জাতীয় শ্রমিক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের বিমানবন্দর থানা কমিটির গুরু দায়িত্বে একজন পেশাদার চোরকে রাখার অভিযোগ পাওয়া পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিমানবন্দর থানা জাতীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন একজন ‘পেশাদার চোর’। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক চুরি মামলা রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই শ্রমিকলীগ নেতা একজন পেশাদার চোর। তার এই চুরির তকমা থেকে গা ঢাকা দেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বনে গেছেন জাতীয় শ্রমিক লীগ নেতায়। আর এর অন্তরালেই তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন চুরির অপকর্ম। এছাড়াও তার রয়েছে একটি শক্তিশালী চোর সিন্ডিকেট। যার মাধ্যমে তিনি একাই পুরো রাজধানীর সিএনজি ও প্রাইভেটকার চুরি নিয়ন্ত্রণ করছেন। এতে তার রয়েছে ১০/১৫ জন পেশাদার চোর। এছাড়াও তিনি সহ-সভাপতি পদকে পুঁজি করে নিয়ন্ত্রণ করছেন বিমানবন্দরে ফুটপাত। আর এর অন্যতম সহযোগী হল বিমানবন্দর জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফারুক খান ও সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, জাতীয় শ্রমিক লীগের বিমানবন্দর থানা কমিটির নিয়ন্ত্রণেই বিমানবন্দর থানা এলাকার সম্পূর্ণ ফুটপাতই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ফলপট্টি, ভ্যানের ফুটপাতসহ রাস্তার উপর থাকা ভ্রাম্যমাণ কাঁচাবাজার। প্রতিটি ভ্যান থেকে তোলা হচ্ছে দৈনিক চারশত টাকা। যা শ্রমিক লীগের নামে তুলছেন সবুজ। একইভাবে ফল পট্টি ও ভ্রাম্যমাণ কাঁচাবাজার থেকে চাঁদা তোলার জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক লোক।
রাজধানীর বিভিন্ন থানায় খোঁজখবর নিয়ে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশের চোখে সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন একজন চিহ্নিত চোর ও মলম পার্টির সরদার। তার কাজই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সিএনজি ও প্রাইভেটকার চুরি করা। তার বিরুদ্ধে রমনা থানায় ১টি, ধানমন্ডি থানায় ৫ টি, কোতোয়ালী থানায় ১টি, ডেমরা থানায় ১টি ও মতিঝিল থানায় ১টি মামলা নিয়ে ৯টি মামলা রয়েছে। যার প্রতিটি মামলায়ই চুরির। যার মামলা নম্বরগুল হল, রমনা থানার মামলা নং- ৮ (০১) ২০০৫, ধানমন্ডি থানার মামলা নং- ৬১ (১০) ২০০৫, ৭১ (১২) ২০০৪, ৬৪ (১২) ২০০৪, ৪৫ (১২) ২০০৪, ২৬ (১১) ২০০৪, কোতোয়ালি থানার মামলা নং- ৩৮ (১২) ২০০৪, ডেমরা থানার মামলা নং- ৫৯ (১১) ২০০৪ এবং মতিঝিল থানার মামলা নং- ৫২ (১১) ২০০৫। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের দাবি, তার বিরুদ্ধে শুধু নয়টি মামলাই নয় ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় আরো একাধিক মামলা রয়েছে। থানা পুলিশ আরো জানায়, এসব মামলার কয়েকটিতে জামিনে থাকলেও কয়েকটি মামলায় সে পলাতক রয়েছে।
অভিযুক্ত সহ – সভাপতি আক্তার হোসেন আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। তবে কি মামলা রয়েছে আপনে (প্রতিবেদক) নিজেই খোঁজ করে দেখেন।’
অপরদিকে বিমানবন্দর থানা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. খাইরুল আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, ‘থানা কমিটিতে তার নাম নেই। তবে তাকে পরবর্তীতে সহ-সভাপতি পদে ঢুকানো হয়েছে। আর তিনি যে একজন চোর, তা আমরা শুনিতেছি। যদি অভিযোগ সত্য হয় তাহলে আমরা তাকে বাদ করে দিব।’
একই কমিটির মহিলা সম্পাদিকা আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে যে সব মামলা ছিল তার কিছু নিষ্পত্তি হয়েছে। আর কিছু মামলায় সে জামিনে রয়েছেন।’
জাতীয় শ্রমিক লীগের বিমানবন্দর থানা কমিটির সভাপতি ফারুক খান আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, ‘আমি জানি সে একজন ব্যবসায়ী। তবে চুরির অভিযোগ থাকলে তা আমার জানা নেই। অপরদিকে খোঁজ নিয়ে তার সম্পর্কে জানাও হয় নি।’
তিনি আরো জানান, সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন বর্তমানে দক্ষিণখান ধানাধীন কাওলার মধ্যপাড়া এলাকায় থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে।’ যা উপরোক্ত মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আক্তার হোসেনের ঠিকানার সাথে মিল রয়েছে।
এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তরের জাতীয় শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাশেম শেখ আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, ‘যদি তার বিরুদ্ধে মামলা থাকে তাহলে তিনি কিভাবে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাহলে তো পুলিশের যোগসাজশের মাধ্যমেই পালিয়ে রয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘চুরির অভিযোগ যদি সত্য প্রমাণিত হয়। তাহলে বর্ধিত সভা ডেকে তাকে বহিস্কার করা হবে।’
চাঁদাবাজির প্রসঙ্গে জানতে বিমানবন্দর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
- Courtesy: Amadershomoy.com/22/01/2018
No comments:
Post a Comment