— Sultan Mohammed Zakaria
- The writer is South Asia Researcher for Amnesty International. His Twitter handle is: @smzakaria
— Sultan Mohammed Zakaria
এক।
যে আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে নির্বাচিত সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, কারচুপিবিহীন ও প্রশ্নহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়েছিল, সে লক্ষ্য যে আজও পূরণ হয়নি, তা বিগত দশ বছরে সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সব ধরনের নির্বাচনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। ভোট কেন্দ্র দখল, কারচুপি, জালভোট এমনকি ভোটের আগের রাতে ভোট হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। দেশের যে কোনো নির্বাচন এলেই সাধারণ মানুষ ধরে নেয়, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত। ক্ষমতাসীন দলের নমিনেশন পাওয়া মানে সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে সিটি মেয়র, পৌর মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার গ্যারান্টি। ফলে ক্ষমতাসীন দলের নমিনেশন পাওয়ার জন্য প্রার্থীদের যে ভিড় লক্ষ্য করা যায়, ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের তার ছিঁটেফোটাও দেখা যায় না। বৃহত্তম বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও ভোটের দিন তাদের কোনো পাত্তা থাকে না। অনেক সময় দিনে দুপুরেই বর্জন করে চলে আসে। দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ক্ষমতাসীন দলের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা দেন। দেখা যায়, এ ঘোষণায় তারা অটল থাকতে পারেন না। আবারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হচ্ছে, আমরা দেখাতে চাই ক্ষমতাসীন দলের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দলের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য, নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্য বৃহত্তম বিরোধী দলটি অংশগ্রহণ করে মাঝপথে সরে যায়। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতাসীন দল ও বৃহত্তম বিরোধী দলটির মধ্যে একধরনের বাগযুদ্ধ চলছে। এই বাকবিতন্ডা হলেও তা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা রাখছে না। ফলে সাধারণ মানুষ ও ভোটাররাও নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তারা ভোট দিতে যায় না। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সমর্থকরাও অনেক সময় ভোট দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। তারা বিলক্ষণ জানেন, আমাদের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত এবং তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন রয়েছে। কাজেই কষ্ট করে ভোট দিতে যাওয়ার দরকার কি!
দুই।
দেশের সচেতন মহল থেকে শুরু করে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা যে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে অনুষ্ঠিত সব ধরনের নির্বাচনে অসন্তুষ্ট তা তারা বিভিন্ন সময়ে সভা-সেমিনারে বক্তব্য দিয়ে এবং পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখে পরামর্শ দিয়েছেন। এতে ক্ষমতাসীন দলের যে কিছু যায় আসে না, তা নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার কোনো উদ্যোগ না নেয়া থেকেই বোঝা যায়। নির্বাচনে কিছু ভোটার এনে নামকাওয়াস্তে লোক দেখানো ভোটের দৃশ্য দেখানোর মধ্যেই সে সন্তুষ্ট। কে কি বলল, তার আমলে নিচ্ছে না। তার মধ্যে এ প্রবণতা বিদ্যমান, ভোট তো হচ্ছে, মানুষ ভোট দিতে না এলে তার কি করার আছে? সরকারের সাথে তাল মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনও একই বক্তব্য দেয়। তার কথা, ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের আনার দায়িত্ব তার নয়। তবে সে এটা ভুলে থাকতে চায়, অতীতে দেশের ভোটের চিত্র কেমন ছিল। সেসব ভোটের কোথাও কোথাও অনিয়ম হলেও সেগুলোতে যে বিপুল ভোটারের উপস্থিতি ছিল, তা মনে করতে চায় না। মনে করতে গেলে তার ব্যর্থতা দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমাদের দেশে ভোট কারচুপি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ইত্যাদি স্বাধীনতার পর থেকেই হয়ে আসছে। এর বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর জোরালো আন্দোলন মূলত গড়ে উঠে আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে। একদিকে স্বৈরাচারকে ক্ষমতা থেকে হটানো, অন্যদিকে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার আন্দোলন চলতে থাকে। বৃহৎ বিরোধী দলসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সাথে সমবিভ্যহারে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলও এসব আন্দোলনে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। মানুষের ‘ভোট ও ভাতের অধিকার’ নিশ্চিত করার স্লােগান নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন করে। আন্দোলনে বহু রক্ত ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের পতনের পর বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়, কার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে? যেহেতু সব বিরোধী দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কারণে স্বৈরাচারের পতন ঘটে, তাই তাদের মতাদর্শগত ভিন্নতা থাকলেও একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনদের নিয়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে একমত পোষণ করে। এই সরকারের প্রধান হবেন প্রধান বিচারপতি এবং তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনদের নিয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করবেন। এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করবেন। সবাই এই সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হয়। এতে সংবিধানে সংশোধনীও আনতে হয়। পরবর্তীতে এটা একটা অটো সিস্টেম হয়ে দাঁড়ায়। যে দল ক্ষমতাসীন তাকে কর্মরত প্রধান বিচারপতির হাতে ক্ষমতা দিয়ে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হতো। যদিও যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সে নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে তার অনুগত লোকজন যাতে তত্ত¡াবধায়ক সরকারে আসে এমন কূটকৌশল অবলম্বন করত। যাই হোক, স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল, তার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিল বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপি, যা তখন কেউ যেমন কল্পনা করতে পারেনি, তেমনি বিএনপি এবং তার সমর্থকদেরও ভাবনায় ছিল না। দলটি অনেকটা বিরোধী দলে বসার প্রস্তুতি নিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ এতটাই নিশ্চিত ছিল যে, সে ক্ষমতায় যাচ্ছে। সে সময় শুনেছি, দলটির অনেক বড় বড় নেতা মন্ত্রী হওয়ার জন্য আগেভাগেই স্যূট-কোট বানাতে দিয়ে দিয়েছিল। নির্বাচনের পর দেখা গেল, আওয়ামী লীগ নয়, জয়ী হয়েছে বিএনপি। এটা আওয়ামী লীগের মাথায় বাজ পড়ার মতোই ছিল। দলটির নেতারা দাবী করে বসেন, নির্বাচনে সূ² কারচুপি হয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের সুষ্ঠুতার কাছে তাদের এ দাবী ধোপে টিকেনি এবং এক পর্যায়ে তারা নির্বাচনটি মেনে নেন। এভাবে ’৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। একইভাবে ২০০১ সালে আসে বিএনপি। গোল বাঁধে ২০০৭ সালে যখন বিএনপি তার দলীয় অনুগত লোকজন নিয়ে তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠন করে। এ ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে না বলে আওয়ামী লীগ ও তার জোট বেঁকে বসে এবং আন্দোলন-সংগ্রাম করে। কোনো ফয়সালা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওয়ান-ইলেভেন নামক এক ভিন্ন ধরনের সরকার গঠিত হয়। নামে তত্তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেও নেপথ্যে তার নিয়ন্ত্রণ থাকে সামরিক বাহিনীর হাতে। এ সময় দুই নেত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। মূল দল থেকে বের হয়ে দুই দলে সংস্কারপন্থী নামক একদল লোকজনের উদ্ভব ঘটে। তাদের মাধ্যমে দুই নেত্রীকে মাইনাস করার ফর্মূলাও দেয়া হয়। তবে দুই দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা-কর্মীর কাছে তারা ‘কুসংস্কারপন্থী’ হিসেবে আখ্যায়িত হন। তারা দুই নেত্রীকে বাদ দেয়ার যে মিশন নিয়ে নেমেছিলেন, তাতে সফল হতে পারেননি। এ নিয়ে রাজনীতিতে নানা নাটকীয় ঘটনা শুরু হয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাস থাকার কথা থাকলেও তা দুই বছর পর্যন্ত প্রলম্বিত হয়। বহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে আর্মি ব্যাকড তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার জোট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে।
তিন।
আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয় দলটিকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। দলটির মনে হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আর নির্বাচন করার প্রয়োজন নেই। পরবর্তী নির্বাচন হবে নির্বাচিত তথা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন মহাজোটের অধীনে। যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানো হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অনির্বিচিত সরকার এবং তা অগণতান্ত্রিক। সারাবিশ্বে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই নির্বাচন হয়। পার্শ্ববর্তী ভারত, যক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন হয় এবং বিরোধী দলগুলো তাতে অংশগ্রহণ করে। এতে গণতন্ত্র বিকশিত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে এবং মানুষও গণতন্ত্র মনস্ক হয়ে উঠে। সরকার এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে একে অপরের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি হয়। সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধান থেকে তুলে দেবে। এর বিরোধিতা করে তখন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার জোটসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল চরম বিরোধিতা ও আন্দোলন শুরু করে। বিষয়টি উচ্চ আদালতে যায় এবং সরকারও এর পক্ষে-বিপক্ষে মতামতের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। বিরোধী দলসহ দেশের বিশিষ্টজনদের কমিটির কাছে মতামত ব্যক্ত করার আমন্ত্রণ জানানো হয়। দেখা গেছে, সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করে। এর মধ্যে আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ বলে রায় দেয় এবং পরবর্তী একটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে মত দেন। সরকারও তা কালবিলম্ব না করে তা লুফে নেয়। আদালতের রায় মানতে হবে এ যুক্তিতে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেয়। যদিও আদালতের পরবর্তী নির্বাচনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার আদালতের মত আমলে নেয়া হয়নি। প্রধান বিরোধী দল ও তার জোট অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেও সরকারকে টলাতে পারেনি। সরকার অনড় অবস্থানে থেকে বিরোধী দলের আন্দোলন এবং ব্যাপক সহিংসতার মাধ্যেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন করে ফেলে। নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোটসহ অন্যান্য দল অংশগ্রহণ করেনি। ক্ষমতাসীন দল তার মহাজোট নিয়েই নির্বাচন করে। ফলে নির্বাচনের আগেই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন দলের ১৫২ জন এমপি বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়ে যান। অন্যদিকে নির্বাচনের দিন ব্যাপক সহিংসতার কারণে অধিকাংশ ভোট কেন্দ্র ভোটার শূন্য হয়ে পড়ে। এ নির্বাচনকে তখন বিশ্লেষকরা দেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন এবং ভোটারশূন্য নির্বাচন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিরোধী দলগুলোর দাবী ছিল এ নির্বাচনে শতকরা ৫ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছেন। আর নির্বাচন কমিশনের দাবী শতকরা ৪০ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছেন। তবে যে কজনই ভোট দিয়ে থাকুক না কেন, ক্ষমতাসীন দল তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। দলটির বড় যুক্তি ছিল, সংবিধান অনুযায়ী তারা নির্বাচন করেছে এবং এর ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। তাতে সাংবিধানিক সংকট দেখা দিতে পারে। দেশে-বিদেশে নির্বাচনটি তুমুল বিতর্কিত হলেও ক্ষমতাসীন দল প্রতিবেশী একটি দেশের সহায়তায় বিদেশীদের বোঝাতে সক্ষম হয়, সংবিধান অনুযায়ী এ নির্বাচন করা ছাড়া তার আর কোনো বিকল্প ছিল না। তার এ যুক্তি বিদেশীরা মেনে নেয়। বিতর্কিত এ নির্বাচনের পর সরকারের রোষানলে পড়ে আন্দোলনরত বৃহৎ বিরোধী দল ও তার জোটের নেতা-কর্মীরা লাখ লাখ মামলায় জড়িয়ে একেবারে নাস্তানাবুদ হয়ে যায়। ক্ষমতাসীন দল রাজনীতির মাঠে তার প্রতিপক্ষকে কোনঠাসা করে নিস্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম হয়। সভা-সমাবেশ করতে দেয়া দূরে থাক সাধারণ মানববন্ধন করতেও দেয়া হয়নি। এক পর্যায়ে বিএনপি নেত্রীকেও দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে যেতে হয় এবং সরকারের বদান্যতায় জেল থেকে মুক্ত হলেও তিনি এখন ঘরবন্দী হয়ে রয়েছেন। ২০০৯ সালের পর থেকে এবং ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনসহ এ পর্যন্ত যেসব নির্বাচন হয়েছে দেখা গেছে, সব নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন দলের জয়জয়কার। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনটিতো ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের চেয়েও কৌশলগত দিক থেকে অভাবনীয় ছিল। নির্বাচনের আগের দিন রাতেই প্রশাসনের সহায়তায় ব্যালট বক্স ভর্তি করে নির্বাচন করা হয় বলে বিরোধী দল থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেন। এ নির্বাচনকে অভিহিত করা হয়, ‘রাতের ভোট’ হিসেবে। গত এক দশক ধরে বিরোধী দল বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও উল্লেখ করার মতো তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। নির্বাচনগুলো ক্ষমতাসীন দলের মধ্যকার প্রতিদ্ব›দ্বীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। দল থেকে নমিনেশন পাওয়া এবং না পাওয়া বা বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে। এতে কখনো নমিনেশন পাওয়া প্রার্থী বিজয়ী হয়, কখনো বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়। গত এক দশক ধরে এ ধরনের নির্বাচনের ফলে সাধারণ মানুষ ও ভোটাররা নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে এখন এ ধারণা, ভোট দিয়ে লাভ নেই। কারণ, তাতে তাদের ভোটের কোনো মূল্য থাকে না। বিশিষ্টজনরা গণতন্ত্রের জন্য এ পরিস্থিতিকে ভীতিকর ও বিরাজনীতিকরণ হিসেবে অভিহিত করছেন। অন্যদিকে, এ ধরনের নির্বাচন করে ক্ষমতাসীন দল সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে এবং বিরোধীদল জনবিচ্ছিন্ন, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে বলে যুক্তি দিচ্ছে।
চার।
দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা যে ভেঙ্গে পড়েছে, তাতে একজন সাধারণ মানুষও বোঝে। যেভাবে নির্বাচন হয়, তাকে তারা মানতে না পারলেও তাদের কিছু করার নেই। কারণ, তাদের ভোট দেয়ার যেমন সুযোগ নেই, তেমনি সরকার ও নির্বাচন কমিশন সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি। ফলে সাধারণ মানুষ নির্বাচনবিমুখ এবং আগ্রহহীন হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশে গণতন্ত্র ও রাজনীতি বলে কিছু থাকবে না। তারা তাকিদ বোধ করছেন, ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি এবং গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য তারা পুরনো ফর্মূলা ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’কেই উপযুক্ত মনে করছেন। এ পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার পরামর্শও দিচ্ছেন। গত রোববার সুসাশনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মানুষ ভোটকেন্দ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় দেশের গণতন্ত্র ক্ষতি হচ্ছে। গণতন্ত্র ‘কাল্পনিক’ রূপ লাভ করায় উগ্রবাদীদের উত্থান ঘটতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে নাগরিকদের ভোটকেন্দ্রমুখী করতে হবে। একইসঙ্গে তারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে ‘বিরাজনীতিকরণ কমিশন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারা বলেছেন, আগে দেখতাম সামরিক শাসকরা ক্ষমতা দখল করে বিরাজনীতিকরণ করেন, এখন বেসামরিক সরকারও ইসির সহায়তায় রাষ্ট্রকে বিরাজনীতিকরণ করেছে। অন্যদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটও নতুন করে নির্দলীয় তাদারকি তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলেছে। তাদের এসব বক্তব্য থেকে এটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, দেশের সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট অনুষ্ঠানের জন্য দলীয় সরকার উপযুক্ত নয়। এর জন্য প্রয়োজন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ ধরনের সরকারের মাধ্যমে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব এবং মানুষ উৎসবমুখর হয়ে ভোট দিতে যায়, তা একাধিকবার প্রমানিত হয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে যে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয় না, তাও প্রমানিত। এতে যেমন ভোটাররা ভোটাধিকার হারিয়েছে, তেমনি গণতন্ত্রও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেনি। এই পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায়, অন্তত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অনির্বাচিত হলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারই সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
লেখক সাংবাদিক।
— আশরাফুল হক ও মামুন আব্দুল্লাহ
দেশের সবগুলো বেসরকারি টেলিযোগাযোগ কোম্পানি যখন চুটিয়ে ব্যবসা করছে, তখন উল্টোপথে হাঁটছে সরকারি মালিকানাধীন টেলিটক। গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের মতো প্রতিষ্ঠান বছরে হাজার কোটি টাকা মুনাফা করলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান ২৬৯ কোটি টাকা। যদিও এই লোকসানের পেছনে যৌক্তিক কারণ আছে বলে সাফাই গেয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী। অন্যদিকে সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন গত অর্থবছরে লোকসান গুনেছে ২৬৩ কোটি টাকা। এভাবে একই অর্থবছরে সরকারের ৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মোট লোকসানের পরিমাণ ৪ হাজার কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাষ্টায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানে থাকার বড় কারণ অনিয়ম, অদক্ষতা ও দুর্নীতি। এ ছাড়া চরম অব্যবস্থাপনা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর করে তুলেছে। এ ক্ষেত্রে সময় বেঁধে দিয়ে মুনাফায় ফিরতে না পারলে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তা করা উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
টেলিটকের লোকসানের কারণ জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘টেলিটকের লোকসানের যৌক্তিক কারণ রয়েছে। সরকারি এই অপারেটরের নেটওয়ার্ক নেই। গ্রামে-গঞ্জে সব মানুষ টেলিটক ব্যবহার করতে চায়, কিন্তু নেটওয়ার্ক পায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ সালে গ্রামীণফোনের বিনিয়োগ যেখানে ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা, সেখানে টেলিটকের ছিল ৩ হাজার কোটি টাকা। এই বিনিয়োগ দিয়ে কম্পিটিশন করা অসম্ভব। তবে আশার কথা হলো টেলিটকের বিনিয়োগ বাড়ছে। ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। আশা করি এটি পাস হলে টেলিটকের উন্নয়ন হবে। একই সঙ্গে শিগগিরই মুনাফাও করতে পারবে।’
গত ২ নভেম্বর মন্ত্রিসভা বৈঠকে সব সরকারি কোম্পানি ও সংস্থার লাভ-লোকসান অনুমোদন করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, সর্বোচ্চ লোকসানে থাকা সরকারের ১০ সংস্থার মধ্যে লুটপাটের শিকার হওয়া বেসিক ব্যাংক রয়েছে। ব্যাংকটি লোকসান দিয়েছে ৩১৯ কোটি টাকা। তবে লোকসানে বেসিক ব্যাংককে ছাড়িয়ে গিয়ে শীর্ষ স্থান দখল করেছে কৃষি ব্যাংক। এই ব্যাংকের লোকসান ১ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। তাদের পাশাপাশি কৃষি উন্নয়নে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকও লোকসান দিয়েছে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা।
প্রাকৃতিক গ্যাসকেন্দ্রিক ব্যবসা করে সব প্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটলেও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এলপি গ্যাস লিমিটেড। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দিয়েছে সাড়ে তিন কোটি টাকা। পাটকল করপোরেশন লোকসান দিয়েছে প্রায় সাত কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের লোকসান দাঁড়িয়েছে ২৬৩ কোটি টাকায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. মীর্জ্জা এবি আজিজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে লোকসানের বড় কারণ অদক্ষতা ও কিছুটা দুর্নীতি। এখানে জনবল রিক্রুট থেকে শুরু করে পরবর্তী কার্যসম্পাদনে সমস্যা থাকে। এসব সংস্থায় শ্রমিকদের একটি বেপরোয়াভাব থাকে। কারণ জবাবদিহির ঘাটতি রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লোকসানি প্রতিষ্ঠানকে একটি টাইমলাইন বেঁধে দেওয়া উচিত। নির্দিষ্ট সময়ে তারা ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। কারণ বছরের পর বছর সরকার লোকসান টানতে পারে না।’
একই ধরনের মত দিয়েছেন বিশ^ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একই ধরনের বেসরকারি কোম্পানি যে খাতে অতি মুনাফা করছে, সেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠান মোটা অঙ্কের লোকসান দিচ্ছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি। তবে এর চেয়ে বড় কারণ জবাবদিহি না থাকা। আর যতটুকু আছে তা শুধু কাগজে-কলমে।’
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। আদমজী পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। এখন সেটা প্রমাণিত। সম্প্রতি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখানে লোকসানি অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়েও পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে তাদের সময় বেঁধে দিয়ে দেখা যেতে পারে।’
তথ্য অনুসারে, লোকসানের তালিকায় থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই রয়েছে। এর মধ্যে সারকারখানাগুলো লোকসানের শীর্ষে। শাহজালাল ফার্টিলাইজার লোকসান দিয়েছে ২৬৪ কোটি টাকা। চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজারের লোকসানের পরিমাণ ১৪৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া যমুনা ফার্টিলাইজারের লোকসান ৬২ কোটি, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানির ৭২ কোটি, পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরির ৬ কোটি ও ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি ১৭৪ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।
দেশ রূপান্তরের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি সিমেন্ট কোম্পানিগুলো চুটিয়ে ব্যবসা করলেও মার খাচ্ছে সরকারি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি গত অর্থবছরে ৪০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। একই পথে হাঁটছে আরও বেশ কিছু সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বাংলাদেশ ইন্সুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি ১৯ কোটি, উসমানিয়া গ্লাস সিট ফ্যাক্টরি ১১ কোটি, এটলাস বাংলাদেশ ৩ কোটি, ইস্টার্ন কেবলস ১৩ কোটি, ইস্টার্ন টিউবস ৪ কোটি, কর্ণফুলী পেপার মিলস ২০ কোটি, বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি ৪ কোটি এবং ঢাকা স্টিল ওয়ার্কস ২৩ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা ১৪টি সুগার মিলের সব কটি লোকসান দিচ্ছে বছরের পর বছর। এর মধ্যে গত বছর সবচেয়ে বেশি লোকসান দিয়েছে নর্থ-বেঙ্গল সুগার মিলস। যার পরিমাণ প্রায় ৯৫ কোটি টাকা। মোবারকগঞ্জ সুগার মিলস ৯৩ কোটি টাকা এবং ৮৪ কোটি টাকা করে লোকসান দিয়েছে রাজশাহী ও নাটোর সুগার মিলস। এ ছাড়া জয়পুরহাট সুগার মিলস ৭৭ কোটি, পঞ্চগড় সুগার মিলস ৬২ কোটি, রংপুর সুগার মিলস ৬১ কোটি, শ্যামপুর সুগার মিলস ৬৩ কোটি, সেতাবগঞ্জ সুগার মিলস ৬৩ কোটি, ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস ৮০ কোটি, পাবনা সুগার মিলস ৬১ কোটি, কুষ্টিয়া সুগার মিলস ৬২ কোটি, ফরিদপুর সুগার মিলস ৭০ কোটি ও ঝিলবাংলা সুগার মিলস ৬২ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।
৬৫ প্রতিষ্ঠানের ১৫ হাজার কোটি টাকা লাভ : অনেকগুলো সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর লোকসান গুনলেও সরকারি মালিকানাধীন ৬৫টি কোম্পানি গত অর্থবছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। যদিও স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনা করা হলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে আরও বেশি লাভ আসার কথা বলে মনে করেন অনেকেই। গত অর্থবছরে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক একাই করেছে ২ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের মুনাফা ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। সবচেয়ে কম মুনাফা করেছে রূপালী ব্যাংক ২৪৮ কোটি টাকা।
সরকারি মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম ও বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানিগুলো বরাবরের মতো মুনাফা করেছে। এর মধ্যে ৪ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। এ ছাড়া কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ৪৮৬ কোটি, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড ৪৬৪ কোটি, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ৩৮৩ কোটি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি (এসিসিএল) ৩৪৫ কোটি এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড ৩০৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।
বরাবরের মতো চট্টগ্রাম বন্দরও মুনাফা করেছে। যার পরিমাণ ১ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষ ৩১০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।
তরুণ বয়সে ১৯৮৮ সাল থেকেই বগুড়ায় জাতীয়তাবাদী দলের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে তারেক রহমান তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন এবং ক্রমান্বয়ে বিকশিত হতে থাকেন। সেই ধারাবাহিকতায় অনেক সাফল্য নির্মাণ করে যেই তিনি জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে দলের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেন, অমনি তিনি প্রতিপক্ষের টার্গেট হয়ে গেলেন। ২০০১ সালে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে আসে অনেক গুণগত পরিবর্তন। সবাই এ কথা বলেছেন যে, ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি যে সমন্বিত প্রচার কৌশল অবলম্বন করেছিল অতীতে তা কখনো করেনি। আর এ প্রচার কৌশলের মুখ্য নিয়ন্ত্রক ছিলেন তারেক রহমান। স্মর্তব্য যে, ’৯৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ পরবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতা দখলের সব ধরনের আয়োজন পাকাপোক্ত করে রেখেছিল। কিন্তু তারেক রহমানের পলিসির কাছে শোচনীয় পরাজয় ঘটে তাদের। ২০০১ সালের ওই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়। এরপরই শুরু হয় তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা। পরবর্তীতে তারেক রহমান দেশব্যাপী বিএনপি ও ছাত্রদলের তৃণমূল প্রতিনিধি সভার আয়োজনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপিকে অত্যন্ত শক্তিশালী দলে পরিণত করলে শুরু হয় আরো নানামুখী চক্রান্ত ও প্রপাগান্ডা। তারেক রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাপারে তথ্য-প্রমাণ হাজির করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। এরপরও মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে গেলে তিনি আইনের আশ্রয় নেন। বিষোদ্গারকারীদের নামে উকিল নোটিশ পাঠান। এরপর কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও সেনা-সমর্থিত মইন-ফখরুদ্দীনের সরকারের সময়ে মহলটি আবারও গলা উঁচিয়ে মিথ্যাচার চালাতে থাকে। এই মিথ্যা প্রচারণার কাছে সত্য চাপা পড়ে যায়। আর সেই প্রেক্ষাপটে গোটা জাতিকে হতবাক করে দিয়ে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ সেনানিবাসের শহীদ মইনুল রোডের বাড়ি থেকে রাতের অন্ধকারে তারেক রহমানকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী।
এখানে প্রশ্ন দাঁড়াতে পারে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ না হয় তাঁর চমকপ্রদ উত্থানে, বিপুল জনপ্রিয়তায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছিল, কাজেই তাঁর বিরুদ্ধে লাগাতার মিথ্যাচার ও প্রপাগান্ডা করা তাদের জন্য জরুরি হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ১/১১-এর সরকার তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল কেন? একটু খেয়াল করলেই এর উত্তর মিলবে। ২০০৬ সালের শেষের দিকে লগি-বৈঠার তাণ্ডবের কথা নিশ্চয়ই অনেকের স্মরণ আছে। লীগনেত্রী বায়তুল মোকাররমের ওই সভায় কর্মীদের লগি-বৈঠা নিয়ে হাজির হতে বলেছিলেন। তারপর যে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড সেখানে ঘটালো গোটা বিশ্ব তাতে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। মানুষ যেমনি করে পিটিয়ে সর্প হত্যা করে তেমনি নির্মমতায় প্রকাশ্য রাজপথে লগি-বৈঠা দিয়ে তারা পিটিয়ে পিটিয়ে প্রতিপক্ষ কর্মীদের হত্যা করেছে, মৃতদেহের উপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করেছে। এমন নারকীয় ঘটনার ধারাবাহিকতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘাড়ের ওপর সওয়ার হয়েছে ১/১১-এর জরুরি সরকার। সেই জরুরি সরকারের চাপে লীগনেত্রী যখন বিদেশে যাচ্ছিলেন তখন বিমানবন্দরে কর্মীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, এই সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল, এদের সব কাজের বৈধতা দেবো আমরা। পরবর্তীতে মইন-ফখরুদ্দীনের সরকারের গতিবিধিও দেশের মানুষ পর্যবেক্ষণ করেছে। তাতে স্পষ্ট হয়েছে, জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে আক্রোশ আর তারেক রহমানকে প্রাইম টার্গেট করার ঘটনা আকস্মিক নয়। লগি-বৈঠার তান্ডব, ১/১১-এর অবৈধ সরকার, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র একই সূত্রে গাঁথা এবং দীর্ঘমেয়াদি। এটি দেশী-বিদেশী চক্রের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত ও কারসাজি। কারণ তারা বুঝে গিয়েছিল, তারেক রহমানের দেশপ্রেম ও গণমানুষের প্রতি দরদ প্রশ্নাতীত। তাঁর আধুনিক চিন্তা, মেধা, শ্রম বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করতে পারে। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও দেশের স্বার্থ তাঁর নেতৃত্বেই অটুট থাকবে। নেতৃত্ব বজায় রাখার জন্য কোনো শক্তির কাছে তিনি দেশের স্বার্থ বিক্রি করবেন না। অন্য কোনো দেশে তাঁর নাগরিকত্ব নেই এবং বিদেশী কোনো শক্তির কৃতজ্ঞতাপাশে তিনি আবদ্ধ নন। সে কারণে তাঁর নেতৃত্বের বাংলাদেশ অন্য কোনো শক্তির আজ্ঞাবহ হবে না। অতএব, রুখে দাও তারেক রহমানকে। এক-এগারোর নেপথ্য সঞ্চালক কুশীলবরাও তাই উঠেপড়ে লেগেছিল তারেক রহমানকে নিঃশেষ করে দিতে। তাদের ইঙ্গিতে ও মদদে সিন্ডিকেটেড পত্রিকাগুলো প্রতিদিনই একাধিক ‘টেবিল মেকিং’ প্রতিবেদন তৈরি করে, যাচ্ছেতাই লিখে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে থাকে। আর ১/১১-এর সরকার দিয়ে ১৩টি বানোয়াট মামলা, যার একটিতেও তারেক রহমান সরাসরি আসামি নন। কারণ, তিনি তো সরকারি কোনো পদেই ছিলেন না। তাহলে? মামলাগুলোর কথিত আসামিদের ধরে বেঁধে পিটিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ই ছিল তারেক রহমানকে ফাঁসানোর অস্ত্র। অনেক কোশেশ করেও সেই মামলাগুলো টিকিয়ে রাখতে পারেনি ১/১১-এর সরকার। ১৩টির মধ্যে ১১টিই উচ্চ আদালতের রায়ে স্থগিত হয়ে যায়। ‘দিনকাল’ সংক্রান্ত মামলাটিও খারিজ হয়ে যায়। একটি মামলা বিচারাধীন থাকে। সেখানেও তিনি মূল আসামি নন। তাঁর কোনো দোষ প্রমাণিত হয়নি। অথচ রিমান্ডে নিয়ে তাঁর ওপর যে বর্বরতম আচরণ করা হয়েছে তা নজিরবিহীন, নিষ্ঠুর, মানবতার চরম অবমাননা। তাঁর মেরুদন্ডের হাড় ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে, কাঁধের হাড়েও ফ্রাক্চার করা হয়েছে, হাঁটুর সংযোগস্থলের লিগামেন্ট ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তাঁকে যে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করার অভিসন্ধি নিয়েই বারবার রিমান্ডে নেয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত পরিষ্কার।
কিন্তু নব্য উমিচাঁদ, রায়দুর্লভ, রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, মীরজাফরদের সেই অভিসন্ধি যে সফল হবার নয়। দুর্দিনে যে দুঃস্থ-অসহায় মানুষগুলোর পাশে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন, যে কৃষক-মজুর-শ্রমিকের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে তিনি স্বয়ম্ভর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, যে মেধাবী দরিদ্র ছাত্রদের গোপনে সাহায্য করে তাদের মর্যাদাবান নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে অবদান রেখেছেন, যেসব কৃষিবিদ-টেকনোক্র্যাট-বিজ্ঞানী-উদ্ভাবকদের উৎসাহ ও পরামর্শ দান করে জাতির সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্মাণের মনছবি এঁকে দিয়েছিলেন তাদের মর্মবেদনা, কান্না, ফরিয়াদ, নিরন্তর আশীর্বাদ ও দোয়া তো বৃথা যেতে পারে না। তাই বুঝি বিচারকের বিচারক মহান রাব্বুল আ’লামীন তাঁর অন্তরে এমন শক্তি দিয়েছেন যে, প্রায় পঙ্গুদশা থেকেও তিনি আজও দেশবাসীর সেবা আর সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সংকল্পে অটল। মনে পড়ে ২০০৮ সালে অত্যাচার-নিষ্পেষণ-নিগ্রহের মর্মান্তিক চিহ্ন বহন করেই পীড়িত অবস্থাতেও আদালতে নির্ভীক কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন মানুষের উন্নয়নের জন্য, দেশের প্রবৃদ্ধির জন্য যেসব কাজ তিনি করেছেন, তা অস্বীকার করবেন কেন? তা যদি অপরাধ হয় তাহলেও সে কর্তব্য সম্পাদনে কেউ তাঁকে বিরত করতে পারবে না। এরপর প্রায় এক যুগ অতিক্রান্ত হতে চলেছে। তিনি আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ। হয়তো পুরোপুরি সুস্থ কোনোদিনই হবেন না। কিন্তু তাঁর প্রতিজ্ঞা থেকে একচুলও বিচ্যুত হননি। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার তাবৎ পরিকল্পনা আর ছক তিনি তৈরি করেই চলেছেন। আর পরিচিত জনদের কাছে তুলে ধরছেন ঋজুকণ্ঠ ‘তিক্ত অতীত ভুলে এখন সামনের দিকে এগোতে চাই। একদিন আমি ফিরব। বাংলাদেশ নিয়ে আমার স্বপ্নের রূপায়ণ ঘটাবো।’ দেশপ্রেম আর জনপ্রিয়তাই তাঁর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সৎ চিন্তা আর মহৎ কর্ম তো কখনো বিলীন হয় না। কালের কপোলতলে শুভ্র-সমুজ্জ্বল হয়ে বিরাজ করে, জ্যোতি ছড়ায়। তাঁর নেতৃত্বে সেই জ্যোতির্ময় বাংলাদেশ দেখার প্রতীক্ষায় রয়েছে এখন ১৬ কোটি মানুষ।
গ্রীক বীর মহামতি আলেকজান্ডার দিগ্বিজয়ে বের হয়ে এই উপমহাদেশের খাইবার গিরিপথ পর্যন্ত এসেছিলেন। সেখানে তাঁর সহকর্মীর উদ্দেশে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলেছিলেন, ‘কী বিচিত্র এই দেশ সেলুকাস!’ বিচিত্র কেন? সেটা কি ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে? ঋতু বৈচিত্র্যের কারণে? নাকি মানুষের স্বভাবগত বৈপরীত্বের কারণে? সেটা ইতিহাসবেত্তাদের গবেষণার বিষয়। তবে ইতিহাস থেকে আমরা আরো জানি, এক মোগল সম্রাট নৌবিহারে বাংলা মুলুক পর্যন্ত এসেছিলেন। এখানকার নদীর জোয়ার-ভাটা দেখে তিনি ভড়কে গিয়েছিলেন। তাই সঙ্গী-সাথীদের এই বলে সতর্ক করেছিলেন যে দেশের ভূমি সকালে একরকম, বিকেলে আরেক রকম, সে দেশের মানুষের মনের গতিও এক এক সময় এক এক রকম হতে বাধ্য। অবশ্য আমরা জানি, ভিনদেশীরা যে যেভাবেই ব্যাখ্যা করুন, আমাদের আমজনতা চিরকালই সহজ-সরল। তারা যেমন সইতে জানে, তেমনি লড়তেও জানে। বিভেদের বীজ তাদেরকে সাময়িক দিগ্ভ্রান্ত করলেও চরম বিপর্যয়ে তারা ঠিকই ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে তোলে এবং শত্রুর বিরুদ্ধে বজ্র হুঙ্কার দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইতিহাসে এ সত্য বার বার প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী কুচক্রী বার বার বিশ্বাসঘাতকতা করে আমাদের সোনালী ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছে। পলাশী ট্রাজেডির ঘটনা তারই একটি জাজ¦ল্যমান দৃষ্টান্ত। বিশ্বাসঘাতকতার জন্য আজ আড়াইশ’ বছর পরও যিনি সর্বাধিক নিন্দিত ও ধিক্কৃত সেই মীরজাফর তো ছিল রক্ত-মাংসে ভিনদেশী। কিন্তু রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, রাজবল্লভ, জগৎশেঠ এরা তো নেটিভ ছিল! এদের সম্মিলিত চক্রান্তের কারণেই কি ক্ষমতালোলুপ মীরজাফর পলাশীর আরকাননে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করার স্পর্ধা পায়নি? এদের মিলিত ষড়যন্ত্রই কি বাংলার স্বাধীনতা ভিনদেশী বেনিয়া ইংরেজের পদতলে নৈবেদ্য হয়নি? সেই রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, রাজবল্লভ, জগৎশেঠদের প্রেতাত্মারা যে এদেশে কিছু স্বার্থগৃধ মানুষের ওপর ভর করেছে, তারেক রহমানের ঘটনা পর্যালোচনা করলে তা পরিষ্কার বুঝা যায়।
সেনা সমর্থিত ১/১১ সরকারের নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার তারেক রহমান আজও অর্ধপঙ্গুত্ব দশা নিয়ে বিদেশে চিকিৎসায় রত। ২০০৯ সালে লন্ডনে প্রখ্যাত সাংবাদিক শওকত মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অভিমানসৃত কণ্ঠে বলেছিলেন, “কেন আমার ওপর এই অমানুষিক নির্যাতন হলো? কত তদন্তই তো হলো, কিছুই তো প্রমাণ হলো না। অথচ অত্যাচারের কারণে সারাজীবন আমাকে পঙ্গুত্ব আর অসহ্য বেদনা বয়ে বেড়াতে হবে.... আমার বাবা জিয়াউর রহমান গ্রামে-গঞ্জে অবিরাম হেঁটে হেঁটে মানুষের মাঝে থাকার রাজনীতি করতেন। আমিও শুরু করেছিলাম সেই হাঁটা, বলুন তো, কেন ওরা আমার মেরুদন্ড ভেঙ্গে আমাকে স্থবির করতে চেয়েছিল? সেই হাঁটা, সেই রাজনীতি বন্ধ করতে?” উপলব্ধি যথার্থ। এ দেশ যদি স্বয়ম্ভর ও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে, তাহলে বাংলাদেশের গরিবি দশাকে পুঁজি করে যারা এ দেশকে নানাভাবে গ্রাস করতে চায় তাদের অবস্থা কী দাঁড়াবে? তারেক রহমানের মতো ডাইনামিক নেতা যদি জনপ্রিয়তার মাঝে অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন, আর তাঁর দল যদি সুশৃঙ্খল আর সুসংগঠিত হয়ে ক্ষমতামঞ্চে দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে যেসব স্বার্থবাদী মানুষ ও দল এদেশকে লুটেপুটে খাওয়ার ফন্দি-ফিকিরে মত্ত তারা কোথায় যাবে? আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ওপর যে কারণে কুচক্রীরা হিংসার থাবা বিস্তার করেছিল, ঠিক একই কারণে অমিয় সম্ভাবনাময় রাজনীতিক তারেক রহমানকে নিশ্চিহ্ন করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তারা নানা কৌশলে, কখনো প্রচার-প্রপাগান্ডা করে, কখনো আদিম হিংসার শক্তি প্রদর্শন করে তারা। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তরুণ তারেক রহমান যে সাংগঠনিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন, সততা ও ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, গণমানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে তাদের অন্তর জয় করে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, সর্বোপরি স্বয়ম্ভর বাংলাদেশ গড়তে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশপ্রেমের যে উজ্জ্বল পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন সত্যিই তার তুলনা মেলা ভার। তাঁর এই চমকপ্রদ উত্থান আর ধারাবাহিক সাফল্যই তাঁকে করে তুললো প্রতিপক্ষের চক্ষুশূল। প্রতিপক্ষ বলতে যে শুধু রাজনৈতিক বা দলীয় প্রতিপক্ষ তা নয়। যারা এই সমাজের কল্যাণ চায় না তারা, যারা এই দেশের গৌরবময় উত্থান চায় না তারা সবাই একাট্টা হয়ে নেমে পড়লো অপপ্রচারে, গীবত আর জঘন্য মিথ্যাচারে। কত অলীক কাহিনী যে ফাঁদা হলো, ফিল্মী গল্পের মতো কতো কেসসা যে বানানো হলো তার ইয়ত্তা নেই। একশ্রেণীর মিডিয়া কোনকিছু না বুঝেই কিংবা অন্য কোনো কারণে প্রলুব্ধ বা প্রভাবিত হয়েই সেই প্রপাগান্ডায় যোগ দিল আর ফুলে-ফেঁপে সেগুলো প্রচার করে বিকৃত মুখ কিংবা হীন স্বার্থ চরিতার্থ করলো। বিস্ময় আর দুঃখের সাথে বলতে হয়, যারা এক সময় তারেক রহমানের কাছে সুবিধা সন্ধান করতে গিয়েছিল, তাঁর আশীর্বাদে মিডিয়ার মালিক বা হর্তাকর্তা সেজেছে তারাও ওই মিথ্যাচারে বাতাস লাগিয়ে শত্রুতা উস্কে দিয়েছিল।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর সাথে লেখক মিনার রশীদ। |
২০১৬ সালের অক্টোবরে এই অনুসন্ধিৎসু মন নিয়েই লন্ডনে যাই তারেক রহমানের সাথে দেখা করতে। বিষয়টি আমি কখনোই পাবলিক করতে চাই নি । কারণ অনুসন্ধানটি ছিল সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, খরচ সম্পূর্ণ নিজের পকেট থেকে । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এ বিষয়ে কিছু না লিখলে কোথায়ও অবিচার করা হবে ।
তাই আজ চার বছর পর সেই ঘটনাটি কিঞ্চিৎ লিখছি । তখনকার একটি ছবিও সংযুক্ত করলাম। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর আগে শোনা অনেক কিছুই মেলাতে পারি না । আমি এদেশের কেউকেটা কেউ নই । তারপরেও আমাকে যতটুকু সময় দিয়েছেন, আমার সঙ্গে যেভাবে কথা বলেছেন তাতে তাকে এতবড় দলের সেকেন্ডম্যান বলে মনে হয় নাই। আমি সেখানে থাকাবস্থায় দলের বেশ কয়জন সাধারণ নেতা কর্মীর সঙ্গে কথা বলতে দেখেছি । তাদের সকলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজেও এমন কিছু চোখে পড়ে নাই।
আমি চলে আসার দিন হোটেল থেকে নেমে আমাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছেন!
আমার তিন দিন অবস্থানের অধিকাংশ সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়েই ওয়ান টু ওয়ান আলোচনা করেছি। একটা নলেজ বেইজড পার্টি ও দেশ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছি। আমি বলেছি আমার থিওরিটিকাল কথা বার্তা। জবাবে উনি বলেছেন উনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা। সেগুলোর কিছু পাল্টা জবাব দিয়েছি। অনেকগুলির জবাব দিতে পারি নাই।
একুশে আগস্ট নিয়েও খুচিয়ে খুচিয়ে প্রশ্ন করেছি। ক্ষমতা গ্রহণ করলে নেতা কর্মীদের এতদিনের ক্ষোভ কিভাবে সামাল দিবেন — এক পর্যায়ে সেটাও জানতে চেয়েছি। নির্বাসিত একজন নেতা যার শত শত নেতা কর্মী গুম হয়েছে, হাজার হাজার জেল খাটছে, লাখ লাখ নেতা কর্মীর মাথায় মামলা — সেই নেতার পক্ষে এমন প্রশ্নের জবাব দেয়া সত্যিই কঠিন। উনার জবাব আমার মন:পুত না হলে পাল্টা প্রশ্ন করেছি । এই সব প্রশ্ন এবং পাল্টা প্রশ্নে আমার মনে কোনো ভয় জাগেনি যে আমি একজন ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছি ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ আর্মির একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর তারেক রহমানকে বেশ কিছু নসিহত করেছেন। তাঁর অভিযোগ, তারেক রহমান দলের বয়স্ক নেতাদের সম্মুখে হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। ভিডিওটি দেখে একটু খটকা খেলাম। বয়েস হিসাব করে দেখলাম উনি নিজেও তারেক রহমানের জুনিয়র হবেন। একজন সিনিয়রকে তিনি যেভাবে আদব শিক্ষা দিচ্ছেন, সেটিও অনেক দৃষ্টিকটু ঠেকেছে ।
আজকে যেখানে সকল জাতীয়তাবাদী শক্তির ইস্পাত কঠিন ঐক্যের প্রয়োজন সেখানে এই ধরণের একা একা গোল দেয়ার প্রবণতা কতটুকু যৌক্তিক তা ভেবে দেখার বিষয়। আমরা ফ্যাসিবাদি শক্তির সার্বিক শক্তি সম্পর্কে ওয়াকেবহাল না থাকার কারণেই এরকম আচরণ করছি ।
আমরা যেভাবে ফ্রি স্টাইলে একজন আরেকজনকে সমালোচনা করি, সবাই নিজেকে হিরো এবং অপরকে জিরো জ্ঞান করি তাতে এই ফ্যাসিবাদকে সরানো দুরূহ হয়ে পড়তে পারে
আমরা এখন একমত যে একটি গণজাগরণ ও গণঅভ্যুত্থান ছাড়া এই ফ্যাসিবাদের হাত থেকে সহজে মুক্তি মিলবে না । তজ্জন্যে সকল মহলের বোধ আর ভাবনায় পরিবর্তন জরুরি। বড় রাজনৈতিক দলকে যেমন তার বড়ত্বের অহমিকা ও নেতৃত্ব হারানোর ভয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে তেমনি ছোট খাট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও একা একা হিরো বনার বৃত্ত তথা ফ্যান্টাসি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে । একটা ফায়ার বা আগুনের জন্যে যেমন একটি স্পার্ক দরকার তেমনি সেই স্পার্ককে অক্সিজেন জোগানের জন্যে বাতাস দরকার । সেই বাতাসটি সরবরাহ করবে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলি ।
তারেক রহমান’র ৫৫তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা।
— আহাদ আহমেদ
নভেম্বর ২০, ২০২০ — বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান’র শুভ ৫৫তম জন্মবার্ষিকী। দেশবাসী শুভেচ্ছা জানায়, ভালবাসা জানায় তাদের প্রিয় এই নেতাকে!বাংলাদেশের সব চাইতে জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান ও মাটি মানুষের নেতা তারেক রহমান।
সংবিধানে বা আইনের কোথাও ফ্যানের সাথে, সিলিংয়ের সাথে ঝুলিয়ে হাত পা বেঁধে ওপর থেকে ফেলে দেয়ার বিধান কী আছে? ইতোপূর্বে কোন জাতীয় নেতাকে এমন শাস্তিভোগ করতে হয়েছে? মেরুদণ্ডের ক্ষতি করে নাগরিককে পঙ্গু করার বিধান কি আছে সংবিধানে? শাসকের ইচ্ছাই কি মামলার ভিত্তি হতে পারে? একদম অবাক শোনালেও এর সব হয়েছে বাংলাদেশে। আর এই ভয়ঙ্কর অন্যায়, জুলুমের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মীও এই জুলুমের শিকার মামলায়-হামলায়। যদি জুলুমের পরিমাপ করা হয় তবে আধুনিক রাজনীতির ইতিহাসে তারেক রহমানের চেয়ে বড় কোন রাজনৈতিক নেতা পাওয়া যাবেনা। তারেক রহমান নিজে ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মানবাধিকারহরণের শিকার তালিকায় সবার ওপরে আছেন।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বয়স নিয়ে এক কিম্ভূতকিমাকার ধারণা বিদ্যমান। প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক তাঁর কথোপকথনে (প্রফেসর সরদার ফজলুল করিম এর সাথে) বলেছিলেন,যে লোকের বয়স ৭০ বছর তাকে আগামীর স্বপ্নের কথা বললে সে তার বয়সের সীমাবদ্ধতার কারণেই বেশী দূরে দেখতে পাবেনা। তাই এই দেখার বিষয়টা ৩০ বছরের হাতে ছেড়ে দিতে হবে যে সামনের ৭০ বছরকে দেখতে পাবে। এটা তাঁর একটা বক্তব্য, যেখানে দেখার চোখের চেয়ে কল্পনা শক্তির গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার বিরুদ্ধে যখন কোন যুক্তিসঙ্গত সমালোচনা দাড় করানো যায় নি। কোন অভিযোগ যখন ভিত্তি পাচ্ছিল না,তখন তার চরিত্রহণন হয়ে দাঁড়ায় একমাত্র ক্ষেত্র। পরিশেষে, অভিযোগটা এখানে এসে দাঁড়ায় যে- তারেক রহমান রাজনীতিতে ‘শিশু’!! ‘তিনি যথেষ্ঠ সাবালক নন’ — এসব খেলো যুক্তি। এই আলোচনার কি জবাব হতে পারে। এটার জবাব ইতিহাসের কিছু তথ্য হতে পারে।
তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর।এখন তার বয়স ৫৫ বছর। ২০০২ সালে তিনি যখন দায়িত্ব নেন দলের একটি পদে তখন তার বয়স ৩৭ বছর। তিনি ২৯ বছর বয়সেই আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রচার অভিযান চালান। তার দক্ষতার প্রমাণ তিনি দিয়েছেন ২০০১ এর অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন সাফল্য এনে দিয়ে। তিনি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০০২ সালেই। তার মানে দাঁড়ায় রাজনৈতিক পরিবারের আবহে থেকে তারেক রহমানের নিজস্ব রাজনৈতিক জীবনের দৈর্ঘ প্রায় ৩০ বছর তথা তিন দশক।
যারা তার বয়স ও ‘সাবালকত্ব’ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন তাদের জন্য বলা যায় একটু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনাসহ রাজনৈতিক নেতাদের দিকে দৃষ্টিপাত করুন।
রাজনীতিকদের বয়স
শেখ মুজিবুর রহমান জন্ম নেন ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে। ১৯৪৭ সালে বিএ পাশের বছর তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে একজন মুসলিম রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হন। তখন তার বয়স মাত্র ২৭। মাত্র ২৯ বছর বয়সে ১৯৪৯ সালে তিনি ভাসানীর নেতৃতাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক হন। তিনি মাত্র ৩৬ বছর বয়সে পাকিস্তানে মন্ত্রীত্ব লাভ করেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায় তিনি ১৯৩৬ সালে ১৯ জানুয়ারী জন্ম গ্রহন করেন।তিনি ৩৫ বছর ৩ মাস বয়সে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর হিসেবে বিদ্রোহ করেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। তার এই ঘোষণার বিবরণ ভারতের প্রথম বাংলাদেশ মিশন প্রধান জে.এন দীক্ষিত এর লিবারেশন এন্ড বিয়ন্ডঃ ইন্দো- বাংলাদেশ রিলেশন্স এ বিস্তারিত এসেছে। এর অনেক স্বাক্ষী আছে মইদুল হাসান তার উপধারা একাত্তরঃ মার্চ-এপ্রিল এ লিখেছেন। জাতীয় সংসদের ২০০৯ এর এক অধিবেশনে জাসদ নেতা মঈনুদ্দীন খান বাদল শহীদ জিয়ার ঘোষণার কথা বলেছেন। সিপিবির সভাপতি মঞ্জুরুল
আহসান খান সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এই ব্যপারে। আর এর সাথে নিজের কানে শোনা সেই লক্ষ লক্ষ জনতা। ৪০ বছর বয়সে সেনাপ্রধান হন। মাত্র ৪১ বছর বয়সে ১৯৭৭ সালে ২১ এপ্রিল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হন। ৪৫ বছর বয়সেই প্রেসিডেন্ট জিয়া একটি বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রধান নেতায় পরিনত হন। তিনি অপরিনত বয়সে এক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জন্মগ্রহন করেন। তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন। ২৮ নভেম্বর ১৯৮৩, ৩ মে ১৯৮৪, ১১ নভেম্বর ১৯৮৭, ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ (তারেক রহমানসহ) ও ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ এই ৫ বার বেগম খালেদা জিয়া কারাবরণ করেন।
স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে তার মত এত কারাবরণের শিকার কেউ হয় নি। এরশাদ ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগের প্রতিহিংসার শিকার এই রাজনৈতিক পরিবার। বেগম খালেদা জিয়া ৩৯ বছর বয়সে ১৯৮৪ সালের ১০ মে বিএনপির মত একটি বিশাল রাজনৈতিক দলের চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব নেন। তিনি রাজপথে লড়াকু দল হিসেবে গড়ে তোলেন বিএনপি। তিনি ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ৭ দলীয় জোটের মাধ্যমে স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে তিনিই মধ্যপন্থী মুসলিম প্রধান দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইতিহাসের স্বচ্ছ ভোটে নির্বাচিত হন । নিউজউইক সম্পাদক ফরিদ জাকারিয়া তার এক নিবন্ধ - ‘Why do they hate us’ এ এই বিষয়ের প্রতি তাবৎ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালে- শেখ মুজিবুর রহমান যে বছর ডিগ্রী পাশ করেন সেই বছর ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহন করেন। তিনি তার বয়স ৩৪ হবার আগেই ১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামীলীগের সভানেত্রীর দায়িত্ব নেন। শেখ হাসিনা ৪৮ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহন করেন।
আমাদের বুদ্ধিজীবি মহলে আরেক সাংস্কৃতিক বৈকল্য কাজ করে। এরা এমনভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন, যেন সবাই তাদের বয়সে ছোট একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রেসিডেন্ট জিয়ার চেয়ে বয়সে এক বছরের ছোট ছিলেন। জিয়ার একুশে পদক প্রবর্তন এনাদের মহিমান্বিত করেছে। কবির চৌধুরী জিয়ার চেয়ে বয়সে প্রায় ১২ বছরের বড় ছিলেন। শামসুর রাহমান ছিলেন ৭ বছরের বড়। আহমদ ছফা ছিলে বছর সাতেকের ছোট। আর হুমায়ুন আহমেদ ছিলেন জিয়ার ১২ বছরের ছোট। এই সব ব্যক্তিদের মধ্যে হুমায়ুন আহমেদ অনেক নিরপেক্ষ মুল্যায়ন করেছেন জিয়ার।
জেমস স্মিথ একজন ব্রিটিশ ফ্রীল্যান্সার সাংবাদিক। তিনি তারেক রহমানকে যেভাবে মুল্যায়ন করেন সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার ভাষায়, তারেক রহমান বাংলাদেশের প্রথাগত নেতাদের থেকে ভিন্ন কিন্তু তার প্রয়াত পিতার অনেক কাছাকাছি। আর সেটা হলো মাত্র সাড়ে তিন বছরে বাংলাদেশের গ্রাম, নদী, মানুষকে চাক্ষুষ করেছিল প্রেসিডেন্ট জিয়া। মাইলের পর মাইল হেটে মানুষকে বোঝার চেষ্টা ছিল তাঁর নিরন্তর। মানুষের দুঃখ বেদনা ও চাওয়া পাওয়ার সাথে সম্পর্ক গড়া। বাংলাদেশের মানুষের কষ্ট, তার ওপর হামলায় প্রথম যে তৎকালীন তার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। তিনিই জিয়া,শহীদ জিয়া। ঠিক পিতার দেখানো পথেই হেটেছেন তিনি। একদম মুলে, তৃনমূলে ছুটে গেছেন তিনি। নেতাদের বাসায় বসে ‘সাক্ষাৎ’ দেবার রাজনীতিকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন ৬৪ জেলায় ২০ টি রাজনৈতিক অঞ্চলে। নেতারা মঞ্চে বসে মাটির সাড়া ও শব্দ শুনেছেন।
জেমস স্মিথ এও বলেছেন যে, যদি জনগনকে তার অধিকার ও ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন করা যায় তবে তার প্রতিফলন ঘটে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে। তারেক রহমান জনতার ক্ষমতায়ন করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন জিয়ার এই মানুষের কাছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাবার কারণেই তাকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছিল। কিন্তু তার অসময়ে প্রস্থানের পর তার জানাজায় প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ জমায়েত হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া যখন ২০১০ সালে সারাদেশব্যাপী রোডমার্চ করেছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ রাত জেগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছে। সরকারের বিরুদ্ধে জনগনের এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখে ভারত দাওয়াত দিয়ে নিয়েছিল তাকে। কিন্তু জামাত ও কিছু দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়ায় সেই কূটনৈতিক তৎপরতা বাধাগ্রস্থ হয়। ভারত প্রত্যক্ষ অবস্থান নেয় বিএনপির বিরুদ্ধে। আন্দোলনকে সরকারের গোয়েন্দা তৎপরতায় নিশ্চিহ্ন করা হয়। অর্থাৎ বিএনপি যখনই তৃনমুল রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে তখনই তার ওপর হামলে পড়া হয়েছে।
উন্নয়ন ধারণা ও তারেক রহমান
স্মিথ উল্লেখ করেছেন, তারেক রহমান ১৯৯৬- ২০০১ এর আওয়ামীলীগ সরকারের ভয়াবহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যুক্তিসংগত রাজনৈতিক প্রচার চালিয়েছেন। তিনি তার পিতার মতই দেশব্যাপী ব্যপক পরামর্শ সভা করেছেন। তিনি তার সফরের সময়ে জনতার জীবনমান উন্নয়নের জন্য কৃষকের জন্য বীজ,সার, হাস-মুরগী- ছাগল বিতরণ করেছেন।সর্বোপরি তিনি তার হাসি দিয়ে কৃষককে উজ্জীবিত করেছেন।এই পরামর্শ সভার সরাসরি ফলাফল হলো ২০০১ এর বিএনপির ভূমিধসবিজয় ও সরকার গঠন।সবাই চেয়েছে তিনি নেতৃত্ব দিক।কিন্তু তারেক রহমান সলাজ দুরত্ব রেখে জনতার কাতারে তাদের কাধে কাধ রেখে চলেছেন।
তারেক রহমান আদর্শ হিসেবে ইতো মধ্যেই ঠিক করেছিলেন তিনি পিছিয়ে পড়া কৃষি ও কৃষককে আর্থিকভাবে নিরাপদ করবেন। দারিদ্র্যের অভিশাপ বিমোচন করবেন। এই কাজের অংশ হিসেবে পশুপালন ও সম্পদ সাহায্য নিয়ে তিনি গ্রামীন জনগোষ্ঠীর পাশে দাড়িয়েছেন। ছোট বড় পোল্ট্রি , মাছ চাষ, পশুখাদ্যের আমদানীবিকল্প শিল্প গড়তে সহযোগিতা পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।২০০১-২০০৬ মেয়াদে পোল্ট্রি শিল্পে এক নিরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে। এর সব ছিল তারেক রহমানের মাটিমুখীনতার রাজনীতি। এখনকার সরকার কোন অসামান্য কাজ সাধন করেনি। এরা শুধুমাত্র উপভোগ করেছে। যেমন বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের গোড়াপত্তন জিয়ার হাত ধরে। রেমিট্যান্সের গোড়াপত্তন শহীদ জিয়ার হাত ধরে। কিন্তু এই বিকাশের পতপত উড়ানো পতাকার ভিত্তির কথা কেউ বলে না। ঠিক তেমনি আজকে সারাদেশে এই যে সহজলভ্য ডিম, মুরগীর মাংশ তার কৃতিত্ব খালেদা জিয়ার-তারেক রহমানের নীতির। পেটে খেলে পিঠে সয় এই নীতির কারণেই ২০০৭-২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী যখন মন্দা, বাংলাদেশে তার হাওয়া লাগেনি-সেটার কারণও জিয়ার শাসনামলে নেয়া কৃষিনীতি আর ১৯৯১ সাল থেকে খালেদা জিয়ার নেয়া কৃষিবান্ধব নীতি। এই নীতির স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটে ২০০১- ২০০৬ সালের মৎস, পোল্ট্রি ও শষ্যবহুমুখীকরণ প্রকল্প।
তারেক রহমান ছাত্রদের শিক্ষা সহায়তা প্রকল্প নিয়ে শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ গ্রহন করেন। এক্ষেত্রে তিনি কোন দলীয়করণ প্রশয় দেন নাই। তৃনমুল সম্মেলন আয়োজন করে তিনি যৌতুকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, জন্মনিয়ন্ত্রণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পরে এর ভিত্তিতেই নীতিমালা গৃহীত হতো। ফলে এই গৃহীত নীতিমালার ভিত্তিও ছিল তৃনমুল ধারনা। যেমন জেমস স্মিথ উল্লেখ করেছেন, উদাহরণ দিয়েছেন যে বাংলাদেশের ৫ শতাংশ মানুষ এজমারোগে ভুগতো যে তথ্য তারেক রহমান তৃনমুল সম্মেলন থেকে গ্রহন করেন। তখন সারাদেশে মাত্র একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ছিল।তিনি এক বছরের মধ্যে দুইটি কেন্দ্র গঠন করেন।
স্মিথ বলেন তারেক রহমান শুধু বর্তমানকেই নিয়েই থাকেন না। তিনি শিক্ষা ও যুবসমাজের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ দেখেন। এইসব গুনাবলী কিন্তু আওয়ামীলীগের চোখে অপরাধ। তারেক রহমান তার প্রাগ্রসর চিন্তা দিয়ে ধ্বসিয়ে দিয়ে ছিল আওয়ামীলীগের সাজানো পরিকল্পনা। তাই তারা তারেক রহমানের প্রতি ক্ষমাহীন।
তারেক রহমানকে পঙ্গু করে ফেলা, রাজনীতিতে অপাঙতেয় করে তোলা ছিল দেশী ও বিদেশী চক্রান্তের অংশ। চক্রান্তে অস্বীকৃতি জানানোর পরিনামে ৩১ ডিসেম্বর ২০০৭ এ অবৈধ সেনাসমর্থিত উদ্ভট সরকার তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে। এরপর তার ওপর চালানো হয় মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতন। তিনি গুরুতর স্পাইনাল ড্যামেজের শিকার হন।তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয় যাতে তিনি পঙ্গু হয়ে যান। আধুনিক রাজনীতির ইতিহাসে এই ধরণের প্রতিহিংসামূলক নির্মমতার শিকার কোন রাজনৈতিক নেতা হন নাই। তাই তারেক রহমান হলেন এক নির্যাতিত নেতার প্রতিকৃতি।
জেমস স্মিথ আরো বলেন-তারেক রহমান সব সময় বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তার মাটির কাছাকাছি জনতার হাতে,তৃনমুলের হাতে। তিনি তাদের নেতা একদম নিচ থেকে উঠে আসা এবং ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রনায়ক।
রাজনীতিকে তারেক রহমান যে তৃনমুলে নিয়ে গেলেন তার ফলাফল কি? এই ফলাফলের জন্য বাংলাদেশকে ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর উত্তর হলো ২০০৬ এর ২৮ অক্টোবর লগি লাঠি বৈঠা থেকে অদ্যাবধি সেনাসমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার ও এরই ধাবাহিকতার আওয়ামী মহাজোট সরকার’র রাজনীতি। এই জবরদস্তির সরকারের ধারাবাহিকতায় গত ১৪ বছরে (২০০৭-২০২০) আওয়ামী লীগ তার সাথের, জোটের, ভোটের সব দলকে টুকরায় পরিনত করেছে। আওয়ামী লীগ এদের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, দিলীপ বড়ুয়া, ইমরান এইচ সরকার, মওলানা শফি হুজুর, ভিপি নুরুল হক নুর কেউ বাদ যায় নি এই ভাঙ্গন থেকে। শুধু তাদের সাফল্য আসেনি বিএনপির ক্ষেত্রে। বিএনপিকে রাজনৈতিক ক্লিঞ্জিংয়ের শিকার হতে হয়েছে,৩৫ লক্ষ নেতাকর্মী ও মামলায় আক্রান্ত দলটি। রুটি রুজিতে হামলার শিকার হয়েছে নেতাকর্মীরা। কিন্তু দল ভাঙ্গতে পারে নি। এটাই তারেক রহমানের তৃনমুল রাজনীতির সাফল্য। এটা ঠিক দল ক্ষমতায় থাকলে সুযোগ-সন্ধানী ও ব্যাপারীর দল ঘিরে ফেলে। কিন্তু অনেক অত্যাচার করেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমান করা সম্ভব হয় নাই।
চীনা দার্শনিক ও পন্ডিত কনফুসিয়াসকে ৫০০০ বছর আগে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এত যে বিপুল জনগোষ্ঠী এ নিয়ে কি করা যায়? উত্তরে তিনি বলেছিলেন - এদের ধনী বানাও আগে। তারপর? এরপর এদের শিক্ষিত করো, জ্ঞানী বানাও। কনফুসিয়াস বলেছিল, " Don't want to do things quickly and don't seek petty gains.You cannot reach your goals if you want to be quick and you you cannot accomplish great things if you seek petty gains."
এছাড়াও সরকার নিয়ে কনফুসিয়াসের বেশ কিছু ধারণা চীনের বুদ্ধিমান নেতারা কাজে লাগিয়ে চীনকে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক (Meritocratic) রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। কনফুসিয়াস অতি ঘনত্বের দেশে জনগণকে প্রথমে ধনী করার কথা বলেছেন, এরপর বলেছেন শিক্ষিত করার কথা। ‘What a dense population! Make them rich." ধনী বানিয়ে এই জনতাকে দিয়ে কি করবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে কনফুসিয়াস বলেন, ‘Educate them’।
বিবিসি সাংবাদিক এলেস্টেয়ার লসন লিখেছিলেন - তারেক রহমানের বাবা ও মা দুজনেই বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। "বাংলাদেশের মানুষ বলে, জিয়াউর রহমান আমাদের নেতা ছিলেন,খালেদা জিয়া আমাদের নেতা এবং তারেক রহমান আমাদের ভবিষ্যৎ নেতা"। এখানে অত্যুক্তি কিছু নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভিত্তি কি শেখ মুজিব নয়? এই যে জনতার প্রচার-লক্ষ কোটি মানুষের আকাঙ্খা - তারেক রহমান তাদের নেতা এটা অসত্য নয়। এটাই সত্য। তারেক রহমান বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই দলের নেতা হবার লক্ষ্য নিয়ে গড়ে উঠেছেন। যে সব কারণে অন্যান্য রাজনৈতিক পরিবারে নেতৃত্বের সংস্কৃতি গড়ে উঠে তার ব্যতিক্রম তার ক্ষেত্রে কেন হবে? মতিলাল, জওহরলাল নেহেরু পরিবারে ইন্দিরা-রাজীব-রাহুল যেভাবে বিকশিত হয়েছে সেই একই পথ ধরে মুজিবের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার শেখ হাসিনা। আর একই নিয়মে তারেক রহমানও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার, তিনি কোন ব্যতিক্রম নন। এখানে নেপোটিজমের প্রশ্ন অবান্তর।
উপমহাদেশে রাজনৈতিক দলের ঐক্যের কেন্দ্র ( Center of Unity) এখনো পরিবারগুলো ধরে আছে।এটা ভাল বা মন্দ এই বিবেচনার ভিত্তি পশ্চিমের মতামত হতে পারে না। পশ্চিমের কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য সংখ্যা উপমহাদেশের একটি দলের রাজনৈতিক জেলার সদস্যের সমানও নয়। তাই ভিন্ন সাংস্কৃতিক মানের কোটি সদস্যের দলের ঐক্য "লিবারেল" ধারণা দিয়ে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। যে কারণে উপমহাদেশে কমিউনিস্ট বা সমাজতন্ত্রীরা জড়ো হবার আগেই ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে।
অসম বিচারের শিকার নেতা
২০০৪ সালে দি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এক সম্পাদকীয় লেখেন। সেখানে তিনি তারেক রহমানের অনেক সমালোচনা করেন। এই সমালোচনা ছিল এরকম যে, বেগম খালেদা জিয়া তার ছেলেকে রাজনীতিতে এনে ঔদ্ধত্যের (Audacity) পরিচয় দিয়েছেন। কারণ তার যুক্তিতে তারেক রহমান তখনও তার চোখে ‘নাবালক শিশু’।এই চিন্তার ধরণের একটা ব্যখ্যা হলো এটা একটা রোগ - যার নাম বিচ্ছিন্নতা (Alienation)। এই চিন্তার ফলে মাহফুজ আনাম তার সমবয়সী ছাড়া কাউকে ধর্তব্যের মধ্যে নেবে না। তিনি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেন এভাবে- "তিনি নিরলসভাবে পুরানা নেতাদের সরিয়ে তার বলয়ের নেতাদের মাধ্যমে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চান"।এই মাহফুজ আনামরা কি শেখ হাসিনা বা সজিব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে এমন মন্তব্য করতে পারবেন?
তবে প্রথিতযশা অনেক সাংবাদিক তারেক রহমান সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে, তিনি পিছনে থেকে অনেক কাজ করতেন। নাম ফুটানোর বাতিক তার ছিলনা। তিনি খুব বিখ্যাত ছিলেন তার স্বল্পভাষিতার জন্য। তার গ্রেপ্তার ও নির্যাতন সমালোচিত হয়েছে। কারণ তার বিরুদ্ধে আনীত দূর্নীতির কোন অভিযোগ প্রমানিত হয় নাই এবং তাকে বলির বকরা (scapegoat) বানানো হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে অতিরঞ্জন ও ফাপিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হতো। কিন্তু এইসব ভিত্তিহীন অভিযোগের সবগুলিই ছিল সত্য থেকে অনেক দূরবর্তী। প্রফেসর আসিফ নজরুল যেমনটা বলেছিলেন যে,সরকারের উচিৎ তার বিরুদ্ধে কি কি দূর্নীতির অভিযোগ আছে সেটা জানানো।
জবরদস্তির শাসনামল ও তারেক রহমান
একটা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনের ভিত্তি হলো জনতার আকাঙ্খা। তাই এই আইন প্রনয়ন হবার আগে সেটা সংসদে বিল আকারে উত্থাপিত হয়। নিয়ম হলো চুলচেরা বিশ্লেষণ হওয়া,বিতর্ক হওয়া এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সেটা গৃহীত হওয়া। এর পরের ধাপ, সেটা প্রেসিডেন্টের অনুমোদনের জন্য পাঠানো।প্রেসিডেন্ট অনুমোদন দেক বা না দেক সেটাই পরে আইনে পরিনত হবে। এটাই সংসদীয় পদ্ধতির নিয়ম। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তন হলে এবং সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা একক ব্যক্তি হিসেবে প্রেসিডেন্টের হাতে জমা হয়।এখানে সংসদীয় ব্যবস্থা বলে একটা ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু সংসদে গৃহীত বিল আইন হিসেবে অনুমোদন -পুরোই নির্ভর করে প্রেসিডেন্টের ওপর। ব্যবস্থাটির নাম প্রেসিডেন্টশিয়াল পদ্ধতি।
বাকশাল ব্যবস্থার সমালোচনা যারা করেন তারা শুধু এর একদলীয় বিষয় নিয়েই বলেন বা এর নীপিড়নমূলক বিষয় হাইলাইট করেন। কিন্তু বাকশালের গুরুত্ব ও ভয়ংকর দিক হলো এর আইনী কাঠামো। এখনো আকাশ থেকে পড়ার বাকীই আছে! সবাই জানেন যে, ১৯৭০ সালের ৩০ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান LFO বা ‘লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্ক’ ইস্যু করেন যেখানে ৫ দফাকে ‘মৌল নীতি’ (Fundamental Principles) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেখানে রাষ্ট্রের ফেডারেল প্রজাতান্ত্রিক চরিত্র, ইসলামী আদর্শ ও স্বায়ত্তশাসন নিয়ে অনেক বাগাড়ম্বর ছিল। স্বায়ত্বশাসন নিয়ে যা বলা ছিল, সেটাকে Quid Pro Quo বা এক হাতে দিয়ে অন্য হাতে ফিরিয়ে নেবার মত! এলএফওতে বলা হয়েছিল - "ফেডারেল সরকারের হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে - যার মধ্যে সংসদীয়, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত থাকবে যা দিয়ে আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা রক্ষা করা যায়"। (Bangladesh: A Struggle for Nationhood by Mohammed Ayoob* Anirudha Gupta*Rahmatullah Khan* GP Despande* R Narayanan* Sisir Gupta, 1971, Vikas Publication, Delhi,India page - 33-34, This part written by Mohammed Ayoob at his Article named - Background and Developments)। এই পুস্তকের লেখকেরা জওহেরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ছিলেন। এপ্রিল ১৯৭১ সালেই এই বই লিখিত হয় - অনুবাদক)। দুইটি অধ্যায় বিশেষত ২৫ ও ২৭ নিয়ে পুর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। যার মুলে ছিল ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রনয়ন ও এলএফও-এর ব্যখ্যা নিয়ে। ২৫ নম্বর অধ্যায়ে বলা ছিল - সাংবিধানিক বিল সংসদে পাশ হলেও তার চূড়ান্ত অনুমোদন একমাত্র প্রেসিডেন্ট প্রদান করবেন। যদি প্রেসিডেন্টের সেই অনুমোদন/অস্বীকৃতি সংসদে প্রত্যাখ্যাত হয় তবে প্রেসিডেন্ট সংসদ ভেঙ্গে দিতে পারবেন!!
২৭ নম্বর অধ্যায়ে বলা ছিল-"LFO সংক্রান্ত যে কোন প্রশ্ন বা সন্দেহ পোষন করা হলে একমাত্র প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে এবং কোন আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যাবেনা"। এখানে এমনও যুক্ত ছিল যে-"প্রেসিডেন্ট বা জাতীয় সংসদ এই আদেশের কোন সংশোধনী আনতে পারবে না"(ibid, page 34)।
এখন কি বাকশাল ব্যবস্থার সাথে ইয়াহিয়ার এলএফও-এর কোন মিল খুজে পাওয়া যায়? যারা বাকশালকে মহান করে কিংবা বিরোধীতা করে সবাই এই মৌলিক বিষয় এড়িয়ে যায়। ফলে বাকশালওয়ালাদের কাছে সেটা দেখা দেয় ‘দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী’ হিসেবে।। আর বিরোধীতাকারীদের কাছে শুধুই ‘একদলীয় শাসন’ হিসেবে।আসলে বাকশাল হলো ইয়াহিয়ার এলএফও -এর প্রেতাত্মা শুধু মোড়কটা ভিন্ন।
আইন বিচারবুভুক্ষা ও মামলার শিকার তারেক রহমান
আইনের ভিত্তি নিয়ে কথা হলো। কিন্তু বিচারের ভিত্তি কী হবে? বিচারের ভিত্তি হবে আইন। তাই পরিশেষে, বিচারের ভিত্তি আসলে জনগনের আকাঙ্খাই হয়।
তারেক রহমান আধুনিক রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচাইতে নির্মম রাষ্ট্রীয় নির্যাতন ও সবচাইতে বেশী মামলার শিকার। প্রায় ৩৪ টি মামলার শিকার হয়েছেন তিনি। এসব মামলায় রাষ্ট্রের সংক্ষুব্ধতা লক্ষনীয়।মামলা সমুহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ —
দুই দশটি মামলা, বার কয়েক পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদ ও জেল ঘুরে এলেই ভারতীয় উপমহাদেশে ‘কারানির্যাতিত’ নেতার মোহর পড়ে যায়। এর মধ্যে নির্যাতন যে নেই,অবশ্যই আছে। কিন্তু যে শারিরীক নির্যাতনের শিকার তারেক রহমান হয়েছেন তার তুলনা হতে পারে না। উপমহাদেশ কেন সারাবিশ্বেই তার তুলনা নেই। এটাকে কোন যুক্তিতে যুক্তিযুক্ত যারা করে, তারা আসলেই ঘাতকের দল। যারা মনে করেন নেতৃত্ব পায়ে হেটে তারেক রহমানের কোলে চড়ে বসেছে তারাও পক্ষান্তরে অন্যায় ও জুলুমেরই সমর্থক। কঠিন অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে তারেক রহমান বাংলাদেশের জনগনের নেতা।
তথ্যসুত্র —
Political Thoughts of Tarique Rahman: Empowerment of the grassroots people
2.Sayings of Confucious,Compiled and Translated Ding Wangdao,13.17)
Sayings of Confucious,Compiled and Translated by Ding Wangdao,13.9)
— আজিজুল বারী হেলাল
কিছুই হচ্ছে না।
বন্ধ্যা সময়।
গণতন্ত্র আইনের শাসন নির্বাসিত।
থমকে গেছে স্বাধীন মতপ্রকাশ।
রাজনীতি যেন গাঙের তলায় অচল জল। গুম-খুন-হামলা-মামলার দমকা বাতাস সরকার বিরোধী প্রতিবাদী মানুষের
পরিবারকে দুমড়ে মুচড়ে ছারখার করে দিচ্ছে। রাষ্ট্রপ্রেমী মানুষের বুকফাটা আর্তনাদ, স্বজন হারানো হাহাকার আজ সর্বত্র। আর এই বন্ধ্যা-উষর পরিস্থিতিতে ২০শে নভেম্বর দেশবাসী পালন করবে ‘ভবিষ্যত বাংলাদেশের কারিগর’ দেশনায়ক তারেক রহমানের ৫৫তম জন্মবার্ষিকী।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান |
এই দিনে জন্ম নেয়া অনেক অনন্য অসাধারণ মানুষের মত তিনিও আলোকিত করেছেন এই ধরিত্রী। রংধনুর সাতরঙ রাঙিয়ে, পলকা বাতাসে রঙীন
বেলুন উড়িয়ে দিনটি সজ্জিত হয়ত হবে না, হয়তো গরীব-দুস্থ – অসহায়দের সাহায্যার্থে তেমন কিছুই হবে না। উৎসবের ঘনঘটায়দিনটি পালিত না হলেও দেশবাসী তারেক রহমান কে স্মরণ করে আর করবেও অগনিত ভালোবাসা নিয়ে। শুধু ২০ নভেম্বরই নয় ,উৎসবের আমেজেই নয়, তিনি আছেন, থাকবেন আপামর জনতার নিত্যদিনের আটপৌরে দিনলিপিতেও।
২০০৭ সালে সামরিক-বেসামরিক জান্তার কঠিন আঘাতের ধকল কাটাতে চিকিৎসার জন্য ব্রিটেনে যান। তারপর থেকে প্রায় এক যুগ যাবত তারেক রহমানের যাপিত জীবন নির্বাসনে, বিদেশ বিভূঁইয়ে জনারণ্যে থেকেও নির্জনে।কিন্তু নির্বাসন দিয়েই কি আর বিস্মৃত করা যায় তারেক রহমান কে !!
তারেক রহমান তাঁর দূরদর্শী রাজনৈতিক দক্ষতা-সাংগঠনিক যোগ্যতা- দিয়ে জীবন প্রত্যাশা ( Life expectation) বৃদ্ধি ও উন্নয়ন ভাবনা - নতুন শতাব্দীর নতুন নতুন চ্যালেন্জ মোকাবেলার উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় জনপ্রিয়তা যার অপরিমেয় ।
বর্তমান দখলদার শাসক গোষ্ঠী ও তার সৈন্য-সামন্তের ক্ষমতায় টিকে থাকার লোভেই বাধ্য করছে তারেক রহমানের এই প্রবাস যাপনকে । ‘ভোটের রাজনীতিতে দখলদার গোষ্ঠীর পরাজয় নিশ্চিত’ জেনেই, মিথ্যা মামলা সাজিয়ে জনপ্রিয় তারেক রহমানকে নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বাধা প্রদান করছে। অথচ দেশের আদালতে তিনি নির্দোষ বলে প্রমাণিত। আর যে বিচারকের রায়ে তা প্রমাণিত, সেই বিচারকও বাধ্য হয়েছেন দেশ ছাড়তে !!!
প্রয়াত জনপ্রিয় নাট্যকার আবদুল্লাহ আল মামুন স্বাধীনতা পরবর্তী বাকশালী আমলে মানুষের নৈতিক স্খলন- মুল্যবোধের যে অবক্ষয় হয়েছিল তার বিরুদ্ধে ‘সুবচন নির্বাসনে’ নামক এক প্রতিবাদী নাটক রচনা করেন ।
আর আজ নতুন শতাব্দীর প্রথম দশক থেকেই সৎ-কর্মযোগ্য-প্রতিবাদী মানুষ যেভাবে গুম হচ্ছে, খুন হচ্ছে , দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে তা যদি নাট্যকার আবদুল্লাহ আল মামুন বেঁচে থেকে দেখতেন , তাহলে হয়ত এবার লিখতেন ‘সুজন নির্বাসনে’।
ফরাসী দার্শনিক ভলতেয়ার বলতেন, “তোমার মতের সাথে আমি একমত নাও হতে পারি কিন্তু তোমার মত প্রকাশের জন্য আমি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতেওনপ্রস্তুত আছি।” আর তারেক রহমান বিশ্বাস করেন, শত ফুল ফুটুক, শত মত প্রকাশ হোক।
মুক্ত চিন্তা-মুক্ত বুদ্ধি আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।আধুনিক প্রযুক্তির কল্যানে স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ আজ অবারিত। কিন্তু এদেশে রাজনীতি-ভাবাদর্শ-শিক্ষা-জ্ঞান-বিজ্ঞান সবখানেই দখলদার শাসকগোষ্ঠীর জগদ্দল শাসন সব রকমের অগ্রগতি এবং বিকাশের অন্তরায় হয়ে আছে ।
দখলদার সরকার দেশ ও জনগনের উদ্দেশ্যে তারেক রহমানের সকল বক্তৃতা প্রচারে মিডিয়াকে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। ভলতেয়ার এদেশে জন্মালে এর প্রতিবাদে নির্ঘাত জীবন উৎসর্গ করতেন।
তারেক রহমান বহুধা বিভক্ত-বহু ধারার রাজনীতি ও আদর্শকে সম্মান করে নি:শঙ্ক চিত্তে মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা, শেখ মুজিব, শহীদ জিয়াকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্ববান জানান।
তিনিই প্রথম শেখ হাসিনার প্রবাসী সন্তানকে দেশের রাজনীতিতে অংশ নিতে চিঠিতে আহ্বান জানিয়ে লেখেন, ‘আমার-আপনার পূর্বপুরুষরা স্বাধীনদেশ নির্মানে অবদান রেখেছিলেন। আসুন আমরা দেশের উন্নয়ন-উৎপাদনে একমত হই।’
রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও ঈদ, বাংলা নববর্ষ ইত্যাদি জাতীয় উৎসবে বিরোধী রাজনীতিক নেতৃবৃন্দকে উপহার পাঠিয়ে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্ককে অম্লান করেছে।
বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতি চর্চায় তিনি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষদের রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়েছেন । কারণ, রাজনীতিকে তিনি অন্যসকল পেশার মত জীবিকা নির্ভর মনে না করে একটি অংশগ্রহনমূলক অবিভাজ্য বিষয় হিসেবেই দেখেন। যেখানে অংশ নিতে পারে ছাত্র-শিক্ষক-নারীপুরুষসহ চিকিৎসক-প্রকৌশলী- শ্রমিক বিভিন্ন স্তরের দেশে-বিদেশে অবস্হানরত বাংলাদেশী জনগণ।
তারেক রহমান বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ শুধু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নয় সাংস্কৃতিক সম্প্রীতিরও দেশ।
তিনি অতীতকে অবগাহন করে বর্তমানকে স্পর্শ করতে চান। এজন্য চিরায়ত বাংলা নববর্ষে রমনার বটমূলে পান্তা -ইলিশ, দেশীয় ঐতিহ্যর গান এবং চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার পাশাপাশি আধুনিক ব্যান্ড সংগীতের সংমিশ্রনে তিনি পালন করেন নববর্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে বিকালে আয়োজন করেন দেশের সেরা সেরা ব্যান্ড সংগীতদলের অংশগ্রহনে কনসার্ট । তিনি দেশ ও জনগনের উন্নয়নে রাজনীতি ছাড়াও সামাজিক কর্মসুচীও গ্রহন করেছেন বিশেষ করে সবুজ বৃক্ষের বনায়ণ কর্মসূচী, দারিদ্র বিমোচনে, “একটু চেষ্টা, একটি উদ্যোগ, দেশে আনবে স্বনির্ভরতা” ইত্যাদি কর্মসূচী ব্যাপক সফলতা লাভ করে।
তারেক রহমানের প্রতিষ্ঠিত ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন’ দেশের দারিদ্র বিমোচনে এখনো অবদান রেখে যাচ্ছে।
রাজনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারেক রহমানের বিচরণ বিচ্ছুরিত আলোকচ্ছটার মতনই । যে দ্যুতি আলোকিত করে চারধার। নির্বাসন তাঁর হৃদয় থেকে বাংলাদেশকে নির্বাসিত করতে পারেনি, বরং এদেশ আরও গভীর ভাবে প্রোথিত তাঁর এই একাকী হৃদয়ে । এক হৃদয়েই তিনি ধারন করে আছেন ১৬ কোটি আমাদের।
আমাদের দেশে একদিন দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে রচিত হবে প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’। বাংলাদেশ তাঁর এই জন্মক্ষণে, তাঁরই ফেরার অপেক্ষায়। শুভজন্মদিন প্রিয় তারেক রহমান।