কার করে ঢেলে সাজাতে হবে। এক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ৮,২০১৯ 

আ'লীগের বীভৎসতায় এখনো আঁতকে ওঠেন নির্যাতিতা

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সুবর্ণচরে  গণধর্ষণের আসামি আবু ও সালাউদ্দিন গতকাল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের নির্দেশে লাঞ্ছিত করার জন্য ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বেও আমাদেরকে দিয়ে এ ধরনের আরো অনেক অপকর্ম করানো হয়েছে। না করলে বনদস্যু-জলদস্যু কেউ এলাকায় থাকতে পারবে না শীর্ষ সন্ত্রাসী রুহুল আমিনের ভয়ে। একবার অপারগতা প্রকাশ করলে বাড়িঘরে হামলা করা হয়। আমরা বাঁচার তাগিদে এই জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছি। 

আদালত সূত্র জানায়, ধর্ষিতার পোস্ট ট্রমাটি স্টেচ ডিজ অর্ডার (পি.টি.এস.ডি) হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নবনীতা গুহ হাসপাতালের কেবিনে গিয়ে ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ধর্ষিতা জানান, কোর্টের হাকিমকে মহিলা পেয়ে আমি ধানের শীষে ভোট দেয়ায় আমার ওপর কী অত্যাচার করেছে সব কথা বলেছি, যারা আমাকে ধর্ষণ করেছে তাদের সবার নাম বলেছি।সেই দিনের বীভৎসতার কথা, যা এখনো মনে হলে আঁতকে উঠি। 

চরাঞ্চল ঘুরে জানা গেছে, ভোটের রাতে গণধর্ষণের ঘটনায় এই আলোচিত ওসি মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও সাবেক মেম্বার রুহুল আমিন এবং ধানের শীষে ভোট দেয়ার তথ্য-উপাত্ত বাদ দিয়ে গণধর্ষণ মামলা রেকর্ড করে। এ নিয়ে স্থানীয় জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ চলছে। 

সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্য ব্যাগ্যা গ্রামে গৃহবধূ গণধর্ষণের ওই রাত থেকে পলাতক ছিল মামলায় এজাহারভুক্ত ৭ নং আসামি আবুল (৪০)। এর মধ্যে মাঝে মাঝে স্ত্রী ছেমনা খাতুনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করতো আবুল। ঘটনাটি নিয়ে যখন চারদিকে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় তখন পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। 

এরপর ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়। তখন ছেমনা তার স্বামী আবুলকে সেই সব বিষয়ে অবগত করেন এবং নিজ থেকে এসে পুলিশে ধরা দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আবুল তাতে কর্ণপাত করেনি। গত ২/৩ দিন ধরে ছেমনা স্বামীকে বলেন- স্বেচ্ছায় পুলিশে ধরা না দিলে তার ফাঁসি হয়ে যাবে। এর সূত্র ধরে, রোববার বিকালে ছেমনা তার স্বামী আবুলকে দেখা করার জন্য আটকপালিয়া বাজারে আসতে বলে। স্ত্রীর কথামতো বিকাল ৫টার দিকে ওই বাজারে আসে আবুল। এসময় ছেমনা স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় কৌশলে আবুলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।

চরজব্বার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ইব্রাহিম খলিল জানান, আবুলের স্ত্রীর সহযোগিতায় আটকপালিয়া বাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে এই মামলার এজাহারভুক্ত ৭নং আসামি। সুবর্ণচরে গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরো ২ ধর্ষক। অভিযুক্ত আরো দুই আসামি নোয়াখালীর সেনবাগে গ্রেপ্তার মামলা গোয়েন্দা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়েছে। নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের মধ্য ব্যাগ্যা গ্রামে ৩০শে ডিসেম্বর ধানের শীষ মার্কায় ভোট দেয়ার ঘটনায় স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে ৪ সন্তানের জননী গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত আরো দুই আসামি মুরাদ (৩০), ইব্রাহিম খলিল প্রকাশ বেচু (৪০)কে সেনবাগ থেকে গ্রেপ্তার করেছে নোয়াখালী গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।  রোববার ৬ই জানুয়ারি সন্ধ্যার সময় নোয়াখালী গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি’র) ওসি (তদন্ত) জাকির হোসেনের নেতৃত্বে সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া ইউনিয়নের নুরুল আমিনের (এম.পি.ডি) ব্রিকফিল্ডে অভিযান চালিয়ে সুবর্ণচরের মধ্যব্যাগ্যা গ্রামের মো. রফিকের ছেলে মুরাদ তাকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে গত ৩রা জানুয়ারি অপর এক অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত অপর আসামি ইব্রাহিম খলিল প্রকাশ বেচু, একই উপজেলার আরিফের ব্রিকফিল্ড থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই নিয়ে শনিবার রাত থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ আলাদা অভিযান চালিয়ে ধর্ষণ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করলো। এ পর্যন্ত সর্বমোট ১০ জন গ্রেপ্তার হলো। গ্রেপ্তার হওয়া অপর দুইজন হচ্ছে মধ্যব্যাগ্যা গ্রামের টোকাইয়ের ছেলে সালাউদ্দিন ও একই গ্রামের সেরু মিয়ার ছেলে আবুল। এরই মধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত ৭ জনের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বলেছেন- নোয়াখালীতে গণধর্ষণের ঘটনাকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে এবং সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ গুরুত্বের কারণেই কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার অ্যাকশন নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ১০ আসামিকে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী সকল আসামি ধরা পড়বে এবং আইনানুগভাবেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সোমবার সকালে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুবর্ণচর উপজেলার মধ্যব্যাগ্যা গ্রামে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূর খোঁজখবর নেন বিভাগীয় কমিশনার।

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পাঙ্খার বাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নারীদের নিরাপত্তা দাবি ও গণধর্ষণের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা ভূমিহীন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন উন্নয়ন সংস্থা নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবির। উপজেলা ভূমিহীন সংগঠনের সভাপতি ছেরাজুল হক খোকনের সভাপতিত্বে ও পাঙ্খারবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাতেমা আক্তারের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, মানবাধিকার আইনজীবী সমিতির নির্বাহী সদস্য এড. সালমা আলী, ভূমিহীন নেতা শাহানা আক্তার, ইব্রাহিম খলিল ও নুর উদ্দিন, পাঙ্খারবাজার জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেন বাবুল, ভূমিহীন অঞ্চল কমিটির সমন্বয়ক খোদেজা বেগম, গণধর্ষণের শিকার পারুল বেগমের ওয়ার্ডের পুরুষ মেম্বার খলিল উল্যাহ, মহিলা মেম্বার আমেনা বেগম, ভুক্তভোগী অর্থসম্পদ ও সতীত্বহরণকারী ২৫ জন নারী মিনা, রহিমা, আয়েশা, মনোয়ারা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। প্রধান অতিথি সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসী-ধর্ষকদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান। সমাবেশে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো নারী-পুরুষ সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। 

সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা গণধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি করেন। একই সঙ্গে স্বাধীন দেশে নারীদের নিরাপত্তার দাবি করেন। নিজেরা করি এনজিও’র নির্বাহী পরিচালক খুশি কবির ডিসি, এসপি’র সঙ্গে সন্ধ্যায় দেখা করে গণধর্ষিতাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর অনুরোধ করেন। এদিকে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি ও জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া’র শাইখুল হাদিস মাওলানা মামুনুল হক গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে যুব মসলিসের নেতাকর্মীদের নিয়ে হাসপাতালে যান। এসময় তিনি ভিকটিমের সুচিকিৎসা, নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করে প্রকৃত আসামিদের দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে নরপিশাচদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।  

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ৮,২০১৯ 

আন্দোলনের ‘কৌশল’ নির্ধারণে বিকেলে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক


নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ে ‘আন্দোলনের কৌশল’ খুঁজছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। তবে গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ, সভা-সমাবেশ করার মাধ্যমেই এই দাবি আদায়ের পক্ষে তারা। 

আর আন্দোলনের কৌশল-কর্মসূচি নির্ধারণ করতে মঙ্গলবার, ৮ জানুয়ারি, বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি। বিকেল ৪টায় রাজধানীর বেইলি রোডের ফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বাসভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। 

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দফতর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বৈঠকে ড. কামাল হোসেন ছাড়াও থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী ও ফ্রন্টের অন্যতম নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

ঐক্যফ্রন্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এমপি নির্বাচিতদের শপথ নিয়ে সিদ্ধান্ত ও নির্বাচন পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি নির্ধারণে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ফ্রন্টের ঐক্য যেন বজায় থাকে সে বিষয়েও তাগিদ দেওয়া হবে বৈঠকে। পরে সাংবাদিকদের কাছে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেবেন নেতারা।

Monday, January 7, 2019

সংসদ সদস্যদের শপথ অসাংবিধানিক

শহীদুল্লাহ ফরায়জী


বাংলাদেশের সংবিধান সংসদের মেয়াদ ৭২ (৩) মোতাবেক ৫ বৎসর  নিশ্চিত করেছে। সংবিধান মোতাবেক সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার ক্ষেত্রে দুইটি পন্থা অনুসরণীয় ১. মেয়াদ অবসানের কারণে ২. রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মেয়াদ অবসান ব্যতিত ভেঙ্গে দেওয়া।

বাংলাদেশের দশম সংসদ রাষ্ট্রপতি ভেঙ্গে দেন নি। ফলে দশম সংসদ ২৮শে জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত সাংবিধানিক ভাবে বিদ্যমান। কিন্তু দশম সংসদের মেয়াদ সমাপ্তির আগেই একাদশ সংসদের শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। যা সংবিধানের গুরুতর লঙ্ঘন। বিশ্বের কোন দেশে সংসদের মেয়াদ সমাপ্তি না করে পরবর্তী সংসদের কার্যক্রম শুরু হয় না। শুধু বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম। আওয়ামী লীগ সরকার প্রবর্তিত সংবিধানের ১২৩(৩)ক মোতাবেক দশম এবং একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দুবারই সংবিধান লঙ্ঘন করেছে নির্বাচন কমিশন

দশম সংসদের মেয়াদ অক্ষুন্ন রাখার শর্তে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের ১২৩(৩)ক মোতাবেক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১২৩(৩)ক মোতাবেক জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি অপরিহার্য শর্ত রয়েছে। এই শর্ত পূরণের ভিত্তিতেই যেহেতু একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তাই এ শর্ত পূরণ  অপরিহার্য- এই শর্ত অলঙ্ঘনীয়।

১২৩(৩)ক তে বলা হয়েছে, “মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে... তবে শর্ত থাকে যে এই দফার (ক) উপদফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিগন, উক্ত উপদফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত, সংসদ সদস্য রূপে কার্যভার গ্রহণ করিবেন না।” অর্থাৎ দশম সংসদের মেয়াদ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত একাদশ সংসদ কার্যভার গ্রহণ করতে পারবে না। এটা সংবিধানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা - এই নির্দেশনা একাদশ সংসদের নির্বাচিতগণ ও প্রজাতন্ত্রের সরকার মানতে বাধ্য। নির্বাচন কমিশন ২৮শে জানুয়ারির পূর্বে একাদশ সংসদের কার্যক্রম শুরু বা উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন না। একাদশের নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা গেজেট প্রকাশ সব হবে ২৮শে জানুয়ারির বিবেচনায়, যাতে দশম সংসদের মেয়াদ ক্ষুন্ন না হয়। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের ১৪৮(২)ক মতে যদি ২৮শে জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ করতো, তা হতো সংবিধান অনুসরণে। সংবিধানের যে শর্তে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো তা অনায়াশে লঙ্ঘন করে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন এবং সরকার।

সংবিধানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও ২৮শে জানুয়ারির পূর্বেই তড়িঘড়ি করে শপথ গ্রহণ ও সরকার গঠন করা হবে অসাংবিধানিক। সাংবিধানিকভাবে একাদশ সংসদের শপথ ও সরকার গঠন অবশ্যই হতে হবে ২৮শে জানুয়ারির পর। এর ব্যতয় ঘটলে নির্বাচন কমিশন এবং সরকার সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হবেন।  

এই আইন ভঙ্গ করার কোন সাংবিধানিক এক্তিয়ার রাষ্ট্রের কোন প্রতিষ্ঠানের নেই। নির্বাচন কমিশনও কোন সংসদের মেয়াদকে সীমিত করতে পারে না। দশম সংসদের মেয়াদ একদিনের জন্য সীমিত করার ক্ষমতা সরকার বা একাদশ সংসদের নেই।  

যেহেতু ১২৩(৩)ক অনুযায়ী একাদশ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেহেতু সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার সাংবিধানিক বিধান কার্যকর করার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। যেহেতু দশম সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া হয় নি তাই এর মেয়াদ অবসানের আগে একাদশ সংসদ সদস্যদের শপথ বা সরকার গঠনের  সাংবিধানিক এক্তিয়ার নেই।

১২৩(৩)ক শর্ত যুক্ত অনুচ্ছেদটি আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এক সংসদের মেয়াদ বিদ্যমান থাকা অবস্থায় আরেক সংসদের শপথ সংবিধান ও সংবিধানের চেতনার সঙ্গে চরম সাংঘর্ষিক। 

সংবিধান হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানের প্রাধান্য অক্ষুন্ন রাখা এবং এর রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান আমাদের পবিত্র কর্তব্য হিসাবে প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা রয়েছে। যদি ১২৩(৩)ক এর শর্ত লঙ্ঘিত হয় তাহলে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭২, ৯৩, ৯৮, ১১৮, ১৩৩, ১৩৫, ১৩৮, ১৪১, ১৪২, ১৪৫, ১৪৭ ও ১৫৩ অনুচ্ছেদের সকল শর্ত অকার্যকর হয়ে পড়বে। এতে রাষ্ট্র ও সংবিধানিক শাসন ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে পড়বে।

ভারতের সংবিধান প্রণেতা ড.আম্বেদকর বলেছেন, “সাংবিধানিক আইনকে সাংবিধানিক নৈতিকতার একটি বুনিয়াদের উপর ভর করতে হয়।  ড.আম্বেদকর মতে, সাংবিধানিক নৈতিকতা স্বাভাবিক অনুভূতি নয়। এটা চর্চার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। যতই সতর্কভাবে সংবিধান রচিত হোক না কেন, সাংবিধানিক নৈতিকতার অনুপস্থিতিতে সংবিধানের ক্রিয়া পদ্ধতি স্বেচ্ছাচারী, অযৌক্তিক ও খামখেয়ালী (arbitrary, erratic and capricious) হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আইনপ্রণেতা ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে সাংবিধানিক নৈতিকতার অনুপ্রবেশ না ঘটলে সংবিধানটি  ক্ষমতার দালালদের হাতের খেলনা হয়ে দাঁড়ায়।” আমাদের সংবিধান লঙ্ঘন ও উপেক্ষা করার মধ্যমে ক্ষমতাসীনদের হাতের খেলনায় পরিণত হচ্ছে।

২৮শে জানুয়ারির পূর্বে একাদশ সংসদ সদস্যদের শপথ এবং সরকার গঠনের দ্রুত উদ্যোগ হবে অসাংবিধানিক ও রাষ্ট্রের জন্য বিপদজনক।

সংবিধানের প্রাধান্য, নির্দেশনা, বিধি বিধান, শর্ত লঙ্ঘন করে সংবিধানকে সরকারের অনুকূলে ব্যবহার করার প্রবণতা সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দিবে।

সংবিধান ও সংবিধানিক চেতনাকে অস্বীকার করে রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে না বরং ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মাকে ক্রমাগতভাবে অসম্মান করা হবে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রনায়কদের এই মুহূর্তেই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ৭, ২০১৯ 

গায়েবি মামলা তুলে নিন

সম্পাদকীয়

নির্বাচন–পরবর্তী পরিস্থিতি


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে, ইতিমধ্যে নবনির্বাচিত সাংসদেরা শপথ নিয়েছেন এবং সরকার গঠনের প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু দেশের সবখানে স্বাভাবিক শান্তি ও স্বস্তির পরিবেশ ফিরে আসেনি। ভোট গ্রহণের দিন ও তার অব্যবহিত পরের দিনগুলোতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিহিংসামূলক আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। সেসবের মধ্যে ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধও আছে। নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ‘ধানের শীষে ভোট দেওয়ার অপরাধে’ এক নারীকে আওয়ামী লীগের লোকজন গণধর্ষণ করেছেন—এই অভিযোগের খবরে সৃষ্ট চাঞ্চল্য ও প্রতিবাদ জাতীয় সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনো অব্যাহত আছে।

এ ধরনের ঘটনা রাজনীতি বা নির্বাচনের অনুষঙ্গ হিসেবে ঘটে থাকলেও এগুলোর সামাজিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সুদূরপ্রসারী হয়ে থাকে। সরকারি প্রশাসন তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের জরুরি দায়িত্ব এ ধরনের প্রবণতা দমন করা এবং সংঘটিত অপরাধগুলোর আইনি প্রতিকারের লক্ষ্যে যথাযথভাবে আইন প্রয়োগে তৎপর হওয়া।

সুবর্ণচরের ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশি রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে—এটা নির্বাচনের পরে সংঘটিত অপরাধগুলোর ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের প্রথম দৃশ্যমান পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে অন্তত এটা মনে হতে পারে যে এসব অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েনি। ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীসহ আরও যাঁদের মনে প্রতিহিংসামূলক অপরাধ সংঘটনের ভাবনা ক্রিয়াশীল রয়েছে, সুবর্ণচরে পুলিশের এই সক্রিয়তা থেকে তাঁদের কাছে এমন বার্তা যেতে পারে যে অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না। সারা দেশে এ রকম বার্তা পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। সে জন্য প্রয়োজন নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন এবং তার পরের দিনগুলোতে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটির সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এবং তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠুভাবে আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া।

দুর্ভাগ্যের বিষয়, বাংলাদেশে ইতিমধ্যে আইন প্রয়োগের সংস্কৃতির গুরুতর অবনতি ঘটেছে। একদিকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা–কর্মীরা তাঁদের রাজনৈতিক তৎপরতার জন্য এমন অপরাধের অভিযোগে মামলার শিকার হন, যেসব অপরাধ তাঁরা আদৌ করেননি। হাজার হাজার ‘গায়েবি মামলা’ করা হয়েছে, সেগুলোর আসামি করা হয়েছে বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মীকে। এ ছাড়া প্রতিটি জেলা–উপজেলায় বিএনপির অনেক নেতা–কর্মীর প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ডজন ডজন ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। বিএনপির একই নেতার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে, এমন দৃষ্টান্তও কম নয়।

নির্বাচন শেষ হওয়ার পরও সারা দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা–কর্মীদের পুলিশি হয়রানি বন্ধ হয়নি। ইতিমধ্যে দায়ের করা মামলার আসামির তালিকায় নাম ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকাপয়সা নেওয়ার অভিযোগ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া যাচ্ছে। যেসব রাজনৈতিক নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, তাঁরা ঘরে ফিরতে পারছেন না। যাঁরা নির্বাচনের পর ঘরে ফিরেছেন, তাঁরাও মামলার কারণে পুলিশি হয়রানির শঙ্কা থেকে মুক্ত হতে পারেননি। এই মানুষগুলোর পরিবারে স্বস্তি ফিরে আসেনি।

রাজনৈতিক স্বার্থে আইনের ব্যবহার আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের পরিপন্থী। শুধু তা–ই নয়, এর ক্ষতিকর প্রভাব সামাজিক সম্পর্কের অত্যন্ত গভীরে যেতে পারে। রাজনৈতিক মত পোষণ করা এবং রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষ আইনের বেআইনি প্রয়োগের শিকার হলে সামাজিক সংহতি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করা ও বিরোধীদলীয় নেতা–কর্মীদের ভিত্তিহীন অভিযোগে পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।

  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জানু ৭, ২০১৯ 

চাঁদা তুলতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের পিটুনিতে আ.লীগ নেতা নিহত


চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার পাহাড়তলী বাজারে চাঁদা তুলতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের পিটুনিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেল নিহত হয়েছে। 

সোমবার, ০৭ জানুয়ারী, সকাল ১০টার দিকে পাহাড়তলী বাজারে এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানায়, সোহেল পাহাড়তলী বাজারের প্রতিটি দোক‍ান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে। তার চাঁদাবাজীর কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ব্যবসায়ীরা। আজ সকালে চাঁদা তুলাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা তাকেপিটুনি দেয়। পরে তাকে গুরুতর আহতাবস্থায়েউদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। ডবলমুরিং থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
  • কার্টসিঃ শীর্ষনিউজ/০৭ জানুয়ারী, ২০১৯

বেগম জিয়ার সঙ্গে আত্মীয়দের দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না — রুহুল কবীর রিজভী


বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘আজ প্রায় ২১/২২ দিন অতিক্রান্ত হলেও বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার নিকটাত্মীয়দের দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। বন্দীদের যে আইনসম্মত অধিকার তা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে বেগম জিয়াকে। এই নিষ্ঠুর আচরণ কিসের ইঙ্গিত? বিশাল লাল দেয়ালের মধ্যে বেগম জিয়াকে অন্তরীণ রেখে বাইরের দুনিয়া থেকেও তাকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন করার পাঁয়তারা চলছে।’

সোমবার, জানুয়ারী ৭, সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

নিচে সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণপাঠ দেওয়া হল - 

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,আস্সালামু আলাইকুম। 
আজ প্রায় ২১/২২ দিন অতিক্রান্ত হলেও বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তাঁর নিকটাত্মীয়দের দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। বন্দীদের যে আইনসম্মত অধিকার তা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে বেগম জিয়াকে। এই নিষ্ঠুর আচরণ কিসের ইঙ্গিতবাহী ? বিশাল লাল দেয়ালের মধ্যে রুদ্ধকপাট মুক্তিহীন বেগম জিয়াকে অন্তরীণ রেখে বাইরের দুনিয়া থেকেও সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন করার পাঁয়তারা চলছে। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের সাথে দেখা করতে দেয়ার যে কারাবিধান সেটিকে গায়ের জোরে লঙ্ঘন করাটা বেগম জিয়াকে নিয়ে সরকারের আরেকটি নতুন কোন খারাপ পরিকল্পনা কি না তা নিয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্নটা আরও দীর্ঘতর হচ্ছে। 
পৃথিবীর কোন নিষ্ঠুর স্বৈরতান্ত্রিক দেশেও বন্দীদের সাথে এরুপ দূর্ব্যবহার করা হয় না, যা করা হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম জিয়ার ওপর। বিএনপি চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব আত্মীয়স্বজন ও দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাক্ষাতের জন্য বারবার আবেদন করার পরেও কারাকর্তৃপক্ষ তাতে কোন কর্ণপাতই করেনি। কারাবিধি অনুযায়ী ৭ দিন পরপর বন্দীদের সাথে সাক্ষাতের নিয়ম। অথচ বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে এই বিধান করা হলো ১৫ দিন পরপর। এখন সেই ১৫ দিনের বিধানকেও সরকারের নির্দেশে কারাকর্তৃপক্ষ অগ্রাহ্য করছে। বেগম জিয়ার ওপর এই মানসিক নির্যাতনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নানাভাবে পর্যুদস্ত করার সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনারাই অংশ। বেগম জিয়ার সাথে তাঁর নিকটাত্মীয়দের দেখা করতে না দেয়াটা রীতিমতো কঠিন মানসিক নির্যাতন। এ নিয়ে শুধু তাঁর আত্মীয়স্বজনরাই নয়, দেশবাসী উদ্বেগাকুল ও উৎকন্ঠিত। অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তাঁর আত্মীয়স্বজনদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। 
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,নির্বাচন পূর্বাপর ব্যাপক সহিংসতা, রক্তপাত, ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করা, ধানের শীষের নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর নির্বিচারে আক্রমণ করে রক্তাক্ত করাসহ ধানের শীষের প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদেরকে পাইকারী হারে গ্রেফতার, আদালতকে ব্যবহার করে প্রার্থীতা বাতিলসহ ভোটের নামে নিষ্ঠুর তামাশায় শুধু দেশবাসীই নয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও ক্ষুদ্ধ ও প্রতিবাদে সোচ্চার। মানুষের ভোটাধিকার হরণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ন্যাক্কারজনক ভূমিকায় দেশবাসী হতবাক ও ক্ষুদ্ধ। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন জনগণের ললাটে এক বিষাক্ত কাঁটা। অথচ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, এবারের নির্বাচনের শৃঙ্খলা আগামীবারেও থাকবে। সাবাশ এইচ টি ইমাম সাহেব, আপনি আত্মমর্যাদাহীন, অনুশোচনাহীন, আজ্ঞাবাহী একজন মানুষ যার পক্ষে আগামী নির্বাচন নিয়ে এধরণেরই অঙ্গীকার করা ছাড়া আর কিইবা বলার থাকতে পারে। বিবেক বিক্রি করা এইচ টি ইমাম সাহেব’রা মানুষের ভোট কেড়ে নিতে কত দ্বিধাহীন, কত নির্লজ্জ! ভোগ-লালসায় অস্থির থাকায় এদের কাছে মানবিক বিবেচনাগুলো হারিয়ে গেছে। 
এরা ক্ষমতা ধরে রাখতে পুলিশের বুটের তলায় মানুষের ভোটাধিকার চেপে দেয়ার যে কলঙ্কজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সেটিরই পূণরাবৃত্তি করার অঙ্গীরকার করলেন আগামী নির্বাচনের জন্য। যারা ভোট ও বিবেক বিসর্জন দিয়ে ন্যায়-অন্যায়ের এথিক্সের ধার ধারেন না কেবল তাদের দ্বারাই পূর্বে সংঘটিত যেকোন ঘৃন্য কাজের পূণরাবৃত্তিই হওয়াই সম্ভব। তবে আমি সুষ্পষ্টভাবে বলতে চাই-জনগণের অধিকারের পক্ষে আমাদের উচ্চারণ থামবে না। জনগণের ওপর জবরদস্তি করে ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাবেই। এদেশের ইতিহাস বিদেশী প্রভু ও স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে রক্তঝরা সংগ্রামের ইতিহাস। সুতরাং বর্তমান মহাজালিয়াতি, মহাচালিয়াতি, বিরামহীন ভোট ডাকাতির নির্বাচনে তৈরী নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী শাসন, গণতন্ত্র হরণ, বিরোধী দল ও মত নিধনের বিরুদ্ধে জনগণের প্রবল আন্দোলনের স্রোত ধেয়ে আসছে। 
সাংবাদিকবৃন্দ,   
* গত পরশু মিথ্যে মামলায় হাজিরা দিতে গেলে কক্সবাজার নিন্ম আদালত কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি জালাল আহমদসহ ১৪ জনের জামিন নামমঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেছে। আমি এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানেয়াট মামলা প্রত্যাহারসহ নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। 
* বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছকে প্রধান আসামী করে ১২০০ জনের বিরুদ্ধে আবারও ৪টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়েরের ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি করছি। 
ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

ভোটে অনিয়ম, দমন পীড়ন ও সহিংসতার স্বচ্ছ তদন্ত চায় সুইজারল্যান্ড


ভোটের দিনসহ নির্বাচনী প্রচারণাকালীন যাবতীয় অনিয়ম, দমন-পীড়ন ও সহিংসতার পূর্ণ ও স্বচ্ছ তদন্ত চায় সুইজারল্যান্ড। রোববার পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে সাক্ষাতে সুইস রাষ্ট্রদূত রেনে হলেনস্টাইন এ তদন্ত চেয়েছেন। দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। 

‘জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সুইস রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ’ শীর্ষক ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- ৬ই জানুয়ারি রাষ্ট্রদূত রেনে হলেনস্টাইন পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে রাষ্ট্রদূত সচিবকে জানিয়েছেন- সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিষয়ে অবহিত। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সব দলের অংশগ্রহণে তার দেশ খুশি। তবে ওই নির্বাচনের আগে ও ভোটের দিনে যে ‘অপ্রয়োজনীয় দুর্ভোগ-দুর্গতি এবং যন্ত্রণা’ হয়েছে তার জন্য সুইজারল্যান্ড মর্মাহত।

ভোট ও ভোটের প্রচারণাকালীন নানা ঘটনা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এমন সব অনিয়ম, দমন-পীড়নের অভিযোগ আইনের শাসন মতে পূর্ণ ও স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া জরুরি।

রাষ্ট্রদূত জোর দিয়ে বলেন- তার দেশ বিশ্বাস করে নতুন সরকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, যার ভিত্তিতে এ নির্বাচন হয়েছে সেটি সমুন্নত রাখবে। একইসঙ্গে, মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকারকে সমুন্নত রেখে গণতন্ত্রের পথে মানুষের অগ্রযাত্রাকে সমর্থন দিয়ে যাবে। সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বকে অব্যাহত রাখবে বলেও পররাষ্ট্র সচিবকে আশ্বস্ত করেন রাষ্ট্রদূত।
  • মানবজমিন/ জানু ৬,২০১৯