Search

Tuesday, January 8, 2019

প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও সুশাসনই চ্যালেঞ্জ

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠাই নতুন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি এবং উদার গণতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে বিরোধীদের আস্থায় নেয়ার বিষয়টিকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে নতুন সরকারকে। সাবেক মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী বলেন, সরকারের এই বিপুল জয় এটাই তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ এ ধরনের জয় সাধারণত প্রচলিত এবং আমাদের পরিচিত গণতন্ত্রে অত্যন্ত বিরল ব্যাপার। সংসদে কোনো সক্রিয় বিরোধী দল থাকবে না। ফলে সেখানে এক ধরনের প্রবল একাত্মবাদ চলতে পারে। এবং সেভাবে যদি তাদের কাজকর্ম অগ্রসর হয় তাহলে সরকারের সত্যিকার গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়া বিরল ও দুরূহ হতে পারে। 

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নতুন সরকারের সামনে নির্বাচনী ইশতেহারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এই ইশতেহারের সঙ্গে জনগণের প্রত্যাশা জড়িত। এ ছাড়া দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশে উদার রাজনীতির ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, নতুনদের কাছে প্রত্যাশা তারা পুরনো মনোবৃত্তি থেকে বের হয়ে আসবে। আর পুরনো কিছু অভিজ্ঞ মন্ত্রীরা রয়েছেন, নতুন পুরাতনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কাজ করতে হবে। তবে ভালোই হবে বলে মনে করছি।

শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, প্রথমত তাদের ইশতেহারে যা যা লেখা আছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ মানুষের মনে যে আশা তারা দিয়েছে সেটা ইশতেহারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। যদিও আমি মনে করি ইশতেহারের সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক থাকে না। তারপরও তারা যেহেতু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ উঠেছে সে অভিযোগ যাতে আর না উঠে সে ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ আইনের শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়গুলো নিশ্চিত করা। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুস্থ করা। বিরোধী পক্ষের ওপর অকারণে হামলা, গ্রেপ্তার ও তাদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা যাতে দেয়া না হয়। এটা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ মানুষ উন্নয়ন চায়, পাশাপাশি গণতন্ত্র চায়। সেই গণতন্ত্র নিশ্চিত না হলে উন্নয়ন অর্থবহ হবে না। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, সরকার ও দল যেন এক না হয়ে যায়।

এটি সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে আমাদেরকে। প্রশাসন দলের হয়ে কাজ করে এটি বড় ক্ষতি করে গণতন্ত্রের। আমি মনে করি দলের কোনো সভা গণভবনে হওয়াটা অনুচিত। দলের সভা হবে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। সরকার-দল সব এক হয়ে গেছে মন্তব্য করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, গণতন্ত্র এখানেই হোঁচট খেয়েছে। যার কারণে প্রশাসন পুলিশ অনেক সময় সরকারের কাজ করতে গিয়ে দলেরই কাজ করে। এটা থেকে বের হতে হবে। নতুনদের ওপর প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই ভেবে নিয়েছে পুরাতনরা যা করতে পারেনি নতুনরা তা করে দেখিয়েছে। পুরাতনরা ভালো কাজ করেছেন, কিন্তু সেটা একটা মাত্রায় এসে আটকে গেছে। যেমন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একটি মাত্রায় গিয়ে ঘুরে ফিরে আবার পেছনের দিকে চলে এসেছে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এখন আনন্দ বঞ্চিত শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে পড়ে গেল। কোচিং বাণিজ্যসহ নানা বাণিজ্যের মধ্যে পড়ে সত্যিকারের পড়ার উৎসাহ হারিয়ে যাচ্ছে। তাই তরুণরা যারা আসবেন তাদেরকে এই জিনিসগুলো মাথায় রেখে দুর্বলতা, অপূর্ণতাগুলোকে ভরাট করতে হবে। এটিকেও আমি চ্যালেঞ্জ মনে করি। 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা আমি মনে করি রাজনৈতিক। এবং সেটা হচ্ছে অভূতপূর্ব নির্বাচন এবং অভূতপূর্ব ফলাফল। বিশেষ করে অভূতপূর্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতা। সেটাকে ম্যানেজ করা হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এবং বিশেষ করে এই জন্য যে এই প্রেক্ষিতে জবাবদিহিতার সম্ভাব্য যে ক্ষেত্র সেটা একেবারেই সংকুচিত ও নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তারা যদি ক্ষমতাটাকে মনে করেন নিজেদের সম্পদ বিকাশের সোপান। এবং এই মানসিকতা নিয়ে যদি মন্ত্রিত্বের ভূমিকা পালন করেন সেটাও একটি চ্যালেঞ্জ। যেটা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গে  সাংঘর্ষিক হবে। দ্বিতীয়ত যে বিষয়টি তা হলো প্রধানমন্ত্রী বলেছেন অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। যেটা তাদের ইশতেহারে পরিষ্কারভাবে বলা আছে। এবং যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার। কিন্তু অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে নাগরিকের বাকস্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। কাজেই যে আইনগুলো মতপ্রকাশ এবং বাকস্বাধীনতার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ সেই আইনগুলোকে সংসদে সংস্কার করে ঢেলে সাজাতে হবে। এক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। 
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ৮,২০১৯ 

No comments:

Post a Comment