Search

Sunday, April 8, 2018

দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিচার দাবি জাতিসংঘের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক


কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার সংস্থাকে বৈশ্বিক অবস্থানে ‘বি’ ক্যাটাগরির বলেও মন্তব্য করেছে বিশ্ব সংস্থাটি।

অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে বাংলাদেশের দেয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনের চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে এসব সুপারিশ ও মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কমিটি। গত ১৫ ও ১৬ মার্চ কমিটির সপ্তম, অষ্টম ও নবম বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছিল বাংলাদেশ। এরপর ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত ২৮তম বৈঠকে প্রতিবেদনের ওপর এ পর্যবেক্ষণ দেয় জাতিসংঘের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার কমিটি।

কমিটির পর্যবেক্ষণে দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারবিষয়ক কমিটি বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রবণতা ও তার ব্যাপ্তি এবং এর চরম প্রভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এতে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার খর্ব হয়েছে।

পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ। এতে দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশকে চারটি পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে কমিটি। এগুলো হলো— সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা। দুর্নীতি দমনে আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের বিচারের আওতায় আনা। সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি দুদককে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। আর সবশেষে দুর্নীতির ফলে এর প্রভাব এবং ক্ষতি নিয়ে সাধারণ জনগণ ও সরকারের কর্মকর্তাদের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে জাতিসংঘ কমিটি। জাতিসংঘ কমিটি বলেছে, বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ১০ লাখের ওপর রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, তা কমিটি অনুধাবন করছে। তবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে অঙ্গীকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। কমিটি রোহিঙ্গাদের আইনগত মর্যাদা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ বাংলাদেশ এখনো এসব শরণার্থীকে আইনগত মর্যাদা দেয়নি। ফলে তাদের চলাফেরা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও মৌলিক সেবাগুলো নিশ্চিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের আইনগত মর্যাদা দেয়ার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ। এছাড়া আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভূমিধসের যে ঝুঁকি রয়েছে, তা মোকাবেলায় মানবিক সাহায্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে অনতিবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।

জাতিসংঘ কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অব ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার সংস্থাকে ‘বি’ ক্যাটাগরির সংস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। জাতিসংঘ কমিটিও মনে করে, বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন নয়। বিশেষ করে লোকবল ও অর্থায়নের জন্য সরকারের ওপর কমিশনের নির্ভরশীলতা উদ্বেগের বিষয়। কমিশনের কাজের সীমিত পরিসরের কারণে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার স্থাপন হচ্ছে না। এ কারণে কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ কমিটি। এর সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন-২০০৯ ঢেলে সাজিয়ে কমিশনের কাজের পরিধি বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছে জাতিসংঘ।

বাংলাদেশে মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, শ্রম অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী, সুশীল সমাজ ও ভিন্নমত প্রদানকারীদের অধিকার ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ কমিটি। বিশেষ করে সংশোধিত আইসিটি আইন-২০১৩, খসড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন-২০১৮, ফরেন ডোনেশন রেগুলেশন আইন-২০১৬ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে মানবাধিকার কর্মীদের জন্য নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। আর আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা, খসড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন-২০১৮ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪-এর বিতর্কিত ধারাগুলো পুনর্বিবেচনা করে তা বাদ দিতে সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ কমিটি।

  • বনিকবার্তা / এপ্রিল ৫,২০১৮

বরিশালের জনসমুদ্রে বেগম জিয়ার মুক্তি দাবি


বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির কাছে কোনো আপস নেই বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, তারপর আলোচনা তারপর অন্য কিছু। নতুন করে আমরা বরিশাল থেকে যাত্রা শুরু করি, সেই যাত্রা হবে গণতন্ত্রের সৈনিকদের মুক্তির যাত্রা। 

গতকাল শনিবার বিকেলে বরিশাল হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম  খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় জনসমুদ্র থেকে অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করা হয়। এর আগে শুক্রবার রাত সাতে দশটার দিকে সমাবেশের অনুমতি দেয় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি)। এদিকে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ি থামিয়ে চেক করা হয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দানবটা কে? তখন জনতার পক্ষ থেকে বলা হয়, হাসিনা হাসিনা। তখন মির্জা ফখরুল বলেন, এখন দাবি একটাই। এক দফা এক দাবি হাসিনা তুই কবে যাবি। এখন থেকে এই একটাই স্লোগান।

মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের মাতা। এই দেশের মানুষের মুক্তির জন্য যিনি আজীবন লড়াই করেছেন সেই নেত্রীর মুক্তির জন্যে আপনারা আজ এখানে এসেছেন। গতকাল কারাগারে দেশনেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তাকে যখন বললাম কালকে বরিশালে জনসভা করতে যাচ্ছি তিনি তখন বললেন, বরিশালের জনগণকে আমার সালাম জানাবেন। বরিশালের মানুষ সংগ্রামী লড়াকু। তারা গণতন্ত্রের লড়াইয়ে আছে, দেশনেত্রীর সঙ্গে আছে। যখন গণতন্ত্রের জন্য দেশনেত্রীর এখানে আসার কথা তখন তিনি কারাগারে আবদ্ধ আছেন। যে কারাগারে তাকে রাখা হয়েছে সেখানে আর কোনো বন্দি রাখা হয় না। স্যাঁতসেঁতে একটি কারাগারে তাকে রাখা হয়েছে। যিনি দেশের মানুষের জন্য লড়াই করেছেন তাকে আজ ভালভাবে রাখা হয়নি। তিনি চিকিৎসার জন্য নিজস্ব চিকিৎসকদের সুযোগ দেয়ার দাবি করলেও সে সুযোগ দেয়া হয়নি। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই দেশের জনগণ তাদের ভোট দেয়নি। সেই সরকার গায়ের জোরে বন্দুকের জোরে কামান বন্দুক দিয়ে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। তারা আজ জনগণের নেত্রীকে সুচিকিৎসা পর্যন্ত দিচ্ছে না। সংগ্রামী বন্ধুগণ, একটা জাতি কখনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না যদি তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা না থাকে। আজকে শত শত  নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। বরিশালে পুলিশ নেতাকর্মীদের তারা করছে। আজকের জনসভায়ও পুলিশ তারা করেছে। জনসভা করতে দিতে চায়নি। আমরা যদি শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে না পারি তাহলে এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারবো না। আজকে আপনাদের পরীক্ষা দেয়ার সময় এসেছে। পরীক্ষায় আপনাদের জয়ী হতে হবে। অন্যথায় চীর জীবনের মতো আবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে। 

মির্জা ফখরুল বলেন, দয়া করে ধৈর্য ধরেন, শান্তি শৃঙ্খলার মধ্যে থাকেন। নেত্রী যে নির্দেশ দেবেন তা পালন করতে হবে। দেশে কোনো ন্যায় বিচার নেই। আইনের শাসন নেই। দেশে একটাই শাসন, জুলুমের শাসন, বুলেটের শাসন চলছে। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। দেশ নাকি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। উন্নয়ন কাদের হয়েছে। আপনাদের হয়েছে। এই সংগ্রাম বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়, এই সংগ্রাম ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য।

আমরা শৃঙ্খলকে হাতে নেয়ার জন্য যুদ্ধ করিনি। স্বাধীনতার পতাকাকে উড়ানোর জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য, মানুষকে রক্ষার জন্য। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। এই যে স্বৈরাচার আমাদের বুকের ওপর চেপে বসেছে তাকে পরাজিত করে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। 

শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে জনসভায় উপস্থিত হওয়ায় বরিশালের জিয়ার সৈনিকদের অভিনন্দন জানিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই বরিশাল বিএনপির ঘাঁটি- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ঘাঁটি। দেশনেত্রী গণতন্ত্রের মাতা, দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানাতে আজ আমরা এখানে এসেছি। নেত্রীকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে রাখার কারণে আজ সারা দেশের মানুষ ফুঁসে উঠেছে। 

তিনি বলেন, যে মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে, সেই মামলায় বলা হলো তিনি এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। কিন্তু মামলার রায়ে দেখা গেলো ২ কোটি টাকা বেড়ে ৬ কোটি টাকা হয়েছে। যেখানে একটি টাকাও উত্তোলন করা হয়নি। সেখানে কিভাবে টাকা চুরি হলো। 

শেখ হাসিনা আবারো ভোট ছাড়া প্রধানমন্ত্রী হতে চান। কিন্তু আমরা বলতে চাই ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন হবে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। কিন্তু তিনি তার কথা রাখেননি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে  ভোট দেয়নি। এবার যদি ভোট দেয়ার সুযোগ পায় তাহলে শেখ হাসিনাকে এদেশের মানুষ আঁস্তাকুরে নিক্ষেপ করবে। এই ভয়ে দেশনেত্রীকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। 

বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা যে আন্দোলন করছি সেটা নাকি নিরস। আমরা নাকি গরম আন্দোলন করতে পারি না। আমি বলতে চাই, দেশনেত্রীকে কারাগারে বন্দি করে যে ফাঁদ পাততে চেয়েছিলেন সেই ফাঁদে বিএনপি পা দেয়নি। সেজন্য আপনাদের গাত্রদাহ। পুলিশ বাহিনী ও ক্যাডার বাহিনীর শত অত্যাচার উপেক্ষা করে আজকে এই সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে যে নির্দেশনা দিচ্ছেন সেইভাবে বিএনপি সঠিকভাবে চলছে। আমাদের যে ব্যাংকে একাউন্ট নেই সেই একাউন্টের খোঁজ নিতে চাচ্ছেন। শেখ হাসিনা আপনার একাউন্টের খবর নেন। বিডিআর বিদ্রোহে যে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছে সেটা আপনার একাউন্টে জমা হয়েছে। বিদ্যুতের ইনডেমনিটি দেয়ার জন্য আপনার বিরুদ্ধে একাউন্ট খোলা হয়েছে। ’৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল। এবার ক্ষমতায় এসে দেশকে স্বৈরাচারী তকমা লাগিয়েছে। 

উপস্থিত জনতার উদ্দেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, কষ্ট করে ঝুঁকি নিয়ে এই জনসভায় এসেছেন। যখন দেশে স্বৈরাচার নেমে আসে, যখন দেশে দুর্নীতি হয়, তখন জনগণের কাছে যেতে হয়। আমরা আজকে সেই জনগণের সামনে এসে হাজির হয়েছি। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমরা তার মুক্তি চাই। ২০১৪ সালে এই সরকার জবরদস্তি করে ক্ষমতায় এসে সেই মসনদ টিকিয়ে রাখার জন্য খুন, গুম, হত্যা যা দরকার সব চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আজকে স্বৈরাচারী এরশাদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি পায়। কিন্তু বিএনপিকে অনুমতি দেয় না। কারণ বিএনপি জনসভা করলে লাখ লাখ মানুষের ঢল নামে। তাই ভয় পায়। তিনি আরো বলেন, আমরা কি এদেশে রোহিঙ্গা হয়ে গেছি। আমরা আর রোহিঙ্গা হয়ে বাঁচতে চাই না। রক্তের পথ বেয়ে এই দেশে গণতন্ত্র আসবে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা প্রায়ই শুনি এই সরকার অনেক জনপ্রিয়। এত যদি জনপ্রিয় হয় তাহলে আমরাও আপনাকে ভোট দেব। আপনি যদি জনপ্রিয় হন তাহলে নিরপেক্ষ একটা সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন। বিএনপির দাবি অনুযায়ী নয় আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটা ভোট দেন। 

বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ’৭১ সালে একবার জেলের তালা ভাঙা হয়েছিল। ১৯৯০ সালে এরশাদের সময় জেলের তালা ভাঙা হয়েছিল। সেদিন আমি এবং মোস্তফা মহসিন মন্টুকে মুক্ত করা হয়েছিল। ঝড় উঠলে সামাল দিতে পারবেন না। আটকে রাখার চেষ্টা করবেন না। 

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। জিয়াউর রহমান তাদের পুনরায় রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আমার বেগম খালেদা জিয়াকে শুধু মুক্ত করেই আনবো না, আমরা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে আবার গণতন্ত্র ও বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃ প্রবর্তন করবো। ৭১ সালে যখন পাক হানাদার বাহিনী আক্রমণ করেছিল। তখন আওয়ামী লীগ পালিয়ে গিয়েছিল। আর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আসুন আজ নতুন শপথ করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করা পর্যন্ত আমরা আর ঘরে ফিরে যাব না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সমাবেশ প্রতিহত করার জন্য বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয়া হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে। তারপরও এই জনসমুদ্র বন্ধ করতে পারেনি। : তিনি বলেন, দুর্নীতি আজ একটি দলের কাছে সীমাবদ্ধ। যে দলটি একদলীয় শাসন চালাচ্ছে। এ সরকারের সময় দুর্নীতি কমবে না। বেগম খালেদা জিয়া শুধু বাংলাদেশের নেতা নয়, এখন তিনি বিশ্ব নেতা। তার নেতৃত্বেই হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে।

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বরিশালের জনসভা জনসমুদ্র : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে  বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেয়। গতকাল শনিবার পুলিশি বাধা, হামলা গ্রেফতার উপেক্ষা করে জনসভায় যোগ দেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। বরিশাল মহানগর ও জেলা, ঝালকাঠী, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা, গৌরনদী, আগৈলঝড়া, বাকেরগঞ্জ, মুলাদী, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, উজিরপুর, বানারীপাড়া স্বরূপকাঠী, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া, বেতাগী, পাথরঘাটা, বামনা, আমতলী, মির্জাগঞ্জ, দুমকী, গলাচিপা, দশমিনা, নলছিটি, কাঠালিয়া, রাজাপুর, বাবুগঞ্জ থেকে জনগণ দুপরের আগেই মাঠ প্রাঙ্গণে আসতে থাকে। অনেকে আবার আগের দিন এসেও বরিশাল শহরে অবস্থান নেয়। দুপুর ২টার আগেই নেতাকর্মীরা মাঠে প্রবেশ করতে থাকে। এক সময় ঈদগাহ মাঠ ছাপিয়ে পুরো এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সমাবেশস্থলে উপস্থিত হওয়া সকলেই ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, মুক্তি চাই’, ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘আমার নেত্রী আমার মা বন্দি থাকতে দিবো না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।

 বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন প্রলম্বিত করে তাকে সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা একটা মামলায় কারসাজি করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। আইনি যে অধিকার সংবিধানসম্মত, সেই আইনি অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাকে জামিন পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। সেজন্য কলা-কৌশল করে, তারা (সরকার) কারসাজি করে, ছল-চাতুরি করে, তার মুক্তিকে বিলম্বিত করা হচ্ছে।  

সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহবান রেখে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা সমগ্র দেশের মানুষের কাছে, সব রাজনৈতিক দলের কাছে আহবান জানিয়েছি যে, আপনারা আসুন ঐক্যবদ্ধ  হোন, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করুন। : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর প্রতীক,  সেলিমা রহমান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, নাজিম উদ্দিন আলম, আবুল হোসেন খান, হাফিজ ইব্রাহিম, ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর, পিরোজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি গাজী নুরুজ্জামান বাবুল, ঝালকাঠী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর, বরগুনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলিম উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট প্রমুখ। : এছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু,  সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু, বিএনপি নেতা কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, হায়দার আলী লেলিন, দুলাল হোসেন, অ্যাডভোকেট মাহমুদ হোসাইন আল মামুন,  যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন, বরিশাল জেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট পারভেজ আকন বিপ্লব, বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হোসেন মামুন,  ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা খানম নাছরিন, সমাজ সভা বিষয়ক সম্পাদক  আব্দুর রহিম, ছাত্রদল নেতা ইকবাল হোসেন আসিফসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের লক্ষাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। 

  • দিনকাল/এপ্রিল ৮,২০১৮ 

বাড়ি দখলে কাউন্সিলরের পাঁয়তারা!

মুসা আহমেদ



রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য জমি নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন না থাকলেও ভেঙে দেওয়া হয়েছে পুরো বাড়ি। তারপর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাড়ির পয়োনিষ্কাশনের লাইন। এখন চলছে বাকি জমি দখলের পাঁয়তারা।

পশ্চিম শেওড়াপাড়ার পীরেরবাগ সড়কে এক নারীর জমি নিয়ে চলছে এই তুঘলকি কাণ্ড। কিন্তু রাস্তার অপর পাশে স্থানীয় কাউন্সিলরের জমি থাকলেও রাস্তা বাড়াতে সেখান থেকে জমি নেওয়া হয়নি। কিন্তু বাকি রাস্তায় দুপাশ থেকেই জায়গা নেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কাউন্সিলর এখন তাঁদের পুরো জায়গাটিই দখল করতে চাইছেন।

রোকেয়া সরণি থেকে ৬০ ফুট সড়ক পর্যন্ত পীরেরবাগের রাস্তা প্রশস্ত করা হয় ২০১৭ সালে জানুয়ারির দিকে। এতে সড়কের দুই পাশের বাড়িগুলোর সামনের অংশ ভাঙা পড়ে। কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন রশীদ ও তাঁর ভাইদের জায়গার সামনে এসে রাস্তাটি বেঁকে যায়। কারণ, পুরো জমি নেওয়া হয় তাঁদের উল্টা পাশের বাড়ি থেকে। ওই বাড়ির মালিক জাহান আরা বেগম।

জাহান আরা বেগমের বাড়ির হোল্ডিং নম্বর ৩৭০/১। ২৪ শতাংশ আয়তনের এই বাড়ি রাস্তা বরাবর প্রায় ২৫০ ফুট লম্বা। বাড়ির মালিকের অভিযোগ, রাস্তা বাড়ানোর নামে তাঁর বাড়ির প্রায় ৮ শতক জায়গা নেওয়া হয়েছে। এর জন্য সামনের দোকান ও সীমানাপ্রাচীর ভাঙাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু কমিশনারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর একতলা বাসাই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় সিটি করপোরেশন। তারপর বাড়ির পয়োনিষ্কাশনের সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন জায়গাটি অবৈধভাবে দখল করার পাঁয়তারা করছেন কাউন্সিলর।

বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদার, ডিএনসিসি প্যানেল মেয়র ওসমান গনি, ঢাকা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। কিন্তু কেউ বাড়ির মালিককে সহযোগিতা করেননি।

১৯৬২ সালের দিকে পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ওই ২৪ শতক জায়গাটি কেনেন জাহান আরা বেগম ও তাঁর বোন হোসনে আরা বেগম (মৃত)। তখন এই এলাকাটি ধানি জমি ছিল। এই জমির উত্তর পাশের জমি ছিল ডিএনসিসির বর্তমান কাউন্সিলর হুমায়ুন রশীদের বাবা অলি মিয়ার। ১৯৮০ সালে এখান দিয়ে রাস্তা তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তখনো অলি মিয়ার জমি ছেড়ে এই দুই নারীর জমির ওপর দিয়ে প্রায় ১২ ফুট চওড়া রাস্তা তৈরি করা হয়। রাস্তা মাটিও নেওয়া হয় এই জমি থেকে। এখন রাস্তাটির প্রস্থ ২৪ ফুট। যতবারই রাস্তা বাড়ানো হয়েছে, ততবারই এই বাড়ি থেকে জায়গা নেওয়া হয়েছে। উল্টো পাশে কাউন্সিলরদের কাছ থেকে কোনো জায়গা নেওয়া হয়নি।

বাড়ির মালিক জাহান আরা বেগম বলেন, ‘আমাদের বাড়ির পূর্ব ও পশ্চিম অংশে বাড়িগুলো তিন থেকে ছয় ফিট রাস্তার ভেতর। তারপরও কাউন্সিলরের নির্দেশে গত ২০১৭ সালে বিনা নোটিশে আমার বাড়ির মূল অংশ ভেঙে ফেলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ডিএনসিসি। তাদের দাবি ছিল, আমাদের বাড়ির নকশা রাজউকে নেই। আমরা বাড়িটি তৈরি করেছিলাম ১৯৮৭ সালে। বিষয়টি রাজউক, ডিএনসিসিকে লিখিতভাবে জানানো হলেও তারা তদন্তে আসেনি। এর মধ্যে গত জানুয়ারিতে পরিকল্পিতভাবে আমার বাড়ির পয়োনিষ্কাশন লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ভাড়াটেরা বাড়ি ছেড়ে চলে যান।’ তিনি বলেন, ‘গত ১৯ মার্চ পয়োনিষ্কাশনের সংযোগ চালু করতে কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে এলাকায় গিয়েছিলাম। কিন্তু কাউন্সিলরের পক্ষের যুবলীগ কর্মী কবির আহম্মেদ কাজে বাধা দেন। শ্রমিকেরা ভয়ে চলে যান। এভাবে একের পর এক অত্যাচার করে আমাকে উৎখাত করতে চাইছে। অথচ এই এলাকায় ১ শতক জমির দাম কোটি টাকার বেশি।’

সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পীরেরবাগ রোডের ৩৫১/৪ থেকে ৩৬৫/১২ নম্বর হোল্ডিং পর্যন্ত রাস্তাটি বাঁকা। এই বাঁকের দুই-তৃতীয়াংশই জাহান আরা বেগমের জায়গার মধ্যে পড়েছে। তাঁর বাড়িটি ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। পয়োবর্জ্যের দুর্গন্ধ বাতাসে চারদিকে ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে রাস্তার উত্তর পাশে টিনশেডের দোকান ও কাঁচাবাজার দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন কাউন্সিলর ও তাঁর চাচাতো ভাইয়েরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় দুই বাড়ির মালিক বলেন, পীরেরবাগ সড়ক প্রশস্ত করার সময় কাউন্সিলর কারও বাড়ি ভাঙছেন, আবার মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে কারোরটি ভাঙেনি। এতে রোডটি একেক জায়গায় একেক রকম প্রশস্ত বা আঁকাবাঁকা হয়েছে। এসব অনিয়ম নিয়ে মহল্লার কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না।

জানতে চাইলে ডিএনসিসির অঞ্চল-৪-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোল্লাহ মোহাম্মদ নূরুজ্জমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যমান রাস্তাটি আমরা প্রশস্ত করেছি। এ ক্ষেত্রে সড়কের দুপাশেই যতটুকু জায়গা দরকার, নিয়েছি। তা তদারক করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। এ নিয়ে জাহান আরা বেগমের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ হয়েছে বা আছে। তবে কেউ জায়গা না দিতে চাইলে আমরা জোর করে নিতে পারি না। এখনো যদি ওই নারী যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জায়গা মেপে ফেরত চান, আমরা তাঁকে তা ফিরিয়ে দিতে সহযোগিতা করব।’

কিন্তু ভুক্তভোগী জাহান আরা বেগম অভিযোগ করেন, তিনি কয়েক দিন আগে নির্বাহী প্রকৌশলী মোল্লাহ মোহাম্মদ নূরুজ্জমানের কাছে প্রতিকারের জন্য গিয়েছেন। নূরুজ্জমান তাঁকে কাউন্সিলরের কাছে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন কাউন্সিলর হুমায়ুন রশীদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তাটি ৩০ ফুট প্রশস্ত করতে যেখানে যতটুকু জায়গা দরকার, সে অনুযায়ীই নিয়েছি। কিন্তু ওই বাড়ির মালিক রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়তে চাননি। তাই রাজউকের মাধ্যমে তাঁর বাড়িটি ভাঙা হয়েছে।’

রাস্তার জন্য ভবনের ভেতর থেকে কি জায়গা নিতে হয়েছে, না হলে ভবনটি কেন ভাঙা হলো—এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি কাউন্সিলর। তিনি শুধু বলেন, ‘রাস্তার জন্য যতটুকু জায়গা দরকার ছিল, নিয়েছি।’

ওয়াসার কাছে তিন শতক
জাহান আরা বেগম জানান, ১৯৯৯ সালে রেজিস্ট্রিহীন একটি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে তার ৩ শতকের বেশি জায়গায় বিনা ভাড়ায় ও বিনা মূল্যে পানির পাম্প বসায় ঢাকা ওয়াসা। এই চুক্তিতে শর্ত ছিল মালিক জায়গা ফেরত চাইলে তা ফিরিয়ে দিতে ওয়াসা বাধ্য থাকবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নিজের প্রয়োজনে জায়গাটি ফেরত চাইলে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে ওয়াসা। বিষয়টি ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঢাকা জেলা প্রশাসক এবং এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাঁকে কেউ সহযোগিতা করছে না। প্রতিটি কাজে কাউন্সিলর নিজে গিয়ে বাধা দিচ্ছেন।

গত বছরের ২ মার্চ জায়গাটি ফেরত চেয়ে ওয়াসার কাছে আবেদন করেছিলেন জাহান আরা বেগম। এর ২৬ দিন পর ওয়াসার ভূমি বিভাগের উপসচিব শামীম নাজিবা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ওই জায়গা ফেরত দেওয়া যাবে না বলে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিন্তু এই জায়গার ভাড়া বা মূল্য দেওয়া হবে কি না, চিঠিতে কিছুই বলা হয়নি।

জাহান আরা বেগম বলেন, আগে এই এলাকায় তীব্র পানিসংকট ছিল। মানবিক কারণে জায়গাটি ওয়াসাকে দিয়ে আজ তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান।

  • Courtesy: Peothom Alo /Apr 08, 2018 

কী ভয়ঙ্কর আগ্রাসী ঋণ

হারুন-অর-রশিদ


বিধি ভঙ্গ করে ১৬ বাণিজ্যিক ব্যাংক ভয়ঙ্করভাবে আগ্রাসী ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে তিনটি হচ্ছে ইসলামি ব্যাংক ও বাকি ১৩টি প্রচলিত ধারার ব্যাংক। আরও ১৯ ব্যাংক আগ্রাসী সীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। মাঝেমধ্যেই তারা সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। ফলে ওই ব্যাংকগুলোও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তদারকি জোরদার করেও আগ্রাসী ব্যাংকিং বন্ধ করা যাচ্ছে না।

ব্যাংকগুলো হচ্ছে ফারমার্স ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, এবি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক। এর বাইরে যমুনা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের ইসলামি উইন্ডোর আগ্রাসী ব্যাংকিং করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদ-দায় ব্যবস্থাপনা (এএলএম) নীতিমালা অনুসারে সাধারণত ব্যাংকগুলো সংগৃহীত আমানতের ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারে। ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এই সীমা ৮৫ শতাংশ। কিন্তু অন্যান্য আর্থিক সূচক ভালো থাকলে সাধারণ ব্যাংকগুলো সংগৃহীত আমানতের ৮৫ শতাংশ এবং ইসলামি ব্যাংকগুলো ৯০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারে। গত জানুয়ারিতে এটি কমিয়ে সাধারণ ব্যাংকগুলোর জন্য সাড়ে ৮৩ শতাংশ এবং ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৯ শতাংশ করে দেওয়া হয়েছে, যা চলতি মাস থেকে কার্যকর করতে হবে। আমানতের কী পরিমাণ ঋণ বিতরণ করেছে তা সাপ্তাহিক ভিত্তিকে পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংকগুলো পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

এই সীমার বেশি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করতে পারবে না। এর চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করলে একদিকে তারল্য সংকট প্রকট হয়। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যাবে। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সীমার বেশি ঋণ বিতরণ করলে জরিমানা আরও করে। ইতোমধ্যে আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের দায়ে ওয়ান ব্যাংক প্রিমিয়ার ব্যাংককে জরিমানা করেছে। আরও কয়েকটি ব্যাংককে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি বাংলাদেশ ব্যাংকের এডিআর প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১২টি ব্যাংক সীমার চেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক মোট আমানতের ১০৫ দশমিক ২৪ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক তাদের আমানতের ১০০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। অর্থাৎ তারা সংগৃহীত আমানতের চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। ফলে তারা তীব্র আর্থিক সংকটে পড়েছে।

প্রিমিয়ার ব্যাংক আমানতের ৯০.৮২ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ৯০.১৪, ন্যাশনাল ব্যাংক আমানতের ৮৮.০৭, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক আমানতের ৮৬.৩৭, এবি ব্যাংক ৮৬.২৪, মেঘনা ব্যাংক আমানতের ৮৬.১৪, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক আমানতের ৮৬, সিটি ব্যাংক আমানতের ৮৫.২৯, আইএফআইসি ব্যাংক আমানতের ৮৫.০৮, ট্রাস্ট ব্যাংক আমানতের ৮৫.০৩ শতাংশ এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক আমানতের ৯০.১৭ শতাংশ ঋণ হিসাবে বিতরণ করেছে।

এর বাইরে যমুনা ব্যাংকের ইসলামিক উইন্ডো থেকে সংগৃহীত আমানতের ১২৫.১৬ শতাংশ, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ইসলামিক উইন্ডো থেকে সংগৃহীত আমানতের ১২৪.৮৪ শতাংশ ও অগ্রণী ব্যাংকের ইসলামি উইন্ডো তাদের মোট আমানতের ১২১.০৫ শতাংশ ঋণ হিসাবে বিতরণ করেছে।

এসব ব্যাংক সীমার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করায় তারা ব্যাংলাদেশ ব্যাংকে বিধিবদ্ধ আমানত রাখতে পারছে না। আর রাখলেও তা কলমানি থেকে ধার করে রাখছে। ফলে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে গেছে।

সীমা অতিরিক্ত ঋণের বিষয়ে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুন ইসলাম মজুমদার বলেন, বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগের চাহিদা বেড়েছে। দেশের অর্থনীতির সুবিধার্থে ব্যাংকগুলো অর্থায়ন করেছে। এ জন্য সীমার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে।

প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, আরও প্রায় ১৯ ব্যাংকের ঋণ বিতরণ আইনি সীমার কাছাকাছি রয়েছে। কোনো কোনো সপ্তাহে এই ব্যাংকগুলোর সীমা বিধির বাইরে চলে যায়। আমানত সংগ্রহ বাড়লে তা আবার নির্দেশিত সীমার মধ্যে নেমে আসে। বিপজ্জনক সীমার কাছাকাছি থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে আছে ওয়ান ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক. ব্র্যাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক মধুমতি ব্যাংক সাউথ-ইস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংক। এ ছাড়া ইসলামি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক ঝুঁকির কাছাকাছি রয়েছে।
এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশে বিভিন্ন প্রয়োজনে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। 

যে কারণে অভ্যন্তরীণভাবে ঋণের চাহিদা বেড়েছে। একদিকে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে, সেই তুলনায় আমানত বাড়েনি। অন্যদিকে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কারণে সরকারি সংস্থাগুলো আমানত তুলে নিয়েছে। এ জন্য কোনো কোনো ব্যাংকের ঋণ বিতরণ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। নির্বাচনের বছরে আরও ঋণের চাহিদা বাড়বে। এ জন্য ঋণ বিতরণের সীমা আরও বাড়ানোর দাবি করেছিলাম।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, খেলাপি ঋণ, যাচাই-বাছাই ছাড়া বেপরোয়া ঋণ এবং বিচারহীনতা ইত্যাদি কারণে ব্যাংকিং খাতে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এসব জায়গায় হাত দেওয়া হচ্ছে না।

  • আমাদের সময়/এপ্রিল ৭,২০১৮ 

Saturday, April 7, 2018

Policymakers should get to the bottom of low FDI


Says chief of Bangladesh Economic Zones Authority

Star Business Report





Policymakers should find the reasons behind the low inflow of foreign investment to Bangladesh despite a number of agencies' efforts to boost receipts, said a top official of an investment agency yesterday (Thursday).

“We have a number of organisations and yet foreign investment inflows
are no more than $2.5 billion,” said Paban Chowdhury, executive
chairman of the Bangladesh Economic Zones Authority, at a discussion at the headquarters of the National Board of Revenue.

Besides, there are a number of authorities and laws to promote
investment. In contrast, Vietnam has simply a decree, which has paved the way for the country to receive huge amounts of foreign investment, he said.

In 2016, Vietnam received $12.60 billion in foreign direct investment, whereas Bangladesh got $2.33 billion, according to United Nations Conference on Trade and Development.

The NBR organised the event to hear views and recommendations from investment related agencies to frame the measures for the incoming fiscal year.

Myanmar receives $9 billion of foreign investment and countries like Hong Kong and Singapore get $75 billion, according to Chowdhury.

“Bangladesh sits on a strategically ideal location with two economic giants, China and India, and has a long coastal belt. A number of organisations are also working to attract investors. Yet, we could not make that much stride for various reasons.”

Asked for reasons, the BEZA chief said the investment climate and
regulatory framework are easier in Vietnam than in Bangladesh.

The Southeast Asian nation has one organisation for special economic zones and other agencies support it in attracting investment.

“Investments do not get stuck anywhere there,” Chowdhury said.

He, however, said investment will rise to $5 billion next year because of increasing inflows.

BEZA has received $8 billion of confirmed investment proposals, he said, adding that the 'One Stop Service' law would be instrumental in facilitating investment.

“But without the help of the NBR, it is not possible to have a
diversified manufacturing regime,” he said.

Bangladesh Investment Development Authority Executive Chairman Kazi M Aminul Islam said budgetary measures should focus on promoting investments.

“I do not see the NBR as a revenue collection agency. It is a very
important institution and it has important role for the development of Bangladesh.” Vietnam fares better than Bangladesh in terms of business climate, infrastructure and skills, he said. “We want a tax system where processes are simple, transparent, fair and affordable.”

Citing the high corporate income tax rate, Islam said it is necessary
to know whether the high rate helps the country to attract FDI. “Corporate tax rate should be attractive in comparison with our competing countries in terms of foreign investment,” he said.

In response, NBR Chairman Md Mosharraf Hossain Bhuiyan said the revenue authority will try to frame fiscal measures by providing
sufficient incentives to attract investments. An investment promotion team will be formed with representations from BIDA, BEZA, NBR and other related agencies and suggestions from the panel would be incorporated in next year's fiscal measures.

Representatives from Bangladesh Hi-Tech Park Authority, Bangladesh Export Processing Zones Authority and Business Initiative Leading Development also shared their views at the event.

  • Courtesy: The Daily Star/Apr 06, 2018

Licence to harm Sundarbans

Govt allows 190 industrial units within 10km of the forest; 24 of them them extremely harmful


Staff Correspondent

Going against its own policy, the government over the last few years permitted setting up of 190 industrial and commercial units in the ecologically critical area (ECA) of the Sundarbans, which, according to experts, poses a serious threat to the biodiversity of the world's largest mangrove forest.

Bangladesh declared the 10-kilometre periphery of the mangrove forest as the ECA in 1999, a couple of years after the Unesco listed it as a natural world heritage site.

As per Bangladesh Environment Conservation Act 1995 (amended in 2010), no one is allowed to set up any factory in the ECA.

Of the industrial units, 181 had obtained the environment clearance
certificate and the other nine the site clearance certificate from the
Department of Environment (DoE) over the last several years, according to a DoE report submitted to the High Court yesterday (Thursday).

At least 24 of the units fall under the “red category”, meaning those
are extremely harmful to the fragile biodiversity of the Sundarbans,
Deputy Attorney General Motaher Hossain Sazu told this newspaper, quoting from the report.

These are releasing industrial smog and discharging liquid waste and saline water, the report mentioned.

The 190 industrial and commercial units include manufacturing plants for cement, LPG gas and gas cylinder, oil refinery, betel nut
processing plants, ship building yards, rice husking and saw mills,
brick kilns, cigarette and ice factories, fish and crab farms,
hatcheries, saline water refinery, and welding factory.

Some restaurants, and brush and car seat manufacturing factories are also on the list of the establishments in nine upazilas of Bagerhat, Khulna and Satkhira.

Most of the heavy and harmful industrial units are located in Mongla industrial and Mongla port areas, the report pointed out.

According to the DoE, 154 industrial units are now in operation while 36 are closed.

The DoE submitted the report in line with an HC order given around seven months ago.

The HC on August 24 last year directed the government not to renew environmental clearance certificate of any industry within 10-km periphery of the Sundarbans and to submit a list of the establishments already set up in the area.

It gave the order after Save the Sundarbans Foundation President
Sheikh Faridul Islam filed a writ petition on August 22, seeking court directives on the authorities concerned to relocate the factories built in the ECA.

Yesterday (Thursday), an HC bench comprising Justice Moyeenul Islam Chowdhury and Justice Md Ashraful Kamal fixed May 9 for passing further order on the matter.

Talking to The Daily Star, Syeda Rizwana Hasan, chief executive of Bangladesh Environment Lawyers Association, said that according to the law, nobody is allowed to set up any factory in the ECA.

“The government should immediately relocate all those industrial units from the ecologically critical area,” she said.

Asked, Abdul Matin, member-secretary of the National Committee to Protect the Sundarbans, said, all these industrial units around the
forest are badly damaging its biodiversity.

“So many commercial activities are going on in and around the
Sundarbans. The red category factories are discharging toxic
substances in the ecologically critical area. Such factories will
eventually destroy the mangrove forest,” he said, demanding that the government immediately shift all those establishments.

The much-talked-about Rampal power plant is not on the DoE list as it is located around 14 km away from the edge of the Sundarbans.

However, experts fear that the coal-fired plant will cause serious
damage to the forest once it goes into operation.

On June 06 last year, the government published a gazette on the ECA mouza to facilitate sustainable management of the ecology in the zone.


  • Courtesy: The Daily Star/ Apr 6, 2018

Thursday, April 5, 2018

Next polls could turn into a violent sham says Al Jazeera



Qatar based Al Jazeera television in a piece depicts Bangladesh’s current political situations entitled ‘Is Sheikh Hasina turning Bangladesh into a one-party state?’  on April 4. It says, the controversial jailing of former Bangladesh Prime Minister Khaleda Zia and the state persecution of dissent have raised fears that the next parliamentary election could turn into a violent sham.

This has been reported by its visiting special correspondent Faisal Mahmud from Dhaka. The full text of the report is presented below:   

Is Sheikh Hasina turning Bangladesh into a one-party state?

The controversial jailing of Bangladesh’s former PM Zia and persecution of dissent raises fears months ahead of general elections.

Faisal Mahmud/aljazeera.com

The controversial jailing of former Bangladesh Prime Minister Khaleda Zia and the state persecution of dissent have raised fears that the next parliamentary election could turn into a violent sham.
Fear of a 2014 repeat, when the parliamentary elections were boycotted by almost all the opposition parties and marred by large-scale violence and killings, runs high in Bangladesh as the ruling Awami League (AL) government faces allegations of a concerted persecution of its opponents.

While activists and political workers opposed to the government live under an increasing threat of being jailed or worse, there is widespread concern, even among the common people, over what lies ahead in an election year.

Parliamentary elections in Bangladesh are due by December.

Nadia Tabassum Khan, an employee of a multinational company in Dhaka, told Al Jazeera that the Awami League has suppressed all dissent to such an extent that she doesn't think "anyone would dare to protest against them".

Hasan Habib is the owner of a real estate company based in Dhaka. He says "the enmities between the two leading political parties" have made the voting process "a nearly impossible task".

Enforced disappearances

Since the controversial imprisonment of Bangladesh's opposition leader and two-time Prime Minister Khaleda Zia last month, it is becoming increasingly difficult for the government of Prime Minister Sheikh Hasina to reject allegations of turning into an authoritarian regime.

Zia was sentenced to rigorous imprisonment for five years on February 8 for embezzling 21 million takas ($253,000) in foreign donations meant for a charity named after former President Ziaur Rahman, Zia's husband. Her elder son and heir apparent, Tarique Rahman, and four others were also sentenced to 10 years in prison.
Nearly a month later Zia was granted bail. However, the country's Supreme Court stayed the bail within a week "without assigning any reason", effectively putting the 72-year-old leader in jail till May 8, when the next hearing on her bail application is expected to be held.

The arrest and subsequent imprisonment of the former prime minister, which Zia's Bangladesh Nationalist Party (BNP) called the Hasina government's conspiracy to keep the opposition party out of politics, led to widespread violence in cities across Bangladesh, with BNP supporters clashing with police and ruling party members.

Police records say nearly 300 leaders and supporters of the BNP were arrested on the day of Zia's verdict. Since February this year, over 3,000 members of the opposition party have been put behind bars.

Hasina and Zia - both women are related to former Bangladesh leaders - have dominated the country's politics for more than two decades. In fact, the bitter rivalry between the country's most powerful "begums" has pushed Bangladesh in the grip of violence and unrest for years.

BNP still sticking to peaceful protests

The BNP alleges that over 500 of its supporters have been killed and nearly 750 "abducted" by the police and thrown in various jails since 2014. The party claims around 150 more of its missing workers have either been killed in extrajudicial encounters or have been forced to disappear.

The main opposition party says it has not yet decided on a plan of action following the Zia verdict. The party has largely resorted to non-violent protests against the crackdown on it. However, as permissions for political rallies are denied, many in the BNP are losing patience with the strategy of holding peaceful protests.

The spectre of large-scale violence now threatens to destabilise the parliamentary elections in the country scheduled to be held in December this year.

Last week, German think-tank Bertelsmann Foundation released a report that said the country is now under an autocratic rule. Listing 13 countries "where the political situation has become significantly worse", the report said in five of these countries, namely Bangladesh, Lebanon, Mozambique, Nicaragua and Uganda, "democracy has been gradually undermined for years" and that they no longer meet its minimum standards.

Scepticism over elections

Political commentators in and outside Bangladesh concur with such a damning reading of the Hasina government, especially in the context of the state conducting free and fair elections. In 2014, Hasina had returned to power for a second consecutive term through a controversial and bloody national election, which was boycotted by the centre-right BNP.

In her 10-year tenure as the prime minister of Bangladesh, Hasina has been accused of using the state's law enforcement apparatus as well as the judiciary to suppress the voice of the opposition. Rights groups, both local and international, have reported a deteriorating human rights situation in Bangladesh in recent years
.
Bangladesh rights group Ain o Salish Kendra (ASK) says as many as 519 people have allegedly fallen victim to enforced disappearances since 2010 while over 300 people are still missing.
"My father has been missing since December 4," said Shabnam Zaman, daughter of former Bangladesh ambassador to Qatar and Vietnam, Maroof Zaman, who was accused of sharing "anti-government posts" on social media and was allegedly scooped up by unidentified abductors in Dhaka in December last year.

"The police stopped their investigation when they came to know about the circumstances surrounding the disappearance of my father," she told Al Jazeera.

On March 13 this year, Jakir Hossain, a leader of Chatra Dal, which is the BNP's student wing, died in police custody after he was allegedly tortured by the police.

A Human Rights Watch (HRW) report last year said the Bangladesh government had secretly arrested hundreds of people, mostly activists and political figures, opposed to the Hasina government.

Complete freedom, claims govt.

The Awami League government, however, dismissed the allegations.

When Al Jazeera asked Information Minister Hasanul Haq Inu about the political persecution as alleged by the BNP, he said the opposition party enjoys "complete freedom" in its exercise of the democratic rights.

"But that doesn't mean the law enforcers will not check their activities which may harm the common people," Inu said.

When reminded of the controversial 2014 national election, which the BNP had boycotted and which has renewed fears of a similar undermining of the electoral process in Bangladesh, Inu said; "The 2014 election was held as per the constitution. The BNP's decision of boycotting it was a political decision and they now realise it was a wrong decision on their part."

The Bangladesh minister also rejected the German think-tank report that called the AL government autocratic as "intentional" and "baseless". He said he was eager to know what data Bertelsmann Stiftung had looked at.

"All the arms of a true democracy, including the judiciary and media, are fully independent in Bangladesh," Inu said.

Senior Awami League leader Faruq Khan told Al Jazeera the rights groups' accusation of human rights violation in Bangladesh is not true.

"Our government has, in fact, set up an example before the world of upholding human rights by giving refuge to a million Rohingya refugees who have fled Myanmar," Khan said.

'Dangerous sign in a democracy'

But the experts and rights activists are not buying the government's defence.

Meenakshi Ganguly, who is the South Asia Director of Human Rights Watch, says Bangladesh may have won international praise for its humanitarian response to the ethnic cleansing of the Rohingya by Myanmar but the domestic human rights situation remains a cause for concern.

"The government continues to deny enforced disappearances … It must release individuals taken into custody by the security forces. Many of those disappeared are linked to the political opposition," Ganguly told Al Jazeera.

Ganguly said Bangladeshi journalists and activists operate in a climate of fear, while many citizens have been slapped with cases for criticising the government on social media.

Ali Riaz from the Illinois State University in the United States told Al Jazeera that the current political and human rights situation in Bangladesh is "not suitable" for holding an election, let alone an "inclusive" one.

Riaz thinks if the beleaguered BNP is forced to boycott the next national election, along with other parties of the political alliance it leads, the election will be "hollow without any moral legitimacy, just like the 2014 elections".

"Continued persecution of the opposition is not only unwise, but also counterproductive. There is a tendency among the ruling parties here to forget that," said Riaz.

Asif Nazrul, a professor of law at Dhaka University, said that the government denies the BNP and other opposition parties permission to hold rallies and processions "on security grounds", while it continues to hold large rallies in the run-up to the elections.
"It's a government and a political party which believe that they are not accountable to anyone. It's a dangerous sign in a democracy," said Nazrul.

  • Courtesy: Al Jazeera 


আগামী সংসদ নির্বাচন সহিংস প্রহসনে পর্যবসিত হতে পারে — আল জাজিরা



কাতারভিত্তিক প্রভাবশালী নিউজ চ্যানেল আল জাজিরা বুধবার, এপ্রিল ৪, এক লেখায় বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের চিত্র তুলে ধরেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাপক সহিংসতায় প্রহসনে পর্যবসিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। 

লেখাটির বাংলা অনুবাদ নিচে তুলে ধরা হলো -   


শেখ হাসিনা কি বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্র করছেন?

ফয়সল মাহমুদ

সাধারণ নির্বাচনের মাস কয়েকমাত্র হাতে থাকতে  আগে  বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিতর্কিতভাবে কারারুদ্ধ করা ও দেশে বিরোধীদের ওপর নির্যাতনে আশঙ্কা-উদ্বেগ বাড়ছে। হাসিনা সরকার বিরোধীদের ওপর পরিকল্পিত দমন-নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে।  আশঙ্কা করা হচ্ছে  আগামী সংসদীয় নির্বাচন সহিংস প্রহসনে পর্যবসিত হবে।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবারও ২০১৪-র নির্বাচনী প্রহসনের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। ঐ নির্বাচনে ধরতে গেলে প্রায় সকল বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করে। আর নির্বাচনী আয়োজনে ব্যাপক সহিংসতা ও নরহত্যার ঘটনা ঘটে। এ উদ্বেগ এখন বাংলাদেশে তুঙ্গে। শাসক আওয়ামী লীগ এখন তার বিরোধীদের ওপর পরিকল্পিত দমন ও নির্যাতনের অভিযোগের মোকাবেলা করছে।

রাজনৈতিক কর্মী ও সক্রিয়তাবাদীরা যারা এখন সরকার বিরোধী তাদেরকে  ক্রমাগত বর্ধিতহারে কারারুদ্ধ করার বা তারচেয়েও খারাপ  অবস্থা মোকাবেলা করতে হবার মতো ভীতি-আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। এ ভীতির মুখে সাধারণ মানুষের মনেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে নির্বাচনের এ বছরে তাদের কপালে সামনে কী আছে এই ভেবে।

আগামী ডিসেম্বরের নির্ধারিত রয়েছে বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচন। এখন দেশে এমন একটি সরকার ও দল ক্ষমতায় রয়েছে যা মনে করে তারা কারও কাছে জবাবদিহি নয় যা গণতন্ত্রের জন্য এক বিপজ্জনক বার্তা।

একটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মচারী নাদিয়া তাবাসসুম খান আল-জাজিরাকে জানান, আওয়ামী লীগ গোটা বিরোধী মহলকে এই মাত্রায় দমন করে রেখেছে যাতে তাঁদের মনে হয় না কেউ আর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাহস পাবে।

ঢাকায় একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক হাসান হাবিব বলেন, ‘‘দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে শত্রুতাই ভোট অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়াকে কার্যত অসম্ভব করে তুলেছে।   

বলপ্রয়োগে গুম, অপহরণ

বাংলাদেশের বিরোধীদল নেত্রী এবং দুইবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গতমাসে বিতর্কিতভাবে কারারুদ্ধ করার পর থেকে দেশের সরকার যে ক্রমেই স্বৈরশাসক গোষ্টীতে রূপান্তরিত হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ বাড়ছে। আর এ অভিযোগের মোকাবেলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষে ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধী নেত্রী বেগম জিয়াকে গত ৮ ফেব্র“য়ারি পাঁট বছরের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি ট্রাস্টকে দেওয়া বিদেশী দানের অর্থ আত্নসাৎ করার জন্য এই সশ্রম সাজা দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও তাঁর উত্তরাধিকারী  তারেক রহমান ও আরও ৪ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।  

এই মামলায় বেগম জিয়াকে জামিন মঞ্জুর করা হয় প্রায় মাসখানেক আগে। তবে  জামিন মঞ্জুরির সাতদিনের মধ্যেই  দেশের সর্বোচ্চ আদালত এইজামিন স্থগিত  করে দেয়। এজন্য আদালত কোনো কারণ দেখায়নি। আর তার ফলে সেই ৮ ফেব্র“য়ারি থেকেই এই সপ্ততিপর নেত্রী কারারুদ্ধ রয়েছেন।  তার জামিন আবেদনের প্রত্যাশিত শুনানি হতে পারছে না।

প্রথমে গ্রেপ্তার ও পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কারারুদ্ধ রাখার বিষয়টিকে বিগম জিয়ার রাজনৈতিক দল বিএনপি  বিরোধী দলকে রাজনীতির বাইরে রাখার জন্য হাসিনা সরকারের চক্রান্ত বলে অভিহিত করেছে। এ কারণে বাংলাদেশের শহর-নগরে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনাঘটে। পুলিশ ও শাসক দলের লোকজনের সাথে বিএনপি সমর্থকদের সংঘর্ষ ঘটে।  

পুলিশের রেকর্ড থেকে জানা যায়, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মামলায় আদালতের রায়ের দিনে প্রায় ৩০০-র মতো দলনেতা ও সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ বছরের ফেব্র“য়ারি থেকে , ৩০০০-এরও বেশি বিরোধী দল সদস্যকে জেলে পাঠানো হয়েছে।

হাসিনা ও বেগম জিয়া উভয়েই বাংলাদেশের সাবেক নেতাদের আত্নীয় ও এ দু’জন  দু’দশকেরও বেশি কাল ধরে দেশের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আছেন বা ছিলেন। বস্তুতপক্ষে বাংলাদেশের এই দুই মহা শক্তিশালী ‘বেগম’ -এর মধ্যে নিদারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে দেশটি বছরের পর বছর  রয়েছে সহিংসতা ও অসন্তোষের কবলে।  

বিএনপি’র অভিযোগ হলো, ২০১৪ সালের পর থেকে এযাবত পুলিশ তাদের অর্ধ সহস্রাধিক সমর্থককে হত্যা এবং প্রায় ৭৫০ জনকে ‘‘গুম ও অপহরণ করেছে। আর তার পর তাদেরকে জেলে নিক্ষেপ করেছে।  দলটির দাবি অনুযায়ী, নিখোঁজ আনুমানিক আরও ১৫০ জন কর্মীকে বিচারবহির্ভুত বন্দুক লড়াইয়ে হয় হত্যা নয় বলপূর্বক গুম করা হয়েছে।

প্রধান এই বিরোধী দলটি বলছে তারা বেগম জিয়ার মামলায় রায় হবার পর থেকে এর বিরুদ্ধে দলীয় কর্মপন্থা কী হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এই দলটি প্রধানত তাদের ওপর সরকারের দমন-পীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে অসহিংস কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। তবে এই দলকে এখনও কোনো রাজনৈতিক সমাবেশের অনুমতি সরকার না দেওয়ায় বিএনপি দলের অনেকেরই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ পালনের ব্যাপারে ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরের ডিসেম্বরে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে তফসিল রয়েছে  সেই নির্বাচন ব্যাপক সহিংসতার হুমকির মুখে পড়েছে।

গেল সপ্তাহে জার্মান থিংক ট্যাংক বার্টলসম্যান ফাউন্ডেশন এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায় বাংলাদেশ এখন একটি  স্বৈরশাসিত দেশ। এরকম তাদের তালিকা করা ১৩টি স্বৈর দেশের মধ্যে পাঁচটি দেশের তালিকার প্রথমে আছে স্বৈরশাসিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের নাম। বলা হয় , এই দেশগুলিতে গণতন্ত্রের ন্যুনতম মানও বজায় নেই।  

নির্বাচন নিয়ে সংশয়

বাংলাদেশের ভেতর-বাইরের সকল সমালোচকরা এখন একমত যে হাসিনা সরকার সম্পর্কে এধরনের ন্যাক্কারজনক মূল্যায়ন মোটও সুখপ্রদ নয় বিশেষ করে এ ধরনের রাষ্ট্র ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন’ পরিচালনা করলে কী হবে সেই আলোকে। ২০১৪ সালে হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদের মতো ক্ষমতায় ফিরে আসেন এক বিতর্কিত ও রক্তক্ষয়ী জাতীয় নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্য দিয়ে এবং সেই নির্বাচনবিএনপি বয়কট করে।  

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে হাসিনার বিরুদ্ধে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার জন্য রাষ্ট্রের আইন প্রযোগকারী সংস্থা ও বিচার বিভাগকে ব্যবহারের অভিযোগ তোলা হয়েছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় স্তরের মানবাধিকার গ্র“পগুলি বিগত কয়েকবছরে বাংলাদেশের  অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি নানা প্রতিবেদন দিয়েছেন।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক)  জানাচ্ছে, ২০১০ সাল থেকে কমপক্ষে ৫১৯ ব্যক্তিকে বলপ্রয়োগে অপহরণ ও গুম করা হয়েছে। ৩০০ ব্যক্তি এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

এধরনের অপরাধের শিকার ব্যক্তির কন্য শবনম জামান বলেছেন, ‘‘৪ ডিসেম্বর থেকে তাঁর পিতা নিখোঁজ রয়েছেন।” শবনম জামানের বাবা কাতার ও ভিয়েতনামে দায়িত্বপালনকারী বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত। তাঁর নাম মারূফ জামান। তাঁর বিরুদ্ধে  অভিযোগ তিনি নাকি সরকার বিরোধী নানা পোষ্টগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছিলেন। তাঁকে ডিসেম্বরে ঢাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় অপহরণকারীরা ধরে নিয়ে যায়। শবনম জামান আল-জাজিরাকে জানান, ‘‘ আমার বাবা কোন পরিস্থিতিতে উধাও হলেন তা জানার পর পুলিশ তাঁর বিষয়ে তদন্তই বন্ধ করে দেয়।”

এ বছরের ১৩ মার্চ ছাত্রদলের অন্যতম নেতা জাকির হোসেন পুলিশী হেফাজতে  অত্যাচারিত হবার পর হেফাজতেই মারা যায় বলে অভিযোগে প্রকাশ। 

হিউম্যানরাইটস ওয়াচ গত বছর এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ সরকার গোপনে শত শত লোককে গ্রেপ্তার করেছে যাদের অধিকাংশই হাসিনা সরকারের বিরোধী সক্রিয়তাবাদী বা রাজানৈতিক নেতা।

সরকারের ঢালাও অভিযোগ অস্বীকৃতি

আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নাকচ করেছে।  আল-জাজিরা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে  রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়নের যে অভিযোগ বিএনপি করেছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,বিরোধী দলটি তার রাজনৈতিক অধিকার অনুশীলনের বেলায় ‘‘পরিপূর্ণ স্বাধীনতা” ভোগ করছে। তবে এই সাথে ইনু আরও যোগ করেন যে এর অর্থ এই নয় যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর কোনো কাজ বিরোধীরা করলে সেটা তারা প্রতিরোধ করবে না।”

২০১৪ সালের  বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হলে ইনু বলেন, ঐ নির্বাচন সংবিধান মানতে করা হয়। বিএনপি যদি ঐ নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে সেটা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যা তারা পরে বুঝতে পেরেছে তাদের সে সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। বিএনপি ঐ নির্বাচন বয়কট করে আর তার ফলে এরকম ভীতির সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া এমনি করে আবারও ক্ষুনণ করা হবে।

তথ্যমন্ত্রী জার্মান থিংক ট্যাংকের এই প্রতিবেদনও প্রত্যাখ্যান করেন যে আলীগ সরকার স্বৈর সরকার। তিনি বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে থিংক ট্যাংক মন্তব্য করেছে যার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি বরং জানতে চান, তারা কোনো উপাত্ত ও তথ্যাদি দেখে এটা করেছে। তিনি দাবি করেন, বিচার বিভাগ ও মিডিয়াসহ  গণতন্ত্রের সকল শাখা পরিপূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে।

সিনিয়র আলীগ নেতা ফারুক খান আল-জাজিরাকে বলেন, অধিকার সংস্থা যে বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ তুলছে তা সত্য নয়। বরং আমাদের সরকার লাখো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবাধিকারকে সমুন্নত করেছে।

‘গণতন্ত্রের জন্য বিপদাভাস’

অবশ্য সরকারের এসব দোহাই কিন্ত অধিকার সংস্থা মেনে নিচ্ছে না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি  বলছেন,  বাংলাদেশ হয়তো রোহিঙ্গা প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সুখ্যাতি পেতে পারে কিন্ত তার নিজের দেশের ভেতরের মানবাধিকার পরিস্থিতি তো উদ্বেগজনক রয়েই গেছে। এমনি করে সরকার ক্রমাগতভাবে বলপ্রয়োগে মানুষ অপহরণ বা গুম করার অভিযোগ অস্বীকার করে চলেছ… সরকারকে নিরাপত্তাবাহিনীর হেফাজতে নেওয়া মানুষগুলিকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। এর রেশ টেনে গাঙ্গুলি আল-জাজিরাকে বলেন, এই যারা গুম বা গায়েব হয়ে গেছে তাদের অনেকেই তো বিরোধী রাজনীতির সাথে জড়িত।”

গাঙ্গুলি আরও জানান, বাংলাদেশে সাংবাদিক ও সক্রিয়তাবাদীরা ভয়ভীতি ও আতঙ্ককর পরিবেশের মাঝে কাজ করছেন।  সোশ্যাল মিডিয়ায় সররকারের সমালোচনার জন্য বহু নাগরিকের বিরুদ্ধে কেস ঠুকে দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আলি রিয়াজ আল-জাজিরাকে বলেছেন,  ‘‘বাংলাদেশের চলতি রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্তিতি নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপযোগী নয় ,আর ‘সর্বসমেত অন্তর্ভুক্তি  নির্বাচন! --- সেতো দুরের কথা!”  তিনি আরও বলেন, ‘‘ বিরোধীদের দমন-নির্যাতন কেবল অবিজ্ঞোচিতই নয় বরং শাসক দলগুলির কথাটা ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখাচ্ছে।”  
   
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, সরকার বিএনপি ও অন্য কিছু দলকে সমাবেশ-মিছিল করতে দিতে চান না নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে অথচ সেই তারাই আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিশাল বিশাল সমাবেশ করেই চলেছেন নির্বিকারচিত্তে। তিনি জানান, এ এমন এক সরকার ও এমন এক রাজনৈতিক দল যারা নিজেদেরকে কারও কাছে তদের কোনো জবাবদিহিতা আছে  বলে গ্রাহ্যই করে না। এটি গণতন্ত্রের জন্য এক বিপদসঙ্কেত।”

  • সূত্র - আল-জাজিরা নিউজ


কোটা ব্যবস্থা, মেরিটোক্রেসি ও সম্মানজনক কর্মসংস্থান


ফাইজ তাইয়েব আহমেদ




বোধ ও বিবেকসম্পন্ন একটি স্বাধীন সমাজে অনির্দিষ্টকালের জন্য মেধা ও যোগ্যতার বিপরীতে মেধাহীন পঙ্গুত্ব তৈরির ‘কোটা ব্যবস্থা’ নামক প্রণোদনা চলতে পারে না । দেশ এখন স্বাধীনতার ৪৮তম বছরে পদার্পণ করতে চলেছে।

৫৬ শতাংশ কোটা কয়েক হাজার তরুণের জন্য সংরক্ষিত রেখে (যেখানেও আবার তদবির, ঘুষ ও দুর্নীতির যোগ রয়েছে) বাকি লাখ লাখ তরুণকে ৪৪ শতাংশের জন্য প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেয়াকে পদে পদে বিভেদসৃষ্টিকারী অন্যায্য রাষ্ট্রীয় আচরণেরই দর্পণ। কোটাধারীরা স্বল্প কিংবা অতি নিম্ন মেধাবী হয়েও সরকারি চাকরিতে এসে রাষ্ট্র পরিকল্পনা ও পরিচালনার দূরদর্শিতাকে বিষিয়ে দিচ্ছে। একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা ও অগ্রসর নাগরিকের দেশত্যাগে সৃষ্ট শূন্যতাকে কাজে লাগিয়ে একদল অযোগ্য, চাটুকার ও অসৎ লোকে ভরে গেছে বাংলাদেশের লোকপ্রশাসন। ৪৭টি বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এ হীনতাকে বছর বছর মজবুতই করা হয়েছে, ফলে কোটা খেয়ে ফেলেছে মোট সক্ষমতার ৫৬ শতাংশ!

কথা হচ্ছে, দেশের পশ্চাতপদ লোকালয়গুলোকে, প্রাকৃতিক কারণে পিছিয়ে পড়া নাগরিককে রাষ্ট্র কীভাবে সুরক্ষা দেবে? হ্যাঁ, সেখানে কিছু টাইম ডিফাইন্ড অতি সীমিত কোটা থাকতে পারে। এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রকে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে অর্থনীতি সচল করার এবং কর্মসংস্থান তৈরির স্থায়ী কাঠামো তৈরি করতে হবে। পিছিয়ে পড়া নাগরিককে অক্ষম না ভেবে তার বিশেষ স্কিল তৈরির বিশেষ স্কুল তৈরি করতে হবে, তাকেও তার সীমিত সক্ষমতার আলোকে সরকারি ও বেসরকারি সব ক্ষেত্রের চাকরি বণ্টনে আনার চর্চা তৈরি করতে হবে, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সমাজে দৃষ্টি, বুদ্ধি কিংবা শারীরিক প্রতিবন্ধীর মানবিক মর্যাদা তৈরির স্পেস তৈরি করতে হবে। তবে স্বাধীন দেশের জন্ম অবধি পুরো ৪৭ বছর ধরে পশ্চাত্পদতার কথা বলে কোটা চলতে থাকলে বুঝতে হবে রাষ্ট্র আসলে এ পিছিয়ে পড়া অঞ্চল বা নাগরিককে বোধগম্য সুরক্ষা দিয়ে কার্যকর কাঠামো তৈরি করতে হয় নির্লিপ্ত অথবা অক্ষম কিংবা এ ব্যাপারটা ডিল করার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা তার নেই। বরং কোটা ব্যবস্থাকে এক্সপ্লয়েট করে সে দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক প্রশাসনকে লুটের যোগে ব্যতিব্যস্ত রাখতেই সক্রিয়।

একজন কোটা সংস্কার অ্যাক্টিভিস্ট লিখেছেন, ‘কোটা পৃথিবীর সব দেশেই বিদ্যমান, তবে কোথাও চিরস্থায়ী নয়। কোটা সাধারণত হয় ১০-১৫ বছরের জন্য সমাজে পিছিয়ে পড়া বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠীর জন্য, যেমন— ভারতে ১৫ বছরের জন্য দলিত সম্প্রদায়ের কোটা এখন বিদ্যমান, যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১০ বছর রেড ইন্ডিয়ানদের জন্য ২ শতাংশ কোটা বিদ্যমান ছিল। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো দেশেই ১৫ শতাংশের ওপর কোটা বিদ্যমান নেই, যেখানে আমাদের দেশে ৫৬ শতাংশই কোটায় চলে যায়, যা ৪৮ বছর ধরে চলমান! ভাবা যায়?’

অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নামে আরেক জালিয়াতি শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে মুক্তি সনদ এবং মুক্তি কোটার চূড়ান্ত অপপ্রয়োগ। অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বৈষম্যে ভোগা দেশকে একদল মুক্তিসেনা মেধাহীন প্রশাসন দিয়ে রিপ্লেস করতে স্বাধীন করেননি, ৪৭ বছর পরও যদি এ বোধ না জন্মায়, তবে স্বাধীনতা অকার্যকর। মুক্তিযোদ্ধাদের সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্মান দিয়ে সম্মানিত করতে হবে, দ্বিতীয় কোনো পন্থায় নয়। হ্যাঁ অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য প্রয়োজন মাফিক আর্থিক সহায়তা দেয়াকে কার্যকর করা একটি বিকল্প, তাও এটা চূড়ান্তভাবে সাধারণ নাগরিকের সুরক্ষা হীনতাকেই (পেনশন কিংবা রেশন কিংবা মানসম্পন্ন বয়স্ক ভাতা ইত্যাদির অনুপস্থিতিকে) নির্দেশ করে। নাতি-পুতিকে কোটায় চাকরি দেয়া কোনো মতেই বিকল্প হতে পারে না। এ দুর্বৃত্তপনার অবসান চাই।

যদি ধরে নিই, বাংলাদেশে প্রতি বছর আনুমানিক ১৭-২০ লাখ চাকরি প্রার্থী শ্রমবাজারে উন্মুক্ত হচ্ছেন (পাস করা, ঝরে পড়া, ফেল করা, পিছিয়ে পড়া সবাই মিলে)। এ অতি উচ্চ সংখ্যার বিপরীতে বাংলাদেশ সরকার অনূর্ধ্ব ৩৫ হাজার নাগরিককে বছরে চাকরি দিচ্ছে (যদিও এ সংখ্যা অতি বর্ধিত)। অর্থাৎ সরকার বার্ষিক মোট প্রয়োজন ১৭ লাখের মাত্র ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশের নিয়োগ দাতা। বাকি নাগরিক যাচ্ছে কোথায়? বেসরকারি খাত, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত কিংবা কৃষিতে! বুঝতে পারছেন! একটি অক্ষম সরকারি নিয়োগ যন্ত্রের বিপরীতে বাংলাদেশের বেসরকারি খাত ও কৃষি কী পরিমাণ সক্ষম!কিংবা কী পরিমাণ নাগরিক বছর বছরবেকারত্বের বোঝা নিয়ে শুধু হাঁটছেন?

২০১৮ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২০ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৯ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে ১০ লাখ ২৩ হাজার ২১২ জন ছাত্র ও ১০ লাখ ৮ হাজার ৬৮৭ জন ছাত্রী রয়েছে। (এসএসসিতে ১৬ লাখ ২৭ হাজার ৩৭৮ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীন ২ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫২ জন এবং কারিগরিতে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৬৯ জন, এছাড়া বিদেশে ৪৫৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে)। ২০১৭ সালে এসএসসি ওসমমানের পরীক্ষায় মোট ১৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। গত বছরের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ২৮৬ জন।

ধারণা করা হয়, বর্তমান বাংলাদেশে প্রায় ৬০ লাখের অধিক শিক্ষিত যুবক আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মহীন। জরিপ বলছে, প্রায় ৪৭ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত যুবক বেকার।

বাংলাদেশের শ্রমঘন বেসরকারি শিল্প ও গার্মেন্টস খাতে কর্মঘণ্টা অতি দীর্ঘ, কাজের পরিবেশ নাজুক, ছুটি নেই। নেই ওয়ার্ক লাইফ ব্যালান্স। নেই বার্ষিক ছুটি, স্বাস্থ্য বীমা কিংবা অবকাশ ভাতা। নেই ট্রান্সপোর্টেশন ভাতা কিংবা সন্তানের শিক্ষা ভাতা, নেই আবাসন ফ্যাসিলিটি। কর্মহীন যুবকের দীর্ঘ চাকরি খোঁজার ক্লান্তি, সেটা যাচাইয়ের প্রতীক্ষা করে না, সে শুধু এন্ট্রান্স চায়। চায় শর্তহীন জব অ্যাকসেস। ছয়টি ওপেনিংয়ের বিপরীতে পড়ে ৮৬ হাজার আবেদনপত্র, চাকরি তাই সোনার হরিণ। ১৫ শতাংশ শিল্প শ্রমিক বস্তিবাসী, অফিস ট্রান্সপোর্টেশন পদযুগল। বেসরকারি স্কিল্ড ও সেমিস্কিল্ড জব মাত্রই অন্যূন ১২-১৪-১৬ ঘণ্টা ডিউটি। বিস্তৃত নিম্নমধ্যবৃত্তের আবাসন ঘিঞ্জিঘর।

তাই মেধাবী তরুণের উপলব্ধির পরিধিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। আজকের তরুণ রাষ্ট্রের সঙ্গে কী কী বোঝাপড়া চায় এবং কী কী দাবি তার করা উচিত, তাকে বোধগম্য ও সংজ্ঞায়িত করা জরুরি। শুধু ২দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ চাকরিদাতার মেধার মূল্যায়ন নাকি বাকি বিশাল ওয়ার্ক স্পেসে মানসম্পন্ন কাজের পরিবেশ ও কাজের ফ্যাসিলিটির নিশ্চয়তা। সে কি ন্যূনতম বেতন চাইবে নাকি নগরে বাঁচার উপযোগী পারিশ্রমিক দাবি করবে। সর্বোচ্চ ১০ কর্মঘণ্টার মানবিক শ্রমজীবনের বাধ্যবাধকতা দাবি তোলাও চাই। অমানবিক শ্রমঘণ্টার অবসান বেসরকারি খাতে অন্তত ২৫ শতাংশ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করবে— সে উপলব্ধির জমিন তৈরিকরতে হবে তাকে, শুধু বিসিএস কোটা আন্দোলনে এলে বিস্তৃত কোনো প্রাপ্তি নেই।

প্রতিভাবান ও সম্ভাব্য তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য অনুকূল ব্যাংকিং প্রভিশন, প্রশাসনিক রেজিস্ট্রেশনের ঝামেলাহীন ওয়ানস্টপ পয়েন্ট, সহজ আয়কর পেপার ওয়ার্কস, চাঁদাবাজি ও ঘুষ মুক্ত ব্যবসা শুরুর অনুকূল অবকাঠামো তৈরির উপাদানগুলো তরুণদের আন্দোলনের নেগোসশিয়েশন পয়েন্ট হিসেবে আনতে হবে। একজন উদ্যমী তরুণ কেন একজন উদোক্তা হয়ে উঠতে পারছেন না, তার সব অবকাঠামোগত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বাধাগুলো চিহ্নিত করে এর বিপরীতে কৌশলগত কর্মসূচি প্রণয়নই আজ ও আগামীর প্রধান দাবি হওয়া চাই।

আজকের তরুণকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে হবে কেন স্থানীয় রিসোর্স (এক্সপার্ট) থাকা সত্ত্বেও ম্যানেজমেন্টের পদে, ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা প্রোডাকশন ফ্লোরে গণহারে বিদেশী নিয়োগ হচ্ছে? কেন বিদেশী ওপেনিংয়ের প্রাকপর্যায়ে স্থানীয় লোকবলের সক্ষমতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া মানা হয় না? স্থানীয় স্কিল তৈরির ব্যবসায়িক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কিংবা প্রকৌশল অবকাঠামো ও ইন্টারফেসগুলো তৈরি কেন হচ্ছে না।

অর্থাৎ দেশে কর্মসংস্থানকে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদের জন্য স্থিতিশীল করতে তরুণকে দূরদর্শিতা নিয়ে ভাবনায় বসতে হবে এবং এ উপলব্ধিগুলোকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। নাগরিকবান্ধব, জনস্বার্থ অনুকূল কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের চিন্তাকে সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে।

তাহলে কি তরুণরা কোটাপ্রথা মুক্তির আন্দোলন করবে না? অবশ্যই করবে। বরং সফল হতে হলে আন্দোলনকে এ রকমই ন্যারো স্কোপে রেখে দাবি আদায়ের নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে অবিরত। একধাপের সাফল্যকে পরবর্তী ধাপে উত্তরণ করে কৌশলগতভাবে নতুন আন্দোলন শুরু করতে হবে। চূড়ান্ত ও টেকসই কর্মসংস্থানের অবকাঠামো তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এ প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় শুধুকোটা আন্দোলন আদতে কর্মসংস্থান তৈরির বড় কোনো পরিসরই তৈরি করতে পারবে না। কারণ মোট কর্মসংস্থান চাহিদার বিপরীতে চাকরিদাতা হিসেবে সরকারি খাত নিতান্তই নগণ্য, গৌণ। সরকারকে বেসরকারি খাতে মানবিক শ্রম ও বাঁচার উপযোগী মজুরি বাস্তবায়ন করতে বাধ্য করাতে হবে, আইডিয়া নিয়ে রাস্তায় ঘোরা উদ্যমী তরুণকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাংকিং ও প্রশাসনিক প্রসেস বাস্তবায়নে বাধ্য করাতে হবে।তবেই চূড়ান্ত ও কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসবে, যা উন্নত জীবনমান ও ওয়ার্ক লাইফ ব্যালান্স হিসেবে বাস্তব রূপ পাবে।

তরুণদের আজকের আন্দোলনের ভিত টেকসই ও ভবিষ্যত্মুখী হয়ে উঠুক, মানসম্পন্ন চাকরি ও ন্যূনতম চাকরি সুবিধাদি আদায়ের বোধ এবং প্রত্যয় গড়ে উঠুক। তারুণ্য এগিয়ে যাক। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা রাষ্ট্রের স্তরে স্তরে সঞ্চারিত হোক। মেধা ব্যবস্থাপনা সেন্সিবল হোক। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!

  • লেখক: সিনিয়র সফটওয়্যার সলিউশন আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন নেদারল্যান্ডস। faiz.taiyeb@gmail.com