Search

Tuesday, March 13, 2018

Why the endless bailouts of state-owned banks?


The government has just announced a fresh bailout package to the tune of Tk 20 billion (approximately USD 250 million) so that they may meet some of their capital shortfalls. The state-owned banks (SoBs) that are getting their troubled coffers replenished are Sonali Bank, Janata Bank, Rupali Bank, Bangladesh Krishi Bank, Rajshahi Krishi Unnayan Bank, and Grameen Bank.

The bailout package is 10 percent of the total capital shortfall of these banks, which is a pittance to the bailout amount demanded by these banks which was to the tune of Tk 203.98 billion! While the package is a mere fraction of what was demanded, the fact remains that the bailout is being given without initiating any meaningful reforms in these graft-ridden banks.

When we look at recent media reports about one-third of the SoBs being held hostage to 20 defaulted borrowers, and without any concrete steps to take them to task for loan recovery, we begin to comprehend how bad the situation is in these SoBs. Indeed, going by historical data, the government has been bailing out many, if not most, of these banks over the last four years with billions of taka which could have been spent on more productive sectors of the economy. The idea of “recapitalisation” took on a whole different meaning since the beginning of the government's first tenure.

Before the latest bailout, Tk 14,505 crore had been handed out as “bailout” money for these ailing institutions since 2009. As pointed out recently by Dr Ahsan H Mansur, executive director of independent think-tank Policy Research Institute, banks have been asking for money again and again because the money has gone down the drain, or to put it in another fashion, in the pockets of corrupt and politically connected people.

Although the government appears to have attempted to rein in what has fast developed into a bottomless basket case scenario, the Tk 20 billion allocation is being spent to meet Basel-III requirements. It is astonishing to find indignation coming from bank officials of troubled banks that they are not getting what they have been demanding. The national exchequer is not a lottery fund for hopeless financial institutions. If we look at government data, we find that the government has injected Tk 106.22 billion into the coffers of SoBs and other financial institutions, including privately owned IFIC bank over a five-year period (2012-2017).

Why are we allowing the continuation of a failed system of bank governance in these institutions? Who are we serving by throwing away public money? Despite multi-billion taka scams that have rocked the financial base of this country over the last so many years, the government has failed to check corrupt practices in SoBs. It has failed to jail bankers implicated in corrupt practices. No, we have done none of that. What we have done instead is offer more of the same; more money to be plundered with impunity. Not just any public fund but taxpayers' hard-earned money!

Indeed, from what has been published in this paper, taxpayers' money—thousands of crores of it—has been diverted from development expenditure to pay for these handouts to SoBs. Since its tax money paying for the rich-and-infamous to loot our banks, it makes perfect sense for the government to keep squeezing us of our earnings through innovative ways, either through revamped VAT or excise duty policies on bank deposits.

There have been attempts by some to make a comparison with the India experience of recapitalising its banks to the tune of USD 14 billion under the Indrodhanush Recapitalisation Scheme as an excuse for our bailout. The circumstances that led to Indian banks running into bad loans had everything to do with huge exposure to financing mega infrastructure projects that got delayed by years of bureaucratic red tape. Our situation is vastly different. Our SoBs have not been making sensible investments into projects. No, we have been throwing precious billions away to finance dubious projects of dubious business entities.

Hence, the attempt to compare our case with that of India is flawed to begin with. Since we are on the subject, readers may be interested to learn that the Indrodhanush scheme did not come free to the banks; it entailed a series of reforms that the Indian banks had to initiate in their respective institutions. These included the improvement of due diligence and making provisions for specialised monitoring for loans above Rs 2.5 billion that allowed for bad loans to accrue.

What exactly have we done in this regard? We have practically no accountability, no liability and no transparency in SoBs. Our skepticism about the “recapitalisation” scheme launched by the government to bail out banks stems from these failures by our policymakers, to do what needs to be done, to make these sick banks healthy again. As things stand now, there will be no end to these bailouts. We will be throwing away public money every fiscal so that it may be siphoned off by new groups of defaulters. Fraudulent lending to dubious borrowers has become the name of the game. All that is required is the right political linkages because SoBs have politically appointed board members who wield considerable influence over loan sanctioning.

  • The Daily star/13-3-18

সব দলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হোক সভা–সমাবেশের অধিকার


সম্পাদকীয়


কয়েক দিন ধরে বিএনপি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা ও ধরপাকড়ের শিকার হয়েছে। অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে সভা করার আনুষ্ঠানিক অনুমতি চেয়েও তা মিলছে না।

আজ সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি চেয়ে বিএনপির তরফে যে আবেদন করা হয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তার অনুমতি মেলেনি। এই সরকারের আমলে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার অভিজ্ঞতা বিএনপির জন্য এটাই প্রথম নয়। বরং সভা-সমাবেশ করার অনুমতি না পাওয়াই যেন তাদের সাধারণ অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়েছে।

আমাদের সংবিধানের ৩৭ ধারায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’ সংবিধানপ্রদত্ত এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের; কিন্তু আমরা লক্ষ করছি উল্টো প্রবণতা।

সরকারের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলসহ বিরুদ্ধ মতাবলম্বী বিভিন্ন সংগঠনের এই অধিকার প্রায়ই লঙ্ঘিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কোনো দল বা সংগঠন সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচির আয়োজন করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তাদের ওপর নির্দয়ভাবে বলপ্রয়োগ করে। এমনকি নারীরাও লাঞ্ছনাপূর্ণ নির্যাতনের শিকার হন। শনিবার কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের মিছিলেও পুলিশকে একই ভূমিকায় দেখা গেছে।

সম্প্রতি বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের হামলা ও পণ্ড করা প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি রাস্তা বন্ধ করে বেআইনিভাবে সমাবেশ করতে যাওয়ায় পুলিশ বাধা দিয়েছে। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ কোথাও রাস্তা বন্ধ করে সভা-সমাবেশ করে না।

কিন্তু আমরা দেখেছি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাস্তায় সমাবেশ বা কর্মসূচি পালন না করলেও তাদের কর্মসূচির কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দিতে হয় এবং তা ব্যাপক জনদুর্ভোগের কারণ ঘটায়। গত সাতই মার্চের কর্মসূচি তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। সেদিন সভাগামী মিছিল থেকে তরুণী লাঞ্ছনার অভিযোগে মামলা পর্যন্ত হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিক থেকেও এ ব্যাপারে পক্ষপাতমূলক আচরণ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো অথবা সরকারের সমর্থক অন্য কোনো দলের সভা–সমাবেশে পুলিশ সাধারণত বাধা দেয় না। তাদের সব বাধা শুধু সরকারবিরোধী দল ও সংগঠনগুলোর কর্মসূচিতে। সরকারবিরোধী দলগুলোর ক্ষেত্রেই শুধু জনশৃঙ্খলার যুক্তি তুলে ধরা হয়। পুলিশের সদস্যরা প্রায়ই অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেন।

এটা দুর্ভাগ্যজনক যে সরকার একদিকে রাস্তায় বিরোধী পক্ষকে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না, আবার অন্যদিকে নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ করার অনুমতিও দিচ্ছে না। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সমাবেশ করেছে, ওয়ার্কার্স পার্টি জনসভা করছে। বিএনপি কেন সেই সুযোগ পাবে না?

এটা ঠিক যে দল বা সংগঠনই সভা-সমাবেশ করুক না কেন, তাতে জনগণ দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। এ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বের করা দরকার। কোথাও রাস্তা বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করা হলে তার প্রভাবে আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচলে অচলাবস্থা দেখা দেয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তাসহ সব সড়কের জন্যই এ কথা প্রযোজ্য।

সমাবেশ ও জনসভার জন্য নির্ধারিত স্থান থাকা উচিত। কর্মদিবসে জনসভা না করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে করার বিষয়ে রাজনৈতিক পক্ষগুলোকেও একমত হতে হবে। সে ক্ষেত্রে যানজটে নাকাল নগরবাসী কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।

  • Prothom Alo/Mar 12, 2018

Monday, March 12, 2018

১০ শতাংশের হাতে সবকিছু কেন্দ্রীভূত হচ্ছে

ইউএনডিপির পর্যবেক্ষণ



দেশের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী পরিবারের হাতে মোট আয়ের ৩৮ শতাংশ। আয় বণ্টন ব্যবস্থার এ কেন্দ্রীভবনের জন্য রেন্ট সিকিং (লুটপাট ও দুর্নীতি) প্রবণতাকে দায়ী করছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। সংস্থাটি বলছে, আয়ের এত বড় অংশ কীভাবে মাত্র ১০ শতাংশের হাতে কুক্ষিগত হলো, তা বুঝতে বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে অবাধে ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দেয়া, পুঁজিবাজার কারসাজি, কর ফাঁকি, সরকারি কেনাকাটা ও ব্যয়ে দুর্নীতি— সর্বোপরি ভূমি দখলের ঘটনাগুলোই যথেষ্ট।

এ প্রক্রিয়ায় গুটিকয় মানুষের হাতে আয় বণ্টন কেন্দ্রীভূত হওয়ার অর্থ হলো, জাতীয় আয়ে বাকিদের অংশ কমছে। ইউএনডিপি বলছে, আয়ের কেন্দ্রীভবন এত দ্রুত ঘটছে যে, সম্পদশালী পরিবারগুলো আরো বেশি ধনী হচ্ছে, অন্যদিকে আরো বেশি নাজুক হচ্ছে সবচেয়ে দরিদ্র ও ভঙ্গুর জনগোষ্ঠী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (বিবিএস) সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সর্বশেষ উপাত্তের ভিত্তিতে গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউএনডিপি। এতে আয় ও ভোগব্যয় বৈষম্য, সামষ্টিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস ও কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। প্রতিবেদনের আয় ও ভোগব্যয় বৈষম্যের অংশটিতে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে সংস্থাটি।

কোনো দেশে আয়বৈষম্য কতটা, তা পরিমাপের নির্দেশক জিনি সহগ। শূন্য থেকে ১— এ পরিসীমার মধ্যে এটি হিসাব করা হয়। জিনি সহগের মান যত কম হয়, আয়বৈষম্য তত কম বলে ধরে নেয়া হয়। আর সহগের মান উচ্চ হলে তা আয় বা সম্পদ বণ্টনে অধিকতর অসমতা নির্দেশ করে। জিনি সহগের মান শূন্য হলে তা দ্বারা চরম সমতা (অর্থাৎ সবার আয় সমান) বোঝায়। সহগটির মান যদি বাড়তে বাড়তে দশমিক ৫ বা তার বেশি হয়, তার অর্থ হলো— দেশে আয়বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

বিবিএসের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ইউএনডিপি বলছে, ২০১০ সালে দেশে জিনি সহগের মান ছিল দশমিক ৪৫৮। ২০১৬ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৮৩-এ। একই সময়সীমায় গ্রামাঞ্চলে জিনি সহগের মান দশমিক ৪৩ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৫-এ। শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে এ মান ২০১০ সালে ছিল দশমিক ৪৫। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৫-এ।

আয়বৈষম্যের এ চিত্র থেকে চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে ইউএনডিপি। প্রথমত. দেশে আয়বৈষম্য ছয় বছরে অনেক প্রকট হয়েছে। দ্বিতীয়ত. এ সময়ে সবচেয়ে দরিদ্র ও নাজুক অংশটি আরো দরিদ্র হয়ে উঠেছে। তৃতীয়ত. সবচেয়ে ধনী অংশ দ্রুত আরো সম্পদশালী হয়ে ওঠায় তাদের মধ্যেই আয় আরো কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। চতুর্থত. দারিদ্র্যের মাত্রা গ্রামীণ দরিদ্রদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি।

উন্নয়নের একটা পর্যায়ে সমাজে আয়বৈষম্য বাড়তে পারে বলে জানান পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম। তবে এর লাগাম টানতে দারিদ্র্যপ্রবণ অঞ্চলগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ড. শামসুল আলম বলেন, ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সত্ত্বেও কেন আয়বৈষম্য বাড়ছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। দারিদ্র্যপ্রবণ অঞ্চলগুলোয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদারের পাশাপাশি শিক্ষা খাতেও গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আগামী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসব বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হবে।

দেশের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠী আরো নাজুক হচ্ছে মূলত জাতীয় আয়ে তাদের অংশীদারিত্ব কমার কারণে। বিবিএসের সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপের উপাত্ত ব্যবহার করে ইউএনডিপি তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, ২০১০ সালেও জাতীয় আয়ে সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ খানার অংশীদারিত্ব ছিল দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা আরো কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র দশমিক ২৩ শতাংশে। এর বিপরীতে সবচেয়ে সম্পদশালী ৫ শতাংশ খানার আয় অংশীদারিত্ব ২৪ দশমিক ৬ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯ শতাংশে। আয়ের দিক থেকে খানাগুলো ১০ ভাগ করে দেখা গেছে, এর মধ্যে শুধু শীর্ষ ১০ শতাংশের আয়ের অংশীদারিত্ব ছয় বছরে ৩৫ দশমিক ৮ থেকে বেড়ে ৩৮ দশমিক ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ বলেন, কোনো অর্থনীতি যখন দ্রুতগতিতে এগোয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা আয়বৈষম্য তৈরি হতে পারে। তবে সেটি কতটুকু সহনীয় তা দেখার বিষয়। ব্যাপক অনিয়ম ও ব্যাংকিং খাতে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের মতো যেসব ঘটনা নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন, সেগুলো অর্থনীতিতে ভালো কোনো সংকেত দিচ্ছে না। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়াও বৈষম্য দূরীকরণের আরো কী ধরনের কর্মসূচি নেয়া যেতে পারে, সেটি ভেবে দেখতে হবে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ও মেধাভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না পারলে অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি বৈষম্যও কমানো যাবে না।

আয়বৈষম্যের চিত্রের পুনরাবৃত্তি দেখা গেছে ভোগ ব্যয়েও। ভোগ ব্যয়ের দিক থেকে খানাগুলো ১০ ভাগে ভাগ করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে মোট জাতীয় ভোগ ব্যয়ে সর্বনিম্ন ১০ শতাংশের অংশীদারিত্ব দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশে; ২০১০ সালে যা ছিল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৬ সালে শীর্ষ ১০ শতাংশের ভোগ ব্যয়ে অংশীদারিত্ব দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৮ শতাংশে।

ইউএনডিপির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভোগ ব্যয়ের দিক থেকে এ সময় শহরাঞ্চলে বৈষম্যের মাত্রা সামান্য বাড়লেও গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে অনেকখানি। ভোগ ব্যয় সূচকে দেশের গ্রামাঞ্চলে জিনি সহগের মান ২০১০ সালের দশমিক ৩ থেকে এক লাফে বেড়ে হয়েছে দশমিক ৯। আর শহরাঞ্চলে তা দশমিক ৩৩ থেকে বেড়ে দশমিক ৩৪-এ দাঁড়িয়েছে।

ইউএনডিপির ন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যাডভাইজর শামসুর রহমান বলেন, সরকারের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ইউএনডিপি। প্রতিবেদনে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।

ইউএনডিপি বলছে, ক্রমবর্ধবান এ বৈষম্য থেকে উত্তরণে মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সরকারের ব্যয় বাড়ানোর কথা বলেছে তারা। এজন্য রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

সুপারিশে ইউএনডিপি বলেছে, একটি প্রগতিশীল ও বিস্তৃত প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। তবে বাংলাদেশের পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা বিবেচনায় বলা যায়, এক্ষেত্রে ভ্যাট হচ্ছে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ সমাধান। এছাড়া নীতিমালা ও আইনের প্রয়োগ এবং মানবসম্পদ ও দরিদ্রদের আয়বর্ধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সম্পদ ও আয়ের বহুমুখী বণ্টন এক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনাময় সমাধান হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া আয় বণ্টন পরিস্থিতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের সম্ভাব্য আরেকটি পদক্ষেপ হতে পারে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে মানবসম্পদ উন্নয়ন। এতে দরিদ্রদের জন্য উন্নততর ও বেশি আয়ের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যাবে। একটি শিক্ষিত ও সামর্থ্যবান শ্রমশক্তি একদিক থেকে যেমন আয় বণ্টন পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারবে, তেমনি দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

কার্যকর আর্থিক নীতিমালা প্রয়োগের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিতের মাধ্যমেও আয়বৈষম্য কমানো সম্ভব বলে মনে করছে ইউএনডিপি। সংস্থাটির মতে, এজন্য আইনের শাসন

ও যথাযথ নীতিমালার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বিকশিত হতে ও কাজ করতে দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, রাজউক, পৌরসভা ও ভূমি প্রশাসনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোয় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বদলে নিয়মনীতি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলেই দেশে আয় বণ্টন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো যাবে।

  • Courtesy: Dainik Banikbarta Mar 12, 2018

Govt doles out Tk 20b to recapitalise banks

Amount less than 10pc of total capital shortfall


The government will give Tk 20 billion in a latest dollop to state-run banks to meet their capital shortfall, officials said, at a time when reports are rife on irregular big lending.

The funds are set to be handed out to seven financial institutions three state-owned banks (SoBs), three specialised banks and the restructured Grameen Bank (GB) the sources said.

The money will be made available from a Tk 20-billion fund earmarked in the 2017-18 budget for recapitalisation of banks. 

The financial institutions division (FID) under the ministry of finance sent a proposal in this regard to the finance minister for approval, despite criticisms about giving taxpayers' money for so-called recapitalisation of banks time and again.

The minister gave the seal of approval on the proposal on March 7, a source concerned said.

Some Tk 4.0 bilion, Tk 4.0 billion, Tk 3.0 billion, Tk 3.0 billion, Tk 4.0 billion, over Tk 1.997 billion and Tk 2.1 million will go into the coffers of Sonali Bank, Janata, Rupali Bank, Basic, Bangladesh Krishi Bank, Rajshahi Krishi Unnayan Bank (RAKUB) and Grameen Bank (GB) respectively from the budget cake kept for banks, according to finance ministry data.

The amount provided to banks is equivalent to10 per cent of the total capital shortfall of the banks for this year. In this regard, it will make a plan as early as possible, according to a senior official of the division.

"We have given allocation from the recapitalisation fund to the SoBs and other agencies," said a high official of the finance ministry.

Earlier, Bank and Financial Institutions Division (BFID) had sent the proposal for recapitalising the state-run banks and Grameen Bank.

However, the authorities of the banks are not satisfied with the amount of government allocation as they are running their banking operations with substantial capital shortfall in recent days, sources concerned in the state banks said.

Recently, the state-owned banks sought an aggregate amount of Tk 203.98 billion to replenish their emaciated capital.

According to the proposal, some Tk 60 billion, Tk 25 billion, Tk 12.50 billion, Tk 25 billion, Tk 73.48 billion, Tk 8.0 billion and Tk 2.1 million have been sought by Sonali Bank, Janata, Rupali, Basic, Bangladesh Krishi Bank, Rajshahi Krishi Unnayan Bank (RAKUB) and Grameen Bank (GB) respectively from the budgetary fund.

On February 14, 2018, the government moved to give funds for replenishing capital of the banks that suffered such cash crunch, officials said.

The financial institutions division, under the ministry of finance (MoF), had held a meeting, attended by managing directors of SoBs and a representative of Bangladesh Bank, on the matter. Secretary of the financial institutions division Eunusur Rahman chaired the meeting.

The government had earmarked Tk 20 billion as budgetary allocation for recapitalising the banks in need in the current fiscal year.

The Basel-III regulatory framework has raised capital-adequacy requirement for banks, which most SoBs fall short of.

The funds will be fed to banks to meet the Basel-III requirements mostly, said a source.

"We have sought guarantee from the government. This is not traditional guarantee, Managing Director of the SBL Obayed Ullah Al Masud told the FE last Friday.

"We had sought an allocation of Tk 25 billion from government for BASIC to reduce its capital shortfall. A huge amount of funds is an urgent need for the bank," a senior official of the problem-ridden bank told the FE.

"We have heard that Tk 20 billion was allocated for the state banks last week which is a nominal amount for the banks," he added.

"Recently, we have got the proposal sent by state-owned banks seeking funds to meet their capital shortfall from the government fund," a senior official of the banking division said.

The government had injected Tk 106.22 billion into the coffers of the state banks, the House Building Finance Corporation, private IFIC bank and Grameen Bank between the fiscal years (FYs) 2012-13 and 2016-17.

In the period, the scam-ridden BASIC Bank got the highest amount of Tk 33.90 billion as it stood hollowed for fraudulent lending that led to its management shakeup.

Sonali Bank got the second-highest amount of Tk 30.05 billion while Tk 10.81 billion went to  Agrani bank,  Tk  8.14 billion to Janata, over Tk 7.29 billion to Bangladesh Krishi Bank, Tk 3.10 to Rupali Bank, Tk 3.10 billion to Rajshahi Krishi Unnayan Bank, Tk 4.0 billion to HBFC, Tk 1.78 billion to Sonali Bank (UK), Tk 1.25 billion to Palli Sanchaya Bank, Tk 250 million to Karmasangsthan Bank, Tk 1.85 billion to IFIC Bank, Tk 500 million to Ansar-VDP Bank  and Tk 196 million to Grameen Bank,  according to the financing proposal.

Finance Minister AMA Muhith told Parliament on February 26 last that four SoBs-Sonali Bank, Rupali Bank, Janata Bank and Basic Bank- were facing a capital deficit of Tk 76.26 billion.

As of September 2017, Sonali had a capital shortfall of Tk 31.40 billion (3,140.41 crore), BASIC Bank Tk 25.22 billion, Janata Bank Tk 12.72 billion and Rupali Bank Tk 6.89 billion.

  • The Financial Ex/12-3-18

৭ই মার্চ - গৌরব যখন নিপীড়নের প্লাটফর্ম!

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী


কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় সহে/তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।’ এখন অন্যায়ের কাল। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে সমাজের সব জায়গা থেকে ন্যায় উধাও হয়ে গেছে। লুটেরা, অন্যায়কারী, জবরদস্তিকারী কেবলই শাসককুলের প্রশ্রয় পাচ্ছে। ফলে সমাজে অন্যায় বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। আর অন্যায়কারীর উল্লাসে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। তেমনি ঘটনা ঘটেছে গত ৭ মার্চ রাজধানীজুড়ে।

সে দিন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ এক জনসভা আহ্বান করে। সে জনসভার এসেছিল আওয়ামী লীগের উচ্ছৃঙ্খল এক শ্রেণীর কর্মী, তারা নারীদের বিভিন্ন স্থানে যৌন হয়রানি করেছে। তাদের একাধিক শিকার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সে কথা জানিয়ে দিয়েছে। 

তাদের একজন তার ফেসবুকে বলেছে, ‘আল্লাহ কেন মেয়েদের মাত্র দুটো হাত দিলো! দুটো হাত দিয়ে এতগুলো হাত থেকে বুক পেট বাঁচাব, নাকি কোমর পেট বাঁচাব, ওড়না ধরে রাখব নাকি তাদের হাতগুলো সরাব।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কলেজছাত্রী বলেছেন, 

"আমার সঙ্গে যা ঘটেছে। সেটা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ভেবে নেয়া দুর্ভাগ্যজনক। আমি তখন লজ্জায় কাঁদছি। তার মধ্যে আমার মনে হচ্ছিল আমার দোষটা কী, কেন ওরা আমার সাথে এমনটা করছে। আমি তাদের আটকাতে চেষ্টা করছিলাম। চিৎকার দিচ্ছিলাম। কিন্তু একজনও আসেনি। আমি দুঃখে কাঁদিনি। ঘেন্নায় কেঁদেছি।"  

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সালমা (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ‘গাড়ি চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে খামারবাড়ির দিকে যাওয়ার সময় সামনে দুই তিনটা ট্রাকভর্তি ছেলে স্লোগান দিতে দিতে যাচ্ছিল। রাস্তা ফাঁকা কিন্তু তাদের ট্রাক চলছিল ধীরগতিতে এবং আমার গাড়িকে কোনোভাবেই সাইড দিচ্ছে না। এক-দু’বার আমার গাড়ি তাদের পাশ কাটিয়ে যেতে চেষ্টা করতেই গাড়ির দিকে বোতল ছুড়ে মারতে থাকে তারা। আমার চালক জানালার কাচ নামানোর সাথে সাথে অশ্রাব্য গালি। তাদের বক্তব্য, আমার গাড়ি তাদের পেছন পেছন যেতে হবে।’

আরেকজন তার স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘হল থেকে বের হয়ে কোনো রিকশা পাইনি। কেউ শাহবাগ যাবে না। হেঁটে শহীদ মিনার পর্যন্ত আসতে হয়েছে। আর রাস্তাজুড়ে ৭ মার্চ পালন করা দেশভক্ত সোনার ছেলেরা একা মেয়ে পেয়ে ইচ্ছেমতো টিজ করেছে। নোংরা কথা থেকে শুরু করে যেমন পারছে টিজ করেছে। বহু হয়রানির পর শহীদ মিনার থেকে রিকশা নিয়ে শাহবাগ যাচ্ছি। এতেও রক্ষা নেই। চারুকলার সামনে একদল ছেলে পানির বোতল থেকে ইচ্ছেমতো পানি ছিটাচ্ছে গায়ে। যখন রাগান্বিত হচ্ছিলাম তখন তো একজন রিকশার পেছন থেকে চুল টেনে দৌড় দিয়েছে। সিরিয়াসলি। রিকশা থেকে নামতে চাচ্ছিলাম। জুতাবো ওইটাকে তাই। পাশের রিকশার ভদ্রলোক খুব ভদ্রভাবে না করল। তাই রিকশা থেকে নামিনি। গৌরবময় ৭ মার্চ। সোনার ছেলেরা এত ভালোভাবে পালন করেছে যে, নিজের ক্যাম্পাসে হ্যারাস হতে হয়।’ 

অর্থাৎ নারীরা কোথায়ও নিরাপদ নয়। বরং সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, ৯৪ যৌন হয়রানির শিকার হন। 

আরেকজন লিখেছেন, ‘আজ যে আমি স্বাভাবিকভাবে বাসায় ফিরতে পারব জানতাম না। সায়েন্স ল্যাব থেকে কাকরাইলের জার্নি আমার জন্য কম কষ্টের ছিল না, তা-ও পুরো পথ হেঁটে এসেছি। তবে কিছু কিছু হায়েনার চোখের ভাষা দেখে কেঁদে দেবো ভাবছিলাম (কারণটা বুঝে নেবেন।)। তবে একদম যে বেঁচে গেছি তা কিন্তু না। কেউ বোতলের জল পান করার চেয়ে আমার গায়ে ফেলা দেয়াটা বেশি উপযোগী ভাবছেন। বুঝতেছিলাম না যে, পানি ঢেলে দেয়ার জন্য আপসেট হবো কি না। খালি পানি তো ঢালছে। এটা ভেবে খুশি হবো। কী ভেবে সান্ত্বনা দেবো নিজেকে। জানি না, এটা কেমন ৭ মার্চ। একাত্তরের ৭ মার্চেও কি এমন হতো, জানার খুবই ইচ্ছা। প্রতিদিন একটা না একটা ঘটনার সম্মুখীন হওয়া আমার জন্য, ইনফ্যাক্ট সব মেয়ের জন্য, অভ্যাসের বিষয়। ইনফ্যাক্ট যে দিন কিছু ঘটে না, সে দিন নিজেকে অনেক বেশি ভাগ্যবতী মনে হয়। যা হোক, অনেকে আমাকে রাস্তার হাল জানিয়ে ইনফো দিয়ে সাহায্য করেছে। এ জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। কারণ আপনাদের তথ্যের জন্য অন্তত কিছুটা রাস্তা সেইফলি বেছে নিতে পারছিলাম।’ 

এখন ধর্মের ঢাক দ্রুতই বেজে যায়। সময় বদলেছে। প্রযুক্তির অনেক উন্নতি হয়েছে, প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। ফলে খুব দ্রুত এসব তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। সে দিনের ঘটনা দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং ভাইরাল হয়ে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে কোনো সত্যকেই চেপে রাখা যায় না। সত্য প্রকাশ হয়েই পড়ে।

ওই যে একজন লিখেছেন, যে দিন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, সে দিন তিনি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করেন। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে। স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরেও নারীরা এখন আর নিরাপদ নেই। কেউ বলাৎকারের শিকার হচ্ছে। কেউ কাউকে জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাতেও সম্মত না হলেন তার শরীরে ছুরি বসিয়ে দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের যথেচ্ছ হত্যা পর্যন্ত করছে। মাঝবয়সী নারী থেকে শিশুরা পর্যন্ত কেউই সমাজের এই দুষ্কৃতকারীদের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছে না। বিচারের ঘটনা যে ঘটে না, এমন বলব না। তবে ঘটনার তুলনায় তার সংখ্যা অতি নগণ্য। বহু ক্ষেত্রে তা হারিয়ে যায়। মেয়েপক্ষ যদি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়, তাহলে তাদের পক্ষে বেশি দিন আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। একসময় তারা রণে ভঙ্গ দেয়। কোনো এক ফাঁকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছাড়া পেয়ে যায়। এ রকম বহু আসামি ছাড়া পেয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় করা মামলা প্রত্যাহারের কারণে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কোনোরূপ বাছবিচার না করে এ রকম সাত হাজার মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তার মধ্যে খুন, ধর্ষণের মামলাও ছিল বহু। এরপর যথেচ্ছভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমাও ব্যবহার করা হয়েছে নারী নির্যাতনের এই আসামিদের জন্য। 

কিন্তু আমরা আশ্চর্য হলাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথায়। গত ৮ মার্চ ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সমাবেশস্থলের বাইরে নারী লাঞ্ছিত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটলে সেটা আমাদের দলের বিষয় নয়। তবে এ ব্যাপারে সরকারের দায় আছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে। ফলে এই দলের নেতাকর্মীরা নারী লাঞ্ছনার ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে না। তবে যারাই এর সাথে জড়িত থাকুক, খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টরা কাজ করবে। ওবায়দুল কাদেরের ভাষা প্রণিধানযোগ্য। তা হলো সমাবেশস্থলের বাইরে কোনো নারী যৌন হয়রানির শিকার হলে তার দায়িত্ব দল নেবে না। আর তার দলের নেতাকর্মীরা নারী লাঞ্ছনার ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে না। সমাবেশস্থলের বাইরে সমাবেশের দিকে আসা উচ্ছৃঙ্খল কর্মীদের দিয়ে কোনো নারী লাঞ্ছিত হলে তার দায় কেন আওয়ামী লীগ নেবে না? আবার তিনি যেন এই বলে ওই নেতাকর্মীদের দায়মুক্তি দিয়ে বসলেন যে, তার দলের নেতাকর্মীরা নারী লাঞ্ছনার ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে না। অর্থাৎ আগে থেকেই তিনি নারী নির্যাতনের পক্ষ অবলম্বন করে বসলেন। ওই উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা এখন দ্বিগুণ উৎসাহে নারী লাঞ্ছনায় লেগে যেতে পারে। 

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অতটা নিচে নামেননি। তিনি বলেছেন, শ্লীলতাহানির ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটুকু আশার কথা। আমরা দেখতে চাই যে, জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

কিন্তু আওয়ামী লীগ কোনো ফেরেশতাদের দল নয়, তার প্রমাণ মিলেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারহানা মিলির ফেসবুক স্ট্যাটাসে। তাতে তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতি বুঝুক না বুঝুক সেক্সনীতি বুঝলে বাপের বয়সী জেলা সাধারণ সম্পাদকের কোলে বসে ফুর্তি করাটাই রাজনীতিতে পদবি পাওয়াতে কাজ দেবে। শিক্ষিত না হলে দোষ নেই। একাধিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের শারীরিক সুখ দিতে পারলেই পদবি পাওয়া যাবে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে দু-চারটা ভালো কথা বলতে না পারলেও হোটেলে গিয়ে শিশুদের ভঙ্গিমায় প্রেমালাপ পারলেই রাজনীতি হবে। স্বামীর রোজগারে ঠিকমতো বাসা ভাড়া আসে না, কিন্তু জীবনযাপনের স্টাইল লাখ টাকার বাজেট করতে পারাটাই রাজনৈতিক সার্থকতা তাদের জন্য। বেসামাল শরীরে অশালীন পোশাকে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে সেসব নোংরা ছবি তুলে ফেসবুকে না নিয়ে এলে তাদের ফেসবুক অচল হয়ে পড়ে। তাদের আপত্তিকর পোশাকে না দেখলে হয়তো স্থানীয় বড় পদের বাপদের পেটের ভাত হজম হয় না। শারীরিক বেসামাল গড়ন ও দেহের গড়ন যেন দেহ ব্যবসার বিশেষ পণ্য বস্তু। নিজের সন্তানকে কাজের লোকদের কাছে রেখে রাজনীতির নামে সারা দিন বেশ্যাবৃত্তি করাটাই তাদের কাজ। পরিবারে নেই কোনো জবাবদিহি। তাই যাচ্ছে-তাই করা যায়... স্থানীয় এমপি ও রাজনৈতিক বড় পদের মালিকদের সাথে তাদের গোলাপঝরা সখ্য। আফটার অল তাদের ইয়াবা আর মাদক ব্যবসা এবং রাজনৈতিক পদ বেচে দেহ ব্যবসায় সফল করতে ও সচল রাখতে এসব পদবি আর বয়সে আব্বরাই তো এক মাত্র সহায়ক।’

এ ধরনের একটা স্ট্যাটাসের পরিণতি কী হতে পারে ফারহানা মিলি তা জানতেন। কিন্তু সম্ভবত আত্মগ্লানির কারণে তিনি ঝুঁকি নিয়েই এই কাজ করেছেন। তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, তিনি নিজেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ফারহানা মিলি এ কথা বলেছেন, তার জেলার আওয়ামী লীগকে নিয়ে। সর্বত্র কিন্তু একই চিত্র নয়। আওয়ামী লীগে ভালো মানুষ একেবারে নেই এমন কথা আমরা বলি না। কিন্তু ফারহানা মিলি এর একটা নোংরা দিক উন্মোচন করে দিয়েছেন। মিলি যেহেতু ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এ কথা বলেছেন, ফলে এটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। তার কথা যদি সত্য হয়ে থাকে তবে কাজটি ঘৃণ্য। আমরা আগের মতোই বলি ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।’ 

  • Courtesy: নয়াদিগন্ত  

নিয়ত করে খেলাপি


‘ধারালে শোধাতে হয়’—আঞ্চলিক এই প্রবাদবাক্য তাঁদের জন্য যেন কথার কথা! এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে আর শোধ করছেন না। ঋণ দুর্বৃত্তদের অপকর্মের খেসারত গুনতে হচ্ছে খেলাপি হতে চান না—এমন ব্যবসায়ীদের। দেশে বিনিয়োগ কম হয় বলে নানা মহল থেকে যখন হতাশা ব্যক্ত করা হচ্ছে, তখন ঋণ জালিয়াতদের কারণে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের ঋণ লাভে বেগ পেতে হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ এবং এ অর্থের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষণ রাখা অর্থের ভার পড়ছে ‘ভালো’ ব্যবসায়ীদের ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিতে দেখা যায়, গত এক দশকে খেলাপি ঋণের অঙ্কটি চার গুণ হয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে এসে পরিস্থিতির রীতিমতো অধঃপতন ঘটেছে। ২০০৭ সাল শেষে যেখানে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা, ২০১৭-এর সেপ্টেম্বরে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ঘটনায় ব্যবসায় লোকসানের কারণে অনেক ঋণগ্রহীতা খেলাপি হতেই পারেন। এ ক্ষেত্রে খেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বন্ধক রাখা জমি বা সম্পদ নিলাম করে ঋণের টাকা আদায় করে ব্যাংক। কিন্তু এখন অনেক ঋণগ্রহীতাই ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হচ্ছেন। তাঁরা বন্ধকী সম্পত্তি নিলাম করে টাকা আদায়েও বাধা দিচ্ছেন। ফলে বিপাকে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক। আর লাফিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। বড় বড় কয়েকটি ঋণগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে বড় অঙ্কের কিছু ঋণ পুনর্গঠন করার সুযোগ দেওয়া হলেও তাতে আশানুরূপ ফল দেয়নি। এই ঋণও আবার খেলাপি হয়ে পড়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংক অর্থঋণ আদালতে মামলা করেও সুফল পাচ্ছে না। কারণ ঋণগ্রহীতারা প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁরা প্রভাবশালী বিচারপতিদের দিয়ে মামলা পরিচালনা করান। পরিস্থিতির সুযোগ নিতে যেন অনেকটা নিয়ত করেই ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে খেলাপি হচ্ছেন প্রভাবশালীরা। এতে ব্যাংক ব্যবস্থা ধসে পড়ছে। জনগণের করের টাকায় প্রতিবছর ব্যাংকগুলোর মূলধন পুনর্ভরণ করে বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে।

কাগজে-কলমে দেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের দাদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ৮৮৯ কোটি টাকা। ওয়ান-ইলেভেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে তাঁদের ঋণ পুনর্গঠন করে নিয়েছিলেন। তাঁদের অনেকেই এর পর থেকে আর কোনো কিস্তি পরিশোধ করেননি। তবে সংসদে সম্প্রতি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি শীর্ষ ২৫ খেলাপির যে তালিকা দিয়েছে, এর মধ্যে হাজার কোটি টাকার ওপরে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা প্রভাবশালী গ্রুপগুলোর নাম নেই। অর্থাৎ এরই মধ্যে তারা আবারও পুনর্গঠন বা পুনঃ তফসিল করে নিয়েছে।

ঢাকার ইস্কাটনে অবস্থিত একটি শিল্পগোষ্ঠীর চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ৩৮২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে জামানতের মূল্য ২৩১ কোটি টাকা। গ্রাহক ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর একবার এই ঋণ আট বছর মেয়াদে পুনঃ তফসিল করে নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত আর কোনো কিস্তি দেয়নি। এই ঋণ গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর আবার পুনঃ তফসিল করা হয়েছে। তাতে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গ্রাহককে কোনো কিস্তি দিতে হবে না। কিন্তু এই গ্রাহকের ৩৮২ কোটি টাকা খেলাপির হিসাবে নেই। একই গ্রাহক নতুন করে ব্যাংকের কাছে ২২০ কোটি টাকার ঋণ চেয়েছে। যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের জন্য এই ঋণ চাওয়া হয়েছে, ব্যাংক কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছেন, পাঁচটি কম্পানিই বন্ধ রয়েছে। আবার হলমার্কসহ অনেক ঋণ জালিয়াতের কাছ থেকে আপাতত কোনো টাকা পাওয়া যাবে না ভেবে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ অবলোপন করে রেখেছে ব্যাংকগুলো। শীর্ষ ২৫ ঋণখেলাপির তথ্যে দুই হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলমার্কের মাত্র একটি কম্পানির (হলমার্ক ফ্যাশন) নাম রয়েছে, যে কম্পানিটির নামে ৩৩৯ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি রয়েছে। হলমার্ক গ্রুপের বাকি ঋণ অবলোপন করে রাখা হয়েছে।

হলমার্ক গ্রুপের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের দায়ের করা মামলায় হলমার্ক গ্রুপের পক্ষে আদালতে লড়েছেন শুরুতে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, পরে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। সর্বশেষ হিসাবে, অর্থঋণ আদালতে বর্তমানে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে দুই লাখের মতো মামলা। তাতে জড়িত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। আবার অর্থঋণ আদালতে নিষ্পত্তি হলেও এর বিরুদ্ধে আপিল করার পর উচ্চ আদালতে মামলাগুলো দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। অনেক ব্যবসায়ী ঋণখেলাপি হওয়ার পরও তাঁকে যাতে ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা না হয়, সে জন্য আগেই উচ্চ আদালতে রিট করে রায় নিয়ে এসে নতুন করে ঋণ নিচ্ছেন। উচ্চ আদালতে ঝুলে থাকা ঋণসংক্রান্ত বিপুলসংখ্যক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য পৃথক বেঞ্চ গঠনে উদ্যোগ নিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিলেও তা এখনো গঠিত হয়নি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ঋণখেলাপিরা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়ছে এবং ভালো ব্যবসায়ীদের ঋণপ্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে জালিয়াতি করে ঋণ দেওয়া ও নেওয়ার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠছে, তাকে ‘ব্যাংক লুটপাট’-এর সঙ্গে তুলনা করছেন বিশ্লেষকরা। হলমার্ক ঋণের জন্য কোনো আবেদন না করেই ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে সোনালী ব্যাংক থেকে নিয়ে গেছে দুই হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিকরাও বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ নিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক চার হাজার কোটি টাকা কাদের দিয়েছে, তাদের সবার নাম-ঠিকানাও নেই ব্যাংকের কাছে। একসময় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীরা ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও এখন এ সংস্কৃতি বেশির ভাগ ব্যাংকেই ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাংকাররাও ভুয়া কাগজে ঋণের নামে টাকা দিয়ে মোটা অঙ্কের কমিশন খাচ্ছেন। সরকারি বিভিন্ন বৈঠকেও ব্যাংক থেকে জাল-জালিয়াতি করে টাকা নিয়ে পরিশোধ না করার ঘটনাকে ‘লুটপাট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ৩৪তম বৈঠকে সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, ‘দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাটের ঘটনা কিভাবে ঠেকানো যায়, তার ওপর উপায় খুঁজে বের করতে আরো কার্যকর গবেষণা করার সুপারিশ গৃহীত হয়।’

বাংলাদেশে ব্যাংক লুটপাট ও খেলাপির ভয়ংকর এ চিত্র এক দশক আগেও চোখে পড়েনি। তখন ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ প্রকৃত অর্থেই লোকসান করে খেলাপি হতেন। খুব কমসংখ্যক ব্যবসায়ীই ঋণ নিয়ে ইচ্ছা করে খেলাপি হতেন। খেলাপি ঋণ ‘মহামারি আকার’ ধারণ করেছে মূলত ২০১২ সাল থেকে। ২০০৭ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ২২ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা, যা ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের ১৩.২৩ শতাংশ ছিল। ২০০৮ সাল শেষে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকায় নামে, খেলাপির হার দাঁড়ায় ১০.৭৯ শতাংশ। এই ঋণ ও এর হার পরের বছরগুলোতে ছিল এ রকম : ২০০৯ সাল শেষে খেলাপি ঋণ ২২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯.২১ শতাংশ। ২০১০ সালে ২২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা এবং মোট ঋণের ৭.২৭ শতাংশ, ২০১১ সালে ২২ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা (৬.১২ শতাংশ), ২০১২ সালে  ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা (১০.০৩ শতাংশ), ২০১৩ সালে ৪০ হাজার ৫৮৩ টাকা (৮.৯৩ শতাংশ), ২০১৪ সালে ৫০ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা (৯.৬৩ শতাংশ), ২০১৫ সালে ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা (৮.৭৯ শতাংশ) এবং ২০১৬ সালে ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা (৯.২৩ শতাংশ)। আর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা (মোট ঋণের ১০.৬৭ শতাংশ)। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ১১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকা, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) ৭৩৯ কোটি টাকা এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ছয় হাজার ১৫৯ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ বাড়ে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এটি যোগ করলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এক লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০০৩ সালের পর থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। এর মধ্য থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো আদায় হওয়ায় অবলোপন করা ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের মধ্য থেকে বড় বড় কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ১৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ দীর্ঘ মেয়াদে পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে ওই ঋণগুলো খেলাপি ঋণের মধ্যে পড়ছে না। এ ছাড়া অনেক ঋণখেলাপি আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে নিজেদের খেলাপি হিসেবে দেখানোর হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন বলেও জানা যায়। এতেও বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়েও খেলাপির হিসাবে যোগ হচ্ছে না। এই ঋণগুলো যোগ হলে খেলাপি ঋণের চিত্র আরো ভয়াবহ হবে বলে মনে করেন ব্যাংক খাত বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাব এবং ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক প্রভাবসহ নানা কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের হার বেশি। সোনালী ও বেসিক ব্যাংকের মতো কিছু ব্যাংক বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণের কারণে উচ্চ খেলাপি ঋণে জর্জরিত। এ ছাড়া সম্প্রতি কিছু কিছু বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করছে। চলতি অর্থবছরেই রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে ব্যাংকগুলোকে দুই হাজার কোটি টাকা মূলধন জোগান দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বাকি টাকা জোগান দেওয়া হবে আগামী অর্থবছর, জনগণের করের টাকা থেকে। ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে গত অর্থবছর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে মোট ১০ হাজার ৬২৩ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়েছে সরকার।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, খেলাপি ঋণ বন্ধে ঋণ বিতরণকালে ব্যাংকারদের সঠিক গ্রাহক বাছাই করা উচিত। আর যাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণখেলাপি হচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না থাকলে খেলাপি সংস্কৃতি কমবে না। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়লে ভালো গ্রাহকদের দুর্ভোগই সবচেয়ে বেশি। কারণ যাঁরা খেলাপি হয়েছেন, তাঁদের নেওয়া ঋণের সুদাসল না পেয়ে ব্যাংক ভালো গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার সময় সুদ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। সে কারণে খেলাপি ঋণ না কমে উল্টো বেড়েই চলেছে।’ সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে ঋণ মঞ্জুর করায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ‘খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এর শেষ কোথায়, তা কারো জানা নাই। সরকারি ব্যাংকে ব্যাপক ঋণ অনিয়মের পর এবার বেসরকারি ব্যাংকেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালকরা নিজেদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পারায় অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। যে উদ্দেশ্যে এসব ঋণ নেওয়া হচ্ছে, সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহার হচ্ছে না। এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন ব্যাংকের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও। এসব ঋণের বড় একটি অংশ আদায় হচ্ছে না।’ 

এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, হঠাৎ যারা ফুলেফেঁপে বড়লোক হতে চাচ্ছে, তারাই এ কাজ করছে। প্রভাবশালীদের মধ্যেই ফাঁকিবাজি বেশি। ব্যাংক অনেক সময় ভালো গ্রাহক মনে করেই ঋণ দেয়। কিন্তু ঋণের টাকা হাতে পাওয়ার পরই ঋণগ্রহীতার চেহারা পাল্টে যায়। ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করার কথা ভুলে যায়।

বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের চারজন এবং টানা ৯ বছর থাকার বিধান চালু হওয়ায় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ভয়াবহ আকার ধারণ করবে মনে করেন তিনি।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণ ছিল সাত লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়া ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকার ২৯.২৫ শতাংশ ঋণই ছয়টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের। পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। জুনের তুলনায় এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২.৪১ শতাংশ। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের দেশীয় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের ৫.৯৭ শতাংশ। জুনের তুলনায় এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

তথ্যে আরো দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল দুই হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এই ব্যাংকগুলোর ৭.৮৯ শতাংশ ঋণই খেলাপি। একইভাবে সেপ্টেম্বরে কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল পাঁচ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। এই ব্যাংকগুলোর ২৩.৭৯ শতাংশ ঋণই খেলাপি।

বেসরকারি ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সম্প্রতি বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতাটা খুবই উদ্বেগজনক। এভাবে ঋণ বিতরণ করলে খেলাপি ঋণ আরো বেড়ে যেতে পারে।’

  • কালের কণ্ঠ/12-3-18

Bangladesh failed to invest in edn - Fazle Hasan Abed


BRAC founder and chairperson Fazle Hasan Abed on Sunday said that Bangladesh had failed to invest in education, giving it one of the lowest budgetary allocations, while initiatives had been insufficient to enhance quality.

He was giving the keynote speech on ‘assembly on higher education in Bangladesh’ at Nabab Nawab Ali Chowdhury Senate Bhaban of the Dhaka University. 

The event was organised by DU international relations and history departments in association with Friedrich-Ebert-Stiftung Bangladesh, said a 
press release.

Pointing that Bangladesh allotted only 2 per cent of its GDP in education sector, Abed suggested that special attention should be given to higher education through incorporating inclusive equitable learning and information and communication technology to achieve a double digit growth and the Sustainable Development Goals.

Abed also suggested opening professional faculty development centres, online courses and a national teaching service corp for improvement in education sector.

He also stressed on incorporating ethics and values while educational institutions practice greater accountability and autonomy.

‘There should be student loan schemes available through tripartite agreements of banks, educational institutions and students while international organisations should provide concessional loans for developing the education sector,’ Abed added.

Abed said funding should be increased in research and development units.

DU international relations professor Imtiaz Ahmed gave the welcome address while FES Bangladesh resident representative Franziska Korn and German ambassador to Bangladesh Thomas Prinz also spoke. 

  • NewAge/12-3-18

Sunday, March 11, 2018

BB under pressure to award licences for three more banks before polls

Shakhawat Hossain



The Financial Institutions Division has sought the consent of the Prime Minister’s Office for banking licence for proposed Citizen Bank while the Bangladesh Bank is reportedly under pressure for three more banking licences before the next general elections although the sector is already overcrowded with 57 banks and mired by scams.

Division officials said that they sought the consent in the last week of February because of a central bank prerequisite for the issuance of banking licence to the proposed Citizen Bank. Financial Institutions Division secretary Eunusur Rahman said that the division had to comply with the directive of the higher-up.

He, however, said that the central bank was the ultimate authority to issue a banking licence.

The Bangladesh Bank had turned down a previous recommendation made by the division for granting licence to Citizen Bank, proposed by export oriented readymade garment businessman Mohammad Iqbal, also kin of law minister Anisul Huq.

Mohammad Iqbal told New Age on Saturday that he was expecting the licence this time as he had been persuading the Bangladesh Bank since 2011. Asked if he is a relative of the law minister, Iqbal said the law minister had sympathies for him.

Division officials expected that the Prime Minister’s Office would give the consent to the establishment of the Citizen Bank soon. 

In December 2017, the Prime Minister’s Office gave consent to the for establishment of two banks by private entrepreneurs amid warning by experts that entry of new banks would be disastrous for the already scam-hit and overcrowded banking sector.

The proposed banks are Bengal Bank proposed by Bengal Group of Industries and People’s Bank of MA Quasem of Swandip, backed by Awami League leaders.

Officials said that the Bangladesh Bank was under pressure to award banking licenses to at least few from a dozen of applicants although its officials continued opposing the establishment of new banks.

On November 27, 2017, finance minister AMA Muhith said that the government was going to give licences for setting up three more banks. He, however, did not name the banks.

The entry of new banks would not be helpful for keeping discipline in the already undisciplined banking sector, said a position paper of the central bank on the establishment of new banks drafted in December 2017.

Central bank officials pointed out that two of the nine new banks established after 2013 — Farmers Bank and NRB Commercial Bank — were at risk because of scams.

Besides, other new banks — Meghna Bank, Midland Bank, Modhumoti Bank, NRB Bank, NRB Global Bank, South Bangla Agriculture and Commerce Bank and Union Bank — could not comply with the licensing conditions like placing initial public offering and maintaining certain ratio of agricultural loan disbursement, said the position paper.

Experts said that the loan scams in the new banks in addition to growing defaulted loans of over Tk 80,000 crore were warning signals to the banking sector.

At the Regional Banking Conference organised by the Bangladesh Institute of Bank Management in Dhaka in the past week it was revealed that defaulted loan in the country’s banking sector crossed double digit mark, compared to 7 per cent in India and 2 per cent in Nepal.

Former Bangladesh Bank governor Farashuddin Ahmed in his paper titled ‘A Review of the Activities and Performance of the Banking Sector of Bangladesh’ said that the high non-performing loan remained a key issue of concern for the banking sector.

The non-performing loan ratio would go up to 17 per cent if rescheduled or restructured loans are included, he said. 

Bangladesh Institute of Bank Management supernumerary professor Md Yeasin Ali said that the Bangladesh Bank should make public the defaulters’ identities to tackle the non-performing loans. 

In China, air and train tickets are not sold to the defaulters as punitive measures of the government and to shame the defaulters, he said.

  • Courtesy: New Age Mar 11, 2018

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ, তদন্তে সাড়া মিলছে না


আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে আমলে নেয়া অভিযোগ তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের সাড়া পাচ্ছে না জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। গত পাঁচ বছরে পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ১২৮টি অভিযোগ গ্রহণ করেছে কমিশন। নিয়ম অনুযায়ী এসব অভিযোগের তদন্ত করার কথা সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন চায় মানবাধিকার কমিশন। তবে তদন্তের বিষয়ে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছে না কমিশন। কমিশনের চিঠির প্রেক্ষিতে যে কয়টি ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে তা পুরো বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মনে করছে কমিশন।

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিষয়টি প্রেসিডেন্টকেও অবহিত করেছে কমিশন। 

২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে চাঞ্চল্যকর ও ব্যাপক আলোচিত ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (জামাকন) সুয়োমটোভাবে ও ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবার কর্তৃক অভিযোগগুলো গ্রহণের পর আইন অনুযায়ী তদন্তের জন্য পাঠায়। বেশিরভাগ অভিযোগেরই তদন্তের বিষয়ে কোনো তথ্য পায়নি কমিশন। যে কয়টি ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট এসেছে তাও সন্তোষজনক নয় বলে কমিশন মনে করে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক মানবজমিনকে বলেন, ‘পুলিশ, র‌্যাব ও প্রশাসনের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী আমরা সরাসরি তদন্ত করতে পারি না। তাই সংশ্লিষ্ট অভিযোগগুলো গ্রহণের পর তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখছি। চাঞ্চল্যকর অনেক ঘটনার তদন্তই আটকে আছে কয়েক বছর ধরে। তা তদন্তের জন্য সব সময় বলে আসছি। কিছু কিছু প্রতিবেদন পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ তদন্তেই ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় না বলে প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে। এতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি না। এই বিষয়টি মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে জানানো হয়েছে। আমরা আশা করবো সত্যিকারের গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত প্রতিবেদন যাতে পাওয়া যায়। তাতে অন্তত মানবাধিকার রক্ষা পাবে।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সূত্র জানায়, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার সংস্থাটি অভিযোগ গ্রহণ, পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করে থাকে। কিন্তু পুলিশ, র‌্যাব ও প্রশাসনের সদস্যদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে একইভাবে অভিযোগ গ্রহণ করে। তবে এসব ঘটনা সরাসরি কমিশনের তদন্তের এখতিয়ারভুক্ত নয়। তা তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠাতে হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পুলিশ সদর দপ্তর তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়। দেশে গত কয়েক বছর ধরে পুলিশ, র‌্যাব ও প্রশাসনের সদস্যদের দ্বারা খুন, গুম, নির্যাতনসহ বিভিন্নভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু অভিযোগ এই সংস্থাটি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অধিকাংশই ন্যায় বিচার না পেয়ে ভিকটিম ও তাদের পরিবার কমিশনে অভিযোগ দাখিল করেছে। আর কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনায় কমিশন সুয়োমটোভাবে অভিযোগ গ্রহণ করেছে। নিয়ম অনুযায়ী যথারীতি তা তদন্তের জন্য পাঠানো হয়ে আসছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তদন্তভার যাচ্ছে স্বয়ং যে সংস্থার সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই পুলিশ বা র‌্যাবে। গত ৫ বছরে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য এবং কারারক্ষীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কয়েকশ’ অভিযোগ তদন্তের জন্য কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তার একটা বড় অংশের তদন্ত হলেও প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। তবে এর একটা বড় অংশের তদন্তও এখন পর্যন্ত হয়নি। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত গত ৫ বছরে কমিশনের এমন ১২৮টি অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন আজও পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে ২০১২ সালের ৪টি, ২০১৩ সালের ১০, ২০১৪ সালের ৪৫, ২০১৫ সালের ৫৭ এবং ২০১৬ সালের ১২টি অভিযোগ রয়েছে। 
রাষ্ট্রীয় এই মানবাধিকার কমিশন সূত্রে জানা যায়, তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষমাণ ২০১২ সালের ৪ অভিযোগের মধ্যে রয়েছে গাজীপুরের কালিগঞ্জ উপজেলার বালু ব্যবসায়ী মামুনকে গ্রেপ্তারের পর খুনিদের হাতে তুলে দেয়ার (সুয়োমটো ২৬৪/১২) অভিযোগ এবং জেলহাজতে প্রেরণের পর এক আসামির মৃত্যুর অভিযোগ। ২০১৩ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ১০ অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন গত ৪ বছরেও পায়নি জামাকন। এর মধ্যে রয়েছে থানায় পুলিশি নির্যাতনে এক আসামির মৃত্যুর সুয়োমটো (৬/১৩) অভিযোগ। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পিন্টুর গ্যারেজ থেকে মো. ফখরুল ইসলাম র‌্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার ও গুম (অভিযোগ-১৫৩/১৩) এবং অপর ঘটনায় র‌্যাব কর্তৃক হত্যা (২১২/১৩)। একই বছর পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপর অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে রাজা ও রণি নাম দু’জনকে ধরে নেয়ার পর থেকে নিখোঁজ (২৩২/১৩), কুষ্টিয়া ডিবি ও খোকশা থানা পুলিশ কর্তৃক ফজলু খাঁ ওরফে ফাইজাকে আটক ও নির্যাতনের পর ক্রসফায়ার (অভিযোগ নং ৩৭২/১৩), রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে বিচারবহির্ভূত হত্যা (৪২০/১৩), পুলিশের অমানবিক শারীরিক নির্যাতন (২৪৫/১৩) ও পুলিশের সহায়তায় ব্যবসার অর্থ লুট (৪০৪/১৩)। 

পরের বছর ২০১৪ সালের আটকে থাকা ৪৫ অভিযোগের মধ্যে ৭টিই কমিশন গৃহীত সুয়োমটো অভিযোগ। এ অভিযোগগুলো হলো- পল্লবী থানার এসআই কর্তৃক বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে যুবককে নির্যাতনের পর হত্যা (সুয়োমটো অভিযোগ নং ২/১৪), এক হাজার টাকার জন্য আশুলিয়া থানা কর্তৃক রিপন শিকদারকে হত্যা (৯/১৪), যশোরে চাঁদার টাকা না পেয়ে সালমান শিকদার ওরফে বিকি নামে এক ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি করা (১৩/১৪), জিসান নামে এক ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তারের পর ব্যাপক নির্যাতন (১৬/১৪), সাভারে ওসির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর হাত ভেঙে দেয়ার অভিযোগ (১৭/১৪), গাজীপুরের কাউলিয়ায় স্কুল শিক্ষক আবুল কাশেমের পুত্র খাইরুল ইসলামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বাড়ি থেকে ধরে নেয়ার ৪৫ দিন পর জঙ্গি হিসেবে গ্রেপ্তার (১৯/১৪), এসআই আনোয়ার কর্তৃক শাহ আলমকে মিথ্যা সন্ত্রাসী বানানো ও পায়ে গুলি করা (২২/১৪)। ওই বছরের তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় থাকা বাকি ৩৮ অভিযোগ ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের করা। এগুলো মধ্যে রয়েছে- যাত্রাবাড়ীতে ক্রয়ফায়ার (৩৫/১৪), গুম (৯৫/১৪), ঘুষ দাবির ঘটনাকে কেন্দ্র করে র‌্যাব-পুলিশ কর্তৃক শাওনকে গুম (১৫৬/১৪), র‌্যাব কর্তৃক আটক ও নিখোঁজ (১৩৩/১৪) এবং গ্রেপ্তারের পর অস্বীকার (১৬১/১৪), খিলক্ষেতে থানা হেফাজতে হৃদয় ইসলাম মমিনের মৃত্যু (১৮৬/১৪) ইত্যাদি অভিযোগ। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্ত আটকে থাকা মানবাধিকার কমিশনের ২০১৫ সালের ৫৭টি অভিযোগের মধ্যে ৯টিই জামাকন স্বপ্রণোদিত হয়ে গ্রহণ করেছে। এগুলো হলো- পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৯ অরাজনৈতিক ব্যক্তিসহ ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হওয়া (সুয়োমটো ১/১৫), ফরিদপুরের ভাঙ্গায় হ্যান্ডকাফের চেন পেঁচিয়ে পুলিশ কর্তৃক আসাদুলকে হত্যা (৩/১৫), বিনা দোষে এক ব্যক্তির ২২ দিন কারাভোগ (১০/১৫), পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক ব্যক্তির নিহত হওয়া (১১/১৫), গাজীপুরে র‌্যাবের বন্দুকযুদ্ধে মো. মামুন আহমেদ নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু (১২/১৫), নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের চরকাকড়ায় ছামছুদ্দিন মিলনকে ডাকাত সাজিয়ে পুলিশের সামনে হত্যা ও টাকার বিনিময়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদায় (১৫/১৫), সুন্দরবনে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৬ জন নিহত (১৭/১৫) অন্যতম। এছাড়া ওই বছরের বাকি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো খুন, গুম, অপহরণ, নির্যাতন, অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করা, আটকে রেখে নির্যাতন করে চাঁদা আদায়, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও হত্যা মামলা না নেয়া, হয়রানি। যার অধিকাংশই পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে। 

একই সঙ্গে ২০১৬ সালে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের আরো ১২টি ঘটনার তদন্ত চেয়ে প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে জামাকন। এর মধ্যে কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগটি মানবাধিকার কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে সুটোমটো অভিযোগ হিসেবে গ্রহণ করে (অভিযোগ নং ৩/১৬)। কিন্তু তাসহ ১২ অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, গত বছর ২০১৭ সালের বেশ কিছু অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদনও এখনো পায়নি মানবাধিকার কমিশন। 

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহানা সাঈদ বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্তের জন্য পাঠানো অভিযোগগুলোর প্রতিবেদন বারবার চেয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া মাঝে মাঝে কিছু তদন্ত প্রতিবেদন এলেও সেগুলোর অধিকাংশ চাঞ্চল্যকর হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। 

বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস) সহেলী ফেরদৌস এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ঘটনা সত্য হলেও সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় না। এজন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে হয়। খুনের মামলায়ও এমনটা ঘটে থাকে। প্রথম দিকে ভিকটিম বা পরিবার আগ্রহী থাকলেও পরে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করতে আগ্রহী হয় না। ডিআইজি মিজান ও মিরপুরের এসআই জাহিদের ঘটনা তো তদন্ত হচ্ছে। মানবাধিকার কমিশনের বাকি অভিযোগগুলো পর্যায়ক্রমে তদন্ত হবে। 

  • মানবজমিন/ ১১-৩-১৮ 

একক ঋণে বৃহত্তম কেলেঙ্কারি - অভিযোগ ছিল গাড়ি চুরির, এখন বড় শিল্পপতি

  • ১০ বছর আগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ইউনুছ।
  • অভিযোগ ছিল গাড়ি চুরির।
  • ইউনুছ এখন ব্যাংকঋণের টাকায় বড় শিল্পপতি।
  • এ্যাননটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউনুছ।
  • এ্যাননটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২টি।


১০ বছর আগেও অভিযোগ ছিল গাড়িচোর চক্রের নেতা তিনি। ২০০৭ সালে পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছিলেন। এর ঠিক তিন বছর পর থেকে তিনি আবির্ভূত হন জনতা ব্যাংকের অন্যতম বড় ঋণগ্রাহক হিসেবে। ব্যাংকটি সব নিয়মনীতি ভঙ্গ করেই তাঁকে উদার হস্তে অর্থ দিয়ে গেছে। আর এখন তিনি বড় শিল্পপতি, ২২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক।

তিনি এ সময়ের আলোচিত গ্রাহক এ্যাননটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইউনুছ বাদল। জনতা ব্যাংক তাঁকে ছয় বছরে দিয়েছে ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা। ২০০৭ সালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের বিশেষ দলের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। ইউনুছ বাদলের গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ করেছিল তখনকার গণমাধ্যমগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন দেখা যাচ্ছে যে তিনি আসলে সাধারণ ব্যবসায়ী নন। হয়তো দুর্নীতির ওপর ভিত্তি করে তাঁর ব্যবসার শুরু। এ ধরনের লোককে ব্যাংকের কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া একেবারেই অনুচিত।’

ইউনুছ বাদলের বিষয়ে কথা হয় গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেওয়া ডিবির তৎকালীন চার কর্মকর্তার সঙ্গে। প্রায় ১১ বছর আগে তাঁদের হাতে গাড়ি চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া লোকটি কী উপায়ে জনতা ব্যাংক থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ পেলেন, সেটি ভেবে তাঁরাও বিস্মিত।

ডিবির তখনকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাড়ি চুরি-ছিনতাই বন্ধ এবং চোরাই গাড়ি ও মোটরসাইকেল উদ্ধারের জন্য ২০০৭ সালের ১৯ মার্চ গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের বিশেষ দুটি আভিযানিক দল গঠন করা হয়। দল দুটির নেতৃত্বে ছিলেন ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাসুদুর রহমান। তিনি এখন ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনারের (ডিসি) দায়িত্ব পালন করছেন। মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৭ সালের ১৭ মে উত্তরা থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে একজন ইউনুছ বাদলকে তিনি কয়েকটি কারণে স্মরণ করতে পারেন। চোরাই গাড়ি বিক্রির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। পরে পুলিশ সেই মামলা তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেয়।

গ্রেপ্তারের পর ২০০৭ সালের ১৮ মে ঢাকা মহানগর পুলিশের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির শিরোনাম ছিল ‘ডিবির হাতে গাড়ি চুরি সংঘবদ্ধ চক্রের পাঁচ সদস্য গ্রেপ্তার’। ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘ডিবির এডিসি মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে গাড়ি চুরি-সংক্রান্ত একটি বিশেষ দল ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ গাড়িচোর দলের সদস্য মো. ইউনুছ (বাদল), বিপ্লব, শফিউদ্দীন, শফিকুল ইসলাম ও এ বি এম শামসুল হাসানদের গ্রেপ্তার করে।’

বর্তমানে অবসরে থাকা ডিবির সাবেক এক উপপরিদর্শক প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৭ সালের ১৭ মে তিনিসহ এসআই আবদুল হাকিম, এসআই আকরাম, জাকির ও রাজ্জাক ইউনুছ বাদলকে ধরতে উত্তরায় অভিযান চালান। বাদল তখন একটা দোতলা বাড়ির পুরোটা নিয়ে থাকতেন। তিনি পোশাক কারখানার মালিক হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর তদবিরও এসেছিল।

ইউনুছ বাদলের বিষয়ে জানতে শুক্রবার ডিবির তৎকালীন গাড়ি চুরি প্রতিরোধকারী দলের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ইউনুছ বাদলকে নিয়ে  তাঁর তখনকার অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো একে উত্তরা থেকে ধরেছিলাম। আমি নিজে ওর বাড়িতে অভিযানে গিয়েছিলাম। তখনই তার কী শানশওকতের জীবন!’

ডিবির তৎকালীন একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা (এখন পুলিশ সুপার) প্রথম আলোকে বলেন, ইউনুছ বাদলকে ধরে আনার পর বিএনপির প্রয়াত প্রভাবশালী এক নেতার ছেলে ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইউনুছের জন্য জোর সুপারিশ করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল বলে তাঁর সুপারিশ তেমন পাত্তা পায়নি। এমনকি ইউনুছ বাদল কর্মকর্তাদের কাছে তাঁকে গ্রেপ্তারের তথ্য গণমাধ্যমে না দেওয়ার জন্য সরাসরি মোটা অঙ্কের ঘুষ সেধেছিলেন। পরে অবশ্য বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।

তখনকার গণমাধ্যমে খবর
ইউনুছ বাদল ও তাঁর চক্রের গ্রেপ্তার হওয়ার খবরটি ২০০৭ সালের ১৯ মে ইত্তেফাক, মানবজমিনসহ কয়েকটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল বলে জানান কর্মকর্তারা। ইত্তেফাক ও মানবজমিন-এ খবরটি খুঁজে পাওয়া গেছে। ১৯ মের মানবজমিন-এর খবর অনুযায়ী, প্রায় ২০ জনের একটা চক্রের নেতৃত্ব দিতেন ইউনুছ। মানবজমিন-এ ডিবি সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, ‘গ্রেপ্তারদের মধ্যে ইউনুছ ওরফে বাদল গাড়িচোর সংঘবদ্ধ চক্রের প্রধান হোতা। তার নেতৃত্বে নগরীতে গাড়িচোর চক্রের ২০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। এই চক্রের সদস্যরা নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ি চুরি করে তাদের নির্ধারিত গ্যারেজ বা মার্কেটে পার্কিং করে লুকিয়ে রাখে।...’

ইউনুছ বাদল সম্পর্কে মানবজমিন-এ তখন লেখা হয়েছিল, ‘...ওই চক্রের মূল হোতা বাদল চার-পাঁচ বছর ধরে গাড়ি চুরির সঙ্গে জড়িত। ওই গাড়ি চুরি করে উত্তরায় দুটি ও টঙ্গীতে একটি বাড়ি নির্মাণ করেছে। তার তিনটি গার্মেন্টস ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে বলেও জানা গেছে। এরা গাড়ি চুরি করে প্রথমে উত্তরায় লুকিয়ে রাখে। কখনো এসব গাড়ি নেত্রকোনায় নিয়ে রাখা হতো।...’

ইত্তেফাক-এ ছাপা হওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘...গ্রেপ্তার হওয়া শফিউদ্দীন স্বীকার করেছে ইউনুছের নেতৃত্বে বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতান, গ্যারেজ থেকে প্রাইভেট কার চুরি করে আসছিল তারা।...সন্ধ্যার পরে যাত্রী সেজে ট্যাক্সিক্যাব ছিনতাই করে সেটিকে ব্যবহার করে গভীর রাতে গ্যারেজ থেকে গাড়ি ছিনতাই করে তারা।’

এখনকার ইউনুছ বাদল
মো. ইউনুছ বাদলের এ্যাননটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২টি। প্রায় সবই পোশাক ও বস্ত্র খাত-সম্পর্কিত। জনতা ব্যাংকের উদার আনুকূল্য পেয়ে তিনি সম্প্রতি বিপুলভাবে আলোচনায় এসেছেন। নিয়ম অনুযায়ী, জনতা ব্যাংকের মোট মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু ইউনুছ বাদলের প্রতিষ্ঠান পেয়েছে ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকার ঋণ ও ঋণসুবিধা, যা মোট মূলধনের প্রায় দ্বিগুণ। এটিকে বলা হচ্ছে একক ব্যক্তির ঋণে বৃহত্তম কেলেঙ্কারি। মূলত ব্যাংকই অতি উৎসাহী হয়ে একের পর এক ঋণসুবিধা দিয়েছে। জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ছাড়াও ইউনুছ বাদল পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন একাধিক মন্ত্রী, ব্যাংকের কর্মকর্তা ও ব্যাংকের সিবিএ নেতাদের। ‘একক ব্যক্তির ঋণে বৃহত্তম কেলেঙ্কারি’ শিরোনামে এই নিয়ে প্রথম আলোতে বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল গত ৫ ফেব্রুয়ারি। 

২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ বছর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবুল বারকাত। তাঁর সময়েই ইউনুছ বাদলকে ঋণের নামে অর্থ দেওয়া হয়। আর নিয়মনীতি না মেনে এভাবে ঋণ দেওয়ায় বিপদে ব্যাংক, গ্রাহকও ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না।

আবুল বারকাতের পরে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ-উজ-জামান। তিনি সে সময় প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে তারা আরও ঋণ চেয়েছিল, আমি দিইনি। এ কারণে আমি তাদের শত্রুতে পরিণত হয়েছি। আর ঋণের প্রায় সবই আগের চেয়ারম্যানের (আবুল বারকাত) সময় দেওয়া।’

প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এ নিয়ে কথা বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তাঁর মন্তব্য ছিল, জনতা ব্যাংক একসময় সেরা ব্যাংক ছিল। কিন্তু আবুল বারকাতই ব্যাংকটি শেষ করে দিয়েছেন।

২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে ছয় বছর ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এস এম আমিনুর রহমান। এ্যাননটেক্স গ্রুপের বড় অংশ ঋণ তাঁর সময়ে দেওয়া। গতকাল শনিবার রাতে আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইউনুছ বাদল গাড়ি চুরির দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, এটা কখনো শোনেননি। এ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলে সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত গতকাল ফোন ধরেননি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এম হাফিজউদ্দিন খান পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিস্মিত হচ্ছি এবং বিপন্ন বোধ করছি। জনতা ব্যাংক কী করে একজন গ্রাহককে এত টাকা দিয়ে দিল? তা-ও আবার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে? আবার এমন একজন ব্যক্তিকে, যিনি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ব্যাংকে এত কেলেঙ্কারির পর আবার কেলেঙ্কারি!’

  • প্রথম আলো/ ১১-৩-১৮