Search

Wednesday, March 7, 2018

হাইওয়ে পুলিশকে সামলাবে কে? মহাসড়কে প্রাণঘাতী চাঁদাবাজি

মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে পুলিশের দুই সদস্যের চাঁদাবাজির চেষ্টার পরিণতিহলো মর্মান্তিক: দুটি নিরীহ প্রাণ অকালে ঝরে গেল; আহত হলেন একটি বাসের ৪০ জন যাত্রীর প্রায় সবাই। এ কেমন দেশ আমাদের?

গত রোববার রাতে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার পালাহার এলাকায় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটির বিবরণ প্রথম আলোয় মঙ্গলবার ছাপা হয়েছে। দুর্ঘটনার শিকার বাসটির যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, সেখানে নান্দাইল
হাইওয়ে থানা-পুলিশের কয়েকজন সদস্য চলন্ত যানবাহন থামিয়ে চালকদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছিলেন। একটি যাত্রীবাহী বাস তাঁদের পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁরা বাসটির চালকের চোখে টর্চের আলো তাক করলে চালক বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। ফলে একজন বাইসাইকেল আরোহী বাসটির নিচে চাপা পড়ে মারা যান এবং বাসটি সড়কের পাশের পুকুরে পড়ে যায়। ফলে একটি শিশু মারা যায়
এবং বাসের প্রায় সব যাত্রী বিভিন্ন মাত্রায় জখম হন।




 এই বিবরণ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে পুলিশের ওই সদস্যরা শুধু অপরাধপ্রবণই নন, তাঁদের সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানেরও অভাব রয়েছে। চলন্ত যানবাহনের চালকের চোখে টর্চের আলো ফেললে চালক নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন এবং তার ফলে ওই যানটি দুর্ঘটনায় পড়ে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে—এটুকু সাধারণ জ্ঞান যাঁদের নেই, তাঁরা কী করে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি পান, তা গুরুতর ভাবনার
বিষয়। আরও গুরুতর অভিযোগ হলো, ওই এলাকার গ্রামবাসী প্রথম আলোকে যেমনটি বলেন, নান্দাইল হাইওয়ে থানা-পুলিশের সদস্যরা মুশলি ও পালাহারের মাঝখানে নির্জন স্থানে প্রতি রাতেই যানবাহন থামিয়ে চাঁদাবাজি করেন এবং এই কাজে তাঁরা চালকদের চোখে টর্চের আলো ফেলার পদ্ধতিটি নিয়মিতভাবেই প্রয়োগ করেন। এর মানে, সেখানে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি শুধু নিয়মিত ব্যাপারই নয়, অতি
মাত্রায় বিপজ্জনকও বটে। তাঁরা এই অপরাধ নিয়মিতভাবে করে চলেছেন যানবাহনের যাত্রীসাধারণের জীবনের পক্ষে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ পন্থায়।

রোববারের দুর্ঘটনাটির পরপর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী হাইওয়ে পুলিশের দুই সদস্যকে ধরে পিটুনি দিয়েছেন, তাঁদের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন এবং মহাসড়ক অবরোধ করে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন।অথচ নান্দাইল হাইওয়ে থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগ নেই।’ এটা দায়িত্বহীন বক্তব্য। অথবা এই ওসি সব জেনেও না জানার ভান করছেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিত নান্দাইল হাইওয়ে থানা পুরোটাই সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ হয়ে উঠেছে কি না।



Courtesy: Prothom Alo Mar 07, 2018

Tuesday, March 6, 2018

ভোট উধাও ব্যবসায়ী সংগঠন থেকেও

  • নির্বাচনের বদলে সমঝোতা
  • জেলা চেম্বারের ৬৪ টির মধ্যে ৪৭ টিতে ভোটাভুটি ছাড়া কমিটি।
  • কমপক্ষে ২০ টির সভাপতি পদে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা।


ভোট কার্যত উধাও হয়ে গেছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো থেকেও। ব্যবসায়ীরা এখন আর নিজ নিজ সংগঠনের নেতা নির্বাচন করার সুযোগ পান না। জেলা পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের সংগঠন জেলা চেম্বারগুলোর সিংহভাগ কমিটি হয়েছে ভোটাভুটি ছাড়া। পণ্যভিত্তিক সংগঠনগুলোতেও কমিটি হচ্ছে চাপিয়ে দেওয়া সমঝোতার মাধ্যমে। সব মিলিয়ে দেশের সাধারণ নির্বাচনের মতো ব্যবসায়ীদের সংগঠনের নির্বাচনেও প্রতিযোগিতা বিদায় নিয়েছে।

সারা দেশে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬৪টি জেলা চেম্বারের মধ্যে ৪৭ টিতেই সর্বশেষ কমিটি হয়েছে কোনো রকমের ভোটাভুটি ছাড়া। ৫ টিতে আংশিকভাবে ভোট হয়েছে। ১ টিতে ভোটাভুটি নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। পূর্ণ ভোটাভুটি হয়েছে মাত্র ১১টি চেম্বারে।

পণ্যভিত্তিক বড় সংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ), বাংলাদেশ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (রিহ্যাব) কিছু সংগঠনে এখন আর ভোট হচ্ছে না। এমনকি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) কমিটিও হয়েছে আংশিক ভোটাভুটির মাধ্যমে।

ভোট না হওয়ার মূল কারণ সংগঠন দখলে রাখার চেষ্টা। ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা হতে পারলে নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া, রাজনৈতিক দলের পদ পাওয়া, এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদেশ সফরে যাওয়ার সুযোগ হয়। পাশাপাশি নিজ নিজ ব্যবসার ক্ষেত্রেও সুবিধা হয়। এসব কারণে ব্যবসায়ীদের একটি অংশের মধ্যে যেকোনোভাবে নেতা হওয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক দলের নেতারাও ব্যবসায়ী সংগঠনের পদ দখলে রাখতে উদ্যোগী হয়ে উঠেছেন। অন্যদিকে সরকারও সমাজের প্রভাবশালী পক্ষ ব্যবসায়ীদের নিজের পক্ষে রাখতে চায়। এ জন্য প্রধান সংগঠনগুলোতে দলীয় অথবা অনুগত ব্যবসায়ীদের নেতা বানানো নিশ্চিত করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাণিজ্য সংগঠনগুলো নামে ব্যবসায়ীদের সংগঠন হলেও তারা রাজনৈতিক অঙ্গনের ছায়া হিসেবে কাজ করছে। তারা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সহায়তাকারী হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি শুরু হয়, তখন তার অবশ্যম্ভাবী উপসর্গ হয় জবাবদিহির অভাব। আমাদের দেশে সেটাই হচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে সুশাসনের ঘাটতি সামাজিক ও ব্যবসায়িক অঙ্গনে প্রবেশ করেছে।’

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে শুধু ভোট বিদায় নিয়েছে তা নয়, বিনা ভোটের কমিটিতে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পদধারীরা। এফবিসিসিআইয়ের দুজন সহসভাপতিই সরকারি দলের নেতা। জেলার ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর কমপক্ষে ২০ টির সভাপতি পদে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা স্থান পেয়েছেন। অনেক কমিটির শীর্ষ পদটিতে আওয়ামী লীগের নেতাদের স্বজনেরা আসীন হয়েছেন।

সরকারের ব্যবসায়ী শাখা এফবিসিসিআই
এফবিসিসিআইতে কে সভাপতি ও সহসভাপতি হবেন, তা ঠিক করে দেয় সরকার। ফলে বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে সভাপতি পদে সরকার-সমর্থিত প্রার্থীর বিপরীতে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। এমনকি সহসভাপতির দুটি পদেও নেতা ঠিক হয়েছে সরকারের আশীর্বাদে। ব্যবসায়ী মহলের আলোচনাই হচ্ছে এফবিসিসিআই কার্যত সরকারের ব্যবসায়ী শাখা।

সংগঠনটির সর্বশেষ নির্বাচনে বর্তমান কমিটির সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের বিপরীতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। এমনকি বরাবরের মতোই সংগঠনটির সভাপতি ও দুজন সহসভাপতি হয়েছেন সরকারের আশীর্বাদ পেয়ে। তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। বর্তমান দুই সহসভাপতির একজন যুবলীগের নেতা শেখ ফজলে ফাহিম। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে। অন্যজন সাবেক ডেপুটি স্পিকার আলী আশরাফের ছেলে মুনতাকিম আশরাফ। তিনি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি।

এফবিসিসিআইয়ের সর্বশেষ সাতজন সভাপতির ছয়জনই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, প্রয়াত আনিসুল হক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। আগে থেকে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন আওয়ামী লীগের সাংসদ। আরেক সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা। অন্যদিকে আবদুল আউয়াল মিন্টু বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।

দেখা গেছে, স্থগিত হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনা প্রায় সবাই ছিলেন ব্যবসায়ী। বিএনপির প্রার্থীও ব্যবসায়ী।

হলফনামা বিশ্লেষণ করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ২০১৪ সালে জানায়, দশম সংসদের সাংসদ হওয়া ১৭৫ জনের পেশা ব্যবসা। ফলে সংসদে ব্যবসায়ীদের হার এখন ৫০ শতাংশ।

জেলা চেম্বার ভোটহীন, কমিটিতে দলীয়রা
এফবিসিসিআই ও বড় বড় পণ্যভিত্তিক সংগঠনের নির্বাচনে নেতা হতে যেমন সরকারের আশীর্বাদ লাগে, তেমনি জেলা চেম্বারের নেতা হতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতার সুদৃষ্টির প্রয়োজন হচ্ছে। অবশ্য নিজে আওয়ামী লীগের নেতা হলে ভোট ছাড়াই সভাপতি হওয়া যাচ্ছে।

বরিশাল চেম্বারের সাইদুর রহমান মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনি ভোট ছাড়াই সভাপতি হয়েছেন। ভোলা চেম্বারের আবদুল মমিন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনিও ভোট ছাড়া কমিটিতে এসেছেন। কুমিল্লা চেম্বারের মাসুদ পারভেজ খান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। এই চেম্বারে দীর্ঘদিন ভোট হয় না। ঝিনাইদহ চেম্বারের সাইদুল করিম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনিও ভোট ছাড়া সভাপতি। কুষ্টিয়া চেম্বারের রবিউল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। তিনি আবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। দুবার ভোট ছাড়া সভাপতি হয়েছেন। সুনামগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি খায়রুল হুদা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। তাঁর কমিটিতেও ভোট হয়নি।

আওয়ামী লীগের বাইরে জেলা চেম্বারের সভাপতি পদে সংসদে বিরোধী দল ও সরকারের অংশ জাতীয় পার্টির নেতা আছেন পাঁচটি চেম্বারের সভাপতি পদে। বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা আছেন পাঁচটি চেম্বারের প্রধান হিসেবে।

ভোটাভুটি না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের মাধ্যমে সবকিছু হওয়া সব সময় ভালো জিনিস। কিন্তু অনেক সময় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে কেউ যদি ভয়ভীতি বা চাপ প্রয়োগ করে অন্যকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না দেয়, সেটা সঠিক নয়।

পণ্যভিত্তিক সংগঠনেও ভোট হয় না
সাড়ে সাত বছর ধরে বিকেএমইএর সভাপতি পদ আঁকড়ে আছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমান। ২০১২ সালের পর থেকে ব্যবসায়িক সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন হচ্ছে না। বিকেএমইএর কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। তখন সভাপতি পদ ধরে রাখতে কৌশলের আশ্রয় নেন সেলিম ওসমান। নারায়ণগঞ্জে সংগঠনের প্রধান কার্যালয় বিকেএমইএ কমপ্লেক্স নির্মাণের অজুহাত দেখিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে কমিটির মেয়াদ ছয় মাস করে দুই দফা বাড়িয়ে নেন সেলিম ওসমান। এরপর সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে নতুন করে দুই বছরের জন্য সভাপতি হয়েছেন সেলিম ওসমান।

দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএতে সর্বশেষ ২০১৩ সালে ভোট হয়েছিল। তারপরই সমঝোতার ভিত্তিতে সংগঠনটির দুই পক্ষ-সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম বিজিএমইএর নেতৃত্ব ভাগাভাগির বিষয়ে চুক্তি করেন। ফলে এখানেও আর ভোট হয় না। সংগঠনটির বর্তমান কমিটির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানোর পর চলতি মাসে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান কমিটির মেয়াদই এক বছর বাড়িয়ে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ফলে দুই বছরের জন্য গঠিত কমিটি শেষ পর্যন্ত সাড়ে তিন বছর দায়িত্ব পালন করবে।

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবে আগে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাভুটি হতো। ২০১৪ সাল থেকে রিহ্যাবে ভোটাভুটি হয় না। সমঝোতার মাধ্যমেই দ্বিতীয় মেয়াদে সভাপতি পদে আছেন আলমগীর শামসুল আলামিন। বর্তমান কমিটির মেয়াদ নতুন করে ছয় মাস বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানালেন একজন নেতা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন পরিচালকের (ডিটিও) কার্যালয় অর্থাৎ ডিটিও অনুবিভাগ বিদ্যমান ১৯৬১ সালের বাণিজ্য সংগঠন অধ্যাদেশে দেওয়া ক্ষমতাবলে সংগঠনগুলোর মেয়াদ একের পর এক বাড়াচ্ছে।

জানতে চাইলে ডিটিও মো. ওবায়দুল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটাভুটির পরিবর্তে সমঝোতার বিষয়ে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে কোনো দরখাস্ত এলে মন্ত্রণালয় যাচাই করে তার অনুমোদন দেয়। মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও তাই করা হয়। এখানে মন্ত্রণালয়ের নিজের স্বার্থের কিছু নেই।’

ভোট উধাও হওয়ায় মূলত ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ ব্যবসায়ীদেরই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের আশীর্বাদে নেতা হওয়া ব্যবসায়ীদের কাজ সরকারকে কাজে সমর্থন দেওয়া। ব্যবসায় পরিবেশের উন্নতি রাজনৈতিক মদদপুষ্ট অথবা সমর্থনপুষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের অগ্রাধিকারে থাকে না। তারা নিজেদের স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। ফলে এসব সংগঠন নীতিনির্ধারণে প্রভাব ও গুরুত্ব ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশে বৈষম্যের সুযোগে সমাজের একটি অংশ এখন অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। এর কিছু অংশ ব্যবসায়ী, কিছু অংশ রাজনৈতিক নেতা। তাঁদের মধ্যে ঐক্য তৈরি হয়েছে, যার উদ্দেশ্য রাজনীতিকে প্রভাবিত করা। তিনি আরও বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জনগণের প্রতি আগের মতো অঙ্গীকার নেই। এ কারণে অর্থশালী রাজনৈতিক পক্ষ ও ব্যবসায়ী পক্ষের মধ্যে এই ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো থেকে ভোট বিদায় রাজনৈতিকীকরণের অংশ কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা যেভাবে শক্তি অর্জন করা যায়, সেভাবেই করবে।

  • প্রথম আলো /৬-৩-১৮

দুর্নীতির সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে দেশ - নাগরিক ঐক্য

* দেশে চলছে নির্বাচিত স্বৈরশাসন, র‌্যাগিংয়ের দায়ে ছাত্রলীগের বহিষ্কৃতদের কেউ দাড়িওয়ালা ছেলেকে দিয়ে এটা ঘটিয়েছে কিনা দেখতে হবে -ডা. জাফরুল্লাহ 

* ঝুঁকিতে ব্যাংক খাত, দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংকের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে -সালেহউদ্দিন আহমেদ 

* দুর্নীতিবাজদের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক মহাশক্তিশালী ক্ষমতাবানরা -আনু মুহাম্মদ



জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশে নির্বাচিত স্বৈরশাসন চলছে । দেশে দুর্নীতির সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ভেঙে পড়ায় সর্বত্র দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। দুর্নীতি মহামারী আকার ধারণ করেছে। অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হলে বদলাতে পারে পরিস্থিতি। নইলে জনগণকে আরও খেসারত দিতে হবে।

নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘দুর্নীতি’ শীর্ষক এক সেমিনারের আলোচকরা এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, এম হাফিজ উদ্দিন খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, গবেষক গওহর নাঈম ওয়ারা প্রমুখ। সেমিনারে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন নাগরিক ঐক্যের সদস্য জাহেদ-উর-রহমান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা আরও বলেন, গণতন্ত্র না থাকায় দেশে বাকস্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা বলতে কিছু নেই। সরকার সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করায় দুর্নীতি লাগামহীন হয়ে পড়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। তারা বলেন, দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক ও দৃশ্যমান শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে তাদের পেছনের খেলোয়াড়দেরও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ কাজগুলো করতে হলে দুর্নীতিবাজদের তাড়িয়ে ভালো লোকজনকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।

সেমিনারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, দেশে নতুন শক্তি হিসেবে দুর্নীতির আবির্ভাব হয়েছে। দেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের পুলিশ, আমাদের কর্মকর্তারা সাহায্য করছেন। দেশের শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনা করে শান্তি আনতে পারে। তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে উগ্র বামপন্থীদের প্রভাব ব্যাপক। তারা আমাদের রাজনীতি ধ্বংস করে দিচ্ছে।

এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, দেশে নাগরিকরা কোনো কথা বলছেন না। সব কথা বলছে সরকার। সরকার বলছে, সংবিধান অনুযায়ী পার্লামেন্ট ভাঙা যাবে না, সেনা মোতায়েন করা যাবে না। কারণ এসব সংবিধানে নেই। সরকার যখন বলে প্রশ্ন ফাঁস আগেও হয়েছে তখন প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যাবে না। তিনি মনে করেন, বড় ধরনের গণআন্দোলন ছাড়া দেশকে এ পরিস্থিতি থেকে বের করে আনা সম্ভব নয়।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সব দুর্নীতির মূল কারণ সরকার। দুর্নীতির কারণে দেশের অবস্থা ভালো না। তিনি বলেন, বড় প্রকল্পে বড় দুর্নীতি হচ্ছে। সেগুলোয় দুর্নীতির বিষয় খতিয়ে দেখা দরকার। বিশিষ্ট লেখক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, র‌্যাগিংয়ের দায়ে ছাত্রলীগের বহিষ্কৃতদের কেউ হাবাগোবা দাড়িওয়ালা ছেলেকে দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং খাত আগে অনেক ভালো ছিল। বর্তমানে অনেক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ব্যাংকের টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নেয়ায় ব্যাংক খাতে দুর্নীতি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সাবেক এ গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক শক্তিশালী নর্মস রয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে ব্যাংক খাত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক ধ্বংস হলে সব ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না দিয়ে শুধু ওএসডি করে নিশ্চিন্তে অবসরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। তাদের ওএসডি না করে শাস্তি দিন। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করুন। এদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার মেগা প্রজেক্ট চালু করছে। প্রজেক্টের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি করছে। আর এই দুর্নীতি অবাধ রাখতে দেশে স্বৈরশাসন কায়েম করে জবাবদিহিতা ও বাকস্বাধীনতা বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার। তিনি আরও বলেন, যারা টাকা পাবে তাদেরই যদি বাজেট তৈরি করতে দেয়া হয়, তাহলে দুর্নীতি থামানো যাবে কী করে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, বিচার ব্যবস্থায় ইনভেস্টিগেশন এবং প্রসিকিউশন কুক্ষিগত করা হয়েছে। আদালতের কী অবস্থা তা সবার জানা। নিু আদালত এবং উচ্চ আদালতে কী হয় তা বলার অধিকার আইন দিয়ে খর্ব করা হয়েছে।

গবেষক গওহর নাঈম ওয়ারা বলেন, আমাদের দেশে ফাঁক রেখে আইন করা হয়। প্রক্রিয়াগতভাবে দুর্নীতি আমাদের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই যে নির্বাচনের বছর এলেই নানারকম আন্দোলন, দাবি-দাওয়া আমরা এই প্রেস ক্লাবের সামনেই দেখি। এই দাবি-দাওয়া একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হওয়ার কারণেই আমরা রাস্তায় আন্দোলন দেখতে পাই। আমাদের কর্মকর্তারা প্রকল্পের কাজ খুব ভালোবাসেন। কারণ, সেখানে দুর্নীতি করা যায়। প্রকল্পে বদলি করা হলে কর্মকর্তারা খুশি হন। কিন্তু কুতুবদিয়ায় পাঠানো হলে তাদের মন খারাপ হয়।

সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জাফর ইকবালের ওপর হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- এগুলো যারা করে তারা বিপথগামী, এটা করে বেহেশতে যাওয়া যায় না। খুন-জখম করে বেহেশতে যাওয়া যায় না ঠিকই, তাহলে ক্রসফায়ার করে কীভাবে বেহেশতে যাওয়া যায়? মানুষকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায়, মাসের পর মাস খোঁজ থাকে না। ছয় মাস এক বছর পর লাশ পাওয়া যায়। কার বা কাদের নির্দেশে ক্রসফায়ার হয়? দেখতে দেখতে সবার ভেতর একটা ভয় ঢুকে গেছে। তিনি বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচন করে তারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে। আজ যদি আমরা কথা বলতে পারি, সারা দেশে যদি আমাদের কথা বলতে দেয়া হয়, তবে আশা করি ছয় থেকে এক বছরের মধ্যে কথার কারণেই এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব। কিন্তু তারা এ কথা বলতে দেয়াকেই ভয় পায়।


  • Courtesy: The Daily Jugantor Mar 06, 2018

নির্বাচনের ঠিক আগে ব্যাঙ্কের বাইরে নগদ টাকার পাহাড়!


খলিলুর রহমান  


ব্যাংকে আমানত রাখা মানুষের টাকা যখন ব্যাংক খেয়ে ফেলছে আর আমানতদারদের ব্যাংকে আস্থা ক্ষীণ হচ্ছে, তখন স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিকভাবে ব্যাঙ্কের বাইরে নগদ টাকার সরবরাহ বাড়ছে। ব্যাঙ্কের আমানত নানা ব্যাঙ্কে খেয়ানত হওয়া ও বিশেষ করে দীর্ঘ মেয়াদি আমানতে সুদের হার ক্রমান্বয়ে কমার কারণে আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। সাধারণ সঞ্চয়কারীদের সেভিংস সার্টিফিকেটে বিনিয়োগের প্রবণতা বজায় থাকলেও এখাতেও সুদ কমেছে। এই  সঞ্চয় সার্টিফিকেট খাত থেকে সরকার বাড়তি হারে ঋণগ্রহণ করছে। মূলধন যন্ত্রপাতি খাতে ওভারইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং-এর মাধ্যমে মূলধন পাচার নতুন কিছু নয়। দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর গত ২৭ তারিখের শীর্ষ সংবাদ কাহিনীতে বলা হচ্ছে দেশের ব্যাংকব্যবস্থার বাইরে নগদ টানা ২০১৬ সালে গত নভেম্বর মাসেই ১৫৬.১১ বিলিয়ন বা ১৪.০৬ শতাংশ বেড়ে ১১১২.৪২ বিলিয়ন থেকে ঐ মাসেই দাঁড়ায় ১১১২.৪২ বিলিয়ন টাকা। এ তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষজ্ঞরা এঅর্থ আগামী নির্বাচনে অপব্যবহারের আশঙ্কা করছেন। ২০১৬-র ডিসেম্বরে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১১১৩.৫৩ বিলিয়ন।

অন্যদিকে, ব্যাংক আমানত পড়তেই থাকে। এটা কমে আসে ডিসেম্বর ২০১৬-র  ১৩.১৩ শতাংশ থেকে ডিসেম্বর ২০১৭-র ১০.৬২ শতাংশে। আর ঋণ প্রদান বেড়ে যায় ২০১৬-র ৩১ ডিসেম্বরে তার আগের  পঞ্জিকা বছরের ১৫.৯৮ শতাংশ থেকে উঠে যায় ১৮.১০ শতাংশে।

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা  ব্যাংকের বাইরে কারেন্সি মজুত গড়ে তোলা, মূলধন ও অন্যান্য সামগ্রী আমদানি খাতে নানা কৌশল ও কারচুপি, অনানুষ্ঠনিক  মূদ্রাবাজার বা কার্ব মার্কেট থেকে ডলার কিনে অনানুষ্ঠানিক , অবৈধ বা কালো চ্যানেলে বা হুণ্ডিতে বিদেশে অর্থ পাচার - এধরনের কারণ দেখান। বস্তুত মানি লণ্ডারিং রোধে আইন প্রধানত টেরর মানির প্রবাহ রোধে করা হলেও বিদেশে অর্থপাচার বেধড়ক চলছে নানা পথে। বন্ধ হচ্ছে না কিছুতেই। তা নাহলে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের এতো অর্থ গিয়ে ওঠে কীভাবে। এক্ষেত্রে সরকার শোচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বা এটা তাদের ইচ্ছাকৃত। বলা হচ্ছে, এই বিপুল টাকা ইচ্ছাকৃতভাবেই ব্যাঙ্কিং চানেলের বাইরে রেখে দেওয়া হয়েছে আগামী সাধারণ নির্বাচনে ব্যয় করার জন্য।

এক্সপ্রেস রিপোর্টে আরও বলা হচ্ছে, এজন্য থাইল্যাণ্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও ভারত ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশে বাংলাদেশী ১০০০ টাকা ও ৫০০ টাকার নোট মজুত করার জন্য অননানুষ্ঠনিক  বাজার কাজ করছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহারের এই  অশুভ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। গণমাধ্যম ও সচেতন জনগণকে এই ব্যাপারে জোরালোলো ভূমিকা রাখতে হবে।

বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগে ফের কুয়েতের নিষেধাজ্ঞা


বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের উত্তরের দেশ কুয়েত। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেইখ খালিদ আল জাররাহ সোমবার, মার্চ ৫, বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। 

একই সঙ্গে এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। 

একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের এই দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়া হয়। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তিগত এজেন্ট, দালালরাও জড়িয়ে থাকে। ফলে কেউ কেউ অনেক সময় প্রতারণার শিকার হন। বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ শুরু করে কুয়েত; যা ২০০৭ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এ সময়ের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে কমপক্ষে ৪ লাখ ৮০ হাজার বাংলাদেশি কর্মে যোগ দিয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দেশটিতে পাড়ি জমানোর পর অবৈধ কাজে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে ২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করে কুয়েত। ২০১৪ সালে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে আবারো বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। 

২০১৬ সালের মে মাসে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে অনিয়মের তথ্য উঠে আসার পর আবারো বাংলাদেশে থেকে পুরুষ গৃহকর্মী নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কুয়েত। পরে কুয়েত সরকার দেশটির নাগরিকদের বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে নতুন শর্ত আরোপ করে। ওই সময় বলা হয়, প্রত্যেক কুয়েতি নাগরিক যদি কোনো দেশের একজন পুরুষ গৃহকর্মী নিযুক্ত রাখেন; তাহলে ওই দেশের আর কোনো শ্রমিককে নিয়োগ দিতে পারবেন না। নতুন শর্তে বলা হয়, নিয়োগদাতার অবশ্যই নিজস্ব বাড়ি থাকতে হবে কুয়েতে। ২০১৬ সালে কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ২ লাখ।
  • তথ্যসূত্রঃ মানবজমিন 

বেগম জিয়ার বিচার, বাকশালীকরণের পথে আওয়ামী লীগ



রাতুল চৌধুরী 

রায়ে সেই প্রশ্নবোধক (?) চিহ্ন হয়ে গেলো  দাঁড়ি ! 


বুধবার, ফেব্রুয়ারি ২১, দলের প্রেসব্রিফিং এ বলেছেন,  বিএনপির যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জিয়া অরফ্যনেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের বিষয়ে তাদের  দলের আগের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। আদালত বেগম জিয়ার বক্তব্যকে বিকৃত করে সেটাকেই তাঁর বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছেন। আদালতে বেগম জিয়া বলেছিলেন, ‘...ছাত্র ও শিক্ষকদের হত্যা করা হচ্ছে। এগুলি কী ক্ষমতার অপব্যবহার নয়? ক্ষমতার অপব্যবহার আমি করেছি?’ রায়ে সেই প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে গেলো - দাঁড়ি। এ কাজটি তাঁর ইচ্ছাকৃত ও সরকার প্রধানকে খুশি করার জন্য। তিনি বলেছেন , এটি বিচারক ড. আক্তারুজ্জামানের জুডিশিয়াল ফ্রড। সরকার যে বিচার ব্যবস্থাকে তাদের পদলেহী করে তুলেছেন। এটি তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। দেশের গোটা বিচার ব্যবস্থাকে পদদলিত করা হয়েছে। 

উদ্বেগজনকভাবে বিচার বিভাগে সরকারের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি 

বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৭/১৮ এ মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, উদ্বেগজনকভাবে বাংলাদেশে বিচার বিভাগে সরকারের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পেয়েছে। জুলাইয়ে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের একটি আদেশে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করা হয়। ওই সংশোধনীতে বিচারকদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও  অযোগ্যতার অভিযোগ আনা হলে পার্লামেন্টকে অভিশংসনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি ওই সংশোধনী বাতিল করে দেয়ার পর তার সমালোচনা হয় সরকারের পক্ষ থেকে । এরই পরিপ্রেক্ষিতে নভেম্বরে প্রধান বিচারপতির পদ ত্যাগ করেন এস কে সিনহা। এর ফলে দেশ এমন একটি পরিস্থিতিতে ধাবিত হয়, যাতে ইঙ্গিত মেলে নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করেছে। 

৬৩২ পৃষ্ঠা হয়ে গেলো ১১৬৮ পৃষ্ঠা

বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ৮, বেগম জিয়াকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায়   পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়।  রায় ঘোষণার ১১দিন পর ফেব্রুয়ারি ১৯, বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পায়। যদিও রায় ঘোষণার পরপরই সার্টিপায়েড কপি হাতে পাওয়ার কথা। সুপরিকল্পিত ভাবে প্রায় দুই সপ্তাহ বিলম্ব ঘটানো হয়। গণমাধ্যমে রিপোর্ট আসে বিচারক নাকি রায় এডিট করছেন। ১১৬৮ পৃষ্ঠার এ রায়ের সার্টিফায়েড কপি দেন আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন বেগম জিয়ার আইনজীবীদের হাতে। ১১৬৮ পৃষ্ঠার এ রায়ের সার্টিফায়েড কপির সঙ্গে আদেশ যোগ হয়েছে আরও ৬ পৃষ্ঠা। যদিও রায় ঘোষণার সময় বলা হয়েছিল এটি পুরো রায়টি ৬৩২ পৃষ্ঠার।  

তিন দিনের মধ্যে বেগম জিয়াকে জামিন দেয়ার কথা -  ড. কামাল 

ফেব্রুয়ারি ১৫, জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ‘কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনায়  বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এই ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, তিন দিনের মধ্যে তাকে (বেগম জিয়াকে) জামিন দেয়ার কথা। অথচ বলা হচ্ছে রায় সংশোধন করা হচ্ছে। অবাক লাগছে। রায় দেয়া হয়ে গেছে তবে কপি দেয়া যাচ্ছে না, কারণ কপি সংশোধন করা হচ্ছে। এই যে কপি দেব কপি দেব বলা হচ্ছে ... কী প্রহসন হচ্ছে..। আইনকে নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। 

এখন নথি… ইচ্ছাকৃত বিলম্ব 

বেগম জিয়া জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করলে, আদালত দুইদিন শুনানি শুনে বিচারিকে আদালতকে নথি পাঠাতে বলে। সেই নথি এখন দেশজুড়ে বড় আলোচনার বিষয়। মুক্তিযোদ্ধা  ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘সদরঘাট থেকে ঢাকা হাইকোর্ট যাতায়াতে ডিজিটাল যুগে কয় ঘণ্টা সময় লাগে তা আমাদের জানা। বিচারিক আদালত থেকে বেগম জিয়ার রায়ের কপি হাইকোর্টে পৌঁছুতে কোনোভাবেই এত সময় লাগার কথা নয়! এটা অনেকটা ইচ্ছাকৃত বিলম্ব।’ 

কাজেই, এই রাষ্ট্রযন্ত্র সাবেক তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও মহান স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রীকে দেশের একজন সাধারণ নাগরিকের সমান অধিকারও পাচ্ছেন না। 

তা এখন বিনাভোটের সরকারের ফরজ কাজ হলো ‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্মূলা বাস্তবায়ন। দরকার হলে তারেক ও জুবাইদা রহমানকে ফাঁসাতে হবে। তার আলামত এখনই দেখা যাচ্ছে।  বিচারবিভাগের উচ্চ বিচারক যারা বেগম জিয়ার মামলা দেখবেন তাদের ব্যক্তিগত পটভূমি থাকছে কট্টর আওয়ামী লীগারের । আওয়ামী লীগের দেশের নব বাকশালীকরণ ফ্যাসিবাদ এখন কোথায় গিয়ে থামে সেটাই দেখার বিষয়। 

অস্তাচলে আলো অন্ধকারই ভালো?


আবুল হাসান 


চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াসের কাছে তাঁর এক শিষ‍্য জু কুং জানতে চেয়েছিলেন, ভাল সরকার কেমন? জবাবে তিনি বলেন,"কোনো সরকার জনগণকে পর্যাপ্ত খাবার দেয়া, দেশের নিরাপত্তার জন‍্য উপযুক্ত সৈন‍্যসামন্ত রাখা এবং দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করলেই তাকে ভালো সরকার বলা যায়। এখন এই তিনটির মধ্যে কোনও একটিকে বাদ দিতে বলা হলে, প্রথমে সৈন্য-সামন্ত বাদ দিতে হবে। বাকী দুটোর মধ্যে একটিকে বাদ হলে,বাদ দিতে হবে খাবার। কারণ শেষ পর্যন্ত সব মানুষই মারা যাবে। কিন্তু জনগণের আস্থা ছাড়া কোন সরকারই টিকে থাকতে পারে না।" মৃত্যু মোকাবেলায় বেপরোয়া অসীম সাহসী আমাদের প্রধানমন্ত্রীর এই জন অাস্থা অর্জনেই যতো ভয়। তাঁর মুখের জজবা আর ক্ষমতার বিলক্ষণ দাপটে নিত‍্য রক্তগঙ্গা বয়। বৈঠা রক্তরঙে সাজে ম‌সজিদের অাঙিনায়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ডানা এতই বিস্তৃত, ছড়ানো, এতোই বিশাল যে মাটিতে তিনি  পা রাখতে পারছেন না। অনন্ত আকাশেই ওনার বসবাস। সূর্যের দিকে পিঠ দিয়ে সূর্যালোকে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।  এখানে তিনি  তাঁর নিজের ছায়াই দেখতে পান আর তাঁর ছায়াই তাঁর আইন। যেমনটা শেখ মণি দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলার বাণী পত্রিকায় শিরনাম করেছিলেন -"আইনের শাসন চাই না, মুজিবের শাসন চাই"। কিন্তু সূর্য কি কেবলমাত্র ছায়াধারী ধাতব পাত্র? সেই আইন যা উনার নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়াকে অন‍্যায়ভাবে একজন আখতারুজ্জামানের কাছে অর্পণ করেছে, সেই আইনই যে একদিন উনাকে অর্পণ করবে না অারও কোনও প্রবল শক্তিধরের হাতে সে নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে কি?

জাতি আজ আশাহীন । কূট-অর্থনীতিক চাণক্য যেমন বলেন "চর্চায় না থাকলে জ্ঞান হারিয়ে যায়, অজ্ঞতায় থাকলে মানুষ হারিয়ে যায়,সেনাপতি না থাকলে সেনাদল হারিয়ে যায় আর স্বামী না থাকলে হারিয়ে যায় নারী"। ঠিক তেমনি সরকার না থাকলে হারিয়ে যায় রাষ্ট্র। দেশের সার্বভৌমত্ব অন‍্যের কাছে বন্ধক রাখলে আর যাইহোক তাকে আর সরকার বলা যায় না।

বয়স ও অভিজ্ঞতার অভাবহেতু ব‍্যক্তিমানসের জীবন যেমন ভুল-ত্রুটি, ভালো-মন্দের মাঝ দিয়ে এগিয়ে যায়, ঠিক তেমনি একটি রাজনৈতিক দলও বয়স ও অভিজ্ঞতার অপ্রতুলতায় ভুলত্রুটি, ভালমন্দের ফিউশনে বিবর্তিত হয়। উপরন্তু- "Politics is not a moral prescription" এর তত্ত্ব নিশ্চয়ই রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুসরণ করেই চলবে। তবে গুম-খুন,লুটপাট, দূর্নীতির আওয়ামী অপরাজনীতি ও অপসংস্কৃতির মাত্রাজ্ঞানের সাথে জাতীয়তাবাদী শক্তির তুলনা নিছক দেশরক্ষার ঈমানী দায়িত্বের সাথে প্রতারণা বৈ বেশী কিছু নয়।

নোবেল বিজয়ী ইংরেজ সাহিত্যিক ও নাট‍্যনির্দেশক ইহুদিপুত্র হ‍্যারল্ড পিন্টারের কবিতা থেকে শিরনামটি ধার নিয়েছিলাম। আর আলোচনা করেছি রোমান দার্শনিক সেনেকা ও লেবাননের সাহিত্যিক কাহলীল জিবরানের চিন্তার আলোকে। এবার পবিত্র আল কোরআনের আলোয় নিজে মৌলবাদী সেজে অাজকের এ লেখার যবনিকাপাত ঘটাবো।

হযরত নূহ (আঃ) এর কওমে নূহ, হযরত হুদ (আঃ) এর আদ , হযরত ছালেহ (আঃ) এর ছামূদ , হযরত লূত (আঃ) এর কওমে লূত, হযরত শোয়েব (আঃ) এর আল মাদাইন এবং হযরত মূসা (আঃ) ও হারুন (আঃ) এর ফারাও -- এই ছয়টি জাতিকে মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। জাতি হিসেবে তারা অন‍্যায় ও অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিল এবং তারা একে অপরকে সতর্ক করেনি। আল্লাহর প্রেরিত নবী রাসূলগণকে তারা অনুসরণতো করেইনি,উপরন্তু  ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিল।

শিক্ষায় সীমাহীন নৈরাজ্য, ব‍্যাংক-বীমা ও শেয়ার বাজারে লুটপাট, পুলিশ ও আমলাতন্ত্রের লাগামহীন অত‍্যাচারসহ দূর্নীতি-দূর্বৃত্তায়নের প্রধান কারণ হলো গাঁয় মানে না অাপনি মোড়ল ‘স্বনির্বাচিত ভোটারবিহীন অবৈধ সরকার।’ শেখ সাদি তাঁর গুলিস্তাঁ কাব্যে বলছেন, রাজা যদি কোন গৃহস্থ বা‌ড়‌ি থেকে বিনামূল্যে একটু লবণও খায় তাহলে বাকী সভাসদরা সে বাড়ীর হাঁস-মুরগির খোঁয়াড়সহ সবকিছু উজাড় করে দেবে। প্রধান বিচারপতিসহ অারও ২/১ জন বিচারপতিকে দেশছাড়া হতে হয়েছে আর প্রতিবাদী কন্ঠস্বর বেগম খালেদা জিয়াকে  নিক্ষেপ করা হয়েছে ‘পতিত’ কারাগারে।

এত অত‍্যাচার,এত অবিচার এত নৈরাজ্যের পরও যদি আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারি,তাহলে জাতি হিসেবে কি আমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হব না? ব‍্যর্থ রাষ্ট্রের সংজ্ঞাটাইবা কি? আমাদের ভুলে গেলে চলবে না -- eternal vigilance is the price of liberty - "কেবল চির তীক্ষ্ন নজরদারির মাধ্যমেই দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব"। রাসূল (সাঃ) বলেছেন-"অত‍্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সত‍্য উচ্চারণই সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ"। মনে রাখতে হবে,অন‍্যায়কারী অন‍্যায় করতে পারে না তোমাদের গোপন ইচ্ছাশক্তি ছাড়া। আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে বলেন-"আমি ততক্ষন পর্যন্ত  সে জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করি না, যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চায়"।

পিথাগোরাস পৃথিবীর সবকিছুকেই সংখ্যা মনে করতেন। তেমনভাবে এই সরকারও সবকিছুকেই ৩২ , ৫৭ এর মত সংখ্যা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়!! এই সংখ্যা দুটোর অঙ্ক পরিবর্তন করলে হয় ২৩ আর ৭৫. একজনের ২৩ বছরের সংগ্রাম ৭৫ এ শেষ হয়ে গেল। ‎৫-১৫-২৫-৭৫ থেকে ৬৩২ হয়ে ১১৬২ এর পরিণতি কোন সংখ‍্যায় গিয়ে শেষ হয়, তা দেখা সময়ের ব্যাপার।

প্রায় ৫৫০ খৃষ্টপূর্বাব্দে চৈনিক সেনাপতি সান জু’র লেখা ,"The art of war" বইয়ের নীতি অনুসারে "Winning war without giving fight"  অর্থাৎ যুদ্ধ না করে যুদ্ধ জয়, বেগম খালেদা জিয়ার আরেকটি কালজয়ী সিদ্ধান্ত। তবে সরকার এই অহিংস কর্মসূচিগুলোকে দিয়ে বিএনপিকে পরিমাপ করার অর্থই হবে দূর্বল ফেনার সাহায্যে সমুদ্রের ক্ষমতাকে গণনা করা। হোঁচট খাওয়া বাকশক্তি অধিকতর শক্তিশালী করতে পারে একটি দূর্বল জিভকেও। কারণ সাম্রাজ্যবাদী রোমের বিরুদ্ধ অন্যতম সেরা বিশ্ব সেনাপতি জাতীয়তাবাদী হানিবাল-এর বাহিনীকে উইস্টন চার্চিলের মতই বলতে শুনেছি-"We shall never surrender". শুরুটা হ‍্যারল্ড পিন্টারকে দিয়ে করেছিলাম। জাতিকে সতর্ক করে দেওয়ার মাধ্যমে তাঁকে দিয়েই আবার শেষ করি -

পালাবার পথ নেই
---  
--- 
তুমি তোমার পিছনটাকে সামলে রেখো।

দায় সরকারকেই বহন করতে হবে

গোলাম মোর্তোজা



মুহাম্মদ জাফর ইকবাল প্রিয় শিক্ষক- লেখক। তিনি আক্রান্ত হওয়ার পর যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে, সেটাই স্বাভাবিক। তার উপর হামলার আশঙ্কা অনেক বছর ধরেই ছিল। পুলিশি নিরাপত্তাও তাকে দেয়া হয়েছিল। সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলবৎ থাকা অবস্থাতেই তিনি আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধরে নেয়া হয়েছে। যে, হামলা জঙ্গিরাই করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনিও বলেছে, ফয়জুর জঙ্গি মতাদর্শ ধারন করেই হামলা করেছে। ’জাফর ইকবাল নাস্তিক, ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে লেখেন’- সেকারণেই তাকে হত্যার চেষ্টা করেছে ফয়জুর। র‌্যাবের তথ্য তেমনই বলছে।

জঙ্গি বিষয়টি আবার আলোচনায় স্থান করে নিয়েছে। আজকের লেখায় সে বিষয়ে কিছু বলার চেষ্টা করব।

১. এদেশে অনলাইনে যারা লেখেন, তাদের ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে হত্যা করা শুরু হয়েছিল।এসব লেখকদের কেউ কেউ আপত্তিকর অনেক কিছু লিখেছেন। আপত্তিকর শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকেই নয়, যে কোনো বিবেচনাতেই আপত্তিকর।সে সব দেখে কিছু মানুষ ক্ষুদ্ধ হতেই পারেন, হত্যা করতে পারেন না।

তবে অনলাইনের লেখকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ, কাউকে অসম্মান বা আপত্তিকর কিছু লেখেন নি। অদ্ভূত ব্যাপার হলো, অনলাইনে যারা লেখেন তাদের প্রায় সবাইকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা দেয়া হয়েছে এবং প্রচারণা চালানো হয়েছে। কাজটি সামনে থেকে করেছে হেফাজতে ইসলাম। আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে হেফাজতের তীব্র বৈরি সম্পর্ক।২০১৩ সালের শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতের সমাবেশ প্রতিহতের মধ্য দিয়ে যা চুড়ান্ত রূপ নেয়।

তারপর থেকে সরকার কৌশল পরিবর্তন করে। হেফাজতকে সুযোগ- সুবিধা দিয়ে, বিএনপি- জামায়াতের কাছ থেকে ভাগিয়ে নেয়ার নীতি নেয়।চট্রগ্রামে রেলের জমিসহ অনেক কিছু হেফাজতকে দেয়া হয়।সরকারের সঙ্গে মিত্রতা তৈরি হতে থাকে সরকারের। এই সময় হেফাজত অনলাইন লেখকদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে আন্দোলন করতে থাকে। হেফাজতের প্রচারণা অনুযায়ী যারা ‘নাস্তিক’ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় সরকার। সরকারকে ৮০ জনের একটি তালিকা দেয় হেফাজত। সেই তালিকার থেকে তাৎক্ষনিকভাবে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে সরকার। এর ফলে সরকার ভেতরে- বাইরে থেকে সমালোচনার মুখে পড়ে।ব্যবস্থা নেয়া থেকে বিরত থাকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়সহ আরও দু’একটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা হেফাজত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসে ৮০ জন থেকে তালিকা ৩৫ জনে নামিয়ে আনে।বেশ কয়েকজন অনলাইন লেখক তখন রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে বিদেশে চলে যায়। তালিকা চুড়ান্ত করলেও, হেফাজতের চাহিদা অনুযায়ী সরকার ব্যবস্থা নেয়া অব্যাহত রাখে না।

তারপর প্রায় নিয়ম করে অনলাইন লেখক বা ব্লগারদের চাপাতি দিয়ে কূপিয়ে হত্যা করা শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া প্রায় সবার নাম তালিকায় ছিল।আরও পরিস্কার করে বললে, তালিকা অনুযায়ী হত্যাকান্ড চলতে থাকে।

রাজিব হত্যাকাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানানোর জন্যে তার বাসায়ও গিয়েছিলেন। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী। মূলত তার কিছুদিন পর থেকেই সরকারের অবস্থান পুরোপুরি বদলে যায়।

হত্যাকান্ডের সংখ্যা যখন বাড়তে থাকে তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন:‘...আর এই লেখার জন্য কোনও অঘটন ঘটলে দোষ সরকারের ওপর আসবে কেন? সবাইকে সংযমতা নিয়ে চলতে হবে। সবাইকে একটা শালীনতা বজায় রেখে চলতে হবে। অসভ্যতা কেউ করবেন না। অসভ্য আচরণ করলে তার দায়িত্ব কে নেবে? আমরা নেব না।’ -শেখ হাসিনা, ১৪  এপ্রিল ২০১৬ হত্যাকান্ডের শিকার হন দীপন- অভিজিৎরা। তদন্ত বিচার কোনো কিছুই গতি পায় না।

২. জাফর ইকবালের উপর আক্রমণকারীদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সাগর-রুনি, দীপন-অভিজিৎদের ক্ষেত্রেও এমন নির্দেশ এসেছিল। ‘নির্দেশ বাবু’র কি অবস্থা, তা তো কারও অজানা নয়।

তদন্তের আগেই প্রধানমন্ত্রী এও বলেছেন, ‘হামলাকারী কারা হামলার ধরন থেকেই স্পষ্ট’। পুলিশি তদন্তের আগেই সাম্প্রতিক অতিকথক ওবায়দুল কাদের ৪ মার্চ বলে দিয়েছেন, ‘হামলাকারীর স্বীকারোক্তি শুনে আমরা বিস্মিত হয়েছি...। এই হামলা চক্রান্ত, এটা সত্য। চক্রান্ত তাদের, যাদের বিএনপি পৃষ্ঠপোষকতা দেয়।’

উপরে যে ঘটনাক্রম উল্লেখ করেছি তা থেকে তো ‘হামলাকারী কারা হামলার ধরন থেকেই স্পষ্ট’- হওয়ারই কথা!

ওবায়দুল কাদের যে বিএনপিকে দায়ী করলেন, তার ভিত্তিটা কী? ঘটনাক্রম তা বলে না, তদন্তও হয়নি। তাহলে কি কাউকে বাঁচানো, কাউকে ফাঁসানোর উদ্দেশেই তদন্তের আগে এমন মন্তব্য ?

৩. অনলাইন লেখক- প্রকাশক হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে নাস্তিকদের পক্ষ নেয়া হয়, সরকারের এমন পরিচিতি তৈরি হয়ে যায় কিনা, ভয়ে ছিল সরকার। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কারও কারও বক্তব্যে তার প্রকাশও ঘটে।

সরকার এখনও সেই ভয়েই আছে। ফলে হত্যাকান্ডগুলোর তদন্ত হয়নি। সরকারের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে, এমনটা ভাবার কারণ নেই। কিন্তু ধর্ম অবমাননা করে জাফর ইকবাল তো তেমন কিছু জীবনে কখনো কোনোদিন লেখেননি। কিছু লেখেন নি প্রকাশক দীপনও। দীপন খুন হয়েছেন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল অল্পের জন্যে বেঁচে গেছেন।

পূর্বের হত্যাকান্ডগুলোর সঙ্গে জাফর ইকবাল হত্যা প্রচেষ্টা মিলিয়ে দেখলে, কিছু ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।

ক. পূর্বের হত্যাকান্ডগুলোতে যে ধরনের চাপাতি ব্যবহৃত হতে দেখা গেছে, জাফর ইকবালের ক্ষেত্রে একই রকম চাপাতি ব্যবহৃত হয় নি। যতদূর জানা গেছে তুলনামূলকভাবে ছোট আকারের চাকু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে জাফর ইকবালকে।

খ. পূর্বের সব আক্রমণকারীরা ছিল হত্যাকান্ড ঘটানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ।ঘাড়ের কোন স্থানে এক কোপে হত্যা করা যাবে, সে বিষয়ে আক্রমণকারীরা ছিল পারদর্শী বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

গ. ফয়জুরের চাকু এবং কোপ দেয়ার ধরন দেখে তাকে দক্ষ- পারদর্শী বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনে হয় নি।

ঘ. ফয়জুর যত কাছে থেকে সময় নিয়ে আক্রমণ করার সুযোগ পেয়েছে, সে দক্ষ হলে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না।

৪. জাফর ইকবালের উপর আক্রমণ জঙ্গিরাই করেছে, সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সঠিক তদন্ত অপরিহার্য।’সঠিক তদন্ত’ বিষয়টির সবচেয়ে বড় অনুপস্থিতি এদেশে।

নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত তিন জন পুলিশ, জাফর ইকবালকে অরক্ষিত রেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিন জনের দুই জন আবার স্মার্ট ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। মঞ্চে ঠিক জাফর ইকবালের পেছনে অবস্থান নেয়া ঘাতক যখন আক্রমণ করেছে, পুলিশ ছিল সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ‘নিরাপত্তায় ত্রুটি ছিল না’। জাফর ইকবালের পরিবারের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ইয়াসমিন হকও বলেছেন ‘পুলিশের কিছু করার ছিল না’। আবার স্মার্ট ফোনে ব্যস্ত থাকা দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।

জাফর ইকবাল বিশেষ মানুষ, বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছেন।ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে ঢাকায় আনা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী নিজে পুরো বিষয়টি তদারক করেছেন। প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে দেশের বাইরেও পাঠানো হতো। একারণেই সম্ভবত অধ্যাপক ইয়াসমিন হক কোথাও কোনো ‘ত্রুটি’ দেখছেন না, কোনো অভিযোগও করছেন না। তাছাড়া সৌভাগ্যবশত জাফর ইকবাল বেঁচে আছেন। ফলে দোষ- ত্রুটি বা অভিযোগের দিকে যান নি তিনি।

বিষয়টি আসলে অভিযোগের নয়। সত্য বিষয়গুলো সামনে আনা জরুরি, ভুল বা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্যে।

জাফর ইকবাল যে গুরুত্ব পেয়েছেন, সাধারণ একজন আক্রান্ত হলে সেই গুরুত্ব পেতেন না, পাবেন না। বিশেষ হেলিকপ্টার, বিশেষ তদারকি- কোনো কিছুই পাবেন না। আঘাত গুরুতর না হলেও, শুধু রক্তক্ষরণেই তিনি মারা যাবেন।অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের থেকে বক্তব্য ব্যক্তিকেন্দ্রীক না হয়ে সামগ্রিক হলে, অন্যদের জন্যে উপকারের হতে পারত। পুলিশি নিরাপত্তার দূর্বলতা, ব্যর্থতাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্যেই সত্যটা সামনে আনা প্রয়োজন ছিল, সরকারকে অভিযুক্ত করার জন্যে নয়।

৫.আক্রমণকারী ফয়জুরের মামা কৃষক লীগ নেতা, সেকারণে দায় আওয়ামীলীগ বা কৃষক লীগের- বিষয়টি এত সরলিকরণ করা ঠিক নয়। বিএনপির উপর দায় চাপিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা- মন্ত্রীদের দেয়া বক্তব্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।সরকারে যারা থাকে, দায় মূলত তাদের। একথা মনে রাখা দরকার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের।’সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করছি বা হচ্ছে’- যত জোর দিয়েই এসব কথা বলা হোক না কেন, মানুষ তা বিশ্বাস করছে না। সত্যটা মানুষের অজানা থাকছে না। সব কিছু দেখেই মানুষের পারসেপশন তৈরি হচ্ছে ‘হত্যাকান্ডগুলোর বিচার করা হচ্ছে না, চাপা দিয়ে দেয়া হচ্ছে’।

মানুষের এই পারসেপশন দূর করার দায়িত্ব সরকারের। তা করতে হবে কাজ দিয়ে, গল্প বলে এই পারসেপশন দূর করা যাবে না। সরকার বা আওয়ামী লীগ এখন ভাবতেই পারে, এসব পারসেপশন ধারন করা নাগরিকদের গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। এমন মানসিকতা ধারন করে থাকলে, এখন না হলেও দীর্ঘ মেয়াদে অনেক বড়ভাবে মূল্য দিতে হবে আওয়ালী লীগকে। এই হত্যাকান্ডের সময়কাল ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যাবে না, দায় আওয়ামী লীগকেই বহন করতে হবে।


  • গোলাম মোর্তোজা: সম্পাদক, সাপ্তাহিক।

অ্যাকশন না হলে অন্যরা উৎসাহ পায়




বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, যদি কেউ অর্থ পাচার করে বা চুরি করে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন না হলে অন্যরা উৎসাহ পায়। দুঃখজনক ব্যাপার হলো এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থা হিসেবে ওএসডি করা হয়। সেটা তো সব নয়। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে হবে। তাকে শাস্তি দিতে হবে। 

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘দুর্নীতি’ নিয়ে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন তিনি। সালেহ উদ্দিন আরও বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে কারা চুরি করেছে সেটা বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে জানার দরকার পড়বে না, সেটা সবার জানা আছে। সময়োচিত, দৃশ্যমান ও শক্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে যদি নানারকম রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে ভালো হয় না।  কোনো ব্যাংকার ১০ কোটি চুরি করে অবসরে গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাকে ধরে জেলে নিতে হবে, এরপর তার সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। 

সাবেক এ গভর্নর বলেন, ব্যাংকের ভিতরে রাজনীতি নিয়ে আসবেন এটা কাম্য নয়। রাজনীতি চলে আসাতেই দুর্নীতি হয়। এখন যে অবস্থা চলছে তা থেকে বের হতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।


  • BD Protidin/06-3-18

খরচ করতে পারছে না সরকার

৪ লাখ কোটি টাকার বাজেট, ৬ মাসে খরচ ১ লাখ কোটিরও কম




চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ ২৬৭ কোটি টাকার বাজেট পাসের পর ছয় মাস গত হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে বাজেট থেকে এক লাখ কোটি টাকারও কম খরচ হয়েছে। তুলনামূলক হিসেবে যা চার ভাগের একভাগ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মেয়াদে ঘোষিত বাজেট থেকে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৯৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাজেটের টাকা খরচ করতে পারছে না সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর আর্টিকেল ফোর মিশনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির যে তথ্য-উপাত্ত তৈরি করেছে সেখানে বাজেট বাস্তবায়ন সম্পর্কে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতি অনুবিভাগ ২০ ফেব্রুয়ারি এসব তথ্য সরবরাহ করে। বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যালোচনায় বর্তমানে আইএমএফ-এর আর্টিকেল ফোর মিশন ঢাকায় অবস্থান করছে। প্রতি বছরই এই সংস্থাটি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এবারের মিশনটি ৮ মার্চ পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে তারা অর্থ বিভাগের সঙ্গেও বৈঠক করবে।

আইএমএফের জন্য তৈরি করা নোটে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামষ্টিক অনুবিভাগ সাম্প্রতিক অর্থনীতির কয়েকটি ঝুঁকির মধ্যে বাজেট বাস্তবায়ন কম হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। এ সম্পর্কিত এক নোটে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে বাজেট বাস্তবায়নের হার সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। মূলত চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে অতিবৃষ্টির কারণে বাজেট ব্যয় তেমন বাড়েনি। এ ছাড়া জড়িত সংস্থাগুলোর অদক্ষতার কারণেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যদিও অর্থবছরের বাকি সময়ে বাজেট বাস্তবায়নে গতি আসবে, তারপরও বর্তমানে বাস্তবায়নের যে হার তা নেতিবাচক বলেই উল্লেখ করা যায়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব মুসলিম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন হার গতবছরের মতোই আছে। আগের বছরও এই সময়ে এই হারে বাস্তবায়ন হয়েছিল। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত আমরা গত বছর প্রায় পুরো বাজেট বাস্তবায়ন করেছিলাম। বাজেটের আকার তুলনামূলক বড় হলেও এবারও তেমনটাই হবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থ সচিব।

অর্থবছরের শুরু থেকেই এবার বাজেট বাস্তবায়ন চলছে ঢিমেতালে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাজেট বাস্তবায়ন হার কম ছিল। ওই সময়ে ৪৬ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়, যা মোট ব্যয়ের মাত্র ১২ শতাংশ। গতবারের একই সময়ে বাস্তবায়ন হার ছিল ১৩ শতাংশ।  

সূত্রগুলো জানায়, মূলত উন্নয়ন কার্যক্রম সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন করতে না পারার কারণেই বাজেট বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছে সরকার। অনেক সময় সরকারের নিজস্ব তহবিলে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর উৎসাহ থাকলেও বৈদেশিক সহায়তার প্রকল্পে আবার উল্টোটা দেখা যায়। অনেক সংস্থা বৈদেশিক সহায়তার প্রকল্প বাস্তবায়নে গড়িমসি করে। এ কারণে প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যাওয়ার মতোও ঘটনা ঘটছে। সূত্রগুলো জানায়, বৈদেশিক সহায়তার প্রকল্পগুলো শুরু করতে অনেক সময় বছর পেরিয়ে যায়। প্রকল্প অনুমোদনের পর সমীক্ষা, ভূমি অধিগ্রহণ, পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগসহ পূর্ত কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এ সময় লাগে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজ ছয় মাস এবং বৈদেশিক অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্পের প্রতিমূলক কাজ ৯ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার সুপারিশ করা হয়েছে। লিড মন্ত্রণালয়গুলোর বাজেট মনিটরের সময় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ফ্রাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলো খোদ প্রধানমন্ত্রী মনিটর করছেন। এ ছাড়া প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে প্রতি তিন মাসে বাজেট বাস্তবায়নের তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হয়েছে। 

এত উদ্যোগের পরও কেন বাজেট বাস্তবায়নে গতি বাড়ছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এবার বাজেট ঘোষণার পর অনেকেই বলেছিল যে, এটি উচ্চাভিলাষী বাজেট, বাস্তবায়ন হার দেখে এখন দেখা যাচ্ছে তাদের কথাই ঠিক। বিশ্বব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাজেট প্রণয়নে পরিকল্পনার মধ্যে যে উচ্চাভিলাষ থাকে সেটি যদি লক্ষ্য ও অর্জনের মধ্যে বড় ধরনের ব্যবধান তৈরি করে তবে সেই উচ্চাভিলাষ দেখিয়ে জাতির জন্য কোনো লাভ হবে না। আর এ ধরনের পরিকল্পনার শেষে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতাও থাকে না। ড. জাহিদ বলেন, যদিও শেষের দিকে প্রতিবছর বাজেট বাস্তবায়ন হার বাড়ে, তারপরও এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে দীর্ঘসূত্রিতা সেগুলো দূর করতে না পারলে এর সুফল জনগণের কাছে পৌঁছানো যাবে না।

  • BD protidin/6-3-18