Search

Saturday, January 27, 2018

আবু বকরকে কেউ খুন করেনি!

* আট মাস আগে রায় হয়েছে। কেউ জানে না। * ছাত্রলীগের ১০ নেতা-কর্মীর সবাই খালাস। * পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ। * আপিলের সময়ও পার।




ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু বকর ছিদ্দিক হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের সাবেক ১০ নেতা-কর্মীর সবাই বেকসুর খালাস পেয়েছেন। আট মাস আগে এই মামলার রায় হয়েছে। কিন্তু আবু বকরের বাবা-মা, এমনকি বাদীকে রায় সম্পর্কে জানানো হয়নি। বাদীর পক্ষে সরকারি কৌঁসুলি এই মামলা পরিচালনা করেন।

সব আসামি খালাস পাওয়ায় কে বা কারা আবু বকরকে খুন করেছে, এই বিচারে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হত্যাকারী চিহ্নিত করার মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতে আপিল করার যে সুযোগ ছিল, তা-ও রাষ্ট্রপক্ষ নেয়নি। এর মধ্যে আপিলের স্বাভাবিক সময়ও পার হয়ে গেছে। ফলে নিহত ব্যক্তির পরিবার বিচার পাওয়ার অধিকার থেকেই বঞ্চিত রয়ে গেল।

আবু বকর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে স্যার এ এফ রহমান হলে সিট দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় আহত হয়ে এক দিন পর মারা যান। ওই সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হন। আইন বিভাগের আহত ছাত্র ওমর ফারুক বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন।

আবু বকর ছিদ্দিকের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী গ্রামে। তাঁর মৃত্যুতে সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্ররা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন। কারণ, আবু বকর তৃতীয় সেমিস্টার পর্যন্ত সিজিপিএ-৪-এর মধ্যে ৩.৭৫ পেয়েছিলেন। চতুর্থ সেমিস্টারের ফল বের হওয়ার আগে তিনি খুন হন। ওই বিভাগে তাঁর আগে এমন ভালো ফল কেউ করেননি। আবু বকর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সময় গ্রামে গিয়ে কৃষিখেতে কাজ করতেন, প্রতিবেশীদের বাচ্চাকে পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ জোগাতেন। তাঁর বাবা রুস্তম আলী দিনমজুর। মা রাবেয়া খাতুন তিন বছর মাথায় তেল না দিয়ে সেই টাকা ছেলের পড়ার খরচ চালানোর জন্য সঞ্চয় করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে পুরো পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে যায়।

মামলায় অপরাধী শনাক্ত করতে না পারার জন্য পুলিশের দুর্বল তদন্তকে দায়ী করেছেন আদালত। ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জাহিদুল কবির গত বছরের ৭ মে দেওয়া রায়ে বলেছেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে মাথার পেছনে শক্ত ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতে। কিন্তু আসামিদের কাছ থেকে কোনো অস্ত্র কিংবা এর আলামত জব্দ করা হয়নি। আবু বকরের রক্তমাখা লুঙ্গিকেই পুলিশ মামলার একমাত্র আলামত হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করেছে। রাষ্ট্রপক্ষের ২২ সাক্ষীর ১১ জন সাক্ষ্য দিলেও কেউই বলেননি যে আবু বকর আসামিদের ছোড়া গুলিতে নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী প্রায় সব সাক্ষী বলেছেন, ছাত্রদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেলের আঘাতে আবু বকর মারা যান। এ তথ্য আবু বকরের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সমর্থন করে বলে রায়ে বলা হয়।

মামলাটি পুলিশের চারজন কর্মকর্তা পর্যায়ক্রমে তদন্ত করেন। অন্যতম তদন্ত কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল করিমের জবানবন্দি উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়, ঘটনার সময় শাহবাগ থানার ওসি ২০ থেকে ২৫ জনের দল নিয়ে সেদিন এ এফ রহমান হলে যান। গন্ডগোলের সময় ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেন। মামলার এজাহারে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবু বকর মারা যাওয়ার কথা থাকলেও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতে মারা যান তিনি। আদালত বলেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম ঘটনাস্থল থেকে টিয়ার শেলের খোসা কিংবা ভোঁতা অস্ত্র (হার্ড ব্লান্ট ওয়েপন) জব্দ করেননি কিংবা করার চেষ্টাও করেননি।

প্রসঙ্গত, এই তদন্ত কর্মকর্তাই ওই সময় শাহবাগ থানার ওসি ছিলেন এবং আদালতে দেওয়া তাঁর জাবানবন্দি অনুযায়ী, তাঁর নেতৃত্বেই টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক এমদাদুল হকও আদালতে বলেছিলেন, সংঘর্ষের সময় পুলিশ বাইরে থেকে রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়েছে বলে তিনি শুনেছেন। কিন্তু অগ্রগতি প্রতিবেদনে তিনি বলেছিলেন, মামলার এক নম্বর আসামি সাইদুজ্জামানের গুলিতেই আবু বকর মারা যান।

মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবদুল হালিম। কিন্তু তিনি আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাননি।

মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওমর ফারুক আদালতে বলেছেন, মামলা করার জন্য তিনি থানায় যাননি। কে এজাহার টাইপ করেছেন, তা-ও তিনি জানেন না। তখন তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে কথা বলেছেন।

আবু বকর হত্যা মামলার রায় পরিবার ও বাদীকে জানানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রপক্ষের। জানতে চাইলে মামলা পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলি সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন, তিনি কাউকে রায় সম্পর্কে জানাননি। কারণ, কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আপিল কেন করেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাদী কিংবা নিহত ব্যক্তির কোনো আত্মীয়স্বজন আপিল করার জন্য তাঁর কাছে আসেননি। তিনি জানান, এখন আপিল করার সুযোগ নেই, কারণ নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেছে।

আবু বকর খুনের মামলায় সব আসামি খালাসের রায়ের খবর জানানোর পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বিচারিক আদালতের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে কেন আপিল করা হয়নি, তা তিনি খোঁজ নিয়ে জেনে যত দ্রুত সম্ভব আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।

টাঙ্গাইলে অবস্থানরত আবু বকরের বড় ভাই আব্বাস আলীও প্রথম আলোর কাছ থেকে রায়ের তথ্য শোনেন এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাইয়ের খুনের বিচার পাওয়ার আশায় ঢাকায় গিয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিয়ে এসেছি। অথচ আমরা জানতেই পারিনি, রায় হয়েছে; সব আসামি খালাস পেয়েছে। সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন, আবু বকরকে তাহলে কারা খুন করল? আমরা জবাব চাই।’

মামলার তদন্তের বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক এমদাদুল হক বলেন, ‘তদন্তে যেটুকু তথ্য পেয়েছি, তা আদালতে তুলে ধরেছি।’

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দও মামলার রায় হওয়ার তথ্য জানেন না। জানানোর পর তিনি বলেন, কেন সব আসামি খালাস পেয়েছেন, রায় না পড়ে বলা যাবে না। তবে তিনি জানান, অনেক পরে সিআইডি মামলার তদন্তভার পায়। শুরুতে তদন্ত করেছে থানা-পুলিশ। তাদেরই দায়িত্ব ছিল আলামত জব্দ করা। কেন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র বা অন্য প্রয়োজনীয় আলামত জব্দ করা হয়নি, তা তিনি বলতে পারবেন না।

মামলায় খালাস পাওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা হলেন হল শাখার সভাপতি সাইদুজ্জামান ফারুক, মফিদুল আলম খান (তপু), রকিব উদ্দিন (রফিক), মনসুর আহমেদ (রনি), আসাদুজ্জামান (জনি), আলম-ই-জুলহাস, তৌহিদুল ইসলাম খান (তুষার), আবু জাফর মো. সালাম, এনামুল হক (এরশাদ) ও মেহেদী হাসান (লিয়ন)। এঁরা সবাই ঘটনার সময় এ এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন।

আসামিদের খালাস পাওয়ার বিষয়ে বাদী ওমর ফারুক বলেন, ‘প্রথম তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আমি নারাজি দিয়েছিলাম। পরে সিআইডি তদন্ত করে। কিন্তু সে তদন্তও ঠিকভাবে হয়নি।’ তিনি বলেন, খালাস পেলেও আবু বকর খুনের দায় ছাত্রলীগের এই নেতারা এড়াতে পারেন না। কারণ, ফারুক ও মেহেদী গ্রুপের ওই সংঘর্ষে আরও ৩০ জন ছাত্র আহত হয়েছিলেন। তাঁদের বিচার কোথায়? তিনি বলেন, ‘আমি বাদী যে আহত হয়েছিলাম, সেই চিকিৎসা সনদও তো পুলিশ আদালতে দেয়নি।’

মামলার প্রধান আসামি সাইদুজ্জামান ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের উপস্থিতিতে রায় হয়েছে। আদালত আমাদের খালাস দিয়েছেন।’ তাহলে আবু বকরকে কারা খুন করল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জানেন কে খুন করেছে।’

আলোচিত এই মামলায় পুলিশ ও রাষ্ট্রপক্ষের অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, আবু বকরের খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করার দায়িত্ব পুলিশের। আদালতে তথ্য, প্রমাণসহ অভিযোগ প্রমাণ করার দায়িত্ব রাষ্ট্রপক্ষের। বিচারিক আদালতের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে কেন সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তারা আপিল করলেন না, এর জবাব তাঁদের কাছে চাওয়া দরকার। আর রায়ে তদন্তে গাফিলতির কথা বলে থাকলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের জবাবদিহির ব্যবস্থা করা দরকার।

আবু বকর খুন হওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি আবু বকরের পরিবারের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ রাখেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের খালাস পাওয়া খুবই দুঃখজনক। আবু বকর তো খুন হয়েছিল, এই খুন কে করল, তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব সবারই। এ বিষয়ে তিনি উচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ চান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান নিহত আবু বকরের বিভাগে তাঁর সরাসরি শিক্ষক। রায়ের তথ্য শুনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিচার নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ তিনি নেবেন।

আবু বকরের মৃত্যুর ৪২ দিন পর তাঁর চতুর্থ সেমিস্টারের ফল প্রকাশ হয়েছিল। তাতে তিনি যুগ্মভাবে প্রথম হন। ‘এবার প্রথম হয়ে কাঁদালেন বকর’ শিরোনামের সেই খবর তাঁর পরিবারকে তখন আবার শোকের সাগরে ভাসিয়েছিল। শেষ সান্ত্বনার জন্য আদালতের দিকে তাকিয়ে ছিল নিঃস্ব এই পরিবার। কিন্তু গতকাল রায়ের খবরটি জানানো হলে তাদের সব আশা মাটিতে মিশে যায়।

খবর পেয়ে দুপুরে খেত থেকে বাড়ি ফিরে আবু বকরের বাবা রুস্তম আলী নিশ্চুপ বসে ছিলেন ঘরের বারান্দায়। মা রাবেয়া খাতুন ভেতর থেকে কেবল বললেন, ‘আমার নির্দোষ বাবারে যারা হত্যা করল, তাগো বিচার হইলো না! এইডা ক্যামন দেশ!’

Courtesy: ProthomAlo/Jan 26, 2018

Thursday, January 25, 2018

পরিবেশ সূচক ২০১৮ - তলানিতে বাংলাদেশ





বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিও সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। অনেক দেশই আবার এর উল্টোপথে চলছে। উন্নয়ন ও পরিবেশকে সমান গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এসব দেশের কাতারে আছে বাংলাদেশও। সম্প্রতি প্রকাশিত এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই)-২০১৮তে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৯তম। এ সূচকে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে থাকা বাংলাদেশের পরে আছে কেবল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ আফ্রিকার বুরুন্ডি।

যৌথভাবে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি ও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল আর্থ সায়েন্স ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক। প্রতি দুই বছর পর বৈশ্বিক এ সূচক প্রকাশ করা হয়। এর আগে সর্বশেষ প্রকাশিত ২০১৬ সালের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৮০ দেশের মধ্যে ৪১ দশমিক ৭৭ স্কোর নিয়ে ১৭৩। আর ২০১৪ সালের তালিকায় বিশ্বের ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৯। অর্থাৎ প্রতি বছরই তালিকায় বাংলাদেশের ধারাবাহিক অবনমন ঘটছে।

এবার তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড। দেশটির স্কোর ৮৭ দশমিক ৪২। এ তালিকার শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলোও ইউরোপের। সুইজারল্যান্ডের পর শীর্ষে দশে রয়েছে যথাক্রমে ফ্রান্স, ডেনমার্ক, মাল্টা, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, লুক্সেমবার্গ, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকার অবস্থান সবচেয়ে ভালো। এবারের তালিকায় ৬০ দশমিক ৬১ স্কোর নিয়ে দেশটির অবস্থান ৭০তম। এছাড়া মালদ্বীপ ১১১, ভুটান ১৩১, আফগানিস্তান ১৬৮, পাকিস্তান ১৬৯, নেপাল ১৭৬ ও ভারত ১৭৭তম স্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এবার এগিয়েছে শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ। আর আগের চেয়ে পিছিয়েছে ভুটান, ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল।

ইপিআই সূচক তৈরিতে আটটি বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়— জনস্বাস্থ্যের ওপর দূষণের প্রভাব, বায়ুর মান, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন, পানিসম্পদ, কৃষি, বনায়ন, মত্স্যসম্পদ, জীববৈচিত্র্য ও বাসস্থান এবং আবহাওয়া ও জ্বালানি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত তালিকার নিচের দিকে অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে কম স্কোর পাওয়া দেশগুলোর জাতীয়ভাবে বেশকিছু ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে— বায়ুর মান উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমিয়ে আনা।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে রয়েছি আমরা। এর প্রতিফলন ঘটছে এ ধরনের সূচকে। মূলত অনিয়ন্ত্রিত লোভের কারণে পরিবেশের অঙ্গহানি ঘটছে। এজন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে।

গত ৫০ বছরে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়েছে। এক দশক আগেও গাজীপুরের মোট জমির প্রায় ১৪ শতাংশ জমি ছিল বনাঞ্চল, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ শতাংশে। দেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের অবস্থাও সংকটাপন্ন। উন্নয়ন ও দখলের উৎসবে গত চার দশকে এ বনভূমির ১২৭ বর্গকিলোমিটার নিশ্চিহ্ন হয়েছে। আর বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ায় বিলুপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। এক দশকে শুধু বাঘের সংখ্যা কমেছে তিন-চতুর্থাংশ।

দূষণের শিকার দেশের বিভিন্ন শহরের বায়ুও। নগরের বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠেছে সিসা আর সালফারে। আবার দখল আর দূষণে মৃতপ্রায় অবস্থায় পৌঁছেছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরের পার্শ্ববর্তী নদীগুলো। এক যুগের কিছু বেশি সময়ে ঢাকার চারদিকের নদীগুলোর ২৫০ একরের বেশি ভূমি দখল করা হয়েছে। আর ঢাকার ভেতরে সাড়ে তিন দশকে হারিয়ে গেছে ১০ হাজার হেক্টর বা ৫০ শতাংশের বেশি জলাভূমি, খাল ও নিম্নাঞ্চল। আর তাতে গড়ে উঠছে সড়ক, অবকাঠামোসহ নানা স্থাপনা।

  • বনিক বার্তা/ জানুয়ারী ২৫

মাত্রা ছাড়িয়েছে সব নদীর দূষণ






কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়েই ছোট-বড় চারশর মতো শিল্প-কারখানা। বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই অধিকাংশেরই। যাদের আছে বন্ধ রাখছে তারাও। সরকারি সংস্থা পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, কর্ণফুলীর আশপাশে গড়ে ওঠা ডায়িং, ওয়াশিং, ট্যানারি ও পেপার মিলের বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে নদীতে। এতে দূষিত হচ্ছে কর্ণফুলীর পানি। যথাযথ অয়েল ওয়াটার সেপারেটর না থাকায় নদী দূষণ করছে বিদ্যুেকন্দ্রগুলোও।

বিভিন্ন গবেষণার তথ্য বলছে, চট্টগ্রামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ নদীর পানিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি এরই মধ্যে মাত্রা ছাড়িয়েছে। কর্ণফুলীর উপকূলের পানিতে আর্সেনিক, লৌহ, সিসা ও ক্যাডমিয়াম সহনীয় মাত্রার উপরে অবস্থান করছে। একই অবস্থা দেশের প্রায় সব নদ-নদীরই। কোনো কোনো নদীর পানিতে সীমা ছাড়ানো লৌহের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কোনোটিতে আবার ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি অস্বাভাবিক। সিসা, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক ও ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুও আছে সহনীয় মাত্রার উপরে।

যদিও নদী দূষণ রোধে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কারখানায় বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট (ইটিপি) স্থাপন বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। দূষণকারী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হচ্ছে। তারপরও থামছে না নদী দূষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী বণিক বার্তাকে বলেন, ঢাকার বাইরেও অনেক নদীর দূষণের বিষয়টি অধিদপ্তরের পরিদর্শনেও বেরিয়ে এসেছে। করতোয়া, বংশী, বালু, হালদা, কর্ণফুলীর মতো অনেক নদীর পানিই এখন দূষিত। খুব শিগগির বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ঢাকার বাইরের নদীগুলোর দূষণের ধরন, মাত্রাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করব। পাশাপাশি দূষণ কমিয়ে আনার কর্মপরিকল্পনাও নেয়া হবে।

দেশের প্রধান নদীগুলোর দূষণ নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের দুজন গবেষক। সায়েন্স জার্নাল অব এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত তাদের গবেষণার ফলাফল বলছে, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়েছে ঢাকার বাইরের নদীগুলোও। নদীর পানি ও তলদেশে জমে থাকা মাত্রাতিরিক্ত ভারী ধাতু খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুসফুস, কিডনি, লিভার ও হার্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

কর্ণফুলী: বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত কর্ণফুলী চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান নদী। কর্ণফুলীর তীরে ছোট-বড় অনেক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলেও অধিকাংশেরই বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। এসব শিল্প-কারখানার বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই নদীতে গিয়ে পড়ছে। জাহাজ ও তেল ট্যাংকারের বিভিন্ন বর্জ্যও নদীতে মিশছে।

গবেষণার তথ্য বলছে, নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের পানিতে আর্সেনিক, লৌহ, সিসা ও ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী, খাওয়ার উপযোগী পানিতে ভারী ধাতু সিসার গ্রহণযোগ্য মাত্রা প্রতি লিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম (দশমিক শূন্য ১ মিলিগ্রাম) হলেও কর্ণফুলীতে পাওয়া গেছে ১৮ দশমিক ৩৪ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত। প্রতি লিটারে ৩ মাইক্রোগ্রাম সহনীয় মাত্রার বিপরীতে ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি মিলেছে সর্বোচ্চ ২৭ দশমিক ৪৫ মাইক্রোগ্রাম। এছাড়া আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা লিটারপ্রতি ১০ মাইক্রোগ্রামের বিপরীতে কর্ণফুলীর পানিতে পাওয়া গেছে ৪৬ থেকে ১১২ দশমিক ৪৩ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত। এর প্রভাব পড়ছে এখানকার জলজপ্রাণীর ওপর। কর্ণফুলীতে চাপিলা মাছে ৭ দশমিক ১৭ পিপিএম সিসার উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা।

কর্ণফুলী দূষণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে শিল্পবর্জ্য। শনিবার কর্ণফুলী নদীর শহর অংশের বিভিন্ন খালের মুখসংলগ্ন এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন অনুনমোদিত প্লাস্টিক কারখানা থেকে ছেড়ে দেয়া বর্জ্য চাক্তাই খাল হয়ে নদীতে মিশছে। খালটি দিয়ে চট্টগ্রাম শহরের প্রায় সব ধরনের তরল বর্জ্যও মিশছে এখানে।

স্থানীয়রা জানান, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে চারশর মতো শিল্প-কারখানা থাকলেও শুধু কর্ণফুলী উপজেলায় রয়েছে প্রায় আড়াইশ। কিন্তু অধিকাংশ কারখানারই ইটিপি না থাকায় গভীর রাতে কিংবা নদীসংলগ্ন খালের নিচের অংশে পাইপ লাগিয়ে তরল বর্জ্য নদীতে ছেড়ে দেয়া হয়। কর্ণফুলী উপজেলার একাধিক খালের পানির উপরের অংশে তেলের স্তরও দেখা যায়।

কর্ণফুলী নদীর দূষণের বিষয়টি উঠে এসেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনেও। কর্ণফুলী দূষণের বিভিন্ন কারণও চিহ্নিত করেছে অধিদপ্তর। তারা বলছে, ডায়িং, ওয়াশিং, ট্যানারি ও পেপার মিলের তরল বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই কর্ণফুলীতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের কঠিন বর্জ্যের ব্যবস্থাপনাও পরিবেশসম্মতভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। জাহাজের তরল বর্জ্যও কর্ণফুলীর দূষণ ঘটাচ্ছে। নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ছে ফার্নেস অয়েল ও তেল পরিবহনকারী জাহাজের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে।

কর্ণফুলী দূষণের জন্য বিদ্যুেকন্দ্রগুলোকেও দায়ী করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিদ্যমান বিদ্যুেকন্দ্রগুলোয় যথাযথ অয়েল ওয়াটার সেপারেটর নেই এবং কার্যকরভাবে এগুলো পরিচালিত হচ্ছে না।

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আলতাফ হোসেন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, কর্ণফুলী দূষণের বিষয়ে আমরা চিন্তিত। শিল্প-কারখানায় ইটিপি থাকলেও অধিকাংশ সময়ই তা অকার্যকর থাকে। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে জরিমানা ছাড়াও পরিবেশ আইনে মামলা পর্যন্ত করেছি। শুধু পরিবেশ অধিদপ্তর নয়, কর্ণফুলী বাঁচাতে হলে সামগ্রিকভাবে উদ্যোগ প্রয়োজন।

রূপসা: শিল্পনগরী খুলনার নদীগুলোর অন্যতম রূপসা। নদীটির দুই তীরঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্প-কারখানা। এসব শিল্পের মধ্যে আছে— হিমায়িত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, লবণ ফ্যাক্টরি ও ডকইয়ার্ড। ইটভাটা, চালকল, অক্সিজেন কারখানা ও বেসরকারি জুট মিলও রয়েছে নদীটির দুই পাড়ে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তরল ও কঠিন বর্জ্য ক্রমাগত দূষিত করছে রূপসার পানি।

গবেষণার তথ্য বলছে, নগরীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত রূপসার পানিতে অন্যান্য ভারী ধাতুর উপস্থিতি সহনীয় মাত্রায় থাকলেও সীমা ছাড়িয়েছে লৌহ। নদীর পানিতে লৌহের উপস্থিতি পাওয়া গেছে প্রতি লিটারে দশমিক ৩ মিলিগ্রামের বেশি, যা সহনীয় মাত্রার উপরে। সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত এ ভারী ধাতুতে জলজপ্রাণী, বিশেষ করে মাছও দূষিত হচ্ছে, মানবস্বাস্থ্যের জন্যও যা হুমকি তৈরি করছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল হক বলেন, কল-কারখানার বর্জ্যে রূপসার পানিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি বাড়ছে। দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রাও কমে যাচ্ছে। নদীর তলদেশে মারাত্মক অক্সিজেন ঘাটতির কারণে জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।

তবে রূপসার পানিতে দূষণের মাত্রা তুলনামূলক কম বলে দাবি করছেন পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার কেমিস্ট শাখার কর্মকর্তা সৈয়দ আহমদ কবির। তিনি বলেন, নদীর প্রতি লিটার পানিতে সাড়ে ৪ মিলিগ্রামের উপরে দ্রবীভূত অক্সিজেন থাকতে হয়। রূপসায় জুন-জুলাইয়ে ৬-৭ মিলিগ্রাম পর্যন্ত অক্সিজেনের মাত্রা থাকে। পানিপ্রবাহ কমে গেলে দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়।

করতোয়া: বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর ও শেরপুরসহ চারটি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে করতোয়া নদী। শহরের বেশির ভাগ ড্রেনেজের সংযোগ করতোয়ার সঙ্গে। এ ড্রেন দিয়ে বিভিন্ন বর্জ্যের পাশাপাশি বিসিক শিল্পনগরীর বর্জ্যও পড়ছে করতোয়ার পানিতে। এতে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি।

নমুনা পরীক্ষায় করতোয়ার পানিতেও সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। সাতটি ভারী ধাতুর মধ্যে করতোয়ায় সবচেয়ে বেশি মাত্রায় রয়েছে লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ। নদীটির পানির নমুনা পরীক্ষা করে ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি পাওয়া গেছে প্রতি লিটারে দশমিক ৩২ মিলিগ্রাম পর্যন্ত। যদিও পানযোগ্য পানিতে ম্যাঙ্গানিজের সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটারে দশমিক ১ মিলিগ্রাম। আর সেচকাজে ব্যবহূত পানিতে ম্যাঙ্গানিজের গ্রহণযোগ্য মাত্রা ধরা হয় প্রতি লিটারে দশমিক ২ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ দুই বিবেচনায়ই করতোয়ার পানিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করেছে।

মেঘনা: অপরিকল্পিত শিল্পায়নের শিকার দেশের অন্যতম বড় নদী মেঘনাও। মেঘনার পানি, তলদেশের মাটি ও মাছে সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা ও দস্তার উপস্থিতি রয়েছে নদীটির ১৫ ধরনের মাছে। এ নদীর পানিতে ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও দস্তার পরিমাণ নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম থাকলেও লৌহের উপস্থিতি রয়েছে গ্রহণযোগ্য মাত্রার অনেক উপরে, প্রতি লিটারে ১৪৭ মিলিগ্রাম পর্যন্ত। মেঘনার তলদেশ অতিমাত্রায় দূষণের জন্য দায়ী নিকেল।

বালু নদ: পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও শিল্প-কারখানার বর্জ্যে দূষণের শিকার রাজধানীর পার্শ্ববর্তী বালু নদ। পরিশোধন ছাড়াই শিল্প-কারখানার বর্জ্য ফেলার কারণে মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়ছে এ নদীর পানি। গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বালু নদের পানিতে ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, নিকেল, সিসা ও দস্তার উপস্থিতি পাওয়া গেছে বেশি।

তুরাগ: ভয়াবহ দূষণের শিকার ঢাকার পার্শ্ববর্তী তুরাগ নদ। টঙ্গী পৌরসভা ও শিল্প এলাকার পয়োনিষ্কাশন ও শিল্পবর্জ্যের কারণে নদটি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। এরই মধ্যে নদের পানি কালো রঙ ধারণ করেছে। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনও শূন্যে নেমে এসেছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারী ধাতুর দূষণ। তুরাগের পানিতে ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ ও ক্যাডমিয়ামের মাত্রা আগেই সহনীয় সীমা ছাড়িয়েছে। ক্রোমিয়াম ও দস্তার উপস্থিতিও বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে। তবে সহনীয় মাত্রায় আছে সিসা ও ক্যাডমিয়াম।

বুড়িগঙ্গা: দূষণে সব নদীকে ছাড়িয়ে গছে বুড়িগঙ্গা। শিল্পবর্জ্য ও কীটনাশকের কারণে নদীটির মাছ, পানি দূষিত হচ্ছে। সবচেয়ে সাধারণ দূষণ হলো ধাতু দূষণ। এ নদীর পানিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। এ মাত্রা আন্তর্জাতিক মান তো বটেই, স্থানীয় মানমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এ নদীর পানি, মাছ কোনোটাই মানবস্বাস্থ্যের অনুকূলে নেই।

শীতলক্ষ্যা: বুড়িগঙ্গার পরই সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার শীতলক্ষ্যা। অনেক শিল্প-কারখানার অবস্থান রাজধানী ঢাকার উত্তর-পশ্চিমের এ নদীর তীরে। বুড়িগঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ততা ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ নদীতে অতিমাত্রায় ভারী ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়ে উচ্চমাত্রায় অ্যালুমিনিয়াম, ক্যাডমিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া গেছে শীতলক্ষ্যায়। সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত ক্রোমিয়াম, নিকেল, সিসা ও দস্তার উপস্থিতিও পাওয়া গেছে নদীটিতে।

খিরু নদী: শিল্পবর্জ্যের কারণে দূষিত হচ্ছে ময়মনসিংহের খিরু নদী। এর পানিতে ক্যাডমিয়াম, পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। নদীর তলদেশে ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

বংশী: অপরিশোধিত বর্জ্য পানির কারণে ক্রমাগত দূষিত হচ্ছে বংশী নদী। নদীর পানিতে ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যাডমিয়ামের পরিমাণ পাওয়া গেছে নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি মাত্রায়।

অপরিশোধিত শিল্পবর্জ্যকেই এ ধরনের দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অরুন চন্দ্র মহোত্তম। তিনি বলেন, শিল্প-কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য রাজধানীর আশপাশের নদীগুলো দূষণের জন্য অনেকাংশে দায়ী। রাজধানীর বাইরে দেশের অন্য যেসব এলাকায় শিল্প-কারখানা রয়েছে, যেসব এলাকার নদীও একই কারণে দূষিত হতে পারে।

  • http://bonikbarta.net/জানুয়ারি ২৫, ২০১৮

ক্যাম্পাসে এ কার ছবি!


রেজানুর রহমান



ছবিগুলোর দিকে তাকাতে পারছি না। লজ্জার পাশাপাশি উদ্বেগ, উত্তেজনাও ভর করেছে। ছবি এত বীভৎস হয়! ছবি এত লজ্জাতুর হয়? ছবি এত অশ্লীল হয়? এগুলো কার ছবি? আমার আপনার আমাদের ছেলে-মেয়েদেরই ছবি। ওদেরকে পড়তে পাঠিয়েছি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কোথায় ওদের সাফল্যের ছবি দেখব, পরীক্ষায় ভালো করেছে তার ছবি, খেলাধুলায় মেডেল জিতেছে তার ছবি, গান গেয়ে-অভিনয় করে সাফল্যের স্বীকৃতি পেয়েছে তার ছবি দেখার অপেক্ষায় সারাক্ষণ উম্মুখ থাকব—অথচ কি সব বীভৎস ছবি দেখলাম দেশের প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে, টিভি চ্যানেলে! আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তো এসব ছবি প্রদর্শনের রীতিমতো একটা প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। এক্সক্লুসিভের নামে কে কতটা খোলামেলা, রগরগে ছবি দেখাতে পারে তার প্রতিযোগিতা। এখানে একটা যুক্তি উঠতেই পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পড়াশোনা বাদ দিয়ে আপনি চুলের মুঠি ধরে অশ্লীল লড়াই করবেন আর আমি ছবি তুলব না, তা তো হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় হলো পড়াশোনার জায়গা। চুলের মুঠি ধরে অশ্লীল লড়াই করার জায়গা তো নয়...!

লড়াইয়ের সঙ্গে অশ্লীল শব্দটা জুড়ে দিয়ে একটু যেন চমকে গেলাম। লড়াইও অশ্লীল হয়? হ্যাঁ, হয়ই তো। ২৪ জানুয়ারি দেশের প্রায় প্রতিটি দৈনিক পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার ওপর যত ছবি প্রকাশ হয়েছে তার সবই অশ্লীল লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি। যেমন কালের কণ্ঠে যে ছবিটি ছাপা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে একদল ছাত্র নারকীয় কায়দায় মারধর করছে প্রতিপক্ষের একজন ছাত্রনেতাকে। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার একপর্যায়ে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা লিটন নন্দীকে বেধড়ক মারধর করা হয়’। দৈনিক প্রথম আলোয় দুটি ছবি ছাপা হয়েছে। একটিতে দেখা যাচ্ছে, তিন-চারজন ছাত্রী অন্য এক ছাত্রীর চুলের মুঠি ধরে নারকীয় ভঙ্গিতে টানছে। এই ছবির নিচে ক্যাপশন লেখা হয়েছে—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নিপীড়নের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা। মানবজমিনে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একজন ছাত্রকে উপর্যুপরি লাথি মারছে ২০-২৫ জন ছাত্র। বাংলাদেশ প্রতিদিনের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। উপাচার্যের কক্ষের গেট ভাঙছে উত্তেজিত ছাত্ররা। সমকালের তিনটি ছবির নিচে ক্যাপশন লেখা হয়েছে—‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরোধ করতে গিয়ে তাঁর কার্যালয়ের গেট ভেঙে ফেলে শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের ব্যাপক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।’ যুগান্তরের একটি ছবিতে দেখা যায়, এক ছাত্রীর শরীরে ফিল্মি স্টাইলে লাথি মারছে একজন ছাত্র। নিচে ক্যাপশন লেখা—ঢাবিতে যৌন নিপীড়নকারীদের বিরুদ্ধে  আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা। ইত্তেফাকে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, এক ছাত্রীর ওপর রড উঁচিয়ে ভয় দেখাচ্ছে কয়েকজন তরুণ। নিচে ক্যাপশন লেখা, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবরুদ্ধ উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে উদ্ধারে গিয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর রড হাতে চড়াও হয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা’। ডেইলি স্টারে প্রকাশিত চারটি ছবির একটিতে দেখা যাচ্ছে, একজন ছাত্রীর মাথার চুলের মুঠি ধরে টানছে একজন ছাত্র। তাকে সহায়তা করছে অন্য একজন ছাত্রী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ছবিটির ক্লক ওয়াইজ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ওই ছাত্রীকে নারকীয় কায়দায় মারধর করছে দুজন ছাত্রী। আক্রান্ত ছাত্রীর শরীর থেকে ওড়না খসে পড়েছে। অপর ছবিটি শুধু নারকীয়ই নয়, চরম অশ্লীলও বটে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আগের নিরীহ ছাত্রীটিকে চুলের মুঠি ধরে টানছে একজন ছাত্রী। তার পাশে দাঁড়ানো বেশ কয়েকজন ছাত্র। আক্রান্ত ছাত্রী প্রাণপণে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। ফলে তার শরীরের পোশাক বেসামাল হয়ে উঠেছে। পরের ছবিটি আরো মারাত্মক। আক্রান্ত অসহায় ছাত্রীটি বুকে ওড়না চেপে তার সম্ভ্রম ঢাকতে গিয়ে অঝোরে কাঁদছে। তার পাশেই দাঁড়িয়ে একজন আলোকচিত্রী তার অসহায় পরিস্থিতির ছবি তুলছে। পরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এতক্ষণ যারা মেয়েটির ওপর চড়াও হয়েছিল তারাই আবার মেয়েটির ওড়না ধরে টান দিচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন ছাত্র।

শেষের ছবিটির দিকে তাকাতে পারছিলাম না। ছবিতে অসহায় মেয়েটি বুকে ওড়না চেপে তার আব্রু ঢাকার চেষ্টা করছে। অথচ তার ওড়না টেনে নিচ্ছে একজন মেয়ে। এই মেয়েটির চেহারা অনেক সুন্দর। দেখতে পরির মতো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই এই ছবিটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। একজন সাংবাদিক লিখেছেন, ‘হঠাৎই বিশ্বজিতের ছবিটি মনে পড়ল। এভাবেই না চারপাশ ঘিরে ধরে মৃত্যু এসেছিল। সে মৃত্যুও আমাদের অপরাধী করেনি। হামলাকারী মেয়েটি সম্পর্কে একজন মন্তব্যে লিখেছেন, ‘সুন্দর চেহারার মেয়ে অথচ কি বীভৎস রূপ...’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যা ঘটছে তাকে বীভৎস রূপের সঙ্গেই তুলনা করা চলে। জানি না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকার এ ব্যাপারে কী ভাবছে। তবে কিছু সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছি। তেজগাঁও নাবিস্কো মোড়ের একটি পত্রিকা বিক্রির দোকানে বেশ ভিড়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনার খবরের ওপরই সবার চোখ। নানাজন নানা মন্তব্য করছে। পত্রিকায় একটি মেয়ের ওড়না টেনে ধরার ছবি দেখে একজন মন্তব্য করল—হ্যারা দেখি মাইয়াগো বুকের ওড়না ধইর‍্যা টানাটানি করে! হ্যারা কি তাইলে লেহাপড়া করে না? অন্য একজন একটা অশ্লীল মন্তব্য করল। তার মন্তব্য শুনে কান চেপে ধরলাম। লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছি না। ছি: ছি: কী লজ্জা... 

  • লেখক : কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার; সম্পাদক, আনন্দ আলো



Tk 6,06,503 crore outstanding loans - Muhith tells JS

Satff Correspondent 



Finance minister AMA Muhith on Wednesday told Jatiya Sangsad that the amount of outstanding loan stood at Tk 6,06,503 crore while the amount of loan defaults stood at Tk 65,602 crore in last ten years.

‘A total of 91 banks and financial institutions provided Tk 6,06,503 crore loan to 8,791 individuals and institutions. Of them, the number of loan defaulters is 1,956,’ he said while placing a list in the JS.

At least Tk 10 crore was given to each 8,791 individuals or institutions in the last 10 years, he said, adding that the list has been prepared by the Credit Information Bureau database of Bangladesh Bank as of November 2017.

Acknowledging the weaknesses in banking sector, the finance minister said that it would take time to get rid of the flaws.



‘There are many weaknesses in banking sector and the government has been trying to get rid of it. But it will not be easy to settle the problem... it will take time,’ he said while responding to lawmaker’s queries.

The list containing the names of all the defaulters also shows that the amount of classified loans stood at Tk 72,050 crore.

Muhith in the list mentioned names of all 1,956 individuals and institutions that became top loan defaulters.
  • Courtesy: New Age Jan 25, 2018


Attackers indeed from BCL

Staff Correspondent



Act like VC's 'law-enforcers' at DU; CU too witnesses BCL excesses; student alliance calls strike for Jan 29 in all educational institutions

Bangladesh Chhatra League has apparently assumed the role of law-enforcement agencies on the Dhaka University campus, as two recent incidents suggest.

Usually, members of the proctorial team or police are entrusted with maintaining campus security, but the current administration seems to be counting more on the activists of the pro-Awami League student body for the job.



In case of the two latest incidents, the authorities did not call the police, and BCL men foiled the students' protests, harassed female students and beat up demonstrators at will, students alleged.

On Tuesday, several hundred BCL men from the DU as well as from outside attacked a group of students and leaders and workers of left-leaning student organisations to "rescue" DU Vice Chancellor Prof Akhtaruzzaman, who was kept confined in front of his office by the protestors. At least 50 male and female students and two journalists were injured in the attack.

The students were demonstrating to press home their four-point demand, including punishment of the BCL men who harassed some female students a few days ago.

Earlier on January 15, BCL men foiled another demonstration on the campus, harassed female students and beat up the protest coordinator, before handing him over to the authorities. On that day, demonstrators were staging a sit-in before the VC's office demanding cancellation of the affiliation of seven colleges with the DU.

DU called BCL men


Sources at the proctor's office said that the DU authorities called in the BCL men on both occasions. Both the DU authorities and the BCL denied the claim.

On Tuesday, more than 100 demonstrators -- comprising leftist student leaders and general students -- besieged the VC's office after breaking down three gates -- the main entrance of the Registrar Building and two more inside. The VC was holding a meeting inside.



“Normally, the gates remain open. But the authorities locked all the gates preventing us from meeting the VC. So we broke them to place our demands,” said Tuhin Kanti Das, DU unit president of Chhatra Union.

However, at one point, BCL men led by its General Secretary SM Jakir Hossain and its DU unit President Abid Al Hasan swung into action to escort the VC away, punching, slapping, kicking and beating up students and leftist leaders with iron rods, witnesses and victims said.

The BCL denied the claim, saying it was the BCL men who came under an attack by "outsiders" and "Chhatra Dal activists". But photographs published in newspapers and video footage aired on TV channels tell a different story. 

They show BCL leaders and activists, including Assistant Secretary of central unit Ashraful Alam, Office Affairs Secretary of Bangabandhu Hall unit Sadikur Rahman and its Vice-president Mehedi Hasan Shanto and Publication Affairs Secretary Saidur Rahman Shanto of the same unit, Mohsin Hall BCL activist Elahi hasan, Organising Secretary Abu Said and activist Md Sajjad of Ziaur Rahman Hall unit beating up the protestors with iron rods and sticks.



They also show female Chhatra League leaders including Fazilatunnesa Mujib Hall unit President Benjeer Hossain Nishi, Ruqiayyah Hall unit President BM Lipi Akter, Kuwait Moitri Hall unit President BM Farida Parvin and General Secretary Srabony Shaila were seen beating up female students and tearing up their dresses.

BCL’s counter claim


However, the female BCL leaders claimed that the protestors assaulted them and that they took treatment at the DU Medical Centre. They also posted photos of “taking treatment” on Facebook and demanded punishment of those “who attacked them and the VC”.

In fact, there was no attack on the VC, although the protestors had a long, heated argument with him over their demands. Interestingly, although the BCL leaders admitted that they were present at the scene, DU Proctor Prof AKM Golam Rabbani yesterday (Wednesday) claimed that no BCL activists were there.

Asked if he called in the BCL men, he told reporters at the VC's office that they were not in a situation to call anyone. Asked how the BCL activists then came to “rescue” them, he said, "I have already given you my reply."



In a press release on Tuesday night, the university authorities said that some agitating students of the university and some outsiders launched a pre-planned attack in the name of demonstration. The release made no mention of the BCL attack on the protestors.

Contacted, BCL's DU unit President Abid Al Hasan yesterday (Wednesday) claimed they went to the VC's office on information from general students. "Rescuing the VC was our moral duty."

BCL attacked CU & Sylhet MC College


Meanwhile, amid criticism over the Tuesday's attack, BCL men carried out similar attacks at Chittagong University and MC College in Sylhet yesterday, injuring nearly 30 students.

In another development, Pragatisheel Chhatra Jote, an alliance of left leaning student organisations, yesterday (Wednesday) called for a strike at all educational institutions across the country on January 29, protesting Tuesday's incident.

They will hold a rally at the base of Raju Sculpture at the DU on January 26 and a nationwide demonstration on January 28, said Imran Habib, coordinator of the alliance.

General students under the banner of "Students against repression" at another press conference placed a five-point demand, including a fair investigation into the attack.

BCL leaders and activists under the banner of "Shacheton Shadharan Shikhkharthibrinda" too staged a sit-in in front of VC's office around noon yesterday (Wednesday), demanding punishment of those who "attacked the VC and assaulted their female leaders".

'Criminals from outside':DUTA


In a press release, Dhaka University Teachers' Association expressed concern over the “unwanted” incident before the VC's office.

The Association does not believe DU students can commit acts like vandalism and destruction of university properties and misbehaving with teachers, officials and employees and attempting to attack the VC, it said.



“It appears that it was an attempt by criminals from outside to create unrest on the camps and thus create instability in the country ahead of the election as part of a conspiracy by a vested quarter,” it said.
  • Courtesy: The Daily Star, Jan 25, 2018

BCL gets even more reckless in govt's final year

Partha Pratim Bhattacharjee



Chhatra League is working to ensure atmosphere conducive to education at the colleges and universities across the country, wrote its General Secretary SM Jakir Hossain in a newspaper article published on January 4, marking the student body's 70th founding anniversary.

But his nice words are not backed up by his actions. Jakir led the attack on the demonstrating Dhaka University students on Tuesday that left at least 50 injured.


On January 15, Chhatra League men assaulted a group of students staging a sit-in in front of the DU vice-chancellor office, demanding cancellation of affiliation of seven colleges with DU. They also harassed some female students who were demonstrating.

Chhatra League made the attack on Tuesday when the students were protesting in front of the VC's office demanding, among others, expulsion of the Chhatra League men who had attacked them on January 15.



Chhatra League men being violent is not something new. They have been engaged in numerous violent acts that earned the student organisation a bad name. Intra-party clashes, vandalism and murders have tarnished the image of the pro-AL student body.



The Chhatra League men started to draw widespread condemnation for their unruly behaviour immediately after AL assumed power in 2009. This made Prime Minister Sheikh Hasina so annoyed that she resigned from the post of its organisational leader in April that year.

And now at the final year of this government's tenure, the Chhatra League men are behaving as badly, embarrassing the Awami League. Some AL leaders think it might impact the national elections to be held this year.

Talking to The Daily Star, at least three AL central leaders said initiative should be taken immediately to prevent Chhatra League men from such unruly activities. The AL leaders said if stern actions had been taken from the beginning, things would not have been so bad.

Talking about Tuesday's incident with reporters at a programme in the city, AL General Secretary Obaidul Quader said the university should take action if the leaders and workers of Chhatra League were found guilty.

While talking to The Daily Star, AL Organising Secretary AKM Enamul Haque Shamim said, “As a former president, I will advise Chhatra League president and general secretary to be stricter in bringing discipline in the organisation.”

The Daily Star called the president and general secretary Saifur Rahman Sohag and Jakir Hossain over the phones but none of them picked up.

Chhatra League started the year with a good decision. It had decided not to bring out processions in the capital on its anniversary day on January 4 considering that people would suffer in traffic jams. They held their celebrations in the following weekend, January 6.

But the festivities were marred by factional clashes in Chittagong University, Nuria High School in Barisal city and Murari Chand (MC) College in Sylhet. At least 11 people were injured.

A day after the clash in MC collage, Chhatra League activist, Tanim Khan, 21, a BA (pass) final year student of Sylhet Government College, was stabbed to death allegedly by his rivals within the organisation.

Chhatra League again grabbed the headlines after a female student of Bangladesh Agricultural University (BAU) in Mymensingh was forced out of her dorm for not joining Chhatra League's anniversary procession.

Numerous incidents reported by the media suggest that making money and establishing dominance in campuses and cities have been the root causes of almost all the incidents of violence. To restore some order in the student body, Obaidul Quader even offered them jobs and money but it proved to be inadequate.

There were at least 125 deaths over the last eight years due to Chhatra League activists' misdeeds. The victims include 60 Chhatra League leaders and activists killed in internal clashes. At least 11 Chhatra League men died in clashes with rival organisations and the rest 54 were children and common people.

According to rights organisation Ain O Salish Kendra (ASK), seven people were killed and 374 were injured in 49 clashes involving Chhatra League last year. Twenty-nine of the clashes were results of Chhatra League infighting which left five dead.
  • Courtesy: The Daily Star/Jan 25, 2018

সন্তানশোক! কিছুই আসে যায় না!!

জাতির বিবেক 
 ———



বুধবার, জানুয়ারি ২৪, শহিদ জিয়া ও বেগম জিয়ার দ্বিতীয় পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী । স্নেহময়ী জননীর কাছ থেকে দূরে নির্বান্ধব  বিজন প্রবাসে অসহায় অবস্থায় এ পৃথিবী ছেড়ে যান তিনি। সেদিন বন্দিবৎ মাতার আর করার কিছুই ছিল না। চোখের পানির ধারায়  দূরের ছোট ছেলের জন্য আল্লাহর দরবারে ‌‌মোনাজাত ছাড়া আর কীই বা করার ছিল! ‌কিন্তু না তাকে তা করতে দেবেন না কর্তৃপক্ষ। আজ যখন ঘুরে ফিরে এসে‌ছে সেই মর্মান্তিক দিন, সেদিন মাকে যেতে হবে আদালতের কাঠগড়ায় যে আদালত গড়ে দেওয়া হয়েছে শুধুই একটি দল ও তাদের নেতাদে‌র জন্য। 

বিচার এই মাকে পেতেই হবে। দ্রুত। সন্তানশোক! কিছুই আসে যায় না।

আবেগের স্নেহ-শোক কী মাতায় মাতায় এতো ‌যোজন দূরের ফারাক হতে পারে! আরেক মাতা সেদিন সন্তানকে স্নেহ দেবার জন্য মায়ামিতে গিয়েছিলেন বলেছিলেন সগৌরবে, 'দেশে ছিলাম না,  আমি তো মাতৃস্নেহ দিচ্ছিলাম।' তখন তিনি রাষ্ট্রভারমূক্ত  স্নেহময়ী জননী ছিলেন, মাতামহী ছিলেন, ছিলেন ভাবনাহীন, ভারবিহীন  ডুবে যাক তরী ভেসে যাক প্রাণ।

কিন্ত এই মাতার বিচারপ্রপ্তি  বিলম্বিত করা যায় না। তাই মরহুম পুত্রের জন্য শোককে বরদাস্ত করা যায়  কি করে!  

Wednesday, January 24, 2018

ডাকসু নির্বাচন বানচাল করতেই ছাত্রলীগ হামলা করেছে - ছাত্রজোট




ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন বানচাল করতে ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।

বুধবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট নেতারা।

জোটের শরিক সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন বলেন, আদালত ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করার রায় দিয়েছেন। সেই নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যেই গতকাল মঙ্গলবার হামলা চালানো হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।

গত ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে রায় দেন। এ রায়ের এক সপ্তাহের মাথায় মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর সমর্থনে ‘নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে গড়ে ওঠা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

এদিন দুপুর থেকে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে নিজ কার্যালয়ে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন।

একপর্যায়ে উপাচার্যকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে ছাত্রলীগ। তারা কয়েক দফা হামলা চালিয়ে আন্দোলনকারীদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন।

এ হামলায় অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র মাসুদ আল মাহাদী, ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের প্রগতি বর্মণ।
  • Courtesy: Shirshanews.com Jan 24, 2018

বছরের শুরুতেই সুদহার বাড়াচ্ছে সব বেসরকারি ব্যাংক

হাছান আদনান




চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। কিন্তু নভেম্বরেই তা ১৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে। ডিসেম্বরের ঋণ যোগ করলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই (জুলাই-ডিসেম্বর) বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। সে তুলনায় আমানত বাড়াতে না পারায় তারল্য সংকটে পড়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করতে গিয়ে তাই ঋণের সুদহারও বাড়িয়ে দিচ্ছে এসব ব্যাংক।

জানা গেছে, বছরের শুরু থেকেই বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার বাড়িয়ে গ্রাহকদের চিঠি দিচ্ছে। কৃষিঋণের সুদহার এরই মধ্যে ১২ শতাংশের ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছে অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এসএমই ঋণের সুদহার। কোনো কোনো বেসরকারি ব্যাংক এসএমই ঋণের সুদহার ২০ শতাংশ পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ফেনী শহর শাখা থেকে ৪৫ লাখ টাকার কৃৃষিঋণ নিয়েছিলেন মোহাম্মদ ইউসুফ। ফাওজান মত্স্য খামারের নামে নেয়া এ ঋণের সুদহার ছিল ৯ শতাংশ। নতুন বছরের শুরুতেই সুদহার ১৩ শতাংশ নির্ধারণ করে গ্রাহককে চিঠি দিয়েছে ব্যাংকটি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, কৃষিঋণের ক্ষেত্রে ৯ শতাংশের বেশি সুদ আদায়ের সুযোগ নেই।

বেসরকারি ব্যাংকের এমডিরা বলছেন, দীর্ঘ স্থবিরতার পর গত ছয় মাসে বেসরকারি ব্যাংকগুলো অস্বাভাবিক হারে ঋণ বিতরণ করেছে। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশে ঠেকেছে। আমানতের প্রবৃদ্ধি না বাড়ায় তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আমানত সংগ্রহে এর সুদহার ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়েছে। আর বেশি সুদে আমানত সংগ্রহের কারণে ঋণের সুদহারও বাড়াতে হচ্ছে।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেন, বাজারের পরিস্থিতিই আমানত ও ঋণের সুদহার বাড়াতে মূল ভূমিকা রাখছে। আমানতের জন্য ৮ শতাংশ সুদ পরিশোধ করতে হলে ১০ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া যায় না। এজন্য ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি শ্লথ। কয়েক বছর ধরেই রেমিট্যান্সপ্রবাহ নিম্নমুখী। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলো খাদ্য ও মূলধনি যন্ত্রপাতির বিপুল এলসি খুলেছে। আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে এলসিগুলো নিষ্পন্ন হলে সঙ্গে সঙ্গে টাকা পরিশোধ করে দিতে হবে। এ অবস্থায় ব্যাংকঋণের প্রবৃদ্ধি আরো বাড়বে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকটের তথ্য দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ৫৭টি তফসিলি ব্যাংকের হাতে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ৯২ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকেরই ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকার মতো অতিরিক্ত তারল্য। বাকি টাকার মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর হাতে ছিল প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু পরবর্তী তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ সেভাবে না বাড়লেও অস্বাভাবিক বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ। ফলে নগদ টাকার তীব্র সংকটে পড়তে হয়েছে ব্যাংকগুলোকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গত তিন বছরে ব্যাংকগুলো বাছবিচার ছাড়াই আমানতের সুদহার কমিয়েছে। কোনো কোনো বেসরকারি ব্যাংক আমানতের সুদহার ২ শতাংশেরও নিচে নামিয়ে এনেছিল। সে সময় আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির নিচে না নামানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক দফায় দফায় সার্কুলার জারিসহ বিভিন্নভাবে নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ব্যাংকই তা আমলে নেয়নি। ব্যাংকে টাকা রেখে কোনো লাভ না হওয়ায় মানুষ ব্যাংকবিমুখ হয়ে সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজারসহ ভিন্নমুখী বিনিয়োগ শুরু করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কর্মকাণ্ডেরই ফল।

বাস্তবতার নিরিখেই ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমাতে বাধ্য হয়েছিল বলে জানান এবিবির চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক মন্দার কারণে ব্যাংকগুলোয় অতিরিক্ত তারল্য সৃষ্টি হয়েছিল। আমানতের সুদহার কমিয়ে পরিচালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে না আনলে ব্যাংকগুলো টিকতে পারত না। গত তিন বছর ঋণের সুদহার ধীরে ধীরে কমানো হয়েছিল। বাজারের পরিস্থিতির বিচারেই আমানত ও ঋণের সুদহার ওঠানামা করে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণের সুদের হার বাড়ালেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এখন আগের সুদই আদায় করছে। হাতে পর্যাপ্ত তারল্য থাকায় সুদহার বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করছে না তারা। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ্ আল্ মাসুদ বলেন, এ মুহূর্তে দেশের অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংকের এডি রেশিও (আমানত ও ঋণ অনুপাত) ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণ করতে হলে অবশ্যই আমানত সংগ্রহ করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় অংকের আমানত সংগ্রহ করা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য দুরূহ। এজন্য সব বেসরকারি ব্যাংকের ভরসা এখন রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। প্রতিনিয়ত আমাদের কাছ থেকে আমানত নেয়ার জন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলো ভিড় বাড়াচ্ছে। আমরা চাচ্ছি, গ্রাহকরা ঋণের জন্য আমাদের কাছে আসুক। এজন্য সুদহার বাড়ানোর প্রয়োজন নেই আমাদের।

ব্যাংক সূত্রগুলো বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রায় ২০ শতাংশ হলেও কোনো কোনো বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। আগ্রাসী ব্যাংকিং হিসেবে চিহ্নিত করে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এরই মধ্যে ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও (ঋণ ও আমানতের অনুপাত) কমিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যদিও এডি রেশিও কমানোর বিরোধিতা করছেন বেসরকারি ব্যাংকের এমডিরা।
  • Courtesy: Banik Barta Jan 24, 2018