ইতিহাস প্রমাণ করে বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রমনা। কারণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপট তৈরি করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতাত্তোরকালের রাজনৈতিক গতিধারা যেমন — ছয় দফা, আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলা, গোলটেবিল বৈঠক, ১৯৬৯ সালে প্রস্তাবিত সংবিধান সংশোধনী বিল ইত্যাদির ভূমিকা ছিল পরোক্ষ। মূলত, এ দেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের রায় পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী না মানার কারণে। স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের পর বাংলাদেশের জনগণ প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের পথে প্রথম যাত্রা করে।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের ৪ জানুয়ারি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বাকশাল তৈরি করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয়নি। সৈনিক-জনতার নজিরবিহীন সমর্থনে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম-এর হাত ধরে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলা শুরু হয়। কিন্তু আশির দশকে দেশ আবার স্বৈরশাসকের কবলে নিপতিত হয়। আবারো বাংলাদেশিরা এরশাদের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। রাজনৈতিক দল, ছাত্র-শিক্ষক-জনতাসহ দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করার ক্ষেত্রে আপসহীন নেতৃত্বের মুখ্য দায়িত্ব পালন করেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা শহিদ জিয়ার সুযোগ্য সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া। এরপর থেকে সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন-চর্চার শুভসূচনা হয়। অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে পঞ্চম জাতীয় সংসদে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত হয়।
আপনারা সবাই অবগত আছেন, মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন ১/১১-এর সরকার ১৯৯৬ সালে প্রণীত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সব ধারা ভূলুণ্ঠিত করে দুই বছর ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে। পরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে আওয়ামী লীগ ১/১১-এর সরকারকে তাদের আন্দোলনের ফসল হিসেবে দায় মুক্তি দিয়েছিল। ওই সময় বিদেশিদের দৌড়ঝাঁপ ছিল চোখে পড়ার মতো। আওয়ামী লীগ সেটি নিয়ে নাখোশ ছিল না। কিন্তু এখন গণতন্ত্রের পক্ষে বিদেশিদের ইতিবাচক কোনো ভূমিকাকে তারা সহ্য করতে পারছে না। গত ২৩ আগস্ট ২০২৩-এ জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলন চলাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘চীন বাংলাদেশের... বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতাকে সমর্থন করে; যাতে দেশটি অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে উন্নয়ন ও প্রাণসঞ্চার করতে পারে।’ এই বক্তব্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীনের একধরনের হস্তক্ষেপ কিনা সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারপ্রধানের কোনো মন্তব্য জানা যায়নি। আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত অভিযোগ করে যাচ্ছে, বিএনপি বিদেশিদের কাছে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য ধরনা দিচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সম্প্রতি ভারতের নয়াদিল্লি সফরে গেছেন। ফিরে এসে শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি পরিষদের বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘বাংলাদেশ- ভারতের সম্পর্কের ভিত্তি রক্তের। তাই দুটি দেশের সম্প্রীতি রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সবাইকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।’ তার এই বক্তব্যই প্রমাণ করে বর্তমান সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বহিঃশক্তির অন্তর্ভুক্তি চায় না বলে যে দাবি করে, তা সঠিক নয় । বরং অনেকই মনে করেন, তারা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে, বিশেষ করে নির্বাচনের প্রাক্কালে বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ আমন্ত্রণ করে এসেছেন তাদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য।
এবার অন্য প্রসঙ্গে আসা যাক। স্বাধীনতার পর মোট ১১ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ থেকে শুরু করে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ছয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতিসংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের হিসাব নিয়ে তীব্র মতভিন্নতা নেই। প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোট পড়েছে ২৬.৫ শতাংশ, দ্বিতীয়টিতে পড়েছে ৫১.৩ শতাংশ, তৃতীয়টিতে পড়েছে ৬১.৩ শতাংশ, চতুর্থটিতে পড়েছে ৫২.৫ শতাংশ, পঞ্চমটিতে পড়েছে ৫৫.৪ শতাংশ, সপ্তমটিতে পড়েছে ৭৫.৪৯ শতাংশ। তাই দেখা যায়, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে কমিশন প্রদত্ত হিসাব নিয়ে সন্দেহ শুরু হয়।
কিন্তু ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ভোটারবিহীন ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়। নির্বাচন কমিশন ২০১৪-তে ভোটার উপস্থিতি নথিভুক্ত করেছেন ৪০ শতাংশ । প্রকৃতপক্ষে কোনো কোনো স্থানে যা ছিল ১০ শতাংশেরও কম। দেশবাসী জানেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল যা ছিল বিশ্ব রেকর্ড। একাদশ সংসদ নির্বাচনের কত শতাংশ ভোট পড়েছে তা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি। তবে, পরে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে দাবি করা হয়েছে (গোলাম সামদানী, ‘কেমন ছিল দেশের ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন’, সারাবাংলা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৮)। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চারটি নির্বাচন হয়েছে। উল্লিখিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিবারই ভোটাররা ক্ষমতাসীনদের হটিয়ে বিরোধীদলকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ায় ভোটাররা তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পেরেছেন। কিন্তু ২০০৮ সালে পর এই শক্তি কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার জুন ৩০, ২০১১ সালে ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে সংযোজিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। দেশ কার্যত একদলীয় ব্যবস্থায় আবারও ফিরে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত স্থানীয় কিংবা জাতীয় কোনো নির্বাচনই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিযোগিতার মানদণ্ডে এসব নির্বাচন কোনো পর্যায়েই পড়ে না। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কতটা নিকৃষ্ট হতে পারে ২০১৪-এর ভোটারবিহীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক্ষেত্রে একটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। জাতির জন্য আরেকটি কলঙ্ক তিলক হয়ে থাকবে ২০১৮-এর নির্বাচন। ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরে রাখা এবং প্রশাসনের সর্বস্তরের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে ভোটারবিহীন একটি নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার অভিযোগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছিল (১৫ জানুয়ারি ২০১৯, প্রথম আলো )।
সুশাসনের জন্য নাগরিক—সুজনসহ নানা সংস্থার কর্মরত বুদ্ধিজীবী ও গবেষকরাও প্রায় অভিন্ন অভিযোগ করেছিল। অভিযোগের দীর্ঘতালিকা এখনো বিভিন্ন গণমাধ্যম সংরক্ষিত আছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেক বিদেশি বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক ওই নির্বাচনকে বিশ্বে ‘সবচেয়ে ব্যর্থ’ নির্বাচন বলে অভিহিত করেছেন (M. Solimullah Khan, Bangladesh : Who Vote? How do they Vote? , Dhaka, AHDPH, 2018)। নৈর্বাচনিক অবস্থার এরূপ বেহাল প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা একে ‘Illiberal democracy’, ‘Imperiled democracy’ ইত্যাদি নামে অভিহিত করেছেন ।
বাংলাদেশের গত এক যুগের বেশি সময় ধরে যে তথাকথিত ‘নির্বাচন’ ও ‘গণতন্ত্রের’ চর্চা হচ্ছে তা ব্যাখ্যা করার জন্য এই পরিভাষাগুলো যথার্থ বলে প্রতীয়মান হয়। এ সরকারের আমলে দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা কেবল ধ্বংসই হয়নি এ ব্যবস্থাকে নিয়ে করা হচ্ছে রঙ্গ-তামাশা। সাধারণ ভোটারদের মনে তাই নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটা আশঙ্কা কাজ করছে। নির্বাচন কমিশনও পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে গেছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণগুলোর একটি হলো দলীয় সরকারে অধীনে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা। এ বিষয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একসময় বলেছিলেন ‘রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন কমিশন যত শক্তিশালী হোক না কেন তাতে নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে পারে না’ (দৈনিক ইত্তেফাক ১৬ জুন ১৯৯৪)। অথচ তার বর্তমান অবস্থান কী, তা কারও অজানা নয়।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-ইআইইউ’র এবং সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসির-ভি-ডেম ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা যায়। ইআইইউর মাপকাঠিতে বাংলাদেশ একটি ‘হাইব্রিড’ শাসনব্যবস্থার দেশ। ‘হাইব্রিড’ শাসনব্যবস্থার দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়, দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার লাভ করে ও আইনের শাসন দুর্বল হয়। ভি-ডেম ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকাশে উদার ধারার ব্যাপক অবনতি হয়েছে।
১৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৭ (স্কোর .১১) (দেখুন, Democracy Report 2023 : Defiance in the Face of Autocratization)। এর অর্থ হলো এ দেশে গণতন্ত্র অপস্রিয়মাণ। এ প্রসঙ্গে আরও বিভিন্ন নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা যায়। জার্মান প্রতিষ্ঠান ‘বেরটেলসম্যান স্টিফটুং’ বিশ্বের ১২৯টি দেশের ওপর সমীক্ষা চালায়। ২০১৮ সালের ২৩ মার্চ প্রকাশিত রিপোর্টে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশকে একনায়কতান্ত্রিক দেশ বলে তুলে ধরে। নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ—এইচআরডব্লিউ অনেক আগেই বিবৃতি দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশ সরকার আরও কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ অধিকতর স্বৈরশাসনের পথে এগোচ্ছে। গত বছর ৩০-৩১ জুলাই জেনেভায় জাতিসংঘের ‘নির্যাতনবিরোধী কমিটি’ [Committee Against Torture (CAT)-র] ৬৭তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বলা হয়েছিল, গুম, রিমান্ড, বিচারহীনতা, ধর্ষণ, ভোটারদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা, নির্বাচনী সহিংসতা, তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আরও অনেক বিষয়ে তীব্র প্রশ্নবাণের মুখে পড়তে হয়েছিল বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের। এমন জবাবদিহির মুখে উত্তর দিতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা রীতিমতো খেই হারিয়ে ফেলেছিলেন।
কর্তৃত্ববাদে ব্যক্তি হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের সমার্থক। প্রসঙ্গত বলা যায়, ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই ( ১৬৪৩-১৭১৫) সদম্ভে ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমিই রাষ্ট্র। গণতন্ত্রের নামে এখন বাংলাদেশের যা চলছে তা চতুর্দশ লুই-এর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। হার্বার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্টিফেন ওয়াল্টের ব্যাখ্যা অনুযায়ী কর্তৃত্ববাদী শাসনের দশটি লক্ষণ রয়েছে। লক্ষণগুলো হচ্ছে — ভীতি অথবা উৎকোচের মাধ্যমে তথ্য ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ; তাঁবেদার তথ্যব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা; প্রশাসন ও নিরাপত্তাব্যবস্থার দলীয়করণ; নিজ স্বার্থে নির্বাচনী ব্যবস্থায় জালিয়াতি; বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর নজরদারির জন্য গোয়েন্দা সংস্থার ব্যবহার; অনুগত ব্যবসায়ীদের পুরস্কার, আবাধ্য ব্যবসায়ীদের শাস্তি; বিচারব্যবস্থা হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা; শুধু একপক্ষের ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ; ভীতি ও আতঙ্ক ছড়ানো; বিরোধী রাজনীতিকদের সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার। স্টেফান ওয়াল্ট কর্তৃত্ববাদী শাসনের যে রূপরেখা তুলে ধরেছেন, তার সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান শাসন মিলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ‘আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র’ এমন একটি প্রচারণা সামনে নিয়ে আসা হয়েছে । রাজনৈতিক স্বার্থে গণতন্ত্রকে উন্নয়নের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান ‘মৌলিক গণতন্ত্রের কথা বলেছিলেন। আর বর্তমান সরকার বলছে ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র’। এভাবে গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা হারিয়ে যায়। বাংলাদেশে তাই হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কিংবা আন্তর্জাতিক মিডিয়ার পর্যবেক্ষণ-মতামতের পাশাপাশি দেশের মানুষের অভিজ্ঞতাটা কম কষ্টকর নয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল বন্ধের নির্মম সিদ্ধান্ত কেবল ২৫ হাজার শ্রমিকের জন্যই নয়, পাটশিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যুক্ত লাখ লাখ মানুষের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। করোনা-মহামারিতে একের পর এক স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির কাহিনি উঠে আসছে। করোনার মধ্যে গার্মেন্টস-এ শ্রমিক ছাঁটাই অব্যাহত ছিল। কর্তৃত্ববাদী শাসনের অন্যতম আর একটি অনুষঙ্গ হলো লুটপাট। বাংলাদেশ যেন লুটেরাদের স্বর্গরাজ্য। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি—জিএফআই-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা।
খেলাফি ঋণ ইত্যাদিও এ ক্ষেত্রে অতি প্রাসঙ্গিক। ক্যাসিনা সম্রাট থেকে পাপিয়া, ট্রাংক আর সিন্ধুকে থরে থরে সাজানো টাকা, এসব বিষয় মানুষ ভোলেনি, ভুলার নয়। সরকারের সমালোচনা করায়, করোনা-মহামারির সময় থেকে শুরু করে অদ্যাবধি বেশ কয়েকজন শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, অ্যাকটিভিস্টকে বাড়ি থেকে তুলে এনে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা ঠুকে দেওয়া হয়েছে। তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। সাংবাদিক, লেখকরা ‘সেল্ফ-সেন্সরশিপে’ বাধ্য হচ্ছেন। আইনজ্ঞদের মতে, এই আইনের প্রায় সব ধারা ও উপধারা নাগরিকের মতপ্রকাশের সুরক্ষা ও স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার ও অন্যান্য নাগরিক অধিকারকে সীমিত ও ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষুণ্ণ এবং নাগরিকের জনবান্ধব কর্মকাণ্ডকে অপরাধীকরণ করেছে। আইন প্রণয়নের সময় নাগরিক সমাজের যথাযথ অংশগ্রহণ এবং মতামত প্রদানের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকার কারণে আইনটি সুরক্ষা প্রদানের পরিবর্তে কেবল নিয়ন্ত্রণমুখী নিপীড়নমূলক চেহারা ধারণ করেছে এবং এই আইনের মাধ্যমে মামলা করার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে যেমন দমন করা হচ্ছে তেমনি যে কোনো প্রকারের বিরুদ্ধ মতকে দমন করতে ভূমিকা পালন করছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার জামিন না হওয়া এবং ৩৬৫ দিন অতিবাহিত হওয়াই এর প্রমাণ।
তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ‘রিউমার স্ক্যানার’ তাদের ফেসবুক পেজে লিখেছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে মির্জা ফখরুলের বিদেশ ভ্রমণ দাবিতে ভাইরাল চেকটি ভুয়া।’ অথচ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের চরিত্র হননকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলেও ‘সরকারের সমালোচনাকারীদের খুঁজে বের করে কারাগারে আবদ্ধ রেখে জুলুম নির্যাতন করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম বদলে সাইবার সিকিউরিটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। কারাভোগ-এর পাশাপাশি অর্থদণ্ড যুক্ত হওয়া ছাড়া সাইবার সিকিউরিটি আইনের সঙ্গে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মধ্যে কার্যত মৌলিক তেমন কোনো পার্থক্য নেই। মোটকথা কর্তৃত্ববাদী সরকারের ইচ্ছামাফিক চলছে সবকিছু। শৃঙ্খলা রক্ষার নামে পুলিশি নির্যাতন ও বিচারের নামে ফরমায়েসি রায়ের শিকার শিক্ষার্থী খাদিজা থেকে শুরু করে বিএনপির মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, ও চেয়ারপারসন পর্যন্ত সবাই। এই সরকার টিকে থাকলে ক্রমেই তা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। এমন দিন আসবে যে নিজ দলের সাধারণ কর্মী সমর্থকরাও জুলুম নির্যাতন থেকে রেহাই পাবেন না।
বাংলাদেশে দলীয় সরকারের নির্বাচন এখন শুধু প্রহসনই নয়, এক আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এই আতঙ্ক এখন সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। পেশাজীবী সংগঠনের নির্বাচনও আতঙ্কমুক্ত নয়। সর্বশেষ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ভোট গ্রহণ বন্ধ এবং বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বের করে দিয়ে পুলিশ সাংবাদিকদের মারধর করা দেশে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি করছে। সরকারের সমর্থন ছাড়া কেউ একটি সংগঠনের কোনো পদে জয়ী হবেন, এমনটি ভাবতে পারবেন না। এটা স্পষ্ট হয়েছে, কর্তৃত্ববাদের নিপীড়নে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়; এর ফলে দুর্যোগ নেমে আসে অর্থনীতি, রাজনীতি থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বস্তরে।
পৃথিবীতে এমন একটি দেশ দেখানো যাবে না, যেখানে গণতন্ত্র আছে, অথচ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নেই। অথচ বর্তমান ক্ষমতাসীনরা ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ বাংলাদেশে সেই নির্বাচনকেই নির্বাসনে পাঠানোর সমস্ত আয়োজন করেছেন। বর্তমান সরকারের ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’ একটি ভ্রান্তনীতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সরকার উন্নয়নের নামে বাণিজ্যিক শর্তে স্বল্পমেয়াদে গৃহীত ঋণের অর্থ যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে, তাতে করে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান এর অনুরূপ বাংলাদেশও ঋণ ফাঁদে জড়িয়ে গেছে এবং বাংলাদেশের জনতা বছরের পর বছর এই ঋণ পরিশোধ করতে বাধ্য হবে। অদূর ভবিষ্যতে পাহাড়সম এই ঋণ পরিশোধের ভয়াবহ চাপ দেশকে চরম আর্থিক দুরবস্থা ও দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেবে। ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’ বিষয়ে বর্তমান সরকার যে বক্তব্য দিচ্ছে তা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অমর্ত্য সেন মনে করেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পেছনে উন্মুক্ত বাজার ব্যবস্থা ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র নেই সেটাতে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তার ওই বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায় নিম্নবর্ণিত উদাহরণগুলো থেকে যেমন — চীনে ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সালে সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ ঘটে; ইউক্রেনে ১৯৩০ সালে, কম্বোডিয়ায় ১৯৭০ সালে এবং বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে। তিনি বলেন, উন্নয়ন আসে গণতন্ত্রায়নের মাধ্যমে। আফ্রিকার বাতসোয়ানা রাষ্ট্রের উদাহরণ এ ক্ষেত্রে উপস্থাপন করা যায়। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এ রাষ্ট্রটি গণতন্ত্রের মাধ্যমে উন্নতি লাভ করেছে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, জনগণের জানমালের নিরাপত্তাহীনতা, নিপীড়ন, নির্যাতন ও সর্বস্তরে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, দেশ বর্তমানে এক অগণতান্ত্রিক সরকারের কাছে জিম্মি। দলনিরপেক্ষ অস্থায়ী সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের সরকার ব্যবস্থা কায়েম করা এখন গণদাবি। সংবিধানের দোহাই দিয়ে সরকার এই দাবি মানছে না, যা অযৌক্তিক এবং ‘আইনের’ প্রকৃত (নৈতিক) চেতনা পরিপন্থি। কারণ জনগণের প্রয়োজনে ১৭ বার সংবিধান সংশোধিত হতে পারলে গণতন্ত্র ও স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে আরেকবার সংবিধান সংশোধন করতে অসুবিধা কোথায়? ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন বিএনপি সরকার যখন সাধারণ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বিরোধীদল আওয়ামী লীগ (জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে) তখন রাস্তায় তুমুল আন্দোলন চালিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করেছে লাগাতার হরতাল, অবরোধ, হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দেশ বিপর্যস্ত করার মাধ্যমে। তাহলে বিএনপি ও এর জোট সঙ্গীদের অহিংস আন্দোলনের এই দাবি কেন মানছে না তারা।
আওয়ামী লীগের স্ববিরোধী আচরণ আজ জনগণের নিকট পরিষ্কার হয়ে গেছে। জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বর্তমানে সরকার। ২০১১ সালে মে মাসে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে বলেছিল, পরবর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন ওই ব্যবস্থার অধীনে হতে পারে। যেহেতু দলীয় (আওয়ামী লীগ) সরকারের অধীনে গত দুই নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে নিকৃষ্টতম হিসেবে বিশ্বব্যাপী ধিক্কৃত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সেই পরামর্শ অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে আরও দুটি নির্বাচন আয়োজনে বিষয়ে বর্তমান সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করাতে পারে। সরকার পরিবর্তনের দুটো পথ খোলা রয়েছে — একটি হচ্ছে নির্বাচনের মাধ্যমে, আরেকটা হচ্ছে রাজপথে। এ ব্যাপারে প্রথম বিকল্পের বিষয়ে একটি মতানৈক্যে পৌঁছানো না গেলে ফয়সালাটি হবে রাজপথে, যা সব পক্ষের জন্যই ক্ষতিকর। তাই সরকারের উচিত সংকট সমাধানের জন্য রাজপথের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ বেছে নেওয়া। যদি রাজপথ বেছে নেওয়া হয় তাহলে জনগণের জানমালের ক্ষতির দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে। এতে শুধু সরকার ক্ষমতাচ্যুত হবে তা নয়, বরং দল হিসেবেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যদি সরকার শান্তির পথ পরিহার করে তাহলে জনসম্পৃক্ত দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের দাবির জন্য যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে তা অব্যাহত রাখা। ’৬৯-এ আসাদ প্রাণ দিয়েছিলেন, সেই প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
’৯০-এ ড. মিলন, জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালী সাহা ও জেহাদ প্রাণ দিয়েছেন। আমরা স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ঘোষিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে ইতোমধ্যেই আলিম, জিকু, নূরে আলম, মকবুল, শাজাহান, আরেফিন ও নয়ন মিয়াসহ ২০টি তরুণ দেশপ্রেমিক শহিদ হয়েছেন। নিশ্চয়ই এই শহিদের রক্তও বৃথা যাবে না। তাই বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকারকে দ্রুত বিদায় করার লক্ষ্যে সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করে আপসহীন গণতন্ত্র ও জনমুক্তির একদফার এই সংগ্রাম অব্যাহত রাখাই হোক বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অঙ্গীকার।
—
লেখক অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সাধারণ সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।