Search

Tuesday, January 30, 2018

অ-নীতির হোতা টিভিতে নৈতিক বিশ্লেষক


- উৎসুক জনতা


বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের আমলের অন্যতম প্রচারক ও প্রোপাগ্যান্ডা বিশারদ মনজুরুল আহসান বুলবুল  একজন  রাতারাতি হয়ে ওঠা  মিডিয়া মুঘল  আর গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদ। টিভিতে নানা নীতি কথা বলেন, সংবাদ বিশ্লেষণ করেন। কে ভুল বললো, কে মিথ্যা বলল, কোনটা উচিত, কোনটা অনুচিত এইসব অমিয় বাণী যিনি টিভি চ্যনেলে  আওড়ান, তিনি নিজেই ট্রাফিক আইন ভংগ করে উল্টোপথে গাড়ি চালান। শুধু তাই নয়, কর্তব্যরত পুলিশকে গাড়ির কাগজপত্র দেখানোর প্রয়োজনও বোধ করেননি। তবে তিনি  পুলিশকে ধমক দিয়ে জানিয়ে  দিতে ভুল করেননি, তিনি দেখিয়ে দেবেন। ক্ষমতার প্রতাপে এ নিয়ে শেষ পর্যন্ত মামলাও হয়নি। কিন্তু এক উৎসাহী জনতার সাহসে ঘটনার কিছু অংশ লাইভ প্রচার হয় ফেসবুকে। বুলবুল থাবা দিয়ে ঐ মোবাইলসেটটি কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এইখানেই শেষ নয়, ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ না করে, বরং ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের পক্ষ্যে সাফাই গেয়েছে। 

ইন্টারনেট পোর্টাল প্রিয়.কম এ প্রকাশিত হয়েছে পুরো ঘটনা - 

রাজধানীতে উল্টোপথে গাড়ি চালানোয় নানা পেশার লোককে জরিমানা গুনতে হয়েছে, হচ্ছে। কয়েক মাস ধরে বিষয়টির ওপর বেশ জোর দেয়া হয়। তারপরও থেমে নেই উল্টোপথে চলা। এবার উল্টোপথে গাড়ি চালিয়ে ‘ধরা খেয়েছেন’ দুই সাংবাদিক নেতা। যদিও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার রেফারেন্সে তাদের নামে মামলা দেওয়া হয়নি। আবার উল্টোপথে যাওয়ায় গাড়ি আটকে দিয়ে কাগজপত্র চাওয়ায় পুলিশের ওই সার্জেন্টকে ধমক দিয়েছেন সাংবাদিক নেতাদ্বয়। ঘটনার একটি লাইভ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।

এ বিষয়ে ২২ জানুয়ারি, সোমবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক নেতা দুজন দাবি করেন, ‘পুলিশ অন্যায় করেছিল, এর প্রতিবাদ করেছেন তারা। অন্যায় করার কারণেই ধমক দিয়েছেন সার্জেন্টকে।’ আর সার্জেন্ট বলছেন, ‘উল্টোপথে যাওয়ার কারণেই গাড়ি আটকে কাগজপত্র চান তিনি।’

ঘটনাটি ঘটেছে ১৯ জানুয়ারি, শুক্রবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর বেইলি রোডের সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনে।

সাংবাদিক নেতা, সার্জেন্ট ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার অফিসার্স ক্লাব থেকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ও একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মনজুরুল আহসান বুলবুল এবং একই সংগঠনের মহাসচিব ওমর ফারুক প্রাইভেট কারে করে বেইলি রোড হয়ে উল্টোপথে ফিরছিলেন। তাদের গাড়ি সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনে এলে আটকে দেন দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক সার্জেন্ট। কাওসার হামিদ নামের ওই সার্জেন্টের সঙ্গে এ সময় তাদের কথা কাটাকাটি হয়।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, গাড়ি আটকে দেওয়ার পর মনজুরুল আহসান বুলবুল ও ওমর ফারুক দাঁড়িয়ে কথা বলছেন সার্জেন্ট কাওসার হামিদের সঙ্গে। এ সময় বুলবুল দাবি করেন, তিনি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে উল্টোপথে প্রবেশ করেছেন, ওনার কাছে প্রমাণ রয়েছে। সার্জেন্ট গাড়ির কাগজপত্র চাইলে তিনি তা দিতে চাননি।

ঘটনাটি সরাসরি ফেসবুকে লাইভ দেখাচ্ছিলেন মুনজারিন ইশতিয়াক নামের একজন বাইকার। একপর্যায়ে তার হাত থেকে মোবাইলটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন মনজুরুল আহসান বুলবুল। তিনি মোবাইল ছুঁতে না পারলেও পরে পুলিশ মোবাইল নিয়ে সব ভিডিও মুছে দেয় বলে দাবি করেন ইশতিয়াক। তবে ফেসবুকে সরাসরি লাইভ হওয়ায় ভিডিওটি থেকে গেছে।

ওই ভিডিও’র কথোপকথন নিচে তুলে ধরা হলো-

মনজুরুল আহসান বুলবুল : আপনার অফিসার যখন অ্যালাও করছে, তখন আমরা আসছি। উই হেভ দ্য ডকুমেন্টস। 
কাওসার হামিদ : আচ্ছা ডকুমেন্টস পরে দেখা যাবে।
মনজুরুল আহসান বুলবুল : আমরাও পরে দেখব আপনারটা। আপনারটা নিয়ে তো আইজিপির সঙ্গে কথা বলছি অলরেডি। উই উইল সি ইউ টুমরো। আমরা কালকে দেখব, আপনার দায়িত্বশীলের সঙ্গে কথা বলছি তো।
এ সময় সার্জেন্ট কাউকে ফোন দিয়ে অবহিত করেন, উল্টাপথে গাড়ি আসলে আটকানো হয়েছে এবং কাগজপত্র চাইলে দিচ্ছে না।
মঞ্জুরুল ইসলাম বুলবুল সার্জেন্টকে বলেন অফিসারকে ডাকার জন্য। বলেন, ‘আপনি আমাদেরকে অ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে যান।‘
কাওসার হামিদ : থানায় নিব না, আমি মামলা করব।
মনজুরুল আহসান বুলবুল : করেন না। মামলা করে অ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে যান।
কাওসার হামিদ : কাগজ কই আপনার?
মনজুরুল আহসান বুলবুল : কাগজ দিব কেন? কাগজ দিচ্ছি না আপনাকে।
এ সময় তিনি আবার বলেন, আপনার অফিসার আমাদের অ্যালাও করেছে। আপনি শুরু থেকে উল্টাপাল্টা আচরণ করছেন।
কাওসার হামিদ : আমি উল্টাপাল্টা কিছু করিনি। 
মনজুরুল আহসান বুলবুল : আমি অনেক বাজে ব্যবহার করেছেন। শুনেন আপনাদের পুলিশ স্টাফ কলেজে আমি স্টুডেন্ট পড়াই।
কাওসার হামিদ : এজন্য আপনার আইন সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা উচিত।
মনজুরুল আহসান বুলবুল : আপনি যে ব্যবহার করেছেন, সেটা তো ঠিক না।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মুনজারিন ইশতিয়াক প্রিয়.কমকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি ওইখানে উপস্থিত ছিলাম। পুলিশের সাথে ঝামেলা দেখে আমি আমার মোবাইলে এটা ফেসবুকে লাইভ করা শুরু করি। একপর্যায়ে তিনি আমার মোবাইল টানাটানি শুরু করেন। পরে আমার কাছে থেকে পুলিশ মোবাইল নিয়ে নেয় এবং সব ভিডিও ডিলিট করে দেয়। লাইভ যেটা করেছিলাম ওইটাই শুধু রয়েছে। মনজুরুল আহসান বুলবুল আমার কাছে থেকে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু আমি ফোন দিই নাই। ফোন পকেটে রেখেছিলাম। পরে পুলিশ নিয়ে সব ভিডিও ডিলেট করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উনি (মনজুরুল আহসান বুলবুলও) আমাকে জিজ্ঞাস করে আপানি কে? আমি বলেছি আমি সাধারণ নাগরিক। আপনারা উল্টোপথ দিয়ে এসেছেন আবার পুলিশকে ধমক দিচ্ছেন কেন? পরে পুলিশ আমাকে রক্ষা করেছে, আমার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে তাদের সামনে সব কিছু ডিলিট করেছে। এবং আমি সেখান থেকে সরি বলে চলে এসেছি। তিনি (মনজুরুল আহসান বুলবুলও) অনেকবার আইজিপি সাহেবকে ফোন দিয়েছিলেন, ট্রাফিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন দিয়েছিলেন, বাধ্য হয়ে ওই সার্জেন্ট তাদেরকে কোনো মামলা না করে যেতে দিয়েছে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী ও সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল ২২ জানুয়ারি, সোমবার সন্ধ্য়া ৭টায় প্রিয়.কমকে বলেন, ‘সে খারাপ আচরণ করেছে, তাকে ধমক দিয়েছি। এ সময় ওমর ফারুক ছিল। তাকে জিজ্ঞাস করলে সে সব বলতে পারবে।’

ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিক নেতা ওমর ফারুক প্রিয়.কমকে বলেন, ‘পুলিশ ওখানে কয়েকজন মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করছিল। একজন ভদ্র মহিলা ছিল, তার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিল। ওই দিন অফিসার্স ক্লাবের নির্বাচন ছিল, নির্বাচনের কারণে মগবাজারের দিকে যে সোজা রাস্তাটা, ওইটা পুরাটাই পার্কিং করা। রাস্তাটা বন্ধ থাকার কারণে যারা বেইলি রোডে থাকে, তারা কেউই যাইতে পারছিল না। তখন শান্তিনগর দিয়ে কর্ণফুলীর এখান থেকে গিয়ে ওয়ানওয়ে রোড দিয়ে যাই। যেহেতু রাত ১০টা বাজে ওয়ানওয়ে রোড ফ্রি হয়ে যায়। সবাই যাইতে আসতে পারে। এখন ওখান দিয়ে সবাই যাচ্ছে, আমাদের গাড়িটাও যাচ্ছিল। এক মহিলা যেতে চাইছে তাকে আটকাইছে, এই নিয়ে ঝামেলা চলছিল। এ সময় এক কনস্টেবল দেখাই দিছে আপনারা এই দিক দিয়ে যান, তখন আমার ড্রাইভার ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। কোথা থেকে এক সার্জেন্ট এসে আমার ড্রাইভারকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে ছিল। এ সময় আমি ধমক দিলাম, কেন আপনার কনস্টেবলই তো দেখাইয়া দিলো। সে কয়, না যাইতে পারবেন না। আরও জোরে গালাগালি দেওয়া শুরু করল। ওই সার্জেন্ট বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গেও প্রচুর উত্তেজিতভাবে কথা বলছিল। আমরা দুইজন এক গাড়িতেই ছিলাম। আমি তখন বের হয়ে এসে বললাম, এই মিয়া তুমি কার সাথে কী কথা বলো। সাবধানে কথা বলো। এরপর আমরা গাড়িটা একপাশে নিয়ে রাখলাম। রেখে আমরা ওখানে দাঁড়াইয়া পুলিশরে বললাম, মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার কেন করতেছ? এর দুই দিন আগেই আইজি বলছে পুলিশরে মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করার জন্য। তোমাদের আইজিপি বলে ভালো ব্যবহার করতে আর তুমি খারাপ ব্যবহার করো। এই কথা শুনে আরও রেগে গেছে। উল্টাপাল্টা কথা বলতাছে, এই আপনার কাছে শিখতে হবে এই সব।’

তিনি বলতে থাকেন, ‘তখন আইজিপিকে ফোন করছে বুলবুল ভাই। সার্জেন্ট করছে কি, ওদের কিছু সোর্স থাকে, কিছু গুণ্ডাপাণ্ডা থাকে, ওদের সাথে নিয়ে দাঁড়াইয়াছিল সার্জেন্ট। ওরাই আমাদের ছবি তুলছে, ভিডিও করছে। পুলিশ কোনো ছবি তোলে নাই। আমরা এটা খেয়াল করি নাই। যখনই আইজিপিকে ফোন করছে তখন সার্জেন্ট ওখান থেকে পালাইয়া গেছে। তখন এক কনস্টেবল বলল, স্যার আপনারা চলে যান। যখনই আবার গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে, সিদ্ধেশ্বরী কলেজের এখানে কিছু পুলিশ দাঁড়াইয়া ছিল। তখন ওই সার্জেন্ট আবার এখানে ওয়ারলেসে বলে দেয় ওই গাড়িটা আটকাও। তখন গাড়ি আটকানোর পরে আবার ওই সার্জেন্ট এসে বলে, আপনার গাড়ির কাগজ দেন। তখন ওখানে উপস্থিত অপর এক সাংবাদিক ট্রাফিকের ওপরের একজনকে ফোন দিয়ে আমার সাথে কথা বলায়। এরপর ওই সার্জেন্টের সাথে কথা হয়, তখন ওই সার্জেন্ট বলে আপনারা চলে যান। এরপর আমরা চলে আসি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সার্জেন্ট কাওসার হামিদ প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আমি ওনার পরিচয় জানতাম না। উনি উল্টো আসছিলেন। এ জন্য তার গাড়ি আটকিয়েছিলাম। পরে আমার ডিসি স্যারের রেফারেন্সে মামলা না দিয়েই ছেড়ে দিয়েছি।’

মনজুরুল আহসান বুলবুলের সঙ্গে যোগাযোগের এক ঘণ্টা পর ফেসবুকে তিনি এক স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি বলেন, ‘ভাইরাল হওয়া ছবিটি নিয়ে আমি বেশ খুশিই। পুলিশ বাহিনী তো আর খারাপ না, কিন্তু পুলিশের ইউনিফর্ম পরে, সিভিল মাস্তানকে নিয়ে, মানুষকে হয়রানি করে পুলিশের সম্মান যারা ধুলায় লুটায়, তার প্রতিবাদ তো করতেই হবে। খালি টকশোতে নীতিকথা বলবে আর রাজপথে চোখের সামনে অন্যায় হলে চুপ থাকবে তা তো হয় না। নামের পরিচিতি ছাড়া ইউনিফর্ম পরা পুলিশ আর তার ‘সিভিল কালেকটর’-এর ছবি এবং তাদের আচরণ রেকর্ড করা আছে। আছে দুই ভদ্র পুলিশেরও ছবি। পুলিশ চাইলে সব দিতে পারি, বিবরণও জানাতে পারি। যিনি ভাইরালটি ছড়িয়েছেন তাকে ধন্যবাদ, এ থেকে পুলিশের পোশাক পরা কারোর মাস্তানির প্রতিবাদ করার সাহস পেতে পারেন অনেকে।’

‘অন্যায় ও অসভ্যতার শক্ত প্রতিবাদে সেদিন সেই ইউনিফর্মধারী অসভ্যটি লেজ গুটাতে বাধ্য হয়। প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের দরকার হয় নাই’, বলেন তিনি।

  • প্রিয় সংবাদ/রিমন/আজাদ চৌধুরী


No comments:

Post a Comment