Search

Monday, December 9, 2019

৫ মাসে পোশাক রফতানি কমেছে ৭.৭৪ শতাংশ


তৈরি পোশাক রফতানি উল্টো দিকে যাত্রা শুরু করেছে। টানা চার মাস ধারাবাহিকভাবে কমছে পোশাক রফতানি। নভেম্বরে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ, অক্টোবরে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং আগস্টে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে যায় পোশাক রফতানি। এই খাতটির এমন নেতিবাচক প্রবণতায় হতবাক তৈরি পোশাক এবং এর ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ডে শত শত শিল্পের সাথে যুক্ত লাখ লাখ মানুষ। 

সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রণোদনার অভাব, অবকাঠামোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক-ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রফতানি বাণিজ্যে এমন দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অর্থবছরের প্রথম কয়েক মাস প্রতি বছরই রফতানি প্রবৃদ্ধি ভালো থাকে। গত ১০ বছর ধরে প্রতি অর্থবছরেই প্রথম পাঁচ মাসে গড়ে ৬ থেকে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে। এবারই প্রথম দেখা গেছে নেতিবাচক চিত্র। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) তৈরি পোশাক খাতে এক হাজার ৩০৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা আয় হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। গত বছর একই সময়ে এই খাতে আয় হয়েছিল এক হাজার ৪১৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আলোচিত সময়ে ওভেন পোশাকে রফতানি আয় কমেছে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, আর নিট পোশাকে ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এই দুই খাতে আয় কমেছে যথাক্রমে ১৮ দশমিক ২০ ও ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ। 

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) রফতানি চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রফতানি আয়ে তৈরি পোশাকের অবদান প্রায় ৮৩ শতাংশ। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতে রফতানির অন্যান্য উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশে দাঁড়াবে। পোশাক রফতানি কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে পুরো রফতানিতে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি খাতে আয় কমেছে সাড়ে ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ কমেছে রফতানি আয়। 

পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, রফতানিতে নেতিবাচক চিত্রের প্রধান কারণ ডলারের বিপরীতে টাকার অতিমূল্যায়ন। তারা জানান, প্রতিযোগী দেশগুলো ডলারের বিপরীতে নিজেদের মুদ্রা অবমূল্যায়ন করেছে। এতে তাদের মূল্য সক্ষমতা বেড়েছে। ফলে অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে না এসে প্রতিযোগী দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে। ক্রয়াদেশ ঘাটতিতে পণ্য রফতানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রফতানি কমছে। আগামী কয়েক মাসও ক্রয়াদেশ কম থাকবে আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলেন, ক্রয়াদেশের বেশি অংশ পাচ্ছে ভিয়েতনাম। এছাড়া পাকিস্তান এবং ভারতেও ক্রয়াদেশ সরে যাচ্ছে। সবগুলো দেশই এ খাতের রফতানিতে প্রণোদনা ও বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। 

উদ্যোক্তাদের দাবি, গত কয়েক বছরে শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে ৫১ শতাংশ। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির বিল। বেড়েছে পরিবহন ব্যয়, সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্স, পৌরকর এবং বন্দর খরচ। কিন্তু পণ্যের দাম সে তুলনায় বাড়েনি, উল্টো কমেছে। কমেছে রফতানির পরিমাণও। অসম এবং অনৈতিক প্রতিযোগিতায় রফতানিমূল্যও প্রতিনিয়ত কমছে। এসব কারণে রফতানি বাণিজ্যে ৮৪ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী সম্ভাবনাময় তৈরি পোশাকশিল্প খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিনিয়ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন কারখানা। গত পাঁচ বছরে বন্ধ হয়েছে অন্তত ১,৩০০ কারখানা। বাড়ছে শ্রমিক ছাঁটাই এবং অসন্তোষ। স্বল্পসংখ্যক বড় কারখানার কথা বাদ দিলে অধিকাংশ কারখানার জন্য কোনো সুসংবাদ নেই আগামী দিনের রফতানি আদেশে। 

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, আমরা প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাচ্ছি। গত চার বছরে ব্যয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের মুদ্রা অবমূল্যায়ন করলেও আমাদের মুদ্রা এখনো শক্তিশালী। নীতি-নির্ধারকরা বসে যদি কৌশল নির্ধারণ না করেন, তাহলে খাতটিকে গভীর সমস্যায় পড়তে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য শুধু নয় বরং দীর্ঘমেয়াদে শিল্প টিকিয়ে রাখার স্বার্থেও কৌশল নির্ধারণ জরুরি মন্তব্য করে তিনি বলেন, এত বিপুল পরিমাণ ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট নিয়ে আমরা কম রফতানির ঝুঁকি নিতে পারি না। তাই আমাদের বিকল্প ও সৃজনশীল সমাধানে আসতে হবে। বিজিএমইএ নেতারা বলছেন, দেশের রফতানি আয় তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ববাজারে বর্তমানে পোশাকের চাহিদা কম। বছরের শুরু থেকেই অর্ডার কমছে। সাথে পণ্যের মূল্যও কমেছে। এছাড়া অবকাঠামোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক-ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রফতানি বাণিজ্যে চলছে নিম্নগতি। রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। তা না হলে আগামীতে রফতানি আয় আরো কমে যাবে। পাশাপাশি একক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে। 

অভিযোগ রয়েছে, পোশাক খাতে রফতানির এমন নেতিবাচক অবস্থার জন্য দায়ী সরকারের একটি সিদ্ধান্ত। চলতি অর্থবছরের বাজেটে পোশাকসহ সব খাতের উৎসে কর এক শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এতে হোঁচট খায় শিল্প। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সরকার শেষ পর্যন্ত নিজ অবস্থান থেকে ফিরে আসে। এক শতাংশ থেকে কমিয়ে উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। গত ২১ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকেই তা কার্যকর করা হয়। যদিও বিজিএমইএ চায়, সুবিধাটি যেন ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়। তৈরি পোশাক খাতের চলমান দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) লেখা এক চিঠিতে বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক এ দাবি জানান। বিজিএমইএ’র ওই চিঠিতে রফতানি পোশাক খাতের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, দেশের প্রায় ৮৪ শতাংশ রফতানি আয় অর্জনকারী এই শিল্পটি বর্তমানে দেশ-বিদেশে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। 

বর্তমানে পোশাকশিল্প ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অব্যাহত দরপতন, শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ। তাই এই খাতকে সহায়তা দেয়ার অংশ হিসেবে উৎসে কর কমানো হয়েছে। বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রফতানি পর্যালোচনায় দেখা যায়, মোট রফতানি হয়েছে চার হাজার ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য। এই আয় আগের অর্থবছরে রফতানি হওয়া তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ডলারের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। তাছাড়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ রফতানি বেশি হয়েছে বিদায়ী অর্থবছরে। এ বছর রফতানি আয়ের ৮৪ শতাংশ পোশাক খাত থেকে এসেছে। সব মিলিয়ে বছরটিতে তিন হাজার ৪১৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। এই আয় ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেশি। আর বিদায়ী অর্থবছরের পোশাক রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। আবার পোশাকশিল্পের মধ্যে ওভেন পোশাক রফতানি হয়েছে এক হাজার ৭২৪ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে নিট পোশাক রফতানি হয়েছে এক হাজার ৬৮৮ কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। সামগ্রিক বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের সামনে সম্ভাবনা যেমন আছে তেমনি অনেক চ্যালেঞ্জও আছে। আমরা এখন নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে পণ্যের দাম কমাচ্ছি। অনৈতিক প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে সবারই ক্ষতি করছি। 

বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের পুরো অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পোশাক খাত ৩০ লাখ নারী শ্রমিকের ক্ষমতায়ন করেছে। শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের সাথে যুক্ত ছোট ছোট দর্জি, মুদি দোকানি, ফ্ল্যাক্সি লোডের দোকানদার, লিপস্টিক বিক্রেতা, লেইস ফিতার হকার থেকে শুরু করে অর্থনীতির অনেক খাতে এর প্রভাব পড়বে। আর আমাদের ব্যাংকিং সেক্টর তো টিকে আছে পোশাকশিল্পের ওপরই। এ শিল্পের কিছু হলে আর্থিক খাতে চরম দুর্গতি নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

  • কার্টসি - দিনকাল/ ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯

Sunday, December 8, 2019

‘I want to go back to class’

Nahid Riyasad
Rushad Faridi

Rushad Faridi is an assistant professor at the department of economics, University of Dhaka. He is on forced leave since 2017 and yet to go back to class despite the High Court ruling terming the university decision illegal. As a symbolic protest, he took a class at the staircase of social science building attended by students from different disciplines. During a conversation with Nahid Riyasad, Rushad Faridi shares his struggle for a just academic environment and the plummeting quality of tertiary education in Bangladesh.

New Age Youth: What is the recent update? Have you started earned back your access to class rooms? 

Rushad Faridi: I started protesting because even after the High Court ruling terming my forced leave illegal, the department is yet to give me my rightful access to classrooms on a flimsy ground that the administration is yet to receive the certified copy of the order. I did not expect such media attention on my protests; however this might help to create a public pressure on the department authorities to comply with the High Court order. I am hopeful that this whole episode will be behind me and it will not resolved by next week.

New Age Youth: Where did all these start from?

Rushad Faridi: It all started in 2012, when the department authorities brought up my relationship with a student back in 2010; that student was living abroad at the time when the allegation was made. In an emergency meeting on the issue, I told the authorities that they have been choosing to overlook a number of professional, academic and administrative irregularities but how come they are so eager to discuss my relationship with a student from two years back. Due to my choice of words and rightful indication towards some serious issues of the department, the authorities sent me on forced leave in September 2012.

The department launched an official investigation against me on the allegations. Four years went by but that committee submitted neither any reports nor any punishment for me. Forced leave is not a punishment and the department cannot keep anyone on forced leave forever. According to the university provision, forced leave cannot be extended beyond a 90-day period.

As the authorities could not charge me with anything serious, they thought barring me from taking classes could be an alternative punishment, even though it goes against the university rules.

New Age Youth: Against what kind of irregularities of the department did you speak up?

Rushad Faridi: There are a lot of administrative and academic irregularities in the department. In a regular semester, there are 28 classes for a course. In reality, there are many instances, not even half of the required classes are taken. Students don’t get their checked mid-term exam-papers even after appearing in the semester finals. These are nominal crimes compared to others.

A teacher’s room in the economics department was opened after 30 years. That too was because teachers from other departments protested as they suffer from the scarcity of space, a teacher kept a room occupied but never used it for once in three decades. The janitor who cleaned the room was almost fainted because of the pungent gases formed there over the decades.

There are allegations that one teacher uses the same question paper year after year. Another teacher finishes the entire semester by taking presentations from the students on every class so s/he wouldn’t have to prepare for the lecture.

These are severe academic crime but such practices are internalised and institutionalised in our academia to such extent that one teacher, during a meeting in her room asked me, how could I violate the sanctity of the department? For them, the irregularities are entirely normalised and this is how a department should run and if anyone rises against questions — the sanctity of the department is violated.

New Age Youth: When did that forced leave ended and how? What happened after that?

Rushad Faridi: The leave ended in December 2015. From January 2016, I understood that the department is not willing to resolve the matter, so I volunteered and sought a mutual understanding between me and the department. The department perceived this as admitting my faults. Furthermore, the authorities did not offer me any classes in the entire 2016.

It felt like even my presence is embarrassing for the department because I get involved in a lot of student related activities; however, the authorities want a still academic environment where students would not involve in critical thinking. This silence among the students gave the authorities a comfort zone because no one is pointing finger to their irregularities.

From 2016 to mid-2017, I wrote seven letters to the department pointing out all the irregularities in rather strong language. The chair, through an official letter, demanded an apology from me but I said I can apologise for my language, but not for the allegations I brought up. Then I offered an apology, but demanded an investigation on the allegations I mentioned. They did not inform me of any investigation.

Meanwhile, I wrote an op-ed at a Bengali national daily where I argued not only the public university busses are going on the wrong direction (plying on the wrong side of the road is a common practice among public university buses during traffic congestion) but also the public universities are moving on the wrong direction. I pointed out that politically appointed vice-chancellors are a major concern and they can only serve the partisan interest. My piece went viral which enraged different interest groups including a former vice-chancellor and teachers loyal to him. My department took the chance and handed me another forced leave.

New Age Youth: Your symbolic protest of taking an open class on the staircase has attracted a lot of media and public attention. Would you like to share your experience?

Rushad Faridi: During my recent protest, members of Bangladesh Students Union offered me the idea of taking an open class. More than 80 students from different departments and disciplines attended the class making it a really enjoyable experience and so much so, the second open class will be held on next week.

I got such tremendous response from students that I am determined to continue the class, even if I start taking formal classes in the department. In a regular class, we cannot expect such diversity of ideas and interest.

New Age Youth: The opinion-piece you wrote blamed political appointment of vice-chancellors for the current academic environment in public universities. Recently, students protested at Jahangirnagar University, Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman Science and Technology University, University of Barisal and Pabna University of Science and Technology against corruption and irregularities of their respective VC’s. What can we make of this?

Rushad Faridi: Political appointment of vice-chancellors is a very serious issue in our public universities since the independence. Following the trend of extreme centralisation of power, loyalty of the VCs’ to the government is increasing. We cannot say this is a new problem.

This has been seriously hampering the relationship between teachers and students. Even when I was a student during the 1990s, the only relation among most of the teacher and their student were of fear. As there are is no accountability of the teachers, this has become the norm.

From my experience, I have seen a teacher do not need to take class and only have to produce poor papers in whatever journal and their promotion is guaranteed. Under this situation, who would want to work for a proper research when they are getting desired post so cheaply?

The condition is such now that the department is monitoring social media activities of the students and if anyone is found interacting on my social media post they may face consequences. So, the students are living in an intimidating environment. Even today, I met a group of students who were scared while talking to me as they have a upcoming viva-voce and were scared of losing mark because they were seen talking to me. When the top of the organisation is on special assignment of entertaining a certain group’s interest, this is bound to happen.

New Age Youth: On the topic of research, neo-liberalism policies are at play in our tertiary education sector. These policies are criticised by experts as these aim to shape higher education more market oriented rather than contextual research focused? What is your take on the question?

Rushad Faridi: I believe that arguing on whether quality research is produced or not is diverting the attention from the main crisis. Research is the job of a university. Considering the current state of public universities, they are not even schools because they cannot do their basic job properly — delivering education. Production of knowledge is secondary and is important only if an institution can deliver education properly.

Let alone research, human rights are violated in the university campuses right and left. A residential student has to go through metal and physical stress only to survive the prevailing academic environment.

In this scenario, without deconstructing the entire system, the public universities are on the path of a slow and gradual demise.

  • Nahid Riyasad is a member of the New Age Youth team
  • NewAge/Dec 9, 2019 

ব্যাংক খাতে অশনিসংকেত

মুঈদ রহমান


শিরোনামটি গত ২৯ নভেম্বরের যুগান্তর থেকে ধার নিয়েছি। ধার করায় আমার লজ্জা লাগেনি। কেননা ব্যাংকিং খাতের যে ভয়ংকর চিত্র আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, তাতে লাজলজ্জার বিপরীতে আতঙ্ক আর ভয়াবহতাই বেশি কাজ করছে। খেলাপি ঋণ, ফোর্সড লোন আর ঋণ জালিয়াতিতে ভেঙে পড়েছে ব্যাংকিং ব্যবস্থা। আমরা সবাই জানি, আর্থিক লেনদেন হচ্ছে একটা আস্থা ও বিশ্বাস। এখানে সাক্ষ্য-প্রমাণের কোনো সুযোগ নেই। আপনি যদি বছর চারেক আগের কথা আমলে নেন তাহলে দেখবেন, ‘পৃথিবীতে মোট অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ৬০ ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু বিশ্বের সব মুদ্রা আর ব্যাংক নোটের মূল্যমান ৬ ট্রিলিয়ন ডলারেরও কম।

অর্থাৎ আমাদের ৯০ শতাংশের বেশি অর্থ বা আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে প্রদর্শিত ৫০ ট্রিলিয়নেরও অধিক অর্থের অস্তিত্ব আছে শুধু কম্পিউটার সার্ভারে। ফলে, বেশিরভাগ ব্যবসায়িক লেনদেন এক কম্পিউটার থেকে অন্যটিতে ইলেক্ট্রনিক তথ্য স্থানান্তরের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়, বাস্তবিক কোনো ক্যাশ বিনিময় ছাড়াই’ (ইয়ুভাল নোভাল হারারি, স্যাপিয়েন্স; পৃষ্ঠা : ১৯৪)। এটা এক ধরনের বিশ্বাস ও আস্থার ওপর স্থাপিত। তাই মাঝে-মধ্যে আমেরিকার অর্থনীতিতে অস্বাভাবিক পতন ঘটলে ডলারের দাম পড়ে যায়, মানুষ তখন ইউরো খোঁজে। আস্থাহীনতাই মানুষকে বিকল্প পথে যেতে বাধ্য করে। আমরা আশা করব সরকার যেন আর্থিক খাতে মানুষের আস্থাকে সমুন্নত রাখে।

সরকারের ভুল নীতির কারণে ব্যাংগুলোতে খেলাপি ঋণের মাত্রা লাগাম ছাড়িয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর, এ ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। হিসাবমতে, মোট প্রদত্ত ঋণের প্রায় ১২ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। অবলোপিত প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা হিসাবের বাইরেই রাখা হয়েছে। বর্তমান সরকারের দ্বিতীয়বার ক্ষমতা নেয়ার শুরুতে অর্থাৎ ২০০৯ সালে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। কী করা যায়। সে সময়েও খেলাপিদের সুবিধা দিয়ে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পুনর্গঠন নীতিমালা জারি করে। ১১টি শিল্প গ্রুপের মোট ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিল।

কিন্তু দুঃখজনক এবং খুব স্বাভাবিক দৃশ্য হল ১১টির মধ্যে মাত্র ২টি শিল্প গ্রুপ ছাড়া বাকি ৯টি গ্রুপ টাকা পরিশোধ করছে না। এত সুবিধা দেয়ার পরও ২০১৮ সাল নাগাদ খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এ তো হিসাবের কথা। অবলোপন ঋণ, যেটা কিনা আলাদা লেজারে স্থিতি অবস্থায় আছে, কোনোদিন সম্ভব হলে সুদসহ আদায় হবে, তার পরিমাণ ৩৭ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। তাহলে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়াল ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। পরিমাণটা আমাদের ২০১৮-১৯ সালের বাজেটের প্রায় ৩৫ শতাংশ। ভাবা যায়! আর্থিক খাতের এমন দুর্দশা মেনে নেয়া যায় না। একের পর এক সুবিধা দিয়েও কোনো ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

এমনটি আয়করের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। শত সুবিধা সত্ত্বেও খুব কম লোকই কালো টাকা সাদা করেছেন। এমন হওয়ার কারণ হল কোনো যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ার সংস্কৃতি। ক্ষমতায় যে দলই আসুক না কেন, এ খেলাপিদের তোয়াজ না করে তাদের গতি নেই। তাহলে কি তাদের প্রতি ওপর মহল কোনো অশুভ দায়ে দায়বদ্ধ! এমন আশঙ্কা দূরে রাখার মতো কোনো স্বচ্ছ উদাহরণ তো আমরা দেখিনি। এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ইউজিসি প্রফেসর মইনুল ইসলামের বক্তব্য পরিষ্কার- ‘ঋণখেলাপিদের অন্যায্য সুবিধা দেয়ার জন্য এসব খামখেয়ালিপনা হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী একজন ব্যবসায়ী হিসেবে খেলাপিদের এসব সুবিধা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। মনে হচ্ছে সময়টা ঋণখেলাপিদের। নতুন সিদ্ধান্ত খেলাপি ঋণ আদায়ে প্রভাব ফেলবে না, বরং একে খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত বলা যায়। ঋণখেলাপিদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে। উচ্চ আদালতে যেন বেশিদিন সুবিধা না পায়, তারও উদ্যোগ নিতে হবে’ (প্রথম আলো, ২৬.০৩.২০১৯)। আমরাও তার সঙ্গে একমত। কারণ এ টাকা সাধারণ মানুষের টাকা। আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় ভোগ অসম্পূর্ণ রেখে টাকা ব্যাংকে রাখি। সেই টাকার নিশ্চয়তা আমরা চাইবই। সরকারের দুর্বল আচরণের সুযোগে বেড়ে উঠছে খেলাপি ঋণের পাহাড়।

আরেকটি শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ফোর্সড লোন’। ‘পণ্য আমদানির (ঋণপত্র বা এলসি) বিপরীতে বিদেশি ব্যাংককে গ্যারান্টি দিয়ে থাকে দেশি ব্যাংক। দেশে আমদানি পণ্য আসার পর শর্ত অনুযায়ী গ্রাহক টাকা পরিশোধ করলে ওই অর্থ বিদেশি ব্যাংককে দেশি ব্যাংক পরিশোধ করে দেয়। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক কোনো কারণে অর্থ পরিশোধ না করলে আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী গ্রাহকের নামে ব্যাংক ফোর্সড বা বাধ্যতামূলকভাবে সমপরিমাণ ঋণ সৃষ্টি করে। ওই অর্থে ব্যাংক বিদেশি ব্যাংকের দেনা শোধ করে। এভাবে ব্যাংক গ্রাহকের নামে ফোর্সড লোন সৃষ্টি করে। মূলত আমদানির বিপরীতেই এসব ফোর্সড লোন সৃষ্টি করা হয়েছে’ (যুগান্তর, ০১.১২.২০১৯)।

রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকে গত জুন পর্যন্ত ফোর্সড লোন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি ফোর্সড লোন দিয়েছে জনতা ব্যাংক, ৫ হাজার ৬৮০ কেটি টাকা। ডিসেম্বর ’১৮ থেকে জুন ’১৯- এই ৬ মাসে জনতা ব্যাংকের ফোর্সড লোন বেড়েছে ৪৬৭ কোটি টাকা। এ নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘ফোর্সড লোন বেশিরভাগই হচ্ছে ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে। এ ধরনের ঋণ যাতে আর না বাড়ে সেজন্য ব্যাংকগুলোর আরও যাচাই-বাছাই করে এলসি খোলা উচিত। ফোর্সড লোন বেড়ে যাওয়া কোনোভাবেই ভালো লক্ষণ নয়।’

ব্যাংক খাতে তৃতীয় অভিশাপটি হল ‘ঋণ জালিয়াতি’। সম্প্রতি বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক এ অপকর্মটি করেছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা নাফ ট্রেডিংয়ের নামে ৬৫০ কোটি টাকা এবং একই ব্যাংকের মহাখালী শাখা হাসান টেলিকমের নামে ৩৩৫ কেটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করে। অবাক কাণ্ড হল ওভার ভেল্যুয়েশনের কথা বাদ দিলেও ‘নাফ ট্রেডিং’ নামের কোনো কোম্পানির অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঋণের টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগ না করে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

অপর কোম্পানি হাসান টেলিকম পণ্য আমদানির বিপরীতে ঋণ মঞ্জুর করালেও কোনো পণ্য আমদানি না করেই ঋণের টাকা ছাড় করিয়ে নিয়েছে। এমন জালিয়াতি বিরল বলে দাবি করেছেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংকের ওপর একটি তদন্ত পরিচালনা করে। সেখান থেকেই এ ধরনের জালিয়াতির তথ্য প্রকাশিত হয়। সাধারণ মানুষের ঘামঝরা আয়ের আমানত নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কোনো ব্যাংকের নেই। এ ধরনের খবর আমাদের মনে হতাশার জন্ম দেয় বৈকি!

ব্যাংকিং খাতে এ ধরনের অব্যবস্থাপনার ভেতর দিয়ে একটি প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়িয়েছে- ঋণের উচ্চ সুদের কারণে খেলাপি হচ্ছে, নাকি খেলাপিদের কারণে উচ্চ সুদ কমানো যাচ্ছে না? এ প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী ও ব্যাংকারদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে এবং তা বলতে পারেন সম্পূর্ণ বিপরীত। অর্থমন্ত্রী সরাসরিই বলেছেন, আমাদের দেশে ঋণখেলাপি হওয়ার প্রধান কারণ হল ডাবল ডিজিট সুদ। ব্যাংকগুলো শিল্প খাতে এ মাত্রায় সুদহারের পরিবর্তে আগামী জানুয়ারি থেকে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার পক্ষে রায় দেয়।

অপরদিকে এফবিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেছেন, ‘এক অঙ্কের সুদের হারের কথা এক-দেড় বছর ধরে শুনছি। কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না। একেকবার একেক কথা বলা হচ্ছে।’ যিনি উদ্যোক্তা তিনি তো চাইবেনই স্বল্প মাত্রার সুদ। কিন্তু তারপরও উদ্যোক্তারা মনে করেন, খেলাপি হওয়াটা অনেকটাই ইচ্ছাকৃত এবং রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত।

ব্যাংকারদের কথাও আমলে নিতে হবে। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি এম শহীদুল ইসলামের বক্তব্য হল, ‘তহবিল ও পরিচালনা খরচ মিলেই ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের টাকা খেলাপি হয়ে পড়লে বড় সমস্যায় পড়তে হয়। ওই টাকার জন্য অন্য আয় থেকে সঞ্চিতি রাখতে হয়। আমানতকারীদেরও টাকা দিতে হয়। এসব কারণে সুদহার বেড়ে যায়। খেলাপি ঋণ কমে এলে সুদহার কমে আসবে।’

তাহলে আমাদের মতো সাধারণ আমানতকারীদের অদৃষ্টে কী লেখা আছে? অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে থেকে সার্বিক অর্থনীতিতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা। তা না হলে আমরা হতাশার মধ্যেই ডুবে থাকব।

  • মুঈদ রহমান : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
  • কার্টসি - যুগান্তর/ ডিসেম্বর ৮, ২০১৯ 

লাগামছাড়া দ্রব্যমূল্য : সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?

কামরুল হাসান দর্পণ 

আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, ‘আগের আমল ভাল ছিল, এ আমল ভাল না। আগের আমলে জিনিসপত্রের দাম কম ছিল।’ এর অর্থ হচ্ছে, আগে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিল। কম টাকায় তারা বেশি পণ্য কিনতে পারত। এখন বেশি টাকায় কম পণ্য পাওয়া যায়। মানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদায় ঘাটতি থেকে যায়। ফলে অনেক মানুষ মনে করে, যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ। প্রবাদটি জনসাধারণ খুব মানে। এর ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, ভবিষ্যতে যে দিন রয়েছে, বর্তমানের চেয়ে সে দিনগুলো খারাপ হবে। আসলে কি তাই? আমরা যদি আশাবাদী মানুষ হই, তবে এ কথা পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ ভবিষ্যত ভাল হবে এমন আশা নিয়েই আমরা অপেক্ষায় থাকি। আজ দিনটি খারাপ গেলে আগামীকাল ভাল যাবে এটা মনে করাই আমাদের স্বাভাবিক প্রবণতা। মানুষের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, আজ খারাপ হলে আগামীতে ভাল হওয়ার আশা তার মধ্যে প্রবল হয়ে ওঠে। আবার আমরা যদি আগের আমল ভাল ছিল এ কথা বিবেচনা করি, তাহলে বলা যায়, বর্তমান দিনই ভাল। কারণ এই দিনই কালক্রমে অতীত হবে। তবে কিছু মানুষ আছে, যাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সবসময়ই ভাল। এরা জন্মগতভাবে বা জন্মের পর থেকেই সামর্থ্যবান হয়ে থাকে। যেমন যে জন্মগতভাবে কোটিপতি এবং যে জন্মের পর যেভাবেই হোক কোটিপতি হন, তার আর্থিক অবস্থা সবসময়ই ভাল থাকে। খারাপ হলে খুব একটা হয় না। কোটিপতির ভিত ঠিকই থেকে যায়। সাগর থেকে দুয়েক ঘটি পানি তুলে নিলে যেমন সাগরের ক্ষতি হয় না, তেমন। জিনিসপত্রের দাম যদি আকাশচুম্বীও হয়ে যায়, তাতেও কোটিপতির কিছু আসে যায় না। তার কেনার সামর্থ্য অটুট থাকে। আর যে মানুষটি দিন আনে দিন খায় বা সীমিত আয়ের, তার সংকট প্রকট হয়ে ওঠে। সীমিত সামর্থ্যরে মধ্য থেকে তিনি যেভাবে জীবনযাপন করেন, হঠাৎ করে যদি তাতে টান ধরে, তবে তার দিশাহারা হওয়া ছাড়া গতি থাকে না। পাঁচ টাকার জিনিস এক লাফে দশ টাকা হয়ে গেলে সীমিত আয়ের মানুষের বেহুশ ও বেদিশা হওয়ারই কথা। এখন বছরের পর বছর ধরে সাধারণ মানুষকে হরহামেশা বেদিশা হতে হচ্ছে। বিশেষ করে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে তাদের জীবনযাপনকে বারবার পরিবর্তন করতে হয়েছে এবং হচ্ছে। চাপের মধ্যে পড়তে হয়েছে এবং এই চাপ নিয়েই বসবাস করতে হচ্ছে। সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম যেভাবে দফায় দফায় বৃদ্ধি করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ে, তাতে তাদের টুঁ শব্দ করার কোনো উপায় থাকে না। নীরবে মেনে নিতে হয়। তাদের পক্ষ হয়ে যে কেউ কথা বলবে, তেমন উপযুক্ত কাউকেই তারা পায় না। ফলে সরকার তার খেয়াল খুশি মতো যেভাবে তাদের রাখতে চায়, সেভাবেই তাদের থাকতে হয়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ‘আগের আমলই ভাল ছিল’ বলে হতাশায় নিমজ্জিত হতে হয়।

দুই.
মগের মুল্লুক বলে একটা কথা আছে, যেখানে মগরা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছামতো অপকর্ম করে বেড়াত। লুটপাট, অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতন করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করত। নিয়ম-কানুনের কোনো বালাই ছিল না। এই আধুনিক ও সভ্যতার যুগে এসেও বাংলাদেশের মানুষকে যেন অনেকটা মগের মুল্লুকেই বসবাস করতে হচ্ছে। সুশাসনের অভাবের মধ্যে থেকে তাদের ত্রাহি অবস্থা। বিপদের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। সরকারের দ্বারাই তাদের একের পর এক বিপদে পড়তে হচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর যেন কেউ নেই। অথচ সংসদে বিরোধী দল আছে, রাজপথে বড় বড় রাজনৈতিক বিরোধী দল আছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে কেবল সরকারকেই দেখা যাচ্ছে। অথচ রাজনীতিতে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স থাকার কথা। সরকার জনবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে বিরোধী দল জনগণের হয়ে কথা বলবে, প্রতিবাদ করবেÑএটাই স্বাভাবিক। দুঃখের বিষয়, এখন তার ছিঁটেফোটাও দেখা যায় না। বিরোধী দল বলে যে কিছু আছে, তা জনগণের কাছে মনে হচ্ছে না। সরকারও মনে করে বিরোধী দল বলে কিছু নেই। ফলে তার ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে পারছে। জনগণকেও বাধ্য হয়ে তার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হচ্ছে। এই যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকশ ছোঁয়া হয়ে রয়েছে, তাতে কে কি করতে পারছে? সরকারের বিরোধিতা কি কেউ করতে পারছে? পারছে না। পারছে না বলেই চাল, ডাল, পেঁয়াজ, তেল, শাক-সবজিসহ সব ধরনের পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। দিশাহারা মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক বা তার কম কিনে কোনো রকমে ব্যয় সংকুলান করে চলেছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই বিইআরসি বিদ্যুতের দাম আবার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, বাড়তি জিনিসপত্রের দাম অনিবার্যভাবেই আরও বৃদ্ধি পাবে। গণশুনানিতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে কেউ কেউ বিরোধিতা করলেও বিইআরসি যে তার সিদ্ধান্ত স্থগিত করবে তা ভাবার কোনো কারণ নেই। অতীতেও বিরোধিতা হয়েছে, তাতে কাজ হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি দাম বাড়িয়েই ছেড়েছে। জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্যের মধ্যে বিদ্যুতের এই দাম বৃদ্ধি সাধারণ ও সীমিত আয়ের মানুষের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সরকার বা তার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ভাবছে না। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সরকারের টাকার প্রয়োজন। আর এ টাকা জনগণের কাছ থেকে আদায় করতে হবে। তারা কোথা থেকে টাকা দেবে তা দেখার দায়িত্ব তার নয়। সরকারের এমন আচরণ যে জনগণের সরকারের মতো নয়, তা একবাক্যে বলা যায়। জনগণের সরকার জনগণের সুখ-দুঃখ বোঝে, সরকার যদি টানাপড়েনের মধ্যেও থাকে তবুও জনগণের কষ্ট লাঘবে নিরন্তর চেষ্টা করে। যেমনটি করে পরিবারের একজন অভিভাবক। নিজে কষ্ট করে হলেও সন্তানকে সাধ্যের শেষটুকু দিয়ে ভাল রাখতে চেষ্টা করে। অন্যদিকে জনগণের সরকারও তাই করে। দেখা যাচ্ছে, সরকার এ দায়িত্বটুকু যথাযথভাবে পালন করছে না। জনগণের যে কষ্ট হচ্ছে, তা বুঝতে চায় না, বুঝলেও তা উপেক্ষা করে চলেছে। এই যে পুনরায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাবে, তা যে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে ঘি ঢালার মতো হয়ে উঠবে, তখন মানুষ কোথায় যাবে? তাদের হাহাকার কে দেখবে?

তিন.
জনগণের প্রতি বর্তমান সরকারের আচরণ কতটা জনবান্ধব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ সরকারের কাজ হচ্ছে, নিজে কষ্টে থেকে জনগণকে সুখ-শান্তিতে রাখা। জনগণের সেবক হয়ে কাজ করা। দেখা যাচ্ছে, সরকার করছে তার বিপরীত কাজ। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, সরকারের মধ্যে শো অফ বা দেখানোর একটা প্রবণতা রয়েছে। যেমন সরকার প্রায় আট-নয় বছর আগে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিতে বলেছিল, জনগণকে দশ টাকা দরে চাল খাওয়াবে। আট-নয় বছর পর প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজনের মধ্যে দশ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির একটি লোক দেখানো প্রকল্প নিয়ে তা দেখিয়ে দিয়েছে। এ চাল বিক্রি নিয়েও এন্তার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন দারিদ্র্যর ভান করে সে চাল ভোগ করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দশ টাকার চাল খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি কি শুধু প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজনের জন্যই ছিল, নাকি ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলে যাতে এই টাকায় কিনতে পারে, সে প্রতিশ্রুতি ছিল? প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তো চালের দাম সর্বত্র দশ টাকা হওয়ার কথা। আলাদা প্রকল্প করে দশ টাকা বিক্রি করার কথা নয়। এটা কি জনগণের সাথে এক ধরনের চালাকি নয়? চালাকিই বটে! সরকারের কার্যক্রমে এমন আরও অনেক চালাকি আছে। পানির দাম গোপনে বাড়িয়ে দেয়া, গোপনে ভ্যাট-ট্যাক্স কেটে নেয়া থেকে শুরু করে মাথাপিছু আয় কাগজে-কলমে বৃদ্ধি করে দেয়া পর্যন্ত একটা লোক দেখানোর প্রবণতা রয়েছে। কেবল সাধারণ মানুষই বোঝে, সরকার তাদের সাথে কী আচরণ করছে! তাদের জোর করে কুইনাইন খাইয়ে দেয়া হচ্ছে। অভ্যস্ত করে তুলছে। বুক ভরে শ্বাস নেয়ার পরিবর্তে ছোট ছোট শ্বাস নিয়ে হাঁপিয়ে বাঁচার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এক রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণেরও কোনো উপায় তারা দেখছে না। তাদের এ পরিস্থিতি যে তুলে ধরবে তারও কোনো উপায় নেই। তাদের কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। অথচ দেশে এত এত বিরোধী রাজনৈতিক দল রয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত জনগণের দোহাই দিয়ে বড় বড় কথা বলে বেড়াচ্ছে, জনগণের এই দুর্ভোগের সময় তাদের কণ্ঠ উচ্চকিত হচ্ছে না। পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে না। আমরা যদি সবচেয়ে বড় বিরোধী রাজনৈতিক দলটির কথা ধরি, তাহলে দেখব দলটি জনগণের এই দুর্ভোগের সময় পাশে নেই। পণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে প্রেস কনফারেন্সে গণবিরোধী, দাম বৃদ্ধি প্রত্যাহার করতে হবেÑএমন দুয়েকটি গৎবাঁধা বক্তব্য দিয়েই খালাস। অথচ জনগণের এই দুঃসময়ে দলটি মাঠে কার্যকর কর্মসূচি দিতে পারত। দেশ ব্যাপী থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারত। এতে জনগণের ব্যাপক সমর্থন দলটি পেত। জনরাজনীতি করার একটি মোক্ষম ইস্যু তারা ধরতে পারত। জনগণের পাশে দাঁড়ানোর এই সুযোগ দলটি ক্রমাগত হারাচ্ছে। জনদরদী এ কাজটি করতে গিয়ে যদি তারা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তোপের মুখেও পড়ত, তাহলেও জনগণ দেখত দলটি তাদের ন্যায্য দাবী নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এতে দলটির প্রতি মানুষের আকর্ষণ ও সহানুভূতি অনেক বেশি বৃদ্ধি পেত। তারা ভাবত আমাদের পক্ষে আন্দোলন করতে গিয়ে দলটি সরকারের রোষানলে পড়েছে। তাছাড়া পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী এ ধরনের কর্মসূচিতে বাধা দিতেও দ্বিধা করত। কারণ এটি জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি। বাধা দিলে তা সরকারের বিরুদ্ধেই যাবে। জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে আরও রুষ্ট হয়ে উঠবে। দুঃখের বিষয়, দলটি জনগণের এই বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরতে পারছে না। এই ব্যর্থতার জন্য যদি জনগণ সরকারের পাশাপাশি দলটিকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করায়, তবে তা যথার্থ বলেই প্রতীয়মান হবে।

চার.
কোনো সরকার জনবান্ধব কিনা, তা বোঝা যায় জনগণের প্রতি তার আচরণ দেখে। সরকারের প্রতি জনগণের চাওয়া খুবই সীমিত। তারা চায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হাতের নাগালের কাছে থাকুক, স্বচ্ছন্দে মৌলিক চাহিদাটুকু মিটুক। চাপমুক্ত হয়ে জীবনযাপন করুক। দুঃখের বিষয়, এ সময়ে সাধারণ মানুষকে চাপতে চাপতে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে, তাদের দম নিতেও কষ্ট হচ্ছে। সরকার কথায় কথায় বলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। এটা বলে না, জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি ও জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কথা যদি তুলনা করা হয়, তবে দেখা যাবে অর্থের পরিমাণ বড় হয়ে দেখা দিলেও তা দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা যাচ্ছে না। যদি এমন হতো, মানুষের ইনকাম বেড়েছে এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি, তাহলে বলা যেত মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। বিষয়টি অনেকটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এক বস্তা টাকা নিয়ে গেলেও এক বস্তা জিনিসপত্র কেনা যাচ্ছে না। মানুষ যে বলে আগের আমল ভাল ছিল, তা বলে এ কারণে আগে যে টাকায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তারা কিনতে পারত, এখন তা কিনতে পারছে না। অর্থাৎ তাদের আয় আগের জায়গায়ই রয়ে গেছে। তাদের আগের এক টাকা এ সময়ের পাঁচ টাকা হলেও, এ পাঁচ টাকা দিয়ে আর আগের মতো জিনিসপত্র কিনতে পারছে না। কাজেই মানুষের আয় ও ক্রয় ক্ষমতা বাড়ল কীভাবে? এখন টাকা বেশি দেখা যায়, তবে এ টাকায় মানুষ বরকত পাচ্ছে না। অথচ সরকার টাকাটাই বড় করে দেখছে, এ টাকায় যে মানুষের মৌলিক চাহিদা মিটছে না, তা উপেক্ষা করে যাচ্ছে। তবে সরকার সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা না করলেও একটি শ্রেণীর স্বার্থ স্বার্থটা বড় করে দেখছে। জিনিসপত্রে দাম যে বৃদ্ধি হলো, কারা করল, কেন করল তার কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে পারছে না। একটি কমন কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। সারাবিশ্বেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, ফলে আমাদের এখানেও বাড়ছে। আবার বলা হয়, পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে, দাম বৃদ্ধির কারণ নেই। তাদের এ ধরনের বিপরীতমুখী কথাবার্তায় সাধারণ মানুষের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কী উপায় থাকতে পারে! তবে তারা এটা বুঝতে পারে, সরকার সংশ্লিষ্ট লোকজন এবং ব্যবসায়ীদের একটি মহলকে সুবিধা দিতেই জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। সরকারের কাছে ঐ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এবং নিজের ব্যবসা করার মনোবৃত্তিই বড় হয়ে উঠেছে। জনগণ সরকারের কাছে গৌণ হয়ে পড়েছে। তারা গোল্লায় গেলেও, তাতে তার কিছু আসে যায় না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও জনগণ কোনো জায়গা নেই। তারাও বক্তব্য সর্বস্ব হয়ে পড়েছে। কারণ বিদ্যুত ও জিনিপত্রের দাম বৃদ্ধি এবং এর প্রতিক্রিয়ায় পরিবহন ভাড়া, বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বৃদ্ধি পেলেও, সরকারের মতোই তাদেরও তেমন অসুবিধা হবে না। যত সমস্যা কেবল জনগণের। তারা যেন ভারবাহী দাস। যত ভার তাদের উপরই দিতে হবে। এমনকি ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়ার ভারও এই জনগণকেই নিতে হবে। জনগণের সুবিধা-অসুবিধা দেখার দায়িত্ব যেন তাদের নয়। এ পরিস্থিতিতে জনগণ কেবল হাহাকার করে জিজ্ঞেস করতে পারে, আমরা কোথায় যাব? কার কাছে যাব? সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো কি জনগণের সুখ-দুঃখ বোঝে না? যদি নাই বোঝে, তবে তারা কার জন্য সরকার পরিচালনা ও রাজনীতি করছে?

  • কার্টসি — দিনকাল/  ৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ 

না–খাইতেও দেবেন না?

অনুপম দেবাশীষ রায়

একটা যুবক প্রেসক্লাবের সামনে একা বসে অনশন করছেন। দ্রব্যমূল্যের দামের চাবুক তিনি সহ্য করতে পারেননি বা চাননি। কিন্তু নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের কষ্টেই নিজেকে কষ্ট দেওয়ার এই অনশন।  বাজারে লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ বাণিজ্যমন্ত্রীর হাতে কেন অর্থনীতির একটা লাগাম থাকবে, সেটা তিনি জানতে চান, তিনি বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চান। স্বাভাবিক দেশে এমন প্রশ্ন তোলা খুবই স্বাভাবিক। ক্ষুধাপেটে ক্ষুধার বিরুদ্ধে আরমান তবু কেন একা? ঠিক এটাই কি আমাদের অন্যতম জাতীয় সমস্যা না?

এই দেশে কত মানুষই তো না খেয়ে থাকে। খিদেপেটে রিকশা চালায়, মাটি কাটে। না খাওয়া, আধা পেটা খাওয়া তাদের জীবনের ঘেয়ো বাস্তব। তাতে কারও কখনো ভ্রু কুচকায় না। তাদের খিদে কখনো সংবাদ হয় না। তাদের পেটের মোচড়ে কারও বুকে মোচড় দেয় না। কারণ, মানুষ বলেই হয়তো অথবা নাগরিক বলেই হয়তো আমাদের সয়ে যায় অনেক বেদনা। অনেক কাঠামোগত খিদেই আমাদের কাছে মরাবাস্তব।
আরমান

এই খিদের পতাকা যেহেতু নেই, যেহেতু এদের যূথবদ্ধ করে ‘হাংরি হাংরি’ ধ্বনিতে পিলার জড়িয়ে নাড়ানোর কেউ নেই, আর যেহেতু এদের নিজেদের নড়াচড়ার অগ্ন্যুৎপাত আমরা সহজেই বর্বরতা, অন্ধতা বলে খারিজ করে দিতে শিখি, সেহেতু এই খিদের কোনো ভাষা নেই। এই আহাজারির ক্ষোভমাখা দাবি কেবল কর্কশ চিৎকার বলে ধুলায় গড়ায়।

খিদের কথা শুনতে পেতে তাই পেট পর্যন্ত শমন আসতে হয়। বাজারের দাম চড়চড়াতে হয়। ভাষাভাষীরা তখন কলকলিয়ে ওঠে। হুট করে তারা নিজেদের নাগরিকতার ধ্বজ বের করে বলে, বাজারে বাজার লাগামে আনো। বাজারের নাটাই সুতা কাটার কথা আসে। বাজারের নাটাই ছিনানোর কথা আসে। তখন অতিনাগরিকদের দিকে তোপ পড়ে।

সংবাদ হয় তখন৷ যখন সংবাদ যার লেখা, আর যার জন্য লেখা, তার হালতে দোলাচল দোলা দেয়। তখন প্রশ্ন ওঠে, এই খিদে তো অন্যায়। কারা করে এই খিদের চাষাবাদ? কারা তাতে সার দেয়, বীজ দেয়? প্রশ্ন করা হয়।

খিদেই যেন অপরাধী। সরকারের সঙ্গী ছিল এমন দলের এক নেত্রী প্রশ্ন তোলেন। খিদে যখন হুমকি হয়ে ওঠে, তখন প্রথম প্রচেষ্টা হয় ক্ষুধার্ত মানুষের জোটকে টুকরা করার। দামের আঘাত কার গায়ে লাগে আর কার গায়ে লাগে না, এমন প্রশ্ন ওঠে। প্রশ্ন করেন ডবল দামে বার্গার খেতে পারলে, পেঁয়াজ খেতে পারব না কেন? মহাত্মনের জানা নেই, পেঁয়াজসেবী জনতার বড় অংশটাই কদাচিৎ বার্গার খায়।

কিন্তু কোন খাদ্য কার চাহিদা? কার খাদ্য বদলের স্বাধীনতা আছে, কার নেই, এই প্রশ্ন উহ্য থেকে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে আলাপে আমরা শুনি, কেন আমাদের পেঁয়াজ এতটা জরুরি। মাছ, মাংস ভোগে বিশ্ব সূচকে বহু ধাপ পিছিয়ে থাকা বাংগাল কেন বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেঁয়াজ খায়? ঊননাগরিকদের পাতে ঝোলের ঘনত্ব দেখলে উত্তর পাওয়া যায়। জোলো তরকারিতে ঝাঁজ আনতে গেলে পেঁয়াজ হয়ে পড়ে মৌলিক চাহিদা।

এই ঝাঁজের চুরিতে যখন বাঙালি ঝাঁজিয়ে উঠে ফুঁসতে থাকে, বিশেষত যখন নাগরিকেরও নাভিশ্বাস ওঠে, তখন অতিনাগরিক তার উর্দি খুলে কাতারে দাঁড়ায়। ঐক্যবদ্ধ হও, তারা বলে। রুখে দাঁড়াও, তারা বলে। কাকে রোখা হবে আর কে সেই রোখার দ্বারবান, সেই প্রশ্ন লুকিয়ে দায় ঠেলে দেওয়া হয় নাগরিকদের হাতে। তাদের বঞ্চনাকে ফুঁসলিয়ে ফানুস বানানো হয়। না খেয়ে ব্যবসায়ীদের শিক্ষা দিন, বলা হয়। প্রয়োজনে তাঁদের গণপিটুনি দিন। তৈরি করা হয় আইনি বেআইন।

সবাই কি এই উপহাসটি ধরতে পারে? এই ঝামটাটি, এই বসন্ত গুমের কি কোনো সংবাদ হয়? হয় কোনো খতিয়ান? হয় না। কেউ হাততালি দেয়, কেউবা হাসে। কেউ ভাবে, আসলেই তো, পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার রেসিপি তো লিফলেট হয়ে ঝরছে অলিম্পিয়া থেকে। নাহয় মান্য করি।

এদিকে আরমানেরা জেদ করে, খাইতে দেবে না তারা দামের চাপড়ে, যাক, নাহলে নাইবা খেলাম। খাবার না খেয়ে আমি এই ঘেয়ো ক্ষমতাকে খাব। মন্ত্রী সরাও, নয়তো আর আমি খাব না কিছুই।

সেই ঝাঁজালো দাবি নিয়ে অনশনে বসে আরমান। ক্ষমতাকে দায়ী করে না—খাবার অক্ষমতাটা দেখায়। হাংরি সমাজটাকে হঠাৎ সে ভাষা দিয়ে ফেলে।

তখনই চেতে যায় মসনদ। না না, এ তো করা যাবে না। তোমার দুর্ভাগ্যে তুমি কাঁদো, বুক চাপড়াও...মুঠো তুলবে কেন, অর্বাচীন? ভাই হারানোর শোকে তুমি ওপরওয়ালার কাছে বিচার চাইতে পারো, ওপরতলার বিচার চাইবে কেন বেয়াদব? হ্যাঁ, তোমার শোকে তো শোকার্ত আমিও, কিন্তু শোকে আহাজারি করে ক্ষমতাকে ডিস্টার্ব দাও কেন? বরং নীরবে কাঁদো, এমন উপায়ে কাঁদো যেন অশ্রুও তার কড়া নোনা স্বাদ টের না পায়।

তাই তাকে পুলিশ খেদায়। না খাবি না খা না বাপ, আমাদের খেতে চাস কেন? তাই তোর না খাওয়ার ক্ষমতাকে আমি আজ খাব। না খাইতে দোষ নেই, তবে সেটা বোবা হওয়া চাই। সেই না খাওয়া যখন ভাষা পেয়ে যায়, দাবিগুলো খিদেতে ফোটায়, তখন তাকে তো ঠিক বোবা–খোঁড়া করে দিতে হয়।

তবু কি থামানো যায় তাকে? আরমান ওঠে না। হুমকি–ধমকি, চাপ আরমানকে ওঠাতে পারে না। সে ঠিক কত দিন বসে থাকবে? ঠিক কত দিন মশার কামড় খাবে মধ্যরাতে? সে ঠিক কতটা ক্ষুধার্ত হলে যন্ত্রণাটা অশরীরী হবে? কতটা কাতর হলে কাতর হবে ক্ষমতা? তার খিদের কী ভাষা দেব আমরা? তার কথা শোনার মতো কান কি আমাদের আছে?

আরমান তো ঠিক সেটাই করেছে, যেটা তাকে করতে বলা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে পেঁয়াজ না খেতে, খাচ্ছে না তো সে। তাকে বলা হয়েছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসাধুদের রুখে দাঁড়াতে, সে দাঁড়িয়েছে, বাকিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিচ্ছে। কিন্তু ঠিক যে আলুভাতে প্রতিকার তাকে গছানো হয়েছিল, সেটাকে শাসকের নিজের ভাষাতেই সে ঝাঁজালো পেঁয়াজ করে তুলেছে।

এবার তাকে ক্ষমতা জোর করে খাওয়াতে আসে নাকি সেটাই দেখার বিষয়। ঠিক কেমন করে তার ভাষা কেড়ে নেওয়া হয়, সেটাই দেখার বিষয়। পেঁয়াজের মতো তীব্র আরমানের এই প্রতিবাদ কি আমাদের চোখে জল আনে কি না, আর তার জোয়ারে কি ক্ষমতার চোখে জল আসে কি না—সেটা দেখার কথা।

আমার শিক্ষক একসময় বলতেন যে ঊননাগরিকদের কোনো ভাষা নেই, তারা কথা বলতে পারে না। দেখা যাক, এই আরমান তাদের ভাষা দিতে পারে কি না। দেখা যাক, খেতে না পাওয়ার অবস্থা তৈরি করা দায়ী ব্যক্তিরা তাকে না খেতে দেয় কি না।

  • অনুপম দেবাশীষ রায়: বিকল্প গণমাধ্যম মুক্তিফোরামের একজন সম্পাদক।
  • কার্টসি — প্রথম আলো/০৭ ডিসেম্বর ২০১৯

Wednesday, December 4, 2019

খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা বনাম মেগা প্রকল্প

সৈয়দ আবুল মকসুদ

বাংলাদেশ শুধু একটি জনবহুল দেশ নয়, অতিঘটনাবহুল দেশ। সমাজ বিশৃঙ্খল বলে এখানে ঘটে যত সব অস্বাভাবিক ঘটনা। একটি ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করার আগেই ঘটে আরেকটি ঘটনা, তাতে আগেরটি চাপা পড়ে যায়।

সমাজে নানা রকম সমস্যা থাকবেই। সেগুলো সমাধানেরও উপায় থাকবে। তবে মানুষের যত রকম সমস্যা রয়েছে, তার মধ্যে খাদ্যদ্রব্যের অপ্রতুলতার সমস্যা প্রধানতম। অন্য যেকোনো কিছুর অভাব কিছু সময় পর্যন্ত সহ্য করা যায়, কিন্তু খাদ্য ও পানির অভাব অসহনীয়। গত দেড় শ বছরে খাদ্যসংকটের কারণে বাংলাদেশ এবং উপমহাদেশের যত সরকার বিপর্যস্ত হয়ে বিদায় নিয়েছে, অন্য কোনো কারণে তা হয়নি এবং বাস্তবতা হলো পরিস্থিতি সংকটাপন্ন না হওয়া পর্যন্ত কোনো সরকারেরই টনক নড়ে না। অনেক ক্ষেত্রে টনক যখন নড়ে, তখন আর কিছুই করার থাকে না। সেটা দেখা গেছে চল্লিশের দশকে দুর্ভিক্ষের সময়, পঞ্চাশের দশকে যুক্তফ্রন্টের সরকারের দুর্ভিক্ষাবস্থার মধ্যে এবং ১৯৭৪-এ।

সম্প্রতি পেঁয়াজ নিয়ে যা ঘটেছে, তা কোনো সামান্য ব্যাপার নয়। তবে সেটি এমন এক খাদ্যবস্তু, যা না খেলে মানুষ মরে না। এক ভোক্তা টেলিভিশনে বলেছেন, তাঁর বাড়িতে ১৮ দিন যাবৎ পেঁয়াজ ছাড়াই রান্নাবান্না চলছে। কিন্তু চাল, ডাল, আটা, লবণ ছাড়া ১৮ ঘণ্টার বেশি চলা কঠিন হতো।

মজুতদারি ও মুনাফাখুরির একটা মাত্রা আছে। প্রশাসনের প্রশ্রয় ছাড়া সেই মাত্রা অতিক্রম করার ক্ষমতা তাঁদের নেই। বাংলাদেশের পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা যেমন দুঃসাহসী, মজুতদারেরা তাঁদের চেয়ে কম দুঃসাহসী নন। পেঁয়াজ নিয়ে তাঁরা যে ড্রেসরিহার্সাল দিলেন এবং তাতে তাঁদের যে বিপুল সাফল্য, তাতে ভবিষ্যতে বড় রকমের বিয়োগান্ত নাটক মঞ্চায়নে তাঁদের জন্য কোনো সমস্যাই হবে না। প্রশাসন ও সরকারের দৌড় কতটা, তা তাঁরা বুঝে গেছেন।

পেঁয়াজের দাম যা বাড়ার, তা তো বেড়েছেই, মানুষ তা মেনে নিয়েছে তাদের নিয়তি বলে, কিন্তু যা মেনে নিতে পারেনি তা হলো দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সুবচন। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে অনেকেরই সংকোচ নেই। বড় বড় কথা বলতেও লজ্জা হয় না। সর্বোচ্চ দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্তা বললেন, দু-তিন বছর পর বাংলাদেশ ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে। সব ব্যাপারে জনগণের সঙ্গে পরিহাস চলে না।

তাঁর এই কথা বিশ্বাস করত মানুষ, যদি তাঁর আগের আর একটি কথা সত্য প্রমাণিত হতো। ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা কেজি হবে, এমন কথা তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন। আমার এই লেখা যেদিন প্রকাশিত হবে, সেদিন তাঁর ১০ দিনের সময়সীমা শেষ হবে। অবশ্য বাঙালি ঠাট্টা-মশকরা পছন্দ করে। কোনো কারণে কারও বক্তব্য ভুল বা অসত্য হলে ক্ষমা চাওয়াটাই রীতি। ক্ষমা চাইতে ভালো না লাগলে দুঃখ প্রকাশ করা উচিত।

আত্মপ্রতারণায় আমরা অদ্বিতীয়। এ সম্পর্কে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে কৃষি পরিসংখ্যান নিয়ে। কর্মকর্তাদের সব মুখস্থ। কয়েক বছর আগে আমি এক উপজেলার একজন কৃষি কর্মচারীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তাঁর এলাকায় মাষকলাই চাষ হয় কী পরিমাণ জমিতে। তিনি একটা অঙ্ক বললেন এবং সেই সঙ্গে যোগ করলেন সারা দেশে কত একর বা হেক্টর জমিতে মাষকলাই চাষ হয়। আমি তাঁকে বললাম, আমার সারা দেশের খবরের দরকার নেই। আপনার এলাকার কোন মাঠে চাষ হয়, বলুন, আমি সেখানে দেখতে যাব। তিনি আমতা-আমতা করে মাথা চুকলাতে লাগলেন। যে দেশে আদমশুমারি হয় ঘরে বসে, সেখানে কৃষি পরিসংখ্যান টেবিলে বসেই হবে।

বাংলাদেশে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা কেন্দ্র ও ইনস্টিটিউটের অভাব নেই। সেসব প্রতিষ্ঠানে লোকবলেরও ঘাটতি নেই। তবে কোনো গবেষক ও বিজ্ঞানী যদি একবার কর্মকর্তায় পরিণত হন, তখন তাঁর মনোযোগ থাকে ইনক্রিমেন্ট ও পদোন্নতির প্রতি। তাঁর কাছে গবেষণার আনন্দের চেয়ে চাকরির বেতন-ভাতার আনন্দ বড় করে দেখা দেয়।

প্রায় সব ধরনের মসলা আমাদের আমদানি করতে হয়। কোনো কোনো মসলা আমদানি করতেই হবে, যেমন এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ প্রভৃতি। অধিকাংশ মানুষের ওসবের প্রয়োজন পড়ে না। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে মসলা গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে। সেখানে গবেষকেরা আছেন। আমাদের বহু কৃষিবিজ্ঞানীর অবদানও অসামান্য। উচ্চফলনশীল অনেক কিছু তাঁরা উদ্ভাবন করেছেন। সেগুলো ফলিয়ে সাধারণ কৃষকেরা কৃষিতে উন্নতি ঘটিয়েছেন। মাছ, ফলমূল ও শাকসবজি উৎপাদনে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিপুল।

কৃষিবিজ্ঞানীদের গবেষণা এক জিনিস, কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকদের গবেষণা ও পর্যালোচনা অন্য বিষয়। দেশে কোন কৃষিপণ্যের প্রয়োজন কতটা, তা কৃষিবিজ্ঞানী নন, সরকারি কর্মকর্তাদের অঙ্ক কষে দেখার কথা। জনসংখ্যা বাড়লে চাহিদা বাড়বে, সুতরাং সেই অনুপাতে উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সেইভাবে কৃষককে প্রণোদনা দিতে হবে। নাকে তেল দিয়ে ঘুমালে সমস্যা দেখা দেবেই।

সরকার অঙ্ক কষে দেখেছে যে বছরে ২৪ লাখ টন পেঁয়াজ লোকে খায় এবং এটাও দেখেছে যে উৎপাদন ১৭-১৮ টন। আমরা আমাদের পারিবারিক অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, খেত থেকে তোলার পর পেঁয়াজের যে ওজন থাকে, তিন-চার মাসের মধ্যে তার ওজন কমে যায় ১০-১২ ভাগ। সে জন্য বাংলাদেশকে ১০ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।

পেঁয়াজ-রসুনের ঘাটতি কমানোর পথ দুটি—উৎপাদন বাড়ানো এবং আমদানি করা। প্রথমটি ছিল সহজতর, অর্থনীতির জন্য কল্যাণকর, কিন্তু সেটি না করে দ্বিতীয়টির ওপর নির্ভর করা হচ্ছে; কারণ, সেটা আমদানিকারকদের পছন্দ এবং তাঁদের উপকারে আসে। অন্যদিকে কৃষকেরাই-বা আরও বেশি উৎপাদন করতে চান না কেন? তাঁদের তা না চাওয়ার সংগত কারণ রয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রতি কেজিতে খরচ হয় ২৩-২৪ টাকা। সেই পেঁয়াজ উৎপাদন মৌসুমে তাঁরা বিক্রি করেন ১৫-১৬ টাকায়। কৃষকের ছেলেমেয়েদের এক-আধ দিন ইলিশ বা রুই মাছ খাওয়ার ইচ্ছা হয়। এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ বা রুই মাছ কিনতে বিক্রি করতে হয় ৪০ কেজি পেঁয়াজ।

বাংলাদেশের জিডিপি তরতর করে বাড়ছে। জিডিপি বাড়ার জন্য আমরা ভারী শিল্পকারখানার ওপর জোর দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি বড়লোক হওয়ার জন্য শিল্পকারখানা দরকার। এ যুগে শিল্পেও উন্নতি করতে হবে। তবে শিল্পে যদি অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ভালো করতে না পারি, আমরা মরব না, কিন্তু কৃষিতে ভালো না করলে না খেয়ে মরার আশঙ্কা।

কৃষির প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি আরও ইতিবাচক হওয়া দরকার। কৃষকেরা স্যুট-কোট পরেন না বলে সরকারি কার্যালয়ে তাঁদের কদর নেই। তাঁরা সড়ক পরিবহন ও নৌপথশ্রমিকদের মতো কথায় কথায় ধর্মঘট করতে পারেন না। তাঁরা সড়কে ধান ফেলে দিয়ে যে প্রতিবাদ করেন, তা সরকারের গায়ে লাগে না।

ক্রেতা পর্যায়ে কৃষিপণ্যের দাম বাড়ার কারণ বর্তমান ব্যবস্থা। একটি পণ্য তিন-চার জায়গায় হাতবদল হয়ে ভোক্তার হাতে আসে। ফড়িয়া আছে, মজুতদার আছে, চাঁদাবাজি তো সীমাহীন। জাতীয় সংসদের মাননীয়দের অধিকাংশই হয় ব্যবসায়ী, নয় তো ব্যবসায়ীবান্ধব।

দানাদার শস্য এবং শাকসবজি প্রভৃতির ফলন বাড়ছে। কিন্তু জমি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক অতিমাত্রায় ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ালে তা হবে আত্মঘাতী। সে জন্য খুব সতর্কতার সঙ্গে সমস্যা শনাক্ত করে কৃষিনীতি প্রণয়ন করতে হবে। খাদ্যশস্যের বাফার স্টক বা পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করতে হবে, যেমন অনেক উন্নত দেশ করে।

মজুতদার, মুনাফাখোরদের প্রতি সদয় থেকে খাদ্যশস্যের ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য রোধ করা সম্ভব নয়। কৃষক পান না ধানের দাম, অন্যদিকে চালের দাম বেশি—রহস্য কোথায়? চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন অটো চালকলের মালিকেরা। কিন্তু তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করার বা নজরদারিতে রাখার ক্ষমতা রাষ্ট্রযন্ত্রের নেই। সিন্ডিকেট নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠন করে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। খাদ্যে স্বয়ম্ভরতাকে অগ্রাধিকার না দিলে শুধু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল জাতি গঠন সম্ভব হবে না।

  • সৈয়দ আবুল মকসুদ: লেখক ও গবেষক
  • কার্টসি — প্রথম আলো/ ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯

Tuesday, December 3, 2019

‘নয়-ছয়’ করে দেড় বছর, এখন আবার কমিটি

ফখরুল ইসলাম ও সানাউল্লাহ সাকিব

ব্যাংকঋণের সুদহার হবে এক অঙ্কের—দেড় বছর ধরে এ নিয়ে নানা আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ফল আসেনি; বরং ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কমে গেছে, আসছে না আমানতও।

এদিকে সুদহার না কমলেও বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এর মধ্যে গত ৯ মাসেই বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ জন্য এখন সব দোষ দেওয়া হচ্ছে ঋণের উচ্চ সুদহারকে।

দেড় বছর ধরে কাজ না হওয়ার পর গত সোমবার এ জন্য নতুন করে আবার একটি কমিটি করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। তবে এই কমিটি নিয়েও খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, সুদহারই একমাত্র সমস্যা নয়, ব্যাংকের তহবিল খরচ কমাতে হবে, শাস্তি দিতে হবে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের। সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

অর্থমন্ত্রী গত রোববার সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সে সময় তিনি বলেছেন, খেলাপি ঋণ বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে ঋণের উচ্চ সুদ। এই সুদ এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে হবে, যা কার্যকর করা হবে আগামী জানুয়ারি থেকে।

শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম এ বিষয়ে গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক অঙ্কের সুদের হারের কথা এক-দেড় বছর ধরে শুনছি। কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না। একেকবার একেক কথা বলা হচ্ছে। গত রোববার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।’

এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ‘মূল্য সংযোজন কর ও ব্যাংকের সুদ দিতে দিতেই ব্যবসায়ীদের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। সুতরাং সরকার ও ব্যাংক মিলে সিদ্ধান্ত নিলেই তো তা কার্যকর হবে না। ঘটনার পেছনের কারণ খুঁজতে হবে। আমার প্রশ্ন, সিদ্ধান্ত কার্যকরে সব পক্ষের সঙ্গে কি আলোচনা হয়েছে? বিশেষজ্ঞ মতামত কি নেওয়া হয়েছে?’

অর্থমন্ত্রী খেলাপি ঋণ বেশি হওয়ার জন্য ব্যাংকের উচ্চ সুদকে দায়ী করলেও ব্যাংকাররা বলছেন উল্টো কথা।

এদিকে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার কথা বলে ব্যাংকমালিকেরা গত দেড় বছরে সরকারের কাছ থেকে ঠিকই নানা ধরনের সুবিধা নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষিত নগদ জমা বা সিআরআর সংরক্ষণের হার ১ শতাংশ কমানো, রেপোর সুদহার ও করপোরেট কর কমানো ইত্যাদি। মাঝে আবার ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে এক পরিবার থেকে দুজনের পরিবর্তে চারজন পরিচালক এবং টানা ৩ বছরের পরিবর্তে টানা ৯ বছর বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদে থাকার বিধানও করে দেয় সরকার।

এত সুবিধা পেয়েও কেন সুদহার কমছে না—জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঋণের চাহিদা অনুযায়ী আমানত মিলছে না। সরকার ৫০ শতাংশ আমানত দিতে চাইলেও তা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ঋণ-আমানত অনুপাত সমন্বয়ের চাপ আছে। এসব কারণে ব্যাংকগুলো চাইলেও সুদহার কমাতে পারছে না।’ কম সুদে আমানত পেলে কম সুদে ঋণ দেওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।

উদ্যোক্তারা কী বলছেন — 


ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের কারণে সুদের হার বেশি, না উচ্চ সুদের হারের কারণে খেলাপি ঋণ বেশি—এ প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বইকেনা’ গল্পের একটি উদ্ধৃতির কথা মনে করিয়ে দেন। উদ্ধৃতিটি হচ্ছে, ‘বই সস্তা নয় বলে লোকে বই কেনে না, আর লোকে বই কেনে না বলেই বই সস্তা করা যায় না।’

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির জন্য উচ্চ সুদের হার দায়ী বলে মনে করেন কিছু শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী। আবার অনেকেই কেবল শুধু উচ্চ সুদকে দায়ী করতে রাজি নন। তাঁদের মতে, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা যেমন এর পেছনে রয়েছেন, ব্যাংকের মালিকপক্ষের অতি মুনাফা করার প্রবণতাও এর জন্য কম দায়ী নয়। আরও রয়েছে ব্যাংকের দুর্বল ব্যবস্থাপনা।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘দেখা গেছে, একটি প্রকল্পে ৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হলো। প্রকল্পটি চলতে গেলে আরও ২ কোটি টাকা চলতি মূলধন দরকার। কিন্তু দিচ্ছে ৫০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি পরে ব্যর্থ হয় এবং খেলাপি হয়।’

কয়েকটি ব্যাংক এবং কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকগুলো অনেক সময় যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেয় না। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকের লোকেরাই শিখিয়ে দেয়, বেশি ঋণ পেতে গেলে কীভাবে আবেদন করতে হবে। আবার ব্যাংক জেনেশুনেই খারাপ গ্রাহককে ঋণ দেয়। ব্যাংক যখন ঋণের টাকা আদায় করতে পারে না, তখনই বাধে বিপত্তি। হিসাবের খাতায় খেলাপির আকার বাড়তে থাকে।

শিল্প গ্রুপ আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন মোনেম বলেন, দেখা গেল ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প ভালোভাবে যাচাই না করেই ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে দিল। স্বাভাবিক কারণেই এই টাকা নয়ছয় হয়। সুদের হার কমাতে হবে, পাশাপাশি এ বিষয়গুলোও ঠেকাতে হবে। আর চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ হচ্ছে মরাকে আরও মেরে ফেলা। এটাও বাদ দিতে হবে। তবে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের শাস্তি পাওয়া উচিত।

ব্যাংকারদের যুক্তি —


বর্তমানে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা যে খেলাপি ঋণ আছে, তা থেকে ব্যাংকগুলোর কোনো আয় হচ্ছে না। যদিও বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হচ্ছে, নগদ ও সংবিধিবদ্ধ জমাও করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। ফলে খেলাপি ঋণের চাপ গিয়ে পড়ছে নিয়মিত ঋণের ওপর। এতেই বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংকের তহবিল খরচ, যার প্রভাবে সুদহার বাড়ছে।

ব্যাংকের সুদ হিসাব করার পদ্ধতি প্রসঙ্গে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি এম শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তহবিল ও পরিচালনা খরচ মিলেই ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের টাকা খেলাপি হয়ে পড়লে বড় সমস্যায় পড়তে হয়। ওই টাকার জন্য অন্য আয় থেকে সঞ্চিতি রাখতে হয়। আমানতকারীদেরও টাকা দিতে হয়। এসব কারণে সুদহার বেড়ে যায়। খেলাপি ঋণ কমানো গেলে সুদহার কমে আসবে।’

সব মিলিয়ে ব্যাংকাররা বলছেন, খেলাপি ঋণ নতুন রোগ নয়। আর সুদহার বাড়ে-কমে। ঋণ দেওয়ার মতো তহবিল যখন সহজলভ্য হয়, তখন ঠিকই সুদহার কমে যায়। সর্বশেষ ২০১৭ সালে সুদহার এক অঙ্কে নেমে এসেছিল।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে তারল্যসংকট আছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কম। ঠিক এই সময়ে সুদের হার কমাতে বলা হচ্ছে। সময়টা ঠিক উপযুক্ত মনে হচ্ছে না। ফলে সুদের হার না কমে উল্টো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

  • কার্টসি — প্রথম আলো/ ডিসেম্বর ৩, ২০১৯

বাড়ছে শিক্ষিত বেকার

চাহিদামাফিক জনশক্তি গড়ে তুলুন


সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষণায় দেশে মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তরুণদের এক-তৃতীয়াংশ পুরোপুরি বেকার বলে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। এই গবেষণায় দেখা যায়, শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে সম্পূর্ণ বেকার ৩৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। বাকিদের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ সার্বক্ষণিক চাকরিতে, ১৮ দশমিক ১ শতাংশ পার্টটাইম বা খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদের নেতৃত্বে একটি দল ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের শিক্ষিত তরুণদের নিয়ে ফেসবুক ও ই-মেইলের মাধ্যমে এই অনলাইন জরিপ পরিচালনা করেছে। জরিপ অনুযায়ী, শিক্ষা শেষে এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত বেকার ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ, দুই বছরের চেয়ে বেশি সময় ধরে বেকার ১৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত বেকার ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

এর আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপে দেশে মোট শ্রমশক্তির ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেকার বলে জানানো হয়েছিল। বিবিএসের জরিপের তুলনায় বিআইডিএসের অনলাইন জরিপে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি। বাংলাদেশে বেকারত্বের ভয়াবহতা জানতে কোনো জরিপের প্রয়োজন হয় না। বিসিএস ক্যাডার সার্ভিস কিংবা অন্য কোনো খাতে একটি শূন্য পদে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা দেখলেই সেটি অনুমান করা যায়।

বেসরকারি বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা এই জরিপ করলে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা হয়তো অসত্য বলে উড়িয়ে দিতেন। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের এই জরিপের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। কেবল বিআইডিএস বা বিবিএসের জরিপ নয়, দেশি-বিদেশি প্রায় সব জরিপ ও পরিসংখ্যানেই বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ বেকারত্বের তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে। কয়েক বছর আগে ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিটের জরিপে বলা হয়েছিল, বিশ্বে বাংলাদেশেই শিক্ষিত বেকারের হার সর্বোচ্চ।

দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে, এটি আনন্দের খবর। কিন্তু সেই আনন্দ মুহূর্তে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়, যখন আমরা তাদের বড় একটি অংশকে কাজে লাগাতে পারি না। শিক্ষার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা। এই শিক্ষার পেছনে শুধু ব্যক্তি বা পরিবার নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রেরও বিপুল বিনিয়োগ থাকে। শিক্ষিত তরুণদের এক-তৃতীয়াংশ যদি বেকার থাকে, তাহলে আমরা ওই শিক্ষাকে কীভাবে মানসম্মত বা যুগোপযোগী বলব?

জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার (ইউএনডিপি) এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানব উন্নয়ন সূচক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্ধিত জনসংখ্যাকে সম্পদ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল। সংস্থাটির মতে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১২ কোটি ৯৮ লাখে পৌঁছাবে, যা হবে জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশ। কিন্তু জনমিতির এই সুফল কাজে লাগাতে হলে প্রত্যেক নাগরিককে যেমন দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, তেমনি তাদের উপযুক্ত কাজের সংস্থান করতে হবে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ভিত ও মান শক্ত না করেই একের পর এক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে চলেছি, যা সনদ বিতরণ করলেও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বেকার থাকা সত্ত্বেও অনেক খাতে উচ্চ বেতন দিয়ে বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাদের যুক্তি, দেশে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। এর অর্থ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সময়ের চাহিদা মেটাতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নতুন নতুন বিভাগ ও অনুষদ খুলছে, কিন্তু সেসব বিভাগ ও অনুষদের কোনো উপযোগিতা আছে কি না, সেসব ভেবে দেখার কেউ নেই। উপযুক্ত জনশক্তি তৈরির পাশাপাশি তাঁদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হলে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। 

  • কার্টসি — প্রথম আলো/ ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯

Monday, December 2, 2019

Road Safety Uprising - Students’ most demands remain unmet

Shahin Akhter

Most of the major demands of the students placed during the countrywide student protests that erupted after the death of two Shaheed Ramiz Uddin Cantonment College students in an accident because of reckless driving at Kurmitola in Dhaka in 2018 remained unmet.

Following the student protest, the government enacted the Road Transport Act 2018 in September 2018 year and finally enforced it on November 17 this year.

Countrywide work abstention by transport workers forced the government to backtrack from the enforcement of the law on some major areas such as driving licence, overloading, fitness and modification of vehicles.

As the demands on road safety remains elusive, the fatalities on roads are on rise and the government is forming committees one after another to control accidents and bring order on roads.

Road safety experts alleged the situation on roads was deteriorating day by day. Had the demands of the students were met then, safety on roads would be established by now, they said.

Thousands of students took to the streets for more than a week after their two fellows were killed on July 29, 2018 when a reckless driver drove a Jabal-e-Noor company bus off the road and ploughed through a crowd while competing with another bus of the same company.

Amid an utter anarchy in the road sector for long, the students demanded highest punishment for the bus drivers responsible for the killing of the two, not allowing buses without fitness, driving by any unlicensed driver at any place of the country, and ban on carrying passengers by public transports in excess of their capacity.

They also demanded establishing footbridges and taking safety measures for safe movement of students, establishing speed-breakers in accident-prone areas including in front of educational institutions, taking all responsibilities by the government of the families of the deceased and injured, compelling the buses to carry students and ensuring half fare for them.

A Dhaka court on Sunday sentenced two drivers and an assistant of Jabal-e-Noor Paribahan to life-term imprisonment in the case filed over the incident.

On November 21, after a meeting with transport sector leaders following a countrywide strike, home minister Asaduzzaman Khan said the drivers could drive any vehicle with the existing licence and modified vehicles could run till June 30, 2020 and within this time the drivers would receive appropriate licences and the owners would receive update documents from the Bangladesh Road Transport Authority.

Till date the authorities are in a relaxed mood to enforce the law.

According to a data compiled by Bangladesh Police till September this year 3,060 deaths, and 3,292 injuries, and 3,009 traffic accidents were recorded and the death figure is the highest after 2008.

In 2018, 2,635 people were killed and 1,920 were injured in 2,609 traffic accidents.

The percentage of deaths in accident increased this year by around 16 per cent comparing with last year.

Road accidents took 2,513 lives in 2017, the figure was 2,463 in 2016, 2,376 in 2015, 2,067 in 2014, 1,957 in 2013, 2,538 in 2012, 2,546 in 2011, 2,646 in 2010, 2,958 in 2009, and 3,765 in 2008, the data shows.

The High Court on July 24 this year asked the owners of 4.79 lakh unfit vehicles running across the country to get fitness certificates for the vehicles from the Bangladesh Road Transports Authority within two months.

On October 23 the authority submitted a report before the High Court which said only 89,269 vehicles’ owners have collected fitness certificates in August and September following the court directive.

As per the authority, the number of registered motor vehicles in the country was around 41 lakh till July this year against which around 23 lakh driving licences were issued. It proved a huge crisis of drivers especially for driving public transports.

Recently the authorities have taken an initiative to build an underpass in front of Shaheed Ramijuddin College for safe movement of pedestrians.

Professor Mizanur Rahman, director of Accident Research Institute under the Bangladesh University of Engineering and Technology, told New Age that following the student protest, the government passed the new road law which was yet to be enforced fully.

He said the authorities should control the sick competition among the owners of the buses and reduce gap between supply and demand sides for public transports.

‘If all their demands would be met then safety on roads would be assured,’ he added.

Professor Shamsul Hoque, former director of Accident Research Institute, said the situation on roads was deteriorating day by day.

He said the students pointed at the faults in the overall system and strongly hit the base of the society’s morality.

However, the government should go for step by step solutions based on facts and findings to ensure safety on roads, he added. 

Meanwhile prime minister Sheikh Hasina on June 25, 2018 gave directives to ensure drivers’ rest every five hours, to employ alternate drivers for long-distance vehicles, training and resting facilities for drivers and their assistants, use of seatbelts while travelling, and abiding by the traffic signals.

Most of these demands and directives still remain on paper due to crisis of drivers, training facilities and infrastructures like zebra crossings.

  • Courtesy — NewAge/Dec 2, 2019 

খেলাপি ঋণ বাড়ছে না কমছে?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

আমার মনে আছে, নতুন অর্থমন্ত্রী মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার পরপরই বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না। কিছুদিন পর তিনি আবারও বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ার কোনো সুযোগই নেই। আরও কিছুদিন পর সাংবাদিকরা যখন জানালেন, খেলাপি ঋণ বেড়েছে; অর্থমন্ত্রী তখন বললেন, তিনি বিশ্বাস করেন না। খেলাপি ঋণের পরিসংখ্যান পরিবেশন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মন্ত্রী যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও বিশ্বাস না করেন, তাহলে তার বিশ্বাসের ভিত্তি কোথায়? এখন পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা যাক।

অর্থমন্ত্রীর আত্মবিশ্বাসের মূলে ছিল তার কিছু ধারণা এবং তদনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ। প্রথমেই তিনি খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে এক যুগ আগের সংজ্ঞায় নিয়ে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ তিন মাস অচল থাকার পরিবর্তে এখন ছয় মাস অচল থাকলে তাহলেই হিসাবটি খেলাপি হবে। এটি আন্তর্জাতিক খেলাপি ঋণ নীতিমালার স্খলন। তবে অর্থমন্ত্রী মনে করেছিলেন, শিথিলকরণের কারণে অনেক খেলাপিই খেলাপমুক্ত হবেন। অতএব, খেলাপি ঋণ কমে যাবে। অর্থমন্ত্রীর দ্বিতীয় ব্যবস্থাটি ছিল, দুই শতাংশ টাকা জমা দিয়ে ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত সব খেলাপি ঋণকে ১০ বছরের জন্য মাত্র ৯ শতাংশ সুদে খেলাপমুক্ত করা যাবে। ভেবেছিলেন, সব খেলাপি যদি খেলাপমুক্ত হয়ে যান, তাহলে তো দেশে আর খেলাপি ঋণ থাকবে না। কিন্তু তার এই ধারণা যে কতটা সরলীকৃত ছিল, তা এখন বোঝা যাচ্ছে।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ


বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর প্রতিটি কোয়ার্টারে খেলাপি ঋণ বেড়েছে এবং বৃদ্ধির পরিমাণ ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তবে এই হিসাবে একমত হয়নি আইএমএফ। বিশ্ব সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে, তাও খেলাপি। আবার অনেক ঋণ খেলাপির যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও লুকিয়ে রাখা হয়েছে। সব মিলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ হবে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী অবলোপনের নীতিমালাতেও শিথিলতা এনেছেন। আগে পাঁচ বছর থাকার পর অবলোপন করা যেত। সেটিকে সম্প্রতি তিন বছরে নামিয়ে আনা হয়েছে। এখন ব্যাংক মালিকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রস্তাব রেখেছেন, সময় ব্যয় না করে সঙ্গে সঙ্গেই অবলোপন করার বিধান করা হোক। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে চাপে আছে বলে মনে করা হচ্ছে।

দেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা গোড়া থেকেই বলে এসেছেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে শিথিলতা প্রদর্শন করলে খেলাপিরা উৎসাহিত হবেন। এ প্রক্রিয়ায় আদায় ব্যাহত হবে। যে কাজে উৎসাহ দেওয়া হয়, তা বেড়ে যায়। আর যে কাজে শাস্তি প্রদান করা হয়, সে কাজ কমে যায়। এ কারণে ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া হয় এবং মন্দ কাজে শাস্তি দেওয়া হয়। পৃথিবীর সর্বত্রই ব্যাংকের খেলাপিদের শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। কারণ, ঋণের টাকা ব্যাংক মালিকদের নয়। বরং এ সম্পূর্ণ টাকাই জনগণের কাছ থেকে প্রাপ্ত আমানত; যা আইন অনুযায়ী 'চাহিবা মাত্র ফেরত প্রদান' করতে হবে। কাজেই জনগণের টাকা ট্রাস্টি হিসেবে ব্যাংকারদের অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে; যাতে বিনিয়োগকৃত টাকা মুনাফাসহ সময়মতো ফেরত আসে। এখানে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশে সম্প্রতি পূর্বে বর্ণিত বিভিন্ন উপায়ে খেলাপিদের উৎসাহ প্রদান করার ফলে তারা শাস্তি থেকে শুধু মুক্তিই পাচ্ছেন না, বরং পুরস্কৃত হচ্ছেন। এতে দ্বিগুণ উৎসাহে তারা ঋণ ফেরত না দেওয়ার ব্যাপারে মনোযোগী হয়েছেন।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে কমবেশি ১০ লাখ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে; এর মধ্যে এক লাখ কোটি টাকাই নিয়মিত ঋণ। এক লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। এটি অবশ্য বর্তমান অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার আগের চিত্র। এই চিত্র এখন পাল্টে গেছে। ৯ লাখ কোটি টাকা নিয়মিত ঋণের যারা গ্রাহক ছিলেন, তাদের প্রদেয় সুদের হার এখনও ১০ থেকে ১৪ শতাংশের মধ্যে। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে। অথচ খেলাপি ঋণগ্রহীতারা সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধের। ফলে নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারীরা ৯ শতাংশ সুদের আওতায় আসার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ করে দিয়েছেন এবং খেলাপি হয়েছেন। ফলে প্রতি প্রান্তিকে নতুন খেলাপিদের কারণে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎসাহ দিলে যে মন্দ কাজের বৃদ্ধি ঘটে, এটি তার একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ।

আমরা এখানে চীনের ঘটনা উল্লেখ করতে পারি। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করার পর অনভ্যাসজনিত কারণে চীনের খেলাপি ঋণ অনেক বৃদ্ধি পায়। তখন সরকার খেলাপিদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনের বাইরেও কঠোর শাস্তির বিধান প্রচলন করে। যার মধ্যে ছিল খেলাপি হওয়া মাত্রই কোনো বিলম্ব না করে তার পাসপোর্ট বাতিল। বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা। বিমানের টিকিট ক্রয়ে বাধানিষেধ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কমিটিতে সদস্যপদ লাভে অযোগ্যতা এবং ভিআইপি বা সিআইপি হিসেবে গণ্য হওয়ার অযোগ্যতা। এছাড়া দীর্ঘ সময়ের খেলাপি হলে সরাসরি জেলে নিয়ে যাওয়া হতো। এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থার ফলাফল দ্রুতই পাওয়া গেল। কমবেশি তিন বছরের মধ্যে খেলাপির হার সর্বনিল্ফেম্ন নেমে গেল।

অর্থমন্ত্রী ও তার সমর্থক মহল থেকে এখন বলতে চেষ্টা করা হচ্ছে যে, দুই শতাংশ জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য খেলাপিমুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে দেশ আর খেলাপি থাকবে না। কিন্তু খেলাপির চেয়ে অখেলাপিরা এখন ৯ গুণ বেশি। এখন ধীরে ধীরে অখেলাপিদের সংখ্যা যদি আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকত, তাহলে মন্ত্রীর ভবিষ্যদ্বাণী যাই হোক না কেন, ব্যাংকগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। সেইসঙ্গে জনগণের সঞ্চিত অর্থ আটকা পড়লে বড় রকমের ভীতির সঞ্চার হতে পারে। এমনকি সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরেও প্রচণ্ড আঘাত আসতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এই সাক্ষ্যই প্রদান করছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের খেলাপি ঋণও কমবেশি ১০ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এত বড় দেশ হওয়া সত্ত্বেও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরে প্রচণ্ড আঘাত এসেছে। সম্প্রতি ভারতের জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। আমরা অবাক হই, যখন মন্ত্রীর মুখে শুনি, ভারতের খেলাপি ঋণও আমাদের মতোই বেশি। কিন্তু তিনি বলেন না যে, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভারতের জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধির থেকে প্রতি কোয়ার্টারেই কমে আসছে। অর্থমন্ত্রী কি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর বা শ্রীলংকার খেলাপি ঋণ হারের উদাহরণ দিতে পারেন না? এসব দেশে খেলাপির হার ১ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশের মধ্যে। চোখ থাকতে অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হবে কি?

কেন এমনটি ঘটছে? দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে গত বছর পর্যন্ত এ দেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ, ড. এআর মল্লিক, সাইফুর রহমান, এসএএমএস কিবরিয়া, এএমএ মুহিত। তারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন; কিন্তু কেউই ব্যবসায়ী ছিলেন না। এমনকি তারা কেউ সেই অর্থে ধনাঢ্য ব্যক্তিও ছিলেন না। ব্যবসায়ীরা অর্থমন্ত্রী হলে স্বার্থের সংঘাত দেখা দেয়। তারা চাইবেন নিজের এবং ব্যবসায়ী স্বজনদের আয়-উন্নতির দিকে খেয়াল রাখতে। এতে জনগণ বঞ্চিত হতে পারে। এ কারণেই বর্তমান সমস্যার সৃষ্টি।

আমরা মনে করি, অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকা উচিত পূর্বসূরিদের মতো অব্যবসায়ীর হাতে। অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ থাকতে হয় প্রকৃত রাজনীতিকদের হাতে। রাজনীতিকরা ব্যবসা করতে পারবেন না- তা নয়। কিন্তু বড় ব্যবসায়ীর দৃষ্টি থাকে আরও বড় হওয়ার দিকে এবং নিজ গোষ্ঠীকেও ওপরে টেনে তুলতে। এই স্বার্থের সংঘাত পরিহারযোগ্য।

ভারতের মতো ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আগেই বিষয়টির প্রতি সত্যিকার রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি বিশ্নেষণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি এ ব্যাপারে পেশাগত সহায়তা দেওয়ার জন্য দেশের অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ শুনে দেখতে পারেন। উল্লেখ্য, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং নিজে একজন স্বীকৃত অর্থনীতিবিদ হওয়া সত্ত্বেও এসব ব্যাপারে পাঁচজন দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদকে নিয়ে একটি পরামর্শক কমিটি করেছিলেন। আমাদের দেশেও এ উদাহরণ অনুসরণ করা যেতে পারে।

  • খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, ব্যাংকার, সাবেক ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক।
  • কার্টসি — সমকাল/ ডিসেম্বর ২, ২০১৯