Search

Sunday, April 8, 2018

দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিচার দাবি জাতিসংঘের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক


কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। এছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার সংস্থাকে বৈশ্বিক অবস্থানে ‘বি’ ক্যাটাগরির বলেও মন্তব্য করেছে বিশ্ব সংস্থাটি।

অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে বাংলাদেশের দেয়া প্রাথমিক প্রতিবেদনের চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে এসব সুপারিশ ও মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কমিটি। গত ১৫ ও ১৬ মার্চ কমিটির সপ্তম, অষ্টম ও নবম বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছিল বাংলাদেশ। এরপর ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত ২৮তম বৈঠকে প্রতিবেদনের ওপর এ পর্যবেক্ষণ দেয় জাতিসংঘের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার কমিটি।

কমিটির পর্যবেক্ষণে দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলা হয়, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারবিষয়ক কমিটি বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রবণতা ও তার ব্যাপ্তি এবং এর চরম প্রভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এতে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার খর্ব হয়েছে।

পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ। এতে দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশকে চারটি পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে কমিটি। এগুলো হলো— সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা। দুর্নীতি দমনে আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের বিচারের আওতায় আনা। সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি দুদককে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। আর সবশেষে দুর্নীতির ফলে এর প্রভাব এবং ক্ষতি নিয়ে সাধারণ জনগণ ও সরকারের কর্মকর্তাদের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে জাতিসংঘ কমিটি। জাতিসংঘ কমিটি বলেছে, বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ১০ লাখের ওপর রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, তা কমিটি অনুধাবন করছে। তবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে অঙ্গীকার এখনো নিশ্চিত হয়নি। কমিটি রোহিঙ্গাদের আইনগত মর্যাদা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ বাংলাদেশ এখনো এসব শরণার্থীকে আইনগত মর্যাদা দেয়নি। ফলে তাদের চলাফেরা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও মৌলিক সেবাগুলো নিশ্চিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের আইনগত মর্যাদা দেয়ার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ। এছাড়া আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভূমিধসের যে ঝুঁকি রয়েছে, তা মোকাবেলায় মানবিক সাহায্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে অনতিবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।

জাতিসংঘ কমিটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স অব ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার সংস্থাকে ‘বি’ ক্যাটাগরির সংস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। জাতিসংঘ কমিটিও মনে করে, বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন নয়। বিশেষ করে লোকবল ও অর্থায়নের জন্য সরকারের ওপর কমিশনের নির্ভরশীলতা উদ্বেগের বিষয়। কমিশনের কাজের সীমিত পরিসরের কারণে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার স্থাপন হচ্ছে না। এ কারণে কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ কমিটি। এর সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন-২০০৯ ঢেলে সাজিয়ে কমিশনের কাজের পরিধি বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছে জাতিসংঘ।

বাংলাদেশে মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, শ্রম অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারী, সুশীল সমাজ ও ভিন্নমত প্রদানকারীদের অধিকার ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ কমিটি। বিশেষ করে সংশোধিত আইসিটি আইন-২০১৩, খসড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন-২০১৮, ফরেন ডোনেশন রেগুলেশন আইন-২০১৬ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন জাতিসংঘ। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে মানবাধিকার কর্মীদের জন্য নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। আর আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা, খসড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন-২০১৮ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪-এর বিতর্কিত ধারাগুলো পুনর্বিবেচনা করে তা বাদ দিতে সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ কমিটি।

  • বনিকবার্তা / এপ্রিল ৫,২০১৮

No comments:

Post a Comment