— শওকত মাহমুদ
‘কোনও ইতিহাস স্বত্বের ইতিহাস নহে, তাহা সত্যের ইতিহাস। যে মহান সত্য নানা আঘাত-সংঘাতের মধ্য দিয়া পরিপূর্ণ হইয়া উঠিতেছে’ — রবীন্দ্রনাথ
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন সত্যটি আঘাত-সংঘাতে পূর্ণ হয়ে উঠছে? ফ্যাসিবাদের চলমানতা, না গণতন্ত্রের পুনরুন্মেষ? জালিমের রোষাগ্নি, না মজলুমের উত্থান? কোনটা চলবে আর কোনটা ঘটবে? মনে হতে পারে, দেহে-মনে ফ্যাসিবাদ মেখে বসে আছে যে স্বৈরাচার, তার বুঝি অবসান নেই। বিধ্বস্ত গণতন্ত্রের ভাগাড়ে বাংলাদেশ যেন পচতেই থাকবে। এক নেতার এক কন্যার মালিকানার যে গড়াপেটা ইতিহাস, তা এমন এক দ্ব্যর্থ উপসংহারে একমত যে যত গর্জে তত বর্ষে না। বজ্রপাত সাময়িক। তা দেখে জনমত ঠাহর করা ভুল। প্রকৃত জনমত হচ্ছে ভোরের শিশিরের মতো, নীরবে-নিঃশব্দে প্রতি বর্গইঞ্চি মাটি ও তৃণমূলকে ছেয়ে ফেলে। সত্যের উপলব্ধি সেখানেই। ইতিহাসের চালচলন নিয়ত সত্যাভিমুখী। জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা, ৭ নভেম্বরের জাতীয় বিপ্লবে সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের উচ্চ নিনাদ, এক বলিষ্ঠ ও আধুনিক বাংলাদেশ গঠনে শহীদ জিয়ার সুকীর্তির সম্ভার এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার তা বিকশিত করার সফল অভিযাত্রা—সর্বোপরি স্বৈরাচারবিরোধী আপসহীন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এক নতুন বিএনপি নির্মাণ ইতিহাসেরই এক সোনালি অধ্যায়। এই সত্যকে উপড়ে ফেলার দেশীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র বারবার ব্যর্থ হয়েছে।
ইতিহাসের নির্দেশ হচ্ছে, অন্যায়-অনিয়ম ও পরনিন্দা আর খুনাখুনির মধ্য দিয়ে জালিম সরকারের যে প্রলম্বিত অবৈধ শাসন, তার ইতি আসন্ন। দিন বদলাবেই এবং তা হবে ইতিহাসের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী চরিত্র খালেদা জিয়ার হাত ধরেই। এই সত্যটাই সুবহে সাদিকের মতো দৃশ্যমান। কেন এবং কিভাবে? পতনের গল্পটা কোত্থেকে উঠবে? এর আখ্যান-ব্যাখ্যানই বা কী? মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে দণ্ড দেওয়া থেকে? নাকি সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচন থেকে? ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ক্রান্তিলগ্নে এখন বাংলাদেশ। এর প্রতিটি জনপদই গণতন্ত্রের সুতীব্র আকাঙ্ক্ষায়, সভ্যতা ও আইনের শাসনের অসহনীয় তৃষ্ণায় অস্থির হয়ে উঠেছে এবং সেই গণবিস্ফোরণ ঘটবে বেগম জিয়ার ঈমানি নেতৃত্বে এবং জিয়াসন্তান অসম্ভব জনপ্রিয় তরুণ নেতা আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের সেনাপতিত্বে। এই সত্যটাই আঘাতে-সংঘাতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সহ্যের অতীত রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত নিপীড়নের কঠিন ঝঞ্ঝায় শুধু প্রত্যয়-নিষ্ঠার ওপর ভর করে, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য, সভ্যতার এক নতুন জাগরণের জন্য বেগম জিয়া সর্বাত্মক বিজয় ছিনিয়ে আনবেনই। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, একমাত্র বেগম জিয়ারই সক্ষমতা আছে এবং তা দুইবার করে ইতিপূর্বে তিনি দেখিয়েছেনও।
ইতিহাসের এই আলোকিত সত্যকে কে অস্বীকার করবেন যে দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা নিয়ে বিরাজমান। সবচেয়ে বেশি আসনে নির্বাচিত হওয়ার কৃতিত্ব তাঁরই। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। দেশবাসীর অকুণ্ঠ জনসমর্থন আর সুতীব্র সহানুভূতি তাঁকে ঘিরে আছেই। রাস্তায় নামলেই লাখো মানুষের ঢল। তরুণরা তাঁর গাড়ি ঘিরে রাখে লৌহবেষ্টনীর মতো। রাজনীতির শুরুই হয়েছে এরশাদের স্বৈরশাসনকে ‘মানি না’—এই বজ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগ এবং স্বৈরাচারী এরশাদের অশুভ আঁতাতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নৈরাজ্য-নীতিহীনতার ধ্বংসস্তূপে পড়ে আছে। তা থেকে বাঁচানোর একমাত্র উজ্জ্বল বাতিঘর খালেদা জিয়া। বুকভরা সাহসে লড়াইটা জনগণের পক্ষে একাই করেন। নব্বইয়ে তিন জোটের রূপরেখা থেকে আজ পর্যন্ত সেই সৎ, নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি তিনি ধরে রেখেছেন। কেউ বলতে পারবেন না, তিনি বাংলাদেশের কোনো অবৈধ শাসনকে ‘আই অ্যাম নট আনহ্যাপি’ অথবা ‘আমার আন্দোলনের ফসল’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এরশাদ এবং মঈনউদ্দীন-ফখরুদ্দীনের স্বৈরতন্ত্রকে বেগম জিয়া অনমনীয় আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিদায় করেছেন। বর্তমান দুনিয়ায় এমন কোনো রাজনৈতিক নেতার কৃতিত্ব আছে দুটি সামরিক শাসন হটানোর? ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সংসদীয় গণতন্ত্রকে খুন করেছিল। বেগম জিয়া তা ফিরিয়ে আনলেন।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা অনিবার্য প্রধানমন্ত্রী—এমন ধারণায় ইতিহাসকে যখন সাব্যস্ত করা হচ্ছিল, অলক্ষ্যেই সেই শিশিরভেজা সত্যটি দৃশ্যমান হলো। নাহ! আন্দোলনের সাচ্চা নেত্রী বেগম জিয়াই প্রধানমন্ত্রী, তাঁর হাতে গড়া নতুন বিএনপিই সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। বেগম জিয়ার গণতন্ত্রবোধ পরিমাপে একটি দৃষ্টান্ত অবশ্য উল্লেখ্য। ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন হওয়ার বিধান ছিল ওয়ার্ড কমিশনারদের ভোটে। এতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী জেতে। কিন্তু তিনি মেয়র পদকে জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হওয়ার বিধান করলেন। আর সংবিধানের প্রতি আনুগত্য? তিন জোটের রূপরেখা অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টির তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার যুগপৎ আন্দোলন ছিল নব্বইয়ের দশকে একটি অসাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। সংসদ থেকে আগেই পদত্যাগ করে ওই সব দল বেগম জিয়াকে এই বিপদে ফেলতে চেয়েছিল যে তিনি ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেন সংসদে এসংক্রান্ত বিল পাস করাতে না পারেন। তিনি যেন কোনো সংবিধানসম্মত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না পারেন। পর্দার অন্তরালে ওই অশুভ আঁতাত সামরিক অভ্যুত্থানের প্ররোচনাই দিচ্ছিল। এটা হতো বেগম জিয়ার সারা জীবনের জন্য কলঙ্ক। কিন্তু বেগম জিয়া শুধু সংবিধান সংশোধনের নিমিত্তে ১৯৯৬-তে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন দিলেন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে এই চক্রান্ত নস্যাৎ করলেন। জেনারেল নাসিমের ক্যু হয়েও হতে পারল না। রাজনীতির নীতিনৈতিকতা খালেদা জিয়া জীবনজুড়ে মেনে চলেছেন। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে যাননি। ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০১৪ তার উদাহরণ। এবারের লড়াই তাঁর চূড়ান্ত লড়াই। হাসিনা সরকারের অধীনে ভোট নয়। আজ প্রমাণ হয়েছে, ২০১৪-তে ভোটে না গিয়ে তিনি কত বড় প্রজ্ঞা ও নৈতিক ধারাবাহিকতার পরিচয় দিয়েছেন। গোটা বিশ্ব আজ একমত, বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন মানে ৩০০ আসনে স্বদলীয় প্রার্থীর অর্ধেকের বেশি বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়া।
শুধুই কি গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্য খালেদা জিয়া চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন? তাঁর দেশ পরিচালনাকালে আইনের শাসন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সর্বত্র প্রশংসিত। ঢাকা থেকে সব মহাসড়ক দিয়ে বাইরে গেলে দুই পাশে আজ যে শুধু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পস্থাপনার সম্ভার, তা তাঁর আমলেই। ক্ষুদ্রঋণের ব্যাপকতার দরুন দশ গ্রাম মিলে সাপ্তাহিক হাটের বদলে প্রত্যেক গ্রামে আজ বাজার বসে, টাকা দিয়ে লেনদেন হয়। নারীরা ক্ষুদ্রঋণে স্বাবলম্বী—এটা তাঁর সাফল্য। খাদ্যে, মাছে স্বয়ম্ভরতা, নারীশিক্ষার বিপ্লব, রপ্তানির সমৃদ্ধি, সবচেয়ে বড় কথা ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৭০ হাজার কোটি টাকার মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬.৭-এ পৌঁছার অবিশ্বাস্য কাহিনির নির্মাতা বেগম জিয়াই। আজকের স্বৈরাচারের মতো গণতন্ত্র হত্যা করে উন্নয়নের যজ্ঞে তিনি মাতেননি। এই উন্নয়ন হচ্ছে দুর্নীতিতাড়িত। খালেদা জিয়া গণতন্ত্র অর্থাৎ মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে উন্নয়ন করেছেন। লোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের ভাষায় যা হচ্ছে freedom oriented development বা অধিকারভিত্তিক সমৃদ্ধি।
প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী—যে পদেই থাকুন বা না থাকুন, বেগম জিয়া রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে সর্বদাই। তাঁর গণতান্ত্রিক ঔদার্যকে উপহাস করা হোক, তাঁকে নিয়ে গিবত, কটুকাটব্য যতই বর্ষিত হোক, তাঁকে ঘরছাড়া করা হোক বা বাড়ি ও অফিসে অন্তরিন রাখা হোক, তাঁর ওপর মরিচের গুঁড়া স্প্রে করা হোক, তাঁর গাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করুক, তাঁর পথের দুপাশে উদ্বেলিত জনতাকে পুলিশ পেটাতে থাকুক, বেগম জিয়া আছেন অবিচল। মামলার তারিখ যত দ্রুতই দেওয়া হোক, তিনি হাসিমুখে আদালতে যান, ঠায় বসে থাকেন। তাঁকে জনসভা করতে দেওয়া হয় না, সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করতে বাধা দেওয়া হয়। কেননা তাঁর কথায় মানুষ উদ্বোধিত হয়।
বিশেষ করে ২০০৭ থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্ত তাঁর কেটেছে বাংলাদেশ ও তার গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায়। সাধারণ মানুষ, দলের নেতাকর্মীর জন্য তাঁর সহানুভূতি ফুরায় না। অপার তাঁর নিজস্ব মনোবেদনা। পারিবারিকভাবে নিঃসঙ্গ। এক-এগারোর সময় জেলে ছিলেন, মৃত্যুশয্যায় মাকে দেখতে পারেননি। দুই ছেলেকে জেলে নির্যাতন করা হচ্ছে। তারেক রহমানকে মেরে ফেলতে চাইছিল এক-এগারোর বর্বরকুল। কী বিভীষিকার দিনগুলো ছিল তখন! রাজনীতি থেকে বিয়োগ করার জন্য কী চাপ, বিদেশে জোর করে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু বেগম জিয়া বেগম জিয়াই। দেশ ছেড়ে, দেশের জনগণকে ছেড়ে তিনি বিদেশে গেলেনই না। তারেক রহমান মুক্তি পেয়ে যেদিন পিজি হাসপাতালে, কী অঝোর কান্নায় জড়িয়ে ধরে ছিলেন সন্তানকে! মানুষ দেশনেত্রীর সেই কান্নায় কেঁদেছিল। আজ তারেক রহমান মিথ্যা মামলায় মামলায় দুর্বিষহ অবস্থায় বিদেশে। দুর্নীতির খলনায়ক বানানোর হাজারো অপচেষ্টা বিফলে গেছে। তিনি দেশে আসতে পারেন না। আরাফাত রহমান কোকো ফিরে এসেছিলেন, কিন্তু লাশ হয়ে। সরকারের নির্যাতনে কষ্টে কষ্টে ওই প্রাণবন্ত তরুণটি মরে গেল। জানাজার নামাজে লাখ লাখ মুসল্লি অশ্রুভেজা চোখে তাতে অংশ নিল। ২০০৮-এর নির্বাচনের সময় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের একাংশে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘মানুষ হিসেবে আমি ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে ছিলাম না। ব্যর্থতার গ্লানিও আমাকে অনেক সময় স্পর্শ করেছে; কিন্তু যে সীমাহীন কুৎসা এবং অপপ্রচারের শিকার আমাকে হতে হচ্ছে, সেটা কি আমার প্রাপ্য? আপনারা দেখেছেন, অপপ্রচারের পথ ধরেই আমাকে আপনাদের কাছ থেকে মাইনাস করার, বিদেশে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা হয়েছে। এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে আমাকে বিনা অপরাধে ছয় মাস গৃহবন্দি ও এক বছর নির্জন কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে, আমি আমার মায়ের মৃত্যুর সময়ও তাঁর পাশে থাকতে পারিনি। গুরুতর অসুস্থ সন্তানদেরও দেখতে দেয়া হয়নি। তার পরও যত দিন বাঁচি, আপনাদের মাঝেই থাকব। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশই আমার একমাত্র ও শেষ ঠিকানা।’
অবাক করার বিষয় হচ্ছে, ক্রসফায়ারে নিহত ও গুমে নিখোঁজ স্বজনরা এবং নানা নির্যাতনে ক্লিষ্ট মানুষরা যখন বেগম জিয়ার সান্নিধ্যে যান, তখন তিনি এমনভাবে সান্ত্ব্তনা দেন, যেন তাঁর কোনো নিজস্ব বেদনা নেই। তাঁরা আশ্চর্য হয়ে যান এই মহিলার অসম্ভব মনের জোর দেখে। জীবনভর সংগ্রামই করে চলেছেন, তবু মাথা নোয়াবার নয়। মহান স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী, হানাদার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহী ও যুদ্ধ সূচনাকারীর সহধর্মিণী হিসেবে পরিবারসহ বন্দি ছিলেন। রাষ্ট্রপ্রধান, সেনাপ্রধানের স্ত্রী হিসেবে সংসারে নিভৃতে ছিলেন। জিয়া যেমনিভাবে দরখাস্ত করে ক্ষমতার মঞ্চে আসেননি, তেমনি খালেদা জিয়াও বিএনপির চেয়ারপারসন স্বেচ্ছায় হননি। দল ও জনগণের অনুরোধে ওই দায়িত্ব নিয়ে কী সংগ্রামী জীবনকেই না যাপন করছেন! সর্বশক্তিমান আল্লাহর রহমত তাঁর প্রতি আছে। নইলে এমন রাজনৈতিক নেতা কে আছেন, যাঁর প্রতি নির্যাতনের কুঠারাঘাত প্রতিনিয়ত বর্ষিত হয়। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্বে বিএনপি আজ সুবিশাল দল।
বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুছে দিতে কতই না হিংস্র প্রয়াস চলছে! কিন্তু রাজনীতি করার, দেশটাকে বাঁচানোর, জাতিকে গণতন্ত্র দেওয়ার ইচ্ছাটা কখনো তাঁর মনে মরেনি, মরবেও না। ৩৫ বছরের রাজনীতিতে তিন নম্বর স্বৈরশাসনকে গণজাগরণের মধ্য দিয়ে বিদায় দিতে তিনি দৃঢ়সংকল্প। তাঁর চূড়ান্ত বিজয় অবশ্যম্ভাবী।
বেগম জিয়ার মতো অসামান্য রাজনৈতিক নেত্রীর পক্ষেই মানুষকে এমন সভ্য স্বপ্ন দেখানো সম্ভব, যখন তিনি বলেন, ‘শরতের আকাশে সাতটি রঙের বিচিত্র প্রভাব নিয়ে রংধনু যেভাবে মনোরম সৌন্দর্যের বিচ্ছুরণ ঘটায়, আমরা চাই সকল মত ও পথকে নিয়ে এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি লালন ও পরিপুষ্ট করতে, যে সংস্কৃতি বাংলাদেশকে একটি রংধনু জাতিতে (rainbow nation) পরিণত করবে। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ও ভবিষ্যত্মুখী এক নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। এ জন্য নতুন এক সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছতে বিএনপি সচেষ্ট হবে (ভিশন-২০৩০)।’ সেদিন দূরে নয়, মেগাদুর্নীতি, লোমহর্ষক গুম-খুন, অবিশ্বাস্য ভোট চুরি ও লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতার ঘটনাগুলো উদ্ঘাটিত হয়ে যাবে। বেগম জিয়ার ধৈর্যে আমরাও ধৈর্যশীল। ফারসি ভাষায় একটি প্রবাদ আছে, ‘দের আয়েদ দুরস্ত আয়েদ’। যা দেরিতে আসে, সাজানো-গোছানোই আসে। এক দশকের অন্ধকারের সমাপ্তি বেগম জিয়ার হাতেই।
- লেখক ভাইস চেয়ারম্যান, বিএনপি এবং সাবেক সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিএফইউজে । লেখাটি পূর্বে প্রকাশিত।
No comments:
Post a Comment