Search

Sunday, December 8, 2019

লাগামছাড়া দ্রব্যমূল্য : সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?

কামরুল হাসান দর্পণ 

আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, ‘আগের আমল ভাল ছিল, এ আমল ভাল না। আগের আমলে জিনিসপত্রের দাম কম ছিল।’ এর অর্থ হচ্ছে, আগে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিল। কম টাকায় তারা বেশি পণ্য কিনতে পারত। এখন বেশি টাকায় কম পণ্য পাওয়া যায়। মানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদায় ঘাটতি থেকে যায়। ফলে অনেক মানুষ মনে করে, যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ। প্রবাদটি জনসাধারণ খুব মানে। এর ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, ভবিষ্যতে যে দিন রয়েছে, বর্তমানের চেয়ে সে দিনগুলো খারাপ হবে। আসলে কি তাই? আমরা যদি আশাবাদী মানুষ হই, তবে এ কথা পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ ভবিষ্যত ভাল হবে এমন আশা নিয়েই আমরা অপেক্ষায় থাকি। আজ দিনটি খারাপ গেলে আগামীকাল ভাল যাবে এটা মনে করাই আমাদের স্বাভাবিক প্রবণতা। মানুষের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, আজ খারাপ হলে আগামীতে ভাল হওয়ার আশা তার মধ্যে প্রবল হয়ে ওঠে। আবার আমরা যদি আগের আমল ভাল ছিল এ কথা বিবেচনা করি, তাহলে বলা যায়, বর্তমান দিনই ভাল। কারণ এই দিনই কালক্রমে অতীত হবে। তবে কিছু মানুষ আছে, যাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সবসময়ই ভাল। এরা জন্মগতভাবে বা জন্মের পর থেকেই সামর্থ্যবান হয়ে থাকে। যেমন যে জন্মগতভাবে কোটিপতি এবং যে জন্মের পর যেভাবেই হোক কোটিপতি হন, তার আর্থিক অবস্থা সবসময়ই ভাল থাকে। খারাপ হলে খুব একটা হয় না। কোটিপতির ভিত ঠিকই থেকে যায়। সাগর থেকে দুয়েক ঘটি পানি তুলে নিলে যেমন সাগরের ক্ষতি হয় না, তেমন। জিনিসপত্রের দাম যদি আকাশচুম্বীও হয়ে যায়, তাতেও কোটিপতির কিছু আসে যায় না। তার কেনার সামর্থ্য অটুট থাকে। আর যে মানুষটি দিন আনে দিন খায় বা সীমিত আয়ের, তার সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। সীমিত সামর্থ্যরে মধ্য থেকে তিনি যেভাবে জীবনযাপন করেন, হঠাৎ করে যদি তাতে টান ধরে, তবে তার দিশাহারা হওয়া ছাড়া গতি থাকে না। পাঁচ টাকার জিনিস এক লাফে দশ টাকা হয়ে গেলে সীমিত আয়ের মানুষের বেহুশ ও বেদিশা হওয়ারই কথা। এখন বছরের পর বছর ধরে সাধারণ মানুষকে হরহামেশা বেদিশা হতে হচ্ছে। বিশেষ করে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে তাদের জীবনযাপনকে বারবার পরিবর্তন করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। চাপের মধ্যে পড়তে হয়েছে এবং এই চাপ নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে। সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম যেভাবে দফায় দফায় বৃদ্ধি করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ে, তাতে তাদের টুঁ শব্দ করার কোনো উপায় থাকে না। নীরবে মেনে নিতে হয়। তাদের পক্ষ হয়ে যে কেউ কথা বলবে, তেমন উপযুক্ত কাউকেই তারা পায় না। ফলে সরকার তার খেয়াল খুশি মতো যেভাবে তাদের রাখতে চায়, সেভাবেই তাদের থাকতে হয়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ‘আগের আমলই ভাল ছিল’ বলে হতাশায় নিমজ্জিত হতে হয়।

দুই.
মগের মুল্লুক বলে একটা কথা আছে, যেখানে মগরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছামতো অপকর্ম করে বেড়াত। লুটপাট, অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করত। নিয়ম-কানুনের কোনো বালাই ছিল না। এই আধুনিক ও সভ্যতার যুগে এসেও বাংলাদেশের মানুষকে যেন অনেকটা মগের মুল্লুকেই বসবাস করতে হচ্ছে। সুশাসনের অভাবের মধ্যে থেকে তাদের ত্রাহি অবস্থা। বিপদের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। সরকারের দ্বারাই তাদের একের পর এক বিপদে পড়তে হচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর যেন কেউ নেই। অথচ সংসদে বিরোধী দল আছে, রাজপথে বড় বড় রাজনৈতিক বিরোধী দল আছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে কেবল সরকারকেই দেখা যাচ্ছে। অথচ রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স থাকার কথা। সরকার জনবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে বিরোধী দল জনগণের হয়ে কথা বলবে, প্রতিবাদ করবেÑএটাই স্বাভাবিক। দুঃখের বিষয়, এখন তার ছিঁটেফোটাও দেখা যায় না। বিরোধী দল বলে যে কিছু আছে, তা জনগণের কাছে মনে হচ্ছে না। সরকারও মনে করে বিরোধী দল বলে কিছু নেই। ফলে তার ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে পারছে। জনগণকেও বাধ্য হয়ে তার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হচ্ছে। এই যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকশ ছোঁয়া হয়ে রয়েছে, তাতে কে কি করতে পারছে? সরকারের বিরোধিতা কি কেউ করতে পারছে? পারছে না। পারছে না বলেই চাল, ডাল, পেঁয়াজ, তেল, শাক-সবজিসহ সব ধরনের পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। দিশাহারা মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক বা তার কম কিনে কোনো রকমে ব্যয় সংকুলান করে চলেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই বিইআরসি বিদ্যুতের দাম আবার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, বাড়তি জিনিসপত্রের দাম অনিবার্যভাবেই আরও বৃদ্ধি পাবে। গণশুনানিতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কেউ কেউ বিরোধিতা করলেও বিইআরসি যে তার সিদ্ধান্ত স্থগিত করবে তা ভাবার কোনো কারণ নেই। অতীতেও বিরোধিতা হয়েছে, তাতে কাজ হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি দাম বাড়িয়েই ছেড়েছে। জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্যের মধ্যে বিদ্যুতের এই দাম বৃদ্ধি সাধারণ ও সীমিত আয়ের মানুষের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সরকার বা তার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ভাবছে না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সরকারের টাকার প্রয়োজন। আর এ টাকা জনগণের কাছ থেকে আদায় করতে হবে। তারা কোথা থেকে টাকা দেবে তা দেখার দায়িত্ব তার নয়। সরকারের এমন আচরণ যে জনগণের সরকারের মতো নয়, তা একবাক্যে বলা যায়। জনগণের সরকার জনগণের সুখ-দুঃখ বোঝে, সরকার যদি টানাপড়েনের মধ্যেও থাকে তবুও জনগণের কষ্ট লাঘবে নিরন্তর চেষ্টা করে। যেমনটি করে পরিবারের একজন অভিভাবক। নিজে কষ্ট করে হলেও সন্তানকে সাধ্যের শেষটুকু দিয়ে ভাল রাখতে চেষ্টা করে। অন্যদিকে জনগণের সরকারও তাই করে। দেখা যাচ্ছে, সরকার এ দায়িত্বটুকু যথাযথভাবে পালন করছে না। জনগণের যে কষ্ট হচ্ছে, তা বুঝতে চায় না, বুঝলেও তা উপেক্ষা করে চলেছে। এই যে পুনরায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাবে, তা যে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে ঘি ঢালার মতো হয়ে উঠবে, তখন মানুষ কোথায় যাবে? তাদের হাহাকার কে দেখবে?

তিন.
জনগণের প্রতি বর্তমান সরকারের আচরণ কতটা জনবান্ধব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ সরকারের কাজ হচ্ছে, নিজে কষ্টে থেকে জনগণকে সুখ-শান্তিতে রাখা। জনগণের সেবক হয়ে কাজ করা। দেখা যাচ্ছে, সরকার করছে তার বিপরীত কাজ। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, সরকারের মধ্যে শো অফ বা দেখানোর একটা প্রবণতা রয়েছে। যেমন সরকার প্রায় আট-নয় বছর আগে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিতে বলেছিল, জনগণকে দশ টাকা দরে চাল খাওয়াবে। আট-নয় বছর পর প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজনের মধ্যে দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির একটি লোক দেখানো প্রকল্প নিয়ে তা দেখিয়ে দিয়েছে। এ চাল বিক্রি নিয়েও এন্তার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন দারিদ্র্যর ভান করে সে চাল ভোগ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দশ টাকার চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি কি শুধু প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজনের জন্যই ছিল, নাকি ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলে যাতে এই টাকায় কিনতে পারে, সে প্রতিশ্রুতি ছিল? প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তো চালের দাম সর্বত্র দশ টাকা হওয়ার কথা। আলাদা প্রকল্প করে দশ টাকা বিক্রি করার কথা নয়। এটা কি জনগণের সাথে এক ধরনের চালাকি নয়? চালাকিই বটে! সরকারের কার্যক্রমে এমন আরও অনেক চালাকি আছে। পানির দাম গোপনে বাড়িয়ে দেয়া, গোপনে ভ্যাট-ট্যাক্স কেটে নেয়া থেকে শুরু করে মাথাপিছু আয় কাগজে-কলমে বৃদ্ধি করে দেয়া পর্যন্ত একটা লোক দেখানোর প্রবণতা রয়েছে। কেবল সাধারণ মানুষই বোঝে, সরকার তাদের সাথে কী আচরণ করছে! তাদের জোর করে কুইনাইন খাইয়ে দেয়া হচ্ছে। অভ্যস্ত করে তুলছে। বুক ভরে শ্বাস নেয়ার পরিবর্তে ছোট ছোট শ্বাস নিয়ে হাঁপিয়ে বাঁচার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এক রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণেরও কোনো উপায় তারা দেখছে না। তাদের এ পরিস্থিতি যে তুলে ধরবে তারও কোনো উপায় নেই। তাদের কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। অথচ দেশে এত এত বিরোধী রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত জনগণের দোহাই দিয়ে বড় বড় কথা বলে বেড়াচ্ছে, জনগণের এই দুর্ভোগের সময় তাদের কণ্ঠ উচ্চকিত হচ্ছে না। পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে না। আমরা যদি সবচেয়ে বড় বিরোধী রাজনৈতিক দলটির কথা ধরি, তাহলে দেখব দলটি জনগণের এই দুর্ভোগের সময় পাশে নেই। পণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রেস কনফারেন্সে গণবিরোধী, দাম বৃদ্ধি প্রত্যাহার করতে হবেÑএমন দুয়েকটি গৎবাঁধা বক্তব্য দিয়েই খালাস। অথচ জনগণের এই দুঃসময়ে দলটি মাঠে কার্যকর কর্মসূচি দিতে পারত। দেশ ব্যাপী থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারত। এতে জনগণের ব্যাপক সমর্থন দলটি পেত। জনরাজনীতি করার একটি মোক্ষম ইস্যু তারা ধরতে পারত। জনগণের পাশে দাঁড়ানোর এই সুযোগ দলটি ক্রমাগত হারাচ্ছে। জনদরদী এ কাজটি করতে গিয়ে যদি তারা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তোপের মুখেও পড়ত, তাহলেও জনগণ দেখত দলটি তাদের ন্যায্য দাবী নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এতে দলটির প্রতি মানুষের আকর্ষণ ও সহানুভূতি অনেক বেশি বৃদ্ধি পেত। তারা ভাবত আমাদের পক্ষে আন্দোলন করতে গিয়ে দলটি সরকারের রোষানলে পড়েছে। তাছাড়া পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী এ ধরনের কর্মসূচিতে বাধা দিতেও দ্বিধা করত। কারণ এটি জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি। বাধা দিলে তা সরকারের বিরুদ্ধেই যাবে। জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে আরও রুষ্ট হয়ে উঠবে। দুঃখের বিষয়, দলটি জনগণের এই বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরতে পারছে না। এই ব্যর্থতার জন্য যদি জনগণ সরকারের পাশাপাশি দলটিকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করায়, তবে তা যথার্থ বলেই প্রতীয়মান হবে।

চার.
কোনো সরকার জনবান্ধব কিনা, তা বোঝা যায় জনগণের প্রতি তার আচরণ দেখে। সরকারের প্রতি জনগণের চাওয়া খুবই সীমিত। তারা চায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হাতের নাগালের কাছে থাকুক, স্বচ্ছন্দে মৌলিক চাহিদাটুকু মিটুক। চাপমুক্ত হয়ে জীবনযাপন করুক। দুঃখের বিষয়, এ সময়ে সাধারণ মানুষকে চাপতে চাপতে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, তাদের দম নিতেও কষ্ট হচ্ছে। সরকার কথায় কথায় বলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। এটা বলে না, জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি ও জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কথা যদি তুলনা করা হয়, তবে দেখা যাবে অর্থের পরিমাণ বড় হয়ে দেখা দিলেও তা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা যাচ্ছে না। যদি এমন হতো, মানুষের ইনকাম বেড়েছে এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি, তাহলে বলা যেত মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। বিষয়টি অনেকটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এক বস্তা টাকা নিয়ে গেলেও এক বস্তা জিনিসপত্র কেনা যাচ্ছে না। মানুষ যে বলে আগের আমল ভাল ছিল, তা বলে এ কারণে আগে যে টাকায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তারা কিনতে পারত, এখন তা কিনতে পারছে না। অর্থাৎ তাদের আয় আগের জায়গায়ই রয়ে গেছে। তাদের আগের এক টাকা এ সময়ের পাঁচ টাকা হলেও, এ পাঁচ টাকা দিয়ে আর আগের মতো জিনিসপত্র কিনতে পারছে না। কাজেই মানুষের আয় ও ক্রয় ক্ষমতা বাড়ল কীভাবে? এখন টাকা বেশি দেখা যায়, তবে এ টাকায় মানুষ বরকত পাচ্ছে না। অথচ সরকার টাকাটাই বড় করে দেখছে, এ টাকায় যে মানুষের মৌলিক চাহিদা মিটছে না, তা উপেক্ষা করে যাচ্ছে। তবে সরকার সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা না করলেও একটি শ্রেণীর স্বার্থ স্বার্থটা বড় করে দেখছে। জিনিসপত্রে দাম যে বৃদ্ধি হলো, কারা করল, কেন করল তার কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে পারছে না। একটি কমন কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। সারাবিশ্বেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, ফলে আমাদের এখানেও বাড়ছে। আবার বলা হয়, পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে, দাম বৃদ্ধির কারণ নেই। তাদের এ ধরনের বিপরীতমুখী কথাবার্তায় সাধারণ মানুষের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কী উপায় থাকতে পারে! তবে তারা এটা বুঝতে পারে, সরকার সংশ্লিষ্ট লোকজন এবং ব্যবসায়ীদের একটি মহলকে সুবিধা দিতেই জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। সরকারের কাছে ঐ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এবং নিজের ব্যবসা করার মনোবৃত্তিই বড় হয়ে উঠেছে। জনগণ সরকারের কাছে গৌণ হয়ে পড়েছে। তারা গোল্লায় গেলেও, তাতে তার কিছু আসে যায় না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও জনগণ কোনো জায়গা নেই। তারাও বক্তব্য সর্বস্ব হয়ে পড়েছে। কারণ বিদ্যুত ও জিনিপত্রের দাম বৃদ্ধি এবং এর প্রতিক্রিয়ায় পরিবহন ভাড়া, বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বৃদ্ধি পেলেও, সরকারের মতোই তাদেরও তেমন অসুবিধা হবে না। যত সমস্যা কেবল জনগণের। তারা যেন ভারবাহী দাস। যত ভার তাদের উপরই দিতে হবে। এমনকি ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়ার ভারও এই জনগণকেই নিতে হবে। জনগণের সুবিধা-অসুবিধা দেখার দায়িত্ব যেন তাদের নয়। এ পরিস্থিতিতে জনগণ কেবল হাহাকার করে জিজ্ঞেস করতে পারে, আমরা কোথায় যাব? কার কাছে যাব? সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো কি জনগণের সুখ-দুঃখ বোঝে না? যদি নাই বোঝে, তবে তারা কার জন্য সরকার পরিচালনা ও রাজনীতি করছে?

  • কার্টসি — দিনকাল/  ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ 

না–খাইতেও দেবেন না?

অনুপম দেবাশীষ রায়

একটা যুবক প্রেসক্লাবের সামনে একা বসে অনশন করছেন। দ্রব্যমূল্যের দামের চাবুক তিনি সহ্য করতে পারেননি বা চাননি। কিন্তু নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের কষ্টেই নিজেকে কষ্ট দেওয়ার এই অনশন।  বাজারে লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ বাণিজ্যমন্ত্রীর হাতে কেন অর্থনীতির একটা লাগাম থাকবে, সেটা তিনি জানতে চান, তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চান। স্বাভাবিক দেশে এমন প্রশ্ন তোলা খুবই স্বাভাবিক। ক্ষুধাপেটে ক্ষুধার বিরুদ্ধে আরমান তবু কেন একা? ঠিক এটাই কি আমাদের অন্যতম জাতীয় সমস্যা না?

এই দেশে কত মানুষই তো না খেয়ে থাকে। খিদেপেটে রিকশা চালায়, মাটি কাটে। না খাওয়া, আধা পেটা খাওয়া তাদের জীবনের ঘেয়ো বাস্তব। তাতে কারও কখনো ভ্রু কুচকায় না। তাদের খিদে কখনো সংবাদ হয় না। তাদের পেটের মোচড়ে কারও বুকে মোচড় দেয় না। কারণ, মানুষ বলেই হয়তো অথবা নাগরিক বলেই হয়তো আমাদের সয়ে যায় অনেক বেদনা। অনেক কাঠামোগত খিদেই আমাদের কাছে মরাবাস্তব।
আরমান

এই খিদের পতাকা যেহেতু নেই, যেহেতু এদের যূথবদ্ধ করে ‘হাংরি হাংরি’ ধ্বনিতে পিলার জড়িয়ে নাড়ানোর কেউ নেই, আর যেহেতু এদের নিজেদের নড়াচড়ার অগ্ন্যুৎপাত আমরা সহজেই বর্বরতা, অন্ধতা বলে খারিজ করে দিতে শিখি, সেহেতু এই খিদের কোনো ভাষা নেই। এই আহাজারির ক্ষোভমাখা দাবি কেবল কর্কশ চিৎকার বলে ধুলায় গড়ায়।

খিদের কথা শুনতে পেতে তাই পেট পর্যন্ত শমন আসতে হয়। বাজারের দাম চড়চড়াতে হয়। ভাষাভাষীরা তখন কলকলিয়ে ওঠে। হুট করে তারা নিজেদের নাগরিকতার ধ্বজ বের করে বলে, বাজারে বাজার লাগামে আনো। বাজারের নাটাই সুতা কাটার কথা আসে। বাজারের নাটাই ছিনানোর কথা আসে। তখন অতিনাগরিকদের দিকে তোপ পড়ে।

সংবাদ হয় তখন৷ যখন সংবাদ যার লেখা, আর যার জন্য লেখা, তার হালতে দোলাচল দোলা দেয়। তখন প্রশ্ন ওঠে, এই খিদে তো অন্যায়। কারা করে এই খিদের চাষাবাদ? কারা তাতে সার দেয়, বীজ দেয়? প্রশ্ন করা হয়।

খিদেই যেন অপরাধী। সরকারের সঙ্গী ছিল এমন দলের এক নেত্রী প্রশ্ন তোলেন। খিদে যখন হুমকি হয়ে ওঠে, তখন প্রথম প্রচেষ্টা হয় ক্ষুধার্ত মানুষের জোটকে টুকরা করার। দামের আঘাত কার গায়ে লাগে আর কার গায়ে লাগে না, এমন প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন করেন ডবল দামে বার্গার খেতে পারলে, পেঁয়াজ খেতে পারব না কেন? মহাত্মনের জানা নেই, পেঁয়াজসেবী জনতার বড় অংশটাই কদাচিৎ বার্গার খায়।

কিন্তু কোন খাদ্য কার চাহিদা? কার খাদ্য বদলের স্বাধীনতা আছে, কার নেই, এই প্রশ্ন উহ্য থেকে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে আলাপে আমরা শুনি, কেন আমাদের পেঁয়াজ এতটা জরুরি। মাছ, মাংস ভোগে বিশ্ব সূচকে বহু ধাপ পিছিয়ে থাকা বাংগাল কেন বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেঁয়াজ খায়? ঊননাগরিকদের পাতে ঝোলের ঘনত্ব দেখলে উত্তর পাওয়া যায়। জোলো তরকারিতে ঝাঁজ আনতে গেলে পেঁয়াজ হয়ে পড়ে মৌলিক চাহিদা।

এই ঝাঁজের চুরিতে যখন বাঙালি ঝাঁজিয়ে উঠে ফুঁসতে থাকে, বিশেষত যখন নাগরিকেরও নাভিশ্বাস ওঠে, তখন অতিনাগরিক তার উর্দি খুলে কাতারে দাঁড়ায়। ঐক্যবদ্ধ হও, তারা বলে। রুখে দাঁড়াও, তারা বলে। কাকে রোখা হবে আর কে সেই রোখার দ্বারবান, সেই প্রশ্ন লুকিয়ে দায় ঠেলে দেওয়া হয় নাগরিকদের হাতে। তাদের বঞ্চনাকে ফুঁসলিয়ে ফানুস বানানো হয়। না খেয়ে ব্যবসায়ীদের শিক্ষা দিন, বলা হয়। প্রয়োজনে তাঁদের গণপিটুনি দিন। তৈরি করা হয় আইনি বেআইন।

সবাই কি এই উপহাসটি ধরতে পারে? এই ঝামটাটি, এই বসন্ত গুমের কি কোনো সংবাদ হয়? হয় কোনো খতিয়ান? হয় না। কেউ হাততালি দেয়, কেউবা হাসে। কেউ ভাবে, আসলেই তো, পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার রেসিপি তো লিফলেট হয়ে ঝরছে অলিম্পিয়া থেকে। নাহয় মান্য করি।

এদিকে আরমানেরা জেদ করে, খাইতে দেবে না তারা দামের চাপড়ে, যাক, নাহলে নাইবা খেলাম। খাবার না খেয়ে আমি এই ঘেয়ো ক্ষমতাকে খাব। মন্ত্রী সরাও, নয়তো আর আমি খাব না কিছুই।

সেই ঝাঁজালো দাবি নিয়ে অনশনে বসে আরমান। ক্ষমতাকে দায়ী করে না—খাবার অক্ষমতাটা দেখায়। হাংরি সমাজটাকে হঠাৎ সে ভাষা দিয়ে ফেলে।

তখনই চেতে যায় মসনদ। না না, এ তো করা যাবে না। তোমার দুর্ভাগ্যে তুমি কাঁদো, বুক চাপড়াও...মুঠো তুলবে কেন, অর্বাচীন? ভাই হারানোর শোকে তুমি ওপরওয়ালার কাছে বিচার চাইতে পারো, ওপরতলার বিচার চাইবে কেন বেয়াদব? হ্যাঁ, তোমার শোকে তো শোকার্ত আমিও, কিন্তু শোকে আহাজারি করে ক্ষমতাকে ডিস্টার্ব দাও কেন? বরং নীরবে কাঁদো, এমন উপায়ে কাঁদো যেন অশ্রুও তার কড়া নোনা স্বাদ টের না পায়।

তাই তাকে পুলিশ খেদায়। না খাবি না খা না বাপ, আমাদের খেতে চাস কেন? তাই তোর না খাওয়ার ক্ষমতাকে আমি আজ খাব। না খাইতে দোষ নেই, তবে সেটা বোবা হওয়া চাই। সেই না খাওয়া যখন ভাষা পেয়ে যায়, দাবিগুলো খিদেতে ফোটায়, তখন তাকে তো ঠিক বোবা–খোঁড়া করে দিতে হয়।

তবু কি থামানো যায় তাকে? আরমান ওঠে না। হুমকি–ধমকি, চাপ আরমানকে ওঠাতে পারে না। সে ঠিক কত দিন বসে থাকবে? ঠিক কত দিন মশার কামড় খাবে মধ্যরাতে? সে ঠিক কতটা ক্ষুধার্ত হলে যন্ত্রণাটা অশরীরী হবে? কতটা কাতর হলে কাতর হবে ক্ষমতা? তার খিদের কী ভাষা দেব আমরা? তার কথা শোনার মতো কান কি আমাদের আছে?

আরমান তো ঠিক সেটাই করেছে, যেটা তাকে করতে বলা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে পেঁয়াজ না খেতে, খাচ্ছে না তো সে। তাকে বলা হয়েছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসাধুদের রুখে দাঁড়াতে, সে দাঁড়িয়েছে, বাকিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিচ্ছে। কিন্তু ঠিক যে আলুভাতে প্রতিকার তাকে গছানো হয়েছিল, সেটাকে শাসকের নিজের ভাষাতেই সে ঝাঁজালো পেঁয়াজ করে তুলেছে।

এবার তাকে ক্ষমতা জোর করে খাওয়াতে আসে নাকি সেটাই দেখার বিষয়। ঠিক কেমন করে তার ভাষা কেড়ে নেওয়া হয়, সেটাই দেখার বিষয়। পেঁয়াজের মতো তীব্র আরমানের এই প্রতিবাদ কি আমাদের চোখে জল আনে কি না, আর তার জোয়ারে কি ক্ষমতার চোখে জল আসে কি না—সেটা দেখার কথা।

আমার শিক্ষক একসময় বলতেন যে ঊননাগরিকদের কোনো ভাষা নেই, তারা কথা বলতে পারে না। দেখা যাক, এই আরমান তাদের ভাষা দিতে পারে কি না। দেখা যাক, খেতে না পাওয়ার অবস্থা তৈরি করা দায়ী ব্যক্তিরা তাকে না খেতে দেয় কি না।

  • অনুপম দেবাশীষ রায়: বিকল্প গণমাধ্যম মুক্তিফোরামের একজন সম্পাদক।
  • কার্টসি — প্রথম আলো/০৭ ডিসেম্বর ২০১৯

Wednesday, December 4, 2019

খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা বনাম মেগা প্রকল্প

সৈয়দ আবুল মকসুদ

বাংলাদেশ শুধু একটি জনবহুল দেশ নয়, অতিঘটনাবহুল দেশ। সমাজ বিশৃঙ্খল বলে এখানে ঘটে যত সব অস্বাভাবিক ঘটনা। একটি ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করার আগেই ঘটে আরেকটি ঘটনা, তাতে আগেরটি চাপা পড়ে যায়।

সমাজে নানা রকম সমস্যা থাকবেই। সেগুলো সমাধানেরও উপায় থাকবে। তবে মানুষের যত রকম সমস্যা রয়েছে, তার মধ্যে খাদ্যদ্রব্যের অপ্রতুলতার সমস্যা প্রধানতম। অন্য যেকোনো কিছুর অভাব কিছু সময় পর্যন্ত সহ্য করা যায়, কিন্তু খাদ্য ও পানির অভাব অসহনীয়। গত দেড় শ বছরে খাদ্যসংকটের কারণে বাংলাদেশ এবং উপমহাদেশের যত সরকার বিপর্যস্ত হয়ে বিদায় নিয়েছে, অন্য কোনো কারণে তা হয়নি এবং বাস্তবতা হলো পরিস্থিতি সংকটাপন্ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো সরকারেরই টনক নড়ে না। অনেক ক্ষেত্রে টনক যখন নড়ে, তখন আর কিছুই করার থাকে না। সেটা দেখা গেছে চল্লিশের দশকে দুর্ভিক্ষের সময়, পঞ্চাশের দশকে যুক্তফ্রন্টের সরকারের দুর্ভিক্ষাবস্থার মধ্যে এবং ১৯৭৪-এ।

সম্প্রতি পেঁয়াজ নিয়ে যা ঘটেছে, তা কোনো সামান্য ব্যাপার নয়। তবে সেটি এমন এক খাদ্যবস্তু, যা না খেলে মানুষ মরে না। এক ভোক্তা টেলিভিশনে বলেছেন, তাঁর বাড়িতে ১৮ দিন যাবৎ পেঁয়াজ ছাড়াই রান্নাবান্না চলছে। কিন্তু চাল, ডাল, আটা, লবণ ছাড়া ১৮ ঘণ্টার বেশি চলা কঠিন হতো।

মজুতদারি ও মুনাফাখুরির একটা মাত্রা আছে। প্রশাসনের প্রশ্রয় ছাড়া সেই মাত্রা অতিক্রম করার ক্ষমতা তাঁদের নেই। বাংলাদেশের পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা যেমন দুঃসাহসী, মজুতদারেরা তাঁদের চেয়ে কম দুঃসাহসী নন। পেঁয়াজ নিয়ে তাঁরা যে ড্রেসরিহার্সাল দিলেন এবং তাতে তাঁদের যে বিপুল সাফল্য, তাতে ভবিষ্যতে বড় রকমের বিয়োগান্ত নাটক মঞ্চায়নে তাঁদের জন্য কোনো সমস্যাই হবে না। প্রশাসন ও সরকারের দৌড় কতটা, তা তাঁরা বুঝে গেছেন।

পেঁয়াজের দাম যা বাড়ার, তা তো বেড়েছেই, মানুষ তা মেনে নিয়েছে তাদের নিয়তি বলে, কিন্তু যা মেনে নিতে পারেনি তা হলো দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সুবচন। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে অনেকেরই সংকোচ নেই। বড় বড় কথা বলতেও লজ্জা হয় না। সর্বোচ্চ দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্তা বললেন, দু-তিন বছর পর বাংলাদেশ ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে। সব ব্যাপারে জনগণের সঙ্গে পরিহাস চলে না।

তাঁর এই কথা বিশ্বাস করত মানুষ, যদি তাঁর আগের আর একটি কথা সত্য প্রমাণিত হতো। ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা কেজি হবে, এমন কথা তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন। আমার এই লেখা যেদিন প্রকাশিত হবে, সেদিন তাঁর ১০ দিনের সময়সীমা শেষ হবে। অবশ্য বাঙালি ঠাট্টা-মশকরা পছন্দ করে। কোনো কারণে কারও বক্তব্য ভুল বা অসত্য হলে ক্ষমা চাওয়াটাই রীতি। ক্ষমা চাইতে ভালো না লাগলে দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।

আত্মপ্রতারণায় আমরা অদ্বিতীয়। এ সম্পর্কে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে কৃষি পরিসংখ্যান নিয়ে। কর্মকর্তাদের সব মুখস্থ। কয়েক বছর আগে আমি এক উপজেলার একজন কৃষি কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তাঁর এলাকায় মাষকলাই চাষ হয় কী পরিমাণ জমিতে। তিনি একটা অঙ্ক বললেন এবং সেই সঙ্গে যোগ করলেন সারা দেশে কত একর বা হেক্টর জমিতে মাষকলাই চাষ হয়। আমি তাঁকে বললাম, আমার সারা দেশের খবরের দরকার নেই। আপনার এলাকার কোন মাঠে চাষ হয়, বলুন, আমি সেখানে দেখতে যাব। তিনি আমতা-আমতা করে মাথা চুকলাতে লাগলেন। যে দেশে আদমশুমারি হয় ঘরে বসে, সেখানে কৃষি পরিসংখ্যান টেবিলে বসেই হবে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা কেন্দ্র ও ইনস্টিটিউটের অভাব নেই। সেসব প্রতিষ্ঠানে লোকবলেরও ঘাটতি নেই। তবে কোনো গবেষক ও বিজ্ঞানী যদি একবার কর্মকর্তায় পরিণত হন, তখন তাঁর মনোযোগ থাকে ইনক্রিমেন্ট ও পদোন্নতির প্রতি। তাঁর কাছে গবেষণার আনন্দের চেয়ে চাকরির বেতন-ভাতার আনন্দ বড় করে দেখা দেয়।

প্রায় সব ধরনের মসলা আমাদের আমদানি করতে হয়। কোনো কোনো মসলা আমদানি করতেই হবে, যেমন এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ প্রভৃতি। অধিকাংশ মানুষের ওসবের প্রয়োজন পড়ে না। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে মসলা গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে। সেখানে গবেষকেরা আছেন। আমাদের বহু কৃষিবিজ্ঞানীর অবদানও অসামান্য। উচ্চফলনশীল অনেক কিছু তাঁরা উদ্ভাবন করেছেন। সেগুলো ফলিয়ে সাধারণ কৃষকেরা কৃষিতে উন্নতি ঘটিয়েছেন। মাছ, ফলমূল ও শাকসবজি উৎপাদনে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিপুল।

কৃষিবিজ্ঞানীদের গবেষণা এক জিনিস, কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকদের গবেষণা ও পর্যালোচনা অন্য বিষয়। দেশে কোন কৃষিপণ্যের প্রয়োজন কতটা, তা কৃষিবিজ্ঞানী নন, সরকারি কর্মকর্তাদের অঙ্ক কষে দেখার কথা। জনসংখ্যা বাড়লে চাহিদা বাড়বে, সুতরাং সেই অনুপাতে উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেইভাবে কৃষককে প্রণোদনা দিতে হবে। নাকে তেল দিয়ে ঘুমালে সমস্যা দেখা দেবেই।

সরকার অঙ্ক কষে দেখেছে যে বছরে ২৪ লাখ টন পেঁয়াজ লোকে খায় এবং এটাও দেখেছে যে উৎপাদন ১৭-১৮ টন। আমরা আমাদের পারিবারিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, খেত থেকে তোলার পর পেঁয়াজের যে ওজন থাকে, তিন-চার মাসের মধ্যে তার ওজন কমে যায় ১০-১২ ভাগ। সে জন্য বাংলাদেশকে ১০ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

পেঁয়াজ-রসুনের ঘাটতি কমানোর পথ দুটি—উৎপাদন বাড়ানো এবং আমদানি করা। প্রথমটি ছিল সহজতর, অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর, কিন্তু সেটি না করে দ্বিতীয়টির ওপর নির্ভর করা হচ্ছে; কারণ, সেটা আমদানিকারকদের পছন্দ এবং তাঁদের উপকারে আসে। অন্যদিকে কৃষকেরাই-বা আরও বেশি উৎপাদন করতে চান না কেন? তাঁদের তা না চাওয়ার সংগত কারণ রয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রতি কেজিতে খরচ হয় ২৩-২৪ টাকা। সেই পেঁয়াজ উৎপাদন মৌসুমে তাঁরা বিক্রি করেন ১৫-১৬ টাকায়। কৃষকের ছেলেমেয়েদের এক-আধ দিন ইলিশ বা রুই মাছ খাওয়ার ইচ্ছা হয়। এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ বা রুই মাছ কিনতে বিক্রি করতে হয় ৪০ কেজি পেঁয়াজ।

বাংলাদেশের জিডিপি তরতর করে বাড়ছে। জিডিপি বাড়ার জন্য আমরা ভারী শিল্পকারখানার ওপর জোর দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি বড়লোক হওয়ার জন্য শিল্পকারখানা দরকার। এ যুগে শিল্পেও উন্নতি করতে হবে। তবে শিল্পে যদি অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ভালো করতে না পারি, আমরা মরব না, কিন্তু কৃষিতে ভালো না করলে না খেয়ে মরার আশঙ্কা।

কৃষির প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি আরও ইতিবাচক হওয়া দরকার। কৃষকেরা স্যুট-কোট পরেন না বলে সরকারি কার্যালয়ে তাঁদের কদর নেই। তাঁরা সড়ক পরিবহন ও নৌপথশ্রমিকদের মতো কথায় কথায় ধর্মঘট করতে পারেন না। তাঁরা সড়কে ধান ফেলে দিয়ে যে প্রতিবাদ করেন, তা সরকারের গায়ে লাগে না।

ক্রেতা পর্যায়ে কৃষিপণ্যের দাম বাড়ার কারণ বর্তমান ব্যবস্থা। একটি পণ্য তিন-চার জায়গায় হাতবদল হয়ে ভোক্তার হাতে আসে। ফড়িয়া আছে, মজুতদার আছে, চাঁদাবাজি তো সীমাহীন। জাতীয় সংসদের মাননীয়দের অধিকাংশই হয় ব্যবসায়ী, নয় তো ব্যবসায়ীবান্ধব।

দানাদার শস্য এবং শাকসবজি প্রভৃতির ফলন বাড়ছে। কিন্তু জমি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক অতিমাত্রায় ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ালে তা হবে আত্মঘাতী। সে জন্য খুব সতর্কতার সঙ্গে সমস্যা শনাক্ত করে কৃষিনীতি প্রণয়ন করতে হবে। খাদ্যশস্যের বাফার স্টক বা পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করতে হবে, যেমন অনেক উন্নত দেশ করে।

মজুতদার, মুনাফাখোরদের প্রতি সদয় থেকে খাদ্যশস্যের ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য রোধ করা সম্ভব নয়। কৃষক পান না ধানের দাম, অন্যদিকে চালের দাম বেশি—রহস্য কোথায়? চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন অটো চালকলের মালিকেরা। কিন্তু তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করার বা নজরদারিতে রাখার ক্ষমতা রাষ্ট্রযন্ত্রের নেই। সিন্ডিকেট নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠন করে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। খাদ্যে স্বয়ম্ভরতাকে অগ্রাধিকার না দিলে শুধু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল জাতি গঠন সম্ভব হবে না।

  • সৈয়দ আবুল মকসুদ: লেখক ও গবেষক
  • কার্টসি — প্রথম আলো/ ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯

Tuesday, December 3, 2019

‘নয়-ছয়’ করে দেড় বছর, এখন আবার কমিটি

ফখরুল ইসলাম ও সানাউল্লাহ সাকিব

ব্যাংকঋণের সুদহার হবে এক অঙ্কের—দেড় বছর ধরে এ নিয়ে নানা আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ফল আসেনি; বরং ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কমে গেছে, আসছে না আমানতও।

এদিকে সুদহার না কমলেও বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এর মধ্যে গত ৯ মাসেই বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ জন্য এখন সব দোষ দেওয়া হচ্ছে ঋণের উচ্চ সুদহারকে।

দেড় বছর ধরে কাজ না হওয়ার পর গত সোমবার এ জন্য নতুন করে আবার একটি কমিটি করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। তবে এই কমিটি নিয়েও খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, সুদহারই একমাত্র সমস্যা নয়, ব্যাংকের তহবিল খরচ কমাতে হবে, শাস্তি দিতে হবে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের। সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

অর্থমন্ত্রী গত রোববার সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সে সময় তিনি বলেছেন, খেলাপি ঋণ বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে ঋণের উচ্চ সুদ। এই সুদ এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে হবে, যা কার্যকর করা হবে আগামী জানুয়ারি থেকে।

শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এ বিষয়ে গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক অঙ্কের সুদের হারের কথা এক-দেড় বছর ধরে শুনছি। কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না। একেকবার একেক কথা বলা হচ্ছে। গত রোববার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।’

এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ‘মূল্য সংযোজন কর ও ব্যাংকের সুদ দিতে দিতেই ব্যবসায়ীদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। সুতরাং সরকার ও ব্যাংক মিলে সিদ্ধান্ত নিলেই তো তা কার্যকর হবে না। ঘটনার পেছনের কারণ খুঁজতে হবে। আমার প্রশ্ন, সিদ্ধান্ত কার্যকরে সব পক্ষের সঙ্গে কি আলোচনা হয়েছে? বিশেষজ্ঞ মতামত কি নেওয়া হয়েছে?’

অর্থমন্ত্রী খেলাপি ঋণ বেশি হওয়ার জন্য ব্যাংকের উচ্চ সুদকে দায়ী করলেও ব্যাংকাররা বলছেন উল্টো কথা।

এদিকে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার কথা বলে ব্যাংকমালিকেরা গত দেড় বছরে সরকারের কাছ থেকে ঠিকই নানা ধরনের সুবিধা নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত নগদ জমা বা সিআরআর সংরক্ষণের হার ১ শতাংশ কমানো, রেপোর সুদহার ও করপোরেট কর কমানো ইত্যাদি। মাঝে আবার ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে এক পরিবার থেকে দুজনের পরিবর্তে চারজন পরিচালক এবং টানা ৩ বছরের পরিবর্তে টানা ৯ বছর বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদে থাকার বিধানও করে দেয় সরকার।

এত সুবিধা পেয়েও কেন সুদহার কমছে না—জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঋণের চাহিদা অনুযায়ী আমানত মিলছে না। সরকার ৫০ শতাংশ আমানত দিতে চাইলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ঋণ-আমানত অনুপাত সমন্বয়ের চাপ আছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলো চাইলেও সুদহার কমাতে পারছে না।’ কম সুদে আমানত পেলে কম সুদে ঋণ দেওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।

উদ্যোক্তারা কী বলছেন — 


ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের কারণে সুদের হার বেশি, না উচ্চ সুদের হারের কারণে খেলাপি ঋণ বেশি—এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বইকেনা’ গল্পের একটি উদ্ধৃতির কথা মনে করিয়ে দেন। উদ্ধৃতিটি হচ্ছে, ‘বই সস্তা নয় বলে লোকে বই কেনে না, আর লোকে বই কেনে না বলেই বই সস্তা করা যায় না।’

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির জন্য উচ্চ সুদের হার দায়ী বলে মনে করেন কিছু শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী। আবার অনেকেই কেবল শুধু উচ্চ সুদকে দায়ী করতে রাজি নন। তাঁদের মতে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা যেমন এর পেছনে রয়েছেন, ব্যাংকের মালিকপক্ষের অতি মুনাফা করার প্রবণতাও এর জন্য কম দায়ী নয়। আরও রয়েছে ব্যাংকের দুর্বল ব্যবস্থাপনা।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘দেখা গেছে, একটি প্রকল্পে ৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হলো। প্রকল্পটি চলতে গেলে আরও ২ কোটি টাকা চলতি মূলধন দরকার। কিন্তু দিচ্ছে ৫০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি পরে ব্যর্থ হয় এবং খেলাপি হয়।’

কয়েকটি ব্যাংক এবং কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকগুলো অনেক সময় যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেয় না। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকের লোকেরাই শিখিয়ে দেয়, বেশি ঋণ পেতে গেলে কীভাবে আবেদন করতে হবে। আবার ব্যাংক জেনেশুনেই খারাপ গ্রাহককে ঋণ দেয়। ব্যাংক যখন ঋণের টাকা আদায় করতে পারে না, তখনই বাধে বিপত্তি। হিসাবের খাতায় খেলাপির আকার বাড়তে থাকে।

শিল্প গ্রুপ আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন মোনেম বলেন, দেখা গেল ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প ভালোভাবে যাচাই না করেই ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে দিল। স্বাভাবিক কারণেই এই টাকা নয়ছয় হয়। সুদের হার কমাতে হবে, পাশাপাশি এ বিষয়গুলোও ঠেকাতে হবে। আর চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ হচ্ছে মরাকে আরও মেরে ফেলা। এটাও বাদ দিতে হবে। তবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের শাস্তি পাওয়া উচিত।

ব্যাংকারদের যুক্তি —


বর্তমানে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা যে খেলাপি ঋণ আছে, তা থেকে ব্যাংকগুলোর কোনো আয় হচ্ছে না। যদিও বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হচ্ছে, নগদ ও সংবিধিবদ্ধ জমাও করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। ফলে খেলাপি ঋণের চাপ গিয়ে পড়ছে নিয়মিত ঋণের ওপর। এতেই বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংকের তহবিল খরচ, যার প্রভাবে সুদহার বাড়ছে।

ব্যাংকের সুদ হিসাব করার পদ্ধতি প্রসঙ্গে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি এম শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তহবিল ও পরিচালনা খরচ মিলেই ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের টাকা খেলাপি হয়ে পড়লে বড় সমস্যায় পড়তে হয়। ওই টাকার জন্য অন্য আয় থেকে সঞ্চিতি রাখতে হয়। আমানতকারীদেরও টাকা দিতে হয়। এসব কারণে সুদহার বেড়ে যায়। খেলাপি ঋণ কমানো গেলে সুদহার কমে আসবে।’

সব মিলিয়ে ব্যাংকাররা বলছেন, খেলাপি ঋণ নতুন রোগ নয়। আর সুদহার বাড়ে-কমে। ঋণ দেওয়ার মতো তহবিল যখন সহজলভ্য হয়, তখন ঠিকই সুদহার কমে যায়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে সুদহার এক অঙ্কে নেমে এসেছিল।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে তারল্যসংকট আছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কম। ঠিক এই সময়ে সুদের হার কমাতে বলা হচ্ছে। সময়টা ঠিক উপযুক্ত মনে হচ্ছে না। ফলে সুদের হার না কমে উল্টো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

  • কার্টসি — প্রথম আলো/ ডিসেম্বর ৩, ২০১৯

বাড়ছে শিক্ষিত বেকার

চাহিদামাফিক জনশক্তি গড়ে তুলুন


সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষণায় দেশে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তরুণদের এক-তৃতীয়াংশ পুরোপুরি বেকার বলে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। এই গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে সম্পূর্ণ বেকার ৩৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। বাকিদের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ সার্বক্ষণিক চাকরিতে, ১৮ দশমিক ১ শতাংশ পার্টটাইম বা খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদের নেতৃত্বে একটি দল ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের শিক্ষিত তরুণদের নিয়ে ফেসবুক ও ই-মেইলের মাধ্যমে এই অনলাইন জরিপ পরিচালনা করেছে। জরিপ অনুযায়ী, শিক্ষা শেষে এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত বেকার ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ, দুই বছরের চেয়ে বেশি সময় ধরে বেকার ১৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত বেকার ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

এর আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপে দেশে মোট শ্রমশক্তির ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেকার বলে জানানো হয়েছিল। বিবিএসের জরিপের তুলনায় বিআইডিএসের অনলাইন জরিপে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। বাংলাদেশে বেকারত্বের ভয়াবহতা জানতে কোনো জরিপের প্রয়োজন হয় না। বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস কিংবা অন্য কোনো খাতে একটি শূন্য পদে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা দেখলেই সেটি অনুমান করা যায়।

বেসরকারি বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা এই জরিপ করলে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা হয়তো অসত্য বলে উড়িয়ে দিতেন। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের এই জরিপের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। কেবল বিআইডিএস বা বিবিএসের জরিপ নয়, দেশি-বিদেশি প্রায় সব জরিপ ও পরিসংখ্যানেই বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ বেকারত্বের তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে। কয়েক বছর আগে ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিটের জরিপে বলা হয়েছিল, বিশ্বে বাংলাদেশেই শিক্ষিত বেকারের হার সর্বোচ্চ।

দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে, এটি আনন্দের খবর। কিন্তু সেই আনন্দ মুহূর্তে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়, যখন আমরা তাদের বড় একটি অংশকে কাজে লাগাতে পারি না। শিক্ষার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা। এই শিক্ষার পেছনে শুধু ব্যক্তি বা পরিবার নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রেরও বিপুল বিনিয়োগ থাকে। শিক্ষিত তরুণদের এক-তৃতীয়াংশ যদি বেকার থাকে, তাহলে আমরা ওই শিক্ষাকে কীভাবে মানসম্মত বা যুগোপযোগী বলব?

জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনডিপি) এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানব উন্নয়ন সূচক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্ধিত জনসংখ্যাকে সম্পদ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল। সংস্থাটির মতে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১২ কোটি ৯৮ লাখে পৌঁছাবে, যা হবে জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশ। কিন্তু জনমিতির এই সুফল কাজে লাগাতে হলে প্রত্যেক নাগরিককে যেমন দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, তেমনি তাদের উপযুক্ত কাজের সংস্থান করতে হবে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ভিত ও মান শক্ত না করেই একের পর এক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে চলেছি, যা সনদ বিতরণ করলেও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বেকার থাকা সত্ত্বেও অনেক খাতে উচ্চ বেতন দিয়ে বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাদের যুক্তি, দেশে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। এর অর্থ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সময়ের চাহিদা মেটাতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন নতুন বিভাগ ও অনুষদ খুলছে, কিন্তু সেসব বিভাগ ও অনুষদের কোনো উপযোগিতা আছে কি না, সেসব ভেবে দেখার কেউ নেই। উপযুক্ত জনশক্তি তৈরির পাশাপাশি তাঁদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হলে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। 

  • কার্টসি — প্রথম আলো/ ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯

Monday, December 2, 2019

Road Safety Uprising - Students’ most demands remain unmet

Shahin Akhter

Most of the major demands of the students placed during the countrywide student protests that erupted after the death of two Shaheed Ramiz Uddin Cantonment College students in an accident because of reckless driving at Kurmitola in Dhaka in 2018 remained unmet.

Following the student protest, the government enacted the Road Transport Act 2018 in September 2018 year and finally enforced it on November 17 this year.

Countrywide work abstention by transport workers forced the government to backtrack from the enforcement of the law on some major areas such as driving licence, overloading, fitness and modification of vehicles.

As the demands on road safety remains elusive, the fatalities on roads are on rise and the government is forming committees one after another to control accidents and bring order on roads.

Road safety experts alleged the situation on roads was deteriorating day by day. Had the demands of the students were met then, safety on roads would be established by now, they said.

Thousands of students took to the streets for more than a week after their two fellows were killed on July 29, 2018 when a reckless driver drove a Jabal-e-Noor company bus off the road and ploughed through a crowd while competing with another bus of the same company.

Amid an utter anarchy in the road sector for long, the students demanded highest punishment for the bus drivers responsible for the killing of the two, not allowing buses without fitness, driving by any unlicensed driver at any place of the country, and ban on carrying passengers by public transports in excess of their capacity.

They also demanded establishing footbridges and taking safety measures for safe movement of students, establishing speed-breakers in accident-prone areas including in front of educational institutions, taking all responsibilities by the government of the families of the deceased and injured, compelling the buses to carry students and ensuring half fare for them.

A Dhaka court on Sunday sentenced two drivers and an assistant of Jabal-e-Noor Paribahan to life-term imprisonment in the case filed over the incident.

On November 21, after a meeting with transport sector leaders following a countrywide strike, home minister Asaduzzaman Khan said the drivers could drive any vehicle with the existing licence and modified vehicles could run till June 30, 2020 and within this time the drivers would receive appropriate licences and the owners would receive update documents from the Bangladesh Road Transport Authority.

Till date the authorities are in a relaxed mood to enforce the law.

According to a data compiled by Bangladesh Police till September this year 3,060 deaths, and 3,292 injuries, and 3,009 traffic accidents were recorded and the death figure is the highest after 2008.

In 2018, 2,635 people were killed and 1,920 were injured in 2,609 traffic accidents.

The percentage of deaths in accident increased this year by around 16 per cent comparing with last year.

Road accidents took 2,513 lives in 2017, the figure was 2,463 in 2016, 2,376 in 2015, 2,067 in 2014, 1,957 in 2013, 2,538 in 2012, 2,546 in 2011, 2,646 in 2010, 2,958 in 2009, and 3,765 in 2008, the data shows.

The High Court on July 24 this year asked the owners of 4.79 lakh unfit vehicles running across the country to get fitness certificates for the vehicles from the Bangladesh Road Transports Authority within two months.

On October 23 the authority submitted a report before the High Court which said only 89,269 vehicles’ owners have collected fitness certificates in August and September following the court directive.

As per the authority, the number of registered motor vehicles in the country was around 41 lakh till July this year against which around 23 lakh driving licences were issued. It proved a huge crisis of drivers especially for driving public transports.

Recently the authorities have taken an initiative to build an underpass in front of Shaheed Ramijuddin College for safe movement of pedestrians.

Professor Mizanur Rahman, director of Accident Research Institute under the Bangladesh University of Engineering and Technology, told New Age that following the student protest, the government passed the new road law which was yet to be enforced fully.

He said the authorities should control the sick competition among the owners of the buses and reduce gap between supply and demand sides for public transports.

‘If all their demands would be met then safety on roads would be assured,’ he added.

Professor Shamsul Hoque, former director of Accident Research Institute, said the situation on roads was deteriorating day by day.

He said the students pointed at the faults in the overall system and strongly hit the base of the society’s morality.

However, the government should go for step by step solutions based on facts and findings to ensure safety on roads, he added. 

Meanwhile prime minister Sheikh Hasina on June 25, 2018 gave directives to ensure drivers’ rest every five hours, to employ alternate drivers for long-distance vehicles, training and resting facilities for drivers and their assistants, use of seatbelts while travelling, and abiding by the traffic signals.

Most of these demands and directives still remain on paper due to crisis of drivers, training facilities and infrastructures like zebra crossings.

  • Courtesy — NewAge/Dec 2, 2019 

খেলাপি ঋণ বাড়ছে না কমছে?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

আমার মনে আছে, নতুন অর্থমন্ত্রী মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার পরপরই বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না। কিছুদিন পর তিনি আবারও বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ার কোনো সুযোগই নেই। আরও কিছুদিন পর সাংবাদিকরা যখন জানালেন, খেলাপি ঋণ বেড়েছে; অর্থমন্ত্রী তখন বললেন, তিনি বিশ্বাস করেন না। খেলাপি ঋণের পরিসংখ্যান পরিবেশন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মন্ত্রী যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও বিশ্বাস না করেন, তাহলে তার বিশ্বাসের ভিত্তি কোথায়? এখন পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা যাক।

অর্থমন্ত্রীর আত্মবিশ্বাসের মূলে ছিল তার কিছু ধারণা এবং তদনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রথমেই তিনি খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে এক যুগ আগের সংজ্ঞায় নিয়ে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ তিন মাস অচল থাকার পরিবর্তে এখন ছয় মাস অচল থাকলে তাহলেই হিসাবটি খেলাপি হবে। এটি আন্তর্জাতিক খেলাপি ঋণ নীতিমালার স্খলন। তবে অর্থমন্ত্রী মনে করেছিলেন, শিথিলকরণের কারণে অনেক খেলাপিই খেলাপমুক্ত হবেন। অতএব, খেলাপি ঋণ কমে যাবে। অর্থমন্ত্রীর দ্বিতীয় ব্যবস্থাটি ছিল, দুই শতাংশ টাকা জমা দিয়ে ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সব খেলাপি ঋণকে ১০ বছরের জন্য মাত্র ৯ শতাংশ সুদে খেলাপমুক্ত করা যাবে। ভেবেছিলেন, সব খেলাপি যদি খেলাপমুক্ত হয়ে যান, তাহলে তো দেশে আর খেলাপি ঋণ থাকবে না। কিন্তু তার এই ধারণা যে কতটা সরলীকৃত ছিল, তা এখন বোঝা যাচ্ছে।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ


বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর প্রতিটি কোয়ার্টারে খেলাপি ঋণ বেড়েছে এবং বৃদ্ধির পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তবে এই হিসাবে একমত হয়নি আইএমএফ। বিশ্ব সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে, তাও খেলাপি। আবার অনেক ঋণ খেলাপির যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও লুকিয়ে রাখা হয়েছে। সব মিলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ হবে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী অবলোপনের নীতিমালাতেও শিথিলতা এনেছেন। আগে পাঁচ বছর থাকার পর অবলোপন করা যেত। সেটিকে সম্প্রতি তিন বছরে নামিয়ে আনা হয়েছে। এখন ব্যাংক মালিকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রস্তাব রেখেছেন, সময় ব্যয় না করে সঙ্গে সঙ্গেই অবলোপন করার বিধান করা হোক। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে চাপে আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

দেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা গোড়া থেকেই বলে এসেছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে শিথিলতা প্রদর্শন করলে খেলাপিরা উৎসাহিত হবেন। এ প্রক্রিয়ায় আদায় ব্যাহত হবে। যে কাজে উৎসাহ দেওয়া হয়, তা বেড়ে যায়। আর যে কাজে শাস্তি প্রদান করা হয়, সে কাজ কমে যায়। এ কারণে ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া হয় এবং মন্দ কাজে শাস্তি দেওয়া হয়। পৃথিবীর সর্বত্রই ব্যাংকের খেলাপিদের শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। কারণ, ঋণের টাকা ব্যাংক মালিকদের নয়। বরং এ সম্পূর্ণ টাকাই জনগণের কাছ থেকে প্রাপ্ত আমানত; যা আইন অনুযায়ী 'চাহিবা মাত্র ফেরত প্রদান' করতে হবে। কাজেই জনগণের টাকা ট্রাস্টি হিসেবে ব্যাংকারদের অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে; যাতে বিনিয়োগকৃত টাকা মুনাফাসহ সময়মতো ফেরত আসে। এখানে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশে সম্প্রতি পূর্বে বর্ণিত বিভিন্ন উপায়ে খেলাপিদের উৎসাহ প্রদান করার ফলে তারা শাস্তি থেকে শুধু মুক্তিই পাচ্ছেন না, বরং পুরস্কৃত হচ্ছেন। এতে দ্বিগুণ উৎসাহে তারা ঋণ ফেরত না দেওয়ার ব্যাপারে মনোযোগী হয়েছেন।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে কমবেশি ১০ লাখ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে; এর মধ্যে এক লাখ কোটি টাকাই নিয়মিত ঋণ। এক লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। এটি অবশ্য বর্তমান অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার আগের চিত্র। এই চিত্র এখন পাল্টে গেছে। ৯ লাখ কোটি টাকা নিয়মিত ঋণের যারা গ্রাহক ছিলেন, তাদের প্রদেয় সুদের হার এখনও ১০ থেকে ১৪ শতাংশের মধ্যে। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে। অথচ খেলাপি ঋণগ্রহীতারা সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধের। ফলে নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারীরা ৯ শতাংশ সুদের আওতায় আসার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ করে দিয়েছেন এবং খেলাপি হয়েছেন। ফলে প্রতি প্রান্তিকে নতুন খেলাপিদের কারণে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎসাহ দিলে যে মন্দ কাজের বৃদ্ধি ঘটে, এটি তার একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ।

আমরা এখানে চীনের ঘটনা উল্লেখ করতে পারি। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করার পর অনভ্যাসজনিত কারণে চীনের খেলাপি ঋণ অনেক বৃদ্ধি পায়। তখন সরকার খেলাপিদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনের বাইরেও কঠোর শাস্তির বিধান প্রচলন করে। যার মধ্যে ছিল খেলাপি হওয়া মাত্রই কোনো বিলম্ব না করে তার পাসপোর্ট বাতিল। বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা। বিমানের টিকিট ক্রয়ে বাধানিষেধ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কমিটিতে সদস্যপদ লাভে অযোগ্যতা এবং ভিআইপি বা সিআইপি হিসেবে গণ্য হওয়ার অযোগ্যতা। এছাড়া দীর্ঘ সময়ের খেলাপি হলে সরাসরি জেলে নিয়ে যাওয়া হতো। এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ফলাফল দ্রুতই পাওয়া গেল। কমবেশি তিন বছরের মধ্যে খেলাপির হার সর্বনিল্ফেম্ন নেমে গেল।

অর্থমন্ত্রী ও তার সমর্থক মহল থেকে এখন বলতে চেষ্টা করা হচ্ছে যে, দুই শতাংশ জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য খেলাপিমুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে দেশ আর খেলাপি থাকবে না। কিন্তু খেলাপির চেয়ে অখেলাপিরা এখন ৯ গুণ বেশি। এখন ধীরে ধীরে অখেলাপিদের সংখ্যা যদি আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকত, তাহলে মন্ত্রীর ভবিষ্যদ্বাণী যাই হোক না কেন, ব্যাংকগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। সেইসঙ্গে জনগণের সঞ্চিত অর্থ আটকা পড়লে বড় রকমের ভীতির সঞ্চার হতে পারে। এমনকি সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরেও প্রচণ্ড আঘাত আসতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এই সাক্ষ্যই প্রদান করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের খেলাপি ঋণও কমবেশি ১০ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এত বড় দেশ হওয়া সত্ত্বেও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরে প্রচণ্ড আঘাত এসেছে। সম্প্রতি ভারতের জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। আমরা অবাক হই, যখন মন্ত্রীর মুখে শুনি, ভারতের খেলাপি ঋণও আমাদের মতোই বেশি। কিন্তু তিনি বলেন না যে, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভারতের জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধির থেকে প্রতি কোয়ার্টারেই কমে আসছে। অর্থমন্ত্রী কি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর বা শ্রীলংকার খেলাপি ঋণ হারের উদাহরণ দিতে পারেন না? এসব দেশে খেলাপির হার ১ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে। চোখ থাকতে অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হবে কি?

কেন এমনটি ঘটছে? দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে গত বছর পর্যন্ত এ দেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ, ড. এআর মল্লিক, সাইফুর রহমান, এসএএমএস কিবরিয়া, এএমএ মুহিত। তারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন; কিন্তু কেউই ব্যবসায়ী ছিলেন না। এমনকি তারা কেউ সেই অর্থে ধনাঢ্য ব্যক্তিও ছিলেন না। ব্যবসায়ীরা অর্থমন্ত্রী হলে স্বার্থের সংঘাত দেখা দেয়। তারা চাইবেন নিজের এবং ব্যবসায়ী স্বজনদের আয়-উন্নতির দিকে খেয়াল রাখতে। এতে জনগণ বঞ্চিত হতে পারে। এ কারণেই বর্তমান সমস্যার সৃষ্টি।

আমরা মনে করি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকা উচিত পূর্বসূরিদের মতো অব্যবসায়ীর হাতে। অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ থাকতে হয় প্রকৃত রাজনীতিকদের হাতে। রাজনীতিকরা ব্যবসা করতে পারবেন না- তা নয়। কিন্তু বড় ব্যবসায়ীর দৃষ্টি থাকে আরও বড় হওয়ার দিকে এবং নিজ গোষ্ঠীকেও ওপরে টেনে তুলতে। এই স্বার্থের সংঘাত পরিহারযোগ্য।

ভারতের মতো ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আগেই বিষয়টির প্রতি সত্যিকার রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি বিশ্নেষণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি এ ব্যাপারে পেশাগত সহায়তা দেওয়ার জন্য দেশের অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ শুনে দেখতে পারেন। উল্লেখ্য, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং নিজে একজন স্বীকৃত অর্থনীতিবিদ হওয়া সত্ত্বেও এসব ব্যাপারে পাঁচজন দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদকে নিয়ে একটি পরামর্শক কমিটি করেছিলেন। আমাদের দেশেও এ উদাহরণ অনুসরণ করা যেতে পারে।

  • খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, ব্যাংকার, সাবেক ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক।
  • কার্টসি — সমকাল/ ডিসেম্বর ২, ২০১৯ 

সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস

জিয়াউল হক মিজান

পেঁয়াজের বাজারে নজিরবিহীন অস্থিরতা দীর্ঘ তিন মাস ধরে। আর পুরো জাতি যখন পেঁয়াজ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তখন নীরবে বেড়ে গেছে আরো অন্তত এক ডজন পণ্যের দাম। পেঁয়াজের পাশাপাশি বেড়েছে চাল, তেল, ডিম, আদা, রসুন, ময়দা, মরিচ, হলুদ, মসলা, চিনিসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম।

প্রতিটি ক্ষেত্রেই কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কারসাজি করে এ কাজটি করছে। এর মাধ্যমে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী লাভবান হলেও সামগ্রিকভাবে দেশের সব জনগোষ্ঠীই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সীমাহীন বেকারত্ব, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে খরা, শেয়ারবাজারের দুরবস্থা, পরিবহন, বাসা ভাড়া ও শিক্ষা-চিকিৎসার ব্যয়বৃদ্ধিসহ সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কবলে পড়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ভালো নেই দেশের ব্যবসায়ীরাও।

অভিযোগ উঠেছে, নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা তুলছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। দেশজুড়ে সব মানুষের নজর পেঁয়াজের দিকে। এ সুযোগে যৌক্তিক কারণ ছাড়াই অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এসব পণ্য কিনতে নিয়মিত বাড়তি ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা।

একই সাথে পেঁয়াজও কিনছেন ১৭০ থেকে ২২০ টাকায়। বর্তমানে বাজারে এসব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এর পরও বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়াচ্ছে অসাধু চক্র। সপ্তাহের ব্যবধানে মসলা পণ্য এলাচের দাম কেজিতে ৬০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়, যা টিসিবির তথ্যানুযায়ী আগের সপ্তাহে ছিল দুই হাজার ৪০০ টাকা।

খুচরা বাজারে এখন মিনিকেট চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, নাজিরশাইল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, আটাশ ৪০ টাকা, ঊনত্রিশ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা, স্বর্ণা চাল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও মিনিকেট চাল ৪১ থেকে ৪২ টাকা, নাজির ৫০ থেকে ৫২ টাকা, আটাশ ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা, ঊনত্রিশ ৩২ থেকে ৩৩ টাকা, স্বর্ণা চাল ২৬ থেকে ২৭ টাকা ছিল।

নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলা পণ্য শুকনা মরিচের দাম কেজিতে গড়ে ৫৫ টাকা এবং হলুদের দাম গড়ে ৩৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি শুকনা মরিচ মানভেদে ২২০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দু’সপ্তাহ আগে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা ছিল। এখন হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকায়, যা আগে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা ছিল।

গতকাল খুচরায় প্রতি কেজি চীনা রসুন ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা ও দেশি রসুন ১৭০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। দেশি পুরনো আদা ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও নতুন আদা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং আমদানি করা আদায় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা গুনতে হচ্ছে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য ঢালাওভাবে সব ব্যবসায়ীদের অভিযুক্ত করার প্রতিবাদ জানিয়ে খিলগাঁও রেলগেইট সংলগ্ন ফার্নিচার ব্যবসায়ী নূরুল আলম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ব্যবসায়ী মানেই মুনাফাখোর নয়। দেশের সব ব্যবসায়ী কারসাজির সাথে জড়িতও নয়। সরকারের আনুকূল্য নিয়ে অপকর্ম করছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। তার দায় নিতে হচ্ছে পুরো ব্যবসায়ী সমাজকে। তা ছাড়া পেঁয়াজের ব্যবসা করে যিনি বাড়তি টাকা আয় করছেন তাকে তো নিজের প্রয়োজনে চাল, ডাল, লবণ, তেল সবই কিনতে হচ্ছে। এমন অরাজকতা কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংসার চালাতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে জানিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোলায়মান খান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, যে কোম্পানিতে চাকরি করি তার অবস্থাই ভালো না। গত তিন বছর ইনক্রিমেন্ট নেই। একই বেতনে চাকরি করছি। অথচ এসময়ে সংসার খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ পার্সেন্ট। লেখাপড়ার খরচ, বাসাভাড়া, চিকিৎসা ব্যয়, গ্যাস-বিদুতের বিল সবই বেড়েছে। তার ওপর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম তো আকাশছোঁয়া।

এভাবে চলতে থাকলে সব ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, গ্রামের অবস্থাও তো ভালো না। সেখানে আরো অরাজকতা চলছে। খারাপ মানুষ এবং অসাধূ উপার্জনকারী ছাড়া সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকাই এখন দায় হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যবসায়িক মন্দার অন্যতম প্রধান কারণ জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া। একজন সবজি বিক্রেতা সবজি বিক্রি করে ভালো আয়-রোজগার করলেও অপরাপর সব খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি আয়েও তার পক্ষে সরসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। দোকান ভাড়া বৃদ্ধি, বাসা ভাড়া বৃদ্ধি, কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি বেচাকেনা কমে যাওয়ায় তারা বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি করেও আগের মতো লাভ করতে পারছেন না বলে জানান।

এদের অনেকের অবার আয় বেড়েছে ঠিকই; কিন্তু ব্যয় তুলনামূলকভাবে অধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়তি আয়েও সংসার চলছে না বলে জানান বেশ কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। টিকে থাকার জন্য বাধ্য হয়ে অনেকে বড় ব্যবসা ছেড়ে ছোট ব্যবসায় যাচ্ছেন। অনেকে আবার পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দিয়ে মেসে উঠছেন।

ব্যবসায়ীক মন্দার চিত্র চোখে পড়ে মার্কেটগুলোয় গেলেও। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিনিয়তই ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠত মার্কেটের দোকানিরাও। হাতবদলের পর কিছুদিন লোকসান গুনে নতুন দোকানিও গুটিয়ে নিচ্ছেন নিজেকে। ফলে মার্কেট-মহল্লায় নতুন নতুন ব্যবসায়ীর সংখ্যাই বেশি চোখে পড়ছে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন কম পুঁজির ব্যবসায়ীরা। তাদেরই একজন জীবনযুদ্ধে হীমসীম খাওয়া রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের ব্যবসায়ী সোলায়মান। ক্রোকারিজ মালামালের ব্যবসায় করেন তিনি।

কথা প্রসঙ্গে জানালেন, কয়েক মাস থেকে ব্যবসায়ের অবস্থা খুবই খারাপ। বেচা-বিক্রি নেই বললেই চলে। স্কুলে সন্তানদের বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা শেষে শুরু হবে নতুন সেশনে ভর্তির চিন্তা। ভর্তি ফি, ড্রেস বানানো, বইপত্র কেনাসহ সম্ভাব্য খরচ কোত্থেকে জোগাড় করবেন সে বিষয়ে চরম দুশ্চিন্তার কথা জানালেন তিনি।

ব্যবসায় মন্দার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, গত রোজার ঈদের আগে থেকে যা বিক্রি হয় তাতে দোকান খরচই আসে না। বাসা ভাড়া, বাজার খরচ, চিকিৎসা ব্যয় এবং সন্তানদের পড়াশোর খরচ চলছে দোকানের পুঁজি ভেঙে।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, দু-একটি ছাড়া অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যর দাম বৃদ্ধির যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এ ক্ষেত্রে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা দেখে অতিমুনাফার সুযোগ নিচ্ছে অন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের অসহযোগিতার কারণে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।

এটি দেখে অন্য ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। এক কথায় নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। এটি কঠোরভাবে সরকারের দমন করা উচিত। এখন কঠোর পদক্ষেপ না নেয়া হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

ক্যাব সভাপতি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের চড়া দামের কারণে ভোক্তারা চাপে আছেন। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট অনেক বেড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার যৌথভাবে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

  • কার্টসি - নয়া দিগন্ত/ ০২ ডিসেম্বর ২০১৯

Sunday, December 1, 2019

People mustn’t pay for wrong power policy of government


THE recommendations for an increase in bulk power prices by 20 per cent and in transmission charges by 7 per cent that the technical evaluation committee of the Bangladesh Energy Regulatory Commission put forth at a public hearing on Thursday come concerning as any such increases are highly likely to leave impact on retail power prices soon. Retail power prices were last increased on November 23, 2017 by an average of 5.3 per cent, or Tk 0.35, a unit and bulk power prices on September 1, 2015 by 2.93 per cent, or Tk 0.23, a unit. The committee in the case at hand has proposed that an increase by 19.5 per cent in bulk power prices should be justified while the Power Development Board has sought a 23.27 per cent increase; and the committee has proposed that the transmission charges for the Power Grid Company of Bangladesh should be increased by 6.92 per cent against 50.27 per cent that the company has sought. With the hearing still going on, other arguments should be forthcoming, but the argument put forth till now that the increase seeks to make up for the projected deficit or to stem a decline in profits of the distributors hardly appears tenable.

Deficit in the power sector is said to have doubled to Tk 80 billion in 2018, in a year, from Tk 36 billion in 2017, which had come down from Tk 40 billion a year before. The Power Development Board in its presentation at the hearing has said that the deficit in the power sector will have increased to more than Tk 85 billion in 2020. While the deficit going down and almost going through the roof and the reasons can well be debated, experts believe that the doubling of the deficit is the outcome of the wrong power policy of the government and people should not pay for the wrongly-premised move. The government is often blamed for a forced continuation of the expensive crisis-time measure of rental and quick rental power, without putting in the required efforts to afford people cheap power from state-owned plants, to advantage certain quarters. The expensive rental power plants, introduced towards the end of the first decade of the century, were meant to be replaced with less expensive power plants by 2014. It did not happen. The government has, rather, increased its power production capacity much beyond the demand, which has forced many plants to sit idle and the government keeps making capacity payment to the plants for the power not yet produced. The government, as the power board says, has paid Tk 590 billion in capacity payment in the past 12 years, which is said to have added to the deficit.

It is, therefore, illogical and unethical for the government to pass the cost of its wrong power policy onto consumers. Increase in power prices at a time when goods prices are much too high could also cause social unrest of a sort. Any decision on power price increase, at the bulk or the retail level, must, therefore, warrant that the government should first set its power policy aright.

  • Courtesy — NewAge/ Nov 30, 2019

ধানের দাম না বাড়লে চালের দাম বাড়বে কেন?

মো. আবদুল লতিফ মন্ডল

গত ২০ নভেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে চালকল মালিক ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। দেশে প্রায় ২ কোটি ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৭১০ টন চালের বার্ষিক চাহিদার বিপরীতে বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৩ কোটি ৪৪ লাখ টন। এ মুহূর্তে সরকারের বিভিন্ন গুদামে মজুদ রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৭০৭ টন, যার মধ্যে চালের পরিমাণ ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩০৩ টন। তাই পণ্যটির দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তিনি আরো বলেছেন, ধানের দাম বাড়েনি। তাই চালের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাবে না। ধানের দাম বাড়লে কৃষক কিছুটা লাভবান হতেন, কিন্তু তা হয়নি। কৃষক লাভ পাবেন না, কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীরা সব লাভ নিয়ে যাবে, সেটা চলতে দেয়া যাবে না। 

উল্লেখ্য, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের শুরুতে হঠাৎ করে মোটা ও চিকন চালের দাম বেড়ে যায়। কেজিতে সব ধরনের মোটা চালের দাম ৬ টাকা পর্যন্ত এবং চিকন চালের দাম ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। আর বস্তাপ্রতি বিভিন্ন জাতের চালের দাম ৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। দেশে চালের ‘পর্যাপ্ত মজুদ’ থাকা অবস্থায় আমনের ভরা মৌসুমে চালের দামে ঊর্ধ্বগতির জন্য কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), ধান-চালের ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিসহ পাইকারি চালের আড়তদাররা চালকল মালিকদের দায়ী করেন।
মো. আবদুল লতিফ মন্ডল


গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সরকার চলতি আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে ধান-চাল সংগ্রহের নীতিমালা ঘোষণা করে। এতে ১০ লাখ টন ধান ও চাল সংগ্রহ করার ঘোষণা দেয়া হয়; যার মধ্যে ছয় লাখ টন ধান, সাড়ে তিন লাখ টন সিদ্ধ ও ৫০ হাজার টন আতপ চাল। প্রতি কেজি ধানের দাম নির্ধারিত হয় ২৬ টাকা, আর সিদ্ধ ও আতপ চালের কেজিপ্রতি দাম ধরা হয় যথাক্রমে ৩৬ ও ৩৫ টাকা। ২০ নভেম্বর থেকে ধান এবং ১ ডিসেম্বর থেকে চাল কেনা শুরু হয়ে এ কার্যক্রম ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০ নভেম্বর ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এবার আমন ধান ও চাল সংগ্রহে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে ব্যতিক্রমধর্মী বললে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না। এর কারণ এক. বেশ কয়েক বছর পর এবার আমন মৌসুমে সরকার ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিল। কৃষকদের কাছ থেকে সংগৃহীত ধান সরকার চুক্তিবদ্ধ মিলারদের দেবে নির্ধারিত দামে খাদ্য অধিদপ্তরকে চাল সরবরাহের জন্য। দুই. সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত মোট ১০ লাখ টন চাল তৈরির জন্য যে ধান ক্রয় করা প্রয়োজন হবে, তার বেশির ভাগ কেনা হবে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে। আর সরকার নির্ধারিত দামে খাদ্য অধিদপ্তরকে চাল সরবরাহ করতে যেসব চালকল মালিক দপ্তরটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন, তারা বাজার থেকে প্রয়োজনীয় অবশিষ্টাংশ ধান কিনবেন।

অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে সরকারের ধান ও চাল সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্য হলো ধান কাটা এবং ঘরে তোলার মৌসুমে বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখা, যাতে ধানচাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং অধিক পরিমাণে ধান উৎপাদনে উৎসাহিত হন। অন্যান্য উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে সরকারি গুদামে চালের নিরাপত্তা মজুদ গড়ে তোলা, বাজারে চালের দাম বাড়লে সরকারি মজুদ থেকে খোলাবাজারে ও ন্যায্যমূল্যের দোকানে চাল বিক্রির মাধ্যমে দাম স্থিতিশীল রাখা এবং সরকারের লক্ষ্যমুখী খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির বাস্তবায়ন করা।

২০ নভেম্বর চালকল মালিকদের সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠিত বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা পুরোপুরি গণমাধ্যমে আসেনি। বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের যা বলেছেন, শুধু তা-ই গণমাধ্যমে এসেছে। চালকল মালিকরা বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রীর কাছে কী প্রস্তাব রেখেছেন, তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। তবে বৈঠকে চালকল মালিকদের পক্ষ থেকে চালের সংগ্রহ মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ চালকল মালিকদের সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার দু-একদিন আগে দেশের পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চালের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে চালকল মালিকদের পক্ষ থেকে ধানের দাম বৃদ্ধি ও চাহিদা অনুযায়ী হাটবাজারে ধানের সরবরাহ না থাকাকে দায়ী করা হয়েছে। তবে চালের দাম বাড়ার পেছনে তাদের এ  যুক্তি যে সঠিক নয়, তা খাদ্যমন্ত্রীর ‘ধানের দাম বাড়েনি’ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

চলতি শতকের শুরুতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালনকালে আমি লক্ষ করেছি চালকল মালিকরা কীভাবে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। চালকল মালিকরা শুধু সিন্ডিকেশনের মাধ্যমে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মুনাফা লুটেন না, তারা অভ্যন্তরীণ ধান-চাল (আমন ও বোরো) সংগ্রহে সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। তারা অভ্যন্তরীণ ধান-চাল সংগ্রহে চালের উচ্চমূল্য দাবি করেন এবং ধান কেনায় সরকারকে নিরুৎসাহিত করেন অথবা ধানের দাম কম রাখার জন্য সরকারকে চাপ দেন। কারণ সরকার ধান না কিনলে ধানের দাম কম থাকে এবং তারা কম দামে ধান কিনে বিপুল মজুদ গড়তে পারেন। ধান কাটার মৌসুম শেষে যখন দেশের মোট চাষীর প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীর কাছে ধান মজুদ থাকে না, তখন তারা মজুদ ধান চালে রূপান্তর করে সিন্ডিকেশনের মাধ্যমে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চমূল্যে পণ্যটি বিক্রি করে প্রচুর লাভ করেন। চলমান আমন মৌসুমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ৬ লাখ টন ধান কেনার সরকারি সিদ্ধান্তটি চালকল মালিকরা যে ভালোভাবে নেননি, তা বোধ হয় অনেকটা জোর দিয়েই বলা যায়। 

কয়েকদিন আগে একটি দৈনিকে (যুগান্তর) প্রকাশিত আমার এক নিবন্ধে বলেছিলাম, ‘গত বছরের মতো এ বছরও চালকল মালিকদের কাছ থেকে সংগৃহীতব্য আমন চালের কেজিপ্রতি দাম ৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পার্থক্য হলো, এবার চালকল মালিকদের কাছ থেকে সংগৃহীতব্য অধিকাংশ চালের জন্য সরকার ধান কিনে তাদের সরবরাহ করবে। গত কয়েক বছর সরকার আমন ধান না কেনায় এবং ধানের দাম নির্ধারণ করে না দেয়ায় চালকল মালিকরা কম দামে ধান কেনার যে সুযোগ পেয়েছিলেন, এবার তা থেকে তারা কিছুটা হলেও বঞ্চিত হবেন। তাই এবার কেজিপ্রতি ৩৬ টাকা দরে সরকারকে চাল সরবরাহে তারা কতটা সহযোগিতা করবেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’ সরকারকে আমন চাল সরবরাহের সময়সূচি এখনো শুরু না হলেও চালের দাম বাড়িয়ে তারা এরই মধ্যে তাদের মনোভাব কিছুটা প্রকাশ করেছেন। ধান কাটা-মাড়ার মৌসুম শেষে যখন চুক্তিবদ্ধ চাল সরবরাহের সময় ঘনিয়ে আসবে, তখন তারা আগের মতো চালের দাম বাড়ানোর দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। চালের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যাবে না বলে খাদ্যমন্ত্রী যে যুক্তিসংগত অবস্থান নিয়েছেন, তিনি তাতে কতদিন অনড় থাকতে পারেন তা এখন দেখার বিষয়।   

তাছাড়া চলমান অভ্যন্তরীণ ধান-চাল সংগ্রহ নীতিমালায় সরকার চাল সংগ্রহের জন্য চালকল মালিকদের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। চলমান নীতিমালায় অভ্যন্তরীণভাবে চাল সংগ্রহের জন্য চালকল মালিকরা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উৎস নেই। ২০০৬ সালের জাতীয় খাদ্যনীতিতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে খাদ্যশস্য কেনার নির্দেশ থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। চালকল মালিকরা এ সুযোগের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করে আসছেন। এ সুযোগের অংশ হিসেবে চুক্তিবদ্ধ মিল মালিকরা এর আগে একাধিকবার ধানের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে চাল সংগ্রহ মৌসুমে সরকারকে চাল সরবরাহে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং সরকার সংগৃহীতব্য চালের দাম বাড়ানোর পরই তারা চাল সরবরাহ করেছেন। এ প্রসঙ্গে ২০১০ সালের একটি ঘটনা মনে পড়ে। ২০১০ সালে বোরো মৌসুমে চালের সংগ্রহমূল্য নির্ধারিত হয় প্রতি কেজি ২৫ টাকা। তদানুযায়ী চাল সরবরাহের জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চালকল মালিকদের চুক্তি হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের অল্পদিনের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকরা বাজারে ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে নির্ধারিত দামে চাল সরবরাহে অস্বীকৃতি জানান এবং চালের মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। সরকার তাদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করে কেজিতে চালের দাম ৩ টাকা বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ কেজিপ্রতি চালের সংগ্রহ মূল্য পুনর্নির্ধারিত হয় ২৮ টাকা। বিষয়টি নিয়ে তখন বাজারে নানা রকম গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়। আমন চাল সংগ্রহের চলতি মৌসুমেও তারা অনুরূপ একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে পারেন।

যেহেতু ধানের দাম বাড়েনি, সেহেতু সরকারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকদের মাধ্যমে সংগৃহীতব্য চালের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই। মনে রাখতে হবে সরকারের সংগৃহীতব্য চালের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খোলাবাজারে বাড়বে চালের দাম। তাছাড়া ভোক্তার দিকটাও দেখতে হবে। চাল আমাদের প্রধান খাদ্য। দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় শক্তির ৭০ শতাংশ জোগান আসে ভাত থেকে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ শহরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ, গ্রামাঞ্চলে ভূমিহীন শ্রমিক, মজুর, ধান কাটার মৌসুম শেষে চাল-ক্রেতায় পরিণত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীসহ ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ চাল কিনে খায়। চালের মূল্যবৃদ্ধিতে চালকল মালিক, আড়তদার, চাল ব্যবসায়ী এবং বড় কৃষক ছাড়া অন্য সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হন।

  • আবদুল লতিফ মন্ডল: সাবেক খাদ্য সচিব
  • কার্টসি — বণিক বার্তা/  ডিসেম্বর ০১, ২০১৯