Search

Saturday, February 11, 2023

বাকশালের সাংস্কৃতিক রূপ ও ঘৃণাযুদ্ধ


১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি!  বাকশাল কায়েমে
র পর তাজউদ্দীন আহমেদ বলেছিলেন,  “মুজিব ভাই, এই পদক্ষেপের ফলে আপনি শুধু নিজে মরবেন না।  আমাদেরকেও সাথে নিয়ে মরবেন।” তাঁর এই ভবিষ্যৎ বাণীটি অক্ষরে অক্ষরেই  ফলেছে।  যাকে  তাজউদ্দীন আহমেদ অত্যাবশ্যক হিসাবে ঠাহর করেছিলেন! 

এদেশের মানুষের পরম আকাঙ্খা ছিল গণতন্ত্রের জন্য।  ভয়াবহ একটা যুদ্ধে জড়িয়েছিল মূলত একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যে! সেই যুদ্ধে আমাদেরকে যারা সহায়তা করেছিল তাদের মতলব ছিল ভিন্ন।   ফলে শুরু হয় এই দেশ ও জাতিকে নিয়ে নতুন খেলা। বাকশালের রাজনৈতিক শাখার সাথে সাথে খোলা হয় সাংস্কৃতিক ও  বুদ্ধিবৃত্তিক শাখা।

বাকশালের রাজনৈতিক রূপটি যতটুকু দানবীয় প্রতীয়মান হয়েছে, এর সাংস্কৃতিকরূপটি ততটুকুই মোহনীয় বা আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় আবেগ, অনুভূতি এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে অত্যন্ত কৌশলে এর সাথে যুক্ত করা হয়েছে। বাকশালের এই সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উপাদান এদেশে নানা সময়ে নানা রাজনৈতিক বয়ান তৈরি করে আমাদের মুখে তুলে দিয়েছে। এই কাজে এদের অস্ত্র ছিল ‘স্বাধীনতার চেতনা’ । বুদ্ধিবৃত্তিক এই পালোয়ানদের সবাই ভয় করতেন।  কারণ এই গ্রুপকে নাখোশ করলে সুশীল বুদ্ধিজীবী হিসাবে নিজের অবস্থান ধরে রাখা তো দূরের কথা, মগজে সামান্য বুদ্ধি অবশিষ্ট আছে কী না তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিত।

এরা সবচেয়ে সফল হয়েছে তথাকথিত এক-এগারোর প্রেক্ষাপট তৈরিতে। মূলত: এক-এগারো মাধ্যমেই  বাকশালের পুনর্জন্ম হয় । আর এক-এগারোর প্রেক্ষপট  তৈরির পেছনে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বাকশালের দীর্ঘ সময়ের নিরলস প্রচেষ্টা আজ একটু পেছনে তাকালেই স্পষ্ট দেখা যায়। । দুজন পত্রিকা সম্পাদক তো প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন যে এক-এগারো তাদেরই  ব্রেইন-চাইল্ড । এরা সবাই বৃহত্তর বাকশাল পরিবারের সদস্য I

এদের মূল কাজ  ঘৃণা ছড়ানোর মাধ্যমে একক জাতিসত্ত্বার চমৎকার রাষ্ট্রটিকে স্থায়ভাবে  বিভক্ত করা।  দেখা যায়, ১৯৭১ সালে যে টগবগে তরুণ যুদ্ধে না গিয়ে গর্তে বসবাস করেছিলেন, সেই বৃদ্ধ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষক হিসাবে  ঘৃণাযুদ্ধের বিরাট বড়  সিপাহসালার সেজে বসেছেন। উনি নির্বাচনের আগের রাতে ঘুমিয়ে পরের দিন সকালে যদি দেখেন ,  যে দল নির্বাচনে জয়ী হয়েছে এবং যে দল পরাজিত হয়েছে উভয়ই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, তাতেই তিনি খুশি।  রাতের বেলায় ব্যালট বাক্স নিয়ে  কী হয়েছে , সেটা নিয়ে প্রশ্ন করবেন না!  দেখুন,  কী ভয়ংকর ফ্যাসিস্ট  ভাবনা এরা নিজেদের অন্তরে গেথে রেখে  পুরো সমাজকে কলুষিত করেছে!  একটি গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে এরাই মূল প্রতিবন্ধক!

No comments:

Post a Comment