By মোস্তফা হোসেইন
হজ্জ যাত্রীদের হজ্জের তোয়াক্কা না করে
ওদের চোখের পানিতে ভাসিয়ে
নিজে চলে গেলে হজ্জে!

হজ্জ যাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন থেকে শুরু করে প্রতিটি পদে পদে অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা । একের পর এক ফ্লাইট বাতিলে এ বছর হজের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। সর্বশেষ ভিসা থাকার পরও এজেন্সির প্রতারণায় বিমানের টিকিট না থাকায় হজে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় হজযাত্রীরা গত শনিবার দুপুরে আশকোনা হজ ক্যাম্পে বিক্ষোভ করেন। তারা জানান, প্রায় তিন শ’ হজযাত্রীর টিকিট দেয়নি সাতটি এজেন্সি। অথচ এ দিনই সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৯০৭৯ ফ্লাইটে ১৪ সদস্যের একটি দল নিয়ে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে হজে যান। প্রতারণার শিকার অনেক হজযাত্রীর অভিযোগ, হজ ক্যাম্পে হজযাত্রীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকলেও ধর্মমন্ত্রী কোনো খবরও নিতে আসেননি।
এ বছর হজে চরম অব্যবস্থাপনার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় তথা সরকারকে দায়ী করেছে বেসরকারি হজ এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাব। গত ২৭ আগস্ট আশকোনায় এক সংবাদ সম্মেলনে হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম হজ অব্যবস্থানার জন্য ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সৌদি আরব, হজ সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দায়ী করে বলেন, হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ার জন্য অনেকেই হাবকে দায়ী করে ছিলেন। কিন্তু হজ ফ্লাইট বাতিলের জন্য ছয়টি কারণ রয়েছে। কারণগুলো হলো, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে মোয়াল্লেম ফি প্রদান করা, সৌদি সরকার কর্তৃক আকস্মিকভাবে দুই হাজার সৌদি রিয়াল চার্জ ধার্য করা, শুরু থেকেই ই-ভিসা প্রিন্টিংয়ের জটিলতা, ৯১ হজ এজেন্সির সময়মতো মোয়াল্লেম না পাওয়া, মদিনায় আট দিনের থাকার বিধান মানায় ফ্লাইটের তারিখ পছন্দের বাধ্যবাধকতা এবং শুরুর দিকে বিমান ভাড়া তিন হাজার টাকা বৃদ্ধি।
![]() |
শনিবার, আগস্ট ২৬, দুপুর দুইটার দিকে হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতারণার নানা অভিযোগে আশকোনার হজ ক্যাম্পে বিক্ষোভ মিছিল করছেন হজযাত্রীরা। |
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রসঙ্গে তসলিম বলেন, হজ এজেন্সির দায়িত্ব হজযাত্রীদের সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া। ৪২-৪৫ দিনের আগের প্যাকেজে আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থাসহ সব সুবিধা নিশ্চিত করা। হজ নীতিমালার কোথাও এজেন্সিদের বলা হয়নি যে এজেন্সিগুলো তাদের হজযাত্রীদের প্রথম দিকে, মাঝের দিকে বা শেষের দিকে নিয়ে যেতে হবে। হজযাত্রীদের আসা-যাওয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে সৌদি আরবের আইন অনুসারে। তাই হজ ফ্লাইটের শিডিউল নির্ধারণ করা উচিত সৌদি আরবের বাধ্যবাধকতা আমলে নিয়ে। ফ্লাইট শিডিউল নির্ধারণে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে চাইলেও তথ্য গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহ দেখা যায়নি।
তিনি আরো বলেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হজ প্যাকেজ নির্ধারিত বিমান ভাড়ার থেকে হজ ফ্লাইটের সন্ধিক্ষণে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা ভাড়া বৃদ্ধির প্রয়াস গ্রহণ করা হয়। এটাও হজযাত্রী সঙ্কটের একটি কারণ। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপে এ সমস্যা নিরসন করা হয়।হাব মহাসচিব বলেন, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় হজযাত্রী প্রতি ৩০০ টাকা প্রশিক্ষণের জন্য গ্রহণ করে। এ বছর এ খাতে সর্বসাকুল্যে ৩ কোটি ৮০ লাখ গ্রহণ করেছে। বিনিময়ে কোনো প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি।
শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, কিছুসংখ্যক হজযাত্রী হজ ক্যাম্পে অবস্থান করছেন, যাদের ভিসা করা হয়েছে কিন্তু তাদের টিকিট করা হয়নি। হাবের পক্ষ থেকে এটি নিরসনের চেষ্টা চলছে। এটি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সৌদি সরকার বাংলাদেশ বিমানকে আরো আটটি নতুন স্লট দিয়েছে। এতে টিকিটপ্রাপ্ত হজযাত্রীদের সৌদি যাওয়া নিয়ে সব সঙ্কট কেটে গেছে।
এ দিকে প্রতারণা কমাতে হজ এজেন্সির সংখ্যা কমানোর সুপারিশ সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন। এ ছাড়া হজ নীতিমালার আমূল পরিবর্তন করা হবে বলেও জানান তিনি। গতকাল আশকোনায় হজ ক্যাম্পে বি এইচ হারুন বলেন, হজযাত্রীদের সাথে কিছুসংখ্যক এজেন্সি ও মধ্যস্বত্বভোগীর প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জিডি করেছি। পরে এটি মামলায় রূপ নেবে। তিনি বলেন, সরকারি কোটার হজযাত্রীদের কোনো অভিযোগ নেই। অথচ এজেন্সির অপপ্রচারের কারণে সরকারি কোটায় হজযাত্রীর সংখ্যা বেশি হয় না। আগামীতে সরকারি কোটায় হজযাত্রী বাড়াতে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।
- তথ্যসূত্রঃ নয়াদিগন্ত
No comments:
Post a Comment