Search

Tuesday, December 26, 2017

বাংলাদেশে গুম একটি ‘গভীর উদ্বেগের বিষয়’





গত মাসে ঢাকার একটি ব্যস্ত সড়ক থেকে অপহরণ করা হয়েছিল একজন শিক্ষাবিদকে। তিনি এক মাসেরও বেশি সময় পরে বাসায় ফিরেছেন। বলেছেন, ‘অজ্ঞাত অপহরণকারীরা’ তুলে নিয়ে যায় তাকে। তিনি মোবাশ্বার হোসেন। ঢাকায় অবস্থিত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী প্রফেসর। তাকে অপহরণ করা হয়েছিল ৭ই নভেম্বর।

শুক্রবার তাকে ঢাকার কাছে একটি মহাসড়কে একটি মাইক্রোবাস থেকে ফেলে যাওয়া হয়। এ সময় তারা তাকে বলা হয়, ‘পিছনে ফিরে তাকালে আপনাকে গুলি করবো আমরা’। তিনি বলেছেন, অন্ধকার একটি রুমে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল ৪৪ দিন। তারপর তার চোখ বেঁধে টানতে টানতে মাইক্রোবাসে ওঠানো হয়। 

মুক্তি পাওয়ার ১২ ঘণ্টারও কম সময় পরে শুক্রবার সকালে তার বাসার বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মোবাশ্বার হাসান। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পরে প্রথমবারের মতো আমি দিনের আলো দেখতে পাচ্ছি’। 

তার অপহরণের ঘটনাটি এর আগের আরেকটি ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়। হাসান বাসায় ফেরার মাত্র দু’দিন আগে ঢাকাভিত্তিক সাংবাদিক উৎপল দাসকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তাকে আটকে রাখা হয়েছিল ৭১ দিন। 

উৎপল দাসও বলেছেন, ঢাকা থেকে তাকে অপহরণ করে চার থেকে পাঁচ ‘অজ্ঞাত অপহরণকারী’। এই অপহরণকারীরা এই দু’ব্যক্তিকেই প্রকাশ্যে দিনের আলোয় তাদের গাড়িতে তুলে নিয়েছিল। উৎপল দাস আরো বলেছেন, তাকেও চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয়। এরপর তাকে ফেলে যাওয়া হয় একটি মহাসড়কে। 

হাসান বলেছেন, তার অপহরণকারীদের একজন তার চোখের ভিতর কিছু একটা ঘষে দেয়। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। উৎপল দাস বলেছেন, কালো কাপড় দিয়ে তার কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল। 

তবে তাদের দু’জনের কেউই অপহরণকারীদের শনাক্ত করতে বা চিনতে পারেননি। 

তাদেরকে এমন একটি সময়ে মুক্তি দেয়া হয়েছে যখন বাংলাদেশে মারুফ জামানসহ সুপরিচিত অনেক মানুষ গুমের ধারাবাহিক ঘটনা ঘটেছে। মারুফ জামান ৪ঠা ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি কাতার ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ছিলেন। 

এ বছরের শুরুর দিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘২০১৩ সাল থেকে কয়েক শ’ মানুষকে অবৈধভাবে আটক করেছে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ’। শুধু গত বছরেই ‘জোরপূর্বক গুমের শিকার’ হয়েছেন  ৯০ জন। ওই রিপোর্ট প্রকাশের সময় হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গুমের ঘটনাগুলো প্রমাণিত এবং এসব বিষয়ে রিপোর্ট হয়েছে। কোনো আইনের তোয়াক্কা না করে সরকার এই চর্চা অব্যাহত রেখেছে। দেখে মনে হচ্ছে লোকজনকে আটকে মুক্ত স্বাধীন অধিকার ভোগ করছে বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। তারা অপরাধী হবে নাকি নিরপরাধী হবেন সে সিদ্ধান্তও তারা নিচ্ছেন। তাদের শাস্তি দেয়ার বিষয়টিও তারা নিশ্চিত করছেন। এমনকি তারা বেঁচে থাকার অধিকার পাবেন কিনা তাও তারা নির্ধারণ করছে’। 

ঢাকা ট্রিবিউনের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত চার মাসে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে মোবাশ্বার হাসান ও উৎপল দাসসহ এখন পর্যন্ত বাসায় ফিরেছেন পাঁচজন। স্থানীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন রয়েছেন নিখোঁজ। মারুফ জামানসহ অন্যদের কি পরিণতি হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। 

মিডিয়া ও মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলোর সমালোচনার মুখে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সম্প্রতি বলেছেন, নিখোঁজ সবাইকেই পাওয়া যাবে। 

অনিশ্চিত কারণ

মোবাশ্বার হাসান ও মারুফ জামান উভয়েই সম্ভ্রান্ত, মধ্যবিত্তের ব্যাকগ্রাউন্ডযুক্ত মানুষ। বাংলাদেশি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী তারা সম্পদশালী ছিলেন না। আল জাজিরার সঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তাদের কাছে কোনো মুক্তিপণ চাওয়া হয়নি। অন্যদিকে উৎপল দাসের পিতা চিত্তরঞ্জন দাস বলেছেন, তার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর তিনি মুক্তিপণ চেয়ে ফোনকল পেয়েছেন। তিনি মাসে প্রায় ১৯৫ ডলার আয় করেন। তিনি একজন স্কুল শিক্ষক। বসবাস করেন ঢাকার বাইরে একটি ভাড়া টিনশেড বাড়িতে। চিত্ত রঞ্জন দাস বলেন, অজ্ঞাতন ফোনকলকারী তার কাছে ছেলের মুক্তির জন্য ১২৫০ ডলার মুক্তিপণ দাবি করেছিল। তিনি তার ছেলের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু তাকে সেই সুবিধা দেয়া হয় না। এরপর তাকে আর কলব্যাকও করা হয়নি। 

ঢাকাভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী শাহদীন মালিক। তিনি সুপ্রিম কোর্টেরও একজন বিশিষ্ট আইনজীবী। তিনি বলেছেন, তিনি মনে করেন না চলমান এই অপহরণের ঘটনাগুলো শুধুই অর্থ আদায়ের উদ্দেশে। এর পরিবর্তে যাকে রাষ্ট্রের জন্য হুমকি মনে করা হবে তাকে এর মাধ্যমে একটি গায়ে শিহরণ লাগানো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার জন্য এ কাজ করে থাকতে পারে। শাহদিন মালিক আল জাজিরাকে বলেন, আমার মনে হয় যারা সরকারের সমালোচক তাদের রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করছে (আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলো)’। 

মোবাশ্বার হাসান রাজনীতিতে ইসলাম এবং জঙ্গি ইস্যুতে বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন। অন্যদিকে উৎপল দাস বাংলাদেশের একটি বাহিনীকে নিয়ে খবর লিখেছেন। সাবেক কূটনীতিক মারুফ জামান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচক ছিলেন। ফেসবুকে সরকারবিরোধী অন্যদের পোস্ট শেয়ার দিতেন তিনি। শাহদিন মালিক বলেন, মোবাশ্বার হাসান ও মারুফ জামানের মতো ব্যক্তিরা রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন কর্মকা-ে জড়িত বলে সন্দেহ হতে পারে আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর। এর ফলে তাদের আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়ে থাকতে পারে। শাহদিন মালিক বলেন, ‘এই (প্রবণতা) ভুল এবং মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন’। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, মাঝে মাঝেই আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এসব গ্রেপ্তারের খবর অস্বীকার করে। সরকারের কিছু কর্মকর্তা বলে থাকেন নিখোঁজ ব্যক্তিরা ‘স্বেচ্ছায় আত্মগোপন’ করে আছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, অপহৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদদ্যের আনা  অপহরণের এসব অভিযোগ পুলিশ গ্রহণ করে না। 

রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের বেসামরিক অভিজাত বাহিনী র‌্যাব। এর মিডিয়া ও আইন বিষয়ক শাখার পরিচালক মোহাম্মদ মাহমুদ খান আল জাজিরাকে বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি নিখোঁজ হন তাহলে এ বিষয়ক মামলাটি পড়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশের ওপর, যে এলাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বসবাস করেন। 

খিলগাঁও পুলিশ স্টেশনের তদন্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর কবির খান। ওই পুলিশ স্টেশনে খান সাহেবের পরিবার একটি নিখোঁজ বিষয়ক অভিযোগ করেছিল। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, তাকে অপহরণকারীদের এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। বলা হয়েছে, দেশের দ-বিধির অধীনে একটি নতুন মামলা দায়ের করতে পারে ওই পরিবারটি। তাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা দাবি করতে পারেন যে, অপহরণ করা হয়েছে। 

আল জাজিরাকে খান সাহেবের বোনো তামান্না তাসনিম বলেছেন, জাহাঙ্গীর কবিরকে ফিরে পেয়ে তাদের পরিবার খুশি। তাই অপহরণের কোনো মামলা করার পরিকল্পনা নেই আমাদের। 

মারুফ জামানের ঘটনায় যোগাযোগ করা হলে ধানমন্ডি থানার ওসি আবদুল লতিফ আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে এখনও ক্লু উদ্ধারের জন্য কাজ করছে পুলিশ’। এই ধানমন্ডি থেকেই নিখোঁজ হয়েছিলেন মারুফ জামান। তার বড় মেয়ে শবনম জামান বলেছেন, তিনি কোথায় আছেন এ বিষয়ে তাদের পরিবার কোনোই তথ্য পায়নি। গত ৫ই ডিসেম্বর ঢাকায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে একটি এলাকায় তার গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। শবনম বলেছেন, ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুল্লাহিল কাফির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তিনি তাদেরকে বলেছেন, ‘পুলিশ এখনও তদন্ত করছে’। 

শবনম বলেন, ‘এখনও এই অবস্থায় আমরা আশাবাদী তাকে মুক্তি দেয়া হবে’। 

আল জাজিরাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেছেন, জাঙ্গাঙ্গীর খান ও উৎপল দাসসহ যেসব ব্যক্তি মুক্তি পেয়েছেন তাদের পরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার ভাষায় ‘তাদের অপহরণের বিষয়ে আরো তথ্যের জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো’। 

গভীর উদ্বেগ

কর্তৃপক্ষ কি এসব ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকারবিষয়ক কর্মীরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ভাষ্যকার আফসান চৌধুরী আল জাজিরাকে বলেছেন, গুম দেশে একটি গ্রহণযোগ্য বিষয় হিসেবে মেনে নেয়া হয়েছে। ‘এখন সমস্যাটা এর মধ্যেই রয়েছে’। 

শীর্ষ স্থানীয় মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ আইন ও সালিম কেন্দ্রের মানবাধিকারবিষয়ক কর্মী ও পরিচালক নূর খান লিটন আইন প্রয়োগকারী এজেন্সিগুলোর কাছে জানতে চান তারা কেন এসব অজানা মানুষকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে না, যাদের দৃশ্যত রয়েছে অনেক ক্ষমতা। 

নুর খান লিটন বলেছেন, ‘মোবাশ্বার হাসান অথবা উৎপল দাস পরিষ্কার করে বলেছেন, তাদেরকে তুলে নিয়েছিল অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। তাদের প্রকাশ্য দিনের আলোতে কাউকে তুলে নেয়ার ক্ষমতা আছে, তুলে নিয়ে দীর্ঘ সময় অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখার এবং সেখান থেকে তাদেরকে ছেড়ে দেয়ার ক্ষমতা আছে’। তাই অপহরণকারীদের খুঁজে বের করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি সব রকম পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এটা একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়’। 

  • অনলাইন আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখার অনুবাদ। মানবজমিন। 


Bangladesh disappearances 'a matter of grave concern'


By Faisal Mahmud/aljazeera.com

Law enforcement agencies are accused of disappearing government critics [MP Hossain/Reuters]


Dhaka, Bangladesh - An academic who went missing for over a month has returned home, saying "unidentified abductors" scooped him up in the middle of a busy road in Dhaka last month. Mubashar Hasan, an assistant professor of political science at North South University in Dhaka, was abducted on November 7.

"If you look back, we will kill you," Hasan cited his kidnappers as telling him when they released him last Friday, dropping him off from a microbus on a highway near Bangladesh's capital.
Hasan had been dragged onto the bus, blindfolded, after spending 44 days in a room without sunlight, he said.

"I am seeing daylight [for the first time] after many days," Hasan told reporters on Friday morning outside his home, less than 12 hours after he was released.

The details of Hasan’s abduction echoed an earlier case: Only two days before Hasan returned home, Dhaka-based reporter Utpal Das was released after spending 71 days in captivity.

Das, too, said he had been kidnapped by four or five "unidentified abductors" in Dhaka - who whisked both men into vehicles in broad daylight - and he said he was blindfolded and dropped off on a highway from a microbus upon his release.

Loss of consciousness

Hasan said one of his abductors rubbed something into his eyes and he eventually lost consciousness, while Das said he was gagged with a black cloth.

Neither man was able to identify their captors.

The men's release comes amid a series of disappearances of prominent figures in Bangladesh, including Maroof Zaman, a former ambassador to Qatar and Vietnam, who has been missing since December 4.

According to a report released by Human Rights Watch earlier this year, Bangladesh's "law enforcement authorities have illegally detained hundreds of people since 2013", and 90 people were victims of "enforced disappearances" last year alone.

'Enforced disappearance' suspected in Bangladesh

"The disappearances are well-documented and reported, yet the government persists in this abhorrent practice with no regard for the rule of law," said Brad Adams, HRW's Asia director, in a statement at the time.

"Bangladesh security forces appear to have a free hand in detaining people, deciding on their guilt or innocence, and determining their punishment, including whether they have the right to be alive."
In the last four months, 14 people have gone missing from Dhaka, according to a Dhaka Tribune report.

Five of them, including Hasan and Das, have since returned home.

Three men who were disappeared have since been arrested by local police, while the fate of the others, including Zaman, remains unknown.

Amid criticism from the media and human-rights groups, Asaduzzaman Khan, Bangladesh’s home [interior] minister, recently said all the missing people would be found.

Cause uncertain

Both Hasan and Zaman come from modest, middle-class backgrounds.They are not believed to be wealthy by Bangladeshi standards, and their family members told Al Jazeera they did not receive any ransom requests.

Chitta Ranjan Das, father of Das, received a ransom call after his son went missing.

A school teacher who earns about $195 a month and lives in a rented tin-shed outside of Dhaka, Chitta Ranjan Das said the unidentified caller demanded about $1,250 to secure his son's release.
Chitta Ranjan Das said when he asked to speak to his son, the caller hung up and never called back.
Shahdeen Malik, a Dhaka-based human-rights lawyer, said he did not believe the ongoing abductions are motivated by money.

Instead, he said they are intended to send a chilling effect on anyone deemed to be a threat to the state.

"I believe [law-enforcement agencies] somehow consider a critic of the government as an enemy of the state," Malik told Al Jazeera.

Hasan has penned several scholarly articles on political Islam and militancy while Das writes news stories about Bangladesh’s armed forces.

Zaman, the former diplomat, was a critic of the incumbent Awami League government and shared anti-government posts written by others on his Facebook page.

Shahdin said law-enforcement agencies may have suspected people like Hasan or Zaman were involved in activities that go against state interests, thus leading them to be detained and held for interrogation.

"This is wrong and a gross violation of human rights," said Malik, who defends cases before the country's supreme court.

According to HRW, law enforcement authorities often deny the arrests and some government officials have even suggested that the disappeared individuals "are voluntarily in hiding"
.
"The police do not allow families to file complaints alleging that their relatives have been picked up by law enforcement authorities," HRW said.

State responds

Mohammad Mahmud Khan, director of the media and legal wing of the Rapid Action Battalion (RAB), Bangladesh's elite, non-military force, told Al Jazeera that if a person goes missing, the case falls under the jurisdiction of police in the neighbourhood where the person lives.

Jahangir Kabir Khan, an investigative officer at Khilgaon police station, where Khan's family filed a missing person's report with the police [known as a general diary], said he has not yet been able to identify Khan's abductors.

He said Khan's family "could still file a new case" under the country's penal code, formally alleging that a kidnapping took place.

However, Tamanna Tasnim, Khan's sister, told Al Jazeera that the family is happy to have him back and has no plan "to file any abduction case".

When contacted about Zaman's case, Abdul Latif, the officer in charge of the Dhanmondi police station where Zaman's family filed the missing person's report, told Al Jazeera that "police are still searching for clues about his disappearance".

Shabnam Zaman, Zaman's eldest daughter, said the family has not received any updates about Zaman's whereabouts since his car was recovered on December 5 near the airport.
She said the family contacted Abdullahil Kaafi, the assistant police commissioner of the Dhanmondi zone, and he told them "the police were still investigating".

"At this stage we remain hopeful that he will be released," she said. 

Masudur Rahman, deputy commissioner of the Dhaka Metropolitan Police, told Al Jazeera that the people who have been released, including Khan and Das, will be questioned later.
"We will try to get more information about their abductions," he said.

'Grave concern'

Human rights advocates have questioned whether the authorities are really taking these cases seriously.

Afsan Chowdhury, a political analyst and commentator, told Al Jazeera that disappearances have "become an accepted thing in the country".

"And that's where the problem lies now," he said.

Nur Khan Liton, a Bangladeshi activist and director of one of the country's top human rights groups, Ain o Salish Kendra (ASK), wants to know why law enforcement agencies "are not trying to find those 'unidentified people' who seem to have enormous powers".

"Here, Mobashar [Hasan] or Utpal clearly said they were being abducted by unidentified people who have the capacity to abduct someone in broad daylight, keep them in hidden places for long periods [of time] and also return them," Liton said.

He urges the authorities to do everything they can to find the kidnappers.
"It's a matter of grave concern," he says.

Monday, December 25, 2017

Sense of fear prevails as disappearances, extrajudicial killing, torture go unabated

Shakhawat Hossain



Bangladesh joined the world in observing the Human Rights Day on December 10 with continued incidents of enforced disappearance, extrajudicial killing, torture and unlawful detention in the country. Rights activists said on Saturday that such abuses of rights were going unabated with impunity as the government continued to ignore or bypass the situation. They said that the government should launch ‘credible investigation’ into each of the complaints lodged or raised by the victim or their families.

December 10, 2017 marked the 70th anniversary of the adoption of the UN Universal Declaration of Human Rights (UDHR). The year 2017 also marks the 50th anniversary of two major documents on human rights: the International Covenant on Economic, Social and Cultural Rights (ICESCR) and the International Covenant on Civil and Political Rights (ICCPR), which were produced by the UN Human Rights Commission. 

Now the nagging questions is, even after 70 years of UDHR and 50 years of ICESCR and ICCPR, what is the human rights situation in Bangladesh in 2017? 

In the last few years, this sense of fear and insecurity has intensified leading to a culture of self-censorship. It’s like a double-edged sword; on one side, there are threats of attacks from the extremists and powerful sections of the society, and on another, there is the fear of offending the state and its agencies. The use of Section 57 of the ICT Act has been considered a disenabling factor to the human rights activists, journalists and free-thinkers in expressing their opinion. This trend is shrinking the space for creativity, open discussion, debate and thus development of an independent, secular and democratic nation.

The Ain o Salish Kendra (ASK) found that in 13 years since 2004, more than 1,900 people have become victims of extrajudicial killings involving police, RAB and joint forces.

Despite concerns expressed repeatedly by national and international human rights organisations, the alarming trend of enforced disappearance also continues in 2017. According to an estimate by ASK, 54 persons were allegedly victims of enforced disappearance since January 2017, and some 366 persons between 2013 and 2017. This number itself is mind-boggling and justifies the general sense of fear among the people. Utpal Das, a journalist of an online news portal, remains missing since October 10, 2017. On November 7, Dr Mubashar Hasan, an assistant professor of a private university, disappeared. Their whereabouts could not be traced till date.

The government and law enforcement agencies have consistently denied any involvement in the disappearance cases. Although a few victims were later produced in court by the security forces, or surfaced alive, most of them remain unaccounted for. Sometimes the dead bodies of the victims have been found with visible wounds. The victims who came back barely talk to the media and disclose any information regarding their detention. In many cases, the police have refused to accept general diaries if the complaint contains an allegation that a law enforcement agency was involved. In rare cases where the families were finally able to file complaints, there has been little or no progress in investigation.

Attacks on the religious minorities and indigenous people also continued this year. In Thakurpara, Rangpur, religious extremists burned down at least 30 Hindu houses because a Hindu had allegedly posted objectionable content related to Islam on Facebook. The role of local law enforcement agencies was questionable, as they failed to play a proactive role and take preventive measures although a group of people were inciting the locals to violence for days. There were all signs of an impending attack.

Extra-judicial killing still continues

According to ASK’s latest report, extra-judicial killing in the hands of law enforcers is still continuing across the country. At least 151 people have been killed in first eleven months of the year 2017 in the name of ‘crossfire’ and ‘encounter’ by the law enforcing agencies, says Ain O Salish Kendra (ASK). Of the total 151 people, 91 have been killed under crossfire before arrest while 26 in custody. Legal experts said that any kind of extra-judicial killing is unconstitutional. And our Constitution has given rights of life to everyone.

List of missing people getting longer

According to rights organisation Ain o Salish Kendra (ASK), the number of disappearance victims last year was at least 91. It was 55 in 1915, 88 in 2014 and 68 in 2013. Early this year, a report, published on the United Nations Human Rights Commission website, said: “Law enforcement agencies of Bangladesh must be investigated for the disappearances, kidnappings and extrajudicial killings. The people who are victims of the incidents should be given adequate assistance by the Bangladesh government. The government should investigate disappearances and abductions and inform relatives of the victims of the progress of the investigation. In the last three months, a total of nine prominent individuals went missing from various parts of the country, but the government has been unable to find trace of any of them. The scenario is the same in the case of Mubashar, as the police are yet to find any clue three days into the teacher’s going missing.

Families of victims of enforced disappearances have urged the Prime Minister to ensure justice. They made the appeal during a conference in August this year, titled “Pain of relatives: Stop disappearance, murder and torture”, organised by the Fundamental Rights Protection Committee at the National Press Club in Dhaka. At the conference, about 20 victims’ families expressed their feelings.

Home Minister Asaduzzaman Khan said about the disappearance of the NSU teacher that many people go missing willingly. “Many people are going missing or are hiding to embarrass us. It is difficult for detectives to find out those hiding willingly. However, hopefully we’ll trace them,” said the minister. Earlier this year in a briefing Kazi Riazul Haque, National Human Rights Commission Chairman said, “Abduction or disappearance is extreme violation of human rights...”

Farhad Mazhar was forced to say he left home ‘willingly’

Writer Farhad Mazhar on Saturday last claimed again that plainclothes policemen had picked him up several months back with an aim to deport him from the country. “… I don’t have any idea who was behind my kidnapping. But I can recall that my abductors were in plain clothes (not in uniform). I don’t know who they were or in which group or agency they belonged to,” he said at a press conference at his residence at Shyamoli in the capital. Farhad Mazhar, also a social activist, came up with the remarks at the press conference organised over five months after his abduction that drew widespread controversy across the country. Columnist Farhad Mazhar has denied the police claim that he was not abducted, saying he was under duress to admit that he left home ‘willingly’. Mazhar said the statement he submitted to court under Section 164 of the CrPC was ‘actually written by the police’. Statements given under the CrPC section allows the prosecution to use the confession as evidence in the trial. “It’s a heinous attempt to shut my mouth,” he said.

Missing, Abduction: Police ‘inactive’ for tracing victims

Law enforcement agencies have taken no effective initiative to trace victims of disappearance or abduction, which has thrown their families into grave anxiety. No effective initiative was visible from law enforcement agencies to find the victims, the families of some victims alleged. “Police inaction in rescuing the missing people has made us worried,” a victim’s relative said. In the recent past, a number of people, including a former diplomat, a university teacher, a journalist and businessmen, fell victim to forced disappearance and abduction in the capital. Human rights groups said at least 14 persons have become victims of enforced disappearance and abduction in the city in the last several months. Inspector General of Police AKM Shahidul Huq told reporters said law enforcers are working to find out the missing persons, including Utpal Das and Dr Mohashwer. Ain O Salish Kendra (ASK) says as many as 519 people have fallen prey to forced disappearances between 2010 and July 2017 in the country. Some 329 are still missing. Many family members of such victims pointed fingers at law enforcement agencies for their failure to trace them. Many of the missing people returned to their families while some victims were found dead. Many were shown arrested in different cases. Shahriar Kabir, son of missing BNP leader Humayun Parvez, says, “If anyone’s father dies, they can go to the grave for prayer. But I don’t know whether my father is dead or alive.” “There has been no progress in the case filed about four years ago in connection with my father’s disappearance,” said Saiful Islam.

NHRC chairman concerned over HR violations

National Human Rights Commission (NHRC) Chairman Kazi Reazul Hoque has expressed deep concern over the incidents of enforced disappearance, rape, killing and violation of human rights across the country. “The incidents of disappearance, custodial death and rape still exist in the country. Especially, the enforced disappearance has created a great concern for us,” he said. He called upon the law enforcers and other authorities concerned to concentrate on particular areas and take necessary steps to address the situation. Reazul was addressing an international conference titled “Promoting Equity, Justice and Human Dignity” marking the Human Rights Day 2017. He chaired the inaugural session of the two-day programme held at Bangabandhu International Conference Centre on Sunday. “There are many human rights organisations. But we should work in a constructive way,” he added.

Who cares NHRC?

The National Human Rights Commission (NHRC) has sent letters to the Ministry of Home Affairs seeking the probe reports on 154 specific cases of human rights violations. The commission has been still waiting for the probe reports as the ministry is not responding as yet.

According to the National Human Rights Commission (NHRC) document, the commission is waiting for the probe reports on 154 incidents, which include 32 cases of custodial torture or death, 25 enforced disappearances and 12 extrajudicial killings as well as a number of incidents of harassment of civilians by law enforcers.  
Reports of enforced disappearances are continually on the rise and the state continues to adopt a nonchalant stand in its response to the multiple inquiries sent by the NHRC. Of the 154 letters dispatched asking for probe reports, four were sent in 2012, 10 in 2013, 51 in 2014, 73 in 2015 and 16 in 2016.

Now, the Commission has become very busy with meetings and seminars and conferences rather than investigating human rights violations. In the last one year, the NHRC so far investigated into only four incidents even though there were numerous incidents of disappearances and kidnappings occurred over the years.

While talking to a renowned daily recently, National Human Rights Commission Chairman Kazi Riazul Haque said, ‘As most of our complaints come against the police and when we send these allegations to the Home Ministry, those complaints do not get much response from them, which has disappointed us.”

According to Section 18 (1) of the National Human Rights Commission Act, the commission can seek a report from the government on the basis of their own initiative or application for complaints of human rights violations against law enforcement agencies or their members. The government will have to give that report to the Commission quickly. If there is any recommendation in this regard, the ministry will have to inform the commission within six months after implementing it. But, the commission complains that the Ministry of Interior is neither paying any heed to its request nor recommendations.

As asked, Home Minister Asaduzzaman Khan said that he had already directed the officials concerned to take action on the list given to him from the Human Rights Commission. He also said he would investigate why they did not investigate these incidents.

A letter sent to the Public Safety Department of Ministry of Home from the Human Rights Commission on November 9, said that the disappearance, kidnapping and the disappearance of human rights violations were a major violation of the rights of the teacher of North South University. As the ministry did not say anything about the query of the alleged abduction, the NHRC once again reminded the home ministry on December 3 about the case. But until today, the commission did not get any reply. Human Rights Commission data shows that in the first 6 months of this year, 52 people were victims of disappearance. 87 people were killed in the alleged gunfight. There are 126 complaints about human rights violations against police. But the commission cannot do anything about these matters.


  • weeklyholiday.net, Friday, December 22, 2017

বিচার, ন্যায়বিচার, নাই বিচার


আবু হেনা



‘দেশে ন্যায়বিচার নয়, নাই বিচার আছে।’ এ মন্তব্যটি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ ৩৫ বছর তিনি এ দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দুবার পূর্ণ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। এ ছাড়াও ১৯৯৬-এর ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নির্বাচিত স্বল্পকালীন  প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি বাংলাদেশের সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিধান সংযোজন করে এ দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন।

সম্প্রতি সূরা নিসার ১৩৫ নম্বর আয়াতের বাংলা তরজমার মধ্য দিয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ জজ আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজের বক্তব্য শেষ করেন তিনি। নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ঘোষণা করে তিনি এই আয়াতের অর্থ পড়ে শোনান— ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজনের যদি ক্ষতি হয়, তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী তোমাদের চাইতে বেশি। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ কর না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলো কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম সম্পর্কেই অবগত।’ আদালতের কাছে ন্যায়বিচার দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি আমার পদে থাকার সময় আমার অধীনস্থ কারও মাধ্যমে আমার পদের প্রভাব খাটাইনি। কাউকে কোনো অন্যায় আদেশ প্রদান করিনি। কারও কোনো অর্থের দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হইনি কিংবা কাউকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করিনি।’

দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য নিঃসন্দেহে এ দেশের আপামর জনসাধারণ, প্রশাসন, গণতন্ত্র, বিচার ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ন্যায়বিচারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দেশের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি দীর্ঘ নয় বছর দেশ শাসন করে ছয় বছর জেলে কাটিয়েছেন। আজ যিনি আদালতে ন্যায়বিচার প্রার্থী তিনি ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, ১০ বছর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন, দীর্ঘদিন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথ বেছে নিয়েছেন। পরিবার, সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এ দেশের জনগণের মধ্যেই নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছেন তিনি। আদালতে তার মর্মস্পর্শী বক্তব্য সবার হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করে, যখন তিনি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমাকে, জিয়া পরিবার ও বিএনপিকে হয়রানি করতেই এ মামলাটি করা হয়েছে। আমি আদালতে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি।’

জিয়া পরিবার এ দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি পরিবার। জিয়াউর রহমান একাত্তরের রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের পথিকৃৎ। ২৫ মার্চ রাতে নিরীহ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে এ দেশের ৭ কোটি মানুষ যখন হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল, যখন বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং ১৯৭০-৭১ নির্বাচনে নির্বাচিত সব সংসদ সদস্য দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি দিয়েছিলেন, তখন ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তার রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আবদুর রশীদ জানজুয়া ও অন্য অবাঙালি সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের গ্রেফতার ও হত্যা করে জিয়ার নেতৃত্বে বাঙালি অফিসার ও সেনা সদস্যরা বিদ্রোহ শুরু করেন। ২৫ ও ২৬ মার্চের মধ্যবর্তী রাতে জিয়া চট্টগ্রামের বেসামরিক টেলিফোন অপারেটরকে বলেন, চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার, এসপি ও ডিআইজি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের জানাতে যে, ‘ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাটালিয়ন বিদ্রোহ করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করবে তারা।’

২৫ ও ২৬ মার্চের মধ্যবর্তী রাতে, অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জিয়া তার সৈনিক ও অফিসারদের শপথ পাঠ করিয়ে যে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, তা তার সহকর্মীরা সমর্থন করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আরেক বিদ্রোহী কর্মকর্তা মেজর খালেদ মোশাররফের ভাষ্য অনুযায়ী ‘২৬ মার্চ মেজর জিয়া ঘোষণা করেছিলেন স্বাধীনতা শেখ মুজিবের পক্ষে।’ ২৭ মার্চ রেডিওতে স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন। সে দিনের সেই কণ্ঠস্বর—‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ আজো জাতিকে অন্ধকারে আলোর পথ দেখায়। এরপর কালুরঘাটে জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে লে. সমশের মুবীন চৌধুরী আহত হয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হন। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেদিনের মেজর শওকত এখন আর বেঁচে নেই, কিন্তু ক্যাপ্টেন অলি আহমদের স্মৃতিতে তা আজো ভাস্বর। পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করে আসা বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের অনেকেই ৪ এপ্রিল (১৯৭১) সিলেটের তেলিয়াপাড়ায় জমায়েত হন। সেখানে কর্নেল ওসমানীকে জিয়া এবং অন্য সবাই তাদের অধিনায়ক মনোনীত করেন। পরে মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে তারা সবাই এ সরকারের অধীনে রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দেন। এরপর জুনের শেষদিকে প্রথম, তৃতীয় ও অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে একটি ব্রিগেড তৈরি করা হলে মেজর জিয়াকে লে. কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে তাকে ব্রিগেড কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর (বিডিএফ) সদর দফতরের নির্দেশে জিয়ার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই প্রথম ব্রিগেডের নাম রাখা হয় ‘জেড ফোর্স’।

বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর জন্ম ও ভিত্তি হচ্ছে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে। সেনাবাহিনীর প্রথম ব্রিগেডটিও গঠিত হয়েছিল রণাঙ্গনে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সেনাবাহিনী যাত্রা শুরু করে নিঃস্ব অবস্থায়। সানডে টাইমসের সংবাদদাতা অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অষ্টম সেক্টরের অধিনায়ক মেজর মঞ্জুর (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল মঞ্জুর) বলেছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সবকিছুই ছিল ‘অ্যাডহক’, ‘এদের খাবার নেই, তাদের কোনো প্রশাসন নেই, অস্ত্রশস্ত্র নেই। তুমি অবাক হবে তাদের জার্সি নেই, গায়ের কোট নেই, পায়ে দেওয়ার বুট পর্যন্ত নেই। অনেক সিপাহি এখনো লুঙ্গি পরে কাজ করছে।’ সেই ‘অ্যাডহক’ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে জিয়াউর রহমান দায়িত্ব নেন ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার বিপ্লবের দিনে। তার এক বছর পর ২৮ নভেম্বর ১৯৭৬ তিনি বঙ্গভবনে যান। সঙ্গে যান সেনাবাহিনীর উপ-প্রধান মেজর জেনারেল এইচ এম এরশাদ, সিজিএস ব্রিগেডিয়ার আবুল মঞ্জুর, ৯ম ডিভিশনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার মীর শওকত আলী, নৌবাহিনীপ্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম এইচ খান এবং বিমান বাহিনীপ্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এজি মাহমুদ। সে রাতেই তিনি বাংলাদেশের শাসনভার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর তুলে দেন। ওই দিনই তিনি সেনাপ্রধান হিসেবে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে জিয়া এদেশে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি এবং জনসেবার ক্ষেত্রে এক গঠনমূলক উন্নয়নের রাজনৈতিক আদর্শ স্থাপন করেন। আজ সেই শহীদ জিয়ার পরিবার আদালতে ন্যায়বিচার প্রার্থী। তার এক পুত্রের পরবাসে করুণ মৃত্যু হয়েছে। আর এক পুত্র পরিবারসহ বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। এ মুহূর্তে এ দেশের সব মানুষের প্রত্যাশা বেগম খালেদা জিয়া এবং জিয়া পরিবারের সব সদস্যের প্রতি সুবিচার করা হোক।

আজ এ কথা বলার সময় এসেছে যে, প্রকৃতির নিয়মই সব আইনের উৎস। মহাপরাক্রমশালী সূর্যের ও উদয়াস্তের নিয়ম আছে। কিন্তু প্রকৃতিতে আইনের অমোঘ শাসন দেখেও মানুষের শিক্ষা হয় না। কিংবদন্তি আছে বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডারের পিতা রাজা ফিলিপ যখন পানাসক্ত অবস্থায় ছিলেন তখন একজন নারী তার কাছে বিচারপ্রার্থী হয়ে ব্যর্থ হন। তখন তিনি বলেন, তিনি উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে যাবেন। এ কথা শুনে ফিলিপ পরিহাস করে বলেন, ‘আমিই তো রাজা, সবার উপরে, তুমি কার কাছে আর্জি পেশ করবে?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি নেশামুক্ত ফিলিপের কাছে আর্জি পেশ করব।’ সেদিন মদমত্ত ফিলিপের কাছেও নেশামুক্ত সময়ে প্রজারা সুবিচার পেতেন। কিন্তু যারা বিরামহীন ক্ষমতার নেশায় অহোরাত্র আচ্ছন্ন তাদের তো সুবিচার করার অবসর, অবকাশ কোনোটিই নেই। এর জন্য অবশ্য তাদেরই এককভাবে দায়ী করার যুক্তি নেই। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির দুর্বলতা এবং সমাজের প্রধান ও প্রভাবশালী অংশগুলোর নপুংসতার কারণেই স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের উদ্ভব হয়। অথচ ঔপনিবেশিক শাসনামলেও এ দেশে প্রাতিষ্ঠানিক বিধিরীতি ছিল, যুগপ্রাচীন বিচার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বর্তমান সমাজ যে নিত্যনতুন বিধি ব্যবস্থা তৈরি করেছে তা ক্ষমতামত্ত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর হাতে সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেছে। এখানে যিনি শাসন করেন তিনিই আইন প্রণয়ন করেন এবং বিচারকেও প্রভাবিত করেন। বেগম খালেদা জিয়ার আর্জিতে এ চিত্রটিই ফুটে উঠেছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘কতগুলো সই স্বাক্ষরবিহীন ঘষামাজা ফাইল নম্বর উল্লেখ করে কিছু রেকর্ড প্রস্তুত করে দুদক কর্মকর্তা আমাকে হয়রানিমূলকভাবে জড়িত করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন।’ তিনি বলেছেন, ‘পিডব্লিউ ১ হারুন অর রশীদকে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে এই মামলার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা, মামলার বাদী এবং তাকেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে আমার বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হয়েছে।’

তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘চাকুরিতে পদোন্নতি ও ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে তিনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক মহলের ইচ্ছা ও নির্দেশ অনুযায়ী যে এসব করেছেন তা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়।’ বর্তমান বাংলাদেশের বিচার-বিবেচনাবর্জিত ব্যবস্থায় এ ধরনের অভিযোগের নজির হাজারটি নয় লক্ষাধিক। এ অবস্থা এমনই ভয়াবহ যে, যেসব ব্যক্তি ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকে এ ধরনের কাজ করেন, ক্ষমতাচ্যুতির পর একই ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। আইনের শাসন-রিক্ত, সুবিচারবিহীন স্বৈরশাসিত সমাজে স্থিতিশীলতা, শৃঙ্খলা, শান্তি এবং আর্থসামাজিক সমৃদ্ধি আসে না। এ  ধরনের সমাজে তাই ক্ষমতা বদল ঘটে শুধু স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গগনবিদারী ঝনঝনানির পরিণতিতে। তবু প্রশ্ন থেকে যায়, এ অবস্থার শেষ কোথায়?

আজও এ দেশে গুম খুনের সঠিক খবর কেউ দিতে পারে না। আজও সন্তানহারা পিতা-মাতা এবং পিতৃহারা সন্তানদেরআহাজারি আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ করছে। আজও নির্বিচারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে।  আজও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ।  কে জানে এ দেশের ভাগ্যে কী আছে?


  • লেখক - সাবেক সংসদ সদস্য।

কার্টেসি - bd-pratidin.com

Saturday, December 23, 2017

রাজনীতির চোরাবলিতে পদ্মা সেতু

আবু হোসেন 




গত ১৮ ডিসেম্বর দৈনিক ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকায় পদ্মা সেতুর ডিজাইন গলদ নিয়ে এক অতি গুরুতর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রতিবেদনের মূল প্রতিপাদ্য থেকে বোঝা যায় যে সরকার তার ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার রাজনীতির হুড়াহুড়ির কারণে রাজনীতিকে অর্থনীতির চেয়ে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে গোটা সেতুর মূল ডিজাইনের ওপর যথামেয়াদি সমীক্ষা শেষ না করার আগেই সেতু নির্মাণ শুরু করায় গোটা সেতুর ভবিষ্যত বিপন্ন হয়ে পড়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা লিপ্সার কারণেই হয়তোবা আবার স্বপ্নের এই সেতু দুঃস্বপ্নের সেতু হতে চলেছে। প্রথম থেকেই এই সেতু রাজনীতির কবলে পড়েছে, বিশেষ করে স্থান নির্বাচন নিয়ে। দূর্নীতির বদনামসহ এই সেতু বিসমিল্লায় গলদ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। আমরা রহস্যময় আচরণ লক্ষ্য করেছি বিশ্বব্যাংকের, আমাদের সরকারের। এখনও তার ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ হয়নি বলেই দেখা যাচ্ছে। ডিজাইনে গলদ ধরা পড়েছিল প্রথমে সেতুর ১৪টি পায়ার বা স্তম্ভ নিয়ে। এখন সেটির সাথে আর যোগ হয়েছে আরও আটটি স্তম্ভ। মোট ত্রুটিযুক্ত স্তম্ভের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২২টিতে। সেতুর মোট স্তম্ভের সংখ্যা ৪০টি। দেখা যাচ্ছে, সেতুর অর্ধেকেরও বেশি স্তম্ভ নিয়ে সংশয়। সে কারণেই সম্ভবত সেতুর মূল ডিজাইন প্রণেতা নিউজিল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান বলছেন সব স্তম্ভের ডিজাইনের গলদই নতুন করে খতিয়ে দেখা জরুরি। কাজ বেড়েছে। স্বাভাবিক নিয়মে খরচও বাড়বে। এ কাজ মূল পরিকল্পনার অতিরিক্ত।

সেতুর প্রকল্প কার্যালয় পড়েছে জিলাপির প্যাঁচে। যে সব জায়গায় ২২টি স্তম্ভ বসবে সেখানে বালুবিহীন কর্দম মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। আর সেটা না হলে স্তম্ভ নড়বড়ে হতে বাধ্য। সে ঝুঁকি নেওয়া যায় না। তাই পদ্মা বহুউদ্দেশ্যসাধক সেতু কর্তৃপক্ষ এ অবস্থায় এখন সিএসসি অর্থাৎ প্রকল্প নির্মাণ তত্ত্বাবধায়ক কন্সালট্যান্ট সেতুর মোট ৪০টি সেতুর সবকটি স্তম্ভ সম্পর্কেই ডিজাইন চেক করে কনফার্ম করতে বলেছেন। এই কাজটি গত নভেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে বলা হয়েছিল। তবে সেটা এখন অনিশ্চিত বলে জানিয়েছেন এই প্রকল্পের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।


সংবাদ সূত্রের বরাতে ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদক আরও জানাচ্ছেন নির্মীয়মান সেতুর মোট ৪০টি স্তম্ভের মাঝের ১৪টি স্তম্ভের ডিজাইন গলদের সমস্যা দেখা দেওয়ার বিশেষজ্ঞ প্যানেল সমস্যার যে সমাধান প্রস্তাব করেন সেই অনুযায়ী ডিজাইন চেক করার জন্য প্রকল্প অফিস প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা কনসাল্ট্যান্ট নিয়োগ করে। এই ব্যবস্থাপনা কনসাল্ট্যান্ট হলেন ব্রিটিশ ফার্ম রেন্ডাল। তাদের কাজে শেষ করার ডেডলাইন দেওয়া হয় অক্টোবর । তবে প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, এই কাজটি অতিরিক্ত বিধায় ও রেন্ডাল-এর সে কাজ করার বাধ্যবাধকতা না থাকায় তারা এজন্য আরও সময় চান। তাঁরা জানান, তাঁরা কেবল ১৪টি স্তম্ভের নয় বরং মোট ৪০টি স্তম্ভের ডিজাইনই পুনঃ পরীক্ষা করবেন।


এখানে বলা দরকার সিএসসির-ই এ সমস্যার সমাধান দেবার কথা। কিন্তু তারপরেও কর্তৃপক্ষ রেন্ডালকে অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে কাজের জন্য নিয়োগ দেন। এই পর্যায়ে কর্তৃপক্ষ আবার মূলধারায় ফিরে রেলান্ডকে অতিরিক্ত সময় না দিয়ে সিএসসি তথা কোরিয়ান কোম্পানির পুনঃ শরণাপন্ন হন ডিজাইনের প্রহেলিকা সমাধানের জন্য । এজন্য তাঁদেরকে নভেম্বরের আগেই প্রতিবেদন জমা দেবার জন্য বলা হয়। তবে জানা যায় এ বিষয়ে অদ্যবধি কোনো অগ্রগতি হযনি আর সিএসসিও কর্তৃপক্ষকে জানায়নি ডিজাইন চূড়ান্ত করতে কতো সময় নেবে।


সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা এবার মূল সমস্যার কথাটি খুলে বলেছেন, এসব সমস্যার সমাধান রয়েছে এই সেতুর চীনা ঠিকাদার জটগুলির বাড়তি ব্যয় বহন ও তাদের সামর্থের জটগুলি খুলতেই এই অতিরিক্ত সময়টা আসলেই দরকার। সমস্যা আসলে বাড়তি টাকার। তিনি আরও জানান , সমস্যার একাধিক সমাধান রয়েছে তবে তা সমাধানে অবশ্যই অন্যান্য জড়িত বিষয়েরও সুরাহা হতে হবে।


সেতু কর্তৃপক্ষের আরেক সুত্রের মতে সমস্যার কোনো আশু সমাধান হচ্ছে না কেননা সিএসসি বা রেন্ডাল উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান চাচ্ছেন নতুন করে মৃত্তিকা টেস্ট বা আরও অন্যান্য সম্পর্কিত টেস্ট করতে। কেননা যেসব সেতু স্তম্ভ নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে তাহলো সকল স্তম্ভের জায়গাগুলির মাটির পরীক্ষা করতে হবে। সেখানে কাদা বা এঁটেল মাটি পেতে হবে। বলাবাহুল্য সর্বশেষ মৃত্তিকার পরীক্ষায় নতুন আটটি স্তম্ভের সমস্যা ধরা পড়ে।


এদিকে, পদ্মা সেতু প্রকল্প এই সেতুর দুই স্তম্ভের ওপর একটি স্প্যান স্থাপন করে মিডিয়ায় তা দেখানো হচ্ছে পদ্মা সেতু শত্র“র মুখে ছাই দিয়ে দৃশ্যমান। নির্বাচনী জয়ের ভিত এভাবেই গাঁথা হচ্ছে। এই সেতুর নির্মাণ কাজ বিগত নভেম্বর অবধি ১২ শতাংশ এবং নদী শাসন প্রকল্পের কাজ ১৫ শতাংশ পিছিয়ে ছিল। প্রকল্পের মোট কাজে ৫২ শতাংশ এ যাবত বাস্তবায়িত হয়েছে। এ হিসেবে অবশ্য সেতুর প্রবেশ সড়ক ও ভৌত সুযোগ সুবিধে গড়ায় অগ্রগতির আলোকে।


অকল্যান্ডভিত্তিক এএফকম মনসেল ২০১০ সালে প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুর বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়ণ করে আর তারই ভিত্তিতে চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সেতু নির্মানণের চাক্ষুষ কাজ শুরু করে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে।

প্রকল্পে নিয়োজিত সূত্রগুলি আসল গোমর ফাঁস করে জানিয়েছেন, আজকে পদ্মা সেতু নির্মাণে এই যে জটিলতা তার মূল কারণ হলো ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়া। সেতুর সকল স্তম্ভের বিষয় সবদিকে থেকে পাকাপাকি হবার আগেই সেতুর নির্মাণে তড়িঘড়ি করার কারণেই আজকের এই জটিলতর অবস্থা। বিশ্বজনীন নিয়ম অনুযায়ী, আগে নদীর বিষয়ে বিশদ ও প্রয়োজনীয় জরিপ করা হয়নি। খবরে বলা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ দেশের বৃহত্তম সেতুর নির্মাণ সমাপ্তির জন্য তারিখ নির্ধারণ করেছেন ২০১৮তে জাতীয় নির্বাচনের আগে। বিষয়টি স্পষ্টত রাজনীতি প্রভাবিত সিদ্ধান্ত। এটি ভোটারদের জন্য এই সেতুকে তাক লাগানো শো-পিস করতে।


তবে প্রকল্পের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতুর বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে তারা সংশয় প্রকাশ করেছেন। কেননা এই মেগাপ্রকল্পটির বাস্তবায়নের সময়সীমা ইতিমধ্যে আটমাস পিছিয়ে আছে। ইতিমধ্যে প্রকল্প কার্যালয় আরও বাড়তি ১৪ শত কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়েছেন কেবল প্রকল্প স্থলে আরও জমি হুকুম দখলের জন্য। মোট প্রকল্প ব্যয় বর্তমানের ২৮৮০০ কেটি টাকা থেকে আরও বেড়ে যাবে।


২০০৭ সালে একনেক এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় ধরে আনুমানিক ১০২ কোটি টাকা। পরে ডিজাইন বদলানোর স্বার্থে সেতুর দৈর্ঘ্য বাড়াতে ঐ ব্যয় দাঁড়া প্রায় ২০৬ শত কোটি টাকায়। এই বর্ধিত ব্যয় অনুমোদন করা হয় ২০১১ সালে।


  • ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে। 



Bridges Division one of worst ADP implementers

Poor execution rate of Padma Bridge main reason


The Bridges Division is on the list of the worst performers among the big ministries implementing development projects, as execution of its key Padma Bridge project has faced setback, officials said on Wednesday, the English-language daily the Financial Express reported Friday.

The Division spent only Tk 5.67 billion during July-November period of this financial year (FY), 2017-18, according to data of Implementation Monitoring and Evaluation Division (IMED). The amount is 7.13 per cent of its total Tk 79.54 billion allocation in the annual development budget.

The spending on the Tk 287.93-billion Padma Bridge project has been affected due to some emerging flaws in its design, as pilling work at some 22 piers has now become very complicated.

The Bangladesh Bridge Authority (BBA) has almost suspended its pilling work because of the emerging complexities in the 6.15-km Padma Bridge construction work.

BBA officials said they could spend only Tk 3.42 billion in the first five months of the current FY, which is 6.19 per cent of the total Tk 55.24 billion allocation made this year for Padma Bridge construction.

Meanwhile, the government has already released Tk 13.78 billion funds for the BBA until November last to finance construction work. An IMED official said the poor project execution by the Bridges Division, the sixth largest recipient of development expenditure --- Tk 1.64-trillion could also affect the overall project execution in FY 2018.

"The Padma Bridge is one of the mega projects of the government. If the project is affected, the overall development budget expenditure will fall," he said.

The Bridges Division is implementing only three projects, of which the Padma Bridge construction is scheduled to be completed by December 2018.

Meanwhile, the government ministries and agencies spent Tk 329.97 billion, 20 per cent of the total ADP outlay, in July-November period of the current FY, IMED data showed.

In the corresponding period of last FY, they spent Tk 235.94 billion or 19 per cent of Tk 1.23-trillion ADP outlay.

Ministry of Science and Technology, Ministry of Railways, Ministry of Water Resources, Energy and Mineral Resources Division, and Information and Communication Technology (ICT) Division are also on the list of the worst performers among the top 15 development budget holders for their poor rate of development budget execution.

Ministry of Science and Technology spent 5.02 per cent of the allocation, Ministry of Railways 9.63 per cent, Ministry of Water Resources 10 per cent, Energy and Mineral Resources Division 9.15 per cent, and ICT division 12.54 per cent during July-November period of this fiscal.



Silence speaks of chilling fear in victims’ minds: psychologists

ENFORCED DISAPPEARANCES
By Emran Hossain

The silence maintained by victims of enforced disappearances on their return has been described by psychologists as eloquent testimony of chilling fears instilled in them through physical or mental torture or both.

Their silence might not be deliberate refusal to share or disclose their experience rather they could be too scared to speak about it, said psychologists.

‘Enforced disappearance causes severe fear of uncertainty not only among the victims but also in those who come to know about it,’ said Bangabandhu Sheikh Mujib Medical University psychiatry professor MA Salam.

Salam was among six psychologists and psychiatrists who agreed to share their views on the issue of enforced disappearances after Utpal Das, reporter of an online newspaper, was fortunate enough to return to his family after disappearing since October 10.

Utpal returned on December 20. Two days later Mubashar Hasan Caesar, a private university teacher missing since November 7, returned to home on Friday.

According to rights organisation Odhikar, 408 individuals were victims of enforced disappearances between January 2009 and November 2017. Many of them did not yet return while bodies of some were found dumped. Very few returned home following periods of disappearances.

In photos newspapers published of the returned victims, they looked completely disoriented, though they refused to share their experiences.

Utpal and Caesar preferred not to talk about their days under enforced disappearance just like the others who too were lucky enough to return to their family alive.

About the period they remained traceless, they would only tell that they were confined in an unknown place after they were picked up by unknown people.

What they were saying was in no way different from the brief narratives of the other victims.

Under the circumstances New Age wanted to learn from psychologists and psychiatrists about what might be going on in the minds of the victims. Only six who were approached agreed to talk about it. Though contacted, six other psychologists and psychiatrists did not agree to share their views on the issue.

‘It’s not unlikely that no victim could recall their traumatic experience of psychological and or physical torture,’ said National Institute of Mental Health Psychotherapy professor Mohit Kamal.
In certain stages of trauma the brain gets locked, he said.

‘Trauma lingers in the victims’ psychology for decades besides causing physical problems for them,’ said Mohit.

Referring to his own study on freedom fighters he did 27 years after the Liberation War, Mohit said that even those who witnessed cruelty might suffer trauma for decades.

‘Continuing enforced disappearances could,’ he said, ‘engulf the whole nation with the sense of insecurity.’

Dhaka University clinical psychology professor Mohammad Mahmudur Rahman said that anxiety, depression and apathy generated by fear could discourage people from participating in any activity unless it was essential.

‘This can in no way be good for the nation,’ said Mahmudur Rahman.

Psychiatrist Salam said that trust could be banished from a society living in fear.

‘It’s the duty of the state to ensure security of all the citizens,’ he said.

Tuesday, December 19, 2017

Police officers found guilty are rarely punished: Daily Star


[Editor’s note: The following Daily Star report on the criminality of some members of the police force who thrive because of political indulgence appears so down to earth and relevant that we are reproducing an abridged version of the report]

 
The seven members of Detective Branch (DB) of police are detained and Tk 17 lakh ransom money is recovered from a vehicle in Teknaf on October 25, 2017. Photo: Collected
About a dozen cases of police brutality and bribery came to light in the last couple of months, denting people's trust in the police force, reports the Daily Star.

It says, officials at the police headquarters recently admitted that the “IGP complaint cell” received about 45 allegations against policemen a day. Most of those detail how some law enforcers have become downright criminals.

Before November 14, when the cell received only written complaints and that too during office hours, the number of allegations recorded was just a handful. Now the cell receives grievances online round the clock.

The allegations are aplenty. The list goes on from mugging on the streets to framing youths with yaba pills to abducting businessmen for ransom to torturing suspects in custody and relaying their screams over mobile phone to families for collecting hefty sums, according to officials at the Discipline and Professional Standard wing of the police headquarters.

Crimes like extorting street hawkers and collecting tolls from rickshaw-pullers on streets off-limit to slow-moving vehicles are apparently not even reported.

A number of constables, SIs and inspectors wishing anonymity said one of the main reasons for corruption at the lower-tier of the police force is that many of them get their jobs by paying bribes of huge amounts. The job of a constable could be had for Tk 6-7 lakh and an SI for Tk-15 lakh, they said.

They believe the money they paid as bribe is an investment and need to resort to corruption to recoup, the policemen said.

Worried about the corruption and criminal activities, chief Javed Patwari of Special Branch of police raised the issue at a quarterly crime conference in October. He asked force members to stay away from crimes as it dwarfed the achievements of police. 

Deputy Inspector General (DIG) Abdul Alim Mahmud of the police headquarters claimed that whenever they received a complaint against any policeman, they investigate and if found guilty they take stern departmental actions.

According to the headquarters' statistics, stern departmental actions were taken against 13,586 policemen last year, which are about 1,132 per month on average. Until September of this year, stern actions were taken against 10,821 (1,202 per month on average) policemen.

Ironically, most of the “stern” punishments are limited to withdrawals or transfers. Suspensions, demotions and terminations are very rare. Some who do get fired sometimes get their jobs back following court orders.

Iftekharuzzaman, executive director of Transparency International, Bangladesh, said, “Exemplary punishment is hardly ever handed down. Offenders are also aware that they would get back all facilities after serving the light punishment.”

He insisted that violation of law by law enforcers could not be contained if the offenders were let go with meaningless punishment. 

Nur Mohammad, former inspector general of police, said, “The force has an intelligence wing, the Police Internal Oversight (PIO), to keep watch on field-level officials and policemen. It regularly sends reports but hardly any action is taken.

“Had there been action taken based on PIO reports, there would be a fear among the field-level policemen,” he added.

The problems within the police force are deep rooted, starting with recruitment, promotions to postings, said some serving and ex-police officials while talking to The Daily Star.

Asked why police members indulge in corruption and crime, they said one reason is that they have to pay hefty sums to get the jobs and good posts. Besides, political backing and hobnobbing with senior police officials also give them a sense of invincibility.

“We often hear that lower-tier policemen are being recruited in exchange for money … Coming out of training [it's only natural that] he would push yaba or arms in the pockets of people to recover the money,” said ex-IGP Nur Mohammad.

In July 2015, Zillur Rahman, deputy commissioner of Barisal Metropolitan Police (BMP), made headlines by setting up a common bribe fund to speed up promotion of 230 policemen of Barisal, who each contributed between Tk 30,000 and Tk 50,000 to the fund.

He along with 10 other lower-level Barisal Policemen was suspended after a probe found them guilty.
Zillur, who was attached to the office of the Deputy Inspector General of Sylhet Range following his suspension, is now serving as the Superintendent of Police of Tourism Police.

(Retired IG) Nur Mohammad believes transparency in hiring, training, posting and promotion could greatly help the force. To improve the situation, the supervising officers should also keep an eye on subordinates and take account of their daily activities.

Graft watchdog leader Iftekharuzzaman sees the constant political exploitation of police in every step as the prime reason for their professionalism getting ruined. “Moral turpitude, irregularity and corruption did not appear suddenly.”

Sunday, December 17, 2017

বাংলাদেশে ৫কোটি মানুষ খাদ্য দূর্ভিক্ষে - ব্র‍্যাক সমীক্ষা



বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার কমপক্ষে প্রতি তিনজনে একজন খাদ্যের আকালে ভোগে। ব্র‍্যাক-এর এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এই সমীক্ষার হিসেব অনুযায়ী দেশে ৫ কোটি লোক অর্ধাহার-অনা‌হারের শিকার। এ সমীক্ষা অনুযায়ী, অামাদের মোট জনসমষ্টির তিনভাগের একভাগের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য নেই। তারা খাদ্য বঞ্চিত।

অান্তর্জাতিক সহযোগিতায় ব্র‍্যাক ইউনিভার্সিটি পরিচালিত  সমীক্ষা লব্ধ ফল  উপস্থাপনা করে ব্র‍্যাক  সেন্টারে  এক সেমিনারে ড. অাবদুল বায়েস সম্প্রতি এই তথ্য জানান। তিনি জানান দেশ খাদ্য উৎপাদনে রীতিমতো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও ঐ খাদ্য দেশের জন্য পর্যাপ্ত নয়। অামোদর বিশেষ করে পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে এখনও অনেক  দূরের পথ পাড়ি দিতে হবে।

দেশের খাদ্য নিরাপত্তার অবস্থা কী  - এ নিয়ে এ্ক প্রশ্নের জবাবে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অানু মুহাম্মদ জানান, এই সমীক্ষায় যে তথ্য অামাদের গোচরে এস‌েছে সেই অালোকে বলতে হবে যে অাসলে প্রকৃতি পরিস্থিতি অারও গুরুতর হতে পারে। তিনি জানান, সরকারের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়, দেশের মোট জনসমষ্টির চারভাগের  একভাগ দরিদ্র। এসব দরিদ্রের অাবার অর্ধেক দারিদ্র‍্যরেখার নিচে বাস করে। অার  এ কারণেই খাদ্য তাদের হতের নাগালে পৌঁছায় না। অার খাদ্য কিছু লোকের নাগালে থাকলেও কী মানের খাদ্য তারা অাহার করছে সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নয়। তিনি জানান, খাদ্যে ভেজাল থাকলে খাদ্যের সতিকারের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবার নয়।

অর্থনীতিবিদ মাহবুবুল মোকাদ্দাম জানান, পুষ্টিভিত্তিক অভাব সর্বদাই অায়ভিত্তিক দারিদ্র্যের হারের তুলনায় ‌অনেক বেশি। কারণ জনগণের মাঝে খাদ্যের পুষ্টিমান সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। সেকারণে সরকারের উচিত যে খাদ্য বাজারে পাওয়া যায় সেসব খাওয়ার জন্য নিরাপদ কি না সে বিষয়টি নিশ্চত করা।
সেমিনারে উপস্থিত ইন্সটিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ-এর সাবেক পরিচালক  জানান, একজন সুস্থ মানুষের জন্য ‌দৈনিক ২১০০ কিলোক্যালরি খাদ্য গ্রহণ প্রয়োজন।  

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চালচিত্র

এবনে গোলাম সামাদ

পাকিস্তানি ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি, ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনীর পূর্ব রণাঙ্গনের প্রধান কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সামনে আত্মসমর্পণের নির্দশনপত্রে স্বাক্ষর করছেন, ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১


পাকিস্তান রাষ্ট্রটির উদ্ভব হতে পেরেছিল মুসলিম জাতীয়তাবাদকে নির্ভর করে। যার উদ্ভব হতে পেরেছিল ব্রিটিশ শাসনামলে বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে। এই উপমহাদেশে যদি ব্রিটিশ শাসন না আসত তবে সম্ভবত এর উদ্ভব হতে পারত না। কেননা, দীর্ঘ ৭০০ বছর মুসলিম নৃপতিদের শাসনামলে কোনো দ্বিজাতিতত্ত্বের উদ্ভব ঘটেছিল না। শেখ মুজিব দ্বিজাতিতত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে। তিনি মনে করতেন, বাংলাভাষী মুসলমানের জাতীয়ভাবে আছে দু’টি দিক। ভাষাগত দিক থেকে তারা যেমন বাঙালি, তেমনি আবার ধর্মীয় কারণে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে একটা মুসলিম স্বাতন্ত্র্য চেতনা। বিষয়টি বিশেষভাবে ফুটে উঠেছে শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে। তার এই আত্মজীবনী একটি খুবই মূল্যবান রাজনৈতিক দলিল, যা পাঠে তার রাজনৈতিক চিন্তাচেতনার বিশেষ পরিচয় লাভ করা সম্ভব হয়। তার এই আত্মজীবনী প্রকাশিত হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের একদল বুদ্ধিজীবী কেবল প্রচার করছিলেন যে, তিনি (মুজিব) ছিলেন নিখাঁদ বাঙালি জাতীয়তাবাদী। সেটা আর এখন সত্য বলে প্রতিভাত হচ্ছে না অনেকের কাছে। তাকে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে ভিন্নভাবে।

দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কখনোই দাবি করেনি যে, এটি কেবলই একটি পূর্ব পাকিস্তানের দল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এটি কেবল পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচনে প্রার্থী দাঁড় করায়নি, দাঁড় করিয়েছিল পাকিস্তানের পশ্চিম ভাগের প্রদেশ থেকেও। অন্য দিকে জুলফিকার আলী ভুট্টোর দল পিপিপি পূর্ব পাকিস্তান থেকে কোনো প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল না। অর্থাৎ পিপিপি নিজেকে ভাবত কেবল পাকিস্তানের পশ্চিম ভাগেরই একটা দল হিসেবে। যদিও আদর্শ হিসেবে দাবি করত যে, দলটি হলো সামাজিক সমাজতন্ত্রে আস্থাশীল। তার লক্ষ্য হলো জনগণের জন্য রোটি, কাপড় আর মোকাম। 

শেখ মুজিব তার ৭ মার্চের বক্তৃতায় দাবি করেছিলেন, আওয়ামী লীগ হলো পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টি। তিনি কখনোই বলেননি আওয়ামী লীগ হলো পূর্ব পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টি। তিনি তার এই বিখ্যাত বক্তৃতায় যদিও বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। কিন্তু সংগ্রাম বলতে তিনি ঠিক যুদ্ধ বোঝাতে চাননি। তিনি বলেছিলেন, সংগ্রামকে হতে হবে মূলত অহিংস। তিনি এ ব্যাপারে অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন মোহনলাল করমচাঁদ গান্ধীর অহিংস রাজনৈতিক কর্মপন্থাকে। জুলফিকার আলী ভুট্টো দাবি করেছিলেন, তিনি পাকিস্তানের পশ্চিম ভাগের সংখ্যাগুরু দলের নেতা। পাকিস্তানে হতে হবে দুইজন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু শেখ মুজিব এ রকম কোনো অদ্ভুত দাবি উত্থাপন করেছিলেন না। পাঞ্জাবের বিখ্যাত নেতা মিয়া মমতাজ দৌলতআনা বলেছিলেন, ভুট্টোর বক্তব্য খুবই আশ্চর্যজনক। কেননা, পাকিস্তান একটা রাষ্ট্র, দু’টি রাষ্ট্র নয়। একটি রাষ্ট্রে দু’টি সংখ্যাগুরু দল কখনো হতেই পারে না। ভুট্টো ছাড়া পাকিস্তানের আর সব নেতাই চেয়েছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান হবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তাই বলা চলে না, শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন সাবেক পাকিস্তান ভেঙে দিয়ে বাংলাদেশ নামক একটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে। তিনি চাচ্ছিলেন, সাবেক পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে। কেবল পৃথক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে নয়।

সোভিয়েত ইউনিয়ন এখন আর টিকে নেই। কিন্তু ১৯৭১ সালে তা ছিল একটা খুবই শক্তিমান ফেডারেশন। সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনায় না এসেই পারে না। কেননা ১৯৭১-এর ৯ আগস্ট হতে পেরেছিল ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ২৫ বছরের শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি; যেটি আসলেই ছিল সামরিক চুক্তি। এই চুক্তি না হলে ভারত কখনো পাকিস্তানের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়ার কথা ভাবতে পারত বলে মনে করা যায় না। কেননা, পাকিস্তানের সাথে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা নিরাপত্তা চুক্তি। ভারত জানত, ভারত কর্তৃক যদি পাকিস্তান আক্রান্ত হয়, তবে এই চুক্তির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে আসবে তার (পাকিস্তানের) প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের পক্ষে থাকলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত পাকিস্তানের জন্য যুদ্ধে অগ্রসর হতে চাইবে না। কিন্তু ১৯৭১-এর যুদ্ধ কার্যত হয়ে দাঁড়িয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে পাঠায় তার সপ্তম নৌবহর। যার প্রভাব বিরাটভাবে পড়েছিল ভারতের ওপর। অন্য দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেবেছিল না যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গোপসাগরে এভাবে রণতরী পাঠাবে। সে পরিত্যাগ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নৌযুদ্ধের কথা। সোভিয়েত ইউনিয়নের যথেষ্টসংখ্যক সাবমেরিন ছিল। কিন্তু রণতরী ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাঠিয়েছিল বিমানবাহী এবং মেরিন সৈন্যবাহী জাহাজ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে বলেছিল, পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে গেলে মার্কিন মেরিন সেনারা পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে সেখানে অবতরণ করবে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। পূর্ব পাকিস্তানকে একটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে না। ভারত পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ভারত প্রস্তাব করে পাকিস্তান যদি পূর্ব পাকিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নেয়, তবে যুদ্ধ বন্ধ হবে। পাকিস্তানকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে হবে। এ নিয়ে শুরু হয় দরকষাকষি। চীন পাকিস্তানকে পরামর্শ দেয় পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে সৈন্যদের সরিয়ে নিতে। আর সে জায়গায় ২৪ হাজার বাংলাভাষী সৈন্য, যারা পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থান করছে, তাদের পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে। এসব সৈন্য সবাই ছিল ভারতবিরোধী। চিন্তাচেতনার দিক থেকে রক্ষণশীল ও ইসলামি মনোভাবাপন্ন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি খুব জটিল হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের এ এ কে নিয়াজীর পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া হয়ে ওঠে খুব কঠিন। তিনি চান দ্রুত যুদ্ধের অবসান। নিয়াজী চান ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করতে। এ রকমই বলা হয়ে থাকে। কিন্তু আসলে কী ঘটেছিল, সে সম্বন্ধে এখনো পরিষ্কার কিছু ধারণা করা চলে না।

ভারত বলে, পাকিস্তান যদি পূর্ব পাকিস্তানে তাদের পরাজয় স্বীকার করে, তবে পশ্চিম পাকিস্তানে সে যুদ্ধ বন্ধ করবে। পাকিস্তানকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে সেনা সরাতে হবে। তা না হলে যে ৯০ লাখ শরণার্থী পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে গিয়েছে, তাদের পূর্ব পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে না। পাকিস্তানের পূর্ব কমান্ডের প্রধান সেনাপতি এ এ কে নিয়াজী ভারতের পূর্ব কমান্ডের প্রধান সেনাপতি জগজিৎ সিং অরোরার কাছে শর্তহীনভাবে আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু ব্যাপারটাকে যতটা শর্তহীন বলা হয়, আসলে তা ছিল না। সমস্ত পাকবাহিনীর বন্দীকে নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ আশ্রয়ে এবং তাদের বাংলাদেশে আটকে না রেখে স্থানান্তরিত করা হয় ভারতে। এরপর ১৯৭২ সালের ৩ জুলাই হয় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি। এই চুক্তি অনুসারে পাক সেনাবাহিনীর সব বন্দীকেই দেয়া হয় মুক্তি এবং যেতে দেয়া হয় পাকিস্তানে। পাকিস্তানের কোনো যুদ্ধবন্দীর বিচার করা হয় না যুদ্ধাপরাধের জন্য।

ভারতের স্বতন্ত্র দলের নেতা পিলু মোদি (Piloo Mody) একটি বই লিখেছেন Zulfi My Friend নামে। জুলফি বলতে তিনি বুঝিয়েছেন, জুলফিকার আলী ভুট্টোকে। তিনি তার বইতে বলেছেন, ইন্দিরা গান্ধী সিমলা সম্মেলনের সময় একবার যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন। জনাব ভুট্টো সেই সময় বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে গেলে সব পক্ষের যুদ্ধাপরাধেরই বিচার করতে হবে। আর সেটা করতে হবে জেনেভা কনভেনশন অনুসারে। ইন্দিরা গান্ধী দেখেন, সেটা করতে গেলে নানা অসুবিধার মধ্যে ভারতকে পড়তে হবে। তাই তিনি ব্যাপারটি স্থগিত করেন। সিমলা চুক্তি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। সিমলা সম্মেলনে বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধিকে ডাকা হয়নি। সিমলা সম্মেলনের শেষে যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয় তাতে ১৯৭১-এর যুদ্ধকে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সঙ্ঘাত (Conflict) হিসেবে। উল্লেখ করা হয়নি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে।

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে ঠিক কী চেয়েছিলেন আমরা এখনো তা জানি না। ইন্দিরা গান্ধী একটি বই লিখেছেন My Truth নামে। বইটির বাংলা অনুবাদ করেছেন, স্কোয়াড্রন লিডার (অব:) মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম। তিনি বইটির নাম দিয়েছেন ‘আমার সত্যকথন’। এই বইতে ইন্দিরা গান্ধী শেখ মুজিবুর রহমানের মূল্যায়ন করেছেন এভাবে - ‘তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত ভাবপ্রবণ, উষ্ণ হৃদয়ের লোক, যিনি একজন আইনপ্রণেতার চেয়ে পিতৃসুলভ ব্যক্তিত্বের বেশি অধিকারী ছিলেন। উপরন্তু তিনি সংগ্রামের বেশির ভাগ সময় দূরে অবস্থান করেছিলেন। আমি বলতে চাচ্ছি, মুক্তিযুদ্ধ, নির্বাচন ইত্যাদি বিষয় তার চিন্তাধারা, জনগণের দৃষ্টিকোণ থেকে স্বতন্ত্র ছিল, যারা এসব বিষয়ে অংশ নিয়েছিলেন।

আমি মনে করি না যে তিনি তাদের পুরোপুরি বিশ্বাস করেছিলেন, কিন্তু তারা তার প্রতি অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন। তাই তারা যা কিছু করেছিলেন, তার (মুজিব) নামে ও তার জন্য করেছিলেন। কিন্তু তিনি এই লোকদের গুরুত্ব দেননি, বরং তাদের গুরুত্ব দিয়েছিলেন, যারা তার বিরুদ্ধে ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল। এতে একটি প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি অবশ্যম্ভাবী ছিল।’

ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালে তার দু’জন উপদেষ্টার ওপর খুব নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। এদের মধ্যে একজন হলেন দুর্গাপ্রসাদ দার (ধর); আর একজন হলেন পি এন হাক্সার। এরা উভয়েই ছিলেন জন্মসূত্রে কাশ্মিরের লোক। আর এরা উভয়েই ছিলেন ছাত্রজীবন থেকেই মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট। এদের দু’জনের প্রচেষ্টাতেই সম্ভব হতে পেরেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ভারতের ২৫ বছরের শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদও ছিলেন মস্কোপন্থী কমিউনিস্ট। তাই তার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল কলকাতায় যেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়া। তিনিও ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর খুবই আপন লোক। ইন্দিরা গান্ধী হয়তো ভেবেছিলেন শেখ মুজিব পাকিস্তান থেকে আর কখনোই ফিরবেন না। তার প্রাণদণ্ড হবে। ফলে তিনি তাজউদ্দীন আহমদ ও তার দলের লোকদের সহায়তা করে চলতে পারবেন। কিন্তু সেটা হয়ে ওঠেনি। জুলফিকার আলী ভুট্টো জেল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন শেখ মুজিবকে। সুযোগ করে দিয়েছিলেন তাকে বাংলাদেশে আসার জন্য, যাতে বাংলাদেশে তাজউদ্দীন আহমদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে।

শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পান ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি। তিনি পাকিস্তান থেকে ৮ জানুয়ারি পিআইএর একটি বিশেষ বিমানে করে যান লন্ডনে। সেখানে যেয়ে দেখা করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্থ হিথের সাথে। লন্ডন থেকে তিনি ১০ জানুয়ারি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একটি বিমানে করে আসেন নয়াদিল্লি। দেখা করেন ইন্দিরা গান্ধীর সাথে। তারপর ওই একই ব্রিটিশ বিমানে করে যাত্রা করেন ঢাকায়। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আপত্তি তুলেছিল। বলেছিল, ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর বিমানে করে ঢাকা যাওয়া ঠিক হবে না। কেননা, গ্রেট ব্রিটেন তখনো বাংলাদেশকে একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান করেনি। কিন্তু শেখ মুজিব তাদের আপত্তিকে পাশ কাটিয়ে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর বিমানে করেই এসে পৌঁছান ঢাকায়। কেন তিনি এ রকম করার প্রয়োজনীয়তা দেখেছিলেন, সেটা এখনো জানা যায়নি। গ্রেট ব্রিটেন বাংলাদেশকে একটা পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান করেছিল ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে। শেখ মুজিব সরাসরি পাকিস্তান থেকে নয়াদিল্লি না আসায় ভারতে সৃষ্টি হতে পেরেছিল দারুণ প্রতিক্রিয়া। এ সময় আমি ছিলাম কলকাতায়। কলকাতায় ট্রামে-বাসে লোকদের বলতে শুনেছিলাম, শেখ মুজিবুর রহমানকে ইন্দিরা গান্ধীর অতটা বিশ্বাস করা উচিত হয়নি। এ রকম কথাও অনেককে বলতে শুনেছিলাম যে, ইন্দিরা গান্ধীর পিতা জওয়াহেরলাল নেহরু সৃষ্টি করেছিলেন একটি পাকিস্তান, তার কন্যা ইন্দিরা গান্ধী সেই একটি পাকিস্তানকে খণ্ডিত করে সৃষ্টি করলেন দু’টি পাকিস্তান। যার ফলে ভারতে পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তা আরো অনিশ্চিত হয়েই পড়ল।

লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট 
সৌজন্যে - দৈনিক নয়াদিগন্ত।