Search

Thursday, April 19, 2018

সংসদ বহাল রেখে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়

সিপিবি-বাসদের আলোচনায় বিশিষ্টজনরা


সংসদ বহাল রেখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বলেছেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- ‘বর্তমান সংসদ বহাল রেখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ যে সংসদে ৩৫০ জন অত্যন্ত ক্ষমতাধর এমপি বহাল থাকবেন, সেখানে একটি সুষ্ঠু বা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন অব বাংলাদেশের সেমিনার হলে বুধবার এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘অবাধ নিরপেক্ষ অর্থবহ নির্বাচন : নির্বাচনকালীন সরকার, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সিপিবি ও বাসদ।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

মূল প্রবন্ধে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ১৮টি সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব রাখা, নির্বাচনী ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার, প্রার্থীদের সম্পদ ও পরিচয় প্রকাশ, নির্বাচনে সবার সমসুযোগ, সন্ত্রাস, পেশিশক্তির প্রভাব ও দুর্বৃত্তমুক্ত নির্বাচন, নির্বাচনে ধর্ম সাম্প্রদায়িকতা ও আঞ্চলিকতার অপব্যবহার রোধ, রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক চর্চা, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি অনুসরণ, নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন, প্রতিনিধি করার ব্যবস্থা প্রবর্তন, না ভোট পুনর্প্রচলন, ভোটার তালিকা ও সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ ও নির্বাচন পরিচালনায় হস্তক্ষেপ না করা, নির্বাচন কমিশন আইন ও বিধি সংস্কার। বিশিষ্ট লেখক কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র ইমিটেশন অলঙ্কারের মতো। আসল অলঙ্কার ও ইমিটেশন অলঙ্কারের মধ্যে তফাৎ রয়েছে।

কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ গঠন হয়, তা হচ্ছে মূল্যহীন ইমিটেশন অলঙ্কার। তাই মনে রাখতে হবে- আমরা আসল অলঙ্কার চাই, ইমিটেশন অলঙ্কার চাই না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভালো নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে গণতন্ত্রমনা ও শক্তিশালী হতে হবে। তাদের মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হবে। কারণ একটি ভালো নির্বাচন জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। আর সংসদ বহাল রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দল থেকে বলা হচ্ছে- ‘আগামী নির্বাচনে সংসদ বহাল থাকবে।’ যেখানে ৩৫০ জন অত্যন্ত ক্ষমতাধর ব্যক্তি উপস্থিত থাকবেন, সেখানে ভালো বা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, আপনারাও এটা বিশ্বাস করেন না। আমরা এটা নির্বাচন কমিশনেও বলে এসেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ কোনো কথাই বলছেন না।

তিনি আরও বলেন, সংসদ ভেঙে দেয়া হবে কি হবে না, এ ব্যাপারে সরকারের কোনো সাড়া নেই। এটা তো সংবিধান পরিপন্থী না। সংবিধানে সংসদ ভেঙে দেয়ার কথা পরিষ্কারভাবে আছে। সুতরাং, এটা করতে তো সংবিধান লঙ্ঘন করা হবে না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধানে তো সংসদ ভেঙে দেয়ার বিরুদ্ধে কিছু বলা নেই। যেভাবে দেশে এখন নির্বাচন হচ্ছে, তাতে নিরপেক্ষ নির্বাচন আমরা দেখতে পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, একদল নির্বাচনের প্রচারণা চালাচ্ছে, আরেক দল ঘর থেকে বেরও হতে পারছে না। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন বলছে, তফসিল ঘোষণার আগে আমাদের কিছুই করণীয় নেই। অথচ নির্বাচন কমিশন চাইলে এটা বন্ধ করতে পারে। তাদের সেই ক্ষমতা আছে।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্ত বলেন, আগামী নির্বাচনের আর ছয় মাস বাকি আছে। এ সময়ে এত বড় সংস্কার করা সম্ভব বলে আমি মনে করি না। এ সময়ের মধ্যে ছোট করে কী কী বিষয় সংস্কার করা যায়, তা আমাদের সবাইকে বসে ঠিক করতে হবে।

আমাদের দেশে এখনও আমার ভোট আমি দেব, এর বাস্তবায়ন হয়নি। কেউ যদি ধর্মের দোহাই দিয়ে ভোট চান, তাহলে প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে ধর্ম একটা নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্ম যার যার থাকবে। এটাকে রাজনীতি এবং সংবিধান থেকে বাদ দিতে হবে। আমাদের কাছে নির্বাচন মানে নির্যাতন। সে জায়গা থেকে বের হতে হবে।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বাম মোর্চার সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, গণফোরামের নির্বাহী পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, নাগরিক ঐক্যের নেতা এসএম আকরাম হোসেন ও কাজল দেবনাথ।
  •  যুগান্তর/ ১৯ এপ্রিল ২০১৮


কথায় কথায় ‘রাজাকার’ বলা চরম ধৃষ্টতা, অন্যায্য ও অনাকাঙ্ক্ষিত

মইনুল হোসেন

দেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য বঙ্গবন্ধুর সুস্পষ্ট নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে যারা দেশের কোটি কোটি মানুষকে পাকবাহিনীর ট্যাংকের মুখে রেখে প্রতিবেশী দেশে চলে গিয়েছিল, তাদের মুখ থেকে দেশের অভ্যন্তরে নিরন্তর পাক সেনাদের গুলির মুখোমুখি যুদ্ধরত কোটি কোটি মানুষকে সুবিধামতো রাজাকার বলে আখ্যায়িত করার অপরাজনীতি অনেক সহ্য করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু নিজেও ভারতে আশ্রয় নেয়ার প্রস্তাবকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। দেশের মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে যারা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তাদের মুখ থেকে কোটাবিরোধী আন্দোলনে জড়িত দেশপ্রেমিক শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ উচ্চারণ চরম ধৃষ্টতা, অন্যায্য ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আমাদের জনগণকে বিভক্ত করে এক অংশকে অপর অংশের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত করার ভয়াবহ ষড়যন্ত্র চলছে।

কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে আখ্যায়িত করার ধৃষ্টতা থেকে প্রমাণিত হয় তারা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি। এখনও তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় খুশি নয়। তারা বৃহত্তর কোনো আশা লালন করে যাচ্ছে।


সরকারের হিসাবে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ লোক অসহায়ভাবে প্রাণ হারিয়েছে। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমতো পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘প্রতিরোধের দুর্গ’ গড়ে তোলার জন্য তখন অনেককেই পাওয়া যায়নি। যারা যুদ্ধের হুমকি দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে উত্তেজিত করেছিল, জনগণের প্রতি এই প্রতিশ্রুতির কথা তারা স্মরণে রাখেননি। যুদ্ধের জন্য তাদের কোনো প্রস্তুতিই ছিল না, তারা বঙ্গবন্ধু ও জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে।

পাকিস্তান বাহিনী কর্তৃক খোলা আকাশের নিচে আমাদের লোকদের নিষ্ঠুর হত্যার সময় এই সব সাহসী লোকেরা জনগণের দুর্ভোগে জনগণের পাশে ছিল না। আমরা তখন তাদের সাহসের চর্চা দেখিনি।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু প্রস্তুতির অভাবে ৩০ লাখ মা-বাবা, ভাই-বোন পাকবাহিনীর নিষ্ঠুর শিকার হয়ে করুণভাবে প্রাণ দিতে বাধ্য হয়েছে। ইতিহাসের এই নিষ্ঠুর অংশ নিয়ে কেউ তেমন চিন্তাও করে না। ইতিহাসের এই হৃদয়বিদারক অংশ কিছু নেতা হৃদয়ঙ্গম করতে চাইছেন না।

দুর্ভাগ্যের বিষয়, জনগণকে না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে তারা চলে গেল ভারতে। যখন তারা ফিরে এলো, জনগণ তাদের জিজ্ঞাসা করতে পারত যে, তাদের এভাবে মৃত্যুর মুখোমুখি অসহায় অবস্থায় রেখে কেন তারা চলে গিয়েছিল। পাকবাহিনীর অত্যাচারে যখন আমাদের জনগণ নিশ্চিত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছিল, তখন তাদের মৃত্যুযন্ত্রণার সময় বা মৃতদের জন্য সহমর্মিতা জানানোর কেউ ছিল না।

আমাদের জনগণ সীমাহীন ত্যাগ স্বীকার করে ভারতসহ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিল। আমাদের সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ ও ত্যাগ স্বীকার না করলে আজ জনগণকে রাজাকার বলার ধৃষ্টতা দেখানোর সুযোগই ছিল না। তাদের জানা উচিত, মানুষের জীবন ও দেশপ্রেম সবকিছুর ঊর্ধ্বে। যাকে-তাকে যখন-তখন বিশ্বাসঘাতক বলবেন না। ভারতে গেলেই কারও দেশপ্রেম প্রমাণিত হয় না।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমতো তারা অভ্যন্তরে থেকে প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তোলার জন্য সামান্যতম চেষ্টা বা অপেক্ষাও করেনি। নেতৃত্বহীন অবস্থায় জনগণ কসাইয়ের ছুরির শিকার হল। আমাদের জনগণকে নিরস্ত্র অবস্থায় পাকবাহিনীর বর্বরতা মোকাবেলা করার জন্য রেখে যাওয়া হল, জনগণের পাশাপাশি যুদ্ধ করার প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ করে তারা চলে গেলেন ভারতে। এই প্রতিশ্র“তি ভঙ্গের কথা সদয় জনগণ একবারও জিজ্ঞেস করেনি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের অবাধ্যতার কারণে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সর্বশেষ যারা সাক্ষাৎ করেছিলেন তারা হলেন- তাজউদ্দীন আহমদ, ড. কামাল হোসেন এবং ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। বঙ্গবন্ধুর সুস্পষ্ট পরামর্শ ছিল দেশের ভেতর ছড়িয়ে পড়ো। যেসব নেতা ভারতে চলে গেলেন, তাদের কারণেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের স্বাধীনতার সমর্থনে এগিয়ে আসেনি। দখলদার পাকবাহিনীর নিষ্ঠুর বর্বরতা সেদিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিবেককে জাগিয়ে দিয়েছিল।

এমনকি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারাও স্বীকার করবেন যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো কোনো প্রস্তুতি আমাদের নেতাদের ছিল না। ব্যর্থ রাজনীতির চরম মূল্য দেশে থাকা জনগণকে দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যারা ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রক্ষা করেছেন, তাদেরই এর দায়িত্ব নিতে হবে, ব্যাখ্যা দিতে হবে। মানুষের জীবন-মরণকে তুচ্ছ করার রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাসী নই।

আমাদের বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করার প্রস্তাব দিলে তাদের তখন বারণ করা হয়। ব্রিগেডিয়ার মাহমুদুর রহমান মজুমদারকে সন্দেহ করা হয় এবং তাকে তৎক্ষণাৎ পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

অবশেষে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। এভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়ে গেল ‘পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ’। যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করল তখন একজন মাত্র সেক্টর কমান্ডার ছাড়া আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কোনো লোক সেখানে উপস্থিত ছিল না। পাকিস্তান সেনারা হয়ে গেল ভারতের যুদ্ধবন্দি- বাংলাদেশের নয়। আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা এবং গণহত্যা চালানোর জন্য পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী সৈনিকদের বিচার আমরা করতে পারলাম না।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের এসব অজানা কাহিনী বর্ণনা করার অর্থ এই নয় যে, ভারতে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে খাটো করে দেখা।

যারা মুক্তিযোদ্ধাদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি বিশেষ শ্রেণী হিসেবে স্থায়ীভাবে ক্ষমতা দখলে রাখার চিন্তা করছেন, তারা বস্তুত আমাদের মধ্যে কম্যুনিস্ট কায়দায় শ্রেণীসংগ্রাম (Class struggle) বাধাতে চাচ্ছেন। তারা আদতে আগুন নিয়ে খেলছেন। সমাজে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো প্রয়োজন নেই। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা নীরব ও শান্ত, তারা কোনো অশুভ রাজনীতির নীলনকশার ক্রীড়নক হতে চায় না।

সরকারি কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলন প্রমাণ করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়াও আমাদের তরুণ সমাজ সুশৃঙ্খল ও ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে পারে এবং চক্রান্ত ও নাশকতার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তারা শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারে।

নিরস্ত্র ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশের বর্বর আক্রমণের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া অত্যাবশ্যক। পুলিশের উচিত নয় সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গ হওয়া। নিরপেক্ষ পেশাভিত্তিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে নিজস্ব ভাবমূর্তি সংরক্ষণ করা তাদের পেশাগত দায়িত্ব। এখন প্রমাণিত হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরের বাসা ভাঙচুর করেছে পেশাজীবী অভিজ্ঞ লোকেরা। আন্দোলনকারী ছাত্ররা নয়। আমাদের শাসনব্যবস্থা কত গণবিরোধী হয়েছে তা সবাইকে ভাবতে হবে। দেশপ্রেমিক কারও চুরির টাকায় বিদেশে ভালো থাকার চিন্তা থাকতে পারে না।

আমাদের দলীয় রাজনীতি হয়ে পড়েছে ষড়যন্ত্রভিত্তিক ও বিভক্তিমূলক- জ্ঞানভিত্তিক নয়। অন্যের শক্তির ওপর নির্ভর করে বড় বড় কথা বলা রাজনীতি নয়। আমাদের দলীয় রাজনীতি গড়ে উঠেছে পারস্পরিক অনাস্থার ওপর। দলীয় নেতারা একদল অপর দলকে শত্রু মনে করে। শুধু কোটা পদ্ধতির সংস্কারই নয়, আমাদের রাজনীতিরই জরুরি ভিত্তিতে আমূল সংস্কার প্রয়োজন।

সম্প্রতি সুশৃঙ্খল অহিংস ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রাজনীতির বিদ্যমান এই দেউলিয়া অবস্থায় ছাত্রদের মধ্য থেকে চরিত্রবান ও সাহসী নেতৃত্ব অবশ্যই বের হয়ে আসবে। হতাশ জাতির মনে কিছুটা হলেও নতুন আশার সঞ্চার করেছে তারা।

  • ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন : আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
  • যুগান্তর/১৯ এপ্রিল ২০১৮ 

সড়কদ্বীপের কান্না: রাজধানী না প্রেতপুরী?

তানজিনা আকতারী

মিরপুর থেকে ছেড়ে আসা বাসে চড়ে যাচ্ছি নিউমার্কেট। পাশের সিটে দুজন বিদেশি। দুজনের হাতেই ক্যামেরা। ঢাকার রাস্তার পাশ ঘেঁষে যত স্থাপনা তাতে বৈচিত্র্য নেই বললেই চলে। হয় বিপণিবিতান, নয় বাসাবাড়ির মতো করে তৈরি কোনো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা হাসপাতাল। নয়তো থাই গ্লাসে মোড়া কাচের আবরণ। কলাবাগান পেরোতেই তাঁদের ক্যামেরার খটাখট শব্দ। তাকিয়ে দেখলাম তাঁদের সব মনোযোগ রাস্তার পাশে সারি সারি পোড়ামাটির পণ্যের দিকে। দুজন হাসছেন, কথা বলছেন নিজেদের মধ্যে। জ্যামে আটকা পড়ল বাস। পাশের সিট থেকে ভেসে এল ‘লুক। বাংলাদেশ। লেটস গো।’ তাড়াহুড়ো করে নেমে গেলেন দুজন। নেমেই ক্যামেরা তাক করলেন সুন্দর এক দৃশ্যের দিকে। রুক্ষ, শুষ্ক, কংক্রিটে মোড়া এই নগরের বুকে এক টুকরো কোমল, পরিপাটি, সুন্দর করে সাজানো সবুজ প্রকৃতির হাতছানিটি ‘অর্ঘ্য’–এর।

‘অর্ঘ্য’ মিরপুর রোড ও গ্রিন রোডের মিলনস্থলে বানানো অনেকটা বদ্বীপের মতো দেখতে ছোট একটি উদ্যান, যার অবস্থান সায়েন্স ল্যাবরেটরির সড়কদ্বীপে। চোখজুড়ানো সড়কদ্বীপ পথচারীদের চোখকে আরাম দেয়। এতে আছে মিনি লেক, দুটি মিনি জলাধার। নানা ধরনের ছোট ছোট মাছ আছে, সেই সাথে বেশ কিছু জলজ উদ্ভিদ। জলাধারে পদ্ম ফুলও ফোটে আর তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ওদের সঙ্গেই থাকে হাঁস, সুযোগ পেলে লেকের পানিতে ডুব দেয়, সাঁতার কাটে। তৃষ্ণা মেটাতে আসে পাখিরা। আরও থাকে ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুক। সারা বছর কত রঙের ও জাতের যে ফুল ফোটে আর তাদের টানে ছুটে আসে রঙিন প্রজাপতি, ফড়িং। বিভিন্ন প্রজাতির গাছের ডালে বসে কিচিরমিচির করে দোয়েল, শালিক, চড়ুই। কৃত্রিম পাহাড়ের চূড়ায় বসানো ঘর, তাতে কবুতর ডাকে বাকবাকুম। কালো টাইলসে বানানো ভাস্কর্য রয়েছে ভেতরে। 


রাজধানী ঢাকায় হাতে গোনা কয়েকটি সবুজ দৃষ্টিনন্দন সড়কদ্বীপ ছিল। এদের মধ্যে অন্যতম দুটি সড়কদ্বীপ পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে অবস্থিত ‘নগরে নিসর্গ’ ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির ‘অর্ঘ্য’। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) থেকে ইজারা নিয়ে সড়কদ্বীপ দুটিতে নান্দনিক সবুজায়ন করেছিল ‘হেরিটেজ ক্রিয়েটিভ কাউন্সিল’ নামের একটি বেসরকারি সংগঠন। নকশা ও মূল পরিকল্পনায় ছিলেন স্থপতি রাফেয়া আবেদিন। সাধুবাদ তাদের নিঃসন্দেহে প্রাপ্য। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আমাদের ভালোবাসার ‘নগরে নিসর্গ’ এখন এক দীর্ঘশ্বাসের নাম। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের ব্যস্ততম সড়কে ‘নগরে নিসর্গ’ সড়কদ্বীপ পথচারীদের প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দিত। কিন্তু সেসব এখন অতীত। সড়কদ্বীপটি ভেঙে সেখানে বিশাল ডিজিটাল বিলবোর্ড বসিয়েছে সিটি করপোরেশন। অথচ সড়কদ্বীপটিই ছিল ওই এলাকার একমাত্র সবুজ স্থান। এবার সায়েন্স ল্যাবরেটরির ‘অর্ঘ্য’ সড়কদ্বীপটিও সিটি করপোরেশন থেকে ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। শুরু হয়েছে তোড়জোড়। ভাঙার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বুদ্ধিজীবী, স্থাপত্যবিদ, নাট্যকার, সমাজসংস্কারক, পরিবেশবাদী, প্রকৃতিপ্রেমী সচেতন নাগরিক।

এখন যেখানে ‘অর্ঘ্য’ আগে সেই জায়গাটি পরিত্যক্ত ছিল। ১৮ কাঠার এই জায়গা বরাদ্দ নিয়েছে বিআরবি কেবল কোম্পানি। সেখানে নাকি তারা বহুতল বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করবে। বসবে এলইডি বিলবোর্ড। কৃত্রিম রঙিন আলো ও শব্দের কারণে পাখি আসবে না, মানুষের চোখ ও মন পীড়িত হবে। হেরিটেজ ক্রিয়েটিভ কাউন্সিল যেভাবে এর সবুজায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করে রাজধানীর এই স্থাপনা নজরকাড়া রূপ ধরে রেখেছিল, সেটিও দিন কয়েক বাদে শুধুই স্মৃতি হিসেবে আর পুরোনো ছবির অ্যালবামে রয়ে যাবে? ঠিক যেভাবে ‘নগরে নিসর্গ’ হারিয়ে গেছে?


মন্দ থেকে আরও মন্দের দিকে যাওয়াই কি আমাদের নিয়তি? মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটির পরিবেশ ও বাতাস ছিল ভয়াবহতম দূষিত। যানজট তো ছিলই। সেই শহরটির নগর কর্তৃপক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি লতাগুল্ম, ঘাস আর পাতাবাহারের বাগান করেছে। মাটিতে জায়গা নেই বলে, বাগানগুলো তারা করেছে খাড়াখাড়ি। দেয়াল, উড়ালসড়কের থাম, সড়কদ্বীপ, সড়ক বিভাজক, যেখানেই জায়গা পেয়েছে, সেখানটাকেই তারা সবুজ বানিয়েছে। কুৎসিত দৃশ্যগুলো সুন্দর হয়েছে, বাগানের ছাড়া অক্সিজেনে বাতাস পরিষ্কার হয়েছে, পরিবেশ হয়েছে মনোরম। শহরটাকে তারা সুন্দরের দিকে বদলে দিয়েছে। আর আমরা যাত্রা করছি অসুন্দর থেকে কুৎসিতের দিকে।

এমনিতেই নগরের বিভিন্ন উন্নয়নকাজ করতে সড়ক বিভাজকের বনায়নসহ অনেক গাছ কাটা পড়ছে, কাজেই বহু ক্ষতি ইতিমধ্যে আমরা করে ফেলেছি। আরও কেন? প্রাণিকুল, সবুজ–স্নিগ্ধ প্রকৃতি হারিয়ে আমাদের জীবন আর কত যন্ত্রময় করতে হবে? নিত্যদিনের যানজট, জীবন অতিষ্ঠ করা মশা, দ্রব্যমূল্যের প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংকট, গণপরিবহনের স্বল্পতা—সবকিছু রাজধানীর মানুষ সহ্য করেই চলেছে। সবকিছুর বিনিময়ে রাস্তার মাঝে ও পাশে গাছ, ফুলের সুবাস, একটু ছায়া—এসব কি অনেক বেশি কিছু চাওয়া? আমরা মানুষ বলেই আর্তনাদ করতে পারছি। কিন্তু প্রাণী, পাখি, গাছপালার বুকচেরা হাহাকার, কান্না, নীড় হারানোর ভয়ে গুটিয়ে থাকাও কি আপনারা উপলব্ধি করেন না? এত নিষ্ঠুর আপনারা? এত হৃদয়হীন?

সবুজ বিলীন হতে চলা এই নগরে মানুষের চাওয়ার বিপরীতে অযত্নে, অবহেলায়, তাচ্ছিল্যে বাদবাকি সবুজও ধুঁকছে। এ যেন ছায়াহীন কংক্রিটের এক প্রেতপুরী। সড়ক বিভাজকে যেসব গাছ লাগানো আছে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেকগুলোই মৃত। কিছু গোড়াসহ উপড়ে ফেলা। কোথাও শূন্য বেড়া জানান দেয়, একসময় সেখানে একটা বৃক্ষ বাঁচতে চেয়েছিল। এভাবে আমরাও অযত্নে, উপড়ে ফেলার টানে ধুঁকছি না কি এই শহরে?

  • প্রথম আলো/এপ্রিল ১৯,২০১৮ 

বাংলাদেশে কোটা নীতির বৈধতা


শামসুল আলম


সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থায় সমাজের অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য কিছু অংশ রিজার্ভ রেখে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয় দেশের অবশিষ্ট বৃহত্তর জনসমাজের সাথে সমান অগ্রগর করার জন্য। এটি সাময়িক মেয়াদি ব্যবস্থা।  বাংলাদেশে বর্তমানে প্রথম শ্রেণীর বেসামরিক চাকরিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫৬% কোটা আছে, বাকী ৪৪% নিয়োগ হয় মেধার ভিত্তিতে। ৫৬% ভাগ কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা বা সন্তান বা নাতিপুতির জন্য ৩০%, জেলা কোটা ১০%, মহিলা কোটা ১০%, উপজাতি কোটা ৫%, প্রতিবন্ধি কোটা ১%। এছাড়া নন-ক্যাডার ও নিম্নপদস্থ পদে আরও বিভিন্ন ধরণের কোটা আছে। তবে সশস্ত্র বাহিনীর নিয়োগে কোনো কোটার অস্তিত্ব নেই ।

কেমন করে কোটা এলো

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরিতে নিয়োগদানের জন্য সরকার একটি অস্থায়ী নিয়োগ বিধিমালা  করে। ৫ই সেপ্টেম্বর ১৯৭২ মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাপন বিভাগের সচিব এম এম জামান স্বাক্ষরিত ইস্ট/আরআই/আর-৭৩/৭২-১০৯(৫০০) নম্বর প্রজ্ঞাপনে বলা হয়,নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সকল জেলার নাগরিকদের নিয়োগলাভের সুযোগদানের নিমিত্তে প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে মেধা কোটা হবে ২০%, বাকী ৮০% জেলার মধ্যে বন্টন করা হবে। এর মধ্যে ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য, মুক্তিযুদ্ধে নিগৃহীত মহিলাদের জন্য ১০% কোটা সংরক্ষিত থাকবে।


১৯৭৬ সালের ৮ এপ্রিল পরিপত্র নং ইডি/আরআই/আর-৫৬/৭৫/৫২ মূলে মেধা কোটা ২০% থেকে ৪০% করা হয়। মহিলা কোটা ১০% করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কিছু বলা হয়নি এতে।
২৮-৭-১৯৮৫ ইং তারিখে এমইআর/আর-১/এস-১৩/৮৪-১৪৯(২৫০) স্মারকমূলে ১ম ও ২য় শ্রেণীর পদের মেধাভিত্তিক কোটা বর্তমানে প্রচলিত ৪০% হইতে ৪৫% উন্নীত করা হয়। জেলা ভিত্তিক ৫৫% কোটার মধ্য হইতে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০%, মহিলাদের ১০%, এবং উপ-জাতীদের ৫% পদ রাখা হয়।
এভাবে চলতে চলতে এক সময় দেখা যায়, আবেদনকারীদের বয়স শিথিল করেও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আর লোক পাওয়া যাচ্ছে না, তখন ১৯৯৭ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে বিধান করা হয়- মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ ভাগ কোটা সন্তানদের দিয়ে পূরণ করা হবে (সম(বিধি-১)এস-৮/৯৫(অংশ-২-৫৬(৫০০) তারিখ: ১৭/০৩/১৯৯৭)। পরে বিএনপি সরকারের সময় বিধানটির ব্যাখ্যা করে বলা হয়- ‘কোনো কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে সেই শূণ্য পদ মেধাকোটা দিয়ে পূরণ করা যাইবে’ (সম(বিধি-১)এস-১৪/৯৯-২৮৪, তারিখ ০৪/০৯/২০০২)। এরপরে যখন সন্তানদেরও চাকরি বাকী নাই, এবার মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০% কোটা পূরণ করতে বর্তমান আওয়ামলীগ সরকার এই কোটা নাতি পুতি পর্যন্ত প্রসারিত করে।

সংবিধান কি বলে?

১৯৭২ সালের অস্থায়ী নিয়োগ নীতিমালায় যখন কোটা চালু করা হয়, তখন দেশে কোনো সংবিধান ছিল না। এরপর বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২। এই সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদে বলা হয় ‘১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে; ২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেইক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।’ ২৮ অনুচ্ছেদে নারী, শিশু, বা অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য বিশেষ সুবিধা দিতে বাধা না থাকার কথা বলা হয়।

এখানে উল্লেখ্য যে, ২৮ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের অনগ্রসর অংশের জন্য বিশেষ বিধান করতে অনাপত্তির কথা বলা হয়েছে, যার আওতায় অনগ্রসর জেলা কোটা, মহিলা, উপজাতিদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। জেলা কোটা সম্পর্কে ১৯৯২ সালের ৩ মে সংস্থাপন সচিব হাসিনুর রহমান সাক্ষরিত সম/বিধি-১/এস-১৫/৯২-১০২(১৫০) নম্বর পরিপত্রে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন অনগ্রসর জেলার নাগরিকগণকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের বিষয়ে সমতাভিত্তিক সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী তাহাদের অনুকূলে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়নের উদ্দেশ্যেই ৫-৯-৭২ ইং তারিখের স্মারকের মাধ্যমে সর্বপ্রথম কোটাভিত্তিক পদ সংরক্ষণের নীতিমালা জারি করা হয়। ইহা অনস্বীকার্য যে জেলাকোটা বাংলাদেশ সংবিধানের ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদের বিধান।

মুক্তিযোদ্ধা কোটা

কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটাটি কোন্ ক্যাটাগরিতে আসে? এটা কি অনগ্রসর শ্রেণী? এসংক্রান্ত কোনো সরকারী আদেশ বা বিধি অদ্যবধি জারী নেই। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ কোটা বা সুবিধা দেয়ার কথা ১৯৭২ সালের সংবিধানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেও বলা হয়নি। কিন্তু গত ৪৭ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা কোটাটি কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে- তার কোনো ব্যাখ্যা সরকার দেয়নি। মুক্তিযোদ্ধা কোটাটি অনগ্রসর শ্রেণী কি না- তা যাচাই করতে একটি পরিসংখ্যান দেখা যাক- মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধিত ১ লাখ ৬০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার জন্য ৩০% কোটা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ০.০১% নাগরিকদের জন্য অনন্তকাল অবধি ৩০% কোটা! তাহলে এরা কি অনগ্রসর শ্রেণীতে পড়ে? সংবিধান বা কোনো আইন বা বিধিতে কি ৩০ ভাগ কোটা সমর্থন করে? বরং এটি ২৯ অনুচ্ছেদের সকল নাগরিকদের সমান সুযোগ লাভের অধিকার খর্ব করে। ফলে ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বৈষম্যমূলক এবং অসাংবিধানিকও বটে। সর্বোপরি মুক্তিযোদ্ধা তাদের সন্তান ও নাতিপুতিরা কোনো অনগ্রসর শ্রেনীর সংজ্ঞায় পড়ে না।  অার কোটা কোনো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তও হতে পারে না। যোগ্য নাগরিকদের সাংবধিানিক সুবিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত রাখা কতদূর ন্যায়সঙ্গত? এটি স্পষ্বটত অবিচার। এটি সংবিধানে প্রদত্ত নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংবিধানে কোনো কোটা বা আলাদা কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও প্রায়োগিকভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনটি সুবিধা বহাল ছিল:

১. তাদের জন্য ৩০% পদ রিজার্ভ রাখা;
২. ঢোকার সময় তাদের বয়স ২/৩ বছর বেশি পর্যন্ত সুযোগ দেয়া;
৩. চাকরির অবসরও ২ বছর পরে হওয়া।

মূলত এটি করা হয়েছিল যুদ্ধের কারণে লেখাপড়ার ক্ষতি এবং চাকরিতে ঢুকতে না পারার ক্ষতি পুষিয়ে দিতে। কিন্তু বাংলাদেশে যা হয়- একটা কিছু শুরু হলে আর কেউ থামানোর সাহস করে না। দীর্ঘকাল ধরে মুক্তিযোদ্ধা কোটার নামে একটি অসাংবিধানিক নিবর্তন চাপিয়ে দেওয়া হলো, কেবল টার্মটা স্পর্শকাতর ছিল বিধায় কেউ এটি বন্ধ করার চেষ্টাও করেনি। কিভাবে, কোনযুক্তিতে ট্যাবু টিকে থাকে।  এটি মূলত মতলবী রাজনীতিকদের কাজ।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সুবিধা প্রাপ্ত  পাঁচ কর্মকর্তা হলেন- স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব এ কে এম আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান (বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান), মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী (বর্তমানে ওএসডি) এবং একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (ওএসডি) আবুল কাসেম তালুকদার। 

মুক্তিযোদ্ধা কোটার সাথে চলে আসে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে নানা জাল জালিয়াতি, ভুয়া মুজিবনগর সনদ, মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্মানোদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ থাকার নানা কেলেঙ্কারির কথা, এমনকি সরকারের ৬ জন সচিব জাল মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সুবিধা নিয়েছেন, তা প্রমাণিত হয়। তাছাড়া নিয়োগের সময় এতদিন ধরে বিসিএস পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি ছিল পরীক্ষা শেষে চুড়ান্ত নিয়োগের সময়; অর্থাৎ প্রিলিমিনারী, লিখিত, এবং মৌখিক পরীক্ষা শেষে যখন চাকরির জন্য বিবেচনা করা হবে, তখন কোটা ভাগ হতো। কিন্তু বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার ৩৪তম বিসিএস থেকে প্রিলিমিনারী পরীক্ষার আগেই কোটা ভাগ করে ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০০০ পদের বিপরীতে ১ লাখ প্রার্থী থাকে, তবে আগের সিস্টেমে সব পরীক্ষা শেষ করে মেধা তালিকা তৈরী করে তারপরে কোটা ভাগ হতো। কিন্তু এখন আর সেটা করা হয়না, পরীক্ষা শুরুর আগেই ভাগ করা হয় পদ। বিশেষ কোটায় শূণ্য পদ কতটা আর প্রার্থী কতটা, তারপরে তাদের জন্য পদপূরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়। নিয়োগ শেষে দেখা গেছে, মেধা তালিকার ২২০তম ব্যক্তি চাকরি পায়নি কোটাভূক্ত নয় বলে, অথচ কোটার সুবিধা নিয়ে ৫৬৩২তম ব্যক্তিও পুলিশ ক্যাডারে এএসপির চাকরি পেয়ে বসে আছেন! এভাবে একটি মেধাহীন সমাজব্যবস্থা তৈরির নানা ব্যবস্থা চলমান। যার বিরুদ্ধে কোন চ্যালেঞ্জ অাসেনি। বিষয়টি স্পর্শকাতর অার এর অনৈতিক সুবি‌ধা সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ নিয়ে থাকেন বলে।

সংবিধান প্রণয়নের আগে ১৯৭২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর প্রণীত ইনন্টারিম  রিক্রুটমেন্ট পলিসিতে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটার কথা বলা হয়। এটি  অস্থায়ী বা স্বল্পকালীন একটি ব্যবস্থা। ১৯৭৩ সালে পিএসসির মাধ্যমে ৩৫০টি পদে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়োগের পর এই অস্থায়ী ব্যবস্থাটি বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন পে ও সার্ভিস কমিশন (রশিদ কমিশন) সরকারি নিয়োগে প্রচলিত কোটাসমূহ ১৯৮৭ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরে ধীরে ধীরে কমিয়ে তা বিলুপ্ত করার পক্ষে মত দেন। অথচ ১৯৯৭ সালেই এই কোটাব্যবস্থার আরও সম্প্রসারণ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য এবং পরে এটি বংশপরম্পরা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়। কেবল তাই নয়, ২০০০ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ২৩তম বিশেষ বিসিএস অনুষ্ঠিত করে কয়েক হাজার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। যার মানে দাড়ায়, মুক্তিযোদ্ধা গেলো, তাদের সন্তানরাও গেলো, এবারে আসছে নাতি পুতি কোটা! এইরূপ অভিজাত বংশের জন্য পরম্পরায় কিয়ামত পর্যন্ত ৩০% কোটার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি সংবিধান বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমর্থন করে?

কোটা পদ্ধতি সম্পর্কে সুধীজন অভিমত

১৯৯১ সনের পাবলিক সার্ভিস কমিশেনের বার্ষিক প্রতিবেদনে কোটা পদ্ধতি পূনর্বিন্যাস করার সুপারিশ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় লোক পাওয়া যাচ্ছিল না, তাই এটি ৩০% থেকে কমিয়ে ৫% করার সুপারিশ করে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক কেবিনেট সচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা ডঃ আকবর আলি খান ২০০৮ সালের একটি গবেষণায় ৫৫% কোটাকে অমানবিক উল্লেখ করে স্পষ্টভাবে বলেন, কোটার সুযোগ মেধার চেয়ে বেশি হওয়া উচিত নয়। এতে করে জনমনে এই ধারণা হতে পারে যে, কম মেধাবীরা প্রশাসনে নিয়োগ পাচ্ছে, এবং প্রশাসনের মান নীচের দিকে নামছে।

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এ টি আহমেদুল হক চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বর্তমানে প্রচলিত কোটা প্রয়োগ পদ্ধতি সরলীকরন করা প্রয়োজন।

পিএসসির আরেক সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এস এম ফায়েজ বলেন, ‘সরকারী চাকুরীতে মেধাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত। কেননা, মেধাবীরাই একসময় দেশের নেতৃত্ব দেবে। মেধাবীরা সরকারি চাকরিতে আসলে গতিশীল নেতৃত্ব তৈরি হবে। যেভাবেই হোক না কেন, মেধার কোন বিকল্প নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এদেশে এক ধরনের গোষ্ঠী আছে যারা চায় যে সরকারী নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে কোটা থাকুক। আমি মনে করি না যে সব ধরনের কোটা এখন দরকার আছে। কিছু কোটা থাকবে, কিন্তু সেসব কোটার সময় উল্লেখ করা যেতে পারে, যে তা কত বছর বহাল থাকবে।

প্রফেসর মুজাফফর আহমদের নেতৃত্বে ২০০৭ সালের টিআইবি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং জেলা কোটা রাখার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এগুলো বাতিল করা দরকার। অন্তত ৭৫% মেধাভিত্তিক করে, বাকী অংশ লিঙ্গ, জাতিগত, ধর্মীয় কোটায় বিভক্ত করা যেতে পারে।
এতে করে দেখা যায় যে, প্রায় সকল শিক্ষাবিদ ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা এই প্রসারিত কোটার বিরোধী। তারা কোটা পদ্ধতির সরলীকরণ বা সংস্কার চান।

লক্ষপ্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশে স্বাধীন হয়েছিল মুলত পশ্চিম পাকিস্তানীদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থেকে। একটি সমতাভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্খা সৃষ্টিই ছিলো স্বাধীনতার মূল মন্ত্র। সেখানে কোনো একটি বিশেষ গ্রুপকে বার বার (যারা মোট জনসংখ্যার ০.০১% শতাংশ) বংশানুক্রমে দেশের এক তৃতীয়াংশ সুযোগ সুবিধা অনন্তকাল যাবৎ দেয়া হবে, আর বাদবাকী ৯৯.৯৯% মানুষের জন্য ৭০ ভাগ- এটা কি স্বাধীনতার বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে যায়?

কোটা সংস্কার আন্দোলনে 'মেধাবীরা মুক্তি পাক' বুকে পিঠে লিখে অংশগ্রহণকারী। 

বর্তমানে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের জন্য দেশজুড়ে চলমান ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বর্তমান বিনাভোটের সরকারের প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত হয়ে কোটা পদ্ধতি তুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে অনেক বাদানুবাদ হচ্ছে। অনেকেই সন্দেহ করছেন, এটি করা সম্ভব হবে না। সংসদে আইন পাশ করতে হবে। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বর্তমানে চলমান কোটার বিষয়ে কোনো আইন বা বিধি নাই। কেবল প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে চলছে গত ৪৭ বছর। এমনকি কোটা নামক বস্তুর কোনো অস্তিত্ব সংবিধানে নাই। সংবিধানে কেবল বলা হয়েছে “নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন” করা যাইবে। করা ম্যান্ডেটরি নয়। রাষ্ট্র বা সরকার চাইলে কোটা, বিধান, সুবিধা, বা শিথিলতা দিতে প্রয়োজণীয় আইন করতে পারে। কিন্তু অদ্যাবধি এরূপ কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়নি। তাই সরকারের সদিচ্ছা থাকলে নির্বাহী আদেশ দিয়েই বর্তমান কোটা সংস্কার বা বাতিল করতে পারবে।

  • লেখক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা 

ইউনেস্কোর উদ্বেগ সত্ত্বেও ফিটনেসবিহীন নৌযান চলছে সুন্দরবনে

এম এম ফিরোজ


সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে অনিয়ন্ত্রিত নৌযান চলাচল নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো। তার পরও বাধাহীনভাবে চলছে ফিটনেসবিহীন বিভিন্ন ধরনের নৌযান। গত শনিবার সুন্দরবনের পশুর চ্যানেলে জাহাজডুবির ঘটনা তদন্তেও উঠে এসেছে— কয়লাবাহী কার্গো জাহাজটি ছিল ফিটনেসবিহীন। জাহাজটিতে কয়লাও ছিল ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় বা বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই যে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে অবাধে ফিটনেসবিহীন নৌযান চলছে, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে তা আরো একবার প্রমাণ হলো।

গত শনিবার সুন্দরবনের ভেতরে পশুর চ্যানেলে কয়লাবাহী কার্গো জাহাজ এমভি বিলাস ডুবে যাওয়ার ঘটনায় এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বন বিভাগ। তদন্ত প্রতিবেদনটি গতকাল জমা দিয়েছে কমিটি। তাতে বলা হয়েছে, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কয়লা পরিবহন ও ফিটনেস না থাকার কারণেই ডুবেছে জাহাজটি।

তদন্তটি করেছেন সুন্দরবন চাঁদপাই রেঞ্জের কর্মকর্তা শাহিন কবির। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আরো আগে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া যেত। কিন্তু কার্গোর মালিক ও মাস্টারের গাফিলতির কারণে বিলম্ব হয়েছে। তাদের কাছে ডুবন্ত জাহাজের ফিটনেস ও মাস্টারের লাইসেন্স চাওয়া হলে তা দিতে গড়িমসি করে তারা।

এদিকে কার্গো জাহাজটি ডুবে যাওয়ার গতকাল চতুর্থ দিনেও উদ্ধারকাজ শুরু হয়নি। উদ্ধার তত্পরতায় মালিকপক্ষের এমন উদাসীনতায় বন্দর কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেয়া ১৫ দিনের মধ্যেও জাহাজটি উদ্ধার করা যাবে কিনা সে ব্যাপারে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার মো. ওয়ালিউল্লাহ বলেন, কয়লা আমদানিকারক উদ্ধারকারী নৌযান আনতে না পারায় ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজটির উদ্ধারকাজ শুরু করা যায়নি। ১৫ দিনের মধ্যে আমদানিকারক উদ্ধারকাজ শুরু করতে ব্যর্থ হলে বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে উদ্ধারকাজে বিলম্বের কারণে বাড়ছে পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কাও। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার বলেন, কয়লায় থাকা সালফার পানিতে মিশলে পানির পিএইচ মাত্রা কমে যেতে পারে। এ ধরনের ঘটনা বেশি বেশি ঘটতে থাকলে সুন্দরবনের বড় ধরনের ক্ষতিই হবে। কয়েক বছর ধরে তো এমন দুর্ঘটনা বারবারই ঘটছে। ফলে এ বিষয়ে আরো সতর্ক হওয়া দরকার।

জানা যায়, ২০১১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলের অনুমোদন দেয়। শুরুতে প্রতিদিন ২০-২৫টি জাহাজ চললেও এখন তা ২০০ ছাড়িয়েছে। এসব জাহাজের বেশিরভাগই চলছে পশুর নদী হয়ে।

খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব অহিদুজ্জামান পল্টু বণিক বার্তাকে বলেন, মোংলা-সুন্দরবন নৌ-রুটের অন্যান্য চ্যানেল ক্ষীণ হওয়ায় বেশির ভাগ নৌযান পশুর নদী হয়ে চলাচল করে। মোংলা-সুন্দরবনে বেশির ভাগ নৌ-দুর্ঘটনা হয় বড় জাহাজ থেকে লাইটারেজে পণ্য খালাসের সময়।

নৌযানের ফিটনেস প্রসঙ্গে মালিক গ্রুপের এ প্রতিনিধি বলেন, সব নৌযানকেই সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর (ডিজি শিপিং) থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়ে চলাচল করতে হয়। প্রতি বছর ডিজি শিপিংয়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন করতে হয়।

যদিও সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌযান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথা বলে আসছে ইউনেস্কো। গত বছরের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত কমিটির অধিবেশনেও এ আহ্বান জানানো হয়। তারপরও সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে নৌযান চলাচল করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনকেন্দ্রিক শিল্প-কারখানার আশপাশের নদীগুলোতে জাহাজডুবির ঘটনা ঘটছে নিয়মিতই। রামপাল কয়লা বিদ্যুেকন্দ্র চালু হলে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে এমন কয়লাবাহী জাহাজের যাতায়াত আরো বাড়বে। সেই সঙ্গে বাড়বে এ ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।

সুন্দরবনের নৌযানের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর। সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে ডুবে যায় তেলবাহী ট্যাঙ্কার এমভি ওটি সাউদার্ন স্টার সেভেন। ২০১৫ সালের ৩ মে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা নদীতে ডুবে যায় সারবোঝাই কার্গো জাহাজ এমবি জাবালে নূর। একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ভোলা নদীতে ডুবতে ডুবতে অন্য কার্গোর সহায়তায় মোংলায় পৌঁছতে সক্ষম হয় আরেকটি কয়লাবোঝাই কার্গো। ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবরেই সুন্দরবনের পশুর নদীতে ৫১০ টন কয়লা নিয়ে ডুবে যায় এমভি জিয়া রাজ। পরের বছরের ১৯ মার্চ বিকালে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীর ‘হরিণটানা’ বন টহল ফাঁড়ির কাছে ১ হাজার ২৩৫ টন কয়লা নিয়ে এমভি সি হর্স-১ ডুবে যায়। ২০১৭ সালের ৪ জুন রাতে হারবারিয়া চ্যানেলে ৮২৫ টন সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল নিয়ে এমভি সেবা নামে আরেকটি কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়।

২০১৪ সালে শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবে যাওয়ার ঘটনার পর ইউনেস্কো এক বিবৃতিতে জানায়, সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচল করলে তা জীববৈচিত্র্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত একটি বিশ্ব ঐতিহ্য। এ বনে অনেক বিপন্ন এবং বিশ্বের দুর্লভ জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ রয়েছে। তাই দ্রুত সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে।
  • Courtesy: Banikbarta/ Apr 19,2018

Air Pollution in Bangladesh: Steep rise continues

Finds global survey; dust seen as major threat


Mohammad Al-Masum Molla

Bangladesh has experienced a sharp increase in air pollution since 2010 as 81 percent population are exposed to household air pollution from solid fuel burning, says a new global study report.

“Pakistan, Bangladesh and India, on the other hand, have experienced the steepest increases in air pollution levels since 2010,” adds the report styled Global Air/2018 Report published on Tuesday by the Health Effects Institute (HEI).

More than 95 percent of global population is breathing unhealthy air and the poorest nations are the worst victims, according to the report, which further says long-term exposure to air pollution contributed to an estimated 6.1 million deaths around the globe in 2016.

The report also takes into account those who are exposed to solid fuel burning, typically used for cooking or heating their homes that result in indoor air pollution.

“It is true that the air quality has fallen in last few years. The major sources of outdoor air pollution in Bangladesh are brick kilns and development works, especially construction works,” Ziaul Haque, director of Air Quality at Department of Environment, told The Daily Star yesterday.

Currently, there are more than 8,000 traditional brick kilns are active in Bangladesh which considered as the major sources of air pollution in the country.

Haque said dust pollution has emerged as a major problem in recent times and it turns worst in winter.

“We do not have that much industrial pollution. Some cement, steel and re-rolling factories are the sources of air pollution apart from brick kilns and construction works,” the director informed.

He, however, said various steps were taken to reduce indoor air pollution as 20 lakh improved cook stoves have already been distributed among users. “We expect that the indoor pollution will reduce by 50 percent very soon.”

In 2016, 2.5 billion people -- one in three of global citizens -- were exposed to air pollution from solid fuel like wood or charcoal.

The report says exposure to air pollution led to strokes, heart attacks, lung cancer and chronic lung diseases, causing many of those premature deaths.

It further says air pollution is the fourth-highest cause of deaths among all health risks globally, coming in below high blood pressure, diet and smoking.

Most of those affected live in low- and middle-income nations in Asia and Africa where they face air pollution both inside and outside their home.

Abul Kalam Azad, director general of Directorate General for Health Services, said Bangladesh is a densely populated country where huge development works have been taking place for long.

“Air pollution is the cost of development works along with some other reasons. It has become one of the major causes of deaths in Bangladesh,” he added.

More than 37,000 Bangladeshis die annually from diseases related to this pollution, according to the World Health Organization.

Stroke and ischemic heart diseases are the major factors in the deaths, nearly 21,000, while acute lower respiratory infection, chronic obstructive pulmonary disorder and lung cancer contribute to the rest of the deaths, according to the UN agency.

In April 2017, the WHO reported that environmental pollutants cost an estimated 1.7 million lives among children under five.

  • Courtesy: The Daily Star /Apr 19, 2018


Create level-playing field for all - Oli Ahmed


Liberal Democratic Party president Oli Ahmed on Tuesday demanded the government come up with a specific declaration for creating a level-playing field for all parties ahead of the next general election.

‘As the election gets closer, I demand the government create a level-playing field so that all parties can hold meetings at their desired venues. The government should make a specific announcement in this regard,’ he said.

The LDP president made the demand at a press conference at the National Press Club in the capital.

He alleged that the ruling party has long been carrying out meetings and election campaign across the country keeping BNP, LDP and all other parties restricted to indoor meetings.

Oli observed that the Election Commission cannot exert its constitutional power as it has become a government-backed institution.

He urged the government to engage in talks with political parties for holding the next general election in credible and peaceful manner.

Mentioning that BNP chairperson Khaleda Zia has been kept in jail unfairly, the LDP chief said no step is taken for ensuring the better treatment for her. ‘She can at least be sent to United Hospital for treatment.’

The LDP chief also demanded the government immediate release of Khaleda Zia from jail and show proper respect for her as she is not only a former prime minister but also the wife of a freedom fighter.

Describing the student movement demanding reform of quota system, as justified one, he said the government should reform quota system instead of revoking it for building a merit-based administration.

  • Courtesy: New Age /Apr 18, 2018

গ্রাহকের ৩৫ কোটি টাকা পকেটে পুরে বসে আছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ

মামুনুর রশীদ

এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন দেয়নি। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেও রয়েছে মামলার বাধা, আদালতের নিষেধাজ্ঞা। এই পরিস্থিতিতে  ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর ফ্ল্যাট প্রকল্পের আওতায় গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত হিসেবে ৩৫ কোটি টাকা নিয়ে বসে আছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।

গত বছর গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও এলিফ্যান্ট রোডে পরিত্যক্ত ঘোষিত ১০টি প্লটে ২ দশমিক শূন্য ৭ একর জমির ওপর ২৫৩টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৩ কোটি টাকা। তবে এখন পর্যন্ত এই প্লটগুলোর কোনোটিই গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের দখলে আসেনি।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ নিজ অর্থায়নেই তাদের সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। পরবর্তী সময়ে প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রির টাকা দিয়ে প্রকল্পের অর্থ পরিশোধ করা হয়। কিন্তু প্রসপেক্টাস (প্রকল্প পরিচিতি) তৈরি কিংবা প্লট বা ফ্ল্যাট বিক্রির ঘোষণা দেওয়ার আগে প্রকল্প প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুর ফ্ল্যাট প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি। এ ক্ষেত্রে ডিপিপি ও ফ্ল্যাটের নকশা অনুমোদনের আগেই প্রসপেক্টাস বিক্রি ও জামানত হিসেবে প্রায় ৮৫০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৩৫ কোটি টাকার বেশি অর্থ নেওয়া হয়েছে। পরে ডিপিপি অনুমোদন না হওয়ার খবর পেয়ে কয়েকজন গ্রাহক জামানতের টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।

জানতে চাইলে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান খন্দকার আখতারুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি প্রকল্প তো এভাবেই বাস্তবায়ন হয়। ডিপিপি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন হয়ে যাবে। এরপরই আমরা টেন্ডারে যাব। সবাইকে বরাদ্দপত্র দিয়ে দেওয়া হবে।’

আর জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বক্তব্য, ‘জমি অধিগ্রহণের জন্য ডিসি অফিসে টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও দ্রুত শুরু হবে।’

তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ধানমন্ডির তিনটি ও মোহাম্মদপুরের একটি প্লট অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ অবস্থায় গত সপ্তাহে ১০টি প্লটের ডিপিপি অনুমোদনের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরেক অনিশ্চয়তার কথা জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, চারটি প্লট অধিগ্রহণে আদালতের নিষেধাজ্ঞার বাইরে সবগুলো প্লটেই মালিকানা নিয়ে মামলা আছে। অথচ জমি অধিগ্রহণের জন্য গ্রাহকের জামানতের টাকাসহ মোট ৮১ কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়েছে ডিসি অফিসে।

গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৭ আগস্ট থেকে দেড় হাজার বর্গফুট, দুই হাজার বর্গফুট ও আড়াই হাজার বর্গফুট আয়তনের তিন ক্যাটাগরিতে মোট ২০২টি ফ্ল্যাটের বিপরীতে সাধারণের কাছ থেকে আবেদনপত্র নেওয়া হয়। ধানমন্ডিতে প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৯ হাজার টাকা আর মোহাম্মদপুরে ৫ হাজার ২০০ টাকা। ধানমন্ডি এলাকার ফ্ল্যাটের জন্য ক্রেতাদের কাছ থেকে ৬ লাখ ও মোহাম্মদপুর এলাকার ফ্ল্যাটের জন্য আয়তনভেদে ৪ লাখ ও ৩ লাখ টাকা জামানত নেওয়া হয়। প্রতিটি ৩ হাজার টাকা করে প্রসপেক্টাস বিক্রি করা হয় প্রায় ১ হাজার ৩০০টি। নির্ধারিত সময় শেষে জামানতসহ আবেদন জমা পড়ে ৮৫০টি। সব মিলিয়ে এ বাবদ সংস্থাটির কাছে জমা পড়ে ৩৫ কোটি টাকার বেশি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের আরেক কর্মকর্তা বলেন, সব জটিলতা কাটিয়ে মন্ত্রণালয় যদি প্রকল্প অনুমোদনের সময় জমির দাম ও নির্মাণ ব্যয় নতুন করে নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে সেটা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে আরেক দফা ঝামেলায় পড়তে হবে।

পরিত্যক্ত ঘোষিত যে ১০টি প্লটে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে, তার ৬টির অবস্থান ধানমন্ডিতে। ৩টি মোহাম্মদপুরে ও একটি এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত। প্লটগুলোর আয়তন আট কাঠা থেকে এক বিঘার মধ্যে। প্লটগুলোতে তৈরি ২৫৩টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২০২টি সরকারি চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে। বাকি ৫১টি ফ্ল্যাট সরকারি আবাসন পরিদপ্তরকে উপহার হিসেবে দেওয়া হবে।

  • Courtesy: prathom Alo/ Apr 18, 2018

লন্ডনের রাস্তায় বিলবোর্ড নিয়ে বিএনপির বিক্ষোভ


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলেই বিক্ষোভ করে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি। তাদের সেই বিক্ষোভে এবার যুক্ত হয়েছে বিশাল বিলবোর্ড লাগানো ভ্যানগাড়ি। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের বিরুদ্ধে বার্তা নিয়ে লন্ডনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছে এসব ভ্রাম্যমাণ বিলবোর্ড।

বাংলাদেশের রাস্তায় যেমন মিছিল হয়, ঠিক একই রকমভাবে গতকাল মঙ্গলবার লন্ডনের কয়েক কিলোমিটার সড়ক প্রদক্ষিণ করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা। লন্ডনে ভিনদেশি রাজনৈতিক বিরোধ নিয়ে এমন মিছিল বিরল।

কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন লন্ডনে আছেন। তিনি স্থানীয় সময় গত সোমবার মধ্যরাতে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান। ২২ এপ্রিল তাঁর ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করার কথা।


প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে আসার আগের দিন সোমবার থেকেই বিক্ষোভ শুরু করে বিএনপি। ওই দিন ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টের বাইরে জড়ো হয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। একই সঙ্গে ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টের আশপাশে ঘুরে বেড়ায় বিএনপির ভ্রাম্যমাণ বিলবোর্ড। পরদিন মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের একটি অধিবেশনে অংশ নিতে ওয়েস্টমিনস্টারের দ্বিতীয় কুইন এলিজাবেথ হলে যান। বিএনপির নেতা-কর্মীরা হলের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। এরপর বিকেলে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের ব্ল্যাকফায়ার্সে ওভারসিস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যান। বিএনপির নেতা-কর্মীরা ওয়েস্টমিনস্টার থেকে মিছিলসহ সেখানে গিয়ে হাজির হন। যোগ দেয় তাঁদের ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগুলোও।

বুধবার কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানদের সভাস্থলের সামনে বিক্ষোভ করছে বিএনপি।

যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে যাবেন, সেখানেই তাঁরা বিক্ষোভ করবেন। তাঁদের ক্ষোভের কারণগুলোতে ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণের লক্ষ্যে কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ বিলবোর্ড নামিয়েছেন বলে জানান তিনি। 

তিনি বলেন, বিক্ষোভস্থলের পাশাপাশি কমনওয়েলথ সম্মেলন স্থল, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও এর আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করে এসব ভ্রাম্যমাণ বিলবোর্ড।

বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রের যাঁরা ক্ষমতায়, তাদের আগে ভাবমূর্তির বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যদি চাই পরিবারে আমার সন্তানেরা আমার বিরুদ্ধে কথা বলবে না, তাহলে আমাকেও ওইভাবে চলতে হবে।’ 

এম এ মালেক বলেন, সরকারকে বুঝতে হবে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যে নেতিবাচক প্রতিবেদন দিচ্ছে, তাতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই।

ভ্রাম্যমাণ বিলবোর্ড নিয়ে প্রচারণা বা বিক্ষোভ লন্ডনে নতুন নয়। সম্প্রতি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের যুক্তরাজ্য সফরকে ঘিরে পক্ষে-বিপক্ষে এমন প্রচারণা হয়েছে। গত জানুয়ারিতে সাড়া জাগানো ‍হলিউড সিনেমা ‘থ্রি বিলবোর্ডস আউটসাইড এবিং, মিসৌরি’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বিলবোর্ড ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে গেছে।
  • Courtesy: Prothom Alo /18, 2018

Wednesday, April 18, 2018

Hasina, the ODI and human rights in Bangladesh

 David Bergman




Is the reputable, and supposedly independent, Overseas Development Institute helping the Bangladesh government to enforce here in London the draconian restrictions that journalists experience in Bangladesh?

And is it, in light of how ODI dealt with a question from a Channel Four News journalist at the meeting itself, protecting the prime minister from having to respond to tough questions?

It certainly appears so.


ODI Vetting?
When I applied a week ago to attend the ODI event at which Sheikh Hasina, the Bangladesh Prime Minister, was due to speak. I got a very welcoming response. from Ben Tritton, the event organiser. "We'd be delighted to welcome you to ODI" he said. 

So I was rather astonished to receive an e-mail on Monday morning, the day before the talk, disinviting me from the event.

    "Apologies but over the weekend we have received a large number of high level responses and this event is highly over-subscribed. We will therefore be unfortunately not able to welcome you to the event"

This seemed rather odd and I therefore immediately responded with this e-mail

    "Could you please clarify whether you have allowed the Bangladesh delegation/government/representatives to vet the list of those who can attend the talk."

I received no response. 

On Tuesday, the morning of the talk, I called Mr Tritton and asked him why I had been disinvited. He kept me holding for about a minute and then repeated what he has written in his e-mail. I asked him how many people, like me, had been disinvited and he said 15 people

I then asked him the same question I had earlier e-mailed - about whether he allowed the Bangladesh government or representatives to vet the list of those who could attend the talk. If the ODI had not allowed vetting, one would have expected the answer to be a direct "No." Indeed one would have expected an independent think-tank to immediately respond in this way. However, he said:

    "I am afraid I cant comment at all on that"

This is as close to a confirmation as you will ever get without the ODI saying "yes". If they hadn't allowed the Bangladesh government an ability to vet the invite list, the ODI would surely have just denied it.

In Bangladesh, media censorship has become increasingly restrictive. The government refuse to allow journalists from certain independent newspapers to attend government press conferences; the military intelligence agency has ordered large companies not to advertise in two major newspaper's reducing their advertising income by over one third; the prime minister has denounced a newspaper editor for publishing stories that were seeking to "destroy the country.” Government party activists have filed dozens of criminal cases against the same newspaper editor; dozens of journalists and editors have been arrested under the vague and arbitrary Information, Communication, Technology and Communication Act; and there is a high degree of censorship and - rather obviously - self-censorship. Televsion is particularly controlled.

The ODI must know about all this so why would it participate in apparently allowing the Bangladesh government to dictate who could and could not come to the meeting?

Channel Four News
In addition, of course, and more significantly, the ODI did everything to prevent Channel Four News to ask a difficult question to Sheikh Hasina about human rights issues in Bangladesh. 

Source  —  https://bangladeshpolitico.blogspot.co.uk