Search

Friday, February 5, 2021

শহীদ জিয়া এবং সবুজ বিপ্লব

— সৈয়দ এম গোলাম হাফিজ


কোদাল হাতে খাল খনন করছেন রাখাল

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম


বাংলাদেশের জনগণের প্রাণপ্রিয় নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম এর  কর্মযজ্ঞের সাথে এ দেশের কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ক্ষমতায় এসেই তার সরকারের গৃহীত নীতিমালা ও কর্মসূচিতে কৃষি, পল্লী উন্নয়ন, নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দেন। দেশকে উৎপাদন উন্নয়নের রাজনীতিতে নিয়ে আসেন। বিধ্বস্ত ও ধ্বংসপ্রায় অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে বাস্তবভিত্তিক, উন্নয়নমূলক নীতি ও কার্যসূচি হাতে নেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েই দেশকে নতুনভাবে গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। দেশের রাষ্ট্রপতি ও রাজনীতিকদের মধ্যে তিনিই অগ্রদূত যিনি দেশের প্রত্যন্ত গ্রামেগঞ্জে, মাঠেঘাটে, পায়ে হেঁটে ছুটে বেড়িয়েছেন কখনো লাঙল, কখনো কাস্তে আবার কখনো কোদাল হাতে। রাখাল প্রেসিডেন্ট জিয়া কৃষকের মাঠে গিয়ে কৃষকের সাথে কথা বলেছেন, সমস্যা জেনেছেন, কৃষকের সাথে কাজে অংশ নিয়েছেন, তাদের অনুপ্রাণিত ও জাগ্রত করেছেন। দেশের কলকারখানার শ্রমিক ও কৃষকসহ সমগ্র জনগোষ্ঠীকে তিনি জাগিয়ে তুলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করান, ডাক দেন দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের।


জাতীয় বীজ অধ্যাদেশ প্রণয়ন

ভালোবীজ মানে ভালো ফসল। ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসে জিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী কর্মসূূচি হাতে নেন বীজ অধ্যাদেশ প্রণয়নের মধ্য দিয়ে। এর মূল লক্ষ্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে কিভাবে খাদ্য ঘাটতি ও দারিদ্র্য দূর করা যায়। ফসলের মূল উপাদান বীজকে মানসম্পন্ন অবস্থায় কিভাবে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায় সে উদ্দেশ্যে বীজ অধ্যাদেশ প্রণয়ন করেন। অধ্যাদেশ প্রণয়নের মধ্য দিয়ে বীজ আমদানি, ব্যক্তি খাতে বীজ শিল্পের উন্নয়ন, বীজ উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ বা বিতরণের প্রতিটি পর্যায়ে ব্যক্তি খাতকে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন। বীজ অধ্যাদেশের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো কৃষকরা বাজার থেকে বীজ কিনে যেন প্রতারিত না হন, তার ব্যবস্থা অর্থাৎ কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ। এ অধ্যাদেশ প্রণয়নের মাধ্যমে কৃষকের মানসম্মত ভালো বীজ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। বিভিন্ন সরকারের সময় বীজনীতির প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিবর্ধন করা হলেও ফসল উৎপাদনে এটি একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশে বীজ শিল্প একটি বিকশিত ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং কৃষকের চাহিদা মেটাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছে ব্যক্তি খাত।


বীজের পরে ফসল উৎপাদনের প্রধান উপকরণ হলো রাসায়নিক সার, সেচ এবং সেচযন্ত্র, চাষযন্ত্র (যেমন-পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর) ইত্যাদি। কৃষির উপকরণ বিতরণ বা সরবরাহ ব্যবস্থা বিএডিসি এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওপর ন্যস্ত ছিল। রাষ্ট্রপতি জিয়া কৃষির উপকরণ যেমন ক্ষুদ্র সেচযন্ত্রÑ পাওয়ার টিলার এবং সার বিতরণ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন। তিনি বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করে উপকরণ সরবরাহ ব্যবস্থা সংস্কার করেন যেন ক্ষুদ্র, গরিব চাষিরা এর সুফল ভোগ করতে পারেন। কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি কৃষকের দোরগোড়ায় নিয়ে আসার জন্য এই কর্মসূূচি গ্রহণ করেন। এই কর্মসূূচির ফলে কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি কৃষকের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই কৃষি উৎপাদন ১৯৭৪-৭৫ সালে ১১.২২ মিলিয়ন টন থেকে ১৯৮০-৮১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৩.৩৬ মিলিয়ন টনে। সূত্র : বিবিএস।


খাল খনন কর্মসূূচি

যশোরে উলসি যদুনাথ পুর প্রকল্পে খাল খনন

অভিযানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম

কোদাল হাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। 

ষাটের দশকের কৃষিতে যে সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয় তার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো সেচ। এই সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সহজলভ্য এবং টেকসই করার জন্য জিয়া যুগান্তকারী ঐতিহাসিক কর্মসূূচি গ্রহণ করেন। এই জনপ্রিয় কর্মসূূচি হলো খাল খনন। শুকনো মওসুমে কৃষক যেন নদীনালা ও খালের পানি দিয়ে জমিতে প্রয়োজনীয় সেচের ব্যবস্থা করে ফসলের নিবিড়তা বাড়িয়ে এবং বর্ষা মওসুমে ফসলকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ম্ভর করতে পারেন এই মূল লক্ষ্য নিয়ে তিনি খাল খনন কর্মসূূচি গ্রহণ করেন। সমগ্র দেশে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই কর্মসূূচিতে জনগণের সাথে তিনি নিজেও অনেক জায়গায় অংশ নিয়েছেন।

কোদাল হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়া খাল কাটছেন এ ছবি এখনো মানুষের দৃশ্যপটে ভেসে আছে। দেড় বছরে সারা দেশে এক হাজার পাঁচ শতাধিক খাল খনন ও পুনর্খনন করেন। ফলে দেশ স্বল্প সময়ের মধ্যেই খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। ভূগর্ভস্থ পানির সঠিক ব্যবহার নিয়ে জিয়া একজন বিজ্ঞানীর মতো চিন্তা করতেন। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহার করে সেচের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেটিও ছিল জিয়ার খাল খনন কর্মসূূচির অন্যতম লক্ষ্য। বর্তমানে কৃষি ব্যবস্থায় সেচের জন্য যে পানি ব্যবহার করা হয় তার ৮০ শতাংশের বেশি আসে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে, আর প্রায় ১৮ শতাংশ আসে নদীনালা, খাল-বিল ও বৃষ্টির পানি থেকে। ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পানির স্তর আমাদের দেশে অনেক নিচে নেমে গেছে। অনেক স্থানেই অগভীর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলন করা যায় না, গভীর নলকূপ দিয়ে মাটির অনেক গভীর থেকে পানি উত্তোলন করতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে সেচের পানির অভাবে কৃষি বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এ ছাড়াও ভূগর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত আহরণের ফলে বাংলাদেশের বিশাল এলাকার পানি ও মাটিতে আর্সেনিক দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। অপর দিকে জিয়ার খাল খনন কর্মসূূচি ছিল এ দেশের কৃষকের জীবন ও জীবিকার জন্য বড় আশীর্বাদ।


খাদ্য নিরাপত্তা ও শস্য গুদামজাতকরণ

দেশের মানুষ তথা দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে জিয়া বিশেষ কর্মপন্থা গ্রহণ করেন। শস্য সংগ্রহের সময় দাম সাধারণত কম থাকে আবার একই শস্য কিছু দিন পরে বেশি দামে কৃষককে কিনে খেতে হয়। কৃষক যেন শস্য সংগ্রহের সময় তার ফসল বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে জন্য তিনি ১৯৭৮ সালে শস্যগুদাম ঋণ কর্মসূূচি গ্রহণ করেন। সারা দেশে বর্তমানে ১২৬টি শস্যগুদাম আছে যেখানে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য মজুদ রেখে স্বল্পসুদে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য। আবার মওসুম শেষে বেশি দামে শস্য বিক্রি করে কৃষক যেন তার ঋণ পরিশোধ করতে পারেন। এ ছাড়াও সারা দেশে জিয়া খাদ্যগুদাম তৈরি করেন। অতিরিক্ত উৎপাদিত ফসল গুদামজাত করে আপদকালীন মজুদ গড়ে তোলা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূূচি জোরদার করা এবং প্রয়োজনের সময় সরকারি খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থার (পিএফডিএস) মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহ করার পদক্ষেপ নেন যেন দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।


বিশেষ কৃষি ঋণ কর্মসূূচি

উচ্চফলনশীল প্রযুক্তি অধিক পুঁজিনির্ভর যাতে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের পক্ষে বিনিয়োগ করা কঠিন। সেজন্য কৃষকদের অধিক সুদে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস হতে মূলধন সংগ্রহ করতে হতো। এ অবস্থা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য জিয়া ১৯৭৭ সালে ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ কৃষি ঋণ কর্মসূূচি প্রণয়ন করেন, যা প্রচলিত কৃষি ঋণপ্রবাহে নতুন মাত্রা যোগ করে। এই কর্মসূূচির উদ্দেশ্য ছিল জামানত ছাড়াই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক যেন সহজেই কৃষিকাজের জন্য ঋণ সুবিধা পান এবং দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারেন।


পল্লী বিদ্যুতায়ন, গ্রামীণ অর্থনীতি ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন

আধুনিক বিশ্বে বিদ্যুৎকে উন্নয়ন ও সভ্যতার একটি বড় নিয়ামক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৭৭ সালের অক্টোবর মাসে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে জিয়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বা আরইবি প্রতিষ্ঠা করেন যার দায়িত্ব হলো গ্রামাঞ্চলকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা। এই কর্মসূূচির উদ্দেশ্যÑ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে সেচ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকার অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়ন বৃদ্ধি করা যেন পল্লী এলাকার জনগণের জীবনমানের উন্নতি হয়। বৈদেশিক মুদ্রায় ডিজেল আমদানি করে সেচপাম্প না চলিয়ে বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্পের মাধ্যমে সেচ দিলে খরচ কমে যায়। বাংলাদেশে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা ও এর উন্নয়ন তৃতীয় বিশ্বের জন্য একটি সফল ঘটনা। বর্তমানে প্রায় ৯৮ শতাংশ গ্রাম পল্লী বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে এবং ৫.০৬ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।


যুব উন্নয়ন

দেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত যুবসমাজকে যেন উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা যায় তার জন্য রাষ্ট্রপতি জিয়া গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূূচি হাতে নেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে যুব মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং ১৯৮১ সালে যুব উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেন। এই কেন্দ্রের প্রধান লক্ষ্য বেকার যুবসমাজকে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল লালন পালনের উন্নত কলাকৌশল, দুগ্ধ উৎপাদনের জন্য গাভী পালন এবং মৎস্য চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার মধ্য দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দারিদ্র্যবিমোচন তথা দেশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। দেশের আনাচে-কানাচে দুগ্ধ খামার, পোলট্র্রি খামার, মৎস্য খামার গড়ে উঠেছে যেখানে বেকার যুবকরা কাজ করছেন, দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা মেটাতে অবদান রাখছেন। দেশের ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যার সমাধানে রাষ্ট্রপতি জিয়ার এই কর্মসূচি ব্যাপক অবদান রাখছে।


বিসিআইসি প্রতিষ্ঠা ও সারকারখানা নির্মাণ

বাংলাদেশের তিনটি সেক্টর করপোরেশনকে একীভূত করে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা পায় বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা বা বিসিআইসি। বাংলাদেশের সারকারখানা, কাগজ কারখানা এর অন্তর্ভুক্ত। কৃষি বিপ্লবের ফলে দেশে সারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য জিয়া সার কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ১৯৮১ সালে তিনি আশুগঞ্জ সার কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন যার বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচ লাখ ২৮ হাজার মেট্রিক টন। আরো কয়েকটি সারকারখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন যা তিনি দেখে যেতে পারেননি।


কৃষি গবেষণায় গুরুত্ব প্রদান ও স্বায়ত্তশাসন

বাংলাদেশে বহু-ফসল নিয়ে গবেষণা করে এ রকম একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। রাষ্ট্রপতি জিয়ার বিশেষ আগ্রহ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৭৬ সালে চৎবংরফবহঃরধষ ড়ৎফবৎ ঘড়. খঢওও-এর বলে এটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগ, স্বতন্ত্র গবেষণা, বিভিন্ন ফসলের জাত ও প্রযুক্তি উন্নয়ন ও উদ্ভাবন, দেশের বিভিন্ন আবহাওয়া ও পরিবেশ অঞ্চলে খাপখাওয়ানো, কৃষক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ম্যানডেট নিয়ে এই স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠান দেশের খাদ্য উৎপাদনে ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।


পল্লী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন

পল্লী উন্নয়ন বাদ দিয়ে সমগ্র দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় এ কথাটা জিয়া মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। এ জন্য তার সুচিন্তিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ছিল গ্রামকেন্দ্রিক। গ্রামে কি করে বিদ্যুৎ যাবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত করা যায় এ নিয়ে গভীরভাবে ভাবতেন তিনি। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (ইঅজউ), কুমিল্লাকে কিভাবে আরো শক্তিশালী করা যায় তার জন্য কর্মসূূচি গ্রহণ করেন। জউঅ (পল্লী উন্নয়ন একাডেমি) বগুড়াকে ইঅজউ এর আদলে কিভাবে নতুনরূপে প্রতিষ্ঠা করে, দেশের উত্তরাঞ্চলের গ্রামবাংলার উন্নয়ন করা যায় সেজন্য তিনি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূূচি হাতে নেন এবং বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। ইঅজউ এর প্রতিষ্ঠাতা ড. আখতার হামিদ খান ৭৮-৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনির্ভাসিটির ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়া তার নিজস্ব উৎসাহ ও চেষ্টায় ড. খানের সাথে যোগাযোগ করে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগানোর জন্য। পল্লী উন্নয়ন একাডেমিকে একটি আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে কিভাবে গড়ে তোলা যায় সে জন্য তিনি ড. খানকে পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে বিশেষজ্ঞ পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৯৮০ সালে জিয়ার ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রয়াসে বগুড়া শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণে ১২০ একর জমির ওপর গড়ে উঠে পল্লী উন্নয়ন একাডেমির নিজস্ব ভবন। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, পল্লী উন্নয়নের বিভিন্ন টেকসই, নবায়নযোগ্য ও রেপলিক্যাবল মডেল উদ্ভাবনের মাধ্যমে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনের মান উন্নয়ন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখীসমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। অত্যন্ত সৎ, নির্লোভ ও দুরদর্শী এই রাষ্ট্রনায়কের ডাকে জনগণ সাড়া দিয়েছিল ব্যাপকভাবে। এ দেশের জনগণ তাকে প্রচণ্ড ভালোবাসত। তার প্রমাণ আমরা পাই, তাকে সমাধিস্থ করার দিনে জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদন ও উপস্থিতির মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে, জিয়াউর রহমান যে ভিত এবং সোপান রচনা করেছেন তা এ দেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। 



  • লেখক অধ্যাপক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এবং যুগ্ম আহ্বায়ক, এগ্রিকালচারিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। 

No comments:

Post a Comment