Search

Thursday, January 25, 2018

পরিবেশ সূচক ২০১৮ - তলানিতে বাংলাদেশ





বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিও সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। অনেক দেশই আবার এর উল্টোপথে চলছে। উন্নয়ন ও পরিবেশকে সমান গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এসব দেশের কাতারে আছে বাংলাদেশও। সম্প্রতি প্রকাশিত এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স (ইপিআই)-২০১৮তে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭৯তম। এ সূচকে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে থাকা বাংলাদেশের পরে আছে কেবল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ আফ্রিকার বুরুন্ডি।

যৌথভাবে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি ও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল আর্থ সায়েন্স ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক। প্রতি দুই বছর পর বৈশ্বিক এ সূচক প্রকাশ করা হয়। এর আগে সর্বশেষ প্রকাশিত ২০১৬ সালের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৮০ দেশের মধ্যে ৪১ দশমিক ৭৭ স্কোর নিয়ে ১৭৩। আর ২০১৪ সালের তালিকায় বিশ্বের ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৯। অর্থাৎ প্রতি বছরই তালিকায় বাংলাদেশের ধারাবাহিক অবনমন ঘটছে।

এবার তালিকার শীর্ষে রয়েছে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড। দেশটির স্কোর ৮৭ দশমিক ৪২। এ তালিকার শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলোও ইউরোপের। সুইজারল্যান্ডের পর শীর্ষে দশে রয়েছে যথাক্রমে ফ্রান্স, ডেনমার্ক, মাল্টা, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, লুক্সেমবার্গ, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকার অবস্থান সবচেয়ে ভালো। এবারের তালিকায় ৬০ দশমিক ৬১ স্কোর নিয়ে দেশটির অবস্থান ৭০তম। এছাড়া মালদ্বীপ ১১১, ভুটান ১৩১, আফগানিস্তান ১৬৮, পাকিস্তান ১৬৯, নেপাল ১৭৬ ও ভারত ১৭৭তম স্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এবার এগিয়েছে শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ। আর আগের চেয়ে পিছিয়েছে ভুটান, ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল।

ইপিআই সূচক তৈরিতে আটটি বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়— জনস্বাস্থ্যের ওপর দূষণের প্রভাব, বায়ুর মান, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন, পানিসম্পদ, কৃষি, বনায়ন, মত্স্যসম্পদ, জীববৈচিত্র্য ও বাসস্থান এবং আবহাওয়া ও জ্বালানি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কম স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত তালিকার নিচের দিকে অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে কম স্কোর পাওয়া দেশগুলোর জাতীয়ভাবে বেশকিছু ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে— বায়ুর মান উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমিয়ে আনা।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে রয়েছি আমরা। এর প্রতিফলন ঘটছে এ ধরনের সূচকে। মূলত অনিয়ন্ত্রিত লোভের কারণে পরিবেশের অঙ্গহানি ঘটছে। এজন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে।

গত ৫০ বছরে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়েছে। এক দশক আগেও গাজীপুরের মোট জমির প্রায় ১৪ শতাংশ জমি ছিল বনাঞ্চল, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ শতাংশে। দেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের অবস্থাও সংকটাপন্ন। উন্নয়ন ও দখলের উৎসবে গত চার দশকে এ বনভূমির ১২৭ বর্গকিলোমিটার নিশ্চিহ্ন হয়েছে। আর বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ায় বিলুপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। এক দশকে শুধু বাঘের সংখ্যা কমেছে তিন-চতুর্থাংশ।

দূষণের শিকার দেশের বিভিন্ন শহরের বায়ুও। নগরের বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠেছে সিসা আর সালফারে। আবার দখল আর দূষণে মৃতপ্রায় অবস্থায় পৌঁছেছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরের পার্শ্ববর্তী নদীগুলো। এক যুগের কিছু বেশি সময়ে ঢাকার চারদিকের নদীগুলোর ২৫০ একরের বেশি ভূমি দখল করা হয়েছে। আর ঢাকার ভেতরে সাড়ে তিন দশকে হারিয়ে গেছে ১০ হাজার হেক্টর বা ৫০ শতাংশের বেশি জলাভূমি, খাল ও নিম্নাঞ্চল। আর তাতে গড়ে উঠছে সড়ক, অবকাঠামোসহ নানা স্থাপনা।

  • বনিক বার্তা/ জানুয়ারী ২৫

No comments:

Post a Comment