Search

Monday, January 29, 2018

আমরা উন্নয়নের কোন পর্যায়ে ?










রাশিদ রিয়াজ: ফ্রান্স ২০২১ সালের মধ্যে সব কয়লা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করবে। আমরা সবে মাত্র কয়লা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছি। এক দশক আগে কানাডা বেবি ওয়াকার বাচ্চাদের জন্যে বিপদজনক বলে বাতিল করে দিয়েছিল। আমরা মানে বাংলাদেশে এখনো তা বাতিল হয়নি। ধূমপানের বিরুদ্ধে এত কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ হচ্ছে উন্নত দেশে যে এক সময় তা পুরোপুরি বাতিল করে দেওয়ার বিষয়টি এখন সক্রিয়ভাবে ভাবছে কয়েকটি দেশ। তা হলে সিগারেটগুলো বিদেশি পণ্য হিসেবে আসবে সন্দেহ নেই। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রযুক্তিগতভাবে আমরা পেছনে পড়ে আছি বলেই হয়ত করতে হচ্ছে। এ সম্পর্কে শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক ইকবাল মোহাম্মদ খান বললেন, ওরা একটা পর্যায়ে যেয়ে এসব বন্ধ করছে, আমরা তো সে পর্যায়ে যাইনি।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই কবিতার মত, ‘ নাদের আলী আমি আর কত বড় হব? আমার মাথায় ঘরের ছাদ ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে তারপর তুমি আমায় তিন প্রহরের বিল দেখাবে। তার মানে উন্নত দেশ যে সব প্রযুক্তি ব্যাকডেট বলে আপডেট সংস্করণ করবে আমরা তার বাস্তবায়ন শুরু করব। এভাবে ফি বছর গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম, পানির দাম বাড়িয়ে ওদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে চললে তো কোনোদিনই আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারব না। যা পারব তা হচ্ছে বিদেশে অদক্ষ সস্তা শ্রম বিক্রি করে থ্রি ডি অর্থাৎ ডার্টি, ডিফিকাল্ট ও ডেঞ্জারাস কাজগুলো করেই সোনার যৌবন শেষ করে দেব। আর গার্মেন্টসএর কারাখানা করে ভ্যালু এ্যাড কত হবে সে হিসাবের বাইরেও নদী দূষিত করে যে পরিবেশ ধংস করছি সে হিসেবে করতে এখনো অনেক সময় বাকি। কোনো উন্নত দেশে গার্মেন্টস কারখানা না করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতেই কেন এসব কারাখানা ঠেলে দেওয়া হয় সেও আমাদের এখনো অজানা। তো আমরা নিজেরা কেন প্রযুক্তি তৈরি করি না?

যখন যমুনা সেতু হল তখন বিশ্বের নামকরা নদী বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে এসে বলেছিলেন, টানেল করতে। যেমন কর্ণফুলি নদীর তলদেশে হচ্ছে। এতে যমুনা বা পদ্মা নদী সেতুর তলদেশে পলি জমত না, নাব্যতা ঠিক থাকত আর ‘ব্লু’ ওয়াটারের উৎস টিকে যেত। এই ব্লু ওয়াটার কি তা হয়ত হারানোর পর আমরা টের পাব। অন্তত ৩০টি নদী এখন ফসিল নদীতে পরিণত হয়েছে। হয়ত এ নিয়েও আমাদের গর্বের কমতি হবে না। আর একটা স্প্যান পদ্মা সেতুর ওপর বসলেই ঢাকঢোল পিটিয়ে নিউজ করার সুযোগই বা কোথায় পেতাম। পদ্মা সেতুর আরেক বৈশিষ্ট হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক ছাড়াই আমরা আমাদের নিজেদের অর্থে ( ঋণের সুদ কত ভুলে যান) করতে পারছি তার এক প্রতীকি নিদর্শন। আবার পদ্মার বুকে কতগুলো স্প্যান বা কফিনে শেষ পেরেক মেরে নদীটিকে হত্যা করছি কি না তা যমুনায় চরের দিকে তাকালে স্পষ্ট হয়ে যাবে।

রাজনীতিতে আমরা এখনো গণতন্ত্রের ছবক দিয়ে চলছি। এক দল অন্যদলকে। স্বৈরাচারও এ দেখে হাসছে। বিরোধী দল যত শক্ত হবে সরকারের কাজ ততই ত্রুটিমুক্ত হবে। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনীতি এখন বলছে, মাথাই কেটে বাদ দাও, দেখি মাথা ব্যথা কিভাবে হয়। সরকার যত শক্তিশালী হয় তত ভাল, এতে দাপট থাকে কিন্তু সহ্য ক্ষমতা কমে গেলে তখন মানুষেরও সহ্যক্ষমতা হারিয়ে যায়।

সহকর্মী সাঈদা মুনীর সবসময় শৃঙ্খলার কথা বলেন। আরো বলেন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কথা। প্রতিদিন সকালে মানিক মিয়া এভিনিউ দিয়ে আসতে দেখা যায় জাতীয় সংসদের সামনের চত্বরে চিপস, সিগারেট, ঝালমুড়ি ও বাদামের অসংখ্য ঠোঙ্গা বা পলিথিন ঝাড় দিয়ে পরিস্কার করছে সিটি কর্পোরেশন কর্মী। আগের দিন তো এসব আমরাই ফেলি যত্রতত্র। কই সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সে যেয়ে আমরা তো এসব করি না।

  • Courtesy: Amadershonoy.com / Jan 29, 2018

No comments:

Post a Comment