কামরুল হাসান দর্পণ
আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, ‘আগের আমল ভাল ছিল, এ আমল ভাল না। আগের আমলে জিনিসপত্রের দাম কম ছিল।’ এর অর্থ হচ্ছে, আগে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিল। কম টাকায় তারা বেশি পণ্য কিনতে পারত। এখন বেশি টাকায় কম পণ্য পাওয়া যায়। মানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদায় ঘাটতি থেকে যায়। ফলে অনেক মানুষ মনে করে, যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ। প্রবাদটি জনসাধারণ খুব মানে। এর ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, ভবিষ্যতে যে দিন রয়েছে, বর্তমানের চেয়ে সে দিনগুলো খারাপ হবে। আসলে কি তাই? আমরা যদি আশাবাদী মানুষ হই, তবে এ কথা পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ ভবিষ্যত ভাল হবে এমন আশা নিয়েই আমরা অপেক্ষায় থাকি। আজ দিনটি খারাপ গেলে আগামীকাল ভাল যাবে এটা মনে করাই আমাদের স্বাভাবিক প্রবণতা। মানুষের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, আজ খারাপ হলে আগামীতে ভাল হওয়ার আশা তার মধ্যে প্রবল হয়ে ওঠে। আবার আমরা যদি আগের আমল ভাল ছিল এ কথা বিবেচনা করি, তাহলে বলা যায়, বর্তমান দিনই ভাল। কারণ এই দিনই কালক্রমে অতীত হবে। তবে কিছু মানুষ আছে, যাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সবসময়ই ভাল। এরা জন্মগতভাবে বা জন্মের পর থেকেই সামর্থ্যবান হয়ে থাকে। যেমন যে জন্মগতভাবে কোটিপতি এবং যে জন্মের পর যেভাবেই হোক কোটিপতি হন, তার আর্থিক অবস্থা সবসময়ই ভাল থাকে। খারাপ হলে খুব একটা হয় না। কোটিপতির ভিত ঠিকই থেকে যায়। সাগর থেকে দুয়েক ঘটি পানি তুলে নিলে যেমন সাগরের ক্ষতি হয় না, তেমন। জিনিসপত্রের দাম যদি আকাশচুম্বীও হয়ে যায়, তাতেও কোটিপতির কিছু আসে যায় না। তার কেনার সামর্থ্য অটুট থাকে। আর যে মানুষটি দিন আনে দিন খায় বা সীমিত আয়ের, তার সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। সীমিত সামর্থ্যরে মধ্য থেকে তিনি যেভাবে জীবনযাপন করেন, হঠাৎ করে যদি তাতে টান ধরে, তবে তার দিশাহারা হওয়া ছাড়া গতি থাকে না। পাঁচ টাকার জিনিস এক লাফে দশ টাকা হয়ে গেলে সীমিত আয়ের মানুষের বেহুশ ও বেদিশা হওয়ারই কথা। এখন বছরের পর বছর ধরে সাধারণ মানুষকে হরহামেশা বেদিশা হতে হচ্ছে। বিশেষ করে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে তাদের জীবনযাপনকে বারবার পরিবর্তন করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। চাপের মধ্যে পড়তে হয়েছে এবং এই চাপ নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে। সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম যেভাবে দফায় দফায় বৃদ্ধি করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ে, তাতে তাদের টুঁ শব্দ করার কোনো উপায় থাকে না। নীরবে মেনে নিতে হয়। তাদের পক্ষ হয়ে যে কেউ কথা বলবে, তেমন উপযুক্ত কাউকেই তারা পায় না। ফলে সরকার তার খেয়াল খুশি মতো যেভাবে তাদের রাখতে চায়, সেভাবেই তাদের থাকতে হয়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ‘আগের আমলই ভাল ছিল’ বলে হতাশায় নিমজ্জিত হতে হয়।
দুই.
মগের মুল্লুক বলে একটা কথা আছে, যেখানে মগরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছামতো অপকর্ম করে বেড়াত। লুটপাট, অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করত। নিয়ম-কানুনের কোনো বালাই ছিল না। এই আধুনিক ও সভ্যতার যুগে এসেও বাংলাদেশের মানুষকে যেন অনেকটা মগের মুল্লুকেই বসবাস করতে হচ্ছে। সুশাসনের অভাবের মধ্যে থেকে তাদের ত্রাহি অবস্থা। বিপদের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। সরকারের দ্বারাই তাদের একের পর এক বিপদে পড়তে হচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর যেন কেউ নেই। অথচ সংসদে বিরোধী দল আছে, রাজপথে বড় বড় রাজনৈতিক বিরোধী দল আছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে কেবল সরকারকেই দেখা যাচ্ছে। অথচ রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স থাকার কথা। সরকার জনবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে বিরোধী দল জনগণের হয়ে কথা বলবে, প্রতিবাদ করবেÑএটাই স্বাভাবিক। দুঃখের বিষয়, এখন তার ছিঁটেফোটাও দেখা যায় না। বিরোধী দল বলে যে কিছু আছে, তা জনগণের কাছে মনে হচ্ছে না। সরকারও মনে করে বিরোধী দল বলে কিছু নেই। ফলে তার ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে পারছে। জনগণকেও বাধ্য হয়ে তার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হচ্ছে। এই যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকশ ছোঁয়া হয়ে রয়েছে, তাতে কে কি করতে পারছে? সরকারের বিরোধিতা কি কেউ করতে পারছে? পারছে না। পারছে না বলেই চাল, ডাল, পেঁয়াজ, তেল, শাক-সবজিসহ সব ধরনের পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। দিশাহারা মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক বা তার কম কিনে কোনো রকমে ব্যয় সংকুলান করে চলেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই বিইআরসি বিদ্যুতের দাম আবার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, বাড়তি জিনিসপত্রের দাম অনিবার্যভাবেই আরও বৃদ্ধি পাবে। গণশুনানিতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কেউ কেউ বিরোধিতা করলেও বিইআরসি যে তার সিদ্ধান্ত স্থগিত করবে তা ভাবার কোনো কারণ নেই। অতীতেও বিরোধিতা হয়েছে, তাতে কাজ হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি দাম বাড়িয়েই ছেড়েছে। জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্যের মধ্যে বিদ্যুতের এই দাম বৃদ্ধি সাধারণ ও সীমিত আয়ের মানুষের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সরকার বা তার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ভাবছে না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সরকারের টাকার প্রয়োজন। আর এ টাকা জনগণের কাছ থেকে আদায় করতে হবে। তারা কোথা থেকে টাকা দেবে তা দেখার দায়িত্ব তার নয়। সরকারের এমন আচরণ যে জনগণের সরকারের মতো নয়, তা একবাক্যে বলা যায়। জনগণের সরকার জনগণের সুখ-দুঃখ বোঝে, সরকার যদি টানাপড়েনের মধ্যেও থাকে তবুও জনগণের কষ্ট লাঘবে নিরন্তর চেষ্টা করে। যেমনটি করে পরিবারের একজন অভিভাবক। নিজে কষ্ট করে হলেও সন্তানকে সাধ্যের শেষটুকু দিয়ে ভাল রাখতে চেষ্টা করে। অন্যদিকে জনগণের সরকারও তাই করে। দেখা যাচ্ছে, সরকার এ দায়িত্বটুকু যথাযথভাবে পালন করছে না। জনগণের যে কষ্ট হচ্ছে, তা বুঝতে চায় না, বুঝলেও তা উপেক্ষা করে চলেছে। এই যে পুনরায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাবে, তা যে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে ঘি ঢালার মতো হয়ে উঠবে, তখন মানুষ কোথায় যাবে? তাদের হাহাকার কে দেখবে?
তিন.
জনগণের প্রতি বর্তমান সরকারের আচরণ কতটা জনবান্ধব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ সরকারের কাজ হচ্ছে, নিজে কষ্টে থেকে জনগণকে সুখ-শান্তিতে রাখা। জনগণের সেবক হয়ে কাজ করা। দেখা যাচ্ছে, সরকার করছে তার বিপরীত কাজ। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, সরকারের মধ্যে শো অফ বা দেখানোর একটা প্রবণতা রয়েছে। যেমন সরকার প্রায় আট-নয় বছর আগে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিতে বলেছিল, জনগণকে দশ টাকা দরে চাল খাওয়াবে। আট-নয় বছর পর প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজনের মধ্যে দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির একটি লোক দেখানো প্রকল্প নিয়ে তা দেখিয়ে দিয়েছে। এ চাল বিক্রি নিয়েও এন্তার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন দারিদ্র্যর ভান করে সে চাল ভোগ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দশ টাকার চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি কি শুধু প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজনের জন্যই ছিল, নাকি ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলে যাতে এই টাকায় কিনতে পারে, সে প্রতিশ্রুতি ছিল? প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তো চালের দাম সর্বত্র দশ টাকা হওয়ার কথা। আলাদা প্রকল্প করে দশ টাকা বিক্রি করার কথা নয়। এটা কি জনগণের সাথে এক ধরনের চালাকি নয়? চালাকিই বটে! সরকারের কার্যক্রমে এমন আরও অনেক চালাকি আছে। পানির দাম গোপনে বাড়িয়ে দেয়া, গোপনে ভ্যাট-ট্যাক্স কেটে নেয়া থেকে শুরু করে মাথাপিছু আয় কাগজে-কলমে বৃদ্ধি করে দেয়া পর্যন্ত একটা লোক দেখানোর প্রবণতা রয়েছে। কেবল সাধারণ মানুষই বোঝে, সরকার তাদের সাথে কী আচরণ করছে! তাদের জোর করে কুইনাইন খাইয়ে দেয়া হচ্ছে। অভ্যস্ত করে তুলছে। বুক ভরে শ্বাস নেয়ার পরিবর্তে ছোট ছোট শ্বাস নিয়ে হাঁপিয়ে বাঁচার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এক রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণেরও কোনো উপায় তারা দেখছে না। তাদের এ পরিস্থিতি যে তুলে ধরবে তারও কোনো উপায় নেই। তাদের কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। অথচ দেশে এত এত বিরোধী রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত জনগণের দোহাই দিয়ে বড় বড় কথা বলে বেড়াচ্ছে, জনগণের এই দুর্ভোগের সময় তাদের কণ্ঠ উচ্চকিত হচ্ছে না। পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে না। আমরা যদি সবচেয়ে বড় বিরোধী রাজনৈতিক দলটির কথা ধরি, তাহলে দেখব দলটি জনগণের এই দুর্ভোগের সময় পাশে নেই। পণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রেস কনফারেন্সে গণবিরোধী, দাম বৃদ্ধি প্রত্যাহার করতে হবেÑএমন দুয়েকটি গৎবাঁধা বক্তব্য দিয়েই খালাস। অথচ জনগণের এই দুঃসময়ে দলটি মাঠে কার্যকর কর্মসূচি দিতে পারত। দেশ ব্যাপী থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারত। এতে জনগণের ব্যাপক সমর্থন দলটি পেত। জনরাজনীতি করার একটি মোক্ষম ইস্যু তারা ধরতে পারত। জনগণের পাশে দাঁড়ানোর এই সুযোগ দলটি ক্রমাগত হারাচ্ছে। জনদরদী এ কাজটি করতে গিয়ে যদি তারা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তোপের মুখেও পড়ত, তাহলেও জনগণ দেখত দলটি তাদের ন্যায্য দাবী নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এতে দলটির প্রতি মানুষের আকর্ষণ ও সহানুভূতি অনেক বেশি বৃদ্ধি পেত। তারা ভাবত আমাদের পক্ষে আন্দোলন করতে গিয়ে দলটি সরকারের রোষানলে পড়েছে। তাছাড়া পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী এ ধরনের কর্মসূচিতে বাধা দিতেও দ্বিধা করত। কারণ এটি জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি। বাধা দিলে তা সরকারের বিরুদ্ধেই যাবে। জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে আরও রুষ্ট হয়ে উঠবে। দুঃখের বিষয়, দলটি জনগণের এই বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরতে পারছে না। এই ব্যর্থতার জন্য যদি জনগণ সরকারের পাশাপাশি দলটিকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করায়, তবে তা যথার্থ বলেই প্রতীয়মান হবে।
চার.
কোনো সরকার জনবান্ধব কিনা, তা বোঝা যায় জনগণের প্রতি তার আচরণ দেখে। সরকারের প্রতি জনগণের চাওয়া খুবই সীমিত। তারা চায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হাতের নাগালের কাছে থাকুক, স্বচ্ছন্দে মৌলিক চাহিদাটুকু মিটুক। চাপমুক্ত হয়ে জীবনযাপন করুক। দুঃখের বিষয়, এ সময়ে সাধারণ মানুষকে চাপতে চাপতে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, তাদের দম নিতেও কষ্ট হচ্ছে। সরকার কথায় কথায় বলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। এটা বলে না, জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি ও জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কথা যদি তুলনা করা হয়, তবে দেখা যাবে অর্থের পরিমাণ বড় হয়ে দেখা দিলেও তা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা যাচ্ছে না। যদি এমন হতো, মানুষের ইনকাম বেড়েছে এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি, তাহলে বলা যেত মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। বিষয়টি অনেকটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এক বস্তা টাকা নিয়ে গেলেও এক বস্তা জিনিসপত্র কেনা যাচ্ছে না। মানুষ যে বলে আগের আমল ভাল ছিল, তা বলে এ কারণে আগে যে টাকায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তারা কিনতে পারত, এখন তা কিনতে পারছে না। অর্থাৎ তাদের আয় আগের জায়গায়ই রয়ে গেছে। তাদের আগের এক টাকা এ সময়ের পাঁচ টাকা হলেও, এ পাঁচ টাকা দিয়ে আর আগের মতো জিনিসপত্র কিনতে পারছে না। কাজেই মানুষের আয় ও ক্রয় ক্ষমতা বাড়ল কীভাবে? এখন টাকা বেশি দেখা যায়, তবে এ টাকায় মানুষ বরকত পাচ্ছে না। অথচ সরকার টাকাটাই বড় করে দেখছে, এ টাকায় যে মানুষের মৌলিক চাহিদা মিটছে না, তা উপেক্ষা করে যাচ্ছে। তবে সরকার সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা না করলেও একটি শ্রেণীর স্বার্থ স্বার্থটা বড় করে দেখছে। জিনিসপত্রে দাম যে বৃদ্ধি হলো, কারা করল, কেন করল তার কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে পারছে না। একটি কমন কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। সারাবিশ্বেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, ফলে আমাদের এখানেও বাড়ছে। আবার বলা হয়, পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে, দাম বৃদ্ধির কারণ নেই। তাদের এ ধরনের বিপরীতমুখী কথাবার্তায় সাধারণ মানুষের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কী উপায় থাকতে পারে! তবে তারা এটা বুঝতে পারে, সরকার সংশ্লিষ্ট লোকজন এবং ব্যবসায়ীদের একটি মহলকে সুবিধা দিতেই জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। সরকারের কাছে ঐ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এবং নিজের ব্যবসা করার মনোবৃত্তিই বড় হয়ে উঠেছে। জনগণ সরকারের কাছে গৌণ হয়ে পড়েছে। তারা গোল্লায় গেলেও, তাতে তার কিছু আসে যায় না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও জনগণ কোনো জায়গা নেই। তারাও বক্তব্য সর্বস্ব হয়ে পড়েছে। কারণ বিদ্যুত ও জিনিপত্রের দাম বৃদ্ধি এবং এর প্রতিক্রিয়ায় পরিবহন ভাড়া, বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বৃদ্ধি পেলেও, সরকারের মতোই তাদেরও তেমন অসুবিধা হবে না। যত সমস্যা কেবল জনগণের। তারা যেন ভারবাহী দাস। যত ভার তাদের উপরই দিতে হবে। এমনকি ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়ার ভারও এই জনগণকেই নিতে হবে। জনগণের সুবিধা-অসুবিধা দেখার দায়িত্ব যেন তাদের নয়। এ পরিস্থিতিতে জনগণ কেবল হাহাকার করে জিজ্ঞেস করতে পারে, আমরা কোথায় যাব? কার কাছে যাব? সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো কি জনগণের সুখ-দুঃখ বোঝে না? যদি নাই বোঝে, তবে তারা কার জন্য সরকার পরিচালনা ও রাজনীতি করছে?
- কার্টসি — দিনকাল/ ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯
No comments:
Post a Comment