মোঃ মিজানুর রহমান
মানুষের জীবন-জীবিকা, শারীরিক সুস্থ্যতা, মানসিক প্রশান্তি আর তেজো-বুদ্ধিদীপ্তে খাদ্যপণ্য অপরিহার্য। প্রতিটি পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে নিত্য খাদ্য ব্যবস্থা। নিত্য খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে গেলে মানুষের খাদ্য গ্রহণমাত্রা সঠিক থাকে না বরং কমে যায়। ফলে পুষ্টির অভাব দেখা যায়। আর পুষ্টিহীনতা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ সর্বোপরি রাষ্ট্রকে প্রভাবিত করে। তাই প্রতিটি দেশে নিত্য খাদ্য পণ্যের দাম মানুষের ক্রয় সীমার মধ্যে রাখতে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায়-আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর প্রতি বছরই নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়তে থাকে- যা নিম্নে উল্লেখিত ছক দেখলে অনুমান করা যাবে।
সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, খিলগাঁও ও শান্তিনগর বাজারে নিত্যপণ্যের দাম সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রতি কেজি সাদা আলু ২৫ টাকা, লাল আলু ৩০ টাকা, বেগুন, করলা ও পটল ৬০-৭০ টাকা, ঢেরস ৬০ টাকা, শিম ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, বরবটি ৯০-১০০ টাকা, শসা ৬০-৮০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, টমেটো ৯০-১০০ টাকা, লাউ (আকারভেদে) ৬০/৭০/৮০+ টাকা, মিস্টি কুমড়া (আকারভেদে) ৭০/৮০/১০০+ টাকা, আদা ও রসুন ১২০ টাকা, সয়াবিন তেল (প্যাকেটজাত) প্রতি লিটার ১৫৩ টাকা, আটা ৪০ টাকা, ময়দা ৫০ টাকা, মোটা চাল ৫২ টাকা, সরু চাল ৭০ টাকা থেকে বিভিন্ন দামের, হাসের ডিমের হালি ৫৫-৬০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬০+ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ২৫০+, গরুর গোস্ত ৬০০ টাকা, খাসির গোস্ত ৯০০-৯৫০ টাকা এবং মাছের দাম প্রকারভেদে বিভিন্ন রকম। করোনা মহামারীর কারণে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা সংকুচিত হওয়ায় ও সেই সাথে নিত্য পণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী হওয়ায় জীবন-যাপনে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর থেকেই নিত্য পণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। বর্তমান আওয়ামী সরকারের সময় ও বিগত বিএনপি সরকারের সময় নিত্য পণ্যের দামের তুলনামূলক চিত্র নিম্নে দেয়া হলো।
দেখা যায় বিএনপি’র তুলনায় আওয়ামী লীগের সময়ে নিত্য পণ্যের দাম ৩-৬ গুণ বেশী।
বছরে বছরে দাম বৃদ্ধি পেতে পেতে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কাট-ছাট করতে করতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। নিত্যপণ্য কিনতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সহনীয় পর্যায়ে দাম ধরে রাখতে ব্যর্থ আওয়ামী লীগ সরকার। মানুষ কিছু বলতে পারে না-অজানা আতংকে। অজানা আতংক এই জন্য যে, মানুষ তাদের অধিকার তথা মুক্তমত, মানবাধিকার, ভোটাধিকার বিষয়ে বলতে গেলে বা গণমানুষের পক্ষে কোন সংগঠন বা সংস্থা বলতে গেলে বা লেখতে গেলে হতে হয় নির্যাতিত, নিপীড়িত, হামলা-মামলা, জুলুম, জেল-রিমান্ড; এমনকি গুম বা অপহরণ এর শিকার। অধিকার আদায়ে সোচ্চার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর সম্বলিত বহু মানুষ আতংকে বাসায় ঘুমাতে পারে না বা এলাকায় থাকতে পারে না।
করোনা মহামারীর এ সময়ে অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্য, আয়ের উৎস অচলাবস্থা। অনেক মানুষ চাকরি বা কর্ম হারিয়েছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ভাসমান মানুষ তাদের পুজি খুঁয়েছে। আনেকে বাসা-বাড়ী ছেড়ে দিয়ে গ্রামে গেছেন। মোবাইল কোম্পানীর দেয়া তথ্যমতে মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ে ১ কোাটি ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা শহরে বাসা-বাড়ী ছেড়ে দেশে গেছেন। অনেকে পরিবার দেশে বা গ্রামে রেখে শহরে মেসে সিট ভাড়া করে থাকছেন। অনেকের বেতন শতকরা ৪০ ভাগ কমেছে। অসহায়, দরিদ্র্য মানুষের জন্য সরকারের সহায়তার টাকা ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে একই মোবাইল নাম্বার বারবার ব্যবহার করে একই ব্যক্তি একাধিকবার টাকা তুলে নিজেদের পকেটে ভরছে-যা বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানা যায়। ফলে অসহায়, দরিদ্র্য মানুষের ক্ষুধা আর কান্না একাকার হয়ে মিশে যাচ্ছে মানবাধিকারের কৃষ্ণ গহ্বরে। এক অসহনীয় অবস্থায় মানুষ বসবাস করছে। ক্ষমতাসীনদের চাল বা গ্যাসের ক্ষেত্রে ভূর্তুকি বা অন্য কোন পন্থা আবলম্বন করে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার সহনীয় পর্যায়ে নিত্য পণ্যের দাম ধরে রাখতে বিধি-ব্যবস্থা গ্রহণ অনস্বীকার্য ছিল বলে মনে করা হয়। কিন্তু তারা তা করেননি বরং উন্নয়নের জোয়ারের কথা বললেও মানুষের যাপিত জীবনের আর্থ-সামজিক এই প্রেক্ষাপটে বলা যায় যথার্থ উন্নয়ন হয়নি। কেননা, মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সাধ্য অনুযায়ী দামের উর্ধ্বগতির কারণে ক্রয় করতে পারছে না। মাসে মাসে বাসা ভাড়া তো আছেই। আয়-ব্যয় হিসেবের কঠিন যাতাকলে আত্ম-মর্যাদায় বেঁচে থাকা যেনো মানুষের দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। উন্নয়ন গল্পের ছিটে-ফোটা তাদের যাপিত জীবনে দেখা যায় না। সাধরণ মানুষের প্রশ্ন তাহলে উন্নয়ন কি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা শ্রেণীর বাহুডোরে? কেননা, ঘরে ঘরে মানুষের অর্থনীতির বেহাল অবস্থা আর চাপা কান্না। অথচ প্রতিটি মানুষ চায় অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা; যা ক্ষমতাসীনরা দিতে ব্যর্থ।
১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর কথা বলে ক্ষমতায় বসে আওয়ামী লীগ আজ সে কথা মিথ্যা প্রমাণিত করেছে। মোটা চালের দাম পঁঞ্চাশের ঊর্ধ্বে, সরু চালের দাম ৭০ টাকা। ক্ষমতাসীনদের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে করোনাভাইরাস মন্দার মধ্যেও গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, পাইজাম চালে দাম বেড়েছে ২২ শতাংশের বেশী, আটার দাম বেড়েছে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ, ময়দার দাম বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। এছাড়াও ডাল, শিশুদের গুড়াদুধসহ অন্যান্য পণ্যেরও দাম বেড়েছে।
বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর অর্থাৎ ২০০৬ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অব্যাহতভাবে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে মানুষের জীবনে রীতিমতো দুর্যোগ নেমে এসেছে। অথচ মানুষের আয় বাড়ানোর জন্য সেই অর্থে ক্ষমতাসীনদের পদক্ষেপের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বললেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেকারত্বের হার বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস এর তথ্য মতে স্নাতক পাস শিক্ষার্থীদের শতকরা ৬৬ ভাগ আজও বেকার। মানুষ সন্তানদের বেকারত্ব আর দুর্যোগ থেকে মুক্তি চায়। সময়ান্তে এই মানুষগুলো প্রতীক্ষার প্রহরে, মিশে যাবে তারা সেই সংগঠন বা সংস্থা’র সাথে যে সংগঠন বা সংস্থা মানুষের অধিকার তথা মুক্তমত, মানবাধিকার, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অবিরাম সংগ্রাম করে যাচ্ছে সফল হওয়ার লক্ষ্যে।
তথ্য উৎস — জাতীয় সংবাদপত্র ও ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি
No comments:
Post a Comment