• ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়।
• শনিবার শেষ হলো প্রশ্নবিদ্ধ এসএসসির লিখিত পরীক্ষা।
একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের মধ্য দিয়ে এসএসসির লিখিত পরীক্ষা গতকাল শনিবার শেষ হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণাসহ এক ডজন সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে পারেনি সরকার। ১৭ দিন লিখিত পরীক্ষা ছিল। এর মধ্যে ১২ দিনে আবশ্যিকসহ ১২টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, যা প্রশ্নপত্র ফাঁসের রেকর্ড।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশে ১৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার প্রশ্ন ফাঁসের ছয়টি সম্ভাব্য ক্ষেত্র চিহ্নিত করলেও কোথা থেকে প্রশ্নগুলো ফাঁস হচ্ছে, সেটি বের করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষায় নির্ধারিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে ‘প্রশ্নব্যাংক’ করে সেখান থেকে পরীক্ষার আগমুহূর্তে প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা নেওয়া, বহু নির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) উঠিয়ে দেওয়াসহ পরীক্ষা পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও শিক্ষাবিদেরা বলছেন, ভেবেচিন্তে পরীক্ষায় পরিবর্তন আনতে হবে।
প্রথম দুই দিনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে ৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরকে প্রধান করে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ে আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রাথমিক সত্যতা পেলেও এখন পর্যন্ত কমিটি পরীক্ষা বাতিল হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন, তাঁরা আজ রোববার তৃতীয়বারের মতো বসছেন।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তাঁরা পরীক্ষা বাতিলের বিপক্ষে। তাঁদের যুক্তি হলো, এবার পরীক্ষা শুরুর আগমুহূর্তে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, এতে পরীক্ষার্থীদের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েনি।
এ ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় উচ্চ আদালত বিচারিক ও প্রশাসনিক নামে দুটি কমিটি করে দিয়েছেন। প্রশাসনিক কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ। অন্যটির নেতৃত্বে রয়েছেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ। জানতে চাইলে প্রশাসনিক কমিটির সদস্য বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহেল রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আদালতের প্রত্যয়িত কপি পেয়েছেন। এখনো কমিটি পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হয়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছেন।
১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। গতকাল ভূগোল ও পরিবেশের পরীক্ষার মাধ্যমে শেষ হয় আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের এসএসসির লিখিত পরীক্ষা। আজ থেকে শুরু হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা।
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পরীক্ষা শুরুর সাত দিন আগে কোচিং সেন্টার বন্ধ, পরীক্ষার্থীদের আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষা কক্ষে বসা এবং কেন্দ্রের ভেতর মোবাইল ফোন না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু তাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হয়নি। বরং দিন যত গেছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ততই বেড়েছে। পরে প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা ও পরীক্ষা চলাকালীন কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যে কারও কাছে মোবাইল পেলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করাসহ আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কোনো উদ্যোগই কাজে আসেনি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় অনেককে ধরা হচ্ছে, কিন্তু মূল উৎসে যেতে না পারাটা ব্যর্থতা। উৎস বের করতে না পারলে এটা বন্ধ হবে না। তিনি বলেন, নতুন পদ্ধতিতে হয়তো প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কিছুটা পরিবর্তন আসবে। কিন্তু বোর্ডসহ পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট কাজে যাঁরা জড়িত, তাঁদের মধ্যেও পরিবর্তন, স্বচ্ছতা আনতে হবে।
- Courtesy: Prothom Alo Feb 25, 2018