Search

Thursday, December 12, 2019

সরকারি হাসপাতালে ক্রয়ে দুর্নীতি

জড়িত কর্মকর্তাদেরও কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে

সম্পাদকীয়



সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন অফিসের কেনাকাটায় দুর্নীতিতে জড়িত সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগটি সময়োচিত।

জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ অনুসন্ধান শাখার পরিচালকের তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির তদন্ত চলছে। প্রথম ধাপে সরকারি অর্থ তছরুপসহ দুর্নীতির মামলা হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকায় রাখা হচ্ছে।

বস্তুত কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হলে তার দায়দায়িত্ব ওই প্রতিষ্ঠানের ওপরই বর্তায়। তবে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান চলছে বা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, পর্যায়ক্রমে তাদেরও আনা হবে এ তালিকায়। আমরা মনে করি, কেনাকাটায় অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও কালো তালিকাভুক্ত করা উচিত। তাহলেই এ ধরনের পদক্ষেপ দুর্নীতি রোধে সহায়ক হবে।

বস্তুত, সরকারি হাসপাতালের ক্রয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম একটি সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ সরকারি হাসপাতালের অসাধু কর্মকর্তাদের একটি চক্র এ দুর্নীতির মূল হোতা।

তারা কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি করছে। হাসপাতালের জন্য যন্ত্রপাতি না কিনেই ভুয়া বিল-ভাউচারে টাকা তুলে নিচ্ছে। যে দামে যন্ত্রপাতি কিনছে, তার অনেক গুণ বেশি টাকার বিল করছে। আবার প্রয়োজন ছাড়াই মেডিকেল সরঞ্জাম কিনছে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ তৈরির জন্য। সাম্প্রতিক সময়ে সোহরাওয়ার্দী, রংপুর ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্রয়ে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক সেট পর্দার (১৬ পিস) দাম দেখানো হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা!

এভাবে সেখানে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। আর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয়ে সোয়া তিন কোটি টাকাই লোপাট করার অভিযোগ উঠেছে।

এ অবস্থায় সরকারি হাসপাতালে সরঞ্জাম ক্রয়ে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এজন্য প্রয়োজন সব ধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

ক্রয়সংক্রান্ত কমিটিতে কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ইতঃপূর্বে দুদকের এক সুপারিশে বলা হয়েছিল, সরকারি হাসপাতালে ওষুধ ও মেডিকেল যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করার জন্য ক্রয় কমিটিতে বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা যেতে পারে।

এছাড়া হাসপাতাল পর্যায়ে যন্ত্রপাতি রিসিভ কমিটিতে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সংস্থার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে যন্ত্রপাতি গ্রহণের ব্যবস্থা, যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার স্বার্থে দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে যন্ত্রপাতি সরবরাহের বিধান করা ইত্যাদি পদক্ষেপের কথাও বলা হয় দুদকের সুপারিশে। দুদকের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হল, হাসপাতালে বিদ্যমান মেডিকেল ইকুইপমেন্টের হালনাগাদ তথ্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা।

এক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক স্টক রেজিস্টারের সঙ্গে একটি ডিসপ্লে যুক্ত করা যেতে পারে। হাসপাতালে ই-রেজিস্টার চালু করা যেতে পারে। আমরা মনে করি, অভিযুক্তদের কালো তালিকাভুক্তির পাশাপাশি এসব সুপারিশও আমলে নেয়া উচিত। মোদ্দাকথা, সরকারি ক্রয়ের সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, তা করতে হবে। সেই সঙ্গে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠামাত্র এর সুষ্ঠু তদন্ত করে নিতে হবে ব্যবস্থা।

  • কার্টসি - যুগান্তর/  ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

No comments:

Post a Comment