মুনজের আহমদ চৌধুরী
মুনজের
আহমদ চৌধুরী
|
আমাদের
শ্লীলতাহীন রাজনীতির অশ্রাব্যতা নিয়ে লিখতে ভাল লাগে না। বাংলাদেশটা দাঁড়িয়ে আছে
একটা ভাষার উপর। ভাষার আন্দোলন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের আঁতুড়ঘর। অথচ, ভাষার দেশেই অশ্রাব্য আর মিথ্যে ভাষ্যে দাঁড়িয়ে থাকে সব মিথ্যচারী শাসক!
রাজনীতি কেবল সেখানে কথা বলতে জানে ক্রোধ আর ক্ষমতার দম্ভের অক্ষরে। দেশ ও জনগণের
প্রতি অভিভাবকত্বের মমত্বের শব্দে কথা বলা এখনো শিখতে পারেনি আমাদের চলতি স্রোতের রাজনীতি।
বাক্যে
বাক্যে উদ্ধত ভঙ্গিমা আর মিথ্যাচারের খেলা এ দেশের বহু রাজনৈতিক চরিত্রগুলোর যেন
লজ্জাস্থান নিবারক বস্ত্র।
বুধবার
ভোররাতে আচমকাই খুব আদরের ছোটভাই, প্রিয় সংবাদ পাঠক সাইদুল ইসলামের ফোন। তার অনুরোধ-ভাই, বিচার বিভাগের প্রতি শাসক দলের, সরকারের মন্ত্রীর অন্যায্যতা,
অশ্লীলতা নিয়ে লিখুন। আমি তাকে বলছিলাম, ভাই এ
বিষয়টি নিয়ে লিখতে হবে গ্রাম্য বিচারকটির পৌরাণিক সে গল্পও। সাইদুল বলল, তাহলে
ভাই এ বিষয়টা না হয় উহ্য করে লিখুন।
উহ্য
করে লিখতে গেলে দেখি, মন্ত্রীবাহাদুর
সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের বিচারবিভাগের প্রতি কী ঔদ্ধত্য'র
আঙ্গুল তুলেন।
কী
করে যে একজন জৈষ্ঠ্য রাজনীতিক, সিনিয়র মন্ত্রী বলতে পারেন,”আদালতের হাত সংসদ ছোঁয়ার
মত লম্বা হয়নি” আমার ভাবতে লজ্জা হয়।
অর্থমন্ত্রী
ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমরা চাকরি দিই, আমাদের ওপর পোদ্দারি। যতবার কোর্ট বাতিল করবে, আমরা
ততবার পাস করব। ’ বলিহারী যাই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের এমন সংসদীয়
সার্বভৌম গণতন্ত্র আর বিচার বিভাগের প্রতি এমন শ্রদ্ধা দেখে!
আচ্ছা, সংসদ-সরকার কী আইনের ঊর্ধ্বে?
আমার
ভাবনাগুলো এই ভেবে লজ্জায় নত হয়, দেশটার বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা কোন মুখে সরকারগুলি বলে। একজন সৎ দরিদ্র আইনজীবী পিতার সন্তান হয়ে রাজনীতিকে নিজে দেখেছি স্লোগান,
ব্যারিকেড, রোধ অবরোধের নিত্যদিনের বোধে। বিরক্ত
জনগণের বিরক্তি আর বেদনার ভাষ্য হয়তো অবমাননা অবধি পৌছুঁতে পারে। তবুও বলি,
এখনো দুর্নীতি, প্রবঞ্চনা আর জনগণের সাথে
নিপুন প্রতারণার নামধারী অসৎ রাজনীতির দেশে বিচার বিভাগ হাজার গুন সৎ। শত গুন নৈতিক। রাজনীতির নীতিহীন মুখগুলো কতটা প্রবলতায় যে অনৈতিক, তার দুটি বেদনার কথা লিখেই পাঠকের
ধৈর্য্যচ্যুতির অবসান ঘটাচ্ছি।
বছর
কয় আগে যখন তত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় দিলেন আদালত তখনওতো এ সরকার ক্ষমতায় ছিল।
একই নেত্রী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, দলও। কই তখন তো আদালতের আদেশে আয়েশি রাজনৈখায়েস পূরণের হাসি হেসেছিলেন
মন্ত্রী বাহাদুরেররা। আজ কেন তবে ঔদ্ধত্যমাখা এ অদ্ভুত বৈপরীত্য। সুবিধার নামে
চরিত্র বদল দেশে দেশে জাপুঁজির রাজনীচক্রের দৌরাত্ম। কিন্তু এতটা নগ্নতায় পল্টি
খাওয়া নীতির বিকৃতি নাপাক পাকিস্তানের মতো দেশেও বুঝিবা বিরলপ্রায়। বিচার মানি
কিন্তু বিচারক তালগাছ সব আমার - এমন বৈপরিত্বের অদ্ভুত রাজনীতিহীন বৃত্তি বড় আহত করে
আমায়। অক্ষর সেখানে খুঁজে হয়রান হয় শ্রাব্যতম ক্ষোভের প্রতিবাদের ভাষা।
অনেকে
এ ইস্যুটিকেও সরকারের অন্য অনেক ইস্যু ইস্যু খেলার সাথে মেলাতে চান। আমি স্তম্ভিত
হই, কথারা এমত
বাস্তবতার ব্যত্যয়ে হয় বাক্যহারা।
আমরা
বড়ো মানুষগুলোকে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে
ছোট করে নিজেদের ছোটলোকের চোখে দেখতে ভালবাসি স্বভাবের ক্ষুদ্রতায়।
বিচার
বিভাগও যদি সর্বগ্রাসী রাজনীতির দেশে স্বাধীন কন্ঠে কথা না বলতে পারে, তাহলে কোথায় থাকল দেশের
মর্যাদাময়তা?
ভোট
দিতে দেয়া হল বা না হল বাংলাদেশে বহু জনগণ এখন তার আর তোয়াক্কা করেন না। না করবার
বাস্তবতা যে বিদ্যমান নয় তা বলা হবে মিথ্যাচার।
আসলে
দম্ভের বা অহংকারের দ্বারা চালিত মানুষগুলোর মতোন সরকারগুলোও কখনো তার প্রকৃত
অবস্থান দেখতে পায় না। না, রাজনীতির প্রতি বিন্দুমাত্র ক্ষোভ নেই আমার, নেই
বেদনাও। আহত করে কেবল রাজনীতিহীন দম্ভ আর আস্ফালনের অন্ধকারাচ্ছনতার জন্য। কী
বিশাল শুন্যতায় সেখানে যে অনুপস্থিত ন্যায্যতা। বরঞ্চ
হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে বিশ্বাস করি, রাজনীতি-সুবিধা আর স্বার্থান্ধ গদি যেদিন পাল্টাবে সেদিন পাল্টাবে দিন।
কেবল রাজনীতিরই সেই ক্ষমতা আছে দুর্নীতি আর অন্যয্যতার দিনবদলের।
সুশাসন
আর ন্যায় রাজনীতিহীন নগ্ন দুপুরে যে আসবে না সেকথা জানি। সে সুর্যোদয় কেবল মাত্র
আনতে পারে রাজনীতির ইতিবাচকতাই ।
- মুনজের আহমদ চৌধুরী - লন্ডনবাসী সাংবাদিক, সদস্য রাইটার্স গীল্ড অব গ্রেট ব্রিটেন।
No comments:
Post a Comment