Search

Tuesday, January 16, 2018

নিজের শিক্ষককে এমপির গলাধাক্কা, শিক্ষক বল‌লেন ‘লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হয়’


কক্সবাজারের রামুতে আওয়ামী লীগের সাংসদ সাইমুম সরওয়ারের হাতে স্থানীয় এক প্রবীণ শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। সুনীল কুমার শর্মানামের ওই ব্যক্তি আবার সাংসদের শিক্ষকও। গত রোববার দুপুরে উপজেলার জোয়ারিয়ানালা এলাকায় জনসমক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

সুনীল কুমার শর্মা রামুর চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা। ২০১৪ সালে তিনি স্থানীয় উত্তর কাহাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর নেন। তিনি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে তিনি রামুর রত্নগর্ভা রিজিয়া আহমেদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। এটি বিএনপিদলীয় সাবেক সাংসদ শহিদুজ্জামানের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত।

সুনীল কুমার শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, গত রোববার বেলা দেড়টার দিকে তিনি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে জোয়ারিয়ানালা বাজারে দেখা হয় স্থানীয় সাংসদ সাইমুম সরওয়ারের সঙ্গে। এ সময় সাংসদ বাজারের দক্ষিণ পাশে বিকেএসপিরমাঠের উন্নয়নকাজের উদ্বোধন শেষে মোনাজাত করছিলেন। মোনাজাত শেষ হলে সাংসদ সাইমুম তাঁর দিকে এগিয়ে আসেন। বলেন, ‘তোর ছেলে সুজন আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। তাকে সাবধান করে দিস। নইলে তাকে গায়েব করে ফেলব।’

তখন শিক্ষক সুনীল কুমার ‘তুই-তোকারি’ করে কথা বলার কারণ জানতে চান সাংসদের কাছে। এটাও স্মরণ করিয়ে দেন যে তিনি একসময় সাংসদের শিক্ষক ছিলেন। এ কথা বলার পর সুনীল কুমারের কাছে চলে আসেন সাংসদ। তারপর গলায় হাত দিয়ে তাঁকে ধাক্কা মারেন। এরপর পাঞ্জাবি টেনে ধরে বলেন, ‘তোর ছেলেকে সাবধান করবি। নইলে খবর আছে।’

এ ঘটনার সময় সেখানে অসংখ্য মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তবে সাংসদ সাইমুমের হাত থেকে শিক্ষক সুনীলকে রক্ষায় কেউই এগিয়ে আসেননি।

সুনীল কুমার শর্মা বলেন, প্রবীণ শিক্ষক হিসেবে এলাকার সবাই তাঁকে সম্মান করেন। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নন। অথচ ছেলের জন্য প্রকাশ্যে তাঁকে লাঞ্ছিত করলেন সাংসদ সাইমুম। তাঁর ছেলে সুজন শর্মা ঢাকায় রামু সমিতিরসাধারণ সম্পাদক। সমিতির কর্তৃত্ব নিয়ে সুজনের সঙ্গে সাংসদের বিরোধ আছে।

এ বিষয়ে সুজন শর্মা বলেন, ‘মূলত সাংসদ সাইমুম চাইছেন রামু সমিতি তাঁর ইশারায় চলুক। কিন্তু আমরা কোনো দিন তা হতে দেব না। কারণ, রামু সমিতি আমরাই তৈরি করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অথচ এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সাংসদ আমার বৃদ্ধ বাবাকে লাঞ্ছিত করলেন। আবার তিনি (বাবা) সাংসদ সাইমুমের শিক্ষকও।’

সুনীল কুমার শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘একসময় আমি রামু শহরের মণ্ডলপাড়ার বাড়িতে গিয়ে সাংসদকে পড়িয়েছি। এখন তিনি একজন আইনপ্রণেতা। এমন একজন মানুষও নিজের শিক্ষকের গায়ে হাত তুললেন। লজ্জায় আমার মরে যেতেইচ্ছে করছে।’


  • সূত্রঃ  Prathom Alo/ Jan 16, 2018 

No comments:

Post a Comment