Search

Sunday, January 20, 2019

ঝিনাইদহে রাস্তা নির্মাণে দুর্নীতি, কাজ বন্ধ করলো জনগণ


ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর মুজিবনগর সড়ক প্রকল্পের সাড়ে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসি। রাস্তা থেকে উঠানো পুরানো পাথরের সঙ্গে আবর্জনা যুক্ত বালু মিশিয়ে রোলার করার কারণে রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলার হলিধানী বাজারের জনগণ রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেন। 

ওই এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, রাস্তায় ময়লাযুক্ত বালুর সঙ্গে কিঞ্চিত খোয়া মিশিয়ে রাতারাতি রোলার করার বিষয়টি প্রথমে তার নজরে আসে। তিনি অভিযোগ করেন, পুরানো রাস্তা ভাঙ্গা খোয়া আগের রাতে ভেঙ্গে তাই দিয়ে রাস্তা করা হচ্ছে। রাস্তায় ৭৫ শতাংশ বালি ও ২৫ শতাংশ খোয়া দিয়ে গুরুত্বপুর্ণ এই রাস্তা নির্মান করা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।  হলিধানী বাজার কমিটির লোকজন অভিযোগ করেন, সবচেয়ে আশঙ্কার ব্যাপার হলো রাস্তায় যে সব দ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে তা একেবারেই নিন্মমানের। 

ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর মুজিবনগর ৪ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের সাড়ে ১৭ কোটি টাকার কাজটি পান ময়মনসিংহের ঠিকাদার শামীম এন্টারপ্রাইজ। তার কাছ থেকে কাজটি কিনে করছেন আবু মুনছুর এন্টারপ্রাইজ। প্রথম থেকেই রাস্তার কাজটি ছিল দুর্নীতিযুক্ত।

পুরানো রাস্তার পিচযুক্ত পাথর হলার করে তাই ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আমা ইটের খোয়া ও ময়লাযুক্ত বালি ব্যবহার করায় কয়েক দফা কাজটি বন্ধ করে দেন এলাকাবাসি। তবে এই রাস্তার কাজ তদারকীতে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের গাফলতি আছে বলেও স্থানীয়রা মনে করেন। 

রাস্তার কাজ বন্ধ করার কথা স্বীকার করে ঝিনাইদহ সওজ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তানভির আহম্মেদ জানান, খবরটি পাওয়ার পর আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, হলিধানী বাজার কমিটির কথা মতো রাস্তা উঁচু করতে গিয়ে ঠিকাদার মুল নকশা অনুসরণ করছে না। এ কারণে হয়তো তিনি দুর্নীতি করতে পারেন। ঝিনাইদহ সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, আমি মাগুরা শহরে একটি মিটিংয়ে আছি। খোঁজ খবর নিয়ে জানাতে পারবো। 

উল্লেখ্য, এর আগে একই সড়কের বিভিন্ন কিলোমিটারে ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামতসহ সিলকোটের কাজ যেনতেনভাবে শেষ করে তড়িঘড়ি করে বিল তুলে নেয় ঠিকাদার। এসব দুর্নীতির সঙ্গে ঝিনাইদহ সওজ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তানভির আহম্মেদ সরাসরি জড়িত বলেও অভিযোগ উঠে। তবে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তানভির আহম্মেদ তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন।
  • কার্টসিঃ মানবজমিন/ জানু ২০, ২০১৯  

বিজয় নয়, গণতন্ত্র হত্যার উৎসব করেছে আ’লীগ — রুহুল কবির রিজভী


ভোটের বিজয় নয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যার উৎসব করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রোববার, জানুয়ারি ২০, সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, জনগণের কোটি কোটি টাকা শ্রাদ্ধ করে গতকাল শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তথাকথিত বিজয়ের উৎসব উদযাপন করেছে সরকার। এটি আসলে বিজয় নয়, গণতন্ত্র হত্যার উৎসব ছিল। ভোট ডাকাতির পর নির্বাচনকে জায়েজ করার জন্য সরকার যা যা করছে তা চরম হাস্যকর বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের পূর্ণপাঠ নিচে দেওয়া হল —

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আস্সালামু আলাইকুম। সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

নির্বাচনের আগের রাতে মহাভোট ডাকাতির পর সেই ভুয়া নির্বাচনকে জায়েজ করার জন্য সরকার যা যা করছে তা চরম হাস্যকর। গতকাল তারা জনগণের কোটি কোটি টাকা শ্রাদ্ধ করে তথাকথিত বিজয়ের উৎসব উদযাপন করেছে। সারাদেশ থেকে বাসভর্তি ভাড়াটে লোকজন এনেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ভরতে পারেনি। সেখানে ‘নিশুতি রাতের ভোটের প্রধানমন্ত্রী’ ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে তাঁর দলকে বিজয়ী করার জন্য জনগণকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয়ী র‌্যালীতে। তিনি বলেছেন-জনগণ নাকি এবার স্বত:স্ফুর্ভভাবে ভোট দিয়েছে। শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যে জনগণ হাসবে না কাঁদবে তা তারা ভেবে পাচ্ছে না। যখন মহাভোট ডাকাতিতে ভোটাধিকারহারা জনগণ ব্যথিত, বিমর্ষ ও বাক্যহারা, তখন তাদেরকে নিয়ে এধরণের বক্তব্য নিষ্ঠুর রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। 

জনগণ মনে করে-ভুয়া ভোটের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কৃতজ্ঞতা জানানো উচিৎ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে। কারণ ভোটের আগের দিন রাতেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের ভোটের অধিকারটা নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। তারাই অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে রাতভর ব্যালট বাক্সে নৌকা মার্কায় সিল দেয়া ব্যালট পেপারে ভরিয়ে দিয়েছে। ভোট জালিয়াতি করতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র ক্ষমতাসীনদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং গোপনে উৎকোচ দেয়া হলেও প্রকাশ্যে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীকে ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ ছিল প্রধানমন্ত্রীর।

নির্বোধ স্তাবক’রা ছাড়া কে ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরাধীন মঞ্চে? আপাদমস্তকভীতু, ফন্দিবাজ, পরান্নজীবি, কৃপাপ্রার্থী, উমেদার আর প্রবঞ্চকদের ভিড় ছিল। গতকালকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনগণের পকেটকাটা টাকায় বর্ণাঢ্য র‌্যালী ছিল রাষ্ট্রের মালিক জনগণের সাথে আরেকটি অবজ্ঞাভরা মশ্করা। এই ঐতিহাসিক সোহরাওর্য়াদী উদ্যানকে গতকাল গণতন্ত্র হত্যার উৎসবে পরিণত করা হলো।

গতকাল ভুয়াভোটের সরকারপ্রধান যখন বাংলাদেশে ভোটাধিকার হরণের পর উৎসব করছেন তখন জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনাম ছিল বাংলাদেশে নির্বাচন অবশ্যই সঠিক ছিল না। বিবিসি’র হেড লাইন ছিল গণতন্ত্র থেকে ছিটকে পড়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া বিশ্বমিডিয়ায় বলা হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন ছিল বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ। এই নির্বাচনকে সিএনএন বলেছে প্রহসন, এই বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে বিপজ্জনক যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। পৃথিবীর খ্যাতনামা স্কলার’রা বাংলাদেশের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম নির্বাচন বলে অভিহিত করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রখ্যাত স্কলার বলেছেন-বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনগোষ্ঠী নির্বাচনের ফলাফল চুরি করেছে। ভাট চুরির সব নোংরা কৌশল প্রয়োগ করে শেখ হাসিনা এবং তাঁর দল ৯৭.৬৬ শতাংশ ফলাফল নিজের দলের জন্য ভাগিয়ে নিয়েছেন।

ভুয়া ভোটের মিথ্যা জয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠেছে। কুৎসিত অপকর্ম করতে তারা এখন বেপরোয়া। এরা বিরোধী দলের সহায়-সম্পত্তি দখল ও লুটের পাশাপাশি নারীদের ওপর হানাদার বাহিনীর কায়দায় হিং¯্র লালসায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে। এদের প্রাত্যহিক জীবন থেকে সৌজন্যবোধ ও হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে। এরা শকুনির দৃষ্টি নিয়ে সারাদেশে নির্ভয়ে শিকার করে বেড়াচ্ছে। এদের হাত থেকে মা-বোন-শিশু কেউই রেহাই পাচ্ছে না। মিথ্যা জয়ের আনন্দের আতিশয্যে এদের বিভৎস রুপ দেখে দেশবাসী ভীত-শঙ্কিত। এদের নিষ্ঠুরতায় বাংলাদেশ এখন আদিম অন্ধকার যুগে প্রবেশ করেছে। 

ধানের শীষে ভোট দেয়ার অপরাধে নির্যাতিতা পারুল বেগমের আহাজারী ও গোঙানী থামতে না থামতেই নোয়াখালীর কবিরহাটে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে মা ও ছেলে-মেয়েদের জিম্মি করে তিন সন্তানের মা-কে স্থানীয় যুবলীগের কর্মীরা গণধর্ষণ করেছে। ধর্ষিতার স্বামী আবুল হোসেন ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাকে নির্বাচনের আগে দুটি মিথ্যা মামলায় আটক করে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে, অথচ এফআইআর-এ তার নাম পর্যন্ত ছিল না। বন্দী স্বামীর স্ত্রীকে এভাবে ক্ষমতাসীন যুব সংগঠনের নেতাকর্মীদের দ্বারা গণধর্ষণ শুধু হৃদয়বিদারকই নয়, মনুষ্যতহীনতার এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত। এরা মানুষরুপী পশু। নিরাপরাধ নারী-পুরুষের রক্তে রঞ্জিত আওয়ামী লীগ নামক সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাত। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আইনের দ্বারা শাসিত না হয়ে ভোট ডাকাতি ও ভোট জালিয়াতিতে ব্যস্ত থাকার পর এখন সরকারের তাবেদারিতে ব্যস্ত থাকায় দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সর্বকালের মধ্যে চরম খারাপ অবস্থায় পতিত হয়েছে। আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে বলেই আওয়ামী যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বেপরোয়াভাব এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। ভোট ডাকাতির জয়ে ক্ষমতাসীনরা অহংকার আর উন্মত্ততায় বিচার বুদ্ধি হারিয়ে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। নোয়াখালীর কবিরহাটে ঘরে ঢুকে নারী ধর্ষণের ঘটনায় আমি তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। আমি এই ঘটনায় নির্যাতিতা আবুল হোসেন এর স্ত্রীর আশু সুস্থতা কামনা করছি এবং দলের নেতাকর্মীদেরকে এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানাচ্ছি।

মহা ভোট ডাকাতির মহা কেলেঙ্কারী আড়াল করতে ভুয়া ভোটের সরকার বৈধতা পেতে এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেনদরবার শুরু করেছে। এরকম ভুয়া ভোটের নির্বাচন বিশে^র গণতন্ত্রকামী মানুষ ও তাদের নির্বাচিত সরকারের কাছে এর কোন কানাকড়ি মূল্য নেই। গণতন্ত্রের জন্য এদেশের মানুষের লড়াই ও অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে ভুয়া ভোটের এই অবৈধ শাসকগোষ্ঠী গত ৫ জানুয়ারী ২০১৪ এর নির্বাচন এবং ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ এর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোন সরকার কখনোই টিকতে পারে না, ভয় দেখিয়েও বেশি দিন টেকা যায় না। ম্যাকিয়াভেলির নীতি অবলম্বন করে ক্ষমতায় থাকার দিন শেষ হয়ে গেছে।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
লক্ষীপুর সদর উপজেলার ৭নং বসিকপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নুরুন নবীকে গত ১৮ জানুয়ারী সকালে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে তার ওপর গুলি করে ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সন্ত্রাসী আবুল কাশেম জেহাদী। লক্ষীপুরের কোন হাসপাতালে নিরাপত্তার অভাবে নরুন নবী বর্তমানে গুলিতে গুরুতর আহতাবস্থায় নোয়াখালীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমি এই বর্বরোচিত ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

অতিগরিব মানুষের বসবাসে বিশ্বে পঞ্চম বাংলাদেশ

  • বেশি হতদরিদ্র আছে—এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ
  • যাঁদের দৈনিক আয় ১ ডলার ৯০ সেন্টের কম, তাঁরা হতদরিদ্র
  • এটা আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা হিসেবে বিবেচিত
  • বাংলাদেশে হতদরিদ্রের সংখ্যা ২ কোটি ৪১ লাখ 
  • নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ বিবেচনায় এই সংখ্যা ৮ কোটি ৬২ লাখ


অতিধনী বৃদ্ধির হারের দিকে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম। ধনী বৃদ্ধির হারে তৃতীয়। দ্রুত মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি বা ধনী হওয়ার যাত্রায় বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও অতিগরিব মানুষের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। অতিগরিব মানুষের সংখ্যা বেশি এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশে ২ কোটি ৪১ লাখ হতদরিদ্র মানুষ আছে।

বিশ্বব্যাংক ‘পভার্টি অ্যান্ড শেয়ার প্রসপারিটি বা দারিদ্র্য ও সমৃদ্ধির অংশীদার-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে সবচেয়ে বেশি হতদরিদ্র মানুষ আছে, এমন ১০টি দেশের তালিকা তৈরি করেছে। ক্রয়ক্ষমতার সমতা অনুসারে (পিপিপি) যাঁদের দৈনিক আয় ১ ডলার ৯০ সেন্টের কম, তাঁদের হতদরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটা আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশ্বব্যাংক ২০১৬ সালের মূল্যমান ধরে পিপিপি ডলার হিসাবে করেছে। বাংলাদেশে প্রতি পিপিপি ডলারের মান ধরা হয়েছে সাড়ে ৩২ টাকা। সেই হিসাবে বাংলাদেশের ২ কোটি ৪১ লাখ লোক দৈনিক ৬১ টাকা ৬০ পয়সাও আয় করতে পারেন না।

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় ঢুকে গেছে। যদিও বাংলাদেশ এখনো নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। এ কারণে বিশ্বব্যাংক নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অতিগরিব মানুষের একটি আলাদা হিসাবও দিয়েছে। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে হলে দৈনিক কমপক্ষে ৩ দশমিক ২ পিপিপি ডলার আয় করতে হবে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এভাবে হিসাব করলে বাংলাদেশে অতিগরিব মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৮ কোটি ৬২ লাখ। আর দারিদ্র্যের হার হবে ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ। এর মানে হলো, টেকসইভাবে গরিবি হটাতে বাংলাদেশের প্রায় ৬ কোটি ২১ লাখ মানুষকে দ্রুত দৈনিক ৩ দশমিক ২ ডলার আয়ের সংস্থান করতে হবে। এই বিশাল জনগোষ্ঠী এখন ঝুঁকিতে আছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে সবচেয়ে বেশি ১৭ কোটি ৫৭ লাখ হতদরিদ্র আছে। ভারত ছাড়া বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হতদরিদ্র মানুষ বসবাস করে নাইজেরিয়া, কঙ্গো ও ইথিওপিয়ায়। তালিকায় থাকা শীর্ষ ১০–এর অন্য ৫টি দেশ হলো তানজানিয়া, মাদাগাস্কার, কেনিয়া, মোজাম্বিক ও ইন্দোনেশিয়া।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আগে দারিদ্র্য কমানোর পূর্বশর্ত ছিল প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দারিদ্র্য কমাতে হবে। দেশে ৬-৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও হয়েছে। এত প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর দেখা যাচ্ছে প্রবৃদ্ধি যেমন বেড়েছে, বৈষম্যও বেড়েছে। অন্যদিকে দারিদ্র্য হ্রাসের গতিও কমেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দিয়ে দারিদ্র্য নির্মূল করা যাবে, এটা ঠিক নয়। তাঁর মতে, প্রবৃদ্ধিতে গরিব মানুষের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। গরিব মানুষের সম্পদ হলো পরিশ্রম। এই শ্রমের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে গরিব মানুষের মজুরি বাড়াতে হবে। আবার কৃষির বাইরের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের জন্য গরিব মানুষের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর নজর দিতে হবে।

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে গেছে। তাই ৩ দশমিক ২ ডলারের দৈনিক আয়ের হিসাবও মাথায় রাখতে হবে। যে বিশাল জনগোষ্ঠী দুই হিসাবের মধ্যবর্তী স্থানে আছে, তাদের দ্রুত আয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করতে হবে।

আয়ের বৈষম্য পরিমাপের পদ্ধতি হচ্ছে জিনি (বা গিনি) সহগ। বিবিএসের খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০১৬-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর মান এখন ০.৪৮৩। জিনি সহগ ০.৫ পেরিয়ে গেলে তাকে উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশ বলা হয়। বাংলাদেশ এর খুব কাছে পৌঁছে গেছে।

গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ-এক্স বলেছে, অতিধনী বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ প্রথম। গত বুধবার একই প্রতিষ্ঠান আরেকটি প্রতিবেদনে বলেছে, ধনী বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ তৃতীয়। আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশের ধনী মানুষের সংখ্যা ১১ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বাড়বে।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্যের কোঠায় দারিদ্র্য নামিয়ে আনা। এই সময়সীমার দুই-তিন বছর আগেই এই লক্ষ্য অর্জন করতে চায় বাংলাদেশ। অর্থাৎ আগামী ১০ বছরে হতদরিদ্রের হার ৩ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, এখন বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্য হার ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০৩০ সালে যখন অতিদারিদ্র্য হার ৩ শতাংশে মধ্যে নেমে আসবে, তখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ২০ কোটিতে পৌঁছাবে। এর মানে, তখনো বাংলাদেশে প্রায় ৬০ লাখ লোক অতিগরিব থেকে যাবে।

এই বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য নির্মূলকে প্রাধান্য দিয়ে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে শোভন কাজের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে গুণগত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া এখন যে অঞ্চলভিত্তিক দারিদ্র্য ও আয়বৈষম্য আছে, তাতেও বিশেষ নজর দেওয়া হবে।

নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের হিসেবে দারিদ্র্যসীমার ওপরে ওঠার জন্য আয় বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শামসুল আলম বলেন, বিষয়টি বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবে ২০২১ সালের মধ্যে অর্থনীতির সক্ষমতাও বাড়বে। আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনও আসবে। 

কোন দেশে কত গরিব

বিশ্বব্যাংকের তালিকা অনুসারে, শীর্ষ স্থানে থাকা ভারতে অতিগরিব মানুষের সংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নাইজেরিয়ায় ৮ কোটি ২৬ লাখ, তৃতীয় স্থানে থাকা কঙ্গোতে ৫ কোটি ৩২ লাখ ও চতুর্থ স্থানে থাকা ইথিওপিয়ায় ২ কোটি ৬৭ লাখ অতিগরিবের বসবাস। এ ছাড়া ষষ্ঠ থেকে দশম স্থানে থাকা তানজানিয়ায় ২ কোটি ৭ লাখ, কেনিয়ায় ১ কোটি ৭৪ লাখ, মাদাগাস্কারে ১ কোটি ৭৩ লাখ, মোজাম্বিকে ১ কোটি ৭১ লাখ ও ইন্দোনেশিয়ায় ১ কোটি ৫১ লাখ অতিগরিব মানুষের বসবাস। সব মিলিয়ে সারা বিশ্বে এখন ৭৩ কোটি ৬০ লাখ হতদরিদ্র মানুষ আছে। ওই ১০টি দেশেই বাস করে ৪৫ কোটি অতিদরিদ্র মানুষ। এই সংস্থাটি আরও বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে এমন গরিব মানুষের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ৪৭ কোটি ৯০ লাখে।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো / জানু ২০, ২০১৯ 

UNSG finds Bangladesh polls ‘not perfect’

The United Nations secretary general, Antonio Guterres, on Friday said the 11th parliamentary election in Bangladesh was ‘not perfect’ and called for meaningful dialogue among the political parties in Bangladesh. ‘It is obvious that the elections were not perfect,’ he said at a press conference at the UN headquarters in New York. ‘We encourage the different areas of the Bangladeshi political sphere to engage in meaningful forms of dialogue in order for the political life in Bangladesh to be as positive as possible.’

Asked whether the UN is willing to send any envoy or any special team to investigate the allegations of polls irregularities, Guterres said the UN did not have mandate for such investigations. 

The Awami League-led alliance, headed by prime minister Sheikh Hasina, bagged 288 out of 299 seats in the 11th parliamentary elections marred by intimidation of voters and polling agents, possessing polling centres, massive stuffing of ballots and clashes among activists of contesting candidates on December 30. 

  • Courtesy: New Age/ Jan 20, 2019

High sedimentation might render Payra Sea Port unusable

Emran Hossain 


The under construction Payra Sea Port in Patuakhali eventually might have to be abandoned as high sedimentation has been turning depth of the Bay of Bengal shallow, warned German scientist Hermann Kudrass.

Well known as professor HR Kudrass he has been studying the sedimentation process in the bay and delta subsidence for over last two decades.

Kudrass, scientific adviser of Marum University of Bremen, Germany, told New Age that to keep the Payra Sea Port usable would require constant removal of sediments discharged into the bay by rivers of the world’s largest delta. The first challenge would be dredging the 60-km-long channel with 15-meter draft to make the port accessible to ships, he said.

The 2nd challenge would be constantly guarding against the channel getting refilled by tides and surges during storms and cyclones, said Kudrass, whose studies helped Bangladesh win the maritime dispute with Myanmar at the Hamburg based International Tribunal for the Law of the Sea.

During his visit to Bangladesh to attend an environmental conference on January 15, Kudrass told New Age in an interview that to dredge the 60-km-long access channel would initially require removal of 100 million cubic meters of sediments.
He showed a newspaper report about a Euro 864 million deal signed on the previous day between the Payra Port Authority and a Belgian company for dredging a 75-km-long access channel with a draft of 10.5 metre.

‘It is just the beginning of the problem,’ said Kudrass. He said that since 1994, he conducted five expeditions in the Bay of Bengal as the chief scientist on board a research vessel. He said that three of the expeditions were funded by the German government. The objective, he said, was studying millions of years of sedimentation into the bay and subsidence in the delta.

Continuous refilling occurs on the heels of dredging as annually about 700 million tonnes of sediment is carried to the bay by the rivers while another 300 million tonnes of sediment comprising of sand, silt and clay get settled along the way inside Bangladesh, he said.

Creation of the Ganges-Brahmaputra delta by sediments from the great Himalaya that began 40 million years or so back, still continues, he said.

Sediments carried by tides and cyclones turned a long stretch of the Bay of Bengal so shallow that it would be possible for five metre high person to walk 24 km down the sea without sinking, said Kudrass.

Kudrass presented his findings at an environmental conference in Dhaka last week, in his paper, ‘Sediment Transport in the Offshore Delta of the Ganges-Brahmaputra and the access channel for the Payra Port’. He found the first 24 km off the shore has the draft only 5 meter, and the next 22 km with 10 meter draft, and the next 14 km with the depth of 15 meter.

Kudrass said that in all expeditions he had taken on the Bay of the Bengal the captain of research vessel never allowed researchers get closer than 15-meter water depth and the vessel had to be anchored 100 km off the coast. ‘It will be absolutely impossible to keep a sea port functioning under these circumstances,’ said Kudrass.

He said that cyclones would pose the biggest threat to the port as they mobilize sediment and carry it seaward. In a 2018 research, studying 21 years history of cyclones occurring in the bay. Kudrass and other scientists showed since 1985 more than a cyclone occurred annually. 

He said that even an average cyclone with radius of 300 km contains the strength of several atom bombs. ‘This power house is capable of transporting huge load of sediment along its track,’ he said. 

For a cyclone with the strength of Sidr it would take two hours or even less to refill the access channel to the port, he said.

Even if no cyclone hits, he said, the tides would refill the channel in a few months.

Chittagong University’s Institute of Marine Science professor Sayedur Rahman Chowdhury fully agreed with the Kudrass’s findings.

And when the sea port is under construction not on the coast but on a river how container-laden ships would enter it he could not understand, said Sayedur.

The movement of a 100-container-laden ship generally requires the minimum depth of 8-to-10-meter, he said. The general standard of ship is to carry 300 containers which would require the draft of 12 meter or more, he said.

Sayedur said that sedimentation was always a big challenge to keep Bangladesh’s inland ports usable.

Payra Port Authority chairman M Jahangir Alam said that they were fully aware about all the problems facing the Payra Port. But he said none would provide soft loans to Bangladesh for any project facing uncertainties. He said that two European universities carried out feasibility studies on behalf of the investors. 

According to PPA, the $16 billion 19-component Payra Port project including dredging is under implementation since 2013. 

Belgium Export Credit Agency Credendo will help the PPA get the dredging loan from a consortium led by the HSBC.

Chittagong University’s Institute of Marine Science’s professor Sayedur Rahman however has serious doubts about the port’s economic prospects.

At present it does not seem that the port’s earning would make it profitable infrastructure due to constant dredging expenses, said Sayedur. 
‘It seems they are literally throwing money into water,’ he said.

  • Courtesy: New Age/  Jan 20, 2019

Thursday, January 17, 2019

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি : বিধির ব্যত্যয় দুদকের কাছে কাম্য নয়

সম্পাদকীয়

রাষ্ট্রায়ত্ত লাভজনক ব্যাংক হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করা বেসিক ব্যাংক এখন খেলাপি ঋণে নিমজ্জিত। আর এর পেছনে দায়ী ঋণ জালিয়াতি। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বের করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। টাকার অংকে দেশের ইতিহাসে এককভাবে এটাই সবচেয়ে বড় ঋণ কেলেঙ্কারি হলেও দুর্নীতির কথা প্রকাশ্যে আসার পর একে ঘিরে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা আরো হতাশাজনক। বেসিক ব্যাংকের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ মেলে ২০১১ সালেই। অভিযোগটি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয় দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক)। ২০১৫ সালে দুদক এ কেলেঙ্কারি নিয়ে ৫৬টি মামলা দায়ের করেই দায়িত্ব শেষ করে। এখন পর্যন্ত একটি মামলারও তদন্তকাজ শেষ করতে পারেনি দুদক। সংশ্লিষ্ট আইনের ব্যত্যয় ঘটানো হলেও কয়েকজন কর্মকর্তার বদল ছাড়া দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই নেয়নি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি দেশের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। এ নিয়ে সংসদেও আলোচনা হয়েছে। তার পরও তদন্ত শেষ করতে দুদকের এত সময় কেন প্রয়োজন হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। এক হতে পারে তাদের সামর্থ্যের ঘাটতি, আরেক হতে পারে সদিচ্ছার অভাব। আমরা মনে করি, দুদকের যে আইনি কাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য, সেটা যদি তারা যথাযথভাবে প্রয়োগ করে, তাহলে এ ধরনের কেলেঙ্কারি দ্রুতই নিষ্পত্তি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আদালত যথার্থই বলেছেন যে দুদকের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও দক্ষতার অভাব আছে। আমরা বলতে চাই, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি ঘটনায় রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুদক কর্মকর্তাদের ন্যূনতম দক্ষতারও প্রয়োজন নেই। তারা শুধু স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলেই চলে। দক্ষ কর্মকর্তাও যদি তার কাজে স্বচ্ছ না হন, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী দুর্নীতি সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগের তদন্তের শেষ ভরসাস্থল দুদকের কাছে নিয়মের ব্যত্যয় কাম্য নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, যেসব কর্মকর্তার কাজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে, তাদের জবাবদিহি কেন করা হচ্ছে না। তবে কি শর্ষের মধ্যেই ভূত আছে? আমরা বলতে চাই, শর্ষের মধ্যে ভূত থাকলে দুর্নীতি দূর হবে না। দুর্নীতি তাড়াতে হলে আগে দুদককে শর্ষের ভূত তাড়াতে হবে। তার কর্মকর্তাদের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। আদালতের মতো আমরাও মনে করি, দুদককেই তার নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মূলহোতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে দুদক তার নিরপেক্ষতা প্রমাণের কাজ শুরু করতে পারে।

আর্থিক কেলেঙ্কারি তদন্তে দুদক এখন পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপই নিতে পারেনি। এর সুনির্দিষ্ট ও যৌক্তিক কারণ এখন পর্যন্ত তারা দেখাতে পারেনি। এ কথা সত্য, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতরা রাজনৈতিকভাবেও শক্তিশালী। কিন্তু সাত বছরেও একটি মামলার তদন্তকাজ শেষ করা যাবে না, এমনটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অধিকাংশ বিষয়ই পরিষ্কার হয়েছে গণমাধ্যমের কল্যাণে। কিন্তু দুদক ব্যাংক কেলেঙ্কারির জন্য চেয়ারম্যানকেই জিজ্ঞাসাবাদ করেনি, এমনকি কোনো মামলার আসামি হিসেবে তার নামও নেই। হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়ার পর দুদক উদ্যোগ নেয় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের। এখান থেকেই দুদকের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

অন্যান্য আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলার মতো এ মামলাগুলোর অগ্রগতি হিমাগারে চলে যাবে বলেই মনে করছেন অনেকে। কিন্তু আমরা দুদকের ওপর আস্থা রাখতে চাই। আশা করি, শিগগিরই তারা বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি মামলার তদন্তকাজ শেষপূর্বক চার্জশিট প্রদান করবে। এর মাধ্যমে আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিচারকাজ শুরু হচ্ছে, এ বার্তা বাংলাদেশের আর্থিক খাতের স্থায়িত্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

  • Courtesy: Banikbarta/ Jan 17,2019

চাঁদা না দেওয়ায় দোকানে আওয়ামী লীগের তালা


চাঁদা না দেওয়ায় সমবায় মার্কেটের পাশের দোকানগুলোতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার গুলিস্তানে।  ছবি: প্রথম আলো

  • সমবায় মার্কেটের পাশে ২০টি দোকানে এখনো তালা
  • ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা তালা দিয়েছিলেন
  • যারা চাঁদা দিচ্ছেন তাঁরাই দোকান খুলছেন


রাজধানীর গুলিস্তানের টুইন টাওয়ার সমবায় মার্কেটের পাশে প্রায় ২০টি দোকানে এখনো তালা ঝুলছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চাঁদা না দেওয়ায় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রায় ৪০টি দোকানে তালা দিয়েছিলেন। এখন যাঁরা চাঁদা দিচ্ছেন, শুধু তাঁরাই দোকান খুলতে পারছেন। বাকিরা নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এই দোকানগুলো অবৈধ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) রাস্তা তথা পার্কিংয়ের জায়গায় এসব দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দোকান উচ্ছেদ করে পার্কিংয়ের জায়গা করতে হবে। অন্যথায় এসব দোকানের ভাড়া দলের নেতা-কর্মীদেরই দিতে হবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ৯ জানুয়ারি রাতে ডিএসসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি মো. দুলাল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. রাহাদের নেতৃত্বে প্রায় ৪০টি দোকানে তালা লাগানো হয়। তখন তাঁরা দোকানের আয়তন অনুযায়ী ৫০ থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করেন। গতকাল বুধবার পর্যন্ত বিভিন্ন পরিমাণে চাঁদা দিয়ে প্রায় ২০টি দোকান খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। চাঁদা দিতে না পারায় বাকি দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে।

এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রফিকুল ইসলাম ও মো. দুলাল। রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯০ সালের আগে থেকে অবৈধ এই দোকানগুলো ভাড়া দিয়ে খাচ্ছে একটি পক্ষ। তারা দলের (আওয়ামী লীগ) রাজনীতি করে না। অথচ দলের নেতা-কর্মীরা না খেয়ে আছেন। তাই তাঁরা দোকানগুলোতে তালা দিয়েছেন। এখন থেকে তাঁরাই প্রতি মাসে ভাড়া তুলবেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে সাতজন ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে এই জায়গাটি ফাঁকা ছিল। তখন যে যাঁর মতো করে দোকান বসিয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপি সমর্থক নেতা-কর্মীদেরও কিছু দোকান আছে। এখন এই দোকানগুলো অবৈধ অজুহাতে চাঁদা চাইছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের ভয়ে বিএনপি সমর্থক অনেক দোকানমালিকই গুলিস্তানে আসছেন না। ডিএসসিসি দোকানগুলো উচ্ছেদ করলে কারও আপত্তি থাকবে না।

তবে জায়গার মালিকানার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ডিএসসিসির একজন সার্ভেয়ার বলেন, জায়গাটি সিটি করপোরেশনের। আর ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার সমবায় মার্কেটের আশপাশে তাঁদের জায়গা নেই বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে সমবায় মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জালাল বলেছেন, মার্কেটের বাইরে তথা এই দোকানগুলো ডিএসসিসির রাস্তার ওপরই করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গত রাতে জানতে চাইলে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জায়গার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। ডিএসসিসির জায়গা হলে উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

গতকাল গুলিস্তানে গিয়ে দেখা যায়, টুইন টাওয়ার সমবায় মার্কেটের চারপাশের রাস্তার ওপর রয়েছে এই দোকানগুলো। এর মধ্যে পশ্চিম পাশে এক সারিতে দোকান রয়েছে সাতটি। উত্তর ও দক্ষিণ পাশের দুটি দোকান খোলা। পূর্ব পাশে এক সারিতে ১৮টি দোকানে রয়েছে। এর মধ্যে ১৪ টিতেই তালা লাগানো। এ মার্কেটের সামনের ছয়টি দোকানের মধ্যে পাঁচটি খোলা। চাঁদা না দেওয়ায় একটি দোকানে তালা ঝুলছে। এ ছাড়া উত্তর পাশে আরও পাঁচটি দোকানে তালা দেখা গেছে।

গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ নেতাদের ২০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে দোকান খুলেছেন এক দোকানি। তিনি বলেন, ‘চাঁদা না দিয়ে বাঁচতে অনেক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখন থেকে তাঁরাই ভাড়া নেবেন বলে জানিয়েছেন। এই অবস্থায় গুলিস্তানে ব্যবসা করাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

জানতে চাইলে শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দোকানগুলোতে তালা মারার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। দোকানিরা তাঁর কাছে অভিযোগও করেননি।

তবে গতকাল বিকেলে চাঁদাবাজির প্রতিকার চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়ার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন দোকানমালিকেরা। পরে ডিএমপি কমিশনার পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেনকে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অভিযোগের কপি হাতে পাননি। পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
  • কার্টসিঃ প্রথম আলো/ জানু ১৭, ২০১৯ 

ক্রিসেন্ট গ্রুপের ১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা পাচার!

জনতা ব্যাংক ও ক্রিসেন্টের ১৭ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদক 

জেসমিন মলি 

রফতানি বিলের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে ক্রিসেন্ট গ্রুপ কর্তৃক ১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা পাচার ও আত্মসাতের ঘটনায় ব্যাংকটির ১১ কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধান সূত্র জানিয়েছে, জনতা ব্যাংকের ১১ কর্মকর্তা ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের ছয়জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের সুপারিশ করে শিগগিরই একটি প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়া হবে। কমিশনের অনুমোদন পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।

দুদকের প্রাথমিক তদন্তে জনতা ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে তারা হলেন নোট প্রস্তুতকারী এক্সিকিউটিভ অফিসার (এসও) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, পরীক্ষণকারী সিনিয়র অফিসার মো. মনিরুজ্জামান, সুপারিশকারী সিনিয়র অফিসার মো. সাইদুজ্জামান, প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমীন, সিনিয়র অফিসার মো. মাগরেব আলী, সিনিয়র অফিসার মো. খায়রুল আমিন, এজিএম মো. আতাউর রহমান সরকার, অনুমোদনকারী ডিজিএম (বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি) মো. রেজাউল করিম, ডিজিএম ও শাখাপ্রধান মুহাম্মদ ইকবাল, ডিজিএম ও শাখাপ্রধান একেএম আসুদুজ্জামান এবং ডিজিএম ও এফটিডি কাজী রইস উদ্দিন আহমেদ।

অন্যদিকে গ্রাহকদের মধ্যে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তারা হলেন ক্রিসেন্ট লেদার প্রডাক্টের চেয়ারম্যান এমএ কাদের, একই প্রতিষ্ঠানের দুই পরিচালক সুলতানা বেগম ও রেজিয়া বেগম, লেসকো লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. জাকারিয়া, রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান মো. আবদুল আজিজ, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটুন জাহান মীরা।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, ক্রিসেন্ট গ্রুপ কর্তৃক জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে জনতা ব্যাংকের টাকা পাচার এবং আত্মসাতের ঘটনায় জনতা ব্যাংক কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত ছিলেন। তাই এখানে দুদকের আওতাভুক্ত সম্পৃক্ত ধারার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। জনতা ব্যাংক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে এখানে সম্পৃক্ত ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং পরবর্তী পর্যায়ে মানি লন্ডারিং অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তাই দুদক ছাড়া অন্য সংস্থার এ বিষয়ে মামলা করার আইনগত ভিত্তি নেই। বর্তমানে দুদকের অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে। দুদক দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৭১, ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২), (৩) ধারায় শিগগিরই মামলা দায়ের করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, একটি স্বাধীন সংস্থা হিসেবে যেকোনো অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদক আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। আমরা দুদকের যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ব্যাংকের পক্ষ থেকে ক্রিসেন্ট গ্রুপের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্তও চলমান। ক্রিসেন্ট গ্রুপের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য এরই মধ্যে দুই দফায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করার জন্য আইনজীবীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে ব্যাংকের নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নতুন ৫৭০টি রফতানি বিল কেনার নামে ক্রিসেন্ট লেদারের চেয়ারম্যানের সহায়তায় ৯৯৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন স্মারকে অনুসন্ধান করার জন্য সহকারী পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ারকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। এখন পর্যন্ত দুদকের অনুসন্ধানে ক্রিসেন্ট গ্রুপের ৬৫৩টি রফতানি বিলের মাধ্যমে পণ্য বিদেশে সরবরাহ করে সে অর্থ বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন না করে ১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে দুদকের পরিচালক ও তদারককারী কর্মকর্তা সৈয়দ ইকবাল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, অভিযোগটির অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। এ কারণে বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই। তবে দুদকের অনুসন্ধানে অর্থ আত্মসাতের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনুসন্ধানকালে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাপ্ত নথিপত্র বিশ্লেষণ করে বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তা হচ্ছে রফতানি এলসি ইস্যুকারী ব্যাংক প্রথম শ্রেণী/আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এবং আর্থিক সংগতি বিশ্লেষণে গ্রহণযোগ্য কিনা তা ব্যাংকার্স অ্যালামনাক বা অন্য কোনোভাবে শাখা কর্তৃক যাচাই করা হয়নি।

বৈদেশিক ক্রেতার সন্তোষজনক ক্রেডিট রিপোর্ট গ্রহণপূর্বক ক্রেতার স্ট্যাটাস বিশ্লেষণ, মূল্য পরিশোধের সক্ষমতা সম্পর্কে বৈদেশিক ক্রেতার ব্যাংকের মতামত সংগ্রহপূর্বক তা যাচাই না করে ব্যাংকগুলোর রফতানি নেগোসিয়েশন/বিল ক্রয় করা হয়েছে। ফরেন ডকুমেন্টারি বিল পারচেজ (এফডিবিপি) ক্রয়ের জন্য গ্রাহকের আবেদনপত্রে গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের স্বাক্ষর যাচাই করেনি ব্যাংক শাখা। শাখায় রক্ষিত শিপিং ডকুমেন্ট প্রেরণের কুরিয়ার রিসিপ্টে ডকুমেন্ট গ্রহণকারীর স্বাক্ষর নেই। বৈদেশিক ব্যাংকে ডকুমেন্ট প্রেরণের প্রুফ অব ডেলিভারি নথিভুক্ত নেই, ফলে ডকুমেন্টগুলো সংশ্লিষ্ট বৈদেশিক ব্যাংকে প্রেরণ করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত নয়। ক্রয়াদেশ প্রদানকারী/আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভিন্ন দেশে (যেমন যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত) অবস্থিত হলেও পণ্য রফতানি হচ্ছে হংকং ও চীনের মতো দেশে। এক্ষেত্রে ক্রয়াদেশ প্রদানকারী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পণ্য গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সমঝোতা/চুক্তি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে শাখা। চুক্তিপত্রের বিপরীতে প্রধান কার্যালয়ের এফডিবিপি লিমিট মঞ্জুরিপত্রে হংকং ও চীনের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মিউচুয়াল ওয়েল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও ম্যাক্রোভাইল লিমিটেডের গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিল নেগোসিয়েশনের অনুমতি দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ওই গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠান কিনা এবং চুক্তিপত্রগুলো যথাযথ কিনা তা যাচাই না করেই বিলগুলো ক্রয় করা হয়েছে। 
  • Courtesy: Banikbarta /Jan 17, 2019

Re-polling demands now sound logical

EDITORIAL

THE Transparency International, Bangladesh report on 50 constituencies that it monitored in the December 30 general elections, made public on Tuesday, is worrying. While the report grossly terms the 11th parliamentary elections partially participatory, non-competitive, questionable and flawed, it says that ballots were stamped on the eve of the polling in 33 constituencies, the administration and law enforcement agencies remained idle in 42 constituencies, fake voting took place in 41 constituencies and polling stations were captured in 30 constituencies.

Furthermore, as the report says, polling agents and voters were intimidated in 26 constituencies, voters were forced to cast their vote for a certain electoral symbol in 22 constituencies, voters were asked to leave polling stations in 21 constituencies, ballot boxes were found full before polling in 20 constituencies and opposition activist were tortured in 11 constituencies. Given the picture, there are hardly any reasons for polling in remaining constituencies to be considered better.

All this brings the whole of the elections into question while it points to glaring failures of the Election Commission and the incumbent party. What rather happened only on the polling day, from polling to vote counting, the elections can well be described as a mockery of people’s right to franchise in the hands of the incumbent Election Commission and the incumbent political quarters.

The Transparency International, Bangladesh further comes to say that foreign and local election observation groups faced obstacles in monitoring the elections; some organisations were not allowed to observe the elections because of their alleged political link while some others having links with the incumbent party were. The report also says that candidates running in 50 constituencies spent more at least three times the ceiling of Tk 2.5 million while candidates from the Awami League spent on an average Tk 13.3 million, which is five times the ceiling. The watchdog also comes up to say that the chief election commissioner has come to be mired in conflict of interest as he did not give any explanation over the candidacy of a close relative of him. If intensified violence that took place both during the campaign period and on the polling day, arrest of candidates, leaders and activists of parties and alliances in the opposition, harassment and intimidation of opposition candidates and leaders both by the law enforcement agencies and activists of the incumbent party and its wings and brazen inaction of the Election Commission in ensuring a level playing field and in stopping breaches of the code of conduct for the electoral process are considered, the elections appear to be unmeaning.

The Transparency International, in a situation like this, recommends a judicial inquiry of the incidents that centred on the elections as they all gave rise to scepticism in people about the holding of the elections. It also suggests the enactment of a law on the appointment of the chief and other election commissions so that similar irregularities do not repeat in future. In view of such a worrying situation, almost all parties in the opposition that took part in the general elections have come up with the demand for re-polling. The demand sounds reasonable.

  • Courtesy: New Age/ Jan 17, 2019

ভাঙারি দোকানে বিনা মূল্যের বই

সম্পাদকীয়

প্রশাসনকে আরও সজাগ হতে হবে


উৎপল দত্তের টিনের তলোয়ার নাটকের একটি দৃশ্যে দেখা যায়, ‘দ্য গ্রেট বেঙ্গল অপেরা’র মহড়াকক্ষে হাজির হন প্রিয়নাথ মল্লিক নামের এক তরুণ নাট্যকার। তিনি ওই অপেরার পরিচালক বেণীমাধব চাটুজ্যে ওরফে কাপ্তেন বাবুকে মাসখানেক আগে তাঁর নিজের লেখা নাটক পলাশীর যুদ্ধপড়তে দিয়েছিলেন। নাটকটি কাপ্তেন বাবুর কেমন লেগেছে এবং সেটি মঞ্চস্থযোগ্য কি না, সেই খোঁজ নিতেই তিনি এসেছেন। অতিথি প্রিয়নাথকে মুড়ি খেতে দেওয়া হয় কাগজের ঠোঙায়। মুড়ি খেতে খেতে কাপ্তেন বাবুর সঙ্গে পলাশীর যুদ্ধ নাটক নিয়ে আলোচনা করছিলেন প্রিয়নাথ। হঠাৎ তাঁর খেয়াল হলো, তাঁর হাতে যে ঠোঙাটা ধরা, সেটি পলাশীর যুদ্ধ—পৃষ্ঠা নম্বর ৩২১। কাপ্তেন বাবুর হাতের ঠোঙা বানানো হয়েছে পলাশীর যুদ্ধ—পৃষ্ঠা নম্বর ৩০৭ দিয়ে।

প্রতিবছর এই সময়ে দেশের আনাচকানাচে মহাসমারোহে টিনের তলোয়ার নাটকের এই দৃশ্য মঞ্চায়িত হয়। সরকার বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য যে পাঠ্যবই ছাপায়, তার একটা অংশ পাওয়া যায় ভাঙারির দোকানে। যাঁরা বই বিতরণের দায়িত্বে থাকেন, তাঁরা কেজি দরে বইগুলো ভাঙারি ব্যবসায়ীদের কাছে বেচে দেন। প্রিয়নাথের পলাশীর যুদ্ধ নাটক দিয়ে মুড়ির ঠোঙা বানানোর মতো তাঁরা এই পাঠ্যবই দিয়ে ঠোঙা বানান। দু-একটা ঘটনা ধরা পড়ে। সেগুলো খবরে আসে। বাকিগুলো বিস্মৃতির আড়ালে তলিয়ে যায়।

গত বছরের মে মাসে বাগেরহাট শহরের একটি ভাঙারির দোকান থেকে ১৬ বস্তা বই উদ্ধার করা হয়েছিল। একই সময়ে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার শহরতলি কালিকাপুর এলাকার একটি মুদিদোকান থেকে দেড় হাজার বই জব্দ করা হয়েছিল। ওই সময় নানা জায়গায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। কাউকে কাউকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি বই দিয়ে ঠোঙা বানানো বন্ধ করা যায়নি। এ বছরও একই ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার হবিগঞ্জ শহরের একটি ভাঙারির দোকান থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় পাঁচ হাজার নতুন বই উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে ৯ জানুয়ারি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বিনা মূল্যের বই কেজি দরে ভাঙারি দোকানে বিক্রি করার পর আটক হন কাঁঠালতলা গিয়াসিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবদুল হালিম। ধরা পড়া এবং মামলার সুবাদে ঘটনাগুলো সংবাদমাধ্যমে আসছে। ধারণা করা অযৌক্তিক নয়, এ রকম আরও ঘটনা দেশজুড়ে ঘটছে, যেগুলো ধরা পড়ছে না।

ঠোঙাশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে যেসব ‘কুটিরশিল্প সংবেদনশীল’ মানুষ শিশুদের বঞ্চিত করে পাঠ্যপুস্তক ভাঙারির দোকানে বেচে দিচ্ছেন, তঁারা হয় শিক্ষক, নয়তো শিক্ষাদানের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট। তাঁদের কড়া সাজার আওতায় আনা উচিত। প্রশাসন তথা সরকারের মধ্যে এই উপলব্ধি দ্রুত জাগ্রত হওয়া দরকার। 
  • Courtesy: Prothom Alo /Jan 17, 2019