— ড. মোর্শেদ হাসান খান
|
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম |
এমন একজন মানুষ সম্পর্কে কিছু লিখছি যিনি আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। তবে বেঁচে না থেকেও তিনি আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন তাঁর কৃতিত্ব ও কর্মের মাধ্যমে। তিনি হলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান শুধু একটি নাম নয়, তিনি একটি ইতিহাস। জীবিত অবস্থায়ও তিনি যেমন এ দেশের মানুষের ভালোবাসায় ধন্য ছিলেন, শত ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার সত্ত্বেও শাহাদাতবরণের চার দশক পরও তিনি এদেশের মানুষের মনিকোঠায় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আসনে আসীন হয়ে আছেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের এক অবিসংবাদিত নেতা। জাতির চরম ক্রান্তিকালে যাঁর কন্ঠে উচ্চারিত হয়েছিলো স্বাধীনতার ঘোষণা। অস্ত্র হাতে জীবনবাজি রেখে যিনি মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গণে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যাঁর নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গড়ে ওঠেছিল প্রথম ব্রিগেড ‘জেড ফোর্স’। একজন সংগঠক ও রণাঙ্গণের অকুতোভয় যোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যিনি অর্জন করেছেন জীবিত যোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ ‘বীর উত্তম’ খেতাব।
বাবা-মায়ের আদরের সন্তান বগুড়ার ‘কমল’ জাতির প্রিয় জিয়াউর রহমান একজন সফল সেনানায়ক ছিলেন। ইতিহাসে হাতেগোনা যে কয়জন সামরিক অফিসার দেশের জন্য দু-দুটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে লড়াই করার গৌরব অর্জন করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাঁদের একজন। তিনি ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে এবং ১৯৭১ সালে মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং এর অন্যতম সংগঠক হিসেবে পুরোভাগে থেকে নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনীর বর্বর হত্যাকাণ্ডের পর দিশেহারা জাতিকে দিকনির্দেশনা দেন তখনকার সেনাবাহিনীর মেজর জিয়াউর রহমান। তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ‘I Revolt’ বলে বিদ্রোহ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এরপর চট্টগ্রামে স্থাপিত অস্থায়ী বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেন। দেশকে স্বাধীন করতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। ২৭ ও ২৮ মার্চ তাঁর এ ঘোষণা বেতারকেন্দ্র থেকে বারবার প্রচারিত হয়। তাঁর উদাত্ত আহ্বানে মুক্তিপাগল দেশবাসী আশার আলো খুঁজে পেয়েছিল এবং অস্ত্র হাতে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলো। তারপর দীর্ঘ ২৬৬ দিনের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ তাজা প্রাণের রক্ত ও ৩ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বাঙালির গর্ব এ মহান মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের জুন পর্যন্ত ১ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক এবং পরে ‘জেড ফোর্স’- এর প্রধান হিসেবে দুঃসাহসী সেনানায়কের একটা আলাদা পরিচয় অর্জন করেন। যোদ্ধা ও একজন সংগঠক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি
হিসেবে জিয়াউর রহমান ‘বীর উত্তম’ খেতাব লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে জিয়ার অনন্য অবদান কেবল বংলাদেশের সরকার ও জনগণেরই স্বীকৃতি পায়নি এজন্য বহির্বিশ্বে ও তাঁর খ্যাতি বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ভারত সফরে গেলে তাঁর সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় ভারতের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নীলম সঞ্জীব রেড্ডি বলেছিলেন:
Your position is already assured in the annals of the history of your country as a brave fighter who was the first to declare the independence of Bangladesh. Since you took over the reins of government in your country, you have earned wide respect both in Bangladesh and abroad as a leader dedicated to the progress of your country and the wellbeing of your people.১
শুধু সঞ্জীব রেড্ডি নয়, জিয়ার ঘোষণার গুরুত্বের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে ভারতীয় প্রখ্যাত কূটনীতিবিদ জে এন দীক্ষিত, ট্রেভর ফিসলক, ডেভিড লুডেন প্রমুখ বিশ^খ্যাত পণ্ডিতদের রচনাতেও।
একজন সেনানায়ক হিসেবে জিয়া যেমন সফল ছিলেন, তেমনি একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেও। তিনি ছিলেন স্বনির্ভর ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। স্বাধীনতা বাঙালির জীবনের শ্রেষ্ঠতম অর্জন। একটি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে আমাদের এ স্বাধীনতা। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার এই তিনটি মূল্যবোধকে সামনে রেখেই হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। যেখানে জনগণই হবে সকল ক্ষমতার মূল উৎস। কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে তদানিন্তন সরকার জাতির এ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, কালোবাজারি ও মজুতদারি ইত্যাদির ফলে দেশে এক চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্য সংকটের ফলে ১৯৭৪ সালে দেশ এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের করালগ্রাসে নিপতিত হয়। এ দুর্ভিক্ষে আনুমানিক ৮ থেকে ১০ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করেন। অর্থনৈতিক দৈন্য-দশায় নিপতিত বাংলাদেশ আখ্যা লাভ করে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকদের উপর দমন-নিপীড়নের ফলে জননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। জাতির এ চরম দুর্দিনে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে দেশে ‘বাকশাল’ নামক একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করা হয়। জাতির বহুল প্রত্যাশিত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মূল চেতনা বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সমাধি রচনা করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নানা ঘটনার প্রবাহের মধ্য দিয়ে ৭ নভেম্বর সংঘটিত সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা ও রাজনীতির কেন্দ্রভূমিতে আসার সুযোগ লাভ করেন। তাঁর সময়োচিত দায়িত্বভার গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অস্তিত্ব ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা পায়। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম পরিচালিত সরকারে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব পালনসহ পরিশেষে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার লাভ করেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম স্বেচ্ছায় জিয়াউর রহমানের কাছে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার অর্পণ করেন। এভাবেই সেনানায়ক থেকে জিয়া একজন রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রতি দেশের জনগণের আস্থা ও সমর্থন আছে কী নাÑ তা যাচাইয়ের জন্য জিয়াউর রহমান দেশে একটি গণভোটের আয়োজন করেন। ১৯৭৭ সালের ৩ মে সেই ভোট অনুষ্ঠিত হয় এবং জনগণ বিপুল ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রতি সমর্থন ও আস্থা প্রকাশ করেন। ১৯৭৮ সালের ৩ জুন তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আয়োজন করেন। এটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ ভোটে প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এ নির্বাচনে দশ জন প্রার্থী অংশ নেয়। জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিয়াউর রহমান বিপুল ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশকেএকদলীয় স্বৈরশাসনের কবল থেকে মুক্ত এবং বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন জিয়াউর রহমানের এক অসামান্য অবদান। তাঁর উদ্যোগে ১৯৭৬ সালে জারিকৃত ‘রাজনৈতিক-দলবিধি আদেশ’ এর আওতায় প্রথমে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দলসহ ২১টি রাজনৈতিক দল সরকারি নিবন্ধন লাভ করে। পরে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের সময় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে মুজিব সরকারের আমলে সংবাদপত্রের উপর আরোপিত বিধি-নিষেধ জিয়াউর রহমানের সময় প্রত্যাহার করে এর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। সংবাদপত্র শিল্পের বিকাশের জন্য তিনি নানা ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সাংবাদিকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ দানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) জিয়াউর রহমানেরই চিন্তার ফসল। স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য প্রণীত আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়া বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন।১৯৭৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক সমাজের মিলনকেন্দ্র ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাব ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এটিও জিয়ার অবদান।
‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ প্রবর্তনের মাধ্যমে জাতিকে নতুন পরিচয়ে পরিচিত করেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের ও মতের নানা জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে। তাদের সংস্কৃতি, জীবনযাত্রার মাত্রা ও ধরণএকে অপরের থেকে ভিন্ন। তাই জিয়াউর রহমান মনে করতেন যে, ভাষা বা সংস্কৃতির ভিত্তিতে নয়, ভূখ-ের ভিত্তিতেই জাতীয়তাবাদকে গ্রহণ করা উচিত। তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ-সংস্কৃতি নির্বিশেষে সকল নাগরিকের ঐক্য ও সংহতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং এই ধারণা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার শক্তি হিসেবে বাংলাদেশে দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস চালান।
জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ। আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক ও স্বনির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য তিনি উৎপাদনমুখী রাজনীতির প্রবর্তন করেন। ১৯৭৭ সালের ২২ মে জিয়াউর রহমান তাঁর বিখ্যাত ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ঘোষিত জিয়ার এ ১৯ দফা কর্মসূচিকে বাংলাদেশের জন্য ‘ম্যাগনা কার্টা’ বা মুক্তির সনদ বলে আখ্যায়িত করা হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। এ জন্য কৃষিখাতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালের ১ নভেম্বর যশোরের উলশী-যদুনাথপুর খাল খননের মাধ্যমে ব্যাপকভিত্তিক খাল খনন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের কৃষিভিত্তিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সেচ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশব্যাপী ১৪০০০ খাল খনন করা হয়। জিয়ার সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা ও পদক্ষেপের ফলে কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটে। জিয়ার উদ্যোগে গঠিত স্বনির্ভর সমিতির তত্ত্বাবধানে গ্রামীণ জনপদে দারিদ্র্য বিমোচনের
লক্ষ্যে নানাবিধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এ ব্যাপারে জিয়ার প্রবর্তিত গ্রাম সরকারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপন অভিযান চালু করেন।মুজিব সরকারের আমলে সরকারিকরণের ফলে মৃতপ্রায় কলকারখানাগুলো বেসরকারিকরণের মাধ্যমে শিল্পখাতকে ধ্বংসের মুখ থেকে রক্ষা করেন। জিয়ার সাহসী উদ্যোগের ফলে তাঁর শাসনামলে দেশে প্রায় ৩৫০০ নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি প্রধান খাত হলো তৈরি পোশাক শিল্প। ১৯৭৭ সালে ‘দেশ গার্মেন্টস’প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জিয়া তৈরি পোশাক শিল্প খাতের সূচনা করেন। শিল্পউৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জিয়া বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়।
শিক্ষা খাতের উন্নয়ন ও বিকাশেও শহীদ জিয়ার বিশেষ অবদান রয়েছে। জিয়ার প্রতিষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন ঘোষণাপত্রের ২১ নং ধারায় বাংলাদেশে একটি ‘গণমুখী ও জীবননির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম’ চালুর প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল। উৎপাদনমূখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর শহীদ জিয়া ঢাকায় একটি “জাতীয়শিক্ষা ওয়ার্কশপ” আয়োজন করেন। এতে শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে জড়িত সারাদেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষাকর্মী এবং শিক্ষা বিশেষজ্ঞগণ উপস্থিত ছিলেন। একটি সময়োপযোগী অন্তর্বর্তী শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য ১৯৭৮ সালে প্রফেসর মুস্তফা বিন কাসিমের নেতৃত্বে একটি জাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেন। জিয়া সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারে জোর দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা পরিষদ’ গঠন করেন। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করেন। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ বিকাশের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার উপরও গুরুত্ব প্রদান করা হয়। জিয়ার সময়েই ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে সকল মানুষের স্ব স্ব ধর্ম পালনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়। নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়া ‘গণশিক্ষা কর্মসূচি’ প্রবর্তন করেন। শিক্ষার প্রসারে গ্রন্থাগারকে গুরুত্ব দিয়ে ১৯৮০-৮১ অর্থ বছরে ‘থানা পাবলিক লাইব্রেরি কাম অডিটোরিয়াম স্থাপন’ শীর্ষক একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে বাংলাদেশের এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণকল্পে জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন। শহীদ জিয়া জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (NITRO) প্রতিষ্ঠা করেন।
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাখাতেও জিয়া মূল্যবান অবদান রাখেন। তিনি পল্লী চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন এবং প্রথম বছরেই ২৭০০০ জনকে পল্লী চিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ১৯৭৮ সালে কলেরা হাসপাতাল (আইসিডিডিআরবি), দক্ষ নার্স তৈরির লক্ষ্যে ৫ জানুয়ারি ১৯৮১ সালে মহাখালীতে নার্সিং কলেজ এবং ১৯৮১ সালের ৩ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট জিয়া জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায়ই নিপসম, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান ও ইপিআই প্রতিষ্ঠিত হয়। ৫০ শয্যার ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, পিজি হাসপাতালের সি-ব্লক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটসহ চিকিৎসকদের জাতীয় প্রতিষ্ঠান বিএমএ ভবন এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। জিয়া জাতীয় জনসংখ্যা পরিষদ এবং এর সাথে স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণ বিভাগকে যুক্ত করেন।
জনসংখ্যার অর্ধেক নারী সমাজকে উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে জিয়া নানাবিধ পদক্ষেপ হাতে নেন। নারীর উন্নয়ন, অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে প্রথম নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই সর্বপ্রথম চাকুরি ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য শতকরা ১০ ভাগ কোটা নির্ধারণ করেন। মহিলা পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। কর্মজীবী মহিলাদের সুবিধার্থে তিনিই প্রথম ‘কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল’ নির্মাণ করেন। জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ১৫ থেকে ৫০ এ উন্নীত করেন। ১৯৮০ সালে যৌতুক বিরোধী আইন প্রণয়ন করেন। জিয়াই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মহিলা রাষ্ট্রদূত ও মহিলা অডিটর জেনারেল নিয়োগ করেন।বেকারযুব সমাজকে দক্ষ করে গড়ে তোলা এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে জিয়া ‘যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কেবল দেশে কর্মসংস্থান নয় বিদেশে প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়। বিশ^বাজারে শ্রমশক্তি রফতানিতে বাংলাদেশের আজকের যে সাফল্য তার দ্বার উদ্ঘাটনের কৃতিত্ব প্রেসিডেন্ট জিয়ার। ১৯৭৮ সালে কুয়েতে ৬০৮৭ জন শ্রমিক পাঠানোর মাধ্যমে বিদেশে মানবসম্পদ পাঠানোর সূচনা করেন।
শিশুর সুপ্ত মেধা বিকশিত করার সুবর্ণ সুযোগ করে দিতে ১৯৭৬ সালে শহীদ জিয়া বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৫ জুলাই ১৯৭৭ সালে পুরনো হাইকোর্ট ভবনের পশ্চিম পাশ্বের তিনি শিশু একাডেমির নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন। শিশুদের বিনোদনের লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালে শাহবাগে জাতীয় শিশুপার্ক স্থাপন করেন। শিশুর স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও পরিচর্যার জন্য ঢাকার শ্যামলীতে তিনি শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৬ সালে শিশুদের সাংস্কৃতিক প্রতিভা বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে বিটিভিতে ‘নতুন কুঁড়ি’ নামক প্রতিযোগিতা চালু করেন।
সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশে প্রেসিডেন্ট জিয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশী জাতির মননের প্রতীক বাংলা একাডেমি। এর উন্নয়নে তিনি ‘বাংলা একাডেমি অর্ডিন্যান্স ১৯৭৮’ প্রণয়ন করেন। চলচিত্র শিল্পের বিকাশের জন্য জিয়া ফিল্ম ইনস্টিটিউট স্থাপন করেন। ১৯৭৯ সালের ৯ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৭৭) চালু করেন। জিয়ার আগ্রহেই ১৯৮১ সালের মার্চ-এপ্রিলে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ অনুষ্ঠিত হয়। উপজাতীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে রাঙ্গামাটিতে ‘উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট’ (বর্তমান নাম ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট’) এবং নেত্রকোণার দুর্গাপুরের বিরিশিরিতে ‘উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালে জিয়া ঢাকায় এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। ১৯৭৮ সালে ৪ টি বিভাগীয় শহরে ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন করেন।
বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল, জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে প্রেসিডেন্ট জিয়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে এক নতুন যাত্রা শুরু করেছিলেন। ১৯৭৭ সালের ৩১ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সভায় জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে এবং দেশটি নিজের পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে’। আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে বিভিন্ন দেশের সাথে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করেন। জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ইরান-ইরাক যুদ্ধ বন্ধে তাঁকে মধ্যস্থতার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল। তাঁর সময়ে বাংলাদেশ মুসিলম বিশ্বের বৃহৎ সংগঠন ওআইসিতে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে এবং তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ লাভ করে। জিয়া পেশাদার কূটনীতিবিদ সৃষ্টিতেও অবদান রাখেন। ১৯৮০ সালের ২৬ ডিসেম্বর জিয়া বাংলাদেশী কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকায় ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) প্রতিষ্ঠার ধারণার উদ্ভাবন করেন। এ জন্য তাঁকে সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা বলা হয়।
একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে প্রেসিডেন্ট জিয়া বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় দফতর প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৭ সালে শহীদ জিয়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রবর্তন করেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এ সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়। ১৯৫২ সালের বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য জিয়াউর রহমান ‘একুশে পদক’ নামক আরেকটি পুরস্কার প্রবর্তন করেন। এটি রাষ্ট্রীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তি। সেনা ছাউনির আবেষ্টনীতে তাঁর কর্মজীবনের শুরু হলেও তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই গণমানুষের নেতা। জিয়াউর রহমান যে জনগণের কতটা কাছাকাছি গিয়েছিলেন এবং জনগণ যে তাঁকে কতটা কাছে টেনে নিয়েছিল তার বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে লরেন্স জায়রিং এর লেখায়।
‘A people’s President’ সাব হেডিং-এ লরেন্স জায়রিং তার গ্রন্থে লিখেছেন:
Zia ingratiated himself with the peasant masses. They received his primary attention and whenever his schedule permitted, he helicoptered around the country, dropping out of the sky often unannounced to view peasant conditions, first hand and to discuss the methods and the resources available to raise them from their poverty. ২
জীবনের শাসনামলের মতো তাঁর জীবনরেখাও দীর্ঘ ছিল না। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্ব ও দক্ষ পরিচালনায় বাংলাদেশ যখন ক্রমশ স্বনির্ভরতার পথে ধাবিত হচ্ছিল তখনই একটি কুচক্রি মহল বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১৯৮১ সালের ৩০ মে ভোর রাতে একদল বিবেকবর্জিত বিপথগামী সেনা সদস্য চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অবস্থানরত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের এ ঘটনায় গোটা জাতি শোকবিহ্বল হয়ে পড়ে। জিয়ার শাহাদাতের ১৫ দিনের মাথায় ১৯৮১সালের ১৫ জুন বহুল প্রচলিত ‘News Week’ পত্রিকায় নিবন্ধকার Fred Brunning এবং James Pringle যৌথভাবে সদ্য শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। যার একাংশে লেখা ছিল:
Black bordered pictures of the slain man were pinned to rickshaws peasants fasted to express their grief. And nearly 2 million mourners jammed the streets of Dhaka to mourn Ziaur Rahman, president of Bangladesh and symbol of impoverished nation's struggle for self respect. For many Rahman's assassination by army dissidents dashed hopes for the future. Now progress will stop, the country will go down, said Tazul Islam, 50 a railway clerk. there are no more good leaders. ৩
জিয়ার শাহাদাতের পর এরকমই ছিলো বাংলাদেশের বাস্তবতা। জিয়াউর রহমানের হত্যার ষড়যন্ত্রে যুক্ত কুচক্রীদের ধারণা ছিল তাঁর শাহাদাতের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে জিয়ার আদর্শেরও পরিসমাপ্তি ঘটবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শের ঝা-া হাতে তুলে নেন, তাঁর সুযোগ্য সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া। নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তিনি এগিয়ে যান। বাংলাদেশের মানুষও পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তাঁকে আপন করে নেন। জনমানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনে বেগম খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশকে সেবা ও সুশাসন উপহার দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, যে জিয়া ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে জিয়ার ঐতিহাসিক অবদানকে মুছে ফেলার সর্বগ্রাসী অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্যও অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছ। জিয়া পরিবারকে রাজনীতিতে থেকে বিযুক্ত করার সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ হিসেবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আপোসহীন নেত্রী হিসেবে সুপরিচিত ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্তরীণ রাখা হয়েছে। চক্রান্ত করে জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র এবং যোগ্য উত্তরসূরী দেশনায়ক তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ইতিহাসের শক্তি অবিনশ্বর। ষড়যন্ত্র করে ইতিহাসের গতিপথকে সাময়িক সময়ের জন্য ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা যায়, কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে ইতিহাসের সত্য উদ্ভাসিত হবেই। জিয়ার অবদানকে খাটো করার যত অপচেষ্টাই করা হোক না কেনো, তিনি অমর হয়ে আছেন স্বমহিমায় এবং ভবিষ্যতেও জ্যোতির্ময় হয়ে থাকবেন এ দেশের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
|
ড. মোর্শেদ হাসান খান |
— লেখক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহসম্পাদক, বিএনপি ও সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র —
১। Z, M Shamsul Haq, Bangladesh in international Politics, Dhaka 1993, P.96
২। Lawrence Ziring, Bangladesh : from Mujib to Ershad : An Interpretive Study, p. 146 3
৩। News Week, 15 June 1981