— মো: আসাদুজ্জামান
প্রগাঢ় ভালোবাসা তোমার জন্য । আমার অনন্ত অতল অনুভূতির প্রতি তোমার নিত্যদিনের অবহেলা এবং উপেক্ষা আমাকে বিষন্ন , বিপন্ন করে তুলছে ইদানীং । যাপিত জীবন আমার বেদনার রঙে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে । মহামারী করোনা এবং ক্ষমতাসীনদের রক্তের নেশা বেঁচে থাকার সুখানুভূতিকে নিস্প্রভ করে তুলছে । অনেকের মতো আমারও অষ্ট্রপ্রহর কাটে উদ্বিগ্ন আর উৎকন্ঠায় । তবুও কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র মত তোমার কাছে নৈবেদ্য নিবেদনের জন্য বলতে ইচ্ছে করছে,
“আমি সেই অবহেলা, আমি সেই নতমুখ, নিরবে ফিরে যাওয়া অভিমান-ভেজা চোখ, আমাকে গ্রহণ করো। উৎসব থেকে ফিরে যাওয়া আমি সেই প্রত্যাখ্যান, আমি সেই অনিচ্ছা নির্বাসন বুকে নেওয়া ঘোলাটে চাঁদ। আমাকে আর কি বেদনা দেখাবে?”
সে যাই হোক, আমার ব্যক্তিগত বেদনার ফ্যাকাসে রঙ বাদ দেই এখন । কেমন আছো মাধবী, আমার প্রগাঢ় ভালোবাসার নীল পরী? এই মহামারী, এই মৃত্যু উপত্যকা , এই গুলি বোমা টিয়ারশেলের বাংলাদেশে অনেকের মত তুমি নিশ্চয়ই ভালো নেই! ভয়াবহ দু:সময়ের মধ্যে গোটা বিশ্ব। এরই মধ্যে লক্ষ্য করেছো নিশ্চয়ই যে , ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনে আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ যে গৌরবের মুকুট পরতে চেয়েছিলো সেটা হয়তো ইতিহাসের কাঠগড়ায় একদিন কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে । এই মহান দিবসের আগে পরের ঘটনায় অনেকের রক্তের দাগ আওয়ামীলীগ সরকারের হাতে লেগে গেছে। গোটা ঢাকা শহরের মানুষের চলাফেরাকে শৃঙ্খলিত করে স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী পালন নাগরিকদের কাছে অসন্মান জনক হয়েছে বলে আমার মত অনেক নিন্দুকেরা মনে করে। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে আফসোস করতে শুনেছি যে এ কেমন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী! স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম, তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, কামরুজ্জামান, জেনারেল ওসমানীসহ অগনিত সূর্যসন্তানদের নাম আঁধারে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং উল্লেখিত সূর্যসন্তানদের নাম সহ অসংখ্য মহান মানুষের নাম অবশ্য শহীদ জিয়ার আদর্শের ভ্যানগার্ডেরা আঁধার ভেদ করে রুপোলি চাঁদের আলোয় মেলে ধরেছে! এ কথাগুলো রাজনৈতিক, তোমাকে বলা যায় তাই বললাম! কিছু মনে করো না যেন!
মাধবী, গত কয়েকদিন আমার মনের মধ্যে কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তোমার মনের মধ্যেও সেই প্রশ্নগুলো সংক্রমিত হোক, তুমিও আমার মত দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হও সেটা আমি চাই । প্রশ্নগুলো তৈরী হয়েছে সূবর্ণজয়ন্তীতে সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলছেন যে, তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে কথা বলার জন্য তাঁর দেশ ভারতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাহলে আমার মনে প্রশ্ন জাগছে, ১৯৭১ সালে ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার কি পাকিস্তানপন্থী ছিলো? কিংবা কংগ্রেস কি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো? এই কারনেই কি কংগ্রেসের কোন প্রতিনিধি আমাদের সুবর্ণজয়ন্তীতে আসেন নি? না কি তাঁদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি? ১৯৭১ সালে ভারতে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকার আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলার জন্য তৎকালীন তাঁদের দেশের একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক কর্মীকে কেন গ্রেফতার করেছিলেন? আইনের ছাত্র এবং রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে এই প্রশ্ন আমাকে নিদ্রার প্রান্ত অবধি ধাবিত করছে। শ্রীমান নরেন্দ্র মোদির এহেন বক্তব্য কি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নতুন ইতিহাস রচনার চলমান প্রক্রিয়ার অংশ যেখানে শহীদ প্রেসিডন্ট জিয়াউর রহমান কিংবা ভারতের তৎকালীন সরকারের অবদানকে মুছে ফেলতে হবে? তুমি যৌক্তিক কোন উত্তর খুঁজে পেলে তোমার উপেক্ষা সয়ে নেবো, কথা দিলাম!
মাধবী, বসন্তের চৈত্র মাস এখন। কালবৈশাখীর ঘনঘটা । তুমি উপেক্ষার দহনে আমাকে বিদগ্ধ বানাতে চেয়েছো, পরিণতশীল মানুষ হিসেবে দেখতে চেয়েছো। তবুও মন মানে না, মন আমার বারেবারে বাজনা বাজিয়ে কবি গুরুর সেই অমর কবিতা আওড়ে চলেছে,
“ প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ। ”
নীলাদ্রিসম প্রেয়সী আমার, ভোটাধিকারহীন এই দেশে কেউ আমরা নিরাপদ নই! বড্ড দু:সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা। মহামারী আবার ফিরে এসেছে এই শহরে। নিয়নবাতির আলোয় আর বেড়াতে মন চায় না। যে মানুষদের ভালোবেসে, যে মানুষদের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য একদিন রাজনীতি করার পথ বেছে নিয়েছিলাম, আজ সেই মানুষদের সান্নিধ্যই জীবনের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তাহীনতার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার রাজনৈতিক সহকর্মী, সুহ্রদ, সজ্জন ব্যক্তি আমাদের খন্দকার আহাদ আহম্মেদ মানুষের ভালোবাসার টানে তাঁর নির্বাচনী এলাকা গাইবান্ধায় গিয়েছিলেন, সেই প্রিয় মানুষদের সান্নিধ্যই তাঁর জীবনের কাল হয়েছিলো, তাঁদের স্পর্শেই করোনার কাছে তাকে হার মানতে হলো। আজ সকাল থেকে আহাদ ভাইকে খুব মনে পড়ছে । আমার জীবদ্দশায় তোমাকে ভূলতে চাই মাধবী। মরনের পর তোমাকে ভুলতে হলে তোমার উপর আমার জমাটবদ্ধ অভিমানের অভিব্যক্তি প্রকাশিত হবে না। তোমাকে ভুলে যাওয়ার নিরন্তর সংগ্রামে নিজেকে সমর্পন করেও ভুলতে পারছি না। কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতেই হচ্ছে,
“তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন, সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন।”
ভালো থেকো সব সময়, আমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে আমার নিরন্তর প্রেরণার উৎস হয়ে বেঁচে থেকো!
No comments:
Post a Comment