খলিলুর রহমান
ব্যাংকে আমানত রাখা মানুষের টাকা যখন ব্যাংক খেয়ে ফেলছে আর আমানতদারদের ব্যাংকে আস্থা ক্ষীণ হচ্ছে, তখন স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিকভাবে ব্যাঙ্কের বাইরে নগদ টাকার সরবরাহ বাড়ছে। ব্যাঙ্কের আমানত নানা ব্যাঙ্কে খেয়ানত হওয়া ও বিশেষ করে দীর্ঘ মেয়াদি আমানতে সুদের হার ক্রমান্বয়ে কমার কারণে আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। সাধারণ সঞ্চয়কারীদের সেভিংস সার্টিফিকেটে বিনিয়োগের প্রবণতা বজায় থাকলেও এখাতেও সুদ কমেছে। এই সঞ্চয় সার্টিফিকেট খাত থেকে সরকার বাড়তি হারে ঋণগ্রহণ করছে। মূলধন যন্ত্রপাতি খাতে ওভারইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং-এর মাধ্যমে মূলধন পাচার নতুন কিছু নয়। দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর গত ২৭ তারিখের শীর্ষ সংবাদ কাহিনীতে বলা হচ্ছে দেশের ব্যাংকব্যবস্থার বাইরে নগদ টানা ২০১৬ সালে গত নভেম্বর মাসেই ১৫৬.১১ বিলিয়ন বা ১৪.০৬ শতাংশ বেড়ে ১১১২.৪২ বিলিয়ন থেকে ঐ মাসেই দাঁড়ায় ১১১২.৪২ বিলিয়ন টাকা। এ তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষজ্ঞরা এঅর্থ আগামী নির্বাচনে অপব্যবহারের আশঙ্কা করছেন। ২০১৬-র ডিসেম্বরে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১১১৩.৫৩ বিলিয়ন।
অন্যদিকে, ব্যাংক আমানত পড়তেই থাকে। এটা কমে আসে ডিসেম্বর ২০১৬-র ১৩.১৩ শতাংশ থেকে ডিসেম্বর ২০১৭-র ১০.৬২ শতাংশে। আর ঋণ প্রদান বেড়ে যায় ২০১৬-র ৩১ ডিসেম্বরে তার আগের পঞ্জিকা বছরের ১৫.৯৮ শতাংশ থেকে উঠে যায় ১৮.১০ শতাংশে।
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা ব্যাংকের বাইরে কারেন্সি মজুত গড়ে তোলা, মূলধন ও অন্যান্য সামগ্রী আমদানি খাতে নানা কৌশল ও কারচুপি, অনানুষ্ঠনিক মূদ্রাবাজার বা কার্ব মার্কেট থেকে ডলার কিনে অনানুষ্ঠানিক , অবৈধ বা কালো চ্যানেলে বা হুণ্ডিতে বিদেশে অর্থ পাচার - এধরনের কারণ দেখান। বস্তুত মানি লণ্ডারিং রোধে আইন প্রধানত টেরর মানির প্রবাহ রোধে করা হলেও বিদেশে অর্থপাচার বেধড়ক চলছে নানা পথে। বন্ধ হচ্ছে না কিছুতেই। তা নাহলে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের এতো অর্থ গিয়ে ওঠে কীভাবে। এক্ষেত্রে সরকার শোচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বা এটা তাদের ইচ্ছাকৃত। বলা হচ্ছে, এই বিপুল টাকা ইচ্ছাকৃতভাবেই ব্যাঙ্কিং চানেলের বাইরে রেখে দেওয়া হয়েছে আগামী সাধারণ নির্বাচনে ব্যয় করার জন্য।
এক্সপ্রেস রিপোর্টে আরও বলা হচ্ছে, এজন্য থাইল্যাণ্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও ভারত ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশে বাংলাদেশী ১০০০ টাকা ও ৫০০ টাকার নোট মজুত করার জন্য অননানুষ্ঠনিক বাজার কাজ করছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহারের এই অশুভ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। গণমাধ্যম ও সচেতন জনগণকে এই ব্যাপারে জোরালোলো ভূমিকা রাখতে হবে।
No comments:
Post a Comment