ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির প্রধান সূতিকাগার। গত ১০০ বছরে বাংলাদেশের ( বৃটিশ ও পাকিস্তান আমল সহ) রাজনীতির নানা ঘটনা প্রবাহের সূত্রপাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ১ কিলোমিটারের মধ্যে থেকেই। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ শুধু দেশের মানুষের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনীতি নিয়ে যারা আগ্রহী তাদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়বে তা ধারণা করা যায়। দীর্ঘ ২৮ বছর যাবৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সকল ছাত্রসংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিশেষ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে ডাকসু নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। এর মধ্যে প্রধান আলাপ হচ্ছে ১। ভোট কেন্দ্র হলের বাইরে না ভিতরে ২। নির্বাচনে ভোটার হওয়ার বয়স ৩০ বছর নির্ধারণ এবং ৩। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাস ও হলে সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি।
এর বাইরে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের আলাদা আলাদা দাবীতো রয়েছেই। তাই ডাকসু নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে আশাংকা, আতংক ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার পারদও সমান তালে বেড়ে চলছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আলোচিত বিভিন্ন দাবীর মধ্যে সবাই মোটামুটি একটি দাবির বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেন, সেটা হচ্ছে ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে হতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে , ইতোপূর্বে অনুষ্ঠিত সকল ডাকসু নির্বাচনেইতো হল গুলোতে ভোটকেন্দ্র ছিলো। তাহলে হঠাৎ করে এবারে হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি কেন? এ বিষয়ে বেশিরভাগের অভিমত হচ্ছে, হলে ভোট দেয়ার ন্যূনতম পরিবেশ নাই। পুরো হল ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রিত হয় সরকারি ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নির্দেশ বা পরামর্শে। যা গত প্রায় ১২ বছর যাবৎ বিদ্যমান। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলে ভোটকেন্দ্র যতই নির্বাচনের দিন সুষ্ঠু পরিবেশের নিশ্চয়তা দিন না কেন, এটা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে আর একটি পরিসংখ্যান হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনকারী সংগঠন বা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন। তা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনের যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে মোট ভোটার প্রায় ৪৩ হাজার। যার প্রায় ৬৫ শতাংশ হলের বাইরে থাকে। অর্থ্যাৎ প্রায় ২৮ হাজার ভোটার হলের বাইরে থাকেন। তাই এই বিপুল সংখ্যক ভোটার যারা হলেই থাকেন না, তাদের নিরাপত্তা ও অস্বস্তির বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সত্যিকার অর্থেই দীর্ঘ ২৮ বছর পরে একটি ক্রিয়াশীল ‘ডাকসু’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উপহার দিতে চান, তাহলে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র করার দাবীর প্রতি সচেতন হবেন।
অন্যথ্যায় ধরে নিতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনকেও গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সীমাহীন ভোট জালিয়াতি হয়েছে , যার পুরো ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন সিইসি কেএম নুরুল হুদা, যেখানে ১০ কোটি নাগরিকের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে, যার মাঝে দেড় কোটি ছিলো নতুন ভোটার, যারা জীবনের প্রথম ভোটটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন,হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার সেরকমই একটি নিয়ন্ত্রিত ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন চলছে।
পূণশ্চঃ ডাকসু নির্বাচনে হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি যে এই প্রথম উত্থাপিত হয়েছে তা নয়। ১৯৯৪ সালে তফসিল ঘোষণার পরও ডাকুস নির্বাচন করতে পারেনি তৎকালীন প্রশাসন তার কারণ ছিলো এই ভোটকেন্দ্র। সে সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা ছাত্রলীগ ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছিল । সে সময় ভোটকেন্দ্র সমস্যা সুরাহা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত হয়নি ডাকসু নির্বাচন।
অথচ আজ ছাত্রসংগঠন হিসেবে একমাত্র ছাত্রলীগই ভোটকেন্দ্র হলে রাখার বিষয়ে অনড়, জেদী এবং সরব।