Search

Thursday, March 1, 2018

বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার


নারায়ণগঞ্জে প্রায় এক হাজার লাইসেন্স করা অস্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে অনেক অস্ত্র এমন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে ছিল বা আছে, যাঁরা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাঁরা বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার করছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে লাইসেন্স পাওয়া অস্ত্রের মধ্যে শটগান ৫৯৫টি, পিস্তল ২২২টি, রিভলবার ৯৩টি ও টু-টু বোর রাইফেল ৬৩টি। এর মধ্যে জেলা প্রশাসন নিজে শটগানের লাইসেন্স দেয়। অন্য অস্ত্রগুলোর ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে লাইসেন্স দেয় জেলা প্রশাসন।
লাইসেন্স করা অস্ত্রের বেআইনি ব্যবহারের উদাহরণ দেখা যায় গত ১৬ জানুয়ারি। ওই দিন ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর সাংসদ শামীম ওসমানের কর্মী-সমর্থকেরা হামলা চালান। শামীম ওসমানের ক্যাডার নিয়াজুল ইসলাম এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজামকে তখন প্রকাশ্যে পিস্তল নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। তবে প্রদর্শন করা সেই অস্ত্রগুলো বৈধ বলে তাঁরা দাবি করেছেন।

নারায়ণগঞ্জে কারা কারা অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন, তা জানতে চেয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেছিলেন প্রথম আলোর একজন প্রতিবেদক। কিন্তু গত বছর ১ জুন ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই তথ্য দেয়নি জেলা প্রশাসন।

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, মেয়র আইভীর ওপর সশস্ত্র হামলা এবং প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনায় সেই অস্ত্রধারীদের অস্ত্রের লাইসেন্স এখনো বাতিল করেনি প্রশাসন। তিনি বলেন, বিভিন্ন দলের সময়ই রাজনৈতিক বিবেচনায় ও ক্ষমতাসীনদের প্রভাবে নারায়ণগঞ্জে অধিকাংশ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অবৈধ অস্ত্রবাজেরা বৈধভাবে অস্ত্রের লাইসেন্স পেলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা থাকে না।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দেড় বছরের দায়িত্ব পালনের সময় তিনি খুব কমসংখ্যক অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনা ছিল না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে শামীম ওসমান সাংসদ থাকার সময় নিয়াজুল ইসলাম ও শাহ্ নিজাম অস্ত্রের লাইসেন্স পান। নিয়াজুল সাংসদ শামীম ওসমানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং মহানগর কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাধারণ সম্পাদক। এর আগে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি নিজের লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওই ছবি প্রকাশিত হলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শামীম ওসমানের ওই দুই সহযোগীর অস্ত্রের লাইসেন্সও এখনো বাতিল করা হয়নি।

নিয়াজুল ১৯৮৮ সালে চাষাঢ়ায় জোড়া খুন মামলার আসামি ছিলেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত কয়েকটি হত্যা মামলারও আসামি ছিলেন তিনি। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে রাজনৈতিক বিবেচনায় সে মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয় বলে জানা গেছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং আলোচিত সাত খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি নূর হোসেন এবং তাঁর সহযোগীদের কাছে ১১টি অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল। অস্ত্রগুলোর মধ্যে সাতটি শটগান, দুটি পিস্তল ও একটি করে রাইফেল ও রিভলবার রয়েছে। নূর হোসেন ও তাঁর ক্যাডাররা ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ওই অস্ত্রগুলোর লাইসেন্স পায়। তারা ওই অস্ত্র ব্যবহার করে সিদ্ধিরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করত। 

নূর হোসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাঁর লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে অংশ নিতেন। সাত খুনের ঘটনার পর তৎকালীন জেলা প্রশাসক আনিসুর 

রহমান মিয়া ১১টি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল এবং অস্ত্রগুলো জব্দ করেন। বাতিল করা ১১টি অস্ত্রের লাইসেন্স নবায়ন এবং ফেরত চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেছেন নূর হোসেনের ভাতিজা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শাহজালাল বাদল।

এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই অস্ত্রের লাইসেন্স ফিরিয়ে দেওয়া হলে জননিরাপত্তা বিঘ্নের আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া গত জানুয়ারিতে চাষাঢ়ায় হকার ইস্যুতে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শন ও অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা-পুলিশ তদন্ত করছে। 

আরেক ঘটনায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ের দিন রূপগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুবলীগ কর্মী সুমন আহমেদ মারা যান। এই ঘটনায় করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, কায়েতপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের লাইসেন্স করা পিস্তল থেকে ছোড়া গুলিতে সুমন মারা যান। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। 

সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, নূর হোসেনের কারণে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের মতো ঘটনা ঘটেছে। এখন নিয়াজুল ও শাহ্ নিজামেরা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে ভীতি প্রদর্শন করছেন। প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের কারণেই এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

  • প্রথম আলো / ১ মার্চ ২০১৮ 

বখে যাওয়া ব্যাংক

আব্দুল বায়েস



হুমায়ূন আহমেদের ‘বহুব্রীহি’ নাটকের একটি বিখ্যাত উক্তি এ রকম: রিকশা চালিয়ে উপার্জন করলে মানুষ দেখে ফেলবে, মান-ইজ্জতের বালাই থাকবে না। তার চেয়ে অন্ধকারে চুরি করা অনেক ভালো। কেউ দেখবে না; উপার্জন হবে, মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে না। বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোয় যে হরিলুট চলছে, তাতে বহুব্রীহি নাটকের উক্তিটি বারবার মনে পড়ে। ব্যাংকের সবাইকে অন্ধকারে রেখে অন্ধকার পথে ডাকাতি করে বড় হওয়ার বাসনা বড় বড় লোকের। এরা সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি, সংসদ সদস্য। এদের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে আকুলতা সবার।

নানা বাহানায় বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বর্তমানে প্রায় ৬০টি ব্যাংক কাজ করছে এবং শোনা কথা, ডজনখানেক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ব্যাংকের সংখ্যা বৃদ্ধির পক্ষে বেশ জোরেশোরে সাফাই গাইতে অর্থমন্ত্রীর কোনো রাখঢাক নেই। থাকার কথাও নয়। কারণ যারা অনুমোদন পাচ্ছে, তাদের প্রায় সবাই সরকারের সমর্থক; কিন্তু মুশকিল হয় যখন সরকারের স্বার্থ ও দেশের স্বার্থ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ভাবার কোনো অবকাশ নেই যে একটি ব্যাংকেরও অনুমোদন দেয়া প্রয়োজন। রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত ব্যাংক যে কত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তার বড় প্রমাণ অতিসম্প্রতি ঘটে যাওয়া ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি। ব্যাংকগুলোয় পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকল্পে স্বয়ং সরকার উদগ্রীব। সোনালী, বেসিক, জনতা ব্যাংক কেলেঙ্কারি শেষে সম্প্রতি মাথা তুলেছে ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি। আর এসব ঘটছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখের সামনে। অথচ এরা অর্থবাজারের অভিভাবক। বাংলাদেশ ব্যাংক মুখে কুলুপ এঁটে মনে মনে গাইছে, ‘আমার বলার কিছু ছিল না না গো... চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে গেলে...।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বিরূপাক্ষ পাল থেকে ধার করা বক্তব্য দিয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যেতে পারে। স্যার আইজাক নিউটন নাকি একবার দরজায় বড় একটা গর্ত খুঁড়েছিলেন তার বিড়ালটি আসা-যাওয়ার জন্য। এগুলোকে বলে পেট ডোরস বা পোষা প্রাণীর দরজা। সাধারণত দরজার নিচে থেকে এ দরজায় তিনি আবার অন্য একটা ছোট গর্ত খোঁড়েন বিড়ালছানা আসা-যাওয়ার জন্য। আমরা নিশ্চিত নই, সত্যি সত্যি নিউটন ওই কাজটা করেছিলেন কিনা; তবে এ রূপক থেকে একটা শিক্ষা বেরিয়ে আসে। তা হলো এই যে, বড় বিড়াল ও বিড়ালছানা যদি একই গর্ত দিয়ে আসা-যাওয়া করতে পারে তাহলে ছোট গর্ত অর্থহীন। তেমনি আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয় যদি ব্যাংকিং খাতের সব দেখাশোনা করতে পারে তাহলে আলাদা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাখার কোনো যুক্তি আছে কি? বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বিরূপাক্ষ পালের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয় যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতামতকে গুরুত্ব না দেয়, তাহলে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিসের এক কোণে বাংলাদেশ ব্যাংককে জায়গা দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। এটা শুধু ব্যয়সাশ্রয়ী হবে না, এ দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার আপাত প্রতীয়মান দূরত্বকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে সক্ষম হবে বলে আমাদের ধারণা। ইদানীং বাংলাদেশের ব্যাংকিং বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কথাই যেন সরকার শুনতে আগ্রহী নয়। সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় যা করছে, তা অর্থনৈতিক বিবেচনাপুষ্ট নয়। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সরকারের কাছে ‘গুড বয়’ ইমেজ রক্ষা করতে গিয়ে বাজারবহির্ভূত অসঙ্গতিগুলো গিলতে বাধ্য হচ্ছে, যেমন— নতুন ব্যাংকের জন্ম ও ব্যাংক প্রশাসনে পরিবারতন্ত্রের পুনর্জন্ম ইত্যাদি।

গেল অর্থবছরের জুনে সরকার ‘পুঁজি পুনঃকরণ’ (রিক্যাপিটালাইজেশন) ঘোষণা করে। তার আগে ২০০৯ থেকে ১৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা ব্যাংকগুলোকে দেয়া হয়েছে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, পুঁজি পুনঃকরণের পুরো অর্থ ময়লার নালায় প্রবাহিত হয়েছে। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, প্রায় পুরো অর্থ রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী ও দুর্নীতিবাজ লোকদের পকেটস্থ হয়েছে। এখন আবার তারা চাইছে পুনঃপুঁজিকরণ অর্থ, পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকার মতো; যা এ বছরের বাজেট বরাদ্দের চেয়ে দ্বিগুণ। তাদের এ দাবি কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের ব্যবহার উচ্ছন্নে যাওয়া বখাটে ছোকরার মতো, যে প্রত্যেক সময় বাবার টাকা আকাশে উড়িয়ে আবার বাবার কাছে হাত পাতে। পার্থক্য এটুকুই যে, বখাটে ছেলেটিকে বাবা তার পকেট থেকে টাকা দেন আর বখাটে ব্যাংকগুলোকে সরকার অর্থ দেয় জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে। প্রসঙ্গত, কেউ কেউ ভারতের সাম্প্রতিক ১৪ বিলিয়ন ডলারের পুঁজি পুনঃকরণ প্রসঙ্গ টেনে আনেন। আমরা ভালো ভালো দীক্ষা নিতে দুঃখ পাই, অথচ মন্দ উদাহরণ টেনে মহানন্দে থাকি। ভারতে ঋণখেলাপের প্রধান কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে মেগা প্রকল্প শেষ হতে দেরি হওয়া এবং এর ফলে বিনিয়োগকারীর আর্থিক ক্ষতি। অন্যদিকে বাংলাদেশে ঋণখেলাপির কোনো প্রকল্পই থাকে না। যা-ও থাকে তা মিথ্যা প্রকল্প, মিথ্যা দলিল আর সত্যি শক্ত রাজনৈতিক প্রশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশে ঋণখেলাপির জন্ম। তাছাড়া ভারতে পুঁজি পুনঃকরণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে বহুমাত্রিক সংস্কারসাধনের শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশে তা হয় না; বরং চোখ বুজে পুঁজি পুনঃকরণ করা হয়।

বেসিক ব্যাংকের ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা তুলে নেয়ার জন্য ওই ব্যাংকের বোর্ডের কোনো সদস্যকে জেল খাটতে ও জরিমানা গুনতে হয়নি। এদিকে একই ব্যক্তির বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্পে জনতা ব্যাংক অর্থ ঢেলেছে। প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ এর বোর্ড সদস্য বা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা এ পর্যন্ত রুজু করা হয়নি। সোনালী ও অন্যান্য ব্যাংকের কথা না হয় না-ই তোলা হলো। ফারমার্স ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ইত্যাদির সব বোর্ড সদস্য ও চেয়ারম্যানকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি না দিলে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে রক্ত ঝরতেই থাকবে। যথাযথ সংস্কার ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের মানে দাঁড়ায় পচা ব্যাঙ কুয়ায় রেখে পানি সেচা।

অথচ আমরা তেমনটি চাই না। কেন্দ্রীয় তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালন পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনা দরকার। উন্নয়ন চেতনা, আর্থিক জগতে অভিনবমূলক ও নীতি বাস্তবায়নে অধিকতর কঠোর হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন দেয়া। পুরো আর্থিক বাজারের উন্নতি ও অবনতির দায়ভার বাংলাদেশ ব্যাংকের। সরকার শুধু তার কর্তব্য পালনে সহায়তা করবে মাত্র।

বহুদিন আগে একটা বইতে সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পর্ক নিয়ে একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম। যতটুকু মনে পড়ে, ওই বইতে বলা হয়েছে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেকটা ভালো গৃহবধূর মতো। ভালো গৃহবধূ স্বামীর সিদ্ধান্ত নিয়ে তর্কাতর্কি, ঘ্যানরঘ্যানর করে, তবে শেষমেশ স্বামীর সিদ্ধান্ত মেনে নেয় এই বলে যে, পতি পরমেশ্বর। ঠিক তেমনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একেবারেই যে কিছু বলে না তা নয়, তবে শেষমেশ মেনে নেয় যে সরকারই শেষ কথা। আমাদের মতো অনুন্নত দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা একজন ভালো গৃহবধূর মতোই। সমস্যাটা ওখানেই। আমরা চাই, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের ভালো গৃহবধূ না হয়ে অর্থবাজারের অর্থবোধক অভিভাবক হিসেবে দাঁড়াক। নয়তো আর্থিক সুনামির তোড়ে ভেসে যাবে সবাই।

শেষ কথা। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল শ্রেয়। এতগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থাকার প্রয়োজন আছে কি নেই, তা এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। প্রয়োজন থেকে থাকলেও ওগুলো শুধু আমানত সংগ্রহে কাজে লাগানো যায় কিনা, সেটাও ভাবার বিষয়। মোটকথা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর, এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈপ্লবিক সংস্কার না ঘটা পর্যন্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে বলে মনে হয় না। একমাত্র ব্যাপক সংস্কারসাপেক্ষে রুগ্ণ কোনো ব্যাংকের জন্য সীমিত মাত্রায় পুনঃপুঁজিকরণ হতে পারে। মনে রাখতে হবে যে শর্তহীনভাবে পুনঃপুঁজিকরণ প্রক্রিয়া ব্যাংক রুগ্ণ হওয়ার অন্যতম উৎসাহদাতা। সুতরাং শেয়ার মার্কেটের ধসের মতো ব্যাংকিং খাতে যাতে সুনামি না আসতে পারে, তার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় পস্তাতে হবে সবাইকে।

  • বনিক বার্তা/ মার্চ ০১, ২০১৮

রহস্যময়ভাবে বদলে গেল জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগ


সদ্য বিদায়ী জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনকে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান করে গত রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন ব্যাংকটির পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে যোগদানপত্রও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু রহস্যময়ভাবে বদলে গেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত।

গতকাল জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ‘দোহাটেক নিউ মিডিয়া’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা। তিনি ২০১৬ সালের ২৭ জুন থেকে ব্যাংকটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির পর চেয়ারম্যান পদে যোগদানপত্র গ্রহণ না করা এবং দুদিনের ব্যবধানে নতুন একজনকে নিয়োগ দেয়ার এ ঘটনা রহস্যময়।

জনতা ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের যোগদানপত্র পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. ইউনুসুর রহমান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের আলোকেই গত রোববার হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনকে জনতা ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তিনি মন্ত্রণালয়ে যোগদানপত্র পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তার যোগদানপত্র গ্রহণ না করে নতুন করে লুনা শামসুদ্দোহাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সরকার চাইলে যেকোনো সময়ই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারে।

হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

গত রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, ‘জনতা ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক ও নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনকে নিয়োগ দেয়া হলো। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এ প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন করলে তিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন।’

কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার পর গতকালই ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন লুনা শামসুদ্দোহা।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা চলাকালেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফ্যাক্স পেয়ে জনতা ব্যাংকের পরিচালক লুনা শামসুদ্দোহা চেয়ারম্যান পদে যোগদান করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের পরিচালক পদে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োগ চূড়ান্ত করে। লুনা শামসুদ্দোহা আগে থেকেই জনতা ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। এজন্য চেয়ারম্যান পদে তার যোগদানে আইনি কোনো বাধা ছিল না। জনতা ব্যাংক থেকে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির দুদিন পর আবারো অন্য কাউকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি নজিরবিহীন বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য ব্যাংকের এমডিরা। বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করলেও কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করতে চাননি।

১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর অবসরে যান। তার আগের বছর ২৯ ডিসেম্বর ওই পদে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য থাকা অবস্থায় জ্যেষ্ঠ সচিব পদে পদোন্নতি পান হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাণিজ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়েও বিভিন্ন মেয়াদে সচিবের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

  • বনিক বার্তা/ মার্চ ১, ২০১৮  

আইনের শাসন মানে, রাস্তায় ফেলে গলা টিপে ধরা নয়

গোলাম মোর্তোজা 


  
আদর্শ কাগজে লেখা থাকে। কাজের সঙ্গে তার মিল থাকে না, তবে মুখে থাকে। প্রতিপক্ষের উদ্দেশে আদর্শের কথা বলেন, নিজে মেনে চলেন না। বলছি রাজনীতি ও রাজনীতিকদের কথা, বিশেষ করে বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল ও নেতাদের কথা। তারা একে অপরের ভুল, অন্যায়-অনিয়ম-অনৈতিকতা, দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন। অন্যকে যা বলেন, নিজে বা নিজেরা তা করেন না। সম্প্রতি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার জেল-জরিমানার প্রতিবাদে আন্দোলন করছে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল বিএনপি। অনুমতি দেওয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচি দিয়েছিল তারা। আজকের লেখা এই কালো পতাকা প্রদর্শন ও পুলিশি প্রতিরোধ বা তাণ্ডবকে কেন্দ্র করে।

১. পাঁচ বছরের দণ্ড মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে। ধারণা করা হয়েছিল, এর প্রতিবাদে বিএনপি মারদাঙ্গা কর্মসূচি দেবে। হরতাল, ধর্মঘট, গাড়িতে আগুন, ভাঙচুর হবে। আক্রমণ হবে পুলিশের ওপরও। রায় ঘোষণার কয়েকদিন আগে তার আলামতও পাওয়া গিয়েছিল। হাইকোর্টের সামনে বিএনপি কর্মীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল পুলিশ বাহিনির সদস্যরা। বিএনপি নেতৃবৃন্দের দাবি, তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এমন ছিল না। বিএনপির ভেতরের একটা ক্ষুদ্র অংশ বিশেষ সংস্থার প্রযোজনায় পুলিশকে আক্রমণ করে বসে। সেদিন পুলিশ বেশ রহস্যজনকভাবে পরিচিত মারমুখী অবস্থান না নিয়ে, নীরবে মার হজম করে। খালেদা জিয়ার রায়ের পরে বিএনপি আরও মারমুখী কর্মসূচি দেবে, অনেকেই এমনটা ভাবছিলেন। সরকার, সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনি সেভাবেই প্রস্তুত ছিল। ২০১৪ সালের সহিংসতা দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনি সফল হয়েছিল। তাদের এই আত্মবিশ্বাস ছিল যে সহিংস কর্মসূচি দুই চারদিন চলার পরই তা বন্ধ করে দেওয়া যাবে। বিএনপি সহিংস, প্রায় জঙ্গি দল একযোগে এমন প্রচারণা শুরু করা যাবে। ২০১৪-১৫ সালের মতো আবারও ইমেজ সংকটে পড়বে বিএনপি।

কিন্তু সরকারসহ আর অনেককে হতাশায় ডুবিয়ে, আক্রমণাত্মক সহিংস কর্মসূচির পথে হাঁটল না বিএনপি। কারাগারে যাওয়ার আগে বেগম খালেদা জিয়া কড়া নির্দেশনা দিয়ে গেলেন, কোনও প্রকার সহিংসতা নয়।

বিএনপি কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল বা নিতে পারলো? বিএনপি ২০১৪ সালের অবরোধের কর্মসূচি এবং তার প্রেক্ষিতে সহিংসতার বিষয়টির আত্মমূল্যায়ন করেছে। বিএনপি বিশ্বাস করে, সব সহিংসতা, পেট্রোলবোমায় মানুষ তারা পোড়ায়নি। কিন্তু পুরো দায় নিতে হয়েছে। সরকারকে বিপদে ফেলা গেলেও সফল হওয়া যায়নি। সাময়িক বিপদে পড়লেও, কঠোরভাবে সহিংসতা দমন করে সফল হয়েছে সরকার। গুলি করে হলেও সহিংসতা দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনি বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছে। ফলে পুরনো সেই সহিংস কর্মসূচির ধারে কাছে দিয়ে যায়নি বিএনপি। এমন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বিএনপি নিয়েছে, যা প্রতিরোধ বা বাধা দেওয়ার যুক্তি খুঁজে পায়নি পুলিশ বা সরকার।

২. শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে, কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচি দেয় বিএনপি। বিএনপি নেতাকর্মীরা হাতে কালো পতাকা নিয়ে জড়ো হয়েছিল, পল্টনে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। যুদ্ধক্ষেত্র বা প্রায় রণাঙ্গনের প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশ তা প্রতিরোধ করেছে।

প্রশ্ন হলো, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে, কালো পতাকা প্রদর্শন করা যাবে না কেন? সমাবেশের জন্যে পুলিশের অনুমতির বিষয়টি মেনে নেওয়া যায়। সেটাও সমতাভিত্তিক হওয়া দরকার। আওয়ামী লীগ অনুমতি চাইলেই পাবে, ছাত্রলীগের জন্যে অনুমতিরও দরকার হবে না। অনুমতি শুধু বিএনপি বা বিরোধীদের জন্যে। এমন আইন তো নেই, সরকার রীতি করে নিয়েছে।

বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার কোনও কারণ ছিল না। যদিও বড় রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বা সমাবেশ মানে জনগণের চরম ভোগান্তি। বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণের ভোগান্তি বিবেচনায় নিয়ে তো আর সরকার সিদ্ধান্ত নেয়নি। কারণ, জনভোগান্তির উপলক্ষ সরকার বা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনই বেশি ঘটায়।

বিএনপি বা বিরোধীদের কর্মসূচির সময় সরকার হঠাৎ করে জনবান্ধব হয়ে ওঠে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা কালো পতাকা প্রদর্শনের জন্যে জড়ো হয়েছিলেন ফুটপাতে। সংখ্যা বাড়ায় তা রাস্তায় চলে আসে। যদিও তখন পর্যন্ত পুরো রাস্তা বন্ধ হয়নি। রাস্তা বন্ধ করা ঠিক নয়।কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে রাস্তা বন্ধ করাটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক ঘটনা। রাস্তা বন্ধ করতে দেওয়া হবে না, এমন উদ্যোগ নিলে তা হবে প্রশংসনীয়। তা প্রয়োগ করতে হবে সব দলের ক্ষেত্রে। শুধু বিরোধীদলের জন্যে নয়। 

৩. কালো পতাকা প্রদর্শনের নামে রাস্তা বন্ধ করে জনভোগান্তি সৃষ্টি করা হয়েছিল, এ কারণে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে।

কয়েকশ’ মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নামে পুলিশ, জলকামান- রঙ্গিন পানি- গরম পানির ব্যবহার করেছে। একজন কালো পতাকা প্রদর্শনকারীকে, সাদা পোশাকের পাঁচ সাতজন পুলিশ মাটিতে ফেলে গলা টিপে ধরেছে। সরকার প্রতিদিনই মুখে মুখে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে ফেলে। যে আইনের শাসন মানে, একজন রাজনৈতিক কর্মীর গলা টিপে ধরবে সাতজন পুলিশ। যে আইনের শাসনে বাংলাদেশ একটি পুলিশি রাষ্ট্র। কালো পতাকা প্রদর্শনের জন্যেও সেই রাষ্ট্রে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে। তা প্রযোজ্য হবে শুধু বিরোধীদলের ক্ষেত্রে, এবং বিরোধীরা অনুমতি চাইবে কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাবে না। রাস্তায় নামলেই গলা টিপে ধরা হবে। 

৪. বাংলাদেশের রাজনীতিতে কৌতুককর কিছু উপাদান সব সময়ই থাকে। মন্ত্রিত্ব হারিয়ে হাছান মাহমুদ সেই স্থানটি গত কয়েক বছর দখল করে রেখেছেন। এখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। খালেদা জিয়া কক্সবাজার গেলেন। ওবায়দুল কাদের বললেন, অরাজকতা তৈরির জন্যেই খালেদা জিয়া সড়ক পথে গেছেন। কেন তিনি সড়ক পথে গেলেন? ঠিকই তো, খালেদা জিয়া কেন সড়ক পথে যাবেন! যেখানে ছাত্রলীগের সভাপতি যান হেলিকপ্টারে! 

কালো পতাকা প্রদর্শনে পুলিশি তাণ্ডবের পর ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে, ঘরের ভেতরে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার উপদেশ দিয়েছেন। স্বৈরাচারী শাসনে তেমন নজিরই ছিল। ওবায়দুল কাদের কি স্বীকার করে নিচ্ছেন, এখন বাংলাদেশের মানুষ তেমন শাসনেই আছে? 

৫. সরকার বিনাভোটের নির্বাচনে গঠিত হলেও, সরকারের পরিচয় তো গণতান্ত্রিকই। মানুষের প্রতিবাদ করার অধিকার আছে। আইন করে তা বন্ধ করা হয়নি। এখনকার আওয়ামী লীগের বক্তব্য, রায় দিয়েছে আদালত, সরকার নয়। আদালতের রায় মানতে হবে, আদালতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যাবে না। 

কী চমৎকার বক্তব্য! আদালতের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিলের কথা হয়তো মানুষ ভুলে গেছে। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের প্রসঙ্গ তো মানুষ ভুলে যায়নি। আদালত, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দেওয়া বক্তব্যের কথা কি আওয়ামী লীগ এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল? জনগণ তো ভোলেনি। প্রধান বিচারপতিকে এত নাটক আয়োজন করে বিদেশে পাঠানো হলো। তার বিরুদ্ধে নাকি ১১টি সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ। সব অভিযোগ বক্তব্যে থাকল, বিদেশে পাঠানোর আগে পর্যন্ত। দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনের অভিযোগে বিচার নয়, বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া! এর নামও আইনের শাসন।

৬. সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ার উদ্যোগ না নিলে, যত সময় যাবে তত বেশি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে হবে। পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম করে ক্ষমতায় হয়তো থাকা যাবে, জনসমর্থন পাওয়া যাবে না। জনসমর্থন ছাড়াও ক্ষমতায় থাকা যায়, এমন নজির পৃথিবীর বহু দেশে আছে, ছিল। কোনও কোনও কট্টর একনায়ক শাসিত দেশও সমৃদ্ধ হয়েছে। নজির আমাদের আশপাশেও আছে। সেসব দেশের একনায়কদের সময়ে আর্থিক অসততা বা অনিয়ম ছিল না। তাদের কারও জামানায় রাষ্ট্রায়ত্ত কোনও ব্যাংক লুটপাট হয়ে যায়নি, নিয়ম করে প্রতি বছর দেশ থেকে ৭৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়নি। ৩০০ কোটি টাকার একটি ফ্লাইওভারের বাজেট ১২০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১৫০০ কোটি টাকা করে, ১২০০ কোটি টাকা চুরি করা হয়নি। লুটপাটকারীরা ক্ষমতা বলয়ের কাছাকাছি থাকার সুযোগ পায়নি।

কাগজের ‘উন্নয়ন’র গল্পের সঙ্গে দেশের সাধারণ জনমানুষের তেমন কোনও সম্পর্ক নেই। ক্ষমতা বলয়ের কাছের অল্প কিছু মানুষের আয় বাড়ছে, অনিয়ম- দুর্নীতি করে। দেশের অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষের আয় আরও কমছে। ‘উন্নয়ন’র এত গল্পের মাঝে সরকারি পরিসংখ্যানও তেমনটাই বলছে।

মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিলে, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি জঙ্গি কায়দায় প্রতিরোধ করলে, সহিংসতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কৌশল কি তেমনটাই!

  • লেখক: সম্পাদক, সাপ্তাহিক Feb 28, 2018

চট্টগ্রামে বেপরোয়া ছাত্রলীগ, নেপথ্যে বুড়োদের খেল



গঠনতন্ত্র মতে ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের অরাজনৈতিক সহযোগী সংগঠন। যা ছাত্রলীগের সিংহভাগ নেতাকর্মীরও জানা নেই। তারা জানেন, ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের ‘ছাত্র রাজনৈতিক’ সংগঠন। 


সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রায় বলে থাকেন ছাত্রলীগ শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা যায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা চলে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও এমপিদের কথায়। কারণ এদের রয়েছে প্রাপ্তির বড় নেশা। পদ-পদবি, টেন্ডার, সরকারি প্রকল্প হাতানো, বালু উত্তোলন, পাহাড় কাটা, থানা ও উপজেলা প্রশাসন বাণিজ্য, মাদক পাচার ও বিক্রয়সহ নানা অপরাধে সুবিধার সহজ মাধ্যম হচ্ছেন মন্ত্রী-এমপিরা।


বিনিময়ে মন্ত্রী-এমপিরাও যথেচ্ছা ব্যবহার করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। যারা যে কোনো স্থানে, যে কোনো সময় হামলা-মারামারি ও সংঘর্ষে লিপ্ত হতে দ্বিধা করে না। মূলত ছাত্রলীগের নৈরাজ্যের নেপথ্যেই হচ্ছে আওয়ামী লীগের বুড়োদের খেল। এমন অনুযোগ ছাত্রলীগের নিচু ও মধ্যম সারির নেতাকর্মীদের। তাদের অভিযোগ, প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে উঁচু সারির নেতারা এ ব্যাপারে মুখ খুলেন না।

নেতাকর্মীরা জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর চট্টগ্রাম মহানগর, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তর দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের নৈরাজ্যের পেছনে বার বার উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও বর্তমান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের নাম।  মহানগর থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সবখানে ছাত্রলীগ এই দুই নেতার অনুসারী হিসেবে দু’গ্রুপে বিভক্ত। যা এখন ছড়িয়ে পড়েছে স্কুল ছাত্রলীগেও।

যদিও স্কুল ছাত্রলীগ বলতে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে কোনো অস্তিত্ব নেই। তবুও এই স্কুল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মহানগর, ওয়ার্ড ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় চলে। বড়ভাইদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে স্কুল ছাত্রলীগের কিশোর ছাত্ররাও বেপরোয়া। গত তিনমাসে এই স্কুল ছাত্রলীগের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে সুভাষ বড়ুয়া, আদনান ও ইব্রাহিম নামে তিন কিশোর। যত্রতত্র ঘটছে ভয়াবহ সংঘর্ষও।

এদের সবার চোখে মুখে শুধুই প্রাপ্তির নেশা। কারও নেশা সংগঠনের শীর্ষ পদে আসীন হয়ে নেতৃত্বের প্রভাব সৃষ্টি করা। কারও নেশা আধিপত্য বিস্তার করে বৈধ-অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করা। গত মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এমন এক ভয়ংকর নেশায় মেতে উঠে উত্তর জেলা ছাত্রলীগ। বিস্ফোরণ, হাতাহাতি-মারামারিতে পণ্ড হলো তাদের সম্মেলন। আর এ ঘটনায় উঠে আসে আরেক বুড়োর খেল। তিনি হচ্ছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। 

নেতাকর্মীরা জানান, যে কারণে সম্মেলন, সে সম্মেলনে গঠনতন্ত্রের বাইরে বিনা কাউন্সিলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগে থেকেই ঠিক করে ফেলেন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। যা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জেনে যান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ফলে এই ঠিক, বেঠিক করে দেয়ার জন্য আগে থেকেই সম্মেলন পণ্ডের প্রস্তুতি নেন অন্য নেতার অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। যেসব নেতারাও ওইদিন সম্মেলন মঞ্চে উপিস্থত ছিলেন। এরমধ্যে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছিলেন অন্যতম। নেপথ্যে ছিলেন রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাসান মাহমুদের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও। ছিলেন হাটহাজারী ও ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও। 

আলাপকালে নেতাকর্মীদের অনেকেই জানান, সম্মেলনের আগেই মিরসরাই উপজেলার তানভীর হোসেন তপুকে সভাপতি এবং সন্দ্বীপ উপজেলার মফিদুল ইসলাম জিকুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হবে এমন কথা সবার মুখে মুখে ছিল। এই দুইজন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপির সুনজরে ছিল। দুইজনের কমিটির ফাইল ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের হাতে তুলে দেয়ার পর শুরু হয় হট্টগোল। 

বিশেষ করে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও হাটহাজারী উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই হট্টগোল শুরু করে। একপর্যায়ে মিরসরাই-সিতাকুণ্ড ও সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি-মারামারি শুরু হয়। এ সময় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিরোধী স্লোগানও দেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। হাতাহাতি-মারামারির চেয়েও ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লক্ষ্য ছিল সম্মেলন মঞ্চ। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে লক্ষ্য করে চেয়ার ছুড়ে মারেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। 

একপর্যায়ে অতিথিরা চলে যাওয়ার সময় রাউজান উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পথ আগলে ধরেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ওই ছাত্রলীগ নেতার ওপর চড়াও হন।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব সংঘর্ষের সময় সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ছাত্রলীগে ঢুকে পড়া জামায়াত শিবিরের লোকজনই মারামারির ঘটনা ঘটিয়ে সম্মেলন পণ্ড করেছে। সভাপতি বখতিয়ার সাঈদ ইরান বলেন, বহিরাগতরা পরিকল্পিতভাবে সম্মেলন পণ্ড করার জন্য এই ঘটনা ঘটিয়েছে। দায়ীদের চিহ্নিত করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। এদিকে সাধারণ সম্পাদক আবু তৈয়ব ও সভাপতি বখতেয়ার সাঈদ ইরান ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাসান মাহমুদের অনুসারী বলে জানা গেছে। হাসান মাহমুদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তাদের এই কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর আর কোনো সম্মেলন হয়নি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের। তবে রাউজানের তরুণ নেতা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন বলেন, এসব বিষয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। এটুকু বলবো নেতাকর্মীরা কেউ প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস না পেলেও ক্ষোভ পুষে রেখেছিল। এটা তারই বহিঃপ্রকাশ। 

এর আগের দিন সোমবার বিকালেও চট্টগ্রাম লালদীঘির মাঠে প্রয়াত নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণসভায় একই ঘটনা ঘটায় ছাত্রলীগ। সেখানে দফায় দফায় হাতাহাতি-মারামারি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার পর রাতে ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে কোনোমতে শেষ হয় স্মরণসভা। আর এই সংঘর্ষ ঘটে মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুসারী ও আ জ ম নাছির উদ্দিন অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মধ্যে। যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। 

এই দুই নেতার অনুসারী হিসেবে নগরীর সিটি কলেজ, ওমরগণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে ছাত্রলীগ দুই গ্রুপে বিভক্ত। তারাও পদ-পদবি, টেন্ডার, সরকারি প্রকল্প ও ব্যবসা হাতিয়ে নেয়া ও মাদক পাচার-বিক্রির মতো কাজে লিপ্ত। এসব কাজে আধিপত্য বিস্তারের নেশায় প্রায় সময় তারা সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। 

এর কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টরের কার্যালয় এবং সাধারণ মানুষের গাড়ি ভাঙচুর করার পাশাপাশি তিন সাংবাদিকের ওপরও হামলা চালিয়ে আহত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জড়িত আট শিক্ষার্থীকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে। কিন্তু ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

তবে ছাত্রলীগের এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ নগর ও জেলা আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ছাত্রলীগে টোকাই শ্রেণি এবং হাইব্রিডের আধিপত্য বেড়ে গেছে। যারা তদবির করে পদ-পদবি নিয়েছে কিংবা নিতে চায় তারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে এসব করছে। এ রকম প্রাপ্তির নেশায় বেপরোয়া এখন ছাত্রলীগ। আবার মন্ত্রী-এমপিরাও টোকাই এবং হাইব্রিডকে সঙ্গে নিয়ে যায় যে কোনো কর্মসূচিতে। এটাই হচ্ছে ছাত্রলীগে বুড়োদের খেল। যা কোনো নীতিতে পড়ে না। 

  • Courtesy: Daily Manabzamin Mar 01, 2018


'Govt plotting Jan 5-style election'

BNP writes to UN, Commonwealth


The BNP has sent a letter to the United Nations, alleging that the government was hatching a blueprint for an election without Khaleda Zia, a number of BNP leaders said.
The party also sent a copy to Commonwealth Secretary-General Patricia Scotland.

“We wrote letters to the United Nations and Commonwealth informing them about the present situation of the country. We told them that our chairperson was convicted in a false and fabricated case.

“The intention behind the case was to keep her away from politics and also from the next election. The government wants to hold a one-sided election like the one held on January 5, 2014,” BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir told The Daily Star yesterday.

The letters, signed by Fakhrul, were sent yesterday (Wednesday).

The letter to the UN Secretary General António Guterres was sent through UN Residential Coordinator in Bangladesh Mia Seppo.

Terming the UN the guardian of the world, the BNP letter said the country was going through a critical time with democracy at stake, according to BNP leaders.

Talk among political parties is essential to resolve the ongoing political crisis, it added. The party's acting chairman Tarique Rahman gave some directions on the draft before it was finalised.

BNP leaders quoting the letter said the ruling Awami League held the last parliamentary election unilaterally in the name of continuation of the constitution.

They added that BNP and most other political parties did not participate in that election and the AL promised at the time that the next election would be held very soon after consulting all political parties.

Ahead of that election, the then UN secretary general Ban Ki-moon phoned Sheikh Hasina and Khaleda Zia over the matter. Moon sent the then UN assistant secretary-general for political affairs Oscar Fernandez-Taranco to Dhaka.

Taranco visited Bangladesh from December 6-11 to broker a solution to the political impasse regarding the election-time governance. During his stay, the Awami League and BNP leaders met for the first time in his presence and began a formal dialogue.

Taranco met Prime Minister Sheikh Hasina, BNP Chief Khaleda Zia, and then chief election commissioner Kazi Rakibuddin Ahmad, and civil society representatives, among others.

After returning, Taranco submitted the report on his visit to Bangladesh to the then UN Secretary-General Ban Ki-moon, emphasising that the UN stay engaged with the stakeholders in Bangladesh. In yesterday's letter, the BNP wrote that Bangladesh was truly at historical crossroads with democratic forces fighting fascism.

A BNP leader quoting the letter said the AL was aware that the BNP and Begum Khaleda Zia remained to be major obstacles in its push towards establishing one-party rule. This case is but one instance of that strategy.

“We have drawn attention of the United Nations because they are taking a keen interest in the development of Bangladesh and democracy of Bangladesh. For a long time, they have been taking interest in the political situation of Bangladesh, particularly the ensuring elections,” Moudud Ahmed, BNP standing committee member, said, adding that the UN repeatedly said it would like to see participatory election in Bangladesh.

“Since we are a member of the United Nations, the issue should be brought to their notice. That is why we sent letter,” he said.

  • Courtesy: The Daily Star Mar 01, 2018

Toxic politics aided 'jihadist resurgence'

Int'l Crisis Group on Bangladesh


International Crisis Group (ICG) has warned that Bangladesh's contentious national politics have played a role in “enabling the jihadist resurgence”.

“Political polarisation has contributed to the growth of militancy in less direct ways, too,” said the group in a report yesterday (Tuesday).

There was a growing risk that Islamist militants would exploit the fallout created by political polarisation with the general elections approaching, it added.

The study titled “Countering Jihadist Militancy in Bangladesh” said the lull in violence in recent months might prove as a temporary respite.

“With elections approaching in December, politics could become even more toxic. The government's continued marginalisation of the opposition Bangladesh Nationalist Party, and its forcing underground of opponents like Jamaat-e-Islami, risk sapping resources from efforts to disrupt jihadists,” said the report.

The next parliamentary election is scheduled to be held by the end of this year. The BNP has been alleging that the government was trying to hold another “lopsided election” like the one held on January 5, 2014.

According to ICG, Bangladeshi jihadi landscape was now dominated by banned outfits, Jamaat-ul-Mujahideen Bangladesh or JMB and Ansar al-Islam.

“Attacks since 2013 have targeted secular activists, intellectuals and foreigners, as well as religious and sectarian minorities. The ruling Awami League has politicised the threat; its crackdowns on rivals undermine efforts to disrupt jihadist recruitment and attacks,” the report reads.

The international observer group said, “Bangladesh's antagonistic politics have played a part in enabling the jihadist resurgence. The state confronted groups responsible for an earlier wave of violence with some success from 2004 to 2008. Subsequently, especially since controversial January 2014 elections, bitter political divisions have reopened space for new forms of jihadist activism.”

About the jailing of BNP Chairperson Khaleda Zia in a graft case, the organisation said it signalled the opening salvo of a new wave of political infighting reminiscent of January 2014 and 2015.

“Khaleda Zia's 8 February conviction and five-year sentence for corruption, whose timing suits the Awami League's electoral planning, could prohibit her from contesting the polls and widen divisions.

“At the same time, the government is making its own concessions to Islamists, notably Hefazat, whose views -- it opposes the principle of a pluralist, secular democracy; allowing women in the workplace; or appointing Hindus to key government posts -- are arguably harder-line than those of JeI [Jamaat-e-Islami],” said the report.

It mentioned that alleged extrajudicial killings, enforced disappearances and indiscriminate government crackdowns on political rivals were occurring at the expense of a counter-terrorism strategy that was needed to address “growing jihadist activism and expanding links to transnational groups like al-Qaeda and ISIS”.

The organisation called upon the government to forge broad social and political consensus and pressed for pursuing more accountability in law enforcement and justice system as well as stopping politically-motivated crackdowns.

“Instead of relying on indiscriminate force, including alleged extrajudicial killings and enforced disappearances, the government should adopt a counter-terrorism strategy anchored in reformed criminal justice and better intelligence gathering. Rather than cracking down on rivals, it should forge a broad social and political consensus on how to confront the threat,” said the ICG.

  •  Courtesy: The Daily Star Mar 01, 2018


'Police seize yaba, become dealers'

Three probe bodies formed as a complaint says detectives in Cox's Bazar seized 7.30 lakh pills in Sept last year, sold most of them for Tk 8cr



Detectives in Cox's Bazar sold off 7.22 lakh yaba pills they had seized for Tk 8 crore, according to a complaint filed by a sub-inspector.

Two police probe bodies are investigating the matter and the police headquarters recently gave the nod for a third enquiry. However, officials concerned are very tight lipped about the matter.   

SI Bashir Uddin of Feni Model Police Station filed the complaint with the IGP's complaint cell and Cox's Bazar Police Superintendent on December 27 last year.

In his complaint, Bashir said a team of the Detective Branch of Cox's Bazar seized 7.30 lakh yaba pills at Teknaf on September 27. But the team showed seizure of only 8,000 pieces in a case filed with Teknaf Police Station the next day.

Bashir was a member of Cox's Bazar DB then.

The rest 7.22 lakh pills were sold off in phases in Ukhia which made Tk 8 crore, Bashir, who is now posted at Noakhali Police Training Centre, told The Daily Star.

He alleged that former officer-in-charge Monirul Islam of Detective Branch of Cox's Bazar, and SI Kamal Hossain were involved in the “offence”.

“They are now after me and I fear for my family,” he added.

Bashir in his complaint alleged that SI Masud Rana of Cox's Bazar DB met him when he was in Feni Model Police Station on November 8 last year.

“Sitting in a room at the police station, SI Masud called OC sir [Monirul] and asked me to talk to him … He [Monirul] hurled abuse at me and threatened me that he would destroy my family, if I disclosed anything.”

Bashir claimed that Monirul over the phone told him that they had gotten Tk 8 crore selling the pills and that he would spend Tk 1 crore for ruining Bashir's family. Two days later, Masud called Bashir and told him that Monirul sent him to talk to him, Bashir claimed.

When Bashir declined, Masud told him that he had come a long way to meet him and that he would leave after having a meal with him, Bashir mentioned in the complaint. 

They met in Bashir's Banasree home in the capital where Masud offered Tk 1 lakh for Bashir's silence, which led to an altercation. Their heated exchanges continued to the ground floor.

Seeing the altercation, a patrolling team of Rampura Police Station took them to the police station.

Officer-in-Charge Proloy Kumar Saha of Rampura Police Station submitted a report before the deputy commissioner of Motijheel on November 17 last year where he said, “The unexpected incident took place between the two sub-inspectors centring the share of money of a transaction incident of DB Cox's Bazar.”

Monirul and Masud could not be reached for comments. Monirul is now in-charge of the Cox's Bazar Beach Police outpost. His mobile was switched off.

An official of the district police yesterday said all members of Cox's Bazar Detective Branch were transferred after other law enforcers came to know about the incident.

Chittagong Range police and Cox's Bazar district police have separate bodies investigating the matter. The police headquarters recently approved a central body to probe the scandal, police sources said.

Rezaul Haq, additional DIG of Discipline and Professional Standard wing of the PHQ, told The Daily Star that initiative was taken to investigate the complaint.

Without giving much details, Rokon Uddin, additional deputy inspector general (Admin) of Chittagong Range Police, said, “We have received the complaint and investigation is going on. Steps will be taken as per the probe findings.”

Iqbal Hossain, superintendent of police of Cox's Bazar, said a probe body led by district additional SP was investigating. “We are yet to be in a position to disclose anything,” he added.

On October 26 last year, a Cox's Bazar court sent seven members of the district DB police to jail in connection with a case filed for kidnapping a businessman and taking Tk 17 lakh ransom.

  • Courtesy: The Daily Star March 01, 2018

Wednesday, February 28, 2018

২৫ প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা



ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষ ২৫টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার ৬৯৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা (২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত)। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। 

বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এসব প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছে। তবে কোন প্রতিষ্ঠান কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা নিয়েছে, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

কমিটির কার্যপত্র থেকে জানা যায়, শীর্ষ ২৫টি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্সের খেলাপি ঋণ ৮৮৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেডের ৫৫৮ কোটি ৯ লাখ টাকা, জাসমির ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ৫৪৭ কোটি ৯৫ লাখ, ম্যাক্স স্পিনিং মিলস ৫২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা, বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ৫১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, ঢাকা ট্রেডিং হাউস ৪৮৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা, আনোয়ার স্পিনিং মিলস ৪৭৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, সিদ্দিক ট্রেডার্স ৪২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ ৪১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা, আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেড ৪০১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, লিজেন্ড হোল্ডিংস ৩৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, হল-মার্ক ফ্যাশন লিমিটেড ৩৩৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল ৩৩৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, মুন্নু ফেব্রিক্স ৩৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স লিমিটেড ৩২২ কোটি ৪ লাখ টাকা, সাহারিশ কম্পোজিট টাওয়েল লিমিটেড ৩১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, নুরজাহান সুপার অয়েল লিমিডেট ৩০৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, কেয়া ইয়ার্ন লিমিটেড ২৯২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, সালেহ কার্পেট মিলস লিমিটেড ২৮৭ কোটি ১ লাখ টাকা, ফেয়ার ইয়ার্ন প্রসেসিং লিমিটেড ২৭৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা, এসকে স্টিল ২৭১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, চৌধুরী নিটওয়্যার লিমিটেড ২৬৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, হেল্প লাইন রিসোর্সেস লিমিটেড ২৫৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা, সিক্স সিজন অ্যাপার্টমেন্ট লিমিটেড ২৫৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, বিসমিল্লাহ টাওয়েলস লিমিটেড ২৪৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা দূর করা, ঋণখেলাপি বন্ধে আইনি সংস্কারে করণীয় ঠিক করে প্রতিবেদন দিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। কমিটিকে ৪৫ দিনের মধ্যে বাস্তবভিত্তিক একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া খেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো কোন কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নিয়েছে, তাদের পারিবারিক পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা এবং আইনে দুর্বলতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। ব্যাংকগুলো বলে, ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ আদালতে গিয়ে আবার অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ নেয়। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয় ও উচ্চ আদালতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চিন্তা আছে সংসদীয় কমিটির।

এ ছাড়া কমিটির বৈঠকে শেয়ারবাজার নিয়েও আলোচনা হয়। আবদুর রাজ্জাক বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভারত ও চীনের দুটি কনসোর্টিয়ামের বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে কমিটি।

আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য নাজমুল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, ফরহাদ হোসেন এবং আখতার জাহান বৈঠকে অংশ নেন।
- .prothomalo.com/ ফেব্রুয়ারি ২৮,  ২০১৮

বাংলাদেশ ও মুসলিম-বিরোধিতা বাড়তে পারে

বিশেষ সাক্ষাৎকার: ইমতিয়াজ আহমেদ


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন এ অঞ্চলের ভূরাজনীতি, চীন-ভারত সম্পর্ক ও দেশ দুটির প্রতিযোগিতামূলক তৎপরতায় বাংলাদেশের অবস্থান ও সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধানের এক বিতর্কিত মন্তব্যের বিষয় ধরে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়া

প্রথম আলো: ভারতীয় সেনাপ্রধান বলেছেন, চীনের সহায়তায় পাকিস্তান বাংলাদেশের মুসলমানদের ভারতে পাঠাচ্ছে। ভারতের সেনাপ্রধানদের মুখে সাধারণত রাজনৈতিক বক্তব্য শোনা যায় না। এমন মন্তব্যের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: এ ধরনের বক্তব্য দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আমাদের দেখা দরকার যে তিনি কেন এ কথা বলেছেন। বক্তব্যটি পরিষ্কারভাবেই রাজনৈতিক, তাই এর পেছনে সেনাপ্রধানের নিজের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। তিনি অবসরে যাবেন, সরকারি দল বিজেপিকে হয়তো কোনো কারণে তুষ্ট করতে চাইছেন। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর চলমান নির্বাচনের সঙ্গেও এর সম্পর্ক থাকতে পারে।

প্রথম আলো: এই মন্তব্য দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: আসলে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ বা এ ধরনের কথাবার্তা ভারতের রাজনৈতিক মহলে দীর্ঘদিন ধরে বলা হচ্ছে। এর মূল কারণ আসলে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। এই ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগানো হয়। ক্রমাগত এসব বলার ফলে রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলেও এর একটা প্রভাব পড়েছে। এসব বক্তব্য ভারতে বাংলাদেশ ও মুসলিমবিরোধী মনোভাব বাড়াতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও আমরা একই চর্চা দেখেছি ও দেখি। এখানেও ভারত-বিরোধিতার রাজনীতির চেষ্টা হয়। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে ওই মানসিকতার পরিবর্তন হয়নি। ভারতীয় সেনাপ্রধান যে মন্তব্য করেছেন তার সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক-দুই ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। আগেই বলেছি ভারতে বাংলাদেশ ও মুসলমান-বিরোধিতা বাড়তে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশে বাড়তে পারে ভারত-বিরোধিতা। এ ধরনের মন্তব্য আসলে বাংলাদেশের ভারতবিরোধীদের খুশি করবে, কারণ একে তারা সহজেই কাজে লাগাতে পারবে।

প্রথম আলো: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে ভারতকে উদ্বিগ্ন না হতে বলেছেন। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে ভারতের মধ্যে কি কোনো অস্বস্তি দেখা দিয়েছে? যে কারণে প্রধানমন্ত্রী ভারতকে আশ্বস্ত করলেন? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেছেন।

প্রথম আলো: তার মানে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে ভারতের অস্বস্তি রয়েছে এবং সে কারণেই ভারতীয় সাংবাদিকেরা এমন প্রশ্ন করেছেন। 

ইমতিয়াজ আহমেদ: আসলে চীন-ভারত সম্পর্কের বিষয়টি খুব জটিল।’ ৬২ সালের যুদ্ধের ছায়া এখানে ভূমিকা পালন করে। সেই যুদ্ধে পরাজয়ের বিষয়টিকে ভারত সব সময় মাথায় রাখে। ভারতের চলচ্চিত্র, সাহিত্য, বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় ও রাজনীতিতে এসব বিষয় চর্চা হয়। আবার বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে দেখবেন একক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য চীনের সঙ্গে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে যত শিক্ষার্থী বিদেশে পড়াশোনা করতে গেছে, সবচেয়ে বেশি গেছে চীনে। দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভারতের কোনো প্রতিবেশী দেশ যখন চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক সম্পর্ক করতে চায়, তখন ভারত তা মানতে ও পছন্দ করতে চায় না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত তাঁর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন যে তোমরা চীনের সঙ্গে যেমন উন্নয়নের স্বার্থে অর্থনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করো, আমরাও তা-ই করছি।

প্রথম আলো: ভারতের বিচলিত হওয়ার পেছনে কী কাজ করেছে বলে মনে করেন? চীনের প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর, বিশাল আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি? নাকি চীন থেকে বাংলাদেশের সাবমেরিন কেনা? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: সমস্যা হচ্ছে ভারতের পররাষ্ট্রনীতি যে মাত্রায় পরিশীলিত হওয়া উচিত, কার্যত তেমন নয়। ভারত হয়তো ভেবেছিল গত নির্বাচনে তারা যেভাবে বর্তমান সরকারকে সমর্থন করেছে তাতে বাংলাদেশ তাদের চাওয়ার বাইরে কিছু করবে না। কিন্তু বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে, তাদের কাছ থেকে সাবমেরিন কিনেছে-এসব হয়তো ভারত ভালো চোখে দেখছে না। যদি এমন ভেবে থাকে তবে বলতেই হবে যে ভারতে পররাষ্ট্রনীতির পরিপক্বতার অভাব রয়েছে।

প্রথম আলো: সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি যে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও মালদ্বীপে ভারতের প্রভাব আগের তুলনায় কমেছে। এটা কেন হচ্ছে বলে মনে করেন? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: ভারতের চিন্তায় প্রতিবেশী দেশের দুটি মডেল রয়েছে বলে মনে হয়। একটি পাকিস্তান ও অন্যটি ভুটান। প্রতিবেশী দেশগুলোকে তারা এভাবেই দেখতে চায়। ভারতকে এটা বুঝতে হবে যে প্রতিবেশীদের এভাবে দেখা যায় না। বাংলাদেশ কোনোভাবেই পাকিস্তান নয়। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। আবার ভুটানের অনেক কিছু যেভাবে ভারত নিয়ন্ত্রণ করে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা করা সম্ভব নয়। নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় এসব করতে গিয়ে ভারত তার অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সেসব দেশে ভারত-বিরোধিতা বেড়েছে। রাজনীতিতেও পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা বা নেপালের ক্ষেত্রে এখন দেখবেন যে সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে একধরনের মতৈক্য হয়েছে। কিন্তু ভারত তার পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনছে না। ভারত নিজে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখবে কিন্তু প্রতিবেশী দেশগুলোকে তা করতে দেবে না-এমন নীতি পরিপক্বতার লক্ষণ নয়।

প্রথম আলো: কিন্তু চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক তো শুধুই অর্থনৈতিক নয়। সামরিক ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা এবং সেখান থেকে সমরাস্ত্র কেনার বিষয়টি তো দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে। 

ইমতিয়াজ আহমেদ: বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। কোনো দেশ যখন অস্ত্র কেনে তখন স্বাভাবিকভাবেই সে নিকট প্রতিবেশী দেশের চেয়ে আলাদা ও ভিন্ন ধরনের অস্ত্র কিনতে চায়। এটা ভারতের না বোঝার কোনো কারণ নেই। বিশ্বের সব দেশ তা-ই করে। আপনি এর আগে চীন থেকে সাবমেরিন কেনার কথা বলেছেন। ভারতের বোঝা উচিত যে এখন বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হয়েছে। এই সমুদ্রসীমা পাহারার প্রয়োজন রয়েছে। জলদস্যুদের তৎপরতা ও অবৈধভাবে মাছ ধরা ঠেকানোর বিষয়টি খুবই জরুরি। এসব ঠেকাতে আমাদের নৌবাহিনীর জন্য অনেক জাহাজ কেনার চেয়ে সাবমেরিন কেনা অনেক সাশ্রয়ী উদ্যোগ। ভারত পারমাণবিক শক্তিধর একটি দেশ, শক্তিশালী নৌবাহিনী রয়েছে তাদের। এখন বাংলাদেশ চীন থেকে অস্ত্র কিনলে বা দুটি সাবমেরিন কিনলে ভারত যদি তা মেনে নিতে না পারে, তাহলে তো বিপদ।

প্রথম আলো: এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার নিয়ে চীন-ভারতের প্রতিযোগিতার মধ্যে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইমতিয়াজ আহমেদ: আগেই বলেছি চীন-ভারত প্রতিযোগিতার কিছু মানসিক দিক রয়েছে, আবার রয়েছে কিছু কৌশলগত দিক। মানসিক দিক থেকে ভারতের অবস্থানের কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। আসলে ভারতের ব্যবসায়ীরা চীনকে যতটা বোঝেন, ভারতের আমলারা তা বোঝেন না। ভারত চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত না হলেও ভারতের অনেক ব্যবসায়ী কিন্তু তা চান। এখন চীনের সঙ্গে একধরনের বিরোধ টিকিয়ে রাখার পেছনে কিছু কৌশলগত কারণ রয়েছে। ভারত যদি এটা দেখাতে পারে যে চীনের সঙ্গে তার বৈরিতা রয়েছে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমের কাছ থেকে কিছু সুবিধা আদায় করা সম্ভব। ভারত এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এর সুবিধা নিয়েছে। পারমাণবিক ও সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা পাচ্ছে। ভারত জানে যে চীনের সঙ্গে বৈরিতা থাকলেও তারা একে সংঘাতের পর্যায়ে নিয়ে যাবে না। কৌশলগত কারণেও চীন-বিরোধিতা বা একটি বৈরিতার পরিস্থিতি জারি রাখা জরুরি।

প্রথম আলো: এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো একটি দেশ কীভাবে একই সঙ্গে দুই বড় ও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: সম্পর্ককে ব্যাপকভাবে অর্থনীতিকেন্দ্রিক করে ফেলা উচিত। ভারত ও চীনকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নিতে পারে। এই তিন দেশের অর্থনৈতিক উদ্যোগে সব পক্ষই লাভবান হবে। বিশেষ করে ভারতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সেখানকার জনগণেরও অর্থনৈতিক উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। বাংলাদেশের এখানে বড় ভূমিকা পালন করার সুযোগ রয়েছে। কারণ, এই বড় দেশ দুটির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো শত্রুতা বা প্রতিযোগিতা নেই, ভূখণ্ডগত কোনো সমস্যাও নেই।

প্রথম আলো: রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের বর্বরতা এবং শরণার্থী সংকটে আমরা দেখলাম ভারত ও চীন স্পষ্টতই মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ঐতিহাসিক, কিন্তু ভারতের মিয়ানমারের পক্ষ নেওয়া বিস্ময়কর। বাংলাদেশ কেন ভারতকে পাশে পেল না? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: আমি মনে করি, ভারত আসলে বড় ভুল করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নেতৃত্ব দেওয়ার ও ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিয়েছিল। ভারতের নীতিনির্ধারকেরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যে ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তা জাতি নিধন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছে। ভারত একাত্তর সালে বাংলাদেশের গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল ও সে জন্য দেশ হিসেবে বিশ্বে যে সম্মান ও মর্যাদা অর্জন করেছিল, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে চুপ থেকে ভারত তার সেই অবস্থানকে অনেকটাই দুর্বল করেছে। ভারতের এটা বোঝা উচিত যে চীনের অর্থনৈতিক শক্তির ধারেকাছে যাওয়ার অবস্থায়ও ভারত নেই। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেরও সেই অবস্থা নেই। ফলে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় ভারত চীনের সঙ্গে পেরে উঠবে না। আর মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক তাতে দেশটিকে ভারত চীনের কাছ থেকে নিজের বলয়ে আনতে পারবে না। মাঝখান থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন হারিয়েছে এবং দেশটির ভূমিকা বাংলাদেশের জনগণকে হতাশ করেছে। চীন থেকে সাবমেরিন কেনা বা আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ভারত এমনটি করেছে কি না, কে জানে।

প্রথম আলো: রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের ভূমিকাকে কীভাবে দেখছেন? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: চীন নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষ নিয়ে ভেটো দিয়েছে। এরপর আমরা দেখেছি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং সমস্যা সমাধানে তিন পর্যায়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। মিয়ানমারে গিয়েও তিনি একই প্রস্তাব দিয়েছেন। এর ওপর ভিত্তি করেই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তি করেছে। আমরা দেখলাম যে চীন যে রকমই হোক একটি ভূমিকা পালন করেছে। ভারত কিন্তু কোনো ভূমিকা রাখতে পারল না।

প্রথম আলো: মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের যে চুক্তি হয়েছে তা কতটুকু কার্যকর হবে, সেই সংশয় কিন্তু দিনে দিনে জোরদার হচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখন বাংলাদেশের তরফে কিছু করণীয় আছে কী? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: আমরা দেখেছি যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত ও চীনের অবস্থান কাছাকাছি। কিন্তু এই সংকট সমাধানে দেশ দুটির করণীয় রয়েছে। আমি মনে করি শুধু রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিবেচনায় নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উচিত বেইজিং ও দিল্লি সফর করা। এ ধরনের সফর অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশ তো সব সময়ই দুই দেশের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা ও সংবেদনশীলতাকে বিবেচনায় নিয়েছে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির জন্য চীনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করার সব উদ্যোগ নিয়েও বাংলাদেশ মূলত ভারতের আপত্তির কারণে তা করেনি। 

ইমতিয়াজ আহমেদ: চীনের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে অন্য দেশের পররাষ্ট্রনীতি ও কৌশলের পার্থক্য রয়েছে। চীন সম্পর্ক তৈরি করার জন্য সময় নিয়ে লেগে থাকে। কোনো কিছুতে বাধা এলে তারা তা বাদ দিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করে। পুরোনো কিছু নিয়ে তারা মাথা ঘামায় না। তারা অপেক্ষা করার নীতি নেয়। সোনাদিয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ রাজি হয়নি, এতে কিন্তু চীন দমে যায়নি বা এতে বিরক্তি প্রকাশ করেনি। চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসেছেন এবং বিপুল সাহায্য-সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি নিয়েই এসেছেন। বাংলাদেশের উচিত এ ধরনের কাঠামো যাতে সবাই মিলে করা যায়, তেমন উদ্যোগ নেওয়া। প্রয়োজনে ভারত ও চীনের যৌথ বিনিয়োগেই গভীর সমুদ্রবন্দর হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশে গভীর সমুদ্রবন্দর হলে তার ফল ভারত ও চীনসহ আশপাশের অনেক দেশই ভোগ করতে পারবে। কলম্বো সমুদ্রবন্দরে চীনের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। সেই বন্দর কিন্তু ভারত ব্যবহার করছে। কারণ, বন্দর তো শুধু একটি দেশের সুবিধার জন্য তৈরি হয় না।

প্রথমআলো: সম্প্রতি দিল্লিতে এক সেমিনারে ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের তরফেই বলা হয়েছে যে ভারতীয় কূটনীতিতে বাংলাদেশ যথাযথ মনোযোগ পায় না, অথচ এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাওয়া উচিত। আপনার মন্তব্য কী? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: ভারতীয় নীতিনির্ধারকেরা প্রতিবেশী দেশগুলোকে মানচিত্রের বিবেচনায় দেখেন। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ছোট। কিন্তু এটা বুঝতে হবে যে মানচিত্র সবকিছু বলে না। সেখানে ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব, কৌশলগত গুরুত্ব ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব-এসব দেখা যায় না। সিঙ্গাপুর বা দক্ষিণ কোরিয়ার আকার মানচিত্রে দেখে এর গুরুত্ব বিবেচনা করলে হবে না। বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম দেশ। এত জনসংখ্যার একটি দেশকে যেকোনো বিবেচনাতেই উপেক্ষা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ভারতকে বুঝতে হবে যে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে ভারতের স্বার্থ জড়িত আছে। বাংলাদেশের অনুন্নয়ন বা অস্থিতিশীল ভারতের জন্য ভালো কিছু নয়। বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের চেয়ে ভালো করছে। এখন ভারত কি এতে ঈর্ষান্বিত হবে নাকি এই অগ্রগতিকে সমর্থন করবে। ভারতকে বুঝতে হবে যে বাংলাদেশ বা প্রতিবেশীদের যেকোনো উন্নয়ন ভারতের নিজের স্বার্থেই জরুরি। ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের এই বাস্তবতা মেনে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। মানচিত্র দেখে প্রতিবেশীদের বিবেচনা করার মানসিকতা থেকে সরে আসতে হবে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশের গত একতরফা নির্বাচনকে ভারত কোনো রাখঢাক না করেই সমর্থন করেছিল। সামনে নির্বাচন আসছে। এবার ভারতের অবস্থান কী হতে পারে বলে মনে করেন? 

ইমতিয়াজ আহমেদ: গত চার বছরে ভারতের কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। সরকারি দলকে সহায়তা করলেই সবকিছু মিলবে-এমন ধারণা যে ভুল, তা হয়তো তারা টের পেয়েছে। আসলে আগে যে ধরনের নির্বাচন বাংলাদেশে হয়েছে তা করা গেছে আমাদের নিজস্ব রাজনীতির সমস্যার কারণে। এবার ভারত কোনো দলের পক্ষে সরাসরি থাকতে চাইবে বলে মনে হয় না। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের দিকেই তাদের আগ্রহ থাকবে বলে মনে হয়।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ। 

ইমতিয়াজ আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

  • Courtesy: Prothom Alo Feb 28, 2018