Search

Thursday, December 31, 2020

জানুয়ারি ৫, ও ডিসেম্বর ৩০ — বাকশাল দিবসের মতো আরো দুইটি কলঙ্কিত দিবস

—  ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম 

বাংলাদেশের ইতিহাসে জানুয়ারি ৫, ও ডিসেম্বর ৩০, বাকশাল দিবসের মতো আরো দুইটি কলঙ্কিত দিবস, শুধু  পিতা থেকে কন্যা। 

বাংলাদেশের ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮, নির্বাচন হল সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পর পৃথিবীর গণতান্ত্রিক ইতিহাসের নিকৃষ্টতম নির্বাচন।  বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ও এর ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্লেষণ ও মতামতধর্মী নিবন্ধে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে বিপুল ব্যবধানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শাসকদল জয়লাভ করেছে। বিজয়ী ও বিজিত দলের মধ্যে পার্থক্যসূচক এমন চিত্র উত্তর কোরিয়ার মতো দেশে আশা করা যায়, বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশে নয়। এই নির্বাচনের পর বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ক্ষমতা দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে দেশটির শাসনব্যবস্থা একদলীয় শাসনে পরিণত হতে চলেছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন অস্পষ্ট। দেশটির তরুণ ও যুবসমাজ গণতন্ত্রের ওপর বিশ্বাস হারাতে বসেছে। জানুয়ারি ২৫ —  বাকশাল দিবসের মতই জানুয়ারি ৫ এবং ডিসেম্বর ৩০ আরো দুইটি কালো দিবস যোগ হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দেশের মানুষের সাথে চরম পরিহাস করা হয়েছে।  

ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮, ঢাকা-৪ আসনের বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের
প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় রক্তাক্ত হন।  

২০১৪ সালের একতরফা একদলীয় নির্বাচনের পর থেকে কয়েক বছর যাবৎ যে ভোটডাকাতির নির্বাচনী সংস্কৃতি চলছে তার কারণে মানুষের ভোট প্রদানের উৎসাহ কমে গেছে। ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮, মিডনাইট ভোটডাকাতির জাতীয় নির্বাচনের পর ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার প্রবণতা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনেও এই চিত্র পাল্টায়নি। বিগত জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনগুলোর ধারাবাহিক দৃশ্যপট বজায় ছিল এইসব নির্বাচনেও। এবারের নির্বাচনে ভোটার নেই ও ভোট প্রদানের আগ্রহ নেই, কারচুপি ও অনিয়মের শেষ নেই, কারো কারো ক্ষেত্রে নিজের ভোট নিজে দেওয়ার উপায় নেই, প্রধান বিরোধী দলের প্রার্থীদের এজেন্ট নেই। দিনভর ছিল সহিংসতা। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, জোরপূর্বক নৌকা প্রতীকে ভোট, কেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে শেষ হয়েছে প্রথম ধাপের ২৪টি পৌরসভার নির্বাচন। এ ঘটনায় বিভিন্ন জায়গায় ভোট বর্জন করেছেন বিএনপি প্রার্থীরা। ভোট গ্রহণের আগেই আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয় অনেক পৌর এলাকায়। হুমকি-ধমকি ও আতঙ্কে ভোট দিতে যাননি অনেকে। এমনকি মেয়র প্রার্থীও আতঙ্কে মাঠ ছেড়েছেন। 

অনেক স্থানে ইভিএম মেশিন বিকল, আঙ্গুলের ছাপ না মেলার কারণে বিড়ম্বনার শিকার হন ভোটাররা। 

এদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো সুশাসন, সমঅধিকার ও শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। সাংবিধানিক ভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্র স্বীকৃত একটি দেশ বাংলাদেশ। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র। যেখানে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে এবং প্রশাসনের সবপর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। কিন্তু নির্বাচনে ভোটডাকাতি ও কারচুপি করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা সংবিধান লঙ্ঘন। তাছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত করা হয়েছে। গণমুখী অনুচ্ছেদগুলো শুধু সংবিধানেই লিপিবদ্ধ রয়েছে কিন্তু বাস্তবে এসবের প্রয়োগ নাই বললেই চলে। তাই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পারদ দিন দিন নিম্নগামী। শাসকদলের ক্ষমতালিপ্সার কারনে দেশের আজ এই বেহাল অবস্থান এবং বহুমুখী ষড়যন্ত্রে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন। 

দেশের মালিক জনগণের পবিত্র ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করতে জনগণকেই আবারো ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে। ফ্যাসিস্টদের পতন অনিবার্য। মজলুমের বিজয় সুনিশ্চিত। 

—  লেখক সিনিয়র সায়েন্টিস্ট, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ। 

No comments:

Post a Comment