রাতুল চৌধুরী
রায়ে সেই প্রশ্নবোধক (?) চিহ্ন হয়ে গেলো দাঁড়ি !
বুধবার, ফেব্রুয়ারি ২১, দলের প্রেসব্রিফিং এ বলেছেন, বিএনপির যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জিয়া অরফ্যনেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের বিষয়ে তাদের দলের আগের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। আদালত বেগম জিয়ার বক্তব্যকে বিকৃত করে সেটাকেই তাঁর বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছেন। আদালতে বেগম জিয়া বলেছিলেন, ‘...ছাত্র ও শিক্ষকদের হত্যা করা হচ্ছে। এগুলি কী ক্ষমতার অপব্যবহার নয়? ক্ষমতার অপব্যবহার আমি করেছি?’ রায়ে সেই প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে গেলো - দাঁড়ি। এ কাজটি তাঁর ইচ্ছাকৃত ও সরকার প্রধানকে খুশি করার জন্য। তিনি বলেছেন , এটি বিচারক ড. আক্তারুজ্জামানের জুডিশিয়াল ফ্রড। সরকার যে বিচার ব্যবস্থাকে তাদের পদলেহী করে তুলেছেন। এটি তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। দেশের গোটা বিচার ব্যবস্থাকে পদদলিত করা হয়েছে।
উদ্বেগজনকভাবে বিচার বিভাগে সরকারের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি
বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৭/১৮ এ মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, উদ্বেগজনকভাবে বাংলাদেশে বিচার বিভাগে সরকারের হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পেয়েছে। জুলাইয়ে প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের একটি আদেশে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করা হয়। ওই সংশোধনীতে বিচারকদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও অযোগ্যতার অভিযোগ আনা হলে পার্লামেন্টকে অভিশংসনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি ওই সংশোধনী বাতিল করে দেয়ার পর তার সমালোচনা হয় সরকারের পক্ষ থেকে । এরই পরিপ্রেক্ষিতে নভেম্বরে প্রধান বিচারপতির পদ ত্যাগ করেন এস কে সিনহা। এর ফলে দেশ এমন একটি পরিস্থিতিতে ধাবিত হয়, যাতে ইঙ্গিত মেলে নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করেছে।
৬৩২ পৃষ্ঠা হয়ে গেলো ১১৬৮ পৃষ্ঠা
বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ৮, বেগম জিয়াকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায় ঘোষণার ১১দিন পর ফেব্রুয়ারি ১৯, বিকেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পায়। যদিও রায় ঘোষণার পরপরই সার্টিপায়েড কপি হাতে পাওয়ার কথা। সুপরিকল্পিত ভাবে প্রায় দুই সপ্তাহ বিলম্ব ঘটানো হয়। গণমাধ্যমে রিপোর্ট আসে বিচারক নাকি রায় এডিট করছেন। ১১৬৮ পৃষ্ঠার এ রায়ের সার্টিফায়েড কপি দেন আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন বেগম জিয়ার আইনজীবীদের হাতে। ১১৬৮ পৃষ্ঠার এ রায়ের সার্টিফায়েড কপির সঙ্গে আদেশ যোগ হয়েছে আরও ৬ পৃষ্ঠা। যদিও রায় ঘোষণার সময় বলা হয়েছিল এটি পুরো রায়টি ৬৩২ পৃষ্ঠার।
তিন দিনের মধ্যে বেগম জিয়াকে জামিন দেয়ার কথা - ড. কামাল
ফেব্রুয়ারি ১৫, জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ‘কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনায় বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এই ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, তিন দিনের মধ্যে তাকে (বেগম জিয়াকে) জামিন দেয়ার কথা। অথচ বলা হচ্ছে রায় সংশোধন করা হচ্ছে। অবাক লাগছে। রায় দেয়া হয়ে গেছে তবে কপি দেয়া যাচ্ছে না, কারণ কপি সংশোধন করা হচ্ছে। এই যে কপি দেব কপি দেব বলা হচ্ছে ... কী প্রহসন হচ্ছে..। আইনকে নিয়ে খেলা করা হচ্ছে।
এখন নথি… ইচ্ছাকৃত বিলম্ব
বেগম জিয়া জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করলে, আদালত দুইদিন শুনানি শুনে বিচারিকে আদালতকে নথি পাঠাতে বলে। সেই নথি এখন দেশজুড়ে বড় আলোচনার বিষয়। মুক্তিযোদ্ধা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘সদরঘাট থেকে ঢাকা হাইকোর্ট যাতায়াতে ডিজিটাল যুগে কয় ঘণ্টা সময় লাগে তা আমাদের জানা। বিচারিক আদালত থেকে বেগম জিয়ার রায়ের কপি হাইকোর্টে পৌঁছুতে কোনোভাবেই এত সময় লাগার কথা নয়! এটা অনেকটা ইচ্ছাকৃত বিলম্ব।’
কাজেই, এই রাষ্ট্রযন্ত্র সাবেক তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও মহান স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রীকে দেশের একজন সাধারণ নাগরিকের সমান অধিকারও পাচ্ছেন না।
তা এখন বিনাভোটের সরকারের ফরজ কাজ হলো ‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্মূলা বাস্তবায়ন। দরকার হলে তারেক ও জুবাইদা রহমানকে ফাঁসাতে হবে। তার আলামত এখনই দেখা যাচ্ছে। বিচারবিভাগের উচ্চ বিচারক যারা বেগম জিয়ার মামলা দেখবেন তাদের ব্যক্তিগত পটভূমি থাকছে কট্টর আওয়ামী লীগারের । আওয়ামী লীগের দেশের নব বাকশালীকরণ ফ্যাসিবাদ এখন কোথায় গিয়ে থামে সেটাই দেখার বিষয়।
No comments:
Post a Comment