Search

Wednesday, January 16, 2019

Dredging, for what purpose?

Lifted mud left at the same spot; work stopped after month-long futile exercise

It was a sight to behold for the last one odd month. Two dredgers of Bangladesh Inland Water Transport Authority (BIWTA) were dredging the Lohalia river in Patuakhali, but inexplicably disposing the sucked sand and mud barely 200 metres away in the same river.

It was an exercise to 'ensure' navigability for water transport of Patuakhali-Dhaka route during dry season. Dredging however stopped for the last few days following instructions from the higher authorities.

“Finding no place, we disposed sand into the river. But we have stopped dredging following instruction from the higher authority,” said site engineer Hasanur Rahman Ripon.

“We have stopped dredging and are looking for sites to dispose lifted sand,” he said, adding that farmers do not allow them to dump sand on farmlands along the river banks. 

“We allow disposal of sand on river banks to keep launch service active on emergency basis,” said Masud Rana, sub-assistant engineer of dredging department of BIWTA.

He said they need to dredge different points of the Lohalia river every year due to continuous silting that causes navigability crisis.

“This year we have estimated to cut about 2 lakh cubic metres of sand at a cost of Tk 3 crore,” he said.

But commuters along the route say navigability crisis, which turned acute during low tide, remained the same.

“Like every year dredging started in Patuakhali launch ghat area in December. But the situation has not improved for heavy water vehicles including double-decker passenger launch that got stuck due to poor navigability at minimum 10 points for hours every night on the route,” said launch operator Salam (not his real name). 

Depth of the riverbed at those points turns as low as four cubits (around six feet) during low tide, making navigation impossible, he said, adding that Kobai, Karkhana, Lohalia, Laukathi and Sahakathi on the Lohalia river are the worst affected points.

“Dhaka-bound passenger launches from Patuakhali get stuck at different points during low tide due to poor navigability for about two to five hours every night. These launches leave the place for Dhaka during high tide, said Md Eunus, supervisor of Sundarban-9.

“Normally it takes maximum 10 hours to go to Dhaka from Patuakhali, but now we need two to five hours more. The authorities concerned arrange dredging the river every year but we aren't getting its benefits,” he said.

Three double-decker launches start for Dhaka from Patuakhali launch ghat at about 5:00pm every day.

Jamal Hossain, a first-class sareng (master), said he often has to anchor on mid-river at different points during low tide.

“We submitted a petition to the authority last October urging them to dredge at 10 important points stretching over 8.50 km of the route so that plying of launches is not hampered,” said Bahadur Hawlader, master of MV Asa-jawa, a double-decker launch using the route.

“Although two dredgers are working in Lohalia river mouth and Karkhanar areas separately for a month, we don't get any benefit as the sand is left in the same riverbed,” he added.

“It's a sheer wastage of money,” said advocate Tariquzzaman Moni, chairman of Patuakhali Sadar Upazila Parishad.

Kabir Hossain Talukder, chairman of Lohalia Union Parishad under Sadar upazila, said he would have helped BIWTA authorities to find suitable spots for leaving sand if he had been informed.

  • Courtesy: The Daily Star /Jan 16, 2019

সুশাসনের পথে বড় বাধা মোসাহেবি

সহজিয়া কড়চা

সৈয়দ আবুল মকসুদ

বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে ‘চামচা’ শব্দটির অন্তর্ভুক্তি রয়েছে। চামচার অর্থ দেওয়া হয়েছে তোষামোদকারী, মোসাহেব, চেলা। এই ধ্বনাত্মক শব্দটির উৎপত্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ফারসি ‘চম্‌চহ্‌’ শব্দ থেকে এসেছে। পশ্চিমা দেশে রেনেসাঁ ও শিল্পবিপ্লবের পর থেকে মোসাহেবি বা চামচামি উঠে গেছে। আমাদের দেশে অশোক ও চন্দ্রগুপ্তের সময় যেমন ছিল, সুলতানি ও মোগল আমলে তো ছিলই। ইংরেজ ঔপনিবেশিক আমলে যে ছিল, তার প্রমাণ রেখে গেছেন কাজী নজরুল ইসলাম। মোসাহেবের যে বৈশিষ্ট্য তিনি বর্ণনা করে গেছেন, তার ওপরে কোনো কথা হয় না। সে জন্যেই তিনি বাঙালির জাতীয় কবি। তাঁর লেখনীতে: 

সাহেব কহেন, ‘চমৎকার! সে চমৎকার!’

মোসাহেব বলে, ‘চমৎকার সে হতেই হবে যে!

হুজুরের মতে অমত কার?’

...      ...     ...   ...

সাহেব কহেন, ‘কি বলছিলাম,

গোলমালে গেল গুলায়ে!’

মোসাহেব বলে, ‘হুজুরের মাথা! গুলাতেই হবে।

দিব কি হস্ত বুলায়ে?’

[সাহেব ও মোসাহেব] 

অনেক দিন ধরে বঙ্গীয় রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য উপাদান চামচামি বা মোসাহেবি। যে নেতা যত ক্ষমতাধর, তাঁর চামচার সংখ্যা তত বেশি। বরং বলা ভালো, চামচার সংখ্যা বেশি বলেই তিনি বড় নেতা। সামন্ততন্ত্রে মোসাহেব থাকা স্বাভাবিক, গণতন্ত্রে মোসাহেবির কোনো স্থান নেই। তবে ক্লাসিক্যাল মোসাহেবির সঙ্গে আধুনিক চামচামির মৌলিক পার্থক্য হলো, সেকালে তোষামোদকারী সাহেবের মনোরঞ্জন করত তাঁর সামনাসামনি, এখন চামচামি করা হয় দেয়ালে চাররঙা পোস্টারে, ডিজিটাল ব্যানারে এবং পত্রিকার বিজ্ঞাপনে। কেউ সাংসদ হয়েছেন, চালাও চামচামি। তারপর তিনি ইয়ে হয়েছেন, চালাও ডাবল চামচামি।

আগে আউলচাঁদের মতাবলম্বীদের বলা হতো কর্তাভজা। এখন সেই ধর্মীয় সম্প্রদায় বিলুপ্ত। এখন ক্ষমতাধর কর্তাদের তোষামোদকারীদের বলা হয় কর্তাভজা ওরফে চামচা। চামচামি হলো কৃত্রিম প্রশংসা। তবে কেউ বলতে পারেন, প্রশংসার আবার কৃত্রিম–অকৃত্রিম কী? প্রশংসা প্রশংসাই। না, বাংলাদেশে প্রশংসা দুই প্রকার।

চামচামির উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। যোগ্যতা ছাড়া চাকরি পাওয়া যায়। পদ না থাকলেও প্রমোশন পাওয়া যায়। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানো যায়। মেয়াদ যত শেষ হয়ে আসবে, চামচামির মাত্রা তত বাড়বে। মুখের চামচামিতে কাজ না–ও হতে পারে, চামচামির একটি নতুন শাখা হয়েছে—পত্রিকায় কলাম লেখা। ঘরের মধ্যে নয়, দেশের মানুষকে সাক্ষী রেখে চামচামি। মৌখিক চামচামির দাম কী, মোসাহেবির যদি রেকর্ডই না থাকল, তার মূল্য কী? টেন্ডার পেতে চামচামি এবং কাজ না করে বিল ওঠানোর জন্য আরও বেশি দরকার। যে গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনে মনোনয়ন–বাণিজ্য হয়, সেখানে মোসাহেবির ভূমিকা থাকবে না, তা ভাবাই যায় না।

যিনি সম্মান ও শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য, তাঁকে আমাদের সমাজে মানুষ চিরকালই সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। ত্যাগ, সততা, মিতব্যয়িতা ও সরল জীবনযাপনের জন্য উপমহাদেশের সমাজ একজনকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করে, লোকদেখানো শ্রদ্ধা নয়। শ্রদ্ধা করে এই জন্য যে শ্রদ্ধাই তাঁর প্রাপ্য।

অতি উঁচু পদে অধিষ্ঠিত একজন যখন প্রাপ্য সুযোগ–সুবিধা না ভোগ করে সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করেন, তাঁকে মানুষ দ্বিগুণ শ্রদ্ধা করে। মহাত্মা গান্ধী বা মাওলানা ভাসানীকে যেমন করে, উপমহাদেশে তেমন মানুষ ও জননেতা অতীতে অনেকেই ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের তিনজন গান্ধীবাদী মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়, প্রফুল্ল ঘোষ ও প্রফুল্ল সেন একেবারেই সাধারণ মানুষের মতো আমৃত্যু জীবনযাপন করেছেন। মৃত্যুর সময় কেউ ছিলেন অভাবগ্রস্ত।

গান্ধীজি যদি মাত্র এক দিন রেলগাড়ির তৃতীয় শ্রেণির কামরায় ভ্রমণ করতেন, তা হলে তাঁকে মানুষ বলত ‘ভণ্ড’। কোনো দেশের কোনো নবনিযুক্ত মন্ত্রী এক দিন বাসে বা কারও মোটরসাইকেলের পেছনে বসে হেলমেট ছাড়া অফিসে গেলে তাঁর প্রশংসা করে প্রতিবেদন প্রকাশের মধ্যে প্রচ্ছন্ন চামচামি নেই, তা বলা যায় না। আমরা উচ্চকণ্ঠে সম্মিলিতভাবে প্রশংসা করব তাঁকেই, যিনি পাজেরোতে না গিয়ে সাধারণ যাত্রীবাহী বাসে অফিসে যাতায়াত করেন।

দুর্নীতির সঙ্গে চামচামির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। দুর্নীতির পূর্ব ধাপ মোসাহেবি। আগে চামচামি ছিল ব্যক্তিগত ব্যাপার, এখন তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। একজন সাংসদ, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হলে, তাঁকে তাঁর মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা প্রাণঢালা অভিনন্দন, ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জ্ঞাপনে কার্পণ্য করছেন না। এর নামই প্রাতিষ্ঠানিক মোসাহেবি। সব মানুষ যেমন মোসাহেব নয়, সবাই চামচামি পছন্দ করেন না। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ মোসাহেবি অপছন্দ করেন। ব্যক্তিত্বহীনদের পুঁজিই মোসাহেবি। যেসব কর্মকর্তা সৎ, দক্ষ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, তাঁরা মোসাহেবি পছন্দ করেন না। ওই না কারাটা তাঁদের জন্য অভিশাপ ডেকে আনে। সাহেবের অন্যায্য অনুরোধ না রাখলে তাঁকে অসম্মান ও তিরস্কার করা হয়। তাঁদের থেকে রাষ্ট্র কোনো উপকার পায় না। রাষ্ট্র থেকে সুশাসন নির্বাসিত হয়।

একটি সরকার কী প্রক্রিয়ায় গঠিত হলো, সে এক প্রশ্ন, কিন্তু গঠিত সেই সরকার কতটা সুশাসন দিতে পারে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রে জনগণের মতামত ও সমর্থনের মূল্য বেশি, মেকি গণতন্ত্রে মোসাহেবির প্রাধান্য। যখন কেউ শপথ নিয়ে উচ্চতম পদে অধিষ্ঠিত হন, তাঁর নৈতিক দায়িত্ব অশেষ। তাঁরা রাষ্ট্রের কাছে, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ; তোষামোদকারীদের কাছে নয়। তাঁদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ক্যাডার বাহিনী, তোষামোদকারী ও চেলাচামুন্ডার দরকার আছে। তবে তারাই সব, জনগণ বাদ পড়ে যায়, তাহলে সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

প্রশংসা আসবে জনগণ থেকে, চামচাদের থেকে নয়। ভালোবাসবে জনগণ, চাটুকারেরা করবে পদলেহন। কেউ উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হলে অভিনন্দন তাঁর প্রাপ্য। দেয়াল, ইলেকট্রিকের খাম্বা, সড়কদ্বীপ, পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যে প্রাণঢালা অভিনন্দন ও ভালোবাসার প্রকাশ, তা প্রকৃতপক্ষে চামচামিরই বহিঃপ্রকাশ। যে অর্থ খরচা হয় এই প্রাণঢালা অভিনন্দন ও ভালোবাসা নিবেদনে, তার শত গুণ উশুল হওয়ার নিশ্চয়তা না থাকলে অত বোকা বাঙালি নয় যে টাকাও ঢালবে, প্রাণও ঢালবে। বস্তুত বর্তমানে সুশাসনের পথে বড় বাধা মোসাহেবি।

  • সৈয়দ আবুল মকসুদ, লেখক ও গবেষক
  • Courtesy: Prothom Alo/ Jan 15, 2019

পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তিই পুলিশের করা মামলার আসামি!

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুরে গত শনিবার রাতে পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া পথচারী গার্মেন্ট কর্মীকে আসামি করেছে পুলিশ। বন্দর থানায় পুলিশের করা মামলার ২১ নম্বর আসামি নিহত গার্মেন্ট কর্মী আশিকুর রহমান (২৫)। বন্দর থানার এসআই মোহাম্মদ আলী বাদি হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা করে।

মামলার এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলো মুকুল, মো: তাজুল, মো: মনির হোসেন, মো: মারুফ, আব্দুল মতিন, মাইনুদ্দিন, রমজান মিয়া, আনোয়ার হোসেন, মোক্তার হোসেন, মো: আরিফ, ফারুক, এছহাক মিয়া, রুবেল, সুমন, তোফাজ্জল, অপু, মুন্না, রায়হান হোসেন, রিফাত, মিজান, আশিক মিয়া, নুর নবী, মো: দিপু, মো: সুজন। তবে গার্মেন্ট কর্মী আশিকুর রহমান নিহতের ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।

নিহত আশিকুর রহমানের স্ত্রী বানেছা বেগম জানান, শনিবার বিকেলে গার্মেন্টস থেকে বাসায় ফিরে বাজার করতে মদনপুর বাজারে যায়। রাত ৯টায় স্থানীয়রা এসে জানায়, পুলিশের গুলিতে আমার স্বামী মারা গেছে। পরে রাতে স্থানীয়রা বাসায় তার লাশ নিয়ে আসে।

প্রতিবেশী মো: হাসমত আলী জানান, পেটের তাগিদে আশিক লালমনিরহাটের দক্ষিণ শিবের কুঠি গ্রাম ছেড়ে বন্দরের মদনপুরে উঠেছিলেন। সেখানে চানপুর এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। তিনি নিজে সামান্য বেতনে স্থানীয় প্যানডেক্স গার্মেন্টে চাকরি করতেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নুসরাত জাহান জানান, আশিকুর শনিবার বিকেলে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর সন্ধ্যায় বাজার করতে গেলে সংঘর্ষের মধ্যখানে পড়ে প্রাণ হারান। পুলিশ এ সময় ব্যাপক গুলি বর্ষণ করে।

নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা: আসাদুজ্জামান জানান, আশিকুর রহমানের শরীরের কয়েকটি স্থানে গভীর ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বাম থাইয়ের উপরের দিকে, বাম উরুতে গভীর ক্ষত চিহ্ন ছিল। এ ছাড়াও ডান দিকের উরুতেও একটি ক্ষত চিহ্ন দেখা গেছে। ক্ষত চিহ্ন থাকলেও সেখানে কোনো বুলেট পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিকিৎসক জানান, ক্ষতস্থান দিয়ে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের কারণেই আশিকের মৃত্যু হয়েছে। তবে সে শনিবার রাতেই সে মারা গেছে।

সরেজমিন বন্দরের মদনপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এখনো থমথমে পরিবেশ। আতঙ্ক বিরাজ করছে মানুষের মধ্যে। শনিবার রাতে সংঘর্ষের ঘটনার নেপথ্যে কী, তা জানতে কথা হয় স্থানীয় লোকজনের সাথে। তারা জানান, মূলত চাঁদাবাজি এবং মাদকব্যবসা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নুর হোসেনের অন্যতম সহযোগী খলিল মেম্বার। তিনি মদনপুর ইউনিয়ন ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ওই ওয়ার্ডের মেম্বার।

অন্য গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে স্থানীয় যুবলীগ নেতা আমির হোসেন। চাঁদাবাজি এবং মাদক ব্যবসা নিয়ে গত বছর নভেম্বর মাসে খলিল মেম্বার ও আমীর হোসের গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়। ওই সময় খলিল মেম্বারকে কুপিয়ে জখম করে আমীর হোসেনের লোকজন। ওই ঘটনায় দুই পক্ষই থানায় মামলা করে। শনিবার রাতে পুলিশ একটি মামলার আসামি খলিল মেম্বারের দুই সমর্থককে গ্রেফতার করা পর তাদের ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বন্দরের মদনপুর চৌরাস্তায় আটটি অবৈধ পরিবহন স্ট্যান্ড গড়ে উঠে। প্রায় দুই হাজার সিএনজি, অটোরিকশা, বেবিট্যাক্সি, টেম্পু, লেগুনা এখান থেকে প্রতিদিন আটটি রুটে যাতায়াত করে থাকে। মদনপুর থেকে সোনারগাঁও চৌরাস্তা, নানাখী, বারদী, কাঁচপুর, মদনগঞ্জ, নয়াপুর, আড়াইহাজার যাতায়াত করে।

এ ছাড়া, এ রুটে পাঁচটি বাস কোম্পানির শতাধিক মিনিবাস চলাচল করে। প্রতিটি ছোট গাড়ি থেকে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০ টাকা এবং প্রতিটি বাস থেকে ১০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হয়। এতে দেখা যায় প্রতিদিন মদনপুর পরিবহন স্ট্যান্ডকে ঘিরে লক্ষাধিক টাকা চাঁদাবাজি হয়।

এ ছাড়া, মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিপুল টাকা প্রতিদিন লেনদেন হয়। ফলে এখানে চাঁদাবাজির খাত নিয়ন্ত্রণের জন্য চলে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্যের লড়াই। একেক সময় একেক জন দখলে নেয় চাঁদাবাজির এ খাত। শনিবারের ঘটনা ঘটেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা খলিল মেম্বার ও আমীর হোসেনের মধ্যে চাঁদাবাজির খাত দখল নিয়ে।

স্থানীয়রা জানায়, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এলোপাতাড়িভাবে মদনপুর চৌরাস্তায় শতাধিক মিনি বাস এবং অন্যান্য যানবাহন রাখার ফলে প্রতিনিয়ত যানজটের কবলে পড়ছে মানুষ। মহাসড়কে দীর্ঘক্ষণ যানজট লেগে থাকে।

শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আসামি ছিনিয়ে নেয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগের সংর্ষষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ আট রাউন্ড গুলি ছুড়ে। সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আশিকুর রহমান নামে গার্মেন্ট কর্মী নিহত ও বাবুল নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ দিকে, এ ঘটনায় বন্দর থানার ওসি আজহারুল ইসলামকে ক্লোজড করা হয়।

সংঘর্ষের পর জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানিয়েছিলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় পুলিশের ওপর হামলা করে গাড়ি ভাঙচুর ও শটগান ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বন্দর থানার এস আই মো: আলী বাদি হয়ে ২৪ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরো ২০০-৩০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছে। এ ছাড়া, একজন নিহতের ঘটনায় পৃথক আরেকটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে এ ঘটনায় দুইজন গ্রেফতার ও পুলিশের অস্ত্র ও ওয়ারলেস সেট উদ্ধার করা হয়েছে।

  • Courtesy: Naya Diganta /Jan 15, 2019

টিআইবির গবেষণা

৫০টির মধ্যে আগের রাতে ৩৩টিতে সিল, বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় টিআইবি


ভোটে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিচার বিভাগীয় তদন্তের পক্ষে মত দিয়েছে সংস্থাটি। ‘একাদশ সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যালোচনা’ শীর্ষক গবেষণার প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার টিআইবির ধানমন্ডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে করা গবেষণা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরে টিআইবি।



নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্য থেকে দ্বৈবচয়নের (লটারি) ভিত্তিতে ৫০টি বেছে নেয় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। নির্বাচনের দিন ৪৭ আসনে কোনো না কোনো নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে টিআইবি। অনিয়মের ধরনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৫০টির মধ্যে ৪১টি আসনে জাল ভোট; ৪২টি আসনে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর নীরব ভূমিকা; ৩৩টি আসনে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল; ২১টি আসনে আগ্রহী ভোটারদের হুমকি দিয়ে তাড়ানো বা কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা; ৩০টি আসনে বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সিল মেরে জাল ভোট; ২৬টি আসনে ভোটারদের জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা; ২০টিতে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই ব্যালট বাক্স ভরে রাখা; ২২টিতে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া; ২৯টিতে প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেওয়া ইত্যাদি।

নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ও ত্রুটিপূর্ণ 
সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের ফলে একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘অংশগ্রহণমূলক’ বলা গেলেও ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ বলা যায় না বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে টিআইবি।


গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যেমন—সব দলের সভা-সমাবেশ করার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, বিরোধীদের দমনে সরকারের বিতর্কিত ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে অবস্থান নেওয়া, সব দলের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীর নিরাপত্তা সমানভাবে নিশ্চিত করা, নির্বাচনী অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বিশেষ করে সরকারি দলের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনের উপযুক্ত ভূমিকা গ্রহণ ইত্যাদি। এর ফলে কার্যত নির্বাচন কমিশন সব দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে পারেনি। এ ছাড়া নির্বাচনের সময়ে তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ যেমন—পর্যবেক্ষক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা; মোবাইলের জন্য ফোর-জি ও থ্রি-জি নেটওয়ার্ক বন্ধ; জরুরি ছাড়া মোটরচালিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

টিআইবির গবেষণার সার্বিক পর্যবেক্ষণে ক্ষমতাসীন দল ও জোটের কোনো কোনো কার্যক্রম নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। যেমন- সংসদ না ভেঙে নির্বাচন করায় সরকারের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন সমর্থক গোষ্ঠী সম্প্রসারণের জন্য আর্থিক ও অন্যান্য প্রণোদনা এবং নির্বাচনমুখী প্রকল্প অনুমোদনসহ নির্বাচনের প্রায় এক বছর আগে থেকেই ক্ষমতাসীন দলের প্রচারণা; বিরোধী পক্ষের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া; সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দেওয়ার পরও নির্বাচনের সময় পর্যন্ত ধরপাকড় ও গ্রেপ্তার অব্যাহত রাখা এবং সরকারবিরোধী দলের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়াসহ প্রার্থী ও নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও সহিংসতা নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে।
গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত সব কটি আসনেই নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে এককভাবে সক্রিয় ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা। কোনো কোনো আসনে ক্ষমতাসীন দল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে সরাসরি প্রচারের জন্য সুবিধা আদায়সহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কর্তৃক প্রার্থীর প্রচারণায় অংশগ্রহণ এবং সরকারি সম্পদ ব্যবহার করে প্রচারণার দৃশ্যও দেখা যায়। অন্যদিকে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৫০টির মধ্যে ৩৬টি আসনে বিরোধী দলের প্রচারে বাধা দেওয়াসহ ৪৪টি আসনে সরকারবিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই দলীয় নেতা-কর্মীদের নামে মামলা, পুলিশ বা প্রশাসন কর্তৃক হুমকি ও হয়রানি, প্রার্থী ও নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও কর্মী কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি দেখানোর তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ১৯ আসনে সহিংসতাসহ প্রার্থীদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মারামারি, সরকারবিরোধী দলের প্রার্থীর সমর্থক ও নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন, হামলা, নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করা, পুড়িয়ে দেওয়ার চিত্র দেখা যায়।

প্রচারে বেশি ব্যয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের, কম স্বতন্ত্ররা 
প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সার্বিকভাবে তফসিল ঘোষণার আগে থেকে নির্বাচন পর্যন্ত প্রার্থীদের গড় ব্যয় ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫ টাকা, যা নির্বাচন কমিশন দ্বারা নির্ধারিত ব্যয়সীমার (আসনপ্রতি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা) তিন গুণেরও বেশি। প্রচারে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা (গড়ে পাঁচ গুণের বেশি) এবং সবচেয়ে কম ব্যয় করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।


সংবাদ সম্মেলনে নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এবারের নির্বাচনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসনের একাংশ ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে, যেটি আইনের লঙ্ঘন এবং নীতিবিবর্জিত। সর্বোপরি আংশিকভাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছে। কারণ একদিকে সব রাজনৈতিক দল প্রার্থিতার মাপকাঠিতে নির্বাচনে ছিল, কিন্তু নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সক্রিয়তার বিবেচনায় বৈষম্য প্রকট ছিল। তা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে ভোটাররা অবাধে ভোট দিতে পারেননি। আচরণবিধির ব্যাপক লঙ্ঘন হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অবশ্যই ব্যাপকভাবে লজ্জাজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার ভূমিকাও ছিল বিতর্কিত। আর এসব কারণেই নির্বাচনটি প্রশ্নবিদ্ধ এবং বলা যায়, অভূতপূর্ব একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে; যার ফলাফলও অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য হিসেবে আলোচিত হয়েছে। তাই আমরা সরকারের নৈতিক অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য এবং সরকারের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য যে অভিযোগগুলো উত্থাপিত হয়েছে সেগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাই।
টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, ‘যেভাবে এবারের নির্বাচনটা পরিচালিত হয়েছে তাতে প্রচুর ত্রুটি ছিল। তাই আমরা আশা করব নির্বাচন কমিশন এই ত্রুটিগুলো দেখে, এই ত্রুটিগুলোর সত্যাসত্য বিচার করে পরবর্তী যে নির্বাচনগুলো হবে সেগুলোতে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না হয় সে চেষ্টাই করবেন। কারণ আমরা দেখতে চাই, সত্যিকার অর্থেই জনগণের পছন্দের মানুষেরাই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছেন।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য এই উদাহরণ রেখে যায় যে, যদি নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ না থাকে তাহলে নির্বাচনটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়, বিতর্কিত হয়ে যায়। আর তখন একটা সংশয় থেকেই যায় যে, যাঁরা আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে গেলেন, তাঁরা আমাদের কতটুকু প্রতিনিধিত্ব করবেন, জনগণের স্বার্থ কতখানি দেখবেন।’

নির্বাচনী ব্যবস্থা সুষ্ঠু ও কার্যকর করতে ৬ দফা সুপারিশ
নির্বাচনী ব্যবস্থা সুষ্ঠু ও কার্যকর করতে টিআইবির পক্ষ থেকে ৬ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো: নির্বাচনে বহুমুখী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে তাদের ব্যর্থতা নিরূপণ করে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে কমিশনের গৃহীত পদক্ষেপের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ নিতে হবে; নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া ও যোগ্যতা নির্ধারণ করে আইন প্রণয়ন করার মাধ্যমে সৎ, যোগ্য, সাহসী ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে; দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার স্বার্থে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ অন্যান্য অংশীজনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ হতে হবে; নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ ডিজিটালাইজ করতে হবে এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের তথ্য সংগ্রহের জন্য অবাধ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।


নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল/জোট ও প্রার্থী, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন অংশীজন নির্বাচনী প্রক্রিয়া কতটুকু আইনানুগভাবে অনুসরণ করেছেন, তা পর্যালোচনা করার পাশাপাশি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ প্রাক্কলন করা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রধান অংশীজনদের ভূমিকা পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। গবেষণার জন্য নভেম্বর ২০১৮ থেকে জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়। তবে তফসিল ঘোষণার আগে থেকে শুরু করে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বর্তমান প্রাথমিক প্রতিবেদনটি প্রণীত হয়েছে। পরবর্তী সময় নির্বাচন-পরবর্তী প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
গবেষণার জন্য প্রত্যক্ষ তথ্যের উৎস হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী, দলীয় নেতা-কর্মী, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ অন্যান্য নির্বাচনী কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা, স্থানীয় সাংবাদিক ও ভোটারদের সাক্ষাৎকার ও পর্যবেক্ষণ গ্রহণ করা হয়েছে এবং পরোক্ষ তথ্যের জন্য নির্বাচনসংক্রান্ত আইন ও বিধি, প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন, ওয়েবসাইট ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও প্রবন্ধ পর্যালোচনা করা হয়েছে। গবেষণায় উপস্থাপিত পর্যবেক্ষণ সব রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, নাগরিক সমাজ ও সংগঠন, ভোটার এবং সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য না-ও হতে পারে। তবে, এ গবেষণা নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রশাসন, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের ভূমিকা সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়েট রোজেটি, তাসলিমা আক্তার, বিশ্বজিৎ কুমার দাস এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা।

Courtesy: Prothom Alo Jan 16, 2019

ভারতের নাগরিকত্ব আইনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে

হিন্দু সম্প্রদায়ের তীব্র প্রতিক্রিয়া


ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিল নিয়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া  হয়েছে। প্রথম সারির হিন্দু নেতারা মনে করেন, ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ পাকিস্তান বা পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি দেশের মতো বাংলাদেশকেও ইসলামী দেশে পরিণত হওয়ার দিকে ঠেলে দেবে।  কেননা, ভারতের পার্লামেন্টে যদি চূড়ান্তভাবে বিলটি পাস হয়, তাহলে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক ও উগ্রবাদী শক্তি এদেশ থেকে সংখ্যালঘুদের বিতাড়িত করতে উৎসাহী হয়ে উঠবে। তারা কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই হিন্দুদের জমি ও সহায় সম্পত্তি দখল করে নেবে। ফলে বাংলাদেশ পাকিস্তান বা পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি দেশের মতো ইসলামী দেশে পরিণত হবে। ভারতের সংবাদ মাধ্যম ফার্স্টপোস্টের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, ভারতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল, ২০১৬ (বা নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিল)-এর কড়া সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রথম সারির কিছু নাগরিক। এই আইন বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করবে বলে আশঙ্কা করেন তারা। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে যেমন ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এ বিল নিয়ে, তারই যেন প্রতিধ্বনি উঠেছে তাদের সমালোচনায়।



এ বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমটির সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় উন্নয়ন বিষয়ক অর্থনীতিবিদ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাবেক বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত, ঐক্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, (ভারতের) এই আইনি পদক্ষেপ বা অ্যাকশন আমাদের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যদি এই আইন সংশোধনের একটি উদ্দেশ্য হয় প্রতিবেশী দেশগুলোতে সংখ্যালঘুদের আইনগত নিরাপত্তা দেয়া, তাহলে এর ঠিক উল্টোটা ঘটতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, এর ফলে সংশ্লিষ্ট দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবস্থান আরো দুর্বল হবে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জেনেভা ও ভিয়েনায় জাতিসংঘের অফিসেও বাংলাদেশের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ভারতের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন বিলকে দু’দিকে ধারসম্পন্ন তরবারির সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, সাধারণভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং বিশেষ করে হিন্দুরা তাদের মূল মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এখন ভারতে এই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হলে তাদের বিরুদ্ধে যে বৈষম্য আছে, তার বিরুদ্ধে লড়াইকে আরো খর্ব করবে এবং দেশের  ভেতরে তাদের দীর্ঘ মেয়াদি যে ভবিষ্যৎ আছে তা হাল্কা করে দেবে। এ ছাড়াও এই আইনকে স্বার্থান্বেষী মানুষরা বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভারতে তাড়িয়ে দেয়ার অজুহাত হিসেবে নিতে পারে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ৬টি ধর্মীয় সংখ্যালঘু, যারা নির্যাতনের অভিযোগে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদেরকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন বিল। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে এই তিনটি দেশের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিষ্টানদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ভারত সরকার তাদের  নাগরিকত্ব দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এই অজুহাতে যে, তারা ওই তিনটি দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের হাতে নির্যাতনের শিকার।
বিজেপি সরকারের এমন উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্তও। তার সংগঠন হলো বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শীর্ষ স্থানীয়। রানা দাসগুপ্ত বলেছেন, যদি নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন বিলটি ভারতের পার্লামেন্ট পাস করে তাহলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক ও উগ্রবাদী শক্তি সংখ্যালঘুদের তাড়িয়ে দিতে উৎসাহিত হবে। তারা কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই এসব সম্প্রদায়ের জমি ও সহায় সম্পত্তি গ্রাস করবে। এ ছাড়া এই বিলটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বিপদে ফেলবে এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তান বা পশ্চিম এশিয়ার কিছু দেশের মতো ইসলামিক দেশে পরিণত করবে।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ছিল শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ। ১৯৭০ সালে এই হার কমে দাঁড়ায় প্রায় ২০ ভাগে। বাংলাদেশ জনসংখ্যা পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, সংখ্যালঘুদের শতকরা হার ২০১১ সালে নেমে এসেছে শতকরা প্রায় ১০ ভাগে। রানা দাসগুপ্ত বলেন, এই ব্যুরো এক বছর আগে বলেছে যে, গত ৫ বছরে হিন্দু জনসংখ্যা বেড়েছে শতকরা প্রায় ২ ভাগ। এই হিসাবে বাংলাদেশে এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় শতকরা প্রায় ১১.৭ ভাগ।

ঐক্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ঐক্য ন্যাপ) প্রেসিডেন্ট পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেছেন, লোকসভায় এই বিল পাস হলে তা বৈষম্যমূলক  ও বিভক্তির রাজনীতিকে উস্কে দেবে, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে যায়। এ বিলের একটি মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে। এর ফলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনকে উস্কে দেয়ার একটি ঝুঁকি তৈরি হবে। এ ছাড়া এ বিলের ফলে ভারতের মুসলিমদের মধ্যে একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। এরই মধ্যে আসামে এ ধরনের ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

তবে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও বাংলাদেশ পাকিস্তানের মতো ইসলামী রাষ্ট্র হবে, নাকি ধর্মনিরপেক্ষ উদারপন্থি প্রজাতন্ত্র হিসেবে গড়ে উঠবে, এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ বিষয়টিকে আমরা অগ্রাহ্য করতে পারি না। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের পাশাপাশি বাংলাদেশের উদার, প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ও গণমাধ্যম তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও পাকিস্তান দফায় দফায় বাংলাদেশকে ইসলামীকরণ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে।

তবে পঙ্কজ ভট্টাচার্য আশা প্রকাশ করে বলেন, চূড়ান্তভাবে মানবতা ও সাম্যের জয় হবে। ক্ষমতায় বসার জন্য ভোটারদের প্রভাবিত করতে ধর্মীয় মৌলবাদকে যেন উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে একাট্টা হতে হবে। সর্বোপরি, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী কোনো নাগরিক এই বিলকে আইনে পরিণত হতে দেবে না বলেও মনে করেন তিনি।
  • Courtesy: Manabziban Jan 16, 2019 

Tuesday, January 15, 2019

সন্ত্রাস-নোংরা কৌশলে ভোটাধিকার ছিনতাই করা হয়েছে — রুহুল কবির রিজভী


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর ওপর রাষ্ট্রীয় নৃশংস সন্ত্রাস চালিয়ে এবং সব ধরনের নোংরা কৌশল অবলম্বন করে জনগণের ভোটাধিকার ছিনতাই করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার, জানুয়ারি ১৫, নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ে রিজভী বলেন, গণতন্ত্র ও জনগণের সঙ্গে বরাবরই প্রতারণা করার দল আওয়ামী লীগ। যারা এখন নিজেদের সরকার বলে দাবি করছে, তারা অবৈধ ও ভোট সন্ত্রাসী।

সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণপাঠ নিচে দেওয়া হল - 

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম। সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় বন্দী করার মূল কারণই ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে ভোট ডাকাতির এরকম নির্বাচন সম্ভব ছিল না। বেগম জিয়া বাংলাদেশের জনগণের মাঝে উচ্চারিত একজন জনপ্রিয় নেত্রীর নাম। তিনি জীবনে কখনও নির্বাচনে পরাজিত হননি। পাঁচটি ও সবশেষে তিনটি আসনে তিনি বাংলাদেশের যে প্রান্ত থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন সেখানেই তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এই জনপ্রিয়তাই তাঁর জন্য কাল হয়েছে। তাঁর এই জনপ্রিয়তা কোনভাবেই সহ্য করতে পারেনি আওয়ামী লীগ প্রধান ও দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীরা। বেগম জিয়া সত্য ও ন্যায়ের প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক। তাই তিনি কোনভাবেই সংশ্লিষ্ট নন এমন সব অভিযোগ ও মামলায় সুপরিকল্পিতভাবে তাঁকে সাজা দিয়ে বন্দী করে রেখেছে সরকার। বেগম জিয়াকে বন্দী করার অর্থ গণতন্ত্রকে বন্দী করা। এদেশে যে দৃঢ়, অকপট, সত্যবাদী ও প্রতিবাদী তাঁর জায়গা হয় কারাগারে। বেগম জিয়ার মামলায় জামিন নিয়ে টালবাহানা করছে সরকার। 

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাভোট ডাকাতির পর গণতন্ত্রকে চূড়ান্তভাবে শিকল পরানো হয়েছে। গণতন্ত্র ও জনগণের সাথে বরাবরই প্রতারণা করার দল আওয়ামী লীগ। যারা এখন নিজেদেরকে সরকার বলে দাবি করছে তারা অবৈধ ও ভোট সন্ত্রাসী। বিরোধী দলগুলোর ওপর সর্বপ্রকার রাষ্ট্রীয় নৃশংস সন্ত্রাস চালিয়ে এবং সবধরণের নোংরা কৌশল অবলম্বন করে জনগণের ভোটাধিকার ছিনতাই করেছে। মানুষের বিশুদ্ধ নি:শ^াস নেয়ার জন্য গণতন্ত্রের মুক্ত বাতাস প্রবাহিত করতে হবে। এজন্য দেশের জনগণের ঐক্য ও সংহতি অপরিহার্য। আর জনগণের ঐক্যের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার মধ্য দিয়েই গণতন্ত্রের বিজয় নিশ্চিত হবে। 

সাংবাদিক বন্ধুরা,
রফতানী আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস গার্মেন্ট শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার। মালিক-শ্রমিকদেরকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি গার্মেন্ট শিল্প এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে তা মালিকদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে সরকারের ব্যর্থতা গত কয়েকদিন ধরে ফুটে উঠেছে। বিদেশী কাউকে সুবিধা দিতে এর পেছনে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য কাজ করছে বলেই দেশের জনগণ বিশ^াস করে। অতীতেও আপনারা দেখেছেন-স্বাধীনতার পর কিভাবে আওয়ামী লীগ পাট শিল্পকে ধ্বংস করেছে। বড় বড় পাটের গুদাম ও মিল-কলকারখানা কিভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল তা জনগণ এখনও ভুলে যায়নি। এটা কাদের স্বার্থে করা হয়েছিল সেটাও জনগণ জানে। এখন ভুয়াভোটের সরকার গার্মেন্ট শিল্পকে নিয়ে বিপজ্জনক খেলায় মেতেছে। বর্তমান ভুয়াভোটের সরকার এই শিল্পকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার যে পাঁয়তারা করছে তার পরিণাম শুভ হবে না। যারা অর্থনীতির চালিকা শক্তি তাদের ধ্বংস করে অর্থনীতির বিকাশ সম্ভব নয়। গার্মেন্ট শ্রমিক আন্দোলন দমাতে হত্যা, লাঠিচার্জে ক্ষত বিক্ষত করা ও ব্যাপক গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে কোন সমাধান আসবে না। অবিলম্বে দেশের রফতানী আয়ের প্রধান উৎস এই গার্মেন্ট শিল্পকে রক্ষা করতে সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মানতে হবে এবং আলোচনার ভিত্তিতে উদ্ভুত সমস্য সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে। শুধুমাত্র অলীক তৃতীয় পক্ষ বা অন্যের হাত আছে এসব বলে সংকটের সমাধান হবে না।

সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
বর্তমান অবৈধ সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে। গত কয়েকদিনেও চালের দাম ফের বেড়েছে কয়েক দফায়। প্রতি কেজি চালের দাম গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা। সরকারদলীয় সিন্ডিকেটের লোকেরাই কারসাজি করে এই দাম বৃদ্ধি করেছে। দশ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর কথা বলে একসময় ভোট চাইলেও বর্তমানে মোটা চালের দামও পঞ্চাশ টাকার নীচে নয়। অন্যান্য চাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত পরশু দিন খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন-ইজ্জত রক্ষার্থে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখুন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মন্ত্রীর ইজ্জত রেখেছেন চালের দাম আরও বৃদ্ধি করে। জনগণের ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হলে ইজ্জত ঠিকই থাকতো। সিন্ডিকেটের লোকেরা ভোট ডাকাতির নির্বাচনে সহযোগিতা করে এখন ফায়দা নিতেই চালের দাম বৃদ্ধি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে এ্যকশন নেয়ার ক্ষমতা খাদ্যমন্ত্রীর আছে কি না সেটিই বড় প্রশ্ন। কারণ চারিদিকে সরকারী দুর্নীতির জয়জয়কার। গরীব মানুষের পকেট কেটে বিপুল অর্থ লুটে নিচ্ছে সিন্ডিকেট। আর এদিকে দেশের জনগণকে দু:সহ জীবন-যাপনে বাধ্য করা হচ্ছে। চালের এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে নিন্ম আয়ের মানুষরা ক্ষুধার্ত থাকছে। এই চালের মৌসুমেও চালের দরের উর্দ্ধগতি সামনের মাসগুলোতে খাদ্য সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে। আমি চালের দাম বৃদ্ধিতে সরকারের ব্যর্থতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

‘প্রহসন’ ও ‘ভোট ডাকাতির’ জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমা চাইতে হবে — মির্জা আলমগীর


নির্বাচনে ‘প্রহসন’ ও ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে স্টেডিয়ামে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ফের বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের অ্যাজেন্ডা থাকলেই তাঁরা সংলাপে যাবেন। তা না হলে যাবেন না।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন আহত যুবদল কর্মী ফয়সাল হোসেনকে দেখতে যান।

গতকাল সোমবার দুপুরে সিলেটে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজার জিয়ারত শেষে সংলাপের ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আবার সংলাপে অবশ্যই ‘নির্বাচন বাতিলের’ বিষয়টি অ্যাজেন্ডা হিসেবে থাকতে হবে। অ্যাজেন্ডা জানলে সংলাপে যাওয়ার বিষয়টি তাঁরা বিবেচনা করবেন। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত রোববার সংলাপের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল, তাদের আবার আমন্ত্রণ জানাবেন প্রধানমন্ত্রী।

সিলেটে এ সংলাপের ব্যাপারে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংলাপের অ্যাজেন্ডা তো আমরা জানি না। নিঃসন্দেহে যখন আমাদের অ্যাজেন্ডা জানাবেন, তখন আমরা সে বিষয়ে বিবেচনা করব।’

সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন বাতিলের অ্যাজেন্ডা থাকলেই তাঁরা সংলাপে যাবেন। না হলে যাবেন না। এটা ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির সিদ্ধান্ত। নির্বাচনে ‘প্রহসন’ ও ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে স্টেডিয়ামে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। 

তিনি বলেন, গোটা বাংলাদেশকে আজ হাসপাতালে পরিণত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ দখলদারি সরকার। তারা জোর করে জনগণের সমস্ত আমানত লুণ্ঠন করেছে। প্রতিটি জেলা–উপজেলায় বিরোধী মতবাদের ওপর হামলা করছে। তারাই ফয়সালকে ছুরিকাঘাত করেছে। উন্নত চিকিৎসা না করা হলে ফয়সাল ভালো হবেন না।

বিএনপির মহাসচিব দাবি করেন, আওয়ামী লীগের হামলার বিষয়গুলো জাতির সামনে উঠে আসছে। তবে তাদের (আওয়ামী লীগ) লজ্জা–শরম বলতে কিছু নেই। তারা মহাবিজয়ের কথা বলছে। অথচ মহাবিজয়ে সারা দেশের মানুষের মুখে কোনো হাসি নেই। 

মির্জা ফখরুল দাবি করেন, স্বাধীনতাযুদ্ধ–পরবর্তী সময়েও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় বিরোধী দলের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছিল, হত্যা করেছিল। অথচ দলটি স্বাধীনতাযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল।

হাসপাতালে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বিএনপি নেতা (একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর সদর আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন) অনিন্দ্য ইসলাম, বিএনপি–সমর্থিত ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) নেতা চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ বিএনপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবদল কর্মী ফয়সালের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে অনিন্দ্য ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ফয়সালের একটাই অপরাধ ছিল, তিনি নির্বাচনের সময় বিএনপির পোস্টার লাগিয়েছিলেন। তাঁর ওপর হামলা করে দুই পায়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। ছুরির আঘাত মাংস ভেদ করে সাত-আট ইঞ্চি পর্যন্ত ক্ষত সৃষ্টি করে। তাঁর পা দুটো বাঁচানোই এখন মূল চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জানু ১৫, ২০১৮ 

আ.লীগের নির্যাতন ও নৈরাজ্যে সারাদেশ হাসপাতালে পরিণত — মির্জা আলমগীর


৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগ প্রতিটি জেলায় নির্যাতন, নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। সারাদেশ এখন হাসপাতারে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার, জানুয়ারি ১৫, দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গুরুতর আহত যশোরের যুবদল কর্মী ফয়সালকে দেখতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ক্ষমতা কি ভয়ঙ্কর, সেখানে থাকলে মানুষকে আর তখন মানুষ মনে হয় না।ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হত্যা, আক্রমণ, রক্তপাত সবকিছু করা হয়েছে। এসবের মধ্য সারা দেশ এখন হাসপাতালে পরিণত হয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের লজ্জা-শরম নেই মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর থেকে দেশে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। প্রতিটি জেলায় নির্যাতন, লুট ও চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ। তারা ফাঁকা মাঠে গোল করার যে গ্রুপিং করেছিলো তা জাতির সামনে খোলাসা হয়ে গেছে।নৃশংসতা, নীলনকশা ও অপকৌশল জনগণের সামনে উঠে এসেছে। তাদের লজ্জা নেই, শরম নেই।

তিনি বলেন, সারাদেশে বিএনপি ও বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর জঘন্য হামলা করা কেরা হয়েছে। যশোরের যুবদল কর্মী ফয়সালের শরীরের কয়েক স্থানে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। তার শরীরে ৮ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে।

৩০ ডিসেম্বরের ভোটে মহাচুরি হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এত বড় একটা চুরি করেছে যে, তা এখন সামাল দিতে পারছে না। স্টেডিয়ামে গিয়ে গোটা জাতির কাছে তাদেরকে মাফ চাইতে হবে।

প্রসঙ্গত, নির্বাচনের পরদিন ৩১ ডিসেম্বর যশোরের কোতয়ালীর সারথী এলাকায় দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে আহত হন ফয়সাল। ১ জানুয়ারি তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে দেখতে যান মির্জা ফখরুল। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জেড এম জাহিদ হোসেন।

  • কার্টসিঃ যুগান্তর / জানু ১৫,২০১৯ 

সুবর্ণচরে গণধর্ষণ - মানবাধিকার কমিশনের পর্যবেক্ষণ প্রশ্নবিদ্ধ

সম্পাদকীয়

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তথ্য অনুসন্ধান কমিটির দেওয়া প্রাথমিক রিপোর্টের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সুবর্ণচরের ঘটনাটি সারা বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইতিমধ্যে অনুসন্ধান করেই রিপোর্ট করেছে যে ভোটদান নিয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে বচসা হয় এবং ফল ঘোষণার রাতেই তিনি ধর্ষণের শিকার হন। পুলিশ প্রশাসনও গুরুত্বের সঙ্গে এজাহারভুক্ত ৬ জন এবং তদন্ত করে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আরও ৭ জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে ৭ জন আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।  

তাই এটা অনেকটা প্রতিষ্ঠিত ধারণা যে গ্রেপ্তার হওয়া দুর্বৃত্তরা ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে ওই অপকর্ম করে থাকতে পারে। কমিশন বলছে প্রতিবেদনটি প্রাথমিক। সে কারণে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের মুখে তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই ‘প্রমাণ’ না পাওয়ার দাবি করা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করাটা কতটা সুবিবেচনাপ্রসূত হয়েছে, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। আগ বাড়িয়ে তাঁর সনদ দেওয়া পক্ষপাতদুষ্ট বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। কেউ হয়তো যুক্তি দেখাবেন যে, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে একই ফলাফল আসতে পারে। তবে সেটি তো আমাদের ‘স্বাধীন’ মানবাধিকার কমিশনটি দাবি করলে হবে না; তাদের যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে সেটি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

আমরা আশা করব, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আর দশটি ঘটনার মতো এর তদন্তকাজও ঝুলিয়ে রাখবে না। যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে তারা এ বিষয়ে  চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। জনগণ তাদের প্রতিবেদন পড়ে অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর পাবে বলে আশা করে। সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সুবর্ণচরের ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন লজ্জিত। সাবেক ইউপি সদস্য, যাঁর ভোট করা না-করা নিয়ে ভুক্তভোগীর ‘পূর্বশত্রুতা’ ছিল, তাঁকে আওয়ামী লীগ থেকে দ্রুত বহিষ্কার সেটাই প্রমাণ করে। সংবাদমাধ্যমের খবর এটাও নিশ্চিত করেছে যে ভোট দেওয়া নিয়ে ভুক্তভোগী ও আসামিদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। আর মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পূর্বশত্রুতার সনদ দিয়ে দিলেন।

এর আগেও আমরা দেখেছি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আক্রান্ত মানুষের অধিকার রক্ষা বা প্রতিকারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ যেগুলো সরকারের জন্য সংবেদনশীল ও বিব্রতকর, সে বিষয়গুলোতে তাদের রিপোর্ট কদাচিৎ আলোর মুখ দেখে। আগের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মানবাধিকার রক্ষায় কিছু করতে না পারলেও আওয়াজ দিতেন। এখন সেই আওয়াজও রহিত হয়ে গেছে। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তর ঘটনা ঘটলেও কমিশন নীরব থাকাকেই শ্রেয় মনে করেছে। মানবাধিকার কমিশন আক্রান্ত মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করে, এটা এখন পর্যন্ত তারা দৃশ্যমান করতে পারেনি।

নোয়াখালীর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী ভূমিহীনদের নেত্রী। অধিকারহারা মানুষের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণেই তাঁকে নিগৃহীত হতে হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী ১৩ জানুয়ারিও প্রথম আলোকে বলেছেন, তিনি তাঁর পছন্দের প্রতীকে (ধানের শীষ) ভোট দেওয়ায় ওরা হুমকি দিয়ে বলেছিল, ‘বিকেলে তোর খবর আছে।’ আমরা মানবাধিকার কমিশনের কাছে জানতে চাইব, পূর্বশত্রুতা পুরোনো, ভোটের রাতে কেন তার শোধ নেওয়া হলো। আর অপরাধীরা যে অহরহ ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করে, সে কথাও কারও অজানা নয়।

তদন্তকালে ভুক্তভোগীর সঙ্গে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কি কথা বলেছিলেন? না বলে থাকলে কীভাবে তিনি পূর্বশত্রুতার ‘রায়’ দিয়ে দিলেন?

  • Courtesy: Prathom Alo /Jan 15, 2019

চাল সংগ্রহের সুফল না পাওয়ার অভিযোগ কৃষকদের : দাম নির্ধারণে সুষ্ঠু নীতি থাকা আবশ্যক

সম্পাদকীয়
ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও কৃষকের স্বার্থে এটি চালু রাখার পক্ষে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু গেল কয়েক বছরে কর্তৃপক্ষের সময় ও দাম নির্ধারণে অদূরদর্শিতা ও অপরিপক্বতায় কৃষকরা উৎসাহজনক দাম পাননি। বাজারে চালের দাম বাড়তি থাকলেও ধান বিক্রি করে কৃষক উৎপাদন ব্যয়ও ওঠাতে পারেননি অধিকাংশ সময়। এবার আমন মৌসুমে তো সরকার চালের দাম কমিয়ে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা গেল বছর ছিল ৩৯ টাকা। চাষের ব্যয় বাড়লেও চালের দাম কেন কমিয়ে নির্ধারণ করা হলো, তার যৌক্তিক কোনো ব্যাখ্যাও দাঁড় করাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সরকার প্রতিবারই এমন সময় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করে, যখন কৃষকের ঘরে এর কোনোটিই থাকে না। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। সরকার চালের এমন নিম্নদাম নির্ধারণ করেছে, যার সঙ্গে বাজারের সম্পর্ক নেই। বাজারে চালের দাম বাড়ছে, আর সরকার গেল বছরের চেয়ে কম দাম নির্ধারণ করেছে। এতে চাষীরা উপযুক্ত মূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন। আর চাষীরা ধানের উপযুক্ত মূল্য থেকে বঞ্চিত হলে ব্যাংকঋণ, মহাজনি ঋণ কিংবা এনজিও থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হবেন। এর ওপর আবার ঊর্ধ্বমুখী বাজারদরে জীবন নির্বাহ ব্যয় বেড়ে চলার ফসল বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থ কোনোভাবে কৃষককে মানসম্মত জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।

মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব ও সরকার প্রদত্ত সুবিধাগুলো সময়মতো না দেয়ায় চালের বাজারের ন্যায্যমূল্য কৃষকের কাছে সবসময়ই অধরা থেকেছে। বিপণন জটিলতা ও সরকারের শিথিল ভূমিকা পালনের কারণে বেশির ভাগ সময়ই চালের বাজারের সুবিধাপ্রাপ্ত হন মধ্যস্বত্বভোগী এবং মিল মালিকরা; যা রোধে কৃষকদের অর্থায়ন ও মজুদ সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। চালের বাজারে বিদ্যমান অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকার পরও সরকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং রহস্যজনক। কৃষক ও ভোক্তা দুই পর্যায়ে মূল্য সহায়তা দিয়ে থাইল্যান্ড যদি চালের বাজারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে সে পন্থা অবলম্বন করতে আমাদের বাধাটা কোথায়? এডিবির গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাশের দেশ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের মধ্যস্বত্বভোগীরা অতিমাত্রায় মুনাফা অর্জন করছে এবং চালের দামের ৪০ শতাংশই যাচ্ছে তাদের পকেটে।

মূলত মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই কৃষকরা ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। এক্ষেত্রে আবার ছোট ও মাঝারি কৃষকরা বড় কৃষকদের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে খরচ হয়, সে অনুযায়ী দাম পান না কৃষকরা। লাভ তো পরের কথা, অনেক সময় উৎপাদন খরচও ওঠে না। তবু বাধ্য হয়ে কৃষিতেই থাকতে হচ্ছে তাদের। পরিস্থিতি বিবেচনায় একটি মূল্য কমিশন গঠন করা দরকার। মুনাফালোভী মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণও প্রয়োজন। চাল সংগ্রহ অভিযানের ব্যর্থতাগুলো মূল্যায়ন করা দরকার। কৃষককে ন্যায্যমূল্য প্রদানের কথা বলে চাল সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা হাস্যকর বটে। ধান-চালের পুরো বাজারটিই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে, তা বুঝতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ হওয়া উচিত কৃষকের অনুকূল আর সিন্ডিকেটের প্রতিকূল।

চাল কেনার পরিবর্তে সরকারকে ধান কিনতে হবে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে। মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ কিছু দেশ এ নীতিতে সাফল্যও পেয়েছে। থাইল্যান্ডে ধান-চালের দাম নির্ধারণে সরকারের নীতিমালা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর বাজার পর্যবেক্ষণ ও তদারকিসহ কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে চাল উৎপাদনে দেশটি অনেক এগিয়েছে, কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন ফসল উৎপাদন করে। কৃষককে ন্যায্যমূল্য দেয়ার মতো প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও জনবল আমাদের কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের রয়েছে। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা এবং নীতি-পরিকল্পনার পরিবর্তন। গতানুগতিকভাবে চাল সংগ্রহ অভিযানের মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিতের পদক্ষেপ ভ্রান্ত বলে এরই মধ্যে প্রমাণিত। এখন প্রয়োজন যুগোপযোগী পদক্ষেপ, যাতে কৃষক সরাসরি উপকৃত হন এবং সিন্ডিকেট ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। আশা করি, নতুন সরকার যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিতে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের সাফল্য ও ব্যর্থতা পর্যালোচনাপূর্বক যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

  • Courtesy: Banikbarta /Jan 15, 2019