Search

Wednesday, November 8, 2017

চাল পেঁয়াজ সবজির উল্টোরাজার দেশ, দামেও ‘দুর্বার গতি’র রেশ



বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৬১ শতাংশ । দরজায় শীত কড়া নাড়লেও সবজির দামে আগুন। 



কয়েক মাস ধরে চালের বাজার চড়া। সম্প্রতি দাম কমতে শুরু করলেও গতিটা শামুকের। পেঁয়াজের ঝাঁজ আর মরিচের ঝালে ‘দূষণ’ অারও বিষিয়েছে।দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। তপ্ত দামেই শীত কেটে যাবের মনে হচ্ছে । রাজধানীর খুচরা বাজারে সবচেয়ে কম দামে সবজি কিনতেও ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা। এর সঙ্গে অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্যও ছুটছে যেন তুফান মেল। ভোক্তাদের জন্য ঠেলার নামে বাবাজি ডাকতে হলেও আর কিছুই করার নেই। চালের বাজারে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এসে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। মাঝে গুজব ছড়িয়ে আরও কিছুটা বেড়েছিল মোটা চালের দাম। এ সময়  দাম বেড়েছে সরু চালেও অস্বাভাবিক। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যে চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, ছয় মাসের ব্যবধানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৭০ টাকা।  চালের দাম কিছুটা কমলেও সেটা নেহাত কসমেটিক। কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের বাতচিত হলেও মেটা মুনাফা পকেটস্ত হবার সব লক্ষণ পরিস্কার। খাদ্যমন্ত্রী বুধোর ঘাড়ে দায় চাপিয়ে খালাস আর ওদিকে স্বল্প এবং সীমিত আয়ের মানুষের উঠেছে নাভিশ্বাস।অার রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য সংস্থা মা‌ের্কটিং ইন্টেলিজেনস-এর লুডো খেলায় বিভোর। 

০৭ নভেম্ব্র মঙ্গলবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর দৈনিক বাজারদরের মূল্য তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। আর সরু চালের দাম বেড়েছে ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

চালের দাম এক লাফে দাম বেড়েছে কিন্তু বাজারের পাটিগণিতের  তেলা বঁাশের বঁাদরটা নামছে রহস্যজনক ‌ঢিমে গতি‌তে। কারণটা জলবৎ তরলং। গরিবে বোঝা বয় কিন্ত ধনীরা বোঝা বইতে মোটেও তৈরি নয়। অার সেটাই স্বাভাবিক।  

রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এপ্রিল মাসে দেশি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ২৪ থেকে ৩০ টাকা। ছয় মাস পর মঙ্গলবার পণ্যটি বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। কোথাও ১০০ টাকাতেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর ১৮ থেকে ২০ টাকা দরের ভারতীয় পেঁয়াজ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। টিসিবির মূল্য তালিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজের মূল্য এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১৬১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। পেঁয়াজওয়ালারা পেল্লায় দাম হঁাকছেন। কি অাস করা অগত্যা। সাপের ছুঁচো গেলা। ধান চাষের মনো কালচারের ভুত এখনও অামাদের ঘাড় থেকে নামেনি। বাংলাদেশের জন্য এখানেও ভারতীয়‘গোমাতা’ ধন্নান্তরী প্রয়োগ দরকার। পাঁচ থেকে ছয় মাসের ব্যবধানে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম প্রায় দুই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। বৃষ্টি এবং বন্যার অজুহাতে কয়েক মাস ধরেই সবজির দামে চড়া ভাব দেখা যাচ্ছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে ও সবজি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় মাস আগে যে করলা প্রতি কেজির দাম ছিল ২০ থেকে ৩০ টাকা, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। শিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। ধনেপাতা ১৪০ টাকা। কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা। চিচিঙ্গা ১০০ থেকে ১১০ টাকা। নতুন আলু ৮০ টাকা। বরবটি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। গাজর, ঝিঙ্গা, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। আর মাঝারি আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

একই বাজারে খাদ্যপণ্য কিনতে আসা বেসরকারি কর্মকর্তা শরিফ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, বাজারে প্রত্যেকটি নিত্যপণ্যের যেভাবে দাম বাড়ছে এতে করে জীবনযাপন করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। একটি পণ্য কিনলে আরেকটি কিনতে টাকা থাকছে না। মাস শেষে যে বেতন পাই তা দিয়ে সংসারের জরুরি খরচ বাদ দিয়ে খাবারের জন্য যে টাকা রাখা হয়, তা দিয়ে পুরো মাস চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা যদি প্রতিদিন রাজধানীর সব বাজারে মনিটরিং করত তাহলে নিত্যপণ্যের দাম অনেকটা কমে আসত। আর আমাদের মতো সাধারণ ভোক্তাদের নিজ দেশে বাস করে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা টানতে হতো না। জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। তারা একবার দাম বাড়ালে কমানোর কোনো উদ্যোগ নেয় না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক সংস্থা থাকলেও সেগুলো তেমনভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। যার কারণে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টিসিবি’র মুখপাত্র মো. হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে ডাল, চিনি ও ভোজ্যতেল- এ তিন পণ্য নিয়েই মূলত টিসিবি সারা বছর কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বাজারে এ তিন পণ্যের দাম এখন স্থিতিশীল। পেঁয়াজ নিয়ে বিভিন্ন সময় টিসিবি কাজ করলেও সামনে এর ফলন মৌসুম থাকায় আপাতত টিসিবি কিছু করছে না।

  • তথ্যসূত্রঃ যুগান্তর, বুধবার, নভেম্বর ৮, ২০১৭ 

Saturday, November 4, 2017

তেলভিত্তিক উৎপাদনই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণ - ক্যাব



সবার জন্য সহনীয় দামে বিদ্যুৎ সরবরাহের অঙ্গীকার থাকলেও সরকার কার্যত অগ্রসর হচ্ছে বেশি দামের বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে। বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২, সকালে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিবর্তে কমানোর যৌক্তিকতা নিয়ে একটি আলোচনা সভার কিছুক্ষণ পরই বেশি দামের ৪০০ মেগাওয়াট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি সই করা হয়েছে।

বিদ্যুতের দাম কমানোর প্রস্তাব নিয়ে সকালে বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে আলোচনা সভার আয়োজন করে ভোক্তাস্বার্থ সংরক্ষণকারী সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। এই সভায় আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল, তেলভিত্তিক উৎপাদন বাড়ানোই বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির মূল কারণ।

বেলা একটা নাগাদ এই সভা শেষ হয়। বেলা আড়াইটায় ওই বিদ্যুৎ ভবনেরই মুক্তি হলে দুটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ৪০০ মেগাওয়াট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি সই করে। এর মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াট ডিজেলভিত্তিক এবং ১০০ মেগাওয়াট ফার্নেস তেলভিত্তিক।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সে সব কথা জানানো হয়নি তা হলো, ডিজেলভিত্তিক যে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের চুক্তি গতকাল করা হয়েছে, তার প্রতি ইউনিটের (এক কিলোওয়াট ঘণ্টা) দাম পড়বে প্রায় ২০ টাকা। আর ফার্নেস তেলভিত্তিক কেন্দ্রের প্রতি ইউনিটের দাম হবে সোয়া ৮ টাকার মতো। এই ৪০০ মেগাওয়াটের পর আরও ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের জন্য যে চুক্তিগুলো হবে, তাতেও একই রকম দাম পড়বে বলে পিডিবির সূত্র জানায়।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়ায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের আর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু অর্থনীতি ও জনজীবনে এর প্রভাব ভালো হবে না।

২০১০ সালের ১ মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে পাঁচবার এবং খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। তীব্র বিদ্যুৎ-সংকট মোকাবিলায় আশু পদক্ষেপ হিসেবে সরকার তেলচালিত ভাড়াভিত্তিক ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্র স্থাপনের পরই বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় দ্রুত বেড়ে যায়। ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হয়।

Thursday, November 2, 2017

পুলিশ-আমলা নির্ভর সরকা‌রের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয় : ড. শেলী




ক্ষমতাসীদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মন্ত্রী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মিজানুর রহমান শেলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ, সিভিল সার্ভিস, স্থানীয় সরকার সর্বত্রই দলীয়করণ করা হয়েছে। এ অবস্থায় নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। শেলী বলেন, এরশাদ সরকারের যখন পতন হয়েছিল তখন বিকল্প সাংবিধানিক কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে প্রথমে উপ-রাষ্ট্রপতি, পরে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি করে নির্বাচন করা হয়েছিল। তাতে গণতন্ত্র বিজয়ী হয়েছিল। গণতন্ত্রের স্বার্থে এখনো সে রকম কিছু করা যায়। কারণ সংবিধান কোন ঐশী বাণী নয়। সবাই মেনে নিলে এটা পরিবর্তন করা যায়।

বুধবার, নভেম্বর ১, ধানমন্ডি নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।

মিজানুর রহমান শেলী বলেন, দেশ এখন গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সরকার জনগণকে বাদ দিয়ে পুলিশ ও আমলা নির্ভর হয়ে পড়েছে। দেশে এক নাজুক পরিস্থিতি চলছে। দেশে বিদেশী হস্তক্ষেপ বেড়ে যাচ্ছে। যা ইতোমধ্যেই আমরা দেখতে পাচ্ছি। একটি স্বাধীন দেশে এটা কারো কাম্য হতে পারেনা। এ অবস্থা চলতে থাকলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি সরকারি দল-বিরোধী দল সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এটা থেকে পরিত্রাণে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অপরিহার্য। এজন্য দেশের বড় দুই দলকে অবশ্যই ঐক্যমতে আসতে হবে। সমঝোতা করতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার মুখে উন্নয়নের কথা বললেও মনে মনে তারাও উদ্বিগ্ন। কিন্তু নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যাওয়ার ভয়ে তারা এটা বলতে পারছে না। কারণ ক্ষমতা কেউ সহজে ছাড়তে চায় না।

তিনি আরো বলেন, সরকার ফ্লাইওভার, পদ্মাসেতু, রাস্তা, উঁচু ভবনসহ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করছে। কিন্তু এ উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে কতটা পৌঁছেছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। হয়তো সরকারি দলের কিছু নেতা বিদেশে সেকেন্ড হোম করেছেন, এতে তারা ও তাদের পরিবার ভালো থাকতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ সাধারণ মানুষই ভালো নেই।

মিজানুর রহমান বলেন, সমাজে সব ক্ষেত্রে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ সব পেশার মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি পুলিশ এবং আমলাদেরকেও দলীয়ভাবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যা রুয়ান্ডার হুটু ও টুটু গ্রুপের মত মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা দেশের উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর। এ অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ দরকার। পুলিশ ও আমলা নির্ভর সরকারের ধারণা থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন সাবেক এ সচিব।
- নয়াদিগন্ত। 

Monday, October 30, 2017

No middle ground

Ultimate success would lie in safe repatriation

By Israfil Khosru



The onus is on Bangladesh.

As the Rohingya refugee crisis deepens and Bangladesh finds itself increasingly isolated from the regional powers in terms of assistance in this regard, a viable solution must be expedited regardless.

India and China, compelled by their geo-strategic interests, have chosen to refrain from picking a side.

This essentially means that Bangladesh is left to fight a lone diplomatic battle to force an outcome. There have been various prescriptions to ensure possible resolution of the crisis.

The creation of “safe zones” and the implementation of the recommendations by the Kofi Annan Commission are the most popular ones that come to mind.

However, Bangladesh, a country plagued by its own set of problems, cannot afford to engage in such diplomatic discourse, be it internationally or domestically.

The Bangladesh diplomatic apparatus must only focus on an unconditional, safe, and honourable repatriation of the refugees by the Myanmar government at any cost, and leave no room whatsoever for alternatives. In order to achieve success, the government of Bangladesh must make full utilisation of all the resources at their disposal.

Westbound

In this particular case, Bangladesh might find the West, namely the US and the EU, to be a suitable ally. They have visibly recognised this exodus of the Rohingya people as a humanitarian crisis, and have condemned the actions carried out by the Myanmar government.

While there might be geo-strategic motivations behind this position taken by the West, Bangladesh needs to keep sight of the ultimate goal and reap the benefits of having an unreliable ally in this regard.

Furthermore, there has to be a long-term solution to this problem and thus no room can be left for a temporary resolution with a potentially recurring refugee problem.

The Myanmar government often labels the Rohingya community to be “Bengali interlopers” thus implying that they do not have the territorial right to be in the Rakhine state and hence cannot avail the benefits of a citizen.

As long as such notion of exclusive nationalism exists within the socio-political realm of Myanmar, we will continue to see this problem persist.

Thus, Bangladesh must build substantial diplomatic pressure to primarily ensure that the Mynamar government accepts the Rohingya community to be indigenous to the Rakhine state and, therefore, make sure their ethnic identity should not lead to such pogrom.

What not to do

The report released by the Kofi Annan Commission continuously refers to the Rohingya community as the “Muslim population” of the Rakhine state, and it is this particular discourse Bangladesh must avoid.

A report that does not acknowledge the ethnic identity and authenticity of the Rohingya people cannot bear any fruit in terms of resolution of this crisis.

The root of this problem does not lie in religion but in blatant disenfranchisement and marginalisation of an ethnic group simply because they look different and does not correspond to the so-called mainstream national culture.

While there has been a visit to Bangladesh by a Myanmar delegation in relation to this crisis, the statement made by Bangladesh’s foreign minister following the visit has been ambiguous at best.

He stated that a proposal to form a joint working group to identify the Rohingya refugees in order to repatriate them has been forwarded by the Myanmar delegation.

However, the modalities to identify a group of people not even acknowledged as citizens by its own state remains unclear.

It is also important to note that no evident progress has been seen since the visit either.

While it is commendable that Bangladesh is providing shelter to the Rohingya refugees pouring across its border literally every day, the ultimate success lies in their safe repatriation to their home country.

In order to do that, the Bangladesh government must make the Myanmar government accept the Rohingya people as their own.

There is no middle ground in this regard and no room for ambiguity.

If the diplomatic efforts of Bangladesh somehow get engulfed into “alternative” solutions that do not provide a permanent resolution we will gradually see a different set of problems appearing which will affect our sovereignty, stability, and social fabric.

It is time for Bangladesh to display focus and resolve in order to succeed against all odds.


  • Israfil Khosru is an entrepreneur and a concerned citizen.



দৃঢ়তায় হাস্যোজ্জ্বল বেগম জিয়া

মোহাম্মদ আলী বোখারী, টরন্টো থেকে



কক্সবাজার উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের দেখতে যাওয়ার পথে ফেনীর ফতেহপুর, দেবীপুর ও বিসিক সড়কের মাথায় এবং চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। এতে সাংবাদিক বহনকারী ৮টি গাড়িসহ ১৫-২০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলায় সাংবাদিকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। ওই সংবাদ তাৎক্ষণিক দেশে-বিদেশে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ছাড়াও গতকালের অধিকাংশ জাতীয় দৈনিকে প্রথম পাতায় প্রকাশ পেয়েছে। এমনকি দৈনিক ভোরের কাগজ ‘খালেদার সড়কযাত্রায় উত্তাপ’ শিরোনাম সংবলিত ৩ কলামের সংবাদে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তোলা ছবিতে ‘পথে পথে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে অভিবাদন জানান’ ক্যাপশনটি রয়েছে। কিন্তু এই গাড়িবহরে হামলার ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় ৫৪ বছর আগে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যার দলিলাদি অবমুক্ত করে নতুন তথ্য উন্মোচন করেছেন, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রতিবেশী ভারতের দুটি গণমাধ্যম উৎস ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কিত’ বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছে। তাতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যে ব্যবধানগত মনস্তাত্ত্বিক নমুনা উদ্ভাসিত, সেখানে বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি বোধ করি তার জনপ্রিয়তার মানদণ্ডে নিরূপিত ও বিবেচিত।

এই কথাটি এ কারণে প্রাসঙ্গিক যে, সকালে বেগম জিয়ার যাত্রা শুরুর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘পুলিশের মহাপরিদর্শক আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন এবং এই সফর যাতে সুন্দরভাবে হয়, সে জন্য সহযোগিতা করবেন’। অর্থাৎ এখানে একজন সাধারণ নাগরিক নয়, বরং গুরুত্ব বিবেচনায় সৌজন্যবশত সাবেক প্রধানমন্ত্রী কথাটি উহ্য, একজন দলীয় প্রধানের সফর নিয়ে সহযোগিতার আশ্বাসটি পুলিশের মহাপরিদর্শক থেকে নিতে হয়েছিল। কিন্তু কী হলো? বিএনপির মহাসচিব গাড়িবহরে হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি দৈনিককে বলেন, ‘এটা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের মানবিক কর্মসূচি। ক্ষমতাসীনরা এই কর্মসূচিতে হামলা করে খালেদা জিয়ার অগ্রগতি ব্যাহত করতে চেয়েছে। তারা গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে’। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকটি দৈনিক লিখেছে যে, দুর্বৃত্তরা লাঠিসোটা নিয়ে গাড়িবহরে হামলা চালায়, এমনকি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া কারও কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। পাশাপাশি ফেনীতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎ ঠেকাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং দাগনভূঁইয়া উপজেলার তুলাতলি, বেকেরবাজার ও রামনগরে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। শুধু তাই নয়, প্রথম আলো লিখেছে, ‘কাঁচপুর সেতু এলাকায় উল্টো পথেও এলোপাতাড়ি গাড়ি আসতে দেখা যায়। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা ছিলেন অনেকটা নিষ্ক্রিয়’।

কিন্তু যাকে প্রতিরোধ ও প্রতিবন্ধকতায় এত সব আয়োজন, সেই বেগম খালেদা জিয়া কী শংকিত? ছবিতে দেখা গেছে, তিনি দৃঢ়তায় হাস্যোজ্জ্বল ও অভিবাদোন্মুখ। সে কারণেই তিনি ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে ৯ বছরের এরশাদীয় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার লড়ে ১৯৯১ সালে অপরাজিতা সরকার প্রধান হিসেবে প্রেসিডেন্সিয়াল নয়, বরং সংসদীয় গণতন্ত্র প্রচলন করেছিলেন। এমনকি মুক্ত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উত্থাপিত ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থাটিও আইনসিদ্ধ করেছিলেন। আবার মাতা, ভ্রাতা ও পুত্রের মৃত্যুশোক ধারণ করেও অদম্য সাহসিকতায় জনগণের মুক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য লড়ছেন। 

স্মর্তব্য, পাশ্চাত্যে একটি প্রবাদ রয়েছে, ‘ফিয়ার ইজ টেম্পরারি। রিগ্রেট ইজ ফরেভার’। অর্থাৎ শংকা অস্থায়ী, অনুশোচনা চিরস্থায়ী।

Thursday, October 26, 2017

গুম করছে কারা?


আসিফ নজরুল/প্রথম আলো 


এলিয়েন বা ভিনগ্রহের জীবদের নিয়ে মানুষের আগ্রহ চিরন্তন। এই বিপুল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমরাই আছি শুধু—এটা মন মানতে চায় না। অশেষ এই মহাবিশ্বের অন্য কোথাও কি নেই প্রাণের অস্তিত্ব?

পৃথিবী নামক বালুকণায় বসে আমরা কল্পনা করি, অন্য কোথাও আছে ভিনগ্রহের জীবেরা। এই কল্পনা সবচেয়ে বেশি জমে ওঠে সিনেমার ভাষায়। ১৯৫১ সালের দ্য ডে দ্য আর্থ স্টুড স্টিল থেকে হালের দ্য অ্যারাইভাল-এর মতো বহু ছবিতে আমরা তাই দেখি এসব এলিয়েন বা রহস্যময় আগন্তুকের উপস্থিতি। ইটির মতো মজাদার চরিত্রের হতে পারে তা, অথবা হতে পারে এলিয়েন সিরিজের মতো ভয়ংকর কিছু। রহস্যময় আগন্তুক নিয়ে সিনেমা ছাড়াও আরও নানা ধরনের সৃষ্টিকর্ম রয়েছে মানুষের। কিন্তু বাস্তবে এমন কিছুর সন্ধান কেউ পায়নি। কোনো দেশে পাওয়া যায়নি।

তবে আমার ধারণা, ভিনগ্রহের জীব বা আগন্তুক ধরনের কিছু একটা সত্যি আছে আমাদের দেশে। আছে মহাকাশযান, আগন্তুকের রহস্যময়তা। হঠাৎ করে কোথা থেকে উদয় হয় তারা, হঠাৎ হয় উধাও। ছোঁ মেরে সঙ্গে নিয়ে যায় বাংলাদেশের হকচকিত কিছু মানুষকে। এলিয়েন বা রহস্যময় আগন্তুক বলেই হয়তো তাদের আর কোথাও খুঁজে পায় না পুলিশ, গোয়েন্দা, আমজনতা।

প্রধান বিচারপতি, নির্বাচন, রোহিঙ্গা—এসব ইস্যুর জটিলতায় এখন মগ্ন আমরা। কিন্তু এতে থেমে নেই রহস্যময় আগন্তুক সমাজ, থেমে নেই তাদের নিয়ে আতঙ্কও। মাত্র কয়েক দিন আগেও রাস্তা থেকে উধাও হয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। তাদের  বিষয়টি তাই কখনো এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয় কারও।

২.
বাংলাদেশে এই রহস্যময় আগন্তুকেরা এসেছে হয়তো বহু আগে। কিন্তু ঘন ঘন এই এলাকায় তাদের হানা দেওয়া শুরু হয়েছে কয়েক বছর ধরে। আট বছরে কয়েক শ মানুষ তাদের খপ্পরে পড়েছে, এর মধ্যে এ বছর প্রথম ছয় মাসেই অর্ধশতাধিক মানুষ! আগে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পছন্দের মানুষকে তুলে নিয়ে উধাও হতো। এখন তাদের মধ্যে বেড়েছে রোমাঞ্চপ্রিয়তা, বেড়েছে মাফিয়া স্টাইলে রাস্তা থেকে তুলে নেওয়ার প্রবণতা। তাদের মহাকাশযান তাই হঠাৎ হঠাৎ ঘাপটি মেরে থাকে ব্যস্ত কোনো সড়কে। সেখান থেকে ঝটপট তারা বের হয়ে আসে। অফিসযাত্রী, হোটেলযাত্রী, বাড়িমুখী—যেকোনো পছন্দের মানুষকে নিমেষে তুলে নেয় তাদের যানের ভেতর। তারপর তা যেন উধাও হয়ে যায় মহাবিশ্বের দূরতম কোনো অঞ্চলে। আর কখনো খোঁজ মেলে না তাদের বা তাদের গাড়ির।

রহস্যময় আগন্তুকেরা যাদের তুলে নিয়ে যায়, সেসব পরিবারে কান্নার রোল ওঠে। বছরের পর বছর বুক চাপড়ে কাঁদে নিখোঁজ মানুষের পিতা-মাতা, পরিবার, শিশুসন্তান। কিন্তু নিখোঁজ মানুষের আর খোঁজ মেলে না। কালেভদ্রে তাদের দু-একজনকে এসব আগন্তুক ফেরত দেয় জীবিত বা মৃত অবস্থায়, কালেভদ্রে দু-একজনকে তারা ধরে নিয়ে ছেড়ে দেয় পাশের দেশে। জীবিত যারা ফেরত আসে, তারা আর মনে করতে পারে না কিছু। তরুণ পারে না, বৃদ্ধ পারে না, ব্যবসায়ী পারে না, কবি পারে না। জীবন ও জগতের সবকিছু তারা মনে করতে পারে। শুধু মনে করতে পারে না ধরা পড়া আর ছাড়া পাওয়ার মাঝখানের সময়টুকু।

এসব রহস্যময় আগন্তুক দেখে অবশ্য দৃষ্টিবিভ্রম ঘটে আশপাশে থাকা মানুষের। তাঁরা দেখেন, এই রহস্যময় অপহরণকারীরা দেখতে মানুষের মতো, তাদের মহাকাশযান মানুষের মাইক্রোবাসের মতো। মানুষের মতো করে তারা হুংকার দেয়, হাতকড়া পরায়, ধস্তাধস্তি করে, ঠেলেঠুলে কোনো মানুষকে ঢোকায় মাইক্রোবাসে। মানুষের গাড়ির মতোই তাদের গাড়ি ছুটে যায় রাজপথ কামড়ে। কিন্তু তারপর হঠাৎ তা উধাও হয় সবকিছু থেকে। সিসিটিভি, ট্রাফিক পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, র‍্যাবের গাড়ি, নিরাপত্তা এলাকার শ্যেনদৃষ্টি—কোনো কিছুর চোখে পড়ে না আর তা।

তাদের সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী মানুষের এই বর্ণনা অবিশ্বাস্য ও অগ্রহণযোগ্য। তাই তা আমলে নেয় না পুলিশ। বেশি মানুষ এটা নিয়ে শোরগোল তুললে তারা একটা জিডি করে মাঝেমধ্যে। কিন্তু নিখোঁজ হওয়া মানুষের খোঁজ আর কখনো পায় না তারা। না পায় তার ঠিকানা, না পায় তার লাশ। কারণ, তারা জানে, এটা রহস্যময় আগন্তুকদের কাজ।

এদের খোঁজার মতো প্রযুক্তি, সাহস বা সিদ্ধান্ত নেই পুলিশের। এটি তারা অবশ্য স্বীকার করে না আমজনতার কাছে। তারা দাবি করে, এগুলো নিখোঁজ মানুষের স্বজনদের বানানো গল্প। পাওনাদার, স্ত্রী কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে কিছু মানুষ নিজেরাই লুকিয়ে থেকে ঝামেলা পাকায়। কিংবা নিজেরাই কাউকে দিয়ে নিজেকে নিখোঁজ করিয়ে সৃষ্টি করে কাঁচা নাটক।

এসব নাটক বা বানানো গল্প বিশ্বাস করার সময় নেই পুলিশের। প্রটোকল প্রদান, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, নাশকতা দমনসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। রহস্যময় আগন্তুকেরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

৩.
রহস্যময় এই আগন্তুকেরা নিজেরাও সরকারপন্থী। সরকারের কেউ তাই তাদের খপ্পরে পড়ে না। পড়ে কেবল বিরোধী মতের মানুষ। হয়তো সরকারের উন্নয়ন, নতুন ঘরানার নির্বাচন, তথ্যপ্রযুক্তির কারিশমায় মুগ্ধ তারা। বিরক্ত এসবে বাধা দেওয়া বা সমঝদার হতে ব্যর্থ হওয়া মানুষের প্রতি। তাই তাদের টার্গেট থাকে প্রধানত বিরোধী দল বা ভিন্নমতের মানুষ। বিরোধী দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে তাই উধাও করে দেওয়ার নেশায় বেশি মেতে ওঠে এরা।

অনেক সময় নানা অজ্ঞাত কারণেও তাদের তৎপর হতে দেখা যায়। গত সেপ্টেম্বর মাসে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো মাত্র এক সপ্তাহে এই শহর থেকে তারা লোপাট করে দেয় দুই ব্যবসায়ী ও এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে। ধূর্ত এই এলিয়েনরা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে নিজেদের পরিচয় দেয় গোয়েন্দা সংস্থার লোক হিসেবে।

তাদের আরও বৈশিষ্ট্য আছে। এরা পুরুষবিদ্বেষী। সব ক্ষেত্রে তাই তারা শুধু তুলে নেয় পুরুষদের, বিশেষ করে তরতাজা ধরনের পুরুষদের। কোনো কোনো নারীর আহাজারিতে বিষাদময় হয়ে তারা কোনো কোনো পুরুষকে ফেরত দিয়েছে বটে। কিন্তু ভিনগ্রহের এই জীবদের রাজ্য থেকে ফিরে তারা আর পুরুষ হয়ে থাকেনি। অজানা ভয়ে কাপুরুষের মতো নির্বাক হয়ে আছে এরা বাকি জীবন।

রহস্যময় এই আগন্তুকদের কোনো পদচিহ্ন নেই, অপরাধের আলামত নেই, তাদের জন্য দেশে কোনো আইন নেই। ধরার জন্য কোনো বিশেষ বাহিনী নেই, কোনো আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত বা অন্য কোনো মত বা ইচ্ছে নেই। তাদের সঙ্গে অবশ্য একশ্রেণির পুলিশের রয়েছে দুর্বোধ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা। কিছু ঘটনায় দেখা গেছে, পুলিশ যাকে গ্রেপ্তার করেছে, তাকে রহস্যময় আগন্তুকেরা তুলে নিয়ে উধাও করে দিয়েছে। সাতক্ষীরায় সদ্য সন্তান জন্ম দেওয়া জেসমিন তাঁর স্বামীকে থানায় তিন দিন ভাত খাইয়ে দিয়ে এসেছিলেন। পরের দিন থেকে দেখেন থানা থেকে উধাও তাঁর স্বামী। পুলিশ অবশ্য স্বীকার করেনি এটি। আগন্তুক-ভীতি কমাতে জনস্বার্থে এমন করতে হয় পুলিশকে।

উল্টো ঘটনাও ঘটে কখনো কখনো। গায়েব করা মানুষকে পরে দেখা যায় পুলিশের হাজতে। তাদের রোষ এড়াতে এ নিয়ে কোনো কৃতিত্ব জাহির করে না পুলিশ। এসব নিয়ে আজকাল বেশি প্রশ্নও করে না বাংলাদেশের বিজ্ঞ সমাজ। প্রশ্ন তুলতে ইচ্ছুক মানুষের ওপর রহস্যময় আগন্তুকদের বিশেষ নজরদারি রয়েছে বলে খবর আছে তাদের কাছে।

৪.
রহস্যময় আগন্তুকদের সমস্যা একটাই। এ দেশের ও বিদেশের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করে মানবাধিকার নামে একটা ফালতু বিষয় নিয়ে। এরা মানুষ আর আগন্তুকদের পার্থক্য বোঝে না। মানুষের ক্যামেরা, মানুষের যান আর মানুষের বাহিনী দিয়ে গ্রেপ্তারের দাবি তোলে তাদের। মানুষের আইন-আদালতে বিচার করার দাবি তোলে এরা অশরীরী আগন্তুকদের। তারা ব্যাপক উদারতা দেখিয়ে সহ্য করে এসব মানবীয় মূর্খতাকে। কিন্তু কখনো অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে এরা তুলে নেয় মানবাধিকারের লোকজনকেও।

তাদের আরেকটা সমস্যা আছে। তা হচ্ছে, বহু কিছুর মতো এ দেশে শুরু হয়েছে আগন্তুক-বাণিজ্যও। রহস্যময় আগন্তুকদের ভয় দেখিয়ে বা আগন্তুক সেজে উধাও করার এসব বাণিজ্যে আগন্তুক সমাজের কৌলীন্য হোঁচট খাচ্ছে আজকাল।

এ দেশের আদালত এই বাণিজ্য বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। এ জন্য গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির স্বজনকে ফোন করে তাকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই আদেশ অবশ্য তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এই সুযোগে আগন্তুক সেজে আদালতকে অগ্রাহ্য করে চলেছে আগন্তুক বণিকেরাও।

রহস্যময় আগন্তুক-আতঙ্কে তাই দিশেহারা বাংলাদেশের মানুষ। তারা জানে না এদের থেকে বাঁচার উপায়। একমাত্র বিরোধী দল জানে এটা। তারা জানে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যেতে পারলেই বেঁচে যাবে তারা। সেটি হলেই কেবল রহস্যময় আগন্তুকদের খপ্পরে আর পড়বে না তারা। কারণ, রহস্যময় আগন্তুক মানেই সরকারপন্থী।

আমরা আমজনতা। আমরা ভাবি, আজব এই রহস্যময় আগন্তুক কবে হবে আমজনতাপন্থী! 
  • আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 


Sunday, October 22, 2017

জিয়া সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন ইতিবাচক রিপোর্ট

যুক্তরাষ্ট্রের অবমুক্ত গোপন দলিল



Bangladeshi Voices 
 
 
সম্প্রতি অবমুক্ত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এ গোপন দলিলে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম সম্পর্কে ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ইউজিন বোস্টার কর্তৃক ‘অভূতপূর্ব আশাব্যাঞ্জক’ রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল।



দৈনিক নয়াদিগন্তে  বাংলদেশে‌র প্রবাসী ও খ্যাতিম্যান  সাংবাদিক  মঈনুল আলম লিখেছেন, বাংলাদেশের আর কোনো ক্ষমতাসীন ব্যক্তির সাথে মার্কিন প্রতিনিধির প্রথম বৈঠকের পর ক্ষমতাসীন ব্যক্তি সম্পর্কে এমন আশাব্যঞ্জক রিপোর্ট মার্কিন প্রতিনিধি ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই।

মঈনুল আলম লিখেছেন — 
জিয়াউর রহমান বীরউত্তম মার্কিন রাষ্ট্রদূত  ইউজিন বোস্টার ও অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তার সাথে জানুয়ারি ১৯, ১৯৭৬, প্রথম বৈঠকে সর্বাগ্রে বাংলাদেশের পুলিশের উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সেই অনুরোধ রাখেনি। বাংলাদেশের আর কোনো সরকার প্রধান পুলিশের উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের ওপর এমন গুরুত্ব দিয়ে বিদেশের সাহায্য কামনা করেছিলেন, এমন তথ্য পাওয়া যায় না। যুক্তরাষ্ট্র জিয়ার অনুরোধ রক্ষা করলে  আজকের পুলিশবাহিনী অনেক বেশি আধুনিক হয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে উন্নততর করতে পারত, আবার ভাব মর্যাদার সঙ্কটও দেখা দিত না।গোপনীয়তামুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের গোপন দলিল (ইও ১১৬৫২ : জিডিএস ১৯ জানুয়ারি ১৯৭৬) থেকে এ তথ্য জানা যায়। রাষ্ট্রদূত ইউজিন বোস্টার ও ‘জেনারেল জিয়ার সাথে সংলাপ’-এর বিবরণ ১৯ জানুয়ারি ১৯৭৬ টেলিগ্রামযোগে ওয়াশিংটন স্টেট ডিপার্টমেন্টে প্রেরণ করা হয়। 

বিবরণে বোস্টার লিখেছেন : (প্যারাগ্রাফ-৩)  

              

‘তিনি (জিয়া) বললেন, তিনি তার পুলিশের একটি গ্রুপকে নিউইয়র্ক সিটিতে পাঠাতে চান (যেখানে অপরাধ দমনে আমাদের পুলিশের কর্মপদ্ধতি বাংলাদেশের পুলিশকে তাদের দেশে অপরাধ দমনে সাহায্য করবে) এবং আমাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ পুলিশকে রাইফেল ও হালকা যোগাযোগ যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার জন্য সাহায্য চাইলেন। আমি তাকে বললাম, আমি এই অনুরোধের ব্যাপারটি জানি এবং আমি ওয়াশিংটন ডিসিকে এটা জানিয়েছিলাম। আমি তাকে বললাম, আমাদের আগেকার আলোচনাগুলো থেকে তিনি জানতে পারেন, আমরা সবচেয়ে আগ্রহী কৃষি উন্নয়ন এবং পরিবার-পরিকল্পনায়, আমরা মনে করি, এই দু’টি গুরুত্বপূর্ণ খাতে আমরা সবচেয়ে ভালোভাবে সাহায্য করতে পারব।’ 

বোস্টার লিখেছেন : ‘(প্যারাগ্রাফ-৪) 
পুলিশের জন্য প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জাম প্রদান করার (জিয়ার) অনুরোধের বিষয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনার স্মলম্যান আমাকে বলেন, ডিনারে জিয়া তার কাছে একই অনুরোধের পুনরাবৃত্তি করেন এবং যে অনুরোধ আমরা ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পেয়েছিলাম, জিয়া তার পুনরুল্লেখ করেছেন।’ স্মলম্যান বলেন, তিনি জিয়াকে বলেন, ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যাপারে কিছু করার সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবে তিনি জিয়াকে বলেন, ব্রিটিশ সরকার আগের এক কর্মসূচি অনুযায়ী যেসব যোগাযোগ সরঞ্জাম দিয়েছে, তারপর আরো সরঞ্জাম দিতে পারত - এ আশা যেন তিনি না করেন। জিয়া বললেন, নৌবাহিনীর জন্য কিছু সাহায্য চাওয়ার জন্য কমডোর খান তার ওপর চাপ দিচ্ছেন। তিনি (স্মলম্যান) বলে দিয়েছেন, এরকম কিছু সাহায্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হতে হবে।’ 
বোস্টার লিখেছেন : ‘(প্যারা-৬) 
দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ব্যাপারে জিয়া গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করলেন যে তিনি সরকারের শাসনব্যবস্থা অধিকতর বিকেন্দ্রীকরণ করার চেষ্টা করছেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মতৎপরতাকে উৎসাহিত করতে এবং চোরাচালান আরো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত করতে চান। আমার প্রশ্নের উত্তরে জিয়া দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অব্যাহত থাকবে বলে তার আশ্বাস ব্যক্ত করেন এবং আরো বলেন, সশস্ত্র বাহিনীতে শৃঙ্খলা বজায় রাখা বর্তমানে কোনো সমস্যা নয়।’ 
বোস্টারের সমাপনী বক্তব্য : (প্যারা-৭) 
‘মন্তব্য : বাংলাদেশে শাসনক্ষমতা দৃঢ়ভাবে পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তিত্বরূপে আবির্ভূত হওয়ার পর জিয়ার সাথে এটা আমার প্রথম সাক্ষাৎ। তাকে দেখেছি নিরুদ্বেগ, মৃদুভাষী এবং অভাবনীয় বন্ধুত্বসুলভ এবং তার নতুন দায়িত্ব সত্ত্বেও সম্পূর্ণভাবে মানসিক চাপমুক্ত। তাকে দেখে এবং তিনি যেভাবে কাজ করছেন, তা দেখে প্রতিভাত হয় - তিনি দায়িত্ব পালন আত্নবিশ্বাসের সাথে করছেন। জিয়ার মনের স্বাভাবিক নিরুদ্বেগ ভাব, সারল্য এবং বন্ধুত্বসুলভতা কিন্তু পাশাপাশি পারিপার্শ্বিকতার ওপর দৃষ্টিপাতে সীমাবদ্ধতা - যা বোস্টার উল্লেখ করেছেন ,বাংলাদেশের আর কোনো ক্ষমতাসীন ব্যক্তির সাথে মার্কিন প্রতিনিধির প্রথম বৈঠকের পর ক্ষমতাসীন ব্যক্তি সম্পর্কে এমন আশাব্যঞ্জক রিপোর্ট মার্কিন প্রতিনিধি ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়েছেন কি না আমাদের জানা নেই।

  • ·     নয়াদিগন্তে প্রকাশিত  মঈনুল আলম‘র লেখা থেকে  ঈষৎ সম্পাদিত।  

মঈনুল আলম দেশে‌র বরেণ্য সাংবাদিক-সম্পাদক-লেখক চট্রগ্রামের মরহুম মাহবুবুল আলমের যোগ্য তনয়। প্রতিথযশা সাংবাদিক। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। দৈন‌িক ইত্তেফাক-এ‌ দীর্ঘকাল ছিলেন বিশেষ সংবদাদাতা। 

Saturday, October 21, 2017

ভোটের অধিকার আদায় করে নিতে হবে - শহীদ উদ্দিন




Bangladeshi Voices

— 

ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বরাবরই বিএনপি আন্দোলন করে আসছে। ভবিষ্যতেও খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের চেয়ারপারসন চিকিৎসা শেষে দেশে এসেছেন। জানিয়েছেন আইনের প্রতি শ্রদ্ধা। এখন আমাদের বিশ্বাস খুব দ্রুত নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবেন তিনি।

সম্প্রতি নিজ বাসায় আমাদেরসময়ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে চলমান রাজনৈতিক সংকট, বিএনপির আন্দোলনের গতিপথ, মানবতা ও রোহিঙ্গা সংকট এবং ডাকসু নিবাচন নিয়েও কথা বলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।

সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন প্রতিবেদক মাঈন উদ্দিন আরিফ।


প্রশ্ন: আগামী নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন?

উত্তর: ভোটের অধিকারের জন্য দেশব্যাপী তো আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন। এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য বরাবরই বিএনপি আন্দোলন করে আসছে। আর আন্দোলন তো যে একবার হয়েছে, আর হবে না সেটা তো নয়। এটা একটা ধারবাহিক বা চলমান প্রক্রিয়া। আন্দোলন বলতে রাজপথে শুধু সারাদিন মিছিল মিটিং করা বা হরতাল আবরোধ করে সব শেষ করে ফেলা, এটা তো আন্দোলন না। আমাদের একদম তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা জাগরণ সৃষ্টি করা। সংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করা। এটা আন্দোলনের একটা পার্ট। 
তাই আমরা সেই দিকে দলকে বেশি সময় দিচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের কর্মসূচি দলীয় ভাবে অব্যাহত আছে। অঙ্গসংগঠনের কর্মসূচিও অব্যাহত আছে। ইস্যুভিত্তিক এই কর্মসূচিগুলোকে বিভিন্ন সময়ে প্রাধান্য দিচ্ছি আমরা। আমাদের পার্টির স্ট্যান্ড অত্যন্ত ক্লিয়ার। ইতিমধ্যে চেয়ারপারসন ঘোষিত ভিশন ২০৩০ যে বক্তব্য সেটা আমরা প্রত্যেকটা জেলায় তৃণমূল পর্যায়ে এই কপিগুলো পৌঁছিয়ে দিয়েছি। আমাদের দলের পক্ষ থেকে চেয়ারপারসনের কিছু বক্তব্য ছিল সেগুলো আমরা লিফলেট এবং পোস্টার আকারে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দিয়েছি। আমাদের দলের বক্তব্য হলো আমার নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন চাই। আর এই নিরপেক্ষ নির্বাচন যদি করতে হয় তাহলে সেখানে কিছু ব্যবস্থা নিয়ে আসতে হবে এবং শান্তিপূর্ভাবে এই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সেটার জন্য ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা আমরা বক্তব্য বিবৃতির মাধ্যমে বললেই যে এই সরকার দিযে দেবে তা কিন্তু না। এটা আমাদেরকে আদায় করে নিতে হবে। তাহলে আমরা যদি মুভমেন্টটাকে ধারবাহিকভাবে পর্যালোচনা করি স্টেপ বাই স্টেপ আমরা এগিয়ে যাই তাহলেই সম্ভব একটা পর্যায়ে আমাদের এই অধিকার আদায় করা।


প্রশ্ন: আপনারা যে সহায়ক সরকারের দাবি করছেন, তার বিস্তারিত এখনো প্রকাশ হয়নি, আপনারা কি সে দাবি থেকে সরে যাচ্ছেন?

উত্তর: এটা দলের সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটা নির্বাচনী রূপরেখা ঘোষণা করবেন এবং সহায়ক সরকার নামে এই রূপ রেখাটা আসবে বলে ইতিমধ্যে দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। সঠিক সময়ে এই সিদ্ধান্ত জাতির সামনে আমাদের চেয়ারপারসন তুলে ধরবেন। আর সহায়ক সরকার থেকে বিএনপি সরে আসবে বলে আমার জানা নেই।

প্রশ্ন: রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আমাদের দেশে পাড়িজমাচ্ছে, আপনি তো সেখানে গেছেন, সেখানকার পরিস্থিতি কি দেখে আসলেন?


উত্তর: এটা একটা খুবই মানবিক দিক। আমরা আমাদের দেশনেত্রীর নির্দেশে রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়িঁয়েছি। আমাদের দায়িত্ব থেকে দাড়িঁয়েছি। আমরা তাদের পাশে ছিলাম, এখনো আছি। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আমি যদি একটু বিশ্লেষণ করি তহলে আমাদের অবস্থান থেকে আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেছি এবং তা এখনো করে যাচ্ছি। কিন্তু সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম যে ভাবে অব্যাহত থাকার কথা, যে ভাবে তারা আওয়াজ দিচ্ছেন এবং মিডিয়া যা বলছেন বাস্তবের মধ্যে অনেক ব্যবধান আছে। সরকার যে দায়িত্ব পালন করবে বা যে দায়িত্ব পালন করা উচিত সেই দায়িত্বগুলো তারা মুখের বুলিতেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। এখানে আমি যতটুক অনুধাবন করেছি কয়েকদিন যাবত সেখানে থাকা অবস্থায় তা হলো সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন, এসোসিয়েশন এবং আমাদের রাজনৈতিক সংগঠন আমাদের জোটের বা অঙ্গ সংগঠন ব্যাপক ভাবে তাদের উপস্থিতি এবং ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটা মানবতার সেবাই। আমি সরকারের কার্যক্রমে আসলে সেখানে গিয়ে হতাশাই ব্যক্ত করছি আর কিছু বলার নেই আমাদের।


প্রশ্ন: চলমান রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা বিএনপি নেতারা বলছে সরকার ব্যর্থ হয়েছে, সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের জনগণ, সরকার, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি ভূমিকা রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন?


উত্তর: দেখুন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার জীবন দশায় ১৯৭৮সালে এই রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলা করেছেন। ১৯৯২ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। রোহিঙ্গা সেখান থেকে বিতাড়িত হচ্ছে। তাদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন হচ্ছে। মানবিক কারণে তাদেরকে আমরা সহায্য সহযোগিতা করছি, আশ্রয় দিচ্ছি। ৭৮সালে কিন্তু আন্তর্জাতিক ভাবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং ৯২ সালে খালেদা জিয়া আলাপ আলোচনা করে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে  এবং সেদেশের সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে সম্মানের সঙ্গে রোহিঙ্গাদেরকে ফেরত পাঠিয়ে ছিলেন।

কিন্তু আমরা এখন আন্তর্জাতিকভাবে এই সরকারের কোন চাপ দেখছিনা। বরং রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে প্রবেশ করলো তখন এই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকে বলেছেন যে, তাদের সঙ্গে অস্ত্র গোলাবারুদ থাকতে পারে, এদের এখানে আশ্রয় দেওয়া যাবে না। বাধা দিয়েছেন এবং কি তাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু ইদানিং দেশের মানুষ বা বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা যখন চাপ সৃষ্টি করেছি তখন তারা ঐ বক্তব্য থেকে সরে এসেছে।

প্রকৃত পক্ষে আন্তর্জাতিকভাবে এটা নিয়ে যে আলাপ আলোচনা করে যে সকল দেশ নেতিবাচক ভূমিকায় আছে তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে গিয়ে সেখানে আলোচনার টেবিলে আলোচনা করা এবং চাপ সৃষ্টি করা তাদেরকে কনভিন্স করা সেই চেষ্টা খুব একটা হচ্ছে বলে আমরা দেখছি না। সুতরাং এই যে দুর্বল বা নতজানুনীতি এই নীতিই বলে ভবিষ্যতে তাদের ওপর চাপ ও সৃষ্টি হবে না এবং এদেরকে ফেরতও পাঠাতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।


প্রশ্ন: আচার্য মহোদয় ডাকসু নিবাচন নিয়ে কথা বলেছেন, এই নিয়ে এখনো কোন কিছু দৃশ্যমান নয়, ডাকসু নিবাচন নিয়ে আপনি কি বলবেন?


উত্তর: অবশ্যই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রয়োজনে এবং ছাত্র রাজনীতির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার স্বার্থে ডাকসু নির্বাচন করা উচিত। ডাকসু নির্বাচন করার মধ্য দিয়েই সেখানে একটা নেতৃত্বের বিকাশ হবে। মেধার চর্চা হবে এবং একটা গণতান্ত্রিক প্রেক্ষাপট তৈরি হবে। এখান থেকে জাতীয় রাজনীতির শিক্ষণীয় অনেক কিছু রয়েছে এবং সেই জন্য শিক্ষাঙ্গণ অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বপ্রথম শিক্ষার পরিবেশকে নিশ্চিত করা এটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বড় দায়িত্ব হয়ে দাঁড়াবে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডাকসু নির্বাচন দেন অবশ্যই সেখানে সকল ছাত্র সংগঠন অংশ গ্রহণ করবে এবং বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করণে একটা সহাঅবস্থান তৈরি হবে। সেখানে মেধার চর্চা হবে। প্রতিযোগিতা হবে এবং সেখান থেকে সু্ষঠু স্বাভাবিক রাজনীতি হতে আবার নতুন করে অনেক ভূমিকা রাখবে। সেই জন্য ডাকসু নির্বাচন হওয়া উচিত।


প্রশ্ন: আপনার সংসদীয় আসনের পরিস্থিতি কি?

উত্তর: আমার আসনে আল্লাহর রহমতে দু’বারেই নির্বাচন করেছি। আমার এলাকার জনগণ আমাকে সমর্থন দিয়েছে। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও যদি সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে তারা আমাকে ভোট দেবেন এবং বিএনপির প্রার্থীকে জয়ী করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

Friday, October 20, 2017

প্রধান বিচারপতির ছুটি সাদাচোখে দেখার উপায় নেই - রুমিন ফারহানা


ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। নানান বিষয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। সাক্ষাৎকারটি এখানে তুলে ধরা হল -


প্রধান বিচারপতির ছুটির বিষয়ে আইনজীবীদের মধ্যে মতভেদ লক্ষ্য করা গেছে- এই বিষয়ে আপনার মতামত কি? জানতে চাইলে রুমিন ফারহানা বলেন, রাষ্ট্রে্র তিন স্তম্ভের মধ্যে বিচার বিভাগ একটি। আর এর প্রধান হচ্ছেন, প্রধান বিচারপতি। তার ব্যাপারে দলমতের ভেদাভেদ থাকার কথা ছিল না। এটা অত্যন্ত দু:খজনক। এখানেও আমরা ভেদাভেদ লক্ষ্য করেছি। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিষয়টি এমনভাবে দেখাতে চেষ্টা করেছেন, যেন এটাই স্বাভাবিক ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করছি। ষোড়শ সংশোধনী রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের সমস্ত অঙ্গ ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু বিচারবিভাগ নাক উঁচু করে একটু ডুবে থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং বিচারপতিদের স্বাধীনতা, সম্মান ও মর্যাদার কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ইস্যুতে দলমত ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। প্রতিটি আইনজীবীদের একমত ও একত্রিত হওয়া উচিত ছিল। আমাদের কাছে সুযোগ এসেছিল। কিন্তু আমরা পারলাম না।


এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বলেন, প্রধান বিচারপতির ছুটি যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বাদানুবাদ দু:খজনক ও নজীরবিহীন। কারণ এর আগে ৩৯ দিনের আমরা একটি লম্বা ছুটি কাটিয়েছি। ছুটির পর পরেই আমরা বারের সদস্যরা চা চক্রে মিলিত হই। এসময় আমাদের মধ্যে কৌশলাদি বিনিময় হয়। আর সেটা মেনেই আমাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল এবং প্রধান বিচারপতিই এই দাওয়াত দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই আমরা শুনতে পাই, উনি ছুটির জন্য দরখাস্ত করেছেন। আর ছুটির দরখাস্তে ৫টি বানান ভুল ছিল এবং স্বাক্ষরও ওনা’র সাধারণ স্বাক্ষরের সাথে মেলেনি। আর এই ঘটনাগুলোই জনমনে নানান প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে, আসলে বিষয়টি কি?


ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আমরা দেখেছি, প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনীর দিতেই, তারপরেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাকে যে ভাষায় আক্রমণ করেছেন সেটা আদালত অবমাননার মধ্যে পড়ে। সুতরাং এখানে এক ধরণের চাপের আভাস পাই আমরা। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করেছেন। অথচ যে বারের উনি অভিভাবক, সেই বারের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবীদেরকে দেখা করতে দেওয়া হলো না। বলছেন, দেখা করার অনুমতি নেই। তাহলে মাঝপথে কেনো বাধা? আমরা গেটে গিয়ে সেই বিষয়টি শুনতাম। অর্থ্যৎ পুরো বিষয়ে লুকোচুরি ও এক ধরনের আড়াল করার বিষয় আছে। ষোড়শ সংশোধনী রায় যখন তাদের মতো হয়নি এবং রায়ে যখনই দেশের পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে তখনই এই ঘটনাগুলো আমরা দেখছি।


অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, প্রধান বিচারপতির ছুটির পুরো বিষয়টির মধ্যে আমি চাপ লক্ষ্য করছি। বিষয়টি সাদা চোখে দেখার উপায় নেই। বাংলাদেশের গণমাধ্যম, ভারতের গণমাধ্যম এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের বক্তব্যে দেখলে বুঝা যায়, বিষয়টিতে চাপ রয়েছে। তবে সাদা চোখে দেখার জন্য বিষয়টি স্পষ্ট করতে বারের আইনজীবীরা দেখা করার চেষ্টা করেছেন। দেখা হলে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হতো।

  • amadershomoy.biz থেকে সংক্ষেপিত। 


Saturday, October 14, 2017

বাংলাদেশের চাল-বেচাল কথকতা

কালাম আজাদ

বোধ হয় দেড় দশক আগে একজন লেখকের একটা লেখা পড়েছিলাম। খুবই লেখাটির শিরোনাম অতি আটপৌরে -  ‘ একদিন ভাত খেয়েছিলাম’। লেখাটা ঐ সময়ে পাঠকের মনে বেশ দাগ কেটেছিল। ক’দিন আগে ‌যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম বলা হচ্ছে ‘আজ ‌থেকে তোর ভাত বন্ধ’। অাজকে সদ্য প্রকা‌শিত এক সংবাদ দেখলাম কে নাকি ২৩ বছর ধরে ভাত খায় না। মন পড়ে গেলে ভাষাতত্ত্বের শব্দের উৎপত্তি বা বুৎপত্তি তত্ত্ব। আলোচনাটা একটু অশ্লীল আমি পাঠকবর্গের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। কিন্ত কথাটা বলতেই হবে। নইলে গুরুত্বটা কলিজায় গিয়ে ঠিক ঠেকবে না। সারস্বত সমাজের কথায় আছে অন্ন চিন্তা চমৎকারা! অর্থাৎ কিনা ভাতের চিন্তাটা বড়োই কঠিন। ভাত বাংলাদেশে মানুষের জীবনে কতো কঠিন সেটা বোঝা যাবে। একটি মাত্র অশ্লীল শব্দে সেটা হলো ‘ভাতার’ । শব্দটা আসলে কিন্ত অশ্লীল মোটেও নয়। নারীর স্বামীর অপর নাম! অর্থ স্বামী তার স্ত্রীর ভাত বা ভরণপোষণ যোগাতে অন্তত ধর্মের দিক থেকে হলেও বাধ্য। তাই বলা হয় ভাত দেবার ভাতার নয় কিল দেবার গোঁসাই। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব এমনি মোটামাপের তথা সরল ভাষায় ধর্মের তত্ত্ব দিয়েই তিনি হয়েছেন পরমহংস দেব। অর্থাৎ তিনি আজকের আধুনিকতায়  ইফেকটিভ কমিউনিকেটর। তিনি হয়েছেন বিবেকানন্দের গুরু। বিবেকানন্দ যা বলেছেন ও লিখেছেন তা  অতি উচ্চস্তরের সাহিত্য। কিন্ত তাঁর নামটি যতো না জেগে আছে তার চেয়ে ঢের ‌ বেশি বেঁচে আছেন রামকৃষ্ণ । 




সে যাক, কাজের কথায় ফিরে আসি।  ‘৪৭ এর পর  বা তা‌রও আগে অখণ্ড  বাংলায় হয়েছে ভাতকেন্দ্রিক রাজনী‌তি। পশ্চিম পাকিস্তানি শোষণের মুখে বাংলাদেশের মানুষ যে রাজন‌ীতিতে‌ আকৃষ্ট হয়েছে তা হলো মোটাভাত কাপড়ের রাজনীতি। শেরে বাংলা ভাতের রাজন‌ীতি করেছেন, ক‌রেছেন মওলানা ভাসানী। তিনি বলেছিলেন, ওহে সোহরাওয়‌র্দি  বিমানে করে কি ভাত নিয়ে এস‌েছো আমাদের জন্য । তিনি আরও কিছু বলেছিলেন সেটা বলাবাহুল্য শ্রীরামকৃষ্ণের মতোই আদিরসাত্মক ভাষা।তিনি এমনকি শেষটায় ভোটের আগে যার কথা বলেছিলেন তাহলো ভাত। মাঝখানে কিছুটা ছাড় দিয়ে আমরা বলতে পারি বেগম খালেদা জিয়ার ডালভাত-এর কথা। কিন্ত এবার ভাতের রাজন‌ীতি তে দেখা গেলো স্ট্রাটেজি বদল হয়েছে। ভাত মারা শুরু হলো।  বলা হলো ‘ ‘খালেদা জিয়ার ডালভাত, গরিবের মাথায় হাত!’ বেশ তাহলে দেখা যাক, পরের ঘটনা‌। দেশের শাসকশক্তি সেই ডালভাতের, এমনকি লবণ তেলের ব্যবস্থাপনা তুলে দিলেন তাদের হাতে যাদের ফরজ কাজটি ছিল সীমান্ত রক্ষা। অবস্থা পোঁছে গেল চরম সীমান্তে। কয়েক ডজন জেনারেল প্রাণ দিলেন। হাজারো বিডিআর সদস্য বলি হলেন। তবু ভাতের প্রশ্নের মীমাংসা আর হলো না।

এর আগে ভাতের রাজন‌ীতির প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে দেশ দে‌খলো আইয়ুব খানের ভুট্টা খাওয়ানো ও লোক মারার  প্রতিবাদে ভূখামিছিল। গমও প্রথমবারের মতো এলো গম বা আটা হয়ে। উত্তেজিত কথাবার্তা ছড়িয়ে পড়লো সবখানে। ওরা আমাদের ‘‌রেকর্ড’ (গ্রামোফোন রেকর্ডের আকারের রুটি যা খেলে নাকি আমাশা হয়ে যায়) খাইয়ে আমাদের পেট ভরাতে চায়। ভয়ানক চক্রান্ত। পরে আমরা কি দেখলাম সে কথা পরে । ১৯৬০ থেকে ১৯৭৪-এর এই মেয়াদে ঘটে সবুজ বিপ্লব। ইরি আমাদের খাদ্যের জগতে বিপ্লব নিয়ে আসে। ৬৯-এর যখন গণঅভ্যুত্থান ঘটে তখন সবুজ বিপ্লবের মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে কালের স্বাভাবিক নিয়মে। নতুন চক্রের শুরু সম্ভবত ১৯৭৫-র পরে যখন দেশ কৃত্রিম আকাল কাটিয়ে উঠেছে হাজারো বুভুক্ষু প্রাণের বলি দামে। এদেশে আনা হয়েছিল নে‌ডেকোকে - যার পুরো নাম ন‌েদারল্যান্ড ইন্জ‌িনিয়ারিং  কোম্পানি। পৃথিবীসেরা প্রযুক্তি ছিল  ডাচদের কাছেই। তাদের  পরিকল্পনায় উপকূলীয় অঞ্চলে ধানের অভাবিত ফলন হয়। তবে এর উপযুক্ত ফলোআপ না থাকার কী পরিণতি হতে পারে তা আমরা দেখছি ভবদহ ও বিল ডাকাতিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। ওদিকে ৭০ দশকের মাঝামাঝি দেশের অন্যতম সেরা ও নিরাপদ ভূ-উপরি সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্প  এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবার ফলে ওখানে প্রচুর ধান ‌তো উৎপন্ন হয়, আর সেই যে নতুন ফসল আসে তার পপুলার নাম হলো আটার চাকতি বা গম। দেশের মাটির গম পেতে থাকে পরম আগ্র‌হে বাংলাদেশের মানুষ।এটি আসলে ছিল এক বিশাল খাল কাটা প্রকল্প। যে সব খালে পদ্মা থেকে মিঠে পানি তু‌লে খালে প্রবাহিত করা হয়। আসতে থাকে সোনালী ফসলের প্রবাহ। এটি ছিল আসলেই খাল কাটা প্রকল্প যা কুমির ডেকে অনেনি। সম্ভবত দেশ গড়ার যোগ্য দাবিদার জিয়া এখান থেকেই আইডিয়া পেয়েছি‌লেন। আর সেখালে কুমির আসবে কি, নেতার অবর্তমানে শোকেই হয়তো বা শুকিয়ে গিয়েছিল। এই প্রকল্পটি রক্ষা করছিল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে এক তৃতীয়াংকে লবণাক্ততার হাত থেকে। ভারত ‌গঙ্গা থেকে পা‌নিপ্রবাহ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর করে দিল । জিকে প্রকল্পের অকালমৃত্যু ঘটল।

এলো হাইব্রিড এইচওয়াইভি। দেশ প্রায় খাদ্যে স্বয়ম্ভর হয়ে উঠলো। কথার খৈ ফুটতে লাগলো । রহমত আছে না। আছে অবশ্যই তবে তাও অফুরন্ত বলে দেখা গেল না। ঝড়-বন্যা জলোচ্ছ্বাস প্রায় হয়নি বলা চলে দীর্ঘকাল । ক্ষীণকায় সাত উটের স্বপ্ন কী দেখেছেন ইউসুফ! আজ কী আমরা দেখছি,জ্যামিতিক হারে ধানচাল, সবকিছুর দাম বাড়ছে। ১০/১২ কে‌জি দুরে থাক  ৫৫ টাকা কেজি ছেড়ে ওটা  আসমানে চড়ার অপেক্ষায় রয়েছে। চা‌ল‌ের ঘাটতি হয়েছে ৫০/৬০ লাখ টন!  আসামী পাকড়াও করা হচ্ছে ভারতসহ চালরপ্তান‌িকারক হাতে গোনা কযেকটি দেশকে। চাল রপ্তানি করার আত্মম্ভরিতার দিন খতম। তাদের দোষ কী। তারা বিক্রেতা। সুযোগ পেলে তো বেশি চাইবেই। ‌সোজা কথা ফেল কড়ি , মাখো তেল তুমি কি, আমার পর! আজ থেকে কয়েক দশক আগে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী দুর্গাবাবু বলেছিলেন , বাংলাদেশের অর্থনীতি ভারতের অর্থনীতির সম্পুরক। কথাটা মোশতাকের পছন্দ হয়নি। কিন্ত আজ। পেঁয়াজটার জন্য পর্যন্ত আমরা একান্তই ভারত নির্ভর।  বাংলাদেশের সাধারণ ব্যবসায়ী বলছেন, চলের দাম বাড়ন্ত হওয়ার নেপথ্যে নাকি ভারত।

আমাদের ন‌ীতি নির্ধারকদের বক্তব্য কী। ভারতের ভরসায় যদি তাঁরা আঁখি মুদে থাকেন কী হবে।যদি তারা কৃষি ইনপুট ‌নিয়ে আকণ্ঠ দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকেন বাস্তবতা কি মোহন স্বপ্নের ঘোমটা দিয়েই থাকবে। সর্বশেষ সর্বনাশা খবর এসেছে  -  রশীদকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশ দিয়েছেন  মন্ত্রিসভার অন্যতম ঝানু মন্ত্রী বলে খ্যাত বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমদ। আমাদের দেশে ‘খনির’ চোরদের ঠেলায় বহুকাল আগেই রেশনিং ব্যবস্থা উঠে গেছে। শাস্ত্র আউড়ে ফতোয়া দেওয়া হয়েছে রেশনিং-এ কালোবাজারের জোয়ার বাড়ে। অতএব বাকি থাকে কি। অতএব ধরো শালাকে। খাতিরের বৈঠকের পরপরই সেই বার্তা গেল। কিন্ত সেই বার্তা রটে যাবার আগেই হয়তো  বাতাসী চোপাবাকসে খবর  আগাম পৌঁছে গেল যেখানে যাবার। ‌টাস্ক ফোর্স -এর মর্দরা সবিক্রমে গিয়ে দেখতে পে্লেন চিড়িয়া উড়ে গে‌ছে। অত‌এব কারও কারও মতে কেষ্টা ঐ হানিফ বেটাই চোর।

‌এর মাঝে পদ্মা দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল। ভাতের ওপর গমের জায়গা করে নেবার অবিশ্বাস্য অথচ সত্য কাহিনী ফাঁস হয়েছে। কিছুকাল আগে চালের দাম যখন গমের চেয়ে কম ছিল পথিকৃত জিয়া প্রবর্তিত কাবিখার ‌মেয়েরা নাকি চালের বদলে গম পাওয়ার জন্য খাবি খেতে বাধ্য হয়েছে। আর চেয়ারম্যান সাহেবেরা চালে‌র চেয়ে দামি গম কালোবাজারে বেচে চেহারা নুরানি করেছেন। আর হানিফ  সঙ্কেতের কল্যাণে নিজেরা গমচোর নামে কিংবদন্তী হয়ে গেছেন।

এ কাহিনী অ‌নেক লম্বা সুতোয় বাঁধা। সুতো বেয়ে গোড়া ২য় ‌বিশ্বযুদ্ধে অনেক দানবীর পর্যন্ত  গিয়ে ঠেকবে একই চাল চাল-বেচাল , বেতাল কাহিনী। আর এ কারণে দেশরক্ষা কমিটির অন্যতম বিপ্লবী  ও মুক্তিযোদ্ধা কবি রফিক আজাদ ক্ষিপ্ত বিদ্রোহেই বোধকরি লিখেছিলেন  --


‘চাই না মন্ত্রীর গাড়ি, চাই না নিতম্ব প্রধান নারী
চাই লাল লাল ভাত , ভাত দে হারামজাদা
নইলে মানচিত্রটাই খেয়ে ফেলব’